(Book# 114/٣١١)-৫১৪ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ৫৭-৫৮ নং আয়াত:- کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۵۷﴾ এমনিভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি, যাতে তোমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পার। Similarly, We shall raise up the dead. so that you may remember or take heed.

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣١١)-৫১৪
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
৫৭-৫৮ নং আয়াত:-

کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۵۷﴾
এমনিভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি, যাতে তোমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পার।
Similarly, We shall raise up the dead.
so that you may remember or take heed.

وَ ہُوَ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِہٖ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَقَلَّتۡ سَحَابًا ثِقَالًا سُقۡنٰہُ لِبَلَدٍ مَّیِّتٍ فَاَنۡزَلۡنَا بِہِ الۡمَآءَ فَاَخۡرَجۡنَا بِہٖ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۵۷﴾
সেই আল্লাহই স্বীয় রাহমাতের (বৃষ্টির) আগে বাতাসকে সুসংবাদ বহনকারী রূপে প্রেরণ করেন। যখন ঐ বাতাস ভারী মেঘমালাকে বহন করে নিয়ে আসে তখন আমি ঐ মেঘমালাকে কোন নির্জীব ভূ-খন্ডের দিকে প্রেরণ করি। অতঃপর ওটা হতে বারিধারা বর্ষণ করি, তারপর সেই পানির সাহায্যে সেখানে সর্ব প্রকার ফল ফলাদি উৎপাদন করি। এমনিভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি, যাতে তোমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পার।
وَ الۡبَلَدُ الطَّیِّبُ یَخۡرُجُ نَبَاتُہٗ بِاِذۡنِ رَبِّہٖ ۚ وَ الَّذِیۡ خَبُثَ لَا یَخۡرُجُ اِلَّا نَکِدًا ؕ کَذٰلِکَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّشۡکُرُوۡنَ ﴿٪۵۸﴾
আর উৎকৃষ্ট ভূমি ওর রবের নির্দেশক্রমে খুব উৎকৃষ্ট ফসল ফলায়, আর যা নিকৃষ্ট ভূমি – তাতে খুব কমই ফসল ফলে থাকে। এমনিভাবেই আমি কৃতজ্ঞ পরায়ণদের জন্য আমার আয়াতসমূহ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করে থাকি।

৫৭-৫৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের পুনরুত্থানের একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। মৃত জমিন, যেমনিভাবে তাতে কোন উদ্ভিদ জন্মায় না। আল্লাহ তা‘আলা সে অঙ্কুরোদগমহীন মরুভূমিতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। ফলে তা থেকে ফলমূল উৎপন্ন হয়। তেমনি মৃত ব্যক্তিদেরকে হিসাব-নিকাশের জন্য জীবিত করা হবে।

(يُرْسِلُ الرِّيٰحَ بُشْرًا)

‘বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন’ অর্থাৎ এমন বাতাস যা মেঘ বহন করে নিয়ে যায়। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمِنْ آيَاتِه۪ أَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ)

“আর তার দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুখবর দানকারীরূপে।” (সূরা রুম ৩০:৬)

(بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِه۪)

‘স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে’ এখানে অনুগ্রহ বলতে বৃষ্টিকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْۭ بَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَه۫ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ)

“তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। তিনিই তো অভিভাবক, সর্বপ্রশংসিত।” (সূরা শুরা ৪২:২৮)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَانْظُرْ إِلٰي آثَارِ رَحْمَتِ اللّٰهِ كَيْفَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ ذٰلِكَ لَمُحْيِي الْمَوْتٰي وَهُوَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)

“অতএব আল্লাহর রহমতের ফল সম্পর্কে চিন্তা কর; কিভাবে তিনি জমিনকে জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর। নিশ্চয়ই তিনিই মৃতকে জীবনদানকারী এবং তিনি সব কিছুর ওপরই সর্বশক্তিমান।” (সূরা রূম ৩০:৫০)

(وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُه۫)

