(Book# 114/٣٥)-২৩৭

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

  • بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ(Book# 114/٣٥)-২৩৭
    www.motaher21.net

لَّا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ

মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ছাড়া কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে,

Let not the believers take the disbelievers as “Auliya” instead of the believers,

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-২৮

لَا یَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَۚ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَیْسَ مِنَ اللّٰهِ فِیْ شَیْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقٰىةًؕ وَ یُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفْسَهٗؕ وَ اِلَى اللّٰهِ الْمَصِیْرُ

মু’মিনরা যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করে। যে এমনটি করবে, আল্লাহ‌র সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এ নীতি অবলম্বন করো তাহলে তা মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ‌ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্ত্বার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।

২৮ নং আয়াতের তাফসীরঃ

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে মু’মিন ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করছেন। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكٰفِرِيْنَ أَوْلِيَا۬ءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ)

“হে মু’মিনগণ! তোমরা মু’মিনগণের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।” (সূরা নিসা ৪:১৪৪)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْیَھُوْدَ وَالنَّصٰرٰٓی اَوْلِیَا۬ئَﺮ بَعْضُھُمْ اَوْلِیَا۬ئُ بَعْضٍﺚ وَمَنْ یَّتَوَلَّھُمْ مِّنْکُمْ فَاِنَّھ۫ مِنْھُمْﺚ اِنَّ اللہَ لَا یَھْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ)

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারী লোকেদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৫১) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَا۬ءَ)

“হে মু’মিনগণ! আমার শত্র“ ও তোমাদের শত্র“কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।” (সূরা মুমতাহিনা ৬০:১)

সুতরাং অমুসলিমদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ও কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি এ কবীরা গুনায় লিপ্ত হবে সে আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকবে। এ বন্ধুত্ব হলো মুশরিকদেরকে ভালবাসার বন্ধুত্ব আর এটাই হলো কুফরী ও ধর্মহীনতা। মুশরিকদেরকে ভালবাসার মূলে হলো কুফরী ও ধর্মহীনতা। এ ভালবাসা থেকেই তাদেরকে সহযোগিতা করার প্রেরণা জাগে। অতত্রব মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সহযোগিতা করাই তাদের সাথে বন্ধুত্বের প্রমাণ করে। আর মুশরিকদের সাথে এ বন্ধুত্বই হলো ধর্মহীনতার প্রমাণ। সুতরাং মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকরদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা ইসলাম বিনষ্টের অন্যতম কারণ। মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকরদেরকে সাহায্য করার অর্থ হলো কাফিরদেরকে ভালবাসা। আর কাফিরদেরকে ভালবাসা হলো ইসলাম ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়া। যা কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। তবে তাদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্ব রাখা যাবে যখন তাদের থেকে কোন অনিষ্টতার আশংকা হয়। শুধু বাহ্যিক বন্ধুত্ব হবে কিন্তু অন্তরে ঘৃণা থাকবে। যেমন ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আবূ দারদা (রাঃ) বলেন,

بَاب الْمُدَارَاةِ مَعَ النَّاسِ وَيُذْكَرُ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ إِنَّا لَنَكْشِرُ فِي وُجُوهِ أَقْوَامٍ وَإِنَّ قُلُوبَنَا لَتَلْعَنُهُمْ

কোন কোন জাতির সাথে আমরা হাসি মুখে মিলিত হই কিন্তু আমাদের অন্তর তাদের প্রতি অভিশম্পাত করে। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাব, অনুচ্ছেদ দীনের স্বার্থে মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করা)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তার শাস্তি সম্পর্কে অবগত করছেন। তাঁর কাছেই সকলকে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং কে কোন্ উদ্দেশ্যে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে মানুষ তা না জানলেও আল্লাহ তা‘আলা তা জানেন, সে অনুযায়ী তিনি বিচার করবেন।

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন ‌বলেছেন:-

অর্থাৎ যদি কোন মু’মিন কোন ইসলাম দুশমন দলের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের জুলুম-নির্যাতন চালাবার আশঙ্কা করে, তাহলে এ অবস্থায় তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে, সে নিজের ঈমান লুকিয়ে রেখে কাফেরদের সাথে বাহ্যত এমনভাবে অবস্থান করতে পারে যেন সে তাদেরই একজন। অথবা যদি তার মুসলমান হবার কথা প্রকাশ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য সে কাফেরদের প্রতি বন্ধুত্বের মনোভাব প্রকাশ করতে পারে। এমনি কি কঠিন ভয়ভীতি ও আশঙ্কাপূর্ণ অবস্থায় যে ব্যক্তি সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তাকে কুফরী বাক্য পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করার অনুমতিটুকু দেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ মানুষের ভয় যেন তোমাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন না করে ফেলে যার ফলে আল্লাহ‌র ভয় মন থেকে উবে যায়। মানুষ বড়জোর তোমার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে, যার পরিসর দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ‌ তোমাকে চিরন্তন আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য যদি কখনো বাধ্য হয়ে কাফেরদের সাথে আত্মরক্ষামূলক বন্ধুত্বনীতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে তার পরিসর কেবলমাত্র ইসলামের মিশন, ইসলামী জামায়াতের স্বার্থ ও কোন মুসলমানের ধন-প্রাণের ক্ষতি না করেই নিজের জানমালের হেফাজত করে নেয়া পর্যন্তই সীমিত হতে পারে। কিন্তু সাবধান, তোমার মাধ্যমে যেন কুফর ও কাফেরদের এমন কোন খেদমত না হয় যার ফলে ইসলামের মোকাবিলায় কুফরী বিস্তার লাভ করে এবং মুসলমানদের ওপর কাফেরদের বিজয় লাভ ও আধিপত্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অবশ্যই একথা ভালোভাবে জেনে রাখতে হবে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে যদি তোমরা আল্লাহ‌র দ্বীনকে অথবা মু’মিনদের জামায়াতকে বা কোন মুসলিম ব্যক্তিকে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকো অথবা আল্লাহ‌দ্রোহীদের কোন যথার্থ খেদমত করে থাকো, তাহলে আল্লাহ‌র পাকড়াও থেকে তোমরা কোনক্রমেই রক্ষা পেতে পারবে না। তোমাদের তো অবশেষে তার কাছে যেতেই হবে।

তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-

এখানে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন না করে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে প্রণয় ও ভালবাসা থাকা উচিত। অতঃপর তিনি সতর্ক করে বলছেন যে, এরূপ যে ব্যক্তি করবে অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের সাথে মিত্রতা করবে তার প্রতি তিনি রাগান্বিত হয়ে যাবেন। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থা ‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো না’। (৬০:১) অন্য স্থানে রয়েছেঃ “হে মুমনিগণ! এই ইয়াহুদী এবং খ্রীষ্টানেরা পরস্পর বন্ধু, তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ অন্যত্র আল্লাহ তাআলা মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের উল্লেখ করে বলেনঃ “অবিশ্বাসকারীরা পরস্পর বন্ধু, তোমরা যদি এরূপ না কর তবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে গণ্ডগোলের সৃষ্টি হবে এবং ভীষণ হাঙ্গামা সংঘটিত হবে।’

অতঃপর আল্লাহ পাক ঐ লোকদেরকে অনুমতি দেন যারা কোন শহরে কোন সময় অবিশ্বাসীদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে মৌখিক তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখে কিন্তু তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখে না। যেমন সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ ‘কোন কোন গোত্রের সাথে আমরা প্রশস্ত বদনে মিলিত হই, কিন্তু আমাদের অন্তর তাদের প্রতি অভিশাপ দেয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “শুধু মুখে বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে হবে কিন্তু কাজে-কর্মে এরূপ অবস্থাতেও কখনও তাদের সহযোগিতা করতে হবে না’। এ উক্তিটিই অন্যান্য ব্যাখ্যাকারী হতেও বর্ণিত আছে। আল্লাহ তা’আলার নিম্নের ঘোষণাটিতেও এ উক্তিরই সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ঈমান আনয়নের পর আল্লাহর সাথে কুফরী করে কিন্তু যার প্রতি জবরদস্তি করা হয়েছে এবং তার অন্তর ঈমানের সাথে শান্তি প্রাপ্ত (অসমাপ্ত আয়াত)। (১৬:১০৬)।

সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে, হযরত হাসান (রাঃ) বলেনঃ “কিয়ামত পর্যন্তই এ নির্দেশ। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় অস্তিত্বের ভয়প্রদর্শন করছেন। অর্থাৎ তিনি ঐ লোকদেরকে স্বীয় শাস্তির ভয় প্রদর্শন করছেন যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করতঃ তাঁর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে এবং তার বন্ধুদের সাথে শত্রুতা পোষণ করছে।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তার নিকটই ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেকেই তার কাছে স্বীয় কার্যের প্রতিদান প্রাপ্ত হবে। মুসনাদ ইবনে আবি হাতিম’ গ্রন্থে রয়েছে, হযরত মাইমুন ইবনে মাহরান বলেন, হযরত মুআয (রাঃ) দাঁড়িয়ে আমাদেরকে বলেনঃ “হে বানী আওদ! আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দূতরূপে তোমাদের নিকট আগমন করেছি। জেনে রেখো যে, আল্লাহর নিকট সকলকে ফিরে যেতে হবে। অতঃপর অবস্থান স্থল হবে জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’

