(Book# 114/٣٦)-২৩৮

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٦)-২৩৮
www.motaher21.net

قُلْ إِن تُخْفُوا مَا فِى صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ

বল, ‘তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়কে গোপন কর অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন,

Whether you hide what is in your breasts or reveal it, Allah knows it,

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-২৯-৩০

قُلْ إِن تُخْفُوا مَا فِى صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ ۗ وَيَعْلَمُ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

বল, ‘তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়কে গোপন কর অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন, আর তিনি জানেন যা কিছু আকাশসমূহে এবং ভূভাগে আছে; আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান’।

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوٓءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُۥٓ أَمَدًۢا بَعِيدًاۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥۗ وَٱللَّهُ رَءُوفٌۢ بِٱلْعِبَادِ

যে দিন প্রত্যেক আত্মা যা কিছু নেক ‘আমাল করেছে এবং যা কিছু বদ ‘আমাল করেছে তা বিদ্যমান পাবে; সেই আত্মা কামনা করবে যদি তার এবং ওর (অর্থাৎ তার মন্দ কর্মফলের) মধ্যে দুস্তর ব্যবধান হত। আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সাবধান করছেন, বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাগণের প্রতি খুবই করুণাশীল।

২৯-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ‌ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু জানেন, কিছুই তার কাছে গোপন নেই- সে কথাই এ আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

কিয়ামাতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলনামা উপস্থিত পাবে। যাদের আমলনামা খারাপ হবে তারা আফসোস করে বলবে, হায়! যদি আমার ও আমার এ খারাপ আমলের মধ্যে অনেক দূরত্ব হতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاَمَّا مَنْ اُوْتِیَ کِتٰبَھ۫ بِشِمَالِھ۪ﺃ فَیَقُوْلُ یٰلَیْتَنِیْ لَمْ اُوْتَ کِتٰبِیَھْﭨﺆ وَلَمْ اَدْرِ مَا حِسَابِیَھْ)‏

“আর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেয়া হত। এবং আমি যদি আমার হিসাব কী, তা না জানতাম!” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:২৫-২৬)

যে শয়তান তাকে খারাপ কাজে প্রেরণা দিয়েছে তার কাছ থেকেও দূরে থাকার আফসোস প্রকাশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ)

“সে (শয়তানকে) বলবে: হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত! কতই না নিকৃষ্ট সহচর সে!” (সূরা যুখরুƒফ ৪৩:৩৮) সুতরাং যে শয়তানের প্রতারণায় আমরা আজ অপরাধের সাগরে ডুবে আছি কিয়ামতের দিন সে শয়তানকে দোষ দেