(Book# 114/٣١٩)-৫২২ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ৯৪-৯৫ নং আয়াত:- ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّيَةِ الْحَسَنَةَ অতঃপর আমি তাদের দুরাবস্থাকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি। Then We changed the evil for the good,

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣١٩)-৫২২
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
৯৪-৯৫ নং আয়াত:-
ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّيَةِ الْحَسَنَةَ
অতঃপর আমি তাদের দুরাবস্থাকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি।
Then We changed the evil for the good,

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا فِیۡ قَرۡیَۃٍ مِّنۡ نَّبِیٍّ اِلَّاۤ اَخَذۡنَاۤ اَہۡلَہَا بِالۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ لَعَلَّہُمۡ یَضَّرَّعُوۡنَ ﴿۹۴﴾
আমি কোন জনপদে নাবী রাসূল পাঠালে, ওর অধিবাসীদেরকে দুঃখ-দারিদ্র ও রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত করে থাকি, উদ্দেশ্য হল, তারা যেন নম্র ও বিনয়ী হয়।

ثُمَّ بَدَّلۡنَا مَکَانَ السَّیِّئَۃِ الۡحَسَنَۃَ حَتّٰی عَفَوۡا وَّ قَالُوۡا قَدۡ مَسَّ اٰبَآءَنَا الضَّرَّآءُ وَ السَّرَّآءُ فَاَخَذۡنٰہُمۡ بَغۡتَۃً وَّ ہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۹۵﴾
অতঃপর আমি তাদের দুরাবস্থাকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি। অবশেষে তারা খুব প্রাচুর্যের অধিকারী হয়, আর তারা (অকৃতজ্ঞ স্বরে) বলেঃ আমাদের পূর্ব-পুরুষরাও এভাবে দুঃখ ভোগ করেছে। অতঃপর অকস্মাৎ আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে পারলনা।

৯৪-৯৫ নং আয়াত:-

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

এক একজন নবী ও এক একটি সম্প্রদায়ের ব্যাপার আলাদা আলাদা ভাবে বর্ণনা করার পর এবার একটি সাধারণ ও সর্বব্যাপী নিয়ম ও বিধান বর্ণনা করা হচ্ছে। প্রতি যুগে প্রত্যেক নবীকে প্রেরণ করার সময় মহান আল্লাহ‌ এ নিয়মটি অবলম্বন করেন। নিয়মটি হচ্ছে, যখনই কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন নবী পাঠানো হয়েছে, তখনই প্রথমে সেই সম্প্রদায়ের বাহ্যিক পরিবেশকে নবীর দাওয়াত গ্রহণের জন্য সর্বাধিক অনুকূল ও উপযোগী বানানো হয়েছে। অর্থাৎ তাদেরকে রকমারি দুর্যোগ দুর্বিপাক ও বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দুর্ভিক্ষ, মহামারী, বানিজ্যিক, ক্ষয়ক্ষতি, সামরিক পরাজয় ও এ ধরনের আরো নানান দুর্ভোগ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের মন নরম হয়ে যায়, অহংকার ও ঔদ্ধত্যে দৃপ্ত গ্রীবা নত হয়, শক্তিমদত্ততা ও ধনলিপ্সা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। নিজেদের উপায়-উপকরণ, শক্তি ও যোগ্যতার ওপর নির্ভরতা ভেঙ্গে পড়ে এবং তারা যাতে অনুভব করতে পারে যে ওপরে অন্য কোন শক্তিধর সত্তা আছে এবং তারই হাতে রয়েছে তাদের ভাগ্যের লাগাম। এভাবে উপদেশের বানী শোনার জন্য তাদের কান খুলে যাবে এবং নিজেদের প্রভু পরওয়ারদিগারের সামনে সবিনয়ে শির আনত করার জন্য তারা প্রস্তুত হয়ে যাবে। তারপর এ ধরনের উপযোগী পরিবেশেও তাদের মন সত্যকে গ্রহণ করতে উদ্যোগী না হলে সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যের পরীক্ষার মধ্যে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হয়। এখান থেকেই শুরু হয় তাদের ধ্বংসের প্রক্রিয়া। প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির মধ্যে জীবন যাপন করার সময় তারা নিজেদের দুর্দিনের কথা ভুলে যায়। তাদের বিকৃত বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন নেতৃত্ববর্গ তাদের মনোজগতে ইতিহাসের এ নির্বোধ সুলভ ধারণা ঢুকিয়ে দেয় যে, জগতে যা কিছু উত্থান পতন ও ভাঙ্গা-গড়া চলছে, তা কোন বিচক্ষণ কুশলী সত্তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে না এবং কোন নৈতিক কারণেও হচ্ছে না। বরং একটি অচেতন ও অন্ধ প্রকৃতি, সম্পূর্ণ নীতি বিবর্জিত কার্যকরণের ভিত্তিতে কখনো ভালো ও কখনো মন্দ দিনের উদ্ভব ঘটাতে থাকে। কাজেই ঝড় ঝন্ঝা ও বিপদ-আপদের অবতারণা থেকে কোন নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করা এবং কোন শুভাকাংখীর সদুপদেশ মেনে নিয়ে আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়া এক ধরনের মানসিক দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। নবী ﷺ এ নির্বোধসুলভ মানসিকতারই নকশা একেছেন নিম্নোক্ত হাদীসটিতে।

