(Book# 114/٣٠٣)-৫০৬ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ৪২-৪৩ নং আয়াত:- اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ তারাই হবে জান্নাতবাসী, Destination of Righteous Believers

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٠٣)-৫০৬
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
৪২-৪৩ নং আয়াত:-
اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ
তারাই হবে জান্নাতবাসী,
Destination of Righteous Believers

وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَا نُکَلِّفُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَہَاۤ ۫ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۴۲﴾
যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে এমন কোন ব্যক্তিকে আমি তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করিনা – তারাই হবে জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

وَ نَزَعۡنَا مَا فِیۡ صُدُوۡرِہِمۡ مِّنۡ غِلٍّ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہِمُ الۡاَنۡہٰرُ ۚ وَ قَالُوا الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ الَّذِیۡ ہَدٰىنَا لِہٰذَا ۟ وَ مَا کُنَّا لِنَہۡتَدِیَ لَوۡ لَاۤ اَنۡ ہَدٰىنَا اللّٰہُ ۚ لَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِالۡحَقِّ ؕ وَ نُوۡدُوۡۤا اَنۡ تِلۡکُمُ الۡجَنَّۃُ اُوۡرِثۡتُمُوۡہَا بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۴۳﴾
আর তাদের অন্তরে যা কিছু ঈর্ষা ও বিদ্বেষ রয়েছে তা আমি দূর করে দিব, তাদের নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে; তখন তারা বলবেঃ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন, আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করলে আমরা পথ পেতামনা, আমাদের রবের প্রেরিত রাসূলগণ সত্য বাণী নিয়ে এসেছিলেন। আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবেঃ তোমরা যে (ভাল) ‘আমল করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে।

৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহ পাক হতভাগা ও পাপীদের অবস্থা বর্ণনার পর এখন ভাগ্যবান ও সৎ লোকদের অবস্থা বর্ণনা করছেন। তিনি বলেনঃ যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তারা ঐ লোকদের থেকে পৃথক যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। এখানে এই বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে যে, ঈমান ও আমল কোন কঠিন ব্যাপার নয়; বরং খুবই সহজ ব্যাপার। তাই ইরশাদ হচ্ছে- আমি যে শরঈ বিধান জারি করেছি এবং ঈমান ও সৎ আমল ফরয করে দিয়েছি তা মানুষের সাধ্যের অতিরিক্ত নয়। আমি কখনও কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেই না। এই লোকগুলোই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী। মুমিনদের অন্তরে পারস্পরিক যা কিছু হিংসা ও বিদ্বেষ থাকবে তা আমি বের করে দেবো। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনরা যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী পুলের উপর আটক করা হবে। অতঃপর তাদের ঐসব অত্যাচার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে যা দুনিয়ায় তাদের পরস্পরের মধ্যে করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ঐ অত্যাচার ও হিংসা বিদ্বেষ থেকে যখন তাদের অন্তরকে পাক সাফ করা হবে তখন তাদেরকে জান্নাতের পথ প্রদর্শন করা হবে। আল্লাহর শপথ! তাদের কাছে তাদের জান্নাতের ঘর তাদের পার্থিব ঘর থেকে বেশী পরিচিত হবে। জান্নাতবাসীকে যখন জান্নাতের দিকে প্রেরণ করা হবে তখন তারা জান্নাতের পার্শ্বে একটা গাছ পাবে যার নিম্নদেশ দিয়ে দু’টি নিঝরিণী প্রবাহিত হতে থাকবে। একটা থেকে যখন তারা পানি পান করবে তখন তাদের অন্তরে যা কিছু হিংসা বিদ্বেষ ছিল সব কিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে শরাবে তহুর বা পবিত্র মদ। আর অন্য ঝরণায় তারা গোসল করবে। তখন জান্নাতের মতই সজীবতা ও প্রফুল্লতা তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে। এর পর না তাদের মাথার চুল এলোমেলো হবে, না চোখে সুরমা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। অতঃপর এই লোকগুলো দলে দলে জান্নাতের দিকে রওয়ানা হয়ে যাবে।”

হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “আমি আশা করি যে, ইনশাআল্লাহ আমি, হযরত উসমান (রাঃ), হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো যাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ ছিল, কিন্তু সমস্ত পরিষ্কার করে দেয়া হবে।” হযরত আলী (রাঃ) বলতেনঃ “আল্লাহর কসম! আমাদের মধ্যে আহলে বদরও রয়েছেন এবং তাদের সম্পর্কেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক জান্নাতীকে জাহান্নামের ঠিক আল্লাহ আমাকে সুপথ প্রদর্শন না করতেন তবে আমার ঠিকানা এটাই হতো। এ জন্যে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আর প্রত্যেক জাহান্নামীকে জান্নাতের ঠিকানা বলে দেয়া হবে। সে বলবে- হায়! যদি আল্লাহ আমাকেও সুপথ প্রদর্শন করতেন তবে এটাই আমার ঠিকানা হতো। এভাবে দুঃখ ও আফসোস তাকে ছেয়ে ফেলবে। ঐ মুমিনদেরকে যখন জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হবে তখন তাদেরকে বলা হবে- এই জান্নাত হচ্ছে তোমাদের সৎকর্মের ফল স্বরূপ তোমাদের পুরস্কার। তোমাদেরকে যে জান্নাতে প্রবিষ্ট করা হয়েছে এটা সত্যি আল্লাহর রহমতই বটে। নিজেদের আমল অনুযায়ী আপন আপন ঠিকানা বানিয়ে নাও। আর এ সবকিছুই হচ্ছে আল্লাহর রহমতেরই কারণ।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকেই যেন এ কথা জেনে রাখে যে, তার আমল তাকে জান্নাতে পৌছায় না।” তখন জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার আমলও কি নয়?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, আমার আমলও নয়, যদি না আল্লাহর রহমত আমার উপর বর্ষিত হয়।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 42-43
اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ
Destination of Righteous Believers …

 

After Allah mentioned the condition of the miserable ones, He then mentioned the condition of the happy ones, saying,

وَالَّذِينَ امَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ

But those who believed, and worked righteousness,

Their hearts have believed and they performed good deeds with their limbs and senses, as compared to those who disbelieved in the Ayat of Allah and were arrogant with them.

Allah also said that embracing faith and implementing it are easy, when He said,

وَالَّذِينَ امَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا أُوْلَـيِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ

But those who believed, and worked righteousness — We burden not any person beyond his scope — such are the dwellers of Paradise. They will abide therein. And We shall remove from their breasts any Ghill;

meaning, envy and hatred.

Al-Bukhari recorded that Abu Sa`id Al-Khudri said that the Messenger of Allah said,

إِذَا خَلَصَ الْمُوْمِنُونَ مِنَ النَّارِ حُبِسُوا عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَاقْتُصَّ لَهُمْ مَظَالِمَ كَانَتْ بَيْنَهُمْ فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ أَحَدَهُمْ بِمَنْزِلِهِ فِي الْجَنَّةِ أَدَلُّ مِنْهُ بِمَسْكَنِهِ كَانَ فِي الدُّنْيَا

After the believers are saved from entering the Fire, they will be kept in wait by a bridge between Paradise and Hellfire. Then, transgression that occurred between them in the life of this world will be judged. Until, when they are purified and cleansed, they will be given permission to enter Paradise. By He in Whose Hand is my soul! One of them will be able to find his dwelling in Paradise more so than he did in the life of this world.

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الَانْهَارُ

And We shall remove from their breasts any Ghill; rivers flowing under them,

As-Suddi said,

“When the people of Paradise are taken to it, they will find a tree close to its door, and two springs from under the trunk of that tree. They will drink from one of them, and all hatred will be removed from their hearts, for it is the cleansing drink. They will take a bath in the other, and the brightness of delight will radiate from their faces. Ever after, they will never have messy hair or become dirty.”

An-Nasa’i and Ibn Marduwyah (this being his wording) recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

كُلُّ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ فَيَقُولُ لَوْلَا أَنَّ اللهَ هَدَانِي فَيَكُونُ لَهُ شُكْرًا وَكُلُّ أَهْلِ النَّارِ يَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ لَوْ أَنَّ اللهَ هَدَانِي فَيَكُونُ لَهُ حَسْرَة

Each of the people of Paradise will see his seat in the Fire and he will say, `Had not Allah guided me! And this will cause him to be grateful. Each of the people of the Fire will see his seat in Paradise, and he will say, `Might that Allah had guided me!’ So it will be a cause of anguish for him.

