أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٠٩)-৫১২
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
৫৪ নং আয়াত:-
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالَامْرُ
জেনে রেখ, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি,
Surely, His is the creation and commandment.
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّہَارَ یَطۡلُبُہٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِہٖ ؕ اَلَا لَہُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۵۴﴾
নিশ্চয়ই তোমাদের রাব্ব হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমাসীন হন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে ওরা একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে ত্বরিত গতিতে; সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজী সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। জেনে রেখ, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি, সারা জাহানের রাব্ব আল্লাহ হলেন বারাকাতময়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখানে দিন শব্দটি প্রচলিত ২৪ ঘণ্টার দিন অর্থে অথবা যুগ বা কাল (PERIOD) অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে। শেষোক্ত অর্থে কুরআনে একাধিক ব্যবহার লক্ষণীয়। যেমন সুরা হজ্জের ৬ রুকূ’তে আয়াত ৪৭ এ বলা হয়েছেঃ
وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
(আর প্রকৃতপক্ষে তোমরা যে হিসাব কষে থাকো, সেই দৃষ্টিতে তোমার রবের এখানে একটি দিন এক হাজার বছরের সমান)।
আবার সূরা মা’আরিজ-এর ৪নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
(ফেরেশতারা ও জিব্রীল তাঁর দিকে আরোহণ করে একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর)। তবে এখানে ‘দিন’ শব্দের প্রকৃত তাৎপর্য কি, তা আল্লাহই ভাল জানেন। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা হামীম সাজদা-টীকা ১১-১৫ )
আল্লাহর “ইস্তিওয়া আলাল আরশ”(কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন হওয়া) এর বিস্তারিত স্বরূপ অনুধাবন করা আমাদের পক্ষে কঠিন। খুব সম্ভবত সমগ্র বিশ্ব-জাহান সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ কোন একটি স্থানকে তাঁর এ অসীম সাম্রাজ্যের কেন্দ্র নির্ধারণ করেন এবং সেখানে নিজের আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণকে কেন্দ্রীভূত করে দেন আর তারই নাম দেন “আরশ” (কর্তৃত্বের আসন)। সেখান থেকে সমগ্র বিশ্বজাহানের নব নব সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে ও ক্রমাগত শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটছে, সেই সাথে সৃষ্টি জগতের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাও অব্যাহত রয়েছে। আবার এও সম্ভব হতে পারে যে, আরশ অর্থ শাসন কর্তৃত্ব এবং আরশের ওপর সমাসীন হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ এ বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করার পর এর শাসন দণ্ড নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। মোটকথা আরশের ওপর সমাসীন হওয়ার বিস্তারিত অর্থ যাই হোক না কেন, মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ যে এ বিশ্ব-জগতের নিছক স্রষ্টাই নন বরং এর পরিচালক ও ব্যবস্থাপকও একথা ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করানোই কুরআনে এর উল্লেখের আসল উদ্দেশ্য। তিনি এ দুনিয়াকে অস্তিত্বশীল করার পর এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে কোথাও বসে যাননি। বরং কার্যত তিনিই সারা বিশ্ব-জাহানের ছোট বড় প্রত্যেকটি বস্তুর ওপর কর্তৃত্ব করছেন। পরিচালনা ও শাসন কর্তৃত্বের যাবতীয় ক্ষমতা কার্যত তাঁরই হাতে নিবদ্ধ। প্রতিটি বস্তু তাঁর নির্দেশের অনুগত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণাও তাঁর নির্দেশ মেনে চলে। প্রতিটি বস্তু ও প্রাণীর ভাগ্যই চিরন্তনভাবে তাঁর নির্দেশের সাথে যুক্ত। যে মৌলিক বিভ্রান্তিটির কারণে মানুষ কখনো শিরকের গোমরাহীতে লিপ্ত হয়েছে, আবার কখনো নিজেকে স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন ঘোষণা করার মতো ভ্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কুরআন এভাবে তার মূলোৎপাটন করতে চায়। বিশ্ব-জাহানের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা থেকে আল্লাহকে কার্যত সম্পর্কহীন মনে করার অনিবার্য ফল দাঁড়ায় দু’টি। মানুষ নিজের ভাগ্যকে অন্যের হাতে বন্দি মনে করবে এবং তার সামনে মাথা নত করে দেবে অথবা নিজেকেই নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা মনে করবে এবং নিজেকে সর্বময় কর্তৃত্বশালী স্বাধীন সত্তা মনে করে কাজ করে যেতে থাকবে।
