(Book# 114/٢٩١)-৪৯৩ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ৮-৯ নং আয়াত:- وَ الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ আর সেদিন (কিয়ামাতের দিন) ন্যায় ও সঠিকভাবে (প্রত্যেকের ‘আমল) ওযন করা হবে, The Meaning of weighing the Deeds .

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٩١)-৪৯৩
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
৮-৯ নং আয়াত:-
وَ الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ
আর সেদিন (কিয়ামাতের দিন) ন্যায় ও সঠিকভাবে (প্রত্যেকের ‘আমল) ওযন করা হবে,
The Meaning of weighing the Deeds .

وَ الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُہٗ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۸﴾

আর সেদিন (কিয়ামাতের দিন) ন্যায় ও সঠিকভাবে (প্রত্যেকের ‘আমল) ওযন করা হবে, সুতরাং যাদের (পুণ্যের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে কৃতকার্য ও সফলকাম।
وَ مَنۡ خَفَّتۡ مَوَازِیۡنُہٗ فَاُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ بِمَا کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۹﴾
আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে সেই সব লোক যারা নিজেদের ধ্বংস ও ক্ষতি নিজেরাই করেছে। কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে (আয়াত) প্রত্যাখ্যান করত।

৮-৯ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্যতম একটি হল আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। আখিরাতে যা কিছু হবে তার মধ্যে একটি হল মিযান তথা দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে যাতে মানুষের আমলসমূহ ওজন করা হবে। তার প্রমাণ অত্র আয়াত। কিয়ামতের দিনে সঠিকভাবে আমলসমূহ ওজন করা হবে। কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ط وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ط وَكَفٰي بِنَا حٰسِبِيْنَ)‏

“এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায় বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও সেটা আমি উপস্থিত করব; হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” (সূরা আম্বিয়া ২১:৪৭)

হাদীসেও মিযান বা দাঁড়িপাল্লার বর্ণনা এসেছে। সুতরাং এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। কিয়ামতের দিন যে দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে তা প্রকৃত দাঁড়িপাল্লা। তার দু’টি পাল্লা থাকবে, যেমন হাদীসে এসেছে: সাত আকাশ ও তাতে আমি ছাড়া যা কিছু আছে এবং সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় যদি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” রাখা হয় তাহলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর পাল্লা ভারী হবে। (ইবনু হিব্বান হা: ২৩২৪, মুসতাদরাক হাকেম ১/৫২৮, সহীহ)

এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদাহ-বিশ্বাস। আর যারা দাঁড়িপাল্লাকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে ন্যায়বিচারকে বুঝে থাকেন তাদের বিশ্বাস সঠিক নয়। (আকীদাহ তাহাবীয়াহ পৃ: ৫৪১)

দাঁড়িপাল্লায় তিনটি জিনিস ওজন করা হবে:

১. আমলকারী মানুষকে ওজন করা হবে- যেমন হাদীসে এসেছে: যখন সাহাবীরা ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর পায়ের হালকা পেণ্ডলী দেখে হাসতে ছিল, তখন নাবী (সাঃ) বললেন: তোমরা কেন হাসছ? তারা বললেন: তার পায়ের হালকা পেণ্ডলী দেখে। নাবী (সাঃ) বললেন: সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তার পা দু’টি মিযানের পাল্লায় ওহুদ পাহাড়ের চেয়ে বেশি ভারী হবে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ৩৯৯১, ইবনু শায়বাহ ১২/১১৩, তাবরানী কাবীর হা: ৮৪৫২, সহীহ)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أُولٰ۬ئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيٰتِ رَبِّهِمْ وَلِقَا۬ئِه۪ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا)‏

‘তারাই অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হবে; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থা রাখব না।’ (সূরা কাহফ ১৮:১০৫)

২. আমল ওজন করা হবে, এক পাল্লায় সৎ আমল, অন্য পাল্লায় খারাপ আমল। ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীতে সর্বশেষ অধ্যায় বেঁধেছেন,