‘আর উৎকৃষ্ট ভূমিতে তার প্রতিপালকের ইচ্ছায় ফসল উৎপন্ন হয়’ অর্থাৎ উর্বর জমি তাতে বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে ফসল উৎপন্ন হয়। অনুরূপভাবে একজন মু’মিন আল্লাহ তা‘আলার আয়াত নাযিল হবার সাথে সাথে তার দ্বারা উপকৃত হয়। তার দ্বারা সৎ জীবন গড়ে তোলে।

পক্ষান্তরে অনুর্বর জমি যাতে বৃষ্টি পড়লেও কোন কিছু উৎপন্ন হয় না, বরং সম্পূর্ণ শ্রম ব্যর্থ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কাফির আল্লাহ তা‘আলার আয়াত দ্বারা কোন উপকৃত হতে পারে না। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা দৃষ্টান্ত পেশ করে থাকেন। এরূপ দৃষ্টান্ত সহীহ বুখারীতেও রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৯)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা বাতাস প্রেরণ করেন এবং তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে মৃত জমিনকে জীবিত করেন।
২. পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাসের সহায়ক সুন্দর উদাহরণ পেলাম।
৩. মু’মিন ও কাফিরের উপযুক্ত পরিণাম জানলাম।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 57-58

کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۵۷﴾
Similarly, We shall raise up the dead.
so that you may remember or take heed.

Among Allah’s Signs, He sends down the Rain and brings forth the Produce

Allah tells;

وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا

And it is He Who sends the winds as heralds of glad tidings,

After Allah stated that He created the heavens and earth and that He is the Owner and Possessor of the affairs Who makes things subservient (for mankind), He ordained that He be invoked in Du`a, for He is able to do all things. Allah also stated that He is the Sustainer and He resurrects the dead on the Day of Resurrection.

Here, Allah said that He sends the wind that spreads the clouds that are laden with rain.

Allah said in another Ayah,

وَمِنْ ءَايَـتِهِ أَن يُرْسِلَ الرِّيَـحَ مُبَشِّرَتٍ

And among His signs is this, that He sends the winds with glad tidings. (30:46)

Allah’s statement,

بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ

going before His mercy,

means, before the rain.

Allah also said;

وَهُوَ الَّذِى يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِن بَعْدِ مَا قَنَطُواْ وَيَنشُرُ رَحْمَتَهُ وَهُوَ الْوَلِىُّ الْحَمِيدُ

And He it is Who sends down the rain after they have despaired, and spreads His mercy. And He is Al-Wali (the Guardian), Al-Hamid (the praiseworthy). (42:28)

and,

فَانظُرْ إِلَى ءَاثَـرِ رَحْمَةِ اللَّهِ كَيْفَ يُحْىِ الاٌّرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَأ إِنَّ ذَلِكَ لَمُحْىِ الْمَوْتَى وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

Look then at the results of Allah’s mercy, how He revives the earth after its death. Verily, that (is the one Who) shall indeed raise the dead, and He is able to do all things. (30:50)

Allah said next,

حَتَّى إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالاً

Till when they have carried a heavy-laden cloud,

when the wind carries clouds that are heavy with rain, and this is why these clouds are heavy, close to the earth, and their color is dark.

Allah’s statement,

سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ

We drive it to a land that is dead,

that is, a dry land that does not have any vegetation.

This Ayah is similar to another Ayah,

وَءَايَةٌ لَّهُمُ الاٌّرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَـهَا

And a sign for them is the dead land. We give it life. (36:33)

This is why Allah said here,

فَأَنزَلْنَا بِهِ الْمَاء فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ كَذَلِكَ نُخْرِجُ الْموْتَى

Then We produce every kind of fruit therewith. Similarly, We shall raise up the dead.

meaning, just as We bring life to dead land, We shall raise up the dead on the Day of Resurrection, after they have disintegrated.

Allah will send down rain from the sky and the rain will pour on the earth for forty days. The corpses will then be brought up in their graves, just as the seeds become grow in the ground (on receiving rain).

