أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٠٨)-৫১১
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
৫২-৫৩ নং আয়াত:-
وَلَقَدْ جِيْنَاهُم بِكِتَابٍ
আর আমি তাদের নিকট এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম…
Certainly, We have brought to them a Book (the Qur’an) which….
وَ لَقَدۡ جِئۡنٰہُمۡ بِکِتٰبٍ فَصَّلۡنٰہُ عَلٰی عِلۡمٍ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۵۲﴾
আর আমি তাদের নিকট এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম যাকে আমি স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলাম এবং যা ছিল মু’মিনদের জন্য পথ নির্দেশ ও রাহমাতের প্রতীক।
ہَلۡ یَنۡظُرُوۡنَ اِلَّا تَاۡوِیۡلَہٗ ؕ یَوۡمَ یَاۡتِیۡ تَاۡوِیۡلُہٗ یَقُوۡلُ الَّذِیۡنَ نَسُوۡہُ مِنۡ قَبۡلُ قَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِالۡحَقِّ ۚ فَہَلۡ لَّنَا مِنۡ شُفَعَآءَ فَیَشۡفَعُوۡا لَنَاۤ اَوۡ نُرَدُّ فَنَعۡمَلَ غَیۡرَ الَّذِیۡ کُنَّا نَعۡمَلُ ؕ قَدۡ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ وَ ضَلَّ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ ﴿٪۵۳﴾
তারা কি এই অপেক্ষায়ই আছে যে, এর বিষয় বস্তু প্রকাশ করা হোক? যেদিন এর বিষয় বস্তু প্রকাশিত হবে সেদিন যারা এর আগমনের কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য বাণী নিয়ে এসেছিলেন, এমন কোন সুপারিশকারী আছে কি যারা আমাদের জন্য সুপারিশ করবে? অথবা আমাদেরকে কি পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো যেতে পারে যাতে আমরা পূর্বের কৃতকর্মের তুলনায় ভিন্ন কিছু করতে পারি? নিঃসন্দেহে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, আর তারা যেসব মিথ্যা (মা‘বূদ ও রসম রেওয়াজ) রচনা করেছিল, তাও তাদের হতে অন্তর্হিত হয়ে যাবে।
৫২-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের উপর দলীল পরিপূর্ণ করে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলেন এবং কিতাবসমূহ পাঠিয়েছিলেন। যেগুলোর মধ্যে স্পষ্ট দলীলসমূহ বিদ্যমান ছিল। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ এমন কিতাব যার আয়াতগুলো স্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট এবং প্রত্যেক কথাকে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। (১১:১) আর তার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ যে যে বিষয়গুলোর উপর আমি আলোকপাত করেছি সেগুলো সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত আছি। যেমন অন্য জায়গায় তিনি (আরবী) বলেছেন।
ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি আল্লাহ পাকের নিম্নের উক্তির সাথে সম্পর্ক রাখেঃ (আরবী) এই কিতাব যা তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে তোমার অন্তরে যেন কোন সন্দেহের উদ্রেক না হয়।’ (৭:২) আর এটা উপরোক্ত (আরবী) -এই আয়াতের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। ইবনে জারীর (রঃ)-এর একথাটি আপত্তি মূলক।
কেননা এ দু’টি আয়াতের মধ্যে দীর্ঘ ব্যবধান রয়েছে। তাছাড়া তাঁর এ দাবীর উপর কোন দলীলও নেই। এখানে কথা তো শুধু এটাই যে, তারা আখিরাতে কিরূপ ক্ষতির সম্মুখীন হবে এই খবর দেয়ার পর এটা তিনি উল্লেখ করেছেন যে, দুনিয়ায় রাসূল পাঠিয়ে ও কিতাব অবতীর্ণ করে তাদের সমুদয় ওযরের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি শাস্তি প্রদানকারী নই যে পর্যন্ত না রাসূল প্রেরণ করি।” (১৭:১৫) এ জন্যেই উপরোক্ত আয়াতে তিনি বলেছেনঃ অর্থাৎ তারা তো শুধু ঐ শাস্তির এবং জান্নাত বা জাহান্নামের অপেক্ষায় রয়েছে। যার অঙ্গীকার তাদের সাথে করা হয়েছে।
মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন যে, (আরবী) দ্বারা বিনিময় ও প্রতিদান বুঝানো হয়েছে। রাবী (রঃ) বলেন যে, হিসাবের দিনের আগমন পর্যন্ত এই প্রতিদান তারা পেতে থাকবে, শেষ পর্যন্ত জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে পৌঁছে যাবে। ঐ সময় বিনিময় আদান প্রদান শেষ হয়ে যাবে। যখন কিয়ামতের এই অবস্থা হবে তখন যেসব লোক দুনিয়ায় আমল পরিত্যাগ করেছিল তারা বলবে- আল্লাহর রাসূলগণ তো সত্য বাণী নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু এখন তারা কি আমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন বা অন্ততঃপক্ষে আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ করা হবে? তাহলে আমরা আর আমাদের পূর্বের ঐ আমল করবো না। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! যদি তুমি ঐ দৃশ্য দেখতে যখন পাপীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যে জাহান্নামের মুখে দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবে-হায়! যদি আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে আমরা কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না এবং মুমিন হয়েই থাকতাম। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, পূর্ব থেকেই কোন্ কথাটি তাদের অন্তরে লুক্কায়িত ছিল তা তারা জেনে ফেলেছে। আর যদি তাদেরকে পূনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়াও হয় তবে তখনও তারা সেখানে ঐ কাজই করবে যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হবে। আমরা এরূপ কাজ আর করবো না’ তাদের একথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যেমন এখানে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে। এখন তো জাহান্নামে তাদের চিরস্থায়ী বাসের পালা এসেছে। তাদের মূর্তি তাদের জন্যে সুপারিশ করতে পারে না এবং তাদেরকে শাস্তি থেকে মুক্তি দিতেও সক্ষম নয়।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 52-53
وَلَقَدْ جِيْنَاهُم بِكِتَابٍ
Certainly, We have brought to them a Book (the Qur’an) which….
The Idolators have no Excuse
Allah says
وَلَقَدْ جِيْنَاهُم بِكِتَابٍ
Certainly, We have brought to them a Book (the Qur’an) which,
Allah states that He has left no excuse for the idolators, for He has sent to them the Book that the Messenger came with, and which is explained in detail,
كِتَابٌ أُحْكِمَتْ ءايَـتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ
(This is) a Book, the Ayat whereof are perfected (in every sphere of knowledge), and then explained in detail. (11:1)
Allah said next,
فَصَّلْنَاهُ عَلَى عِلْمٍ
We have explained in detail with knowledge,
meaning, `We have perfect knowledge of what We explained in it.’
Allah said in another Ayah,
أَنزَلَهُ بِعِلْمِهِ
He has sent it down with His Knowledge, (4:166)
The meaning here is that after Allah mentioned the loss the idolators end up with in the Hereafter, He stated that He has indeed sent Prophets and revealed Books in this life, thus leaving no excuse for them.
Allah also said;
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولاً
And We never punish until We have sent a Messenger (to give warning). (17:15)
Allah said,
هُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُوْمِنُونَ
a guidance and a mercy to a people who believe.
Allah said here
هَلْ يَنظُرُونَ إِلاَّ تَأْوِيلَهُ
Await they just for the final fulfillment of the event,
in reference to what they were promised of torment, punishment, the Fire; or Paradise, according to Mujahid and several others.
يَوْمَ يَأْتِي تَأْوِيلُهُ
On the Day the event is finally fulfilled,
According to Ibn Abbas,
on the Day of Resurrection,
يَقُولُ الَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ
those who neglected it before will say,
those who ignored it in this life and neglected abiding by its implications will say,
قَدْ جَاءتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَاء فَيَشْفَعُواْ لَنَا
“Verily, the Messengers of our Lord did come with the truth, now are there any intercessors for us that they might intercede on our behalf!”
so that we are saved from what we ended up in.
أَوْ نُرَدُّ
“Or could we be sent back,”
to the first life,
فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ
“So that we might do (good) deeds other than those (evil) deeds which we used to do.”
This part of the Ayah is similar to Allah’s statement,
وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُواْ عَلَى النَّارِ فَقَالُواْ يلَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِـَايَـتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ
بَلْ بَدَا لَهُمْ مَّا كَانُواْ يُخْفُونَ مِن قَبْلُ وَلَوْ رُدُّواْ لَعَـدُواْ لِمَا نُهُواْ عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَـذِبُونَ
If you could but see when they will be held over the (Hell) Fire! They will say:”Would that we were but sent back! Then we would not deny the Ayat of our Lord, and we would be of the believers!”