এখানে আরো একটি কথা প্রণিধানযোগ্য। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক সুস্পষ্ট করার জন্য কুরআন মজীদে মানুষের ভাষা থেকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এমন সব শব্দ পরিভাষা, উপমা ও বর্ণনাভংগী গ্রহণ করা হয়েছে, যা রাজত্ব ও বাদশাহীর সাথে সম্পর্ক রাখে। এ বর্ণনাভংগী কুরআনে এত বেশী স্পষ্ট যে, অর্থ বুঝে কুরআন পাঠকারী যে কোন ব্যক্তিই এ বিষয়টি অনুভব না করে থাকতে পারবেন না। কোন কোন অর্বাচীন সমালোচক স্বীয় বিকৃত চিন্তা ও মানসিকতার কারণে এ বাচনভংগী থেকে বুঝেছেন যে, এ কিতাবটি যে যুগের “রচনা” সে যুগে মানুষের মন-মস্তিষ্কে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রভাব ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল। তাই এ কিতাবের রচয়িতা (এ বিবেকহীন নিন্দুকদের মতে এর রচয়িতা নাকি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহকে একজন রাজা ও বাদশাহ হিসেবেই পেশ করেছেন। অথচ কুরআন যে শাশ্বত ও অনাদি-অনন্ত সত্য উপস্থাপন করছে তা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সে সত্যটি হচ্ছে, ভুমণ্ডলে ও নভোমণ্ডলে একমাত্র আল্লাহর রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত। সার্বভৌমত্ব ( Sovereignty ) বলতে যা বুঝায় তা একমাত্র তারই সত্তার একচেটিয়া অধিকার ও বৈশিষ্ট্য। আর বিশ্ব-জাহানের এ ব্যবস্থাপনা একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা বিশেষ, যেখানে ঐ একক সত্তা, সমস্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। কাজেই এ ব্যবস্থার মধ্যে যে ব্যক্তি বা দল নিজের বা অন্য কারুর আংশিক বা পূর্ণ কর্তৃত্বের দাবীদার হয়, সে নিজেকে নিছক প্রতারণার জালে আবদ্ধ করে রেখেছে। তাছাড়া এ ব্যবস্থার মধ্যে অবস্থান করে মানুষ পক্ষে ঐ একক সত্তাকে একই সাথে ধর্মীয় অর্থেও একমাত্র মাবুদ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অর্থেও একমাত্র শাসক ( Sovereign ) হিসেবে মেনে নেয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোন সঠিক দৃষ্টিভংগী ও কর্মনীতি হতে পারে না।
”আরশের উপর সমাসীন হলেন” বাক্যটির মাধ্যমে সংক্ষেপে যে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছিল এখানে তারই কিছুটা অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ নিছক স্রষ্টাই নন, তিনি হুকুমকর্তা এবং শাসকও। তিনি সৃষ্টি করার পর নিজের সৃষ্ট বস্তুসমূহকে অন্যের কর্তৃত্বে সোপর্দ করে দেননি অথবা সমগ্র সৃষ্টিকে বা তার অংশ বিশেষকে ইচ্ছামত চলার জন্য স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেননি। বরং কার্যত সমগ্র বিশ্ব-জগতের পরিচালনা ব্যবস্থা আল্লাহর নিজের হাতেই কেন্দ্রীভূত রয়েছে। দিন রাত্রির আবর্তন আপনা আপনিই হচ্ছে না। বরং আল্লাহর হুকুমে হচ্ছে। তিনি যখনই চাইবেন দিন ও রাতকে থামিয়ে দেবেন আবার যখনই চাইবেন এ ব্যবস্থা বদলে দেবেন। সূর্য, চন্দ্র, তারকা এরা কেউ নিজস্ব কোন শক্তির অধিকারী নয়। বরং এরা সবাই সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। এরা একান্ত অনুগত দাসের মত সেই কাজই করে যাচ্ছে যে কাজে আল্লাহ এদেরকে নিযুক্ত করেছেন।
বরকতের আসল অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি, উন্নতি, বিকাশ। এই সঙ্গে এ শব্দটির মধ্যে একদিকে উচ্চতা ও মহত্বের ভাবধারা নিহিত রয়েছে এবং অন্যদিকে রয়েছে স্থীতিশীলতা ও অবিচলতার ভাবধারাও। আবার মঙ্গল ও কল্যাণের ভাবধারাও নিশ্চিতভাবে এসব অর্থের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই আল্লাহর বড়ই বরকতের অধিকারী হবার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, তাঁর মঙ্গল ও কল্যাণের কোন সীমা নেই। তাঁর সত্তা থেকে সীমাহীন কল্যাণ চতুর্দিকে বিস্তৃত হচ্ছে এবং তিনি অতি উন্নত ও শ্রেষ্ঠ এক সত্তা। তাঁর মহত্বের কোন শেষ নেই। আর তাঁর এ কল্যাণ, মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চিরস্থায়ী ও অনন্তকালীন-সাময়িক নয়। এর ক্ষয়ও নেই। পতনও নেই। (আল-ফুরকান, টীকা ১-১৯ দ্রষ্টব্য)।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 54
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالَامْرُ
Surely, His is the creation and commandment.