بَابُ قَوْلِ اللّٰهِ تَعَالَي: (وَنَضَعُ المَوَازِيْنَ القِسْطَ لِيَوْمِ القِيَامَةِ) [الأنبياء: ৪৭] ، وَأَنَّ أَعْمَالَ بَنِيْ اٰدَمَ وَقَوْلَهُمْ يُوْزَنُ

‘অধ্যায় আল্লাহ তা‘আলার বাণী “এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড।” আদম সন্তানের কর্ম ও কথা ওজন করা হবে।’

বানী আদমের আমল ও কথা ওজন করা হবে। প্রমাণস্বরূপ হাদীস এসেছে: নাবী (সাঃ) বলেন: দু’টি কথা যা দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার কাছে খুবই প্রিয়, উচ্চারণে হালকা ও মিযানের পাল্লায় ভারী তা হল:

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيْمِ

(সহীহ বুখারী হা: ৭৫৬৩)
৩. আমলনামা ওজন করা হবে, যে আমলনামায় আমলসমূহ লেখা হয়েছে। (আকীদাহ তাহাবীয়াহ হা: ৫৪১)
যাদের পুণ্যের আমলনামা ভারী হবে তারা সফলকাম হবে আর যাদের পাপের আমলনামা ভারী হবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন হাদীসে বিতাকা। যেখানে বলা হয়েছে- নিরানব্বইটি পাপের খাতা এক পাল্লায় থাকবে আর শাহাদাতের একটি কার্ড অন্য পাল্লায় থাকবে। তখন শাহাদাতের কার্ডটি বেশি ভারী হবে। (তিরমিযী হা: ২৬৩৯, ইবনু মাযাহ হা: ৪৩০০, সহীহ)

সুতরাং বেশি বেশি নেক আমল করে নেকীর পাল্লা ভারী করার জন্য প্রতিটি মু’মিনের চেষ্টা করা উচিত।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কিয়ামত দিবসে মিযান বা পাল্লায় মানুষের কৃতকর্ম ওজন করা হবে- এর প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
২. আমলকারী, আমল ও আমলনামা তিনটি জিনিসকেই ওজন করা হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি জুলুম করবেন না বরং সকলেই স্বীয় কর্মের যথাযথ প্রতিদান লাভ করবে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 8-9
وَ الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ

The Meaning of weighing the Deeds .

Allah said,

وَالْوَزْنُ يَوْمَيِذٍ الْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـيِكَ الَّذِينَ خَسِرُواْ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُواْ بِأيَاتِنَا يِظْلِمُونَ
And the weighing on that Day will be the true (weighing). So, as for those whose scale (of good deeds) will be heavy, they will be the successful (by entering Paradise). And as for those whose scale will be light, they are those who will lose themselves for their wrongful behavior with Our Ayat.

وَالْوَزْنُ
(And the weighing),

of deeds on the Day of Resurrection,

الْحَقُّ
(will be the true (weighing)),

for Allah will not wrong anyone.

Allah said in other Ayat,

وَنَضَعُ الْمَوَزِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَـمَةِ فَلَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْياً وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَـسِبِينَ

And We shall set up the Balances of justice on the Day of Resurrection, then none will be dealt with unjustly in anything. And if there be the weight of a mustard seed, We will bring it. And Sufficient are We to take account. (21:47)

إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِن تَكُ حَسَنَةً يُضَـعِفْهَا وَيُوْتِ مِن لَّدُنْهُ أَجْراً عَظِيماً

Surely, Allah wrongs not even the weight of a speck of dust, but if there is any good (done), He doubles it, and gives from Him a great reward. (4:40)

فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَزِينُهُ فَهُوَ فِى عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَزِينُهُ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ وَمَأ أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ نَارٌ حَامِيَةٌ