Allah often mentions this similarity in the Qur’an when He gives the example of what will happen on the Day of Resurrection, and bringing life to dead land,

لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

so that you may remember or take heed.

Allah’s statement

 

وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُ بِإِذْنِ رَبِّهِ

The vegetation of a good land comes forth (easily) by the permission of its Lord;

meaning, the good land produces its vegetation rapidly and proficiently.

Allah said in another Ayah (about Maryam, mother of `Isa, peace be upon him);

وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا

He made her grow in a good manner. (3:37)

The Ayah continues,

وَالَّذِي خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلاَّ نَكِدًا

and that which is bad, brings forth nothing but with difficulty.

Mujahid, and others such as As-Sibakh, etc, also said this.

كَذَلِكَ نُصَرِّفُ الايَاتِ لِقَوْمٍ يَشْكُرُونَ

Thus do We explain variously the Ayat for a people who give thanks.

Al-Bukhari recorded that Abu Musa said that the Messenger of Allah said,

مَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ مِنَ الْعِلْمِ وَالْهُدَى كَمَثَلِ الْغَيْثِ الْكَثِيرِ أَصَابَ أَرْضًا فَكَانَتْ مِنْهَا نَقِيَّةٌ قَبِلَتِ الْمَاءَ فَأَنْبَتَتِ الْكَلََ وَالْعُشْبَ الْكَثِيرَ

The parable of the guidance and knowledge with which Allah has sent me is that of an abundant rain falling on a land, some of which was fertile soil that absorbed rain water and brought forth vegetation and grass in abundance.

وَكَانَتْ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ الْمَاءَ فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ فَشَرِبُوا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا

And another portion of it was hard and held the rain water; and Allah benefited the people with it, they utilized it for drinking, making their animals drink from it, and for irrigation of the land for cultivation.

وَأَصَابَ مِنْهَا طَايِفَةً أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ لَاأ تُمْسِكُ مَاءً وَلَاأ تُنْبِتُ كَلَأً

And a portion of it was barren which could neither hold the water nor bring forth vegetation.

فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللهِ وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِه

The first is the example of the person who comprehends Allah’s religion and gets benefit which Allah sent me with, by learning and teaching others. The last example is that of a person who does not care for it and does not accept the guidance Allah sent me with.

৫৭-৫৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহই যে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, হুকুমের মালিক একমাত্র তিনিই এবং সবকিছুর পরিচালক শুধুমাত্র তিনিই, এগুলোর বর্ণনা দেয়ার পর এখানে তিনি অবহিত করেছেন যে, তিনিই হচ্ছেন আহার্যদাতা এবং মৃতকে কিয়ামতের দিন তিনিই উথিত করবেন। বায়ুকে তিনিই প্রেরণ করেন যা বৃষ্টিপূর্ণ মেঘকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয়। কেউ (আরবী) শব্দকে (আরবী) পড়েছেন। যেমন আল্লাহ পাক এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) নিদর্শনাবলীর মধ্যে এটাও নিদর্শন যে, তিনি (বৃষ্টির) সুসংবাদ বহনকারীরূপে বাতাস প্রেরণ করেন। (৩০:৪৬)।

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) এখানে (আরবী) দ্বারা বৃষ্টিকে বুঝানো হয়েছে। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেনঃ “আল্লাহ তিনিই যিনি মানুষের নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন এবং তিনি তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন, তিনি হচ্ছেন প্রশংসিত বন্ধু।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “সুতরাং আল্লাহর রহমতের লক্ষণের প্রতি লক্ষ্য কর যে, কিভাবে তিনি যমীনকে ওর মরে যাওয়ার (শুকিয়ে যাওয়ার পর পুনর্জীবিত করেন! এভাবেই তিনি মৃতকে পুনর্জীবন দান করতে সক্ষম এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপরই ক্ষমতাবান।।

আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ “যখন ঐ বাতাস ভারী মেঘমালাকে বহন করে নিয়ে আসে।” অর্থাৎ তাতে অধিক পানি থাকে, যা যমীনের নিকটবর্তী হয়। ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ ঐ মেঘমালাকে কোন নির্জীব ভূখণ্ডের দিকে প্রেরণ করি এবং ওটা হতে বারিধারা বর্ষণ করে ওকে পরিতৃপ্ত করি। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের জন্যে একটি নিদর্শন হচ্ছে নির্জীব যমীন, আমি ওকে সঞ্জীবিত করেছি।” (৩৬:৩৩) এজন্যেই ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ যেমন আমি যমীনকে ওর মরে যাওয়ার পর সঞ্জীবিত করি, তদ্রুপ দেহকেও মাটি হয়ে যাওয়ার পর কিয়ামতের দিন জীবিত করবে। আল্লাহ পাক আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত যমীনে বৃষ্টি বর্ষিত হতেই থাকবে এবং মানবদেহ কবর থেকে এমনিভাবে উঠতে থাকবে যেমনিভাবে ভূমিতে জীব অঙ্কুরিত হয়। এ ধরনের আয়াত কুরআন কারীমে বহু রয়েছে যে, তিনি মৃত যমীনকে পুনর্জীবিত করবেন। এগুলো তিনি কিয়ামত সংঘটনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (আরবী) উদ্দেশ্য এই যে, যেন তোমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পার।

(আরবী) ভাল ও উৎকৃষ্ট ভূমি ওর প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে খুব ভাল ফসল ফলায়। অর্থাৎ উত্তম ভূমিতে অতিসত্বর ফসল উৎপন্ন হয়। যেমন তিনি এক জায়গায় (আরবী) (৩:৩৭) বলেছেন। এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যা খারাপ ভূমি, অর্থাৎ কংকরময় বা বালুকাময় ভূমি, তাতে খুব কমই ফসল হয়ে থাকে। এটা মুমিন ও কাফিরের জন্যে দৃষ্টান্ত স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে।

ইমাম বুখারী (রঃ) হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ আমাকে যে হিদায়াত ও ইলম সহকারে পাঠিয়েছেন ওর দৃষ্টান্ত হচ্ছে মুষলধারার বৃষ্টি, যা কোন যমীনে পড়েছে। সেই যমীনের এক অংশ উৎকৃষ্ট ছিল যা সেই বৃষ্টি গ্রহণ করেছে এবং প্রচুর উদ্ভিদ ও তৃণরাশি জন্মিয়েছে। আর অপর একাংশ কঠিন (ও গভীর) ছিল যা পানি (শোষণ করেনি, কিন্তু) আটকিয়ে রেখেছে, যা দ্বারা আল্লাহ লোকের উপকার সাধন করেছেন। তারা তা পান করেছে, পান করিয়েছে এবং তার দ্বারা ক্ষেতকৃষি করেছে। আর কতক বৃষ্টি যমীনের এমন অংশে পড়েছে যা সমতল (ও কঠিন); ওটা পানি আটকিয়ে রাখে না। অথবা (শোষণ করে) ঘাস পাতাও জন্মায় না। এটা ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে এবং যেটা সহকারে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন ওটা তার উপকার সাধন করেছে-সে শিক্ষা করেছে ও শিক্ষা দিয়েছে এবং ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে ব্যক্তি ওর (অর্থাৎ যা সহ আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন) দিকে মাথা তুলেও দেখেনি এবং আল্লাহর যে হিদায়াত আমার প্রতি পাঠানো হয়েছে তা কবূল করেনি।”

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] এতে (رياح) শব্দটি (ريح) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ বায়ু। আর (بُشراً) শব্দের অর্থ সুসংবাদ। এবং রহমত বলে বৃষ্টির রহমত বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলাই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদ দেয়ার জন্য বায়ু প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য এই যে, বৃষ্টির পূর্বে ঠান্ডা বায়ু প্রেরণ করা আল্লাহর চিরন্তন রীতি। এ বাতাস দ্বারা স্বয়ং মানুষ আরাম ও প্রফুল্লতা অর্জন করে এবং তা যেন ভাবী বৃষ্টির সংবাদও পূর্বাহ্নে প্রদান করে।