لاَ يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ ِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّامِن ذُنُوبِه , وَالمُنَافِقُ مَثَلُهُ كَمَثَلِ الْحِمَارِ لاَيَدرِى فَيمَ رَبَطَهُ اَهلُهُ وَلاَ فِيمَ اَرسَلُوهُ- “বিপদ-মুসিবত তো মু’মিনকে পর্যায়ক্রমে সংশোধন করতে থাকে, অবশেষে যখন সে এ চুল্লী থেকে বের হয়ে, তখন তার সমস্ত ভেজাল ও খাদ পুড়ে সে পরিচ্ছন্ন ও খাঁটি হয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু মুনাফিকের অবস্থা হয় ঠিক গাধার মতো। সে কিছুই বোঝে না, তার মালিক কেন তাকে বেঁধে রেখেছিল আবার কেনইবা তাকে ছেড়ে দিল।”

কাজেই যখন কোন জাতির অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, বিপদেও তার হৃদয় আল্লাহর সামনে নত হয় না, আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহে ও ধন-সম্পদের প্রাচুর্যেও তার হৃদয়ে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগে না এবং কোন অবস্থায়ই সে সংশোধিত হয় না, তখন ধ্বংস তার মাথার ওপর এমনভাবে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে যেন তা যে কোন সময় তার ওপর নেমে আসবে। ঠিক যেমন সন্তান ধারণের সময় পূর্ণ হয়ে গেছে, এমন একজন গর্ভবতী নারীর যে কোন সময় সন্তান প্রসব হতে পারে।