তাফসীরে‌ আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] কোন কাফেরের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়। এ আয়াতে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মুসলিমদের কোন ব্যাপারে সাহায্য সহযোগিতার চুক্তি করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, যে কেউ সেটা করবে তার সাথে আল্লাহ্‌র সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌র দ্বীনে তার কোন অংশ থাকবে না। কেননা কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঈমানের সাথে একত্রিতভাবে থাকতে পারে না। ঈমান তো শুধু আল্লাহ্‌ ও আল্লাহ্‌র বন্ধু মুমিনদের সাথে সম্পর্ক রাখতে বলে যারা আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহ্‌র শক্ৰদের সাথে জিহাদ করে। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীরা তারা পরস্পর পরস্পরের ওলী” [সূরা আত-তাওবাহ ৭১]

সুতরাং কেউ যদি ঈমানদারদের ব্যতীত এমন কাফেরদেরকে বন্ধু বানায় যারা আল্লাহ্‌র নূরকে নিভিয়ে দিতে চায় এবং তাঁর বন্ধুদেরকে বিপদে ফেলতে চায়, তাহলে সে মুমিনদের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কাফেরদের গণ্ডিভুক্ত হবে। এজন্যই আল্লাহ্‌ বলেছেন, কেউ যদি তাদেরকে বন্ধু বানায় তবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো যে, কাফেরদের থেকে দুরে থাকতে হবে, তাদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না, তাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারবে না। অনুরূপভাবে তাদের প্রতি অনুরাগী হওয়া যাবে না। কোন কাফেরকে মুসলিমদের উপর কর্তৃত্ব দেয়া যাবে না। [সা’দী]

[২] আল্লাহ্‌র ভয়ের পরিবর্তে মানুষের ভয় যেন তোমাদেরকে আচ্ছন্ন করে না রাখে; কেননা মানুষের ভয় ও ক্ষতির সম্ভাবনা দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ্‌র শাস্তি ও ক্ষতির সম্ভাবনা দুনিয়া ছাড়িয়ে আখেরাতেও ব্যাপৃত। সুতরাং আল্লাহ্‌র শাস্তির ভয়ে ভীত থাক। যে কাজে তার শাস্তি অবধারিত সে কাজ থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। যদি তোমরা তাঁর অবাধ্য হও তবে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন। [সা’দী]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] আউলিয়া ওলীর বহুবচন। আর ওলী এমন বন্ধুকে বলা হয়, যার সাথে থাকে আন্তরিক ভালবাসা এবং বিশেষ সম্পর্ক। যেমন, মহান আল্লাহ নিজেকে ঈমানদারদের ওলী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। [اَللهُ ولِيُّ الَّذِيْنَ آمَنُوا] “আল্লাহ হলেন ঈমানদারদের ওলী।” আলোচ্য আয়াতের অর্থ হল, ঈমানদারদের পারস্পরিক ভালবাসা এবং বিশেষ সম্পর্ক থাকে। তারা আপোসে একে অপরের অন্তরঙ্গ বন্ধু। এখানে মহান আল্লাহ মু’মিনদেরকে কাফেরদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ, কাফেররা আল্লাহর শত্রু এবং মু’মিনদেরও। সুতরাং তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা কিভাবে বৈধ হতে পারে? আর এই কারণেই আল্লাহ তাআলা এই বিষয়টাকে কুরআনের আরো কয়েক স্থানে অতীব গুরুত্বের সাথে পেশ করেছেন। যাতে মু’মিনরা কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব এবং বিশেষ সম্পর্ক কায়েম করা থেকে বিরত থাকে। অবশ্য (পার্থিব) প্রয়োজন ও সুবিধার দাবীতে তাদের সাথে সন্ধি ও চুক্তি হতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেনও। অনুরূপ যে কাফের মুসলিমদের সাথে শত্রুতা রাখে না, তার সাথে উত্তম ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার করা বৈধ। (এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা মুমতাহিনায় আছে।) কারণ, এ সব কার্যকলাপ (বন্ধুত্ব ও ভালবাসা থেকে) ভিন্ন জিনিস।

[২] এই অনুমতি সেই মুসলিমদের জন্য যারা কোন কাফের দেশে বসবাস করে। যদি কোন সময় তাদের (কাফেরদের) সাথে বন্ধুত্বের প্রকাশ করা ব্যতীত তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে মৌখিকভাবে বন্ধুত্বের প্রকাশ করতে পারবে।

আয়াতের শিক্ষাঃ

১. অমুসলিমদের সাথে সর্বপ্রকার সম্পর্ক রাখা হারাম।
২. অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা ও ভালবাসা এবং সহযোগিতা করা কুফরী যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
৩. মুসলিমদের থেকে কাফিরদের শক্তি সামর্থ্য বেশি থাকলে কিম্বা তাদের থেকে কোন ক্ষতির আশংকা করলে তাদের সাথে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখা যেতে পারে তবে অন্তরে ঘৃণা থাকতে হবে।

Leave a Reply