The Universe was created in Six Days
Allah says;
إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
Indeed, your Lord is Allah, Who created the heavens and the earth in Six Days,
Allah states that He created the universe, the heavens and earth and all that is in, on and between them in six days, as He has stated in several Ayat in the Qur’an.
These six days are:Sunday, Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday and Friday. On Friday, the entire creation was assembled and on that day, Adam was created. There is a difference of opinion whether these days were the same as our standard days as suddenly comes to the mind, or each day constitutes one thousand years, as reported from Mujahid, Imam Ahmad bin Hanbal, and from Ibn Abbas according to Ad-Dahhak’s narration from him. As for Saturday, no creation took place in it since it is the seventh day of (of the week). The word `As-Sabt’ means stoppage, or break.
Imam Ahmad recorded Abu Hurayrah saying:
Allah’s Messenger told me:
خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الاَْحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الاْثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلَثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الاَْرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ ادَمَ عَلَيْهِ السَّلَمُ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْم الْجُمُعَةِ فِي اخِرِ الْخَلْقِ فِي اخِرِ سَاعَةٍ مِنْ سَاعَاتِ الْجُمُعَةِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْل
Allah created the dust on Saturday, and He created the mountains on Sunday, and He created the trees on Monday, and He created the unpleasant things on Tuesday and He created the light on Wednesday and He spread the creatures through out it on Thursday and He created Adam after Asr on Friday. He was the last created during the last hour of Friday, between Asr and the night.
Meaning of Istawa
As for Allah’s statement,
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
and then He rose over (Istawa) the Throne.
the people had several conflicting opinions over its meaning. However, we follow the way that our righteous predecessors took in this regard, such as Malik, Al-Awza`i, Ath-Thawri, Al-Layth bin Sa`d, Ash-Shafi`i, Ahmad, Ishaq bin Rahwayh and the rest of the scholars of Islam, in past and present times.
Surely, we accept the apparent meaning of, Al-Istawa, without discussing its true essence, equating it (with the attributes of the creation), or altering or denying it (in any way or form). We also believe that the meaning that comes to those who equate Allah with the creation is to be rejected, for nothing is similar to Allah,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَىْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
There is nothing like Him, and He is the All-Hearer, the All-Seer. (42:11)
Indeed, we assert and affirm what the Imams said, such as Nu`aym bin Hammad Al-Khuza’i, the teacher of Imam Al-Bukhari, who said,
“Whoever likens Allah with His creation, will have committed Kufr.
Whoever denies what Allah has described Himself with, will have committed Kufr.
Certainly, there is no resemblance (of Allah with the creation) in what Allah and His Messenger have described Him with.
Whoever attests to Allah’s attributes that the plain Ayat and authentic Hadiths have mentioned, in the manner that suits Allah’s majesty, all the while rejecting all shortcomings from Him, will have taken the path of guidance.”
The Day and the Night are among the Signs of Allah
Allah said,
يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا
He brings the night as a cover over the day, seeking it rapidly,
meaning, the darkness goes away with the light, and the light goes away with the darkness. Each of them seeks the other rapidly, and does not come late, for when this vanishes, the other comes, and vice versa.
Allah also said;
وَءَايَةٌ لَّهُمُ الَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ
وَالشَّمْسُ تَجْرِى لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَـا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَـهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالعُرجُونِ الْقَدِيمِ
لَا الشَّمْسُ يَنبَغِى لَهَأ أَن تدْرِكَ القَمَرَ وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
And a sign for them is the night. We withdraw therefrom the day, and behold, they are in darkness. And the sun runs on its fixed course for a term (appointed). That is the decree of the All-Mighty, the All-Knowing. And the moon, We have measured for it mansions (to traverse) till it returns like the old dried curved date stalk. It is not for the sun to overtake the moon, nor does the night outstrip the day. They all float, each in an orbit. (36:37-40)
Allah’s statement,
وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ
(Nor does the night outstrip the day) (36:40) means,
the night follows the day in succession and does not come later or earlier than it should be.
This is why Allah said here,
يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ
seeking it rapidly, and (He created) the sun, the moon, the stars subjected to His command.
meaning, all are under His command, will and dominion.
Allah alerted us afterwards,
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالَامْرُ
Surely, His is the creation and commandment,
the dominion and the decision.
Allah said next,
تَبَارَكَ اللّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
Blessed is Allah, the Lord of the all that exists!
which is similar to the Ayah,
تَبَارَكَ الَّذِى جَعَلَ فِى السَّمَأءِ بُرُوجاً
Blessed be He Who has placed in the heaven big stars. (25:61)
Abu Ad-Darda’ said a supplication, that was also attributed to the Prophet,
اللَّهُمَّ لَكَ الْمُلْكُ كُلُّـهُ وَلَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ وَإِلَيْكَ يُرْجَعُ الاَْمْرُ كُلُّهُ أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّه
O Allah! Yours is all the kingdom, all the praise, and Yours is the ownership of all affairs. I ask You for all types of good and seek refuge with You from all types of evil.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা। আসমান ও যমীনকে তিনি ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। যার বর্ণনা কোরআন কারীমের কয়েক জায়গায় এসেছে। ঐ ছয়দিন হচ্ছে রবিবার। সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। শুক্রবারেই সমস্ত মাখলুক একত্রিত হয়। ঐ দিনেই হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়। দিনগুলো এই দিনের মতই ছিল কি এক হাজার বছর বিশিষ্ট দিনগুলো ছিল এ ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর ধারণা মতে দিনগুলো ছিল হাজার বছর বিশিষ্ট দিন। এখন থাকলো শনিবার । ঐদিনে কিছু সৃষ্টি করা হয়নি। ঐদিন সৃষ্টিকার্য বন্ধ ছিল। একারণেই ঐ সপ্তম দিন অর্থাৎ শনিবারের দিনকে (আরবী) বলা হয়। আর (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে কাতা’ বা কর্তন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার হাত ধরে রয়েছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা শনিবারে সৃষ্টি করেন যমীন, রবিবারে সৃষ্টি করেন পাহাড়-পর্বত, সোমবারে সৃষ্টি করেন বৃক্ষরাজী, মন্দ ও অপছন্দনীয় জিনিসগুলো সৃষ্টি করেন মঙ্গলবারে, বুধবারে সৃষ্টি করেন আলো, সমস্ত জীব-জন্তু সৃষ্টি করেন বৃহস্পতিবার এবং হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন শুক্রবারের শেষভাগে আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে।” এ হাদীস দ্বারা সপ্তম দিনেও ব্যস্ত থাকা সাব্যস্ত হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন যে, ব্যস্ততার দিনের সংখ্যা ছিল ছয়। এজন্যে বুখারী (রঃ) প্রমুখ মনীষী এ হাদীসের সঠিকতার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে, সম্ভবতঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) এটা কা’ব আহবার থেকে শুনেই বলেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক অবগত।
এই ছয়দিনের ব্যস্ততার পর আল্লাহ তা’আলা আরশের উপর সমাসীন হন। এ স্থানে লোকেরা বহু মতামত পেশ করেছেন এবং বহু জল্পনা-কল্পনা করেছেন। এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ এখানে নেই। এ ব্যাপারে আমরা শুধুমাত্র পূর্ববর্তী গুরুজনদের মাযহাব অবলম্বন করেছি। তারা হচ্ছেন মালিক (রঃ), আওযায়ী (রঃ)-সাওরী (রঃ), লায়েস ইবনে সা’দ (রঃ), শাফিঈ (রঃ), আহমাদ (রঃ) ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রঃ) ইত্যাদি এবং নবীন ও প্রবীণ মুসলিম ইমামগণ । আর ঐ মাযহাব হচ্ছে এই যে, কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই ওটার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কোন জল্পনা-কল্পনা করাও চলবে না যার দ্বারা সাদৃশ্যের আকীদা মস্তিষ্কে এসে যায় এবং এটা আল্লাহ তা’আলার গুণাবলী হতে বহু দূরে। মোটকথা, যা কিছু আল্লাহ তাআলা বলেছেন ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে হবে এবং কোন -চুল চেরা করা চলবে