এখানে আরো একটি কথাও জেনে নেয়া উচিত। এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ‌ নিজের যে নিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন নবী (সা.) এর আবির্ভাবকালেও ঠিক সেই নিয়মটিই কার্যকর করা হয়। ভাগ্য বিড়ম্বিত জাতিগুলোর যেসব কর্মকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, সূরা আরাফ অবতীর্ণ হওয়ার দিনগুলোতে মক্কার কুরাইশরা ঠিক সেই একই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রকাশ ঘটিয়ে চলছিল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) উভয়েই একযোগে রেওয়াত করেছেন যে, নবী (সা.) এর নবুওয়াত লাভের পর যখন কুরাইশরা তাঁর দাওয়াতের বিরুদ্ধে চরম উগ্র মনোভাব অবলম্বন করতে শুরু করে তখন নবী (সা.) দোয়া করেন, হে আল্লাহ! ইউসুফের যুগে যেমন সাত বছর দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তেমনি ধরনের দুর্ভিক্ষের সাহায্যে এ লোকদের মোকাবিলা করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো। ফলে আল্লাহ‌ তাদেরকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন করেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, লোকেরা মৃত প্রাণীর গোশত খেতে শুরু করে, এমন কি চামড়া, হাড় ও পশম পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। অবশেষে মক্কার লোকেরা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে নবী (সা.) এর কাছে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করার আবেদন জানায়। কিন্তু তাঁর দোয়ায় আল্লাহ‌ যখন সেই মহা সংকট থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন এবং লোকেরা আবার সুদিনের মুখ দেখে তখন তাদের বুক অহংকারে আগের চাইতে আরো বেশী স্ফীত হয়ে উঠে। তাদের মধ্যে থেকে যে গুটিকয় লোকের মন নরম হয়ে গিয়েছিল, দুষ্টলোকেরা তাদেরকেও এ বলে ঈমানের পথ থেকে ফিরিয়ে নিতে থাকেঃ আরে মিয়া! এসব তো সময়ের উত্থান পতন ও কালের আবর্তন ছাড়া আর কিছুই নয়। এর আগেও দুর্ভিক্ষ এসেছে। এবারের দুর্ভিক্ষ দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয়েছে এটা কোন নতুন কথা নয়। কাজেই এসব ব্যাপারে প্রতারিত হয়ে মুহাম্মাদের ফাঁদে পা দিয়ো না। এ সূরা আরাফ যে সময় নাযিল হয় সে সময় মুশরিকরা এ বাগাড়ম্বর করে বেড়াচ্ছিল। কাজেই কুরআন মজীদের এসব আয়াত অত্যন্ত সময়োপযোগী ও চলতি ঘটনাবলীর সাথে সামঞ্জস্যশীল ছিল। এ পটভূমিকার আলোকে এ আয়াতগুলোর নিগূঢ় অর্থ ও তাৎপর্য পুরোপুরি অনুধাবন করা যেতে পারে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, সূরা ইউনুস ২১ আয়াত , আন নহল ১১২ আয়াত, আল মু’মিনূন ৭৫ও ৭৬ , আদ দুখান ৯-১৬) ।

সুরা: ইউনুস
আয়াত নং :-22
টিকা নং:31,

هُوَ الَّذِیْ یُسَیِّرُكُمْ فِی الْبَرِّ وَ الْبَحْرِؕ حَتّٰۤى اِذَا كُنْتُمْ فِی الْفُلْكِۚ وَ جَرَیْنَ بِهِمْ بِرِیْحٍ طَیِّبَةٍ وَّ فَرِحُوْا بِهَا جَآءَتْهَا رِیْحٌ عَاصِفٌ وَّ جَآءَهُمُ الْمَوْجُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَّ ظَنُّوْۤا اَنَّهُمْ اُحِیْطَ بِهِمْۙ دَعَوُا اللّٰهَ مُخْلِصِیْنَ لَهُ الدِّیْنَ ﳛ لَئِنْ اَنْجَیْتَنَا مِنْ هٰذِهٖ لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الشّٰكِرِیْنَ

তিনিই তোমাদের জলে-স্থলে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। কাজেই যখন তোমরা নৌকায় চড়ে অনুকূল বাতাসে আনন্দে সফর করতে থাকো, তারপর অকস্মাত বিরুদ্ধ বাতাস প্রবল হয়ে ওঠে, চারদিক থেকে ঢেউয়ের আঘাত লাগতে থাকে এবং আরোহীরা মনে করতে থাকে তারা তরঙ্গ বেষ্টিতে হয়ে গেছে তখন সবাই নিজের আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে তার কাছে দোয়া করতে থাকে এবং বলতে থাকে, “যদি তুমি আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো তাহলে আমরা শোকরগুজার বান্দা হয়ে যাবো।”৩১

তাফসীর :

 