Then as for him whose scale (of good deeds) will be heavy. He will live a pleasant life (in Paradise). But as for him whose scale (of good deeds) will be light. He will have his home in Hawiyah (pit, Hell). And what will make you know what it is (It is) a fiercely blazing Fire! (101:6-11)

and,

فَإِذَا نُفِخَ فِى الصُّورِ فَلَ أَنسَـبَ بَيْنَهُمْ يَوْمَيِذٍ وَلَا يَتَسَأءَلُونَ

فَمَن ثَقُلَتْ مَوَزِينُهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَزِينُهُ فأُوْلَـيِكَ الَّذِينَ خَسِرُواْ أَنفُسَهُمْ فِى جَهَنَّمَ خَـلِدُونَ

Then, when the Trumpet is blown, there will be no kinship among them that Day, nor will they ask of one another. Then, those whose scales (of good deeds) are heavy, they are the successful. And those whose scales (of good deeds) are light, they are those who lose themselves, in Hell will they abide. (23:101-103)

As for what will be placed on the Balance on the Day of Resurrection, it has been said that;

the deeds will be placed on it, even though they are not material objects. Allah will give these deeds physical weight on the Day of Resurrection.

Al-Baghawi said that this was reported from Ibn Abbas.

It is recorded in the Sahih that;

Al-Baqarah (Surah 2) and Al Imran (Surah 3) will come on the Day of Resurrection in the shape of two clouds, or two objects that provide shade, or two lined groups of birds.

It is also recorded in the Sahih that;

the Qur’an will come to its companion (who used to recite and preserve it) in the shape of a pale-faced young man. He will ask (the young man), “Who are you?”

He will reply, “I am the Qur’an, who made you stay up sleeplessly at night and caused you thirst in the day.”

The Hadith that Al-Bara’ narrated about the questioning in the grave states,

فَيَأْتِي الْمُوْمِنَ شَابٌّ حَسَنُ اللَّوْنِ طَيِّبُ الرِّيحِ فَيَقُولُ مَنْ أَنْتَ

فَيَقُولُ أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِح

A young man with fair color and good scent will come to the believer, who will ask, `Who are you?’

He will reply, `I am your good deeds’.

The Prophet mentioned the opposite in the case of the disbeliever and the hypocrite.

It was also said that;

the Book of Records that contains the deeds will be weighed.

A Hadith states that;

a man will be brought forth and ninety-nine scrolls containing errors and sins will be placed on one side of the balance each as long as the sight can reach. He will then be brought a card on which `La ilaha illallah’ will be written. He will say, “O Lord! What would this card weigh against these scrolls?”

Allah will say, “You will not be wronged.”

So the card will be placed on the other side of the Balance, and as the Messenger of Allah said,

فَطَاشَتِ السِّجِلَّتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَة

Behold! The (ninety-nine) scrolls will go up, as the card becomes heavier.

At-Tirmidhi recorded similar wording for this Hadith and said that it is authentic.

It was also said that the person who performed the deed will be weighed.

A Hadith states,

يُوْتَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِالرَّجُلِ السَّمِينِ فَلَ يَزِنُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحَ بَعُوضَة

On the Day of Resurrection, a fat man will be brought forth, but he will not weigh with Allah equal to the wing of a mosquito.

He then recited the Ayah,

فَلَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ وَزْناً

And on the Day of Resurrection, We shall assign no weight for them. (18:105)

Also, the Prophet said about Abdullah bin Mas`ud,

أَتَعْجَبُونَ مِنْ دِقَّةِ سَاقَيْهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُمَا فِي الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ أُحُد

Do you wonder at the thinness of his legs? By He in Whose Hand is my soul! They are heavier on the Balance than (Mount) Uhud.

It is also possible to combine the meanings of these Ayat and Hadiths by stating that all this will truly occur, for sometimes the deeds will be weighed, sometimes the scrolls where they are recorded will be weighed, and sometimes those who performed the deeds will be weighed.