না। কেননা, আল্লাহ পাক কোন বস্তুর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত নন। তিনি হচ্ছেন শ্রোতা ও দ্রষ্টা। যেমন মুজতাহিদ বা চিন্তাবিদগণ বলেছেন। এঁদের মধ্যে নাঈম ইবনে হাম্মাদ আল খুযায়ীও (রঃ) রয়েছেন, যিনি হচ্ছেন ইমাম বুখারীর (রঃ) উস্তাদ। তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে কোন মাখলুকের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত করে সে কুফরীর দোষে দোষী হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা’আলা নিজেকে যেসব গুণে ভূষিত করেছেন তা যে ব্যক্তি অস্বীকার করে সে কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ) যেসব গুণে তাঁকে ভূষিত করেননি সেসব গুণে তাঁকে ভূষিত করাই হচ্ছে তার সাদৃশ্য স্থাপন করা। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্যে ঐ সব গুণ সাব্যস্ত করে যা স্পষ্টরূপে তার আয়াতসমূহের মধ্যে ও বিশুদ্ধ হাদীসগুলোর মধ্যে বর্ণিত হয়েছে এবং যদদ্বারা তার মহিমা প্রকাশ পেয়েছে ও তাঁর সত্তাকে সর্বপ্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত করেছে, সেই ব্যক্তিই সঠিক খেয়ালের উপর রয়েছে।
ইরশাদ হচ্ছে- তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন অর্থাৎ রাত্রির অন্ধকারকে দিনের আলো দ্বারা এবং দিনের আলোকে রাত্রির অন্ধকার দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এই দিন রাত্রির প্রত্যেকটি অপরটিকে খুবই ত্বড়িত গতিতে পেয়ে যায়। অর্থাৎ একটি শেষ হতে শুরু করলে অপরটি তুড়িত গতিতে এসে পড়ে এবং একটি বিদায় নিলে অপরটি তৎক্ষণাৎ এসে যায়। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “রাত্রিও তাদের জন্যে একটি নিদর্শন, আমি ওটা হতে দিনকে অপসারণ করি, আর তৎক্ষণাৎ তারা অন্ধকারে থেকে যায়। আর সূর্য ওর নির্দিষ্ট কক্ষে ভ্রমণ করে চলছে, ওটা তাঁরই নির্ধারিত পরিমাণ যিনি মহাপরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। আর (অন্যতম নিদর্শন) চন্দ্রের জন্যে আমি মনযিলসমূহ নির্ণীত করে রেখেছি। (এবং চন্দ্র ওটা অতিক্রম করছে) এমন কি ওটা (অতিক্রম শেষে ক্ষীণ হয়ে) এরূপ হয়ে যায় যে, যেন খেজুরের পুরাতন শাখা । সূর্যের সাধ্য নেই যে চন্দ্রকে গিয়ে ধরবে আর না রাত্রি দিবসের পূর্বে আসতে পারবে এবং প্রত্যেকে এক একটি চক্রের মধ্যে সন্তরণ করছে।” (৩৭:৪০) এজন্যেই আল্লাহ পাক (আরবী) বলেছেন। কেউ কেউ (আরবী) এবং (আরবী) কে (আরবী) দিয়ে পড়েছেন এবং কেউ কেউ পড়েছেন (আরবী) দিয়ে । উভয় অবস্থাতেই অর্থ একই হবে। অর্থাৎ সমস্ত কিছুই তার পরিচালনাধীন এবং ইচ্ছাধীন। এ জন্যেই তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ জেনে রেখো যে, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই এবং হুকুমের একমাত্র মালিক ও তিনিই (আরবী) অর্থাৎ ‘বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ হচ্ছেন বরকতময়।’ যেমনঃ (আরবী) (২৫:৬১) বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সৎ আমল করে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলো না, বরং নিজের প্রশংসা করলো সে কুফরী করলো। তার আমল ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আল্লাহ তা’আলা নিজের কোন হুকুমত বা কোন ক্ষমতা বান্দার কাছে হস্তান্তর করেছেন সেও কুফরী করেছে। কেননা, আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “জেনে রেখো যে, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই এবং একমাত্র হুকুমের মালিকও তিনিই। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ হলেন বরকমত।।” দুআয়ে মাসূরায় নিম্নলিখিতভাবে দুআ করার কথা বলা হয়েছে-(আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! সমুদয় রাজ্য ও রাজত্ব আপনারই। সমুদয় প্রশংসা আপনারই জন্যে। সমস্ত বিষয় আপনারই কাছে প্রত্যাবর্তন করে। আমি আপনার কাছে সমস্ত কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং সমুদয় অকল্যাণ হতে আশ্রয় চাচ্ছি।”
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এখানে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি ছয় দিনে সমাপ্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে সূরা ফুসসিলাতের নবম ও দশম আয়াতে বলা হয়েছে যে, দুদিনে ভূমণ্ডল, দুদিনে ভূমণ্ডলের পাহাড়, সমুদ্র, খনি, বৃক্ষ, উদ্ভিদ এবং মানুষ ও জন্তুজানোয়ারের পানাহারের বস্তু-সামগ্রী সৃষ্টি করা হয়েছে। মোট চার দিন হল। বলা হয়েছে