টিকা:৩১) প্রত্যেক মানুষের অন্তরে রয়েছে তাওহীদের সত্যতার নিশানী। যতদিন উপায়-উপকরণ অনুকূল থাকে ততদিন মানুষ আল্লাহকে ভুলে পার্থিব জীবন নিয়ে অহংকারে মত্ত হয়ে থাকে। আর উপায় উপকরণ প্রতিকূল হয়ে গেলে এবং এ সঙ্গে যেসব সহায়ের ভিত্তিতে সে পৃথিবীতে বেঁচেছিল সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলে তারপর কট্টর মুশরিক ও নাস্তিকের মনেও এ সাক্ষ্য ধ্বনিত হতে থাকে যে, কার্যকারণের এ সমগ্র জগতের ওপর কোন আল্লাহর কর্তৃত্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে, তিনি একক আল্লাহ‌ এবং তিনি শক্তিশালী ও বিজয়ী (আনআম ২৯ টীকা দেখুন।)

[[টিকা:২৯) আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, তোমরা একটি নিদর্শন নিয়ে আসার দাবী জানাচ্ছো অথচ তোমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে প্রথম দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাণীদের জীবনধারা পর্যবেক্ষন করার আহবান জানানো হয়েছিল। এরপর এখন আর একটি নিদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এ নিদর্শনটি সত্য অস্বীকারকারীদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তখন আর মানুষের চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর খোদাদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করে। এ নিশানীটিকে এখানে সত্যের নিদর্শন হিসেবে পেশ করা হচ্ছে। কারণ আল্লাহ ভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের নিজের মধ্যেই বিদ্যমান। এর ওপর গাফলতি ও অজ্ঞানতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। আবু জাহেলের ছেলে ইকরামা এ ধরণের নিশানী প্রত্যক্ষ করেই ঈমানের সম্পদ লাভে সক্ষম হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে মক্কা বিজিত হবার পর ইকরামা জেদ্দার দিকে পালিয়ে যান। একটি নৌকায় চড়ে তিনি হাবাশার (ইথিয়োপিয়ার) পথে যাত্রা করেন। পথে ভীষণ ঝড়-তুফানে তার নৌকা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। প্রথমে দেবদেবীদের দোহাই দেয়া শুরু হয়। কিন্তু এতে তুফানের ভয়াবহতা কমে না বরং আরো বেড়ে যেতেই থাকে। যাত্রীদের মনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, এবার নৌকা ডুবে যাবে। তখন সবাই বলতে থাকে, এখন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকলে চলবে না। একমাত্র তিনি চাইলে আমাদের বাঁচাতে পারেন। এ সময় ইকরামের চোখ খুলে যায়। তার মন বলে ওঠে, যদি এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সাহায্যকারী না থেকে থাকে, তাহলে অন্য জায়গায়ই বা আর কেউ থাকবে কেন? একথাটাই তো আল্লাহর সেই নেক বান্দাটি আমাদের গত বিশ বছর থেকে বুঝাচ্ছেন আর আমরা খামখা তাঁর সাথে লড়াই করছি। এটি ছিল ইকরামার জীবনের সিদ্ধান্তকরী মুহূর্ত। সে মুহূর্তেই তিনি আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেন, যদি এ যাত্রায় আমি বেঁচে যাই, তাহলে সোজা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাবো এবং তাঁর হাতে আমার হাত দিয়ে দেবো। পরে তিনি নিজের এ অঙ্গীকার পূর্ণ করেন। ফিরে এসে তিনি কেবল মুসলমান হয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, বরং অবশিষ্ট জীবন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করেই কাটান।]]

সুরা: আন্-নহল
আয়াত নং :-113
টিকা নং:112,

وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَ هُمْ ظٰلِمُوْنَ

তাদের কাছে তাদের নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে একজন রসূল এলো। কিন্তু তারা তাঁকে অমান্য করলো। শেষ পর্যন্ত আযাব তাদেরকে পাকড়াও করলো, যখন তারা জালেম হয়ে গিয়েছিল।১১২

তাফসীর :

 

টিকা:১১২) এখানে যে জনপদের উদাহরণ পেশ করা হয়েছে তাকে চিহ্নিত করা হয়নি। মুফাসসিরগণও এ জনপদটির স্থান নির্দেশ করতে পারেননি। বাহ্যত ইবনে আব্বাসের (রা.) এ উক্তি সঠিক মনে হয় যে, এখানে ভীতি ও ক্ষুধা দ্বারা জনপদটির আক্রান্ত হবার যে কথা বলা হয়েছে সেটি হবে মক্কার দুর্ভিক্ষ, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর বেশ কিছুকাল পর্যন্ত মক্কাবাসীদের ওপর জেঁকে বসেছিল।