[২] (سحاب) শব্দের অর্থঃ মেঘ, এবং (ثقال) শব্দটি (ثقيل) এর বহুবচন। এর অর্থ ভারী। অর্থাৎ বায়ূ যখন ভারী মেঘমালাকে উপরে উঠিয়ে নেয়। ভারী মেঘমালার অর্থ, পানিতে ভরপুর মেঘমালা- যা বাতাসের কাঁধে সওয়ার হয়ে উপরে উঠে যায়। এভাবে হাজারো মণ ভারী পানি বাতাসে ভর করে উপরে পৌঁছে যায়। আল্লাহ্ তা’আলার হুকুম হওয়া মাত্র আপনা-আপনি সমুদ্র থেকে বাস্প (মৌসুমী বায়ু) উখিত হতে থাকে এবং উপরে উঠে মেঘমালার আকার ধারণ করে।

[৩] অর্থাৎ বাতাস যখন ভারী মেঘমালাকে তুলে নেয়, তখন আমি মেঘমালাকে কোন মৃত শহরের দিকে পরিচালিত করি। মৃত শহর বলে এমন জনপদকে বুঝানো হয়েছে, যা পানির অভাবে উজাড়প্রায়। [মানার; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

এ পর্যন্ত আলোচ্য আয়াতের বিষয়-বস্তুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রমাণিত হল। প্রথমতঃ বৃষ্টি মেঘমালা থেকে বর্ষিত হয়। এতে বুঝা গেল যে, যেসব আয়াতে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের কথা বলা হয়েছে, সেখানেও সামা (আকাশ) শব্দ দ্বারা মেঘমালাকেই বুঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ কোন বিশেষ দিক কিংবা বিশেষ ভূখণ্ডের দিকে মেঘমালা ধাবিত হওয়া সরাসরি আল্লাহর নির্দেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি যখন যেখানে ইচ্ছা এবং যে পরিমাণ ইচ্ছা বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দান করেন। মেঘমালা আল্লাহর সে নির্দেশই পালন করে মাত্র।

এ বিষয়টি সর্বত্রই এভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় যে, মাঝে মাঝে কোন শহর অথবা জনপদের উপর মেঘমালা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে এবং সেখানে বৃষ্টির প্রয়োজনও থাকে, কিন্তু মেঘমালা সেখানে এক ফোটা পানিও দেয় না; বরং আল্লাহর নির্দেশে যে শহর বা জনপদের প্রাপ্য নির্ধারিত থাকে, সেখানে পৌঁছেই বর্ষিত হয়। নির্দিষ্ট শহর ছাড়া অন্যত্র মেঘের পানি লাভ করার সাধ্য কারো নেই।

[৪] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা বলছেনঃ আমি মৃত শহরে পানি বর্ষণ করি, তারপর পানি দ্বারা সব রকম ফল-মূল উৎপন্ন করি। এভাবেই আমি মৃতদেরকে কেয়ামতের দিন উথিত করব যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। আমি যেভাবে মৃত ভূখণ্ডকে জীবিত করি এবং তা থেকে বৃক্ষ ও ফল-মূল নির্গত করি, তেমনিভাবে কেয়ামতের দিন মৃতদেরকে পুনরায় জীবিত করে তুলব। আমি এসব দৃষ্টান্ত এজন্য বর্ণনা করি, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পাও এবং ঈমান আন [জালালাইন]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতে দু’বার শিঙ্গা ফুঁকা হবে। প্রথম ফুঁৎকারের পর সারা বিশ্ব ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে, কোনকিছুই জীবিত থাকবে না। দ্বিতীয় ফুঁৎকারের পর নতুনভাবে সারা বিশ্ব সৃজিত হবে এবং সব মৃত জীবিত হয়ে যাবে। হাদীসে আরো বলা হয়েছে যে, উভয়বার শিঙ্গায় ফুঁৎকারের মাঝখানে চল্লিশ বছরের ব্যবধান হবে। এ চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টিপাত হতে থাকবে। এ সময়ের মধ্যেই প্রতিটি মৃত মানুষ ও জন্তুর দেহের অংশ একত্রিত করে পূর্ণ কাঠামো তৈরী করা হবে। অতঃপর শিঙ্গা ফুঁকার সাথে সাথে এসব মৃতদেহে আত্মা এসে যাবে এবং জীবিত হয়ে দণ্ডায়মান হবে। [দেখুন, মুসলিমঃ ২৯৫৫]