(خَلَقَ الْاَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ)
আবার বলা হয়েছেঃ
(وَقَدَّرَ فِيْهَآ اَقْوَاتَهَا فِيْٓ اَرْبَعَةِ اَيَّامٍ)
যে দু’দিনে ভূমণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে, তা ছিল রবিবার ও সোমবার। দ্বিতীয় দুদিন ছিল মঙ্গল ও বুধ, যাতে ভূমণ্ডলের সাজ-সরঞ্জাম পাহাড়, নদী ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়। এরপর বলা হয়েছেঃ
(فَقَضٰهُنَّ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ فِيْ يَوْمَيْنِ)
-অর্থাৎ “অতঃপর সাত আকাশ সৃষ্টি করেন দুদিনে ” [সূরা ফুস্সিলাতঃ ১২] বাহ্যতঃ এ দুদিন হবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার; অর্থাৎ এ পর্যন্ত ছয় দিন হল। [আদওয়াউল বায়ান]
[২] জানা কথা যে, সূর্যের পরিক্রমণের ফলে দিন ও রাত্রির সৃষ্টি। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টির পূর্বে যখন চন্দ্ৰ-সূৰ্যই ছিল না, তখন ছয় দিনের সংখ্যা কি হিসাবে নিরূপিত হল? কোন কোন তাফসীরবিদ বলেছেনঃ ছয় দিন বলে জাগতিক ৬ দিন বুঝানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্কার ও নির্মল উত্তর এই যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত যে দিন এবং সূর্যস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যে রাত এটা এ জগতের পরিভাষা। বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্ তা’আলার কাছে দিবা-রাত্রির পরিচয়ের অন্য কোন লক্ষণ নির্দিষ্ট থাকতে পারে; যেমন জান্নাতের দিবা-রাত্রি সূর্যের পরিক্রমণের অনুগামী হবেনা। সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী যে ছয় দিনে জগত সৃষ্টি হয়েছে তা রবিবার থেকে শুরু করে শুক্রবার শেষ
হয়।
[৩] এখানে প্রশ্ন হয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা সমগ্র বিশ্বকে মুহুর্তের মধ্যে সৃষ্টি করতে সক্ষম। স্বযং কুরআনুল কারীমেও বিভিন্ন ভঙ্গিতে একথা বার বার বলা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছেঃ “এক নিমেষের মধ্যে আমার আদেশ কার্যকরী হয়ে যায়।” [সূরা আল-কামারঃ ৫০] আবার কোথাও বলা হয়েছেঃ “আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বস্তু সৃষ্টি করতে চান, তখন বলে দেনঃ হয়ে যাও। আর সঙ্গে সঙ্গে তা সৃষ্টি হয়ে যায়”। যেমন, [সূরা আল-বাকারাহঃ ১১৭] এমতাবস্থায় বিশ্ব সৃষ্টিতে ছয় দিন লাগার কারণ কি? তাফসীরবিদ সায়ীদ ইবন জুবাইর রাহিমাহুল্লাহ এ প্রশ্নের উত্তরে বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার মহাশক্তি নিঃসন্দেহে এক নিমেষে সব কিছু সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু মানুষকে বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনার ধারাবাহিকতা ও কর্মতৎপরতা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এতে ছয় দিন ব্যয় করা হয়েছে।
[৪] আল্লাহ্ তা’আলা আরশের উপর উঠেছেন এটা সহীহ আকীদা। কিন্তু তিনি কিভাবে উঠেছেন, কুরআন-সুন্নায় এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য নাই বিধায় তা আমরা জানি না। এ বিষয়ে সূরা আল-বাকারার ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহকে কেউ (استواء) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেনঃ (استواء) শব্দের অর্থ তো জানাই আছে; কিন্তু এর স্বরূপ ও অবস্থা মানব বুদ্ধি সম্যক বুঝতে অক্ষম। এতে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। এর অবস্থা ও স্বরূপ জিজ্ঞেস করা বিদ’আত। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ধরনের প্রশ্ন কখনো করেননি। কারণ, তারা এর অর্থ বুঝতেন। শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা এ গুণে কিভাবে গুণান্বিত হলেন, তা শুধু মানুষের অজানা। এটি আল্লাহর একটি গুণ। আল্লাহ তা’আলা যে রকম, তার গুণও সে রকম। সুফিয়ান সওরী, ইমাম আওযায়ী, লাইস ইবনে সাদ, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ বলেছেনঃ যেসব আয়াত আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এগুলো হক এবং এগুলোর অর্থও স্পষ্ট। তবে গুণান্বিত হওয়ার ধরণের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। বরং যেভাবে আছে সেভাবে রেখে কোনরূপ অপব্যাখ্যা ও সাদৃশ্য ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত। [ এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন, ইমাম যাহাবী রচিত আল-উলু]