সুরা: আল-মু’মিনূন
আয়াত নং :-75
টিকা নং:72,

وَ لَوْ رَحِمْنٰهُمْ وَ كَشَفْنَا مَا بِهِمْ مِّنْ ضُرٍّ لَّلَجُّوْا فِیْ طُغْیَانِهِمْ یَعْمَهُوْنَ

যদি আমি তাদের প্রতি করুণা করি এবং বর্তমানে তারা যে দুঃখ-কষ্টে ভুগছে তা দূর করে দেই, তাহলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার স্রোতে একেবারেই ভেসে যাবে। ৭২

তাফসীর :

 

টিকা:৭২) দুর্ভিক্ষের কারণে আরববাসী যে কষ্ট ও বিপদের মধ্যে অবস্থান করছিল সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত হাদীস উদ্ধৃত করতে গিয়ে কেউ কেউ দু’টি দুর্ভিক্ষকে এক সাথে মিশিয়ে ফেলেছন। এর ফলে একটি হিজরতের আগের না পরের ঘটনা তা বুঝা মানুষের পক্ষা কঠিন হয়ে যায়। আসল ঘটনা হচ্ছ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মক্কাবাসীরা দুবার দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। একবার নবোয়াতের সূচনার কিছুদিন পর। দ্বিতীয়বার হিজরাতের কয়েক বছর পর যখন সামামাহ ইবনে উসাল ইয়ামামাহ থেকে মক্কার দিকে খাদ্য শস্য রফতানী করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এখানে দ্বিতীয় দুর্ভিক্ষটির নয় প্রথমটির কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) এ বর্ণনা পাওয়া যায় যে, যখন কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত অস্বীকার করতেই থাকলো এবং কঠোরভাবে বাধা দিতে শুরু করলো তখন তিনি দোয়া করলেনঃ

– “হে আল্লাহ! এদের মোকাবিলায় ইউসুফের আট বছরের দুর্ভিক্ষের মতো সাত বছরব্যাপী দুর্ভিক্ষ দিয়ে আমাকে সাহায্য করো।”

ফলে এমন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেলো যে, মৃতের গোশ্‌ত খাওয়ার ঘটনাও ঘটলো। মক্কী সূরাগুলোতে বহু জায়গায় এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন সূরা আল আন’আম ৪২ থেকে ৪৪ ; আল আ’রাফ ৯৪ থেকে ৯6 ; ইউনুস ১১, ১২, ২১ ; আন নহল ১১২, ১১৩ ও আদ্‌ দুখান ১০ থেকে ১৬ আয়াত এবং এ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টিকা)।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 94-95

ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّيَةِ الْحَسَنَةَ

Then We changed the evil for the good,

Afflictions that struck Earlier Nations

Allah says;

وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّبِيٍّ إِلاَّ أَخَذْنَا أَهْلَهَا بِالْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ

And We sent no Prophet unto any town (and they denied him), but We seized its people with Ba’sa’ and Darra’, so that they might humble themselves (to Allah).

Allah mentions the Ba’sa’ and Darra’ that struck the earlier nations to whom He sent Prophets.
Ba’sa’, refers to the physical sicknesses and ailments that they suffered, while Darra’, refers to the poverty and humiliation that they experienced,
لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ
(so that they might humble themselves) supplicate, humble themselves and invoke Allah, that He might remove the afflictions that they suffered from.

This Ayah indicates that Allah sent down severe afflictions to them so that they might invoke Him, but they did not do what He ordered them. Therefore, He changed the affliction into prosperity to test them.

ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّيَةِ الْحَسَنَةَ

Then We changed the evil for the good,

Therefore, Allah changed the hardship into prosperity, disease and sickness into health and well-being, and poverty into richness in provision, so that they might be thankful to Allah for this, but they did none of that.