Allah knows best.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৮-৯ নং আয়াতের তাফসীর:

ইরশাদ হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন আমলসমূহ ওজন করা হবে এটা সত্য কথা, যেন কারো উপর যুলুম না হতে পারে। যেমন এক জায়গায় বলেনঃ “কিয়ামতের দিন আমি সত্য ও ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবো যাতে কারো উপর বিন্দুমাত্রও যুলুম না হতে পারে। সরিষার দানা পরিমাণও যদি কোন আমল থেকে থাকে সেটাও ছুটে যাবে না। গণনার জন্যে আমিই যথেষ্ট।” অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আল্লাহ অণু পরিমাণও কারো উপর অত্যাচার করবেন না। যদি একটি পুণ্য হয় তবে ওকে দ্বিগুন ত্রিগুণ করে দেয়া হবে। তাঁর এই বিরাট প্রতিদান তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার স্বরূপ।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “যার (পুণ্যের) পাল্লা ভারী হবে সে তো তার বাসনানুরূপ সুখে অবস্থান করবে। আর যার (পুণ্যের) পাল্লা হাল্কা হবে, তার বাসস্থান হবে হাবিয়া। তোমার কি জানা আছে, ওটা কি? ওটা হচ্ছে জ্বলন্ত অগ্নি।” আর এক স্থানে তিনি বলেনঃ “যখন শিঙ্গায় ফু দেয়া হবে তখন আত্মীয়তার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। কেউ কাউকেও কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। যার (পুণ্যের) ওজন ভারী, হবে সে তো হবে কৃতকার্য ও সফলকাম, আর যর (পুণ্যের) ওজন হালকা হবে সে বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত ও বিফল মনোরথ হবে। আর তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম।” দাড়িপাল্লায় যা ওজন করা হবে তা হচ্ছে কারো কারো মতে স্বয়ং আমল। যদিও ওর কোন আকার নেই অর্থাৎ যদিও ওটা কোন দৃশ্যমান অস্তিত্ব বিশিষ্ট পদার্থ নয়, তবুও সেই দিন আল্লাহ তা’আলা ওকে পদার্থের আকার দান করবেন। এই বিষয়েরই হাদীস হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সূরায়ে বাকারা’ এবং সূরায়ে আলে-ইমরান’ কিয়ামতের দিন দু’টি মেঘখণ্ডের আকারে সামনে আসবে। অথবা দু’টি সামিয়ানার আকারে কিংবা আকাশে ছড়িয়ে পড়া পাখীদের আঁকের আকারে আসবে। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, কুরআন পাঠকের কাছে কুরআন মাজীদ একজন নবযুবকের আকারে হজির হবে। কুরআনের পাঠক তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ ‘তুমি কে? সে উত্তরে বলবেঃ “আমি কুরআন। আমি তোমাকে রাত্রিকালে জাগিয়ে রাখতাম এবং সারাদিন রোযার হুকুম পালনার্থে পিপাসার্ত রাখতাম।” কবরের প্রশ্নের ঘটনায় রয়েছে যে, কবরে মুমিনের কাছে একজন সুগন্ধময় সুন্দর যুবক আগমন করবে। কবরবাসী তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ ‘তুমি কে? সে বলবেঃ “আমি তোমার সৎ আমল।”

হাদীসে বেতাকার মধ্যে রয়েছে যে, একজন লোককে একটি কাগজের টুকরা দেয়া হবে এবং ওটা তারাযুর এক পাল্লায় রাখা হবে। আর অপর পাল্লায় রাখা হবে কাগজের নিরানব্বইটি দফতর। এক একটি দফতর এতো বড় হবে যে, যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকবে। ঐ কাগজের টুকরায় (আরবী) ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু’ লিখা থাকবে। লোকটি বলবেঃ “কোথায় এই কাগজের টুকরাটি এবং কোথায় ঐ বড় বড় দফতরগুলো।” তখন আল্লাহ পাক তাকে বলবেনঃ “আজ কিন্তু তোমার উপর অত্যাচার করা হবে না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন যে, তার পাপরাশির বড় বড় দফতরের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে এবং ঐ কাগজখণ্ডের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।

আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, আমল বা আমলনামা ওজন করা হবে না, বরং আমলকারীকে ওজন করা হবে। যেমন হাদীসে রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন একজন মোটা লোকটে আনয়ন করা হবে, কিন্তু সে আল্লাহর কাছে পাখীর পালকের সমানও ওজনের হবে না। অতঃপর তিনি (আরবী) -এই আয়াতটি পাঠ করেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেনঃ “তোমরা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর সরু সরু পা দেখে কেন বিস্ময় বোধ করছো? আল্লাহর শপথ! এটা দাঁড়িপাল্লায় ওজন করলে এর ওজন উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বেশী হবে।” এই তিনটি বর্ণনাকে এভাবে জমা করা যেতে পারে যে, কখনো ওজন করা হবে আমল, কখনো আমলনামা এবং কখনো আমলকারীকে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] সেদিনের সে দাঁড়িপাল্লায় কোন অপরাধীর অপরাধ বাড়িয়ে দেয়া হবে না। আর কোন নেককারের নেক কমিয়ে দেয়া হবে না। [আদওয়াউল বায়ান] অন্য আয়াতেও আল্লাহ সেটা বলেছেন, “আর কেয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না এবং কাজ যদি শস্য দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও তা আমরা উপস্থিত করব;” |সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭] তবে আল্লাহ্ তা’আলা কোন কোন নেক বান্দার আমলকে বহুগুণ বর্ধিত করবেন। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। আর কোন পুণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।” [সূরা আন-নিসা:৪০] অনুরূপভাবে ‘হাদীসে বিতাকাহ’ নামে বিখ্যাত হাদীসেও দেখুন, [ইবন মাজাহঃ ৪৩০০; তিরমিযী ২১২৭] সেটা বর্ণিত হয়েছে।

[২] এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ “সেদিন যে ভাল-মন্দ কাজকর্মের ওজন হবে তা সত্যসঠিকভাবেই হবে।” এতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এতে মানুষ ধোঁকায় পড়তে পারে যে, যেসব বস্তু ভারী, সেগুলোর ওজন ও পরিমান হতে পারে। মানুষের ভাল-মন্দ কাজকর্ম কোন জড় পদার্থ নয় যে, এগুলোকে ওজন করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় কাজকর্মের ওজন কিরূপে করা হবে? উত্তর এই যে, প্রথমতঃ আল্লাহ্ তা’আলা সর্বশক্তিমান। তিনি সব কিছুই করতে পারেন। অতএব, আমরা যা ওজন করতে পারি না আল্লাহ তা’আলাও তা ওজন করতে পারবেন, এটা বিচিত্র কিছু নয়। দ্বিতীয়তঃ আজকাল জগতে ওজন করার নতুন নতুন যন্ত্র আবিস্কার হয়েছে যাতে দাঁড়িপাল্লা, স্কেলকাঁটা ইত্যাদির কোন প্রায়োজন নেই। এসব নবাবিস্কৃত যন্ত্রের সাহায্যে আজকাল এমন বস্তুও ওজন করা যায়, যা ইতোপূর্বে ওজন করার কল্পনাও করা যেত না। আজকাল বাতাসের চাপ এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহও ওজন করা যায়। এমনকি শীত-গ্রীষ্ম পর্যন্ত ওজন করা হয়। এগুলোর মিটারই এদের দাঁড়িপাল্লা। যদি আল্লাহ তা’আলা স্বীয় অসীম শক্তি-বলে মানুষের কাজকর্ম ওজন করে নেন, তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। হাদীসে রয়েছে যে, যদি কোন বান্দার ফরয কাজসমূহে কোন ক্রটি পাওয়া যায়, তবে রাববুল আলামীন বলবেনঃ দেখ, তার নফল কাজও আছে কি না। নফল কাজ থাকলে ফরযের ক্রটি নফল দ্বারা পূরণ করা হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৬৫]