وَقَالُواْ

and they will say:

الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَـذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلا أَنْ هَدَانَا اللّهُ لَقَدْ جَاءتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ

“All the praises and thanks be to Allah, Who has guided us to this, and never could we have found guidance, were it not that Allah had guided us! Indeed, the Messengers of our Lord did come with the truth.”

This is why when the believers are awarded seats in Paradise that belonged to the people of the Fire, they will be told,

وَنُودُواْ أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

And it will be cried out to them:”This is the Paradise which you have inherited for what you used to do.”

This means, because of your good deeds, you earned Allah’s mercy and thus entered Paradise and took your designated dwellings in it, comparable to your deeds.

This is the proper meaning here, for it is recorded in the Two Sahihs that the Prophet said,

وَاعْلَمُوا أَنَّ أَحَدَكُمْ لَنْ يُدْخِلَهُ عَمَلُهُ الْجَنَّة

And know that the good deeds of one of you will not admit him into Paradise.

They said, “Not even you, O Allah’s Messenger!”

He said,

وَلَا أَنَا إِلاّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللهُ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْل

Not even I, unless Allah grants it to me out of His mercy and favor.

৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

যারা ঈমানদার ও সৎ আমলকারী হবে তারা জান্নাতে থাকবে।

(مِّنْ غِلٍّ) অর্থাৎ জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে তাদের অন্তরের সকল হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেয়া হবে। তাই যারা জান্নাতে থাকবে তাদের কোন প্রকার হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: জান্নাতীদেরকে যখন জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে একটি সেতুর ওপর আটকে রাখা হবে এবং তাদের পরস্পরের প্রতি যে জুলুম অত্যাচার করেছিল একে অপরকে তার প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে। পরিশেষে যখন তারা পাক-পবিত্র হয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৪৪০)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: প্রত্যেক জান্নাতবাসী জাহান্নামে তার আসন দেখতে পাবে, অতঃপর বলবে: যদি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে হিদায়াত না দিতেন (তাহলে তা থেকে মুক্তি পেতাম না), সে তখন আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করবে। অনুরূপ প্রত্যেক জাহান্নামীও জান্নাতে তার আসন দেখতে পাবে, অতঃপর বলবে: যদি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে হিদায়াত দিতেন (তাহলে সেখানে প্রবেশ করতে পারতাম।) এভাবে সে আফসোস করবে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ১০৬৫২, সনদ সহীহ)

(بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ)

অর্থাৎ তোমাদের আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলার রহমত লাভ করেছ ফলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলে। কেননা আল্লাহ তা‘আলার রহমত ছাড়া আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারতে না।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: জেনে রেখ! আমাদের কেউ আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা বলল: আপনিও না হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ)? উত্তরে তিনি বলেন: আমিও না! তবে যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে ঢেকে না নেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫৪৬৩)

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার রহমত পাওয়ার জন্য বেশি বেশি সৎ আমল করতে হবে। তাহলে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব হবে ইনশা-আল্লাহ।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

দুনিয়ার জীবনে এ সৎলোকদের মধ্যে কিছু পারস্পরিক তিক্ততা, মনোমালিন্য ও ভুল বুঝাবুঝি থেকে থাকলেও আখেরাতের জীবনে তা সব দূর করে দেয়া হবে। তাদের মন পরস্পরের ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা পরস্পর আন্তরিকতা সম্পন্ন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ায় যে ব্যক্তি তাদের বিরোধী ছিল, যে তাদের সাথে লড়াই করেছিল এবং তাদের বিরূপ সমালোচনা করেছিল, তাকে তাদের সাথে জান্নাতের আপ্যায়নে শামিল থাকতে দেখে তাদের কারোর মনে কোন প্রকার কষ্টের উদ্রেক হবে না। এ আয়াতটি পড়ে হযরত আলী (রা.) বলেছিলেনঃ আমি আশা করি, আল্লাহ‌ আমার, উসমানের, তালহার ও যোবাইরের মধ্যে সাফাই করে দেবেন।