Allah’s statement,

حَتَّى عَفَواْ

until they `Afaw,

refers to increase in numbers, wealth and offspring.

Allah said next,

وَّقَالُواْ قَدْ مَسَّ ابَاءنَا الضَّرَّاء وَالسَّرَّاء
and they said:”Our fathers were touched with evil and with good.”

He tested them with this (afflictions) and that (ease and abundance) so that they may humble themselves and repent to Him. However, they failed both tests, for neither this nor that compelled them to change their ways.

They said, “We suffered Ba’sa’ and Darra’, but prosperity came afterwards, just as like our forefathers in earlier times.” “Therefore,” they said, “it is a cycle where we sometimes suffer a hardship and at other times, we enjoy a bounty.”

However, they did not comprehend Allah’s wisdom, nor the fact that He is testing them in both cases. To the contrary, the believers are grateful to Allah in good times and practice patience in hard times.

In the Sahih, there is a Hadith that says;

عَجَبًا لِلْمُوْمِنِ لَا يَقْضِي اللهُ لَهُ قَضَاءً إِلاَّ كَانَ خَيْرًا لَهُ

وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ

وَإِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَه

The matter of the believer is amazing, for nothing that Allah decrees for him, but it is better for him.

If a Darra’ (harm) strikes him, he is patient, and this is better for him,

if he is given Sarra’ (prosperity), he thanks (Allah) for it and this is better for him.

The believer, therefore, is aware of the test behind the afflictions whether it may be prosperity or adversity that Allah sends to him, as well as the blessings.

Similarly, in another Hadith,

لَاايَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُوْمِنِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنْ ذُنُوبِهِ

The believer will continue to be tested by afflictions until he ends up pure from sin.

وَالْمُنَافِق مِثْله كَمَثَلِ الْحِمَارِ لَاا يَدْرِي فِيمَ رَبَطَهُ أَهْلُهُ وَلَاا فِيمَ أَرْسَلُوه

And the parable of the hypocrite is that of a donkey, it does not know why its owners tied it or released it.

Allah said next,

فَأَخَذْنَاهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

So We seized them all of a sudden while they were unaware.

meaning, We struck them with punishment all of a sudden, while they were unaware.

A Hadith describes sudden death,

مَوْتُ الْفَجْأَةِ رَحْمَةٌ لِلْمُوْمِنِ وَأَخْذَةُ أَسَفٍ لِلْكَافِر

Sudden death is a mercy for the believer, but a sorrowful punishment for the disbeliever.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