আমলের ওজন পদ্ধতিঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পাখার সমানও হবে না। এ কথার সমর্থনে কুরআনুল কারীমের এ আয়াত পাঠ করলেন। ”

(فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ وَزْنًا)

অর্থাৎ কেয়ামতের দিন আমি তাদের কোন ওজন স্থির করবো না ’ [বুখারীঃ ৪৪৫২, মুসলিমঃ ২৭৮৫] আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রশংসায় বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার পা দুটি বাহ্যতঃ যতই সরু হোক, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, কেয়ামতের দাড়িপাল্লায় তার ওজন ওহুদ পর্বতের চাইতেও বেশী হবে। [মুসনাদে আহমাদ: ১/৪২০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘দুটি বাক্য উচ্চারণের দিক দিয়ে খুবই হাল্কা; কিন্তু দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী এবং আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। বাক্য দুটি হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’, ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম’। [বুখারীঃ ৭৫৬৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ ‘সুবহানাল্লাহ’ বললে আমলের দাড়িপাল্লার অর্ধেক ভরে যায় আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে বাকী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়। [ মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৬০, ৫/৩৬৫; সুনান দারমীঃ ৬৫৩] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমলের ওজনের বেলায় কোন আমলই সচ্চরিত্রতার সমান ভারী হবে না। [আবু দাউদঃ ৪৭৯৯; তিরমিয়ীঃ ২০০৩] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি জানাযার সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তার আমলের ওজনে দু’টি কিরাত রেখে দেয়া হবে” [বুখারীঃ ১২৬১]। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, এই কিরাতের ওজন হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান। [মুসলিমঃ ৬৫৪] কেয়ামতে আমলের ওজন সম্পর্কে এ ধরণের বহু হাদীস রয়েছে।

[৩] মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলী দু’টি অংশে বিভক্ত হবে। একটি ইতিবাচক বা সৎকাজ এবং অন্যটি নেতিবাচক বা অসৎকাজ। ইতিবাচক অংশের অন্তর্ভুক্ত হবে সত্যকে জানা ও মেনে নেয়া এবং সত্যের অনুসরণ করে সত্যের খাতিরে কাজ করা। আখেরাতে এটিই হবে ওজনদার, ভারী ও মূল্যবান। আর সে মূল্যবান কাজের ফলাফলও মূল্যবান হবে। এ আয়াতে তা উল্লেখ না হলেও অন্য আয়াতে সেটা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “অতঃপর যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে, সে তো থাকবে সন্তোষজনক জীবনে ” [সূরা আল-কারি’আহ:৬-৭] অর্থাৎ জান্নাতে। অন্যদিকে সত্য থেকে গাফিল হয়ে অথবা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষ নিজের নফস-প্রবৃত্তি বা অন্য মানুষের ও শয়তানের অনুসরণ করে অসত্য পথে যা কিছুই করে, তা সবই নেতিবাচক অংশে স্থান লাভ করবে। আর এ নেতিবাচক অংশটি কেবল যে মূল্যহীন হবে তাই নয়, বরং এটি মানুষের ইতিবাচক অংশের মর্যাদাও কমিয়ে দেবে। কাজেই মানুষের জীবনের সমুদয় কার্যাবলীর ভাল অংশ যদি তার মন্দ অংশের ওপর বিজয় লাভ করে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক কিছু দেবার পরও তার হিসেবে কিছু না কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবেই আখেরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব।

[৪] এখানে ক্ষতি বলতে কি তা বলা হয়নি। অন্য আয়াতে সেটা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে, তার স্থান হবে হা-ওয়িয়াহ’, আর আপনাকে কিসে জানাবে সেটা কী? অত্যন্ত উত্তপ্ত আগুন” [সূরা আল-কারি’আহ: ৮-১১] আরও বলেন, “আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়” [সূরা আল-মুমিনুন: ১০৩-১০৪]