এ আয়াতটিকে ব্যাপকতর দৃষ্টিতে দেখলে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, এ দুনিয়ায় সৎলোকদের গায়ে ঘটনাক্রমে যেসব দাগ বা কলঙ্ক লেগে যায়, সেই দাগগুলো সহকারে আল্লাহ‌ তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন না। বরং সেখানে প্রবেশ করার আগে নিজের বিশেষ অনুগ্রহে তাদেরকে একেবারে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে নেবেন এবং একটি নিরেট নিষ্কলঙ্ক জীবন নিয়ে তারা সেখানে উপস্থিত হবেন।

বেহেশত এ ধরনের একটি মজার ব্যাপার ঘটবে। জান্নাতবাসীরা নিজেদের কাজের জন্য অহংকারে মেতে উঠবে না। তারা একথা মনে করবে না যে, তারা এমন কাজ করেছিল যার বিনিময়ে তাদের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গিয়েছিল। বরং তারা আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে পঞ্চমুখ হয়ে উঠবে। তারা বলবে, এসব আমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ, নয়তো আমরা এর যোগ্য ছিলাম না। অন্যদিকে আল্লাহ‌ তাদের ওপর নিজের অনুগ্রহের বড়াই করবেন না। বরং জবাবে বলবেন, তোমরা নিজেদের কাজের বিনিময়ে এ মর্যাদার অধিকারী হয়েছো। তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হচ্ছে সবই তোমাদের মেহনতের ফসল। এগুলো ভিক্ষে করে পাওয়া নয় বরং তোমাদের প্রচেষ্টার ফল এবং তোমাদের কাজের মজুরী। নিজেদের মেহনতের বিনিময়ে তোমরা এসব সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের অধিকার লাভ করছো। অপর দিকে আল্লাহ‌ তাঁর জবাবের কথা এ ভাবে উল্লেখ করেছেন না যে, “আমি একথা বলবো”, বরং তিনি বলছেন, “আওয়াজ ধ্বনিত হবে”,-এভাবে বর্ণনা করার কারণে বিষয়টি আরো বেশী আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে।

আসলে এই একই ধরনের সম্পর্ক দুনিয়ায় আল্লাহ‌ ও তাঁর নেক বান্দাদের মধ্যেও রয়েছে। দুরাচারী লোকেরা দুনিয়ায় যে অনুগ্রহে লাভ করে থাকে তারা সেজন্য গর্ব করে বেড়ায়। তারা বলে থাকে, এসব আমাদের যোগ্যতা, প্রচেষ্টা-সাধনা ও কর্মের ফল। আর এ জন্যই তারা প্রত্যেকটি অনুগ্রহলাভের কারণে আরো বেশী অহংকারী ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীতে পরিণত হতে থাকে। বিপরীত পক্ষে সৎলোকেরা যে কোন অনুগ্রহ লাভ করুক না কেন তাকে অবশ্যি আল্লাহ‌ দান মনে করে। সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আল্লাহর দান যতই বাড়তে থাকে ততই তারা বিনয় প্রকাশ করতে থাকে এবং ততই তাদের দয়া, স্নেহ ও বদান্যতা বেড়ে যেতে থাকে। তারপর আখেরাতের ব্যাপারেও তারা নিজেদের সৎকর্মের জন্য অহংকারে মত্ত হয় না। তারা একথা বলে না যে, তাদের গুনাহখাতা নিশ্চিতভাবেই মাফ করে দেয়া হবে। বরং নিজেদের ভুল-ত্রুটির জন্য তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে। নিজেদের কর্মফলের পরিবর্তে আল্লাহর করুণা ও মেহেরবানীর ওপর পূর্ণ আস্থাশীল হয়। তারা সবসময় ভয় করতে থাকে, তাদের আমলনামায় প্রাপ্যের পরিবর্তে কোন দেনার খাত বের হয়ে না আসে। বুখারী ও মুসলিম উভয় হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃ

وَاعْلَمُوا أَنْ لَنْ يُدْخِلَ أَحَدَكُمْ عَمَلُهُ الْجَنَّةَ

“খুব ভালভাবেই জেনে রাখো, তোমরা নিছক নিজেদের কর্মকাণ্ডের জোরে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” লোকেরা জিজ্ঞাস করলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনিও? জবাব দিলেন, হাঁ আমিও-

إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِىَ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ

“হাঁ, তবে যদি আল্লাহ‌ আমাকে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহের আবরণে ঢেকে নেন।”

Leave a Reply