৯৪-৯৫ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, পূর্ববর্তী যেসব উম্মতের কাছে নবীদেরকে প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে বিপদ-আপদ দিয়ে এবং সুখ-শান্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছিল। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে শারীরিক কষ্ট এবং দৈহিক রোগ অসুস্থতা। আর (আরবী) হচ্ছে ঐ কষ্ট যা দারিদ্রের কারণে হয়ে থাকে। মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য এই যে, তারা হয়তো তার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, তাঁকে ভয় করবে এবং সেই বিপদ ও কষ্ট দূর হওয়ার জন্যে তার কাছে আবেদন ও প্রার্থনা করবে। মূল বক্তব্য হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাদেরকে কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্যে নিপতিত করেছিলেন, যেন তারা তাঁর সামনে বিনয় প্রকাশ করে। কিন্তু তারা তা করেনি। আল্লাহ পাক বলেনঃ এর পরেও আমি তাদের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল করে দিলাম। এর দ্বারাও তাদেরকে পরীক্ষা করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। এজন্যেই তিনি বলেনঃ “অতঃপর আমি তাদের দুরবস্থাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। রোগের স্থলে সুস্থতা দান করলাম। দারিদ্রের স্থলে ধন-সম্পদ প্রদান করলাম। এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, হয়তো তারা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। কিন্তু তারা তা করলো না।” (আরবী) অর্থাৎ তারা ধনে-মালে ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে গেল। ইরশাদ হচ্ছে-আমি তাদেরকে আনন্দ ও নিরানন্দ উভয় দ্বারাই পরীক্ষা করেছি, যেন তারা আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু না তারা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলো এবং না ধৈর্য ও নম্রতা অবলম্বন করলো। বরং বলতে শুরু করলো আমরা কষ্ট ও বিপদে-আপদে পতিত হয়ে গেলাম। এর পরে আমি তাদেরকে শান্তি ও আনন্দ দান করলাম। এখন তারা বলে উঠলো- “এই সুখ-শান্তি ও বিপদ-আপদ তো আমাদের পূর্বপুরুষদের যুগ থেকে চলে আসছে এবং সদা-সর্বদা এরূপ চক্রই হতে থাকবে। যুগ কখনও এরূপ হয় এবং কখনও ঐরূপ হয়। অনুরূপভাবে আমরাও কখনো শান্তি লাভ করবে এবং কখনো বিপদ-আপদে পতিত হবো। এটা কোন নতুন কথা নয়। তাদের উচিত ছিল এই ইংগিতেই আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে চিন্তা করা এবং তাঁর পরীক্ষার দিকে নিজেদের চিন্তার মোড় ফিরিয়ে নেয়া। কিন্তু মুমিনদের অবস্থা ছিল তাদের বিপরীত। তারা সুখ-শান্তির সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় এবং বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনের জন্যে বিস্মিত হতে হয় যে, আল্লাহ তার জন্যে যা কিছুরই ফায়সালা করেন তা তার জন্যে কল্যাণকরই হয়ে থাকে। যদি তার প্রতি বিপদ আপতিত হয় এবং সে ধৈর্যধারণ করে তবে সেটা তার জন্যে। মঙ্গলজনক হয়। আর যদি তার উপর সুখ-শান্তি নেমে আসে এবং তখন সে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তবে সেটাও তার জন্যে কল্যাণকর।” সুতরাং মুমিন তো ঐ ব্যক্তি যে সুখ ও দুঃখ উভয় অবস্থাতেই মনে করে যে, তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্যেই হাদীসে এসেছে-“বিপদ-আপদ মুমিনকে সদা পাপ থেকে পবিত্র করতে থাকে। (ইমাম তিরমীযীর (রঃ) বর্ণনায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে, তার কোনই পাপ থাকে না।”) আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হচ্ছে গাধার ন্যায়। তার উপর কি চাপানো হয়েছে তা সে জানে না এবং এটাও জানে না যে, কি উদ্দেশ্যে তাকে কাজে লাগানো হয়েছে, আর কেনই বা তাকে বাধা হয়েছে। এবং কেনই বা খুলে দেয়া হয়েছে।” এজন্যেই এর পরে আল্লাহ পাক বলেনঃ আকস্মিকভাবে আমি তাকে শাস্তিতে নিপতিত করেছি, যে শাস্তি সম্পর্কে তার কোন ধারণাও ছিল না। যেমন হাদীসে রয়েছে-“আকস্মিক মৃত্যু মুমিনের জন্যে রহমত এবং কাফিরের জন্যে দুঃখ ও আফসোসের কারণ।”

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

* এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় এবং ‘আদ’ ও ‘সামূদ’ জাতিকে যেসব ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা শুধুমাত্র তাদের সাথেই এককভাবে সম্পৃক্ত নয়; বরং সকল জাতির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। কুরাইশ কাফেরদের জন্যও প্রযোজ্য। আল্লাহ রাববুল আলামীন স্বীয় রীতি অনুযায়ী দুনিয়ার বিভ্রান্ত জাতি-সম্প্রদায়ের সংশোধন ও কল্যাণ সাধনকল্পে যেসব নবী-রাসূল প্রেরণ করেন তাদের আদেশ-উপদেশের প্রতি যারা মনোনিবেশ করে না প্রথমে তাদেরকে পার্থিব বিপদাপদের সম্মুখীন করা হয়, যাতে এই বিপদাপদের চাপে আল্লাহর দিকে মনোযোগী হতে পারে। তাঁরই দিকে ফিরে আসতে পারে, নবী-রাসূলদের উপর মিথ্যারোপ করা থেকে বিরত হয়। [তাবারী; সা’দী]