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৮) অর্থাৎ আল্লাহর ন্যায়ের তুলাদণ্ডে সেদিন ওজন ও সত্য হবে পরস্পরের সমার্থক। সত্য বা হক ছাড়া কোন জিনিসের সেখানে কোন ওজন থাকবে না। আর ওজন ছাড়াও কোন জিনিস সত্য সাব্যস্ত হবে না। যার সাথে যতটুকু সত্য থাকবে সে হবে ততটুকু ওজনদার ও ভারী। ওজনের পরিপ্রক্ষিতেই সব কিছু ফয়সালা হবে। অন্য কোন জিনিসের বিন্দুমাত্রও মর্যাদা ও মূল্য দেয়া হবে না। মিথ্যা ও বাতিলের স্থিতিকাল দুনিয়ায় যতই দীর্ঘ ও বিস্তৃত থাকুক না কেন এবং আপাতদৃষ্টিতে তার পেছনে যতই জাঁকজমক, শান-শওকত ও আড়ম্বর শোভা পাক না কেন, এ তুলাদণ্ডে তা একেবারেই ওজনহীন প্রমাণিত হবে। বাতিলপন্থীদেরকে যখন এ তুলাদণ্ডে ওজন করা হবে, তারা নিজেদের চোখেই দেখে নেবে দুনিয়ায় দীর্ঘকাল ধরে তারা যা কিছু করেছিল তার ওজন একটি মাছির ডানার সমানও নয়। সূরা কাহাফের শেষ তিনটি আয়াতে একথাটিই বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যারা দুনিয়ার জীবনে সবকিছু দুনিয়ারই জন্য করে গেছে এবং আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে এ ভেবে কাজ করেছে যে, পরকাল বলে কিছু নেই, কাজেই কারোর কাছে নিজের কাজের হিসেব দিতে হবে না, আখেরাতে আমি তাদের কার্যকলাপের কোন ওজন দেবো না।

টিকা:৯) এ বিষয়টিকে এভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে যে, মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলী দু’টি অংশে বিভক্ত হবে। একটি ইতিবাচক বা সৎ কাজ এবং অন্যটি নেতিবাচক বা অসৎ কাজ। ইতিবাচক অংশের অন্তর্ভুক্ত হবে সত্যকে জানা ও মেনে নেয়া এবং সত্যের অনুসরণ করে সত্যের খাতিরে কাজ করা। আখেরাতে একমাত্র এটিই হবে ওজনদার, ভারী ও মূল্যবান। অন্যদিকে সত্য থেকে গাফিল হয়ে অথবা সত্য থেকে বিচ্যূত হয়ে মানুষ নিজের নফস-প্রবৃত্তি বা অন্য মানুষের ও শয়তানের অনুসরণ করে অসত্য পথে যা কিছুই করে, তা সবই নেতিবাচক অংশে স্থান লাভ করবে। আর এ নেতিবাচক অংশটি কেবল যে, মূল্যহীনই হবে তাই নয় বরং এটি মানুষের ইতিবাচক অংশের মর্যাদাও কমিয়ে দেবে।

কাজেই মানুষের জীবনের সমুদয় কার্যাবলীর ভাল অংশ যদি তার মন্দ অংশের ওপর বিজয় লাভ করে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক কিছু দেবার পরও তার হিসেবে কিছু না কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবেই আখেরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব। আর যে ব্যক্তির জীবনের মন্দ কাজ সমস্ত ভাল কাজকে মূল্যহীন করে দেবে তার অবস্থা হবে সেই দেউলিয়া ব্যবসায়ীর মত যার সমুদয় পুঁজি ক্ষতিপূরণ ও দাবী পূরণ করতে করতেই শেষ হয়ে যায় এবং এরপরও কিছু কিছু দাবী তার জিম্মায় অনাদায়ী থেকে যায়।

Leave a Reply