[৫] অর্থাৎ বৃষ্টির কল্যাণধারা যদিও প্রত্যেক শহর ও ভূখণ্ডে সমভাবে বর্ধিত হয়, কিন্তু ফলাফলের দিক দিয়ে ভূখণ্ড দু’ প্রকার হয়ে থাকে। (এক) উর্বর ও ভাল- যাতে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরণের ভূখণ্ড থেকে সর্বপ্রকার ফল-মূল উৎপন্ন হয়। (দুই) শক্ত ও লবনাক্ত ভূখণ্ড। এতে উৎপাদনের যোগ্যতা নেই। এরূপ ভূখণ্ডে হয়তো কিছুই উৎপন্ন হয় না, আর কিছু হলেও খুব অল্প পরিমাণে হয়। তাও অকেজো ও নষ্ট হয়ে থাকে। [তাবারী, বাগভী, ইবন কাসীর, সাদী, জালালাইন] এর উদাহরণ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াত ও ইলম নিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এমন মুষল বৃষ্টির মত যা কোন যমীনের উপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর যমীন ছিল। তন্মধ্যে কিছু ভাল জমি ছিল যা পানি গ্রহণ করল ফলে তাতে ফসল ও প্রচুর ঘাস জন্মালো, আবার তন্মধ্যে এমন কিছু নিম যমীনও ছিল যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, ফলে আল্লাহ তার দ্বারা মানুষের উপকার করলেন। তারা তা পান করল এবং ফসল সিক্ত করল, ক্ষেত খামার করল। আবার তন্মধ্যে এমন কিছু যমীনও ছিল যা শক্ত ভূমি যা পানিও ধারণ করতে পারল না, কিছু উৎপন্নও করতে পারল না। ঠিক এটাই হল ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে আল্লাহর দ্বীনের ফিকহ তথা সুক্ষ জ্ঞান অর্জন করেছে আর আল্লাহ আমাকে যা নিয়ে পাঠিয়েছে তা তার উপকারে আসল, সে সেটা নিজে জানল অপরকে জানাল। আর ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এর প্রতি মাথা উঠিয়ে তাকাল না, আর আমি যে হেদায়াত নিয়ে এসেছি তা কবুল করল না। [বুখারীঃ ৭৯, মুসলিমঃ ২২৮২]

[৬] বৃষ্টির কল্যাণধারার মত আল্লাহর হেদায়াত ও নির্দেশাবলীর কল্যাণও সব মানুষের জন্য ব্যাপক; কিন্তু প্রতিটি ভূখণ্ডই যেমন বৃষ্টি থেকে উপকার লাভ করে না, তেমনি প্রতিটি মানুষও এ হেদায়াত থেকে ফায়দা হাসিল করে না; বরং একমাত্র তারাই ফায়দা হাসিল করে, যারা কৃতজ্ঞ ও এর মর্যাদা দিয়ে থাকে। [সা’দী]