Nay, it has become manifest to them what they had been concealing before. But if they were returned (to the world), they would certainly revert to that which they were forbidden. And indeed they are liars. (6:27-28)
Allah said here,
قَدْ خَسِرُواْ أَنفُسَهُمْ
Verily, they have lost themselves,
meaning, they destroyed themselves by entering the Fire for eternity,
وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ
And that which they used to fabricate has gone away from them.
What they used to worship instead of Allah abandoned them and will not intercede on their behalf, aid them or save them from their fate.
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৩৬) অর্থাৎ এতে পরিপূর্ণ বিশদ বিবরণ সহকারে যথার্থ সত্য, মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনে সঠিক কর্মনীতি এবং সঠিক জীবন পদ্ধতির মূল নীতিগুলো কি কি, তা বর্ণনা করা হয়েছে। তারপর নিছক আন্দাজ-অনুমান বা ধারণা-কল্পনার ভিত্তিতে এ বিস্তারিত বিবরণগুলো দেয়া হয়নি। বরং নির্ভেজাল ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে।
টিকা:৩৭) অর্থ হচ্ছে, প্রথমত এ কিতাবের বিষয়বস্তু ও এর শিক্ষাবলী এত বেশী স্পষ্ট যে, এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে যেকোন মানুষের সামনে সত্য পথ পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠতে পারে। তাছাড়া যারা এ কিতাবকে মানে, এ কিতাবটি তাদের জীবনে কেমন সঠিক পথনির্দেশনা দেয় এবং এটি যে কত বড় অনুগ্রহ তা তাদের জীবনে ঘটনাবলী থেকে কার্যত প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। এর প্রভাব গ্রহণ করার সাথে সাথেই মানুষের মন-মানস, নৈতিক বৃত্তি ও চরিত্রে সর্বোত্তম বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। এ কিতাবের প্রতি ঈমান আনার পর সাহাবায়ে কেরামের জীবনে যে বিস্ময়কর পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল তার দিকে এখানে ইশারা করা হয়েছে।
টিকা:৩৮) এ বিষয়বস্তুটিকে অন্য কথায় এভাবে বলা যেতে পারে, এক ব্যক্তিকে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয় কিন্তু এরপরও সে তা মানতে প্রস্তুত হয় না। তারপর তার সামনে কিছু লোক সঠিক পথে চলে দেখিয়েও দেয় যে, ভুল পথ চলার সময় তারা কেমন ছিল এবং এখন সঠিক পথ অবলম্বন করার পর তাদের জীবনে কত ভাল পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এ থেকেও ঐ ব্যক্তি কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না। তাহলে এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে, এখন ঐ ব্যক্তি নিজের ভুল পথে চলার শাস্তি লাভ করার পরই কেবল একথা মেনে নেবে যে, সে ভুল পথে ছিল। যে ব্যক্তি ডাক্তারের জ্ঞানগর্ভ পরামর্শ গ্রহণ করে না এবং নিজের মত অসংখ্য রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ মত চলে রোগমুক্ত হতে দেখেও তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না, সে এখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়েই কেবল একথা স্বীকার করবে যে, যেভাবে ও যে পদ্ধতিতে সে জীবন যাপন করে আসছিল তা সত্যিই তার জন্য ধ্বংসকর ছিল।
টিকা:৩৯) অর্থাৎ তারা পুনর্বার এ দুনিয়ায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। তারা বলবে, আমাদের যে সত্যের খবর দেয়া হয়েছিল এবং তখন আমরা যে সত্যটি মেনে নেইনি, এখন চাক্ষুষ দেখার পর আমরা সে ব্যাপারে জেনে গেছি। কাজেই এখন যদি আমাদের আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে এখন আমাদের কর্মপদ্ধতি আর আগের মত হবে না। (এ মিনতি এবং এর কি জবাব দেয়া হবে তা জানার জন্য দেখুন সুরা আনআমের আয়াত ২৭-২৮ , ইবরাহীম ৪৪-৪৫ , সাজদা ১২-১৩ , ফাতের ৩৭ , যুমার ৫৮-৫৯ , মু’মিন ১১-১২)।