[৫] অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা রাত্রি দ্বারা দিনকে সমাচ্ছন্ন করেন এভাবে যে, রাত্রি দ্রুত দিনকে ধরে ফেলে। উদ্দেশ্য এই যে, সমগ্র বিশ্বকে আলো থেকে অন্ধকারে অথবা অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসেন। দিবা-রাত্রির এ বিরাট পরিবর্তন আল্লাহর কুদরতে অতি দ্রুত ও সহজে সম্পন্ন হয়ে যায় -মোটেই দেরী হয় না। সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহকে এমতাবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে, সবাই আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশের অনুগামী। এতে প্রত্যেক বুদ্ধিমানের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে। কারণ, এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশে চলছে। এ চলার গতিতে বিন্দুমাত্র পার্থক্য আসাও অসম্ভব। তবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিজেই যখন নির্দিষ্ট সময়ে এগুলোকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করবেন, তখন গোটা ব্যবস্থাই তছনছ হয়ে যাবে। আর তখনই হবে কেয়ামত।
[৬] (الخلق) শব্দের অর্থ সৃষ্টি করা এবং (الامر) শব্দের অর্থ আদেশ করা। বাক্যের অর্থ এই যে, সৃষ্টিকর্তা হওয়া এবং আদেশদাতা হওয়া আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। যেমনিভাবে তিনিই উপর-নীচের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তেমনিভাবে নির্দেশ দানের অধিকারও তাঁর। এ নির্দেশ দুনিয়ায় তাঁর শরীআত সম্বলিত নির্দেশকে বোঝানো হবে। আর আখেরাতে ফয়সালা ও প্রতিদান-প্রতিফল দেয়াকে বোঝানো হবে। [সা’দী]
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রুবুবিয়্যাহ ও অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি ছয়দিনে আকাশসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এ ছয় দিন হল রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। শুক্রবারে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। শনিবার সম্পর্কে বলা হয় এ দিনে কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। এ জন্যই এ দিনকে
يوم السبت
বা শনিবার বলা হয়। سبت অর্থ ছিন্ন করা। অর্থাৎ এ দিনে সৃষ্টির কাজ ছিন্ন বা শেষ ছিল। (তাফসীর ইবনু কাসীর , সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর) তবে শনিবার সৃষ্টি সূচনা করেছেন বলেও বর্ণনা পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম হা: ৭২৩১)
এ সম্পর্কে ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) তিনটি মত বর্ণনা করেছেন। (১) তাওরাতধারীরা বলে: রবিবারে সৃষ্টির কাজ শুরু করা হয়েছে, (২) ইঞ্জিলধারীরা বলে: সোমবারে শুরু করা হয়েছে। (৩) আর আমরা মুসলিমরা বলি, আল্লাহ তা‘আলা শনিবার সৃষ্টির কাজ শুরু করেছেন। কাজ শেষ করেছেন শুক্রবারে।
তবে এ দিনগুলো কি দুনিয়ার দিনের সমান সময়বিশিষ্ট, না অন্য কিছু? এ সম্পর্কে ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ ও কা‘ব আল আহবার (রহঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যে ছয়দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন তার একদিন দুনিয়ার এক হাজার দিনের সমান যা আমরা গণনা করে থাকি। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইবনু জারীর (রহঃ)-সহ অনেকে এ মত সমর্থন করেছেন। তবে অধিকাংশ আলেম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যে ছয়দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন তা দুনিয়ার যেটুকু সময় নিয়ে আমরা দিন গণনা করি তারই সমান, এক হাজার দিনের সমান নয়। ছয় দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টির হিকমত কী? কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করতঃ কুন (হয়ে যাও) বললেই তো হয়ে যায়। এ প্রশ্নের জবাব হল- এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে যে কোন কাজ সহনশীলতা ও ধীর-স্থিরতার সাথে সম্পন্ন করা শিক্ষা দিচ্ছেন। (ফাতহুল মাজীদ ফী তাফসীরে সূরাতুল হাদীদ, ড. আওজ মুহাম্মাদ ইউসুফ, আজহার বিশ্ববিদ্যালয়)
(ثُمَّ اسْتَوٰي عَلَي الْعَرْشِ)
‘অতঃপর তিনি আরশের ওপর সমুন্নত হলেন।’ আল্লাহ তা‘আলার অবস্থান সম্পর্কে এরূপ আরও ৭টি আয়াত রয়েছে। সূরা ইউনুস ৩, সূরা রাদ ২, ত্বা-হা- ৫, ফুরকান ৫৯, সিজদাহর ৪-৫ এবং হাদীদের ৪ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। এ সাতটি আয়াতেই الْعَرْشُ ‘আরশ’ শব্দের পরে عَلَي বা উপরে অব্যয়টি ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ হল আরশের ওপর।
اسْتَوَي শব্দটি ৪টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে সালাফদের থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়:
(১) صَعِدَ (২) اِرْتَفَعَ (৩) عَلَا এ তিনটির অর্থ একই তথা উপরে উঠা (৪) اِسْتَقَرَّ এর অর্থ ভিন্ন। আরবি ভাষাবিদগণ এ বিষয়ে একমত যে, যখন اسْتَوَي শব্দটি عَلَي অব্যয়যোগে ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ একটাই হবে- তা হল উপরে উঠা। (শরহুল আকীদাহ ওয়াসিতিয়্যা পৃঃ ২৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপর রয়েছেন- এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল: সাহাবী মু‘আবিয়াহ বিন হাকাম আস সুলামী (রাঃ) যখন রাসূল (সাঃ) এর কাছে তাঁর দাসীকে আযাদ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। মু‘আবিয়াহ বিন হাকাম (রাঃ) বলছেন; আমি সেই দাসীকে নিয়ে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেই দাসীটিকে লক্ষ করে বললেন:
أين الله؟ قالت: في السماء، قال: من أنا؟ قالت: أنت رسول الله، قال: أعتقها، فإنها مؤمنة
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কোথায়? দাসী বলল: আকাশের উপর। তিনি (সাঃ) আবার বললেন: আমি কে? দাসী বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তাকে আযাদ করে দাও, সে মু’মিনা নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ২২২৭)
এ সকল আয়াত ও হাদীসের আলোকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের এটাই আকীদাহ, আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় আরশের ওপর আছেন; সেখান থেকে তিনি সবকিছু দেখছেন, শুনছেন, জানছেন। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। তিনি তাঁর শ্রবণ, দর্শন ও জ্ঞানের দিক দিয়ে আমাদের সাথে রয়েছেন। কিন্তু আরশের ওপর কিভাবে আছেন তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) আমাদের জানাননি; তাই আমরা জানি না। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা নিষেধ। ইমাম মালিক (রহঃ)-কে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহ তা‘আলা আরশে কিভাবে আছেন? তিনি জবাবে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন তা জানা কথা। কিন্তু কিভাবে আছেন তা অজ্ঞাত, এ ব্যাপারে ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং প্রশ্ন করা বিদআত।
আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপর রয়েছেন- এ কথা যারা মানতে পারে না তারা বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করে থাকে। সালাফগণ তাদের যথার্থ উত্তর দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার আরশের ওপর অবস্থান সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহ যেভাবে সংবাদ দিয়েছে সেভাবে প্রমাণিত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার আরশের হাকীকত ও ধরন তিনি ছাড়া কেউ জানে না।
(يَطْلُبُه حَثِيْثًا)
‘তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে’- حثيثا এর অর্থ হল: অতি দ্রুত গতিতে। অর্থাৎ একটির পর দ্বিতীয়টি দ্রুত চলে আসে। দিনের আলো এলে রাতের অন্ধকার সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশেষ হয়ে যায় এবং রাত এলে দিনের আলোও নিভে যায়।
চন্দ্র-সূর্য তারকারাজি সব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের অধীন। তিনি যেভাবে পরিচালনা করেন সেভাবেই হয়। এসব আল্লাহ তা‘আলার বড় বড় মাখলুক, এসব জিনিস দ্বারা তাকে চেনা যায়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় আরশের ওপর আছেন, সর্বত্র বিরাজমান নন। সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার আজ্ঞাধীন।