* আয়াতের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে দু’ধরণের পরীক্ষা নিয়েছেন। প্রথম পরীক্ষাটি নেয়া হয়েছে তাদেরকে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং রোগ-ব্যাধির সম্মুখীন করে। তারা যখন তাতে অকৃতকার্য হয়, তখন দ্বিতীয় পরীক্ষাটি নেয়া হয় দারিদ্র, ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধির পরিবর্তে তাদের ধন-সম্পদের প্রবৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দানের মাধ্যমে। তাতে তারা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করে এবং তা অনেক গুণে বেড়ে যায়। এ পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল যাতে তারা দুঃখ কষ্টের পরে সুখ ও সমৃদ্ধি প্রাপ্তির ফলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এবং এভাবে যেন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পথে ফিরে আসে। কিন্তু কৰ্মবিমুখ, শৈথিল্য পরায়ণের দল তাতেও সতর্ক হয়নি; বরং বলতে শুরু করে দেয় যে, এটা কোন নতুন বিষয় নয়। সৎ কিংবা অসৎকর্মের পরিণতিও নয়; বরং প্রাকৃতিক নিয়মই তাই- কখনো সুখ, কখনো দুঃখ, কখনো রোগ, কখনো স্বাস্থ্য, কখনো দারিদ্র্য, কখনো স্বচ্ছলতা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের পিতা-পিতামহ প্রমুখ পূর্ব-পুরুষদেরও এমনি সব অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতে করে তারা তখনই নিপতিত হলো আকস্মিক আযাবের মধ্যে। অর্থাৎ তারা যখন উভয় পরীক্ষাতেই অকৃতকার্য হয়ে গেল এবং সতর্ক হল না, তখন আমি তাদেরকে আকস্মিক আযাবের মাধ্যমে ধরে ফেললাম এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন খবরই ছিল না। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

৯৪-৯৫ নং আয়াতের তাফসীরঃ

পূর্ববর্তী উম্মাতের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অবগত করেছেন। তিনি যে জাতির কাছেই নাবী রাসূল প্রেরণ করেছেন সবাইকে বালা-মসিবত দ্বারা পরীক্ষা করেছেন।

(ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّئَةِ الْحَسَنَةَ)

‘অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি।’ অর্থাৎ আমি তাদের অসচ্ছল অবস্থা থেকে সচ্ছলতা দান করেছি। অসুস্থতা থেকে সুস্থতা দান করেছি। যাতে তারা এসব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে।

(حَتّٰي عَفَوْا)

‘তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে গেল’ অর্থাৎ এমনি তারাও বৃদ্ধি পেল এবং তাদের সম্পদও বৃদ্ধি পেল। যখন তারা এরূপ ধনে-মালে ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে গেল তখন বলতে লাগল: এ সুখ শান্তি ও বিপদ-আপদ তো আমাদের পূর্বপুরুষদের যুগ থেকেই চলে আসছে এবং সর্বদা এরূপ চক্র চলবে। যুগ কখনো এরূপ হয় আবার কখনো ঐরূপ হয়। এটা নতুন কথা নয়।

এরূপ অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আবার আযাব দ্বারা পাকড়াও করলেন।

কিন্তু মু’মিনদের অবস্থা বিপরীত। তারা সুখে দুঃখে সব সময় আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: মু’মিনদের প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। যদি সুখ শান্তি আসে তাহলে শুকরিয়া আদায় করে এটা তার জন্য কল্যাণকর। পক্ষান্তরে যদি বিপদ-আপদ আসে তাহলে ধৈর্য ধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম হা: ২৯৯৯)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. যে জাতির কাছে আল্লাহ তা‘আলা নাবী প্রেরণ করেছেন তাদেরকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ দ্বারা পরীক্ষা করেছেন।
২. আল্লাহ তা‘আলা সুখ-শান্তি দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করেন।
৩. মু’মিনদের জন্য সর্বাবস্থায় কল্যাণ রয়েছে।

Leave a Reply