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। মূল বক্তব্য বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য এ সম্পর্কে অবহিত হওয়া অপরিহার্য। এখানে বৃষ্টি ও তার বরকতের উল্লেখ করার উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর অসীম ক্ষমতা বর্ণনা ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের প্রমাণ তুলে ধরাই নয়, বরং সেই সাথে একটি উপমার সাহায্যে রিসালাত ও তার বরকতসমূহ এবং তার মাধ্যমে ভাল ও মন্দের মধ্যে এবং উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্টের মধ্যে পার্থক্যের চিত্র অংকন করাও এর লক্ষ্য। রসূলের আগমন এবং আল্লাহর শিক্ষা ও পথনির্দেশনা নাযিল হওয়াকে জলকণা বহনকারী বায়ু প্রবাহ ও রহমতের মেঘমালায় আছন্ন হয়ে যাওয়া এবং অমৃতধারাপূর্ণ বারিবিন্দু বর্ষনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আবার বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে মৃত পতিত ভূমির অকস্মাৎ সঞ্জীবিত হওয়া এবং তার উদর থেকে জীবনের অঢেল সম্পদরাজি উৎসারিত হবার ঘটনাকে নবীর শিক্ষা, অনুশীলন ও নেতৃত্বের মৃত ভূপতিত মানবতার অকস্মাৎ জেগে ওঠার এবং তার বক্ষদেশে থেকে কল্যাণের স্রোতস্বিনী উৎসারিত হবার পরিস্থিতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, বৃষ্টি বর্ষনের ফলে এসব বরকত কেবলমাত্র এমনসব ভূমি লাভ করে, যা মূলত উর্বর কিন্তু নিছক পানির অভাবে যার শস্য উৎপাদনের যোগ্যতা চাপা পড়েছিল। ঠিক তেমনি রিসালাতের এ কল্যাণধারা থেকেও কেবলমাত্র সেই সব লোক লাভবান হতে পারে যারা মূলত মৃৎবৃত্তির অধিকারী এবং কেবলমাত্র নেতৃত্ব ও পথ নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে যাদের যোগ্যতা ও সুস্থ মনোবৃত্তি সুস্পষ্ট রূপলাভ করার ও কর্মতৎপরতা হবার সুযোগ পায় না। অন্যদিকে দুষ্ট মনোবৃত্তির অধিকারী ও দুষ্কর্মশীল মানুষেরা হচ্ছে এমন ধরনের অনুর্বর জমির মত, যা রহমতের বারি বর্ষণে কোনক্রমেই লাভবান হয় না বরং বৃষ্টির পানি পড়ার সাথে সাথেই যার পেটের সমস্ত বিষ কাঁটা গাছ ও ঝোপ ঝাড়ের আকারে বের হয়ে আসে। অনুরূপভাবে রিসালাতের আবির্ভাবে তাদের কোন ফায়দা হয় না বরং উল্টো তাদের অভ্যন্তরের সমস্ত দুষ্কৃতি ও শয়তানী মনোবৃত্তি পূর্ণোদ্যমে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

পরবর্তী কয়েকটি রুকূ’তে ধারাবাহিকভাবে ঐতিহাসিক প্রমাণ সহকারে এ উপমাটিকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক যুগে নবীর আগমনের পর মানব জাতি দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি ভাগ হচ্ছে সুস্থ ও সৎ চেতনা সম্পন্ন লোকদের। রিসালাতের অমিয় ধারায় অবগাহন করে তারা পরিপুষ্ট হয় এবং উন্নতি ও উত্তম ফলে ফুলে সুশোভিত হয়। আর দ্বিতীয় ভাগটি হচ্ছে দুষ্ট চেতনা সম্পন্ন জনগোষ্ঠির। কষ্টিপাথরের সামনে আসার সাথে সাথেই তারা নিজের সমস্ত অসৎ প্রবণতার ডালি উন্মুক্ত করে দেয়। তাদের সমস্ত দুষ্কৃতি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। অবশেষে তাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে ছেঁটে দূরে নিক্ষেপ করা হয় যেভাবে স্বর্ণকার রূপা ও সোনার ভেজাল অংশটুকু ছেঁটে দূরে নিক্ষেপ করে।

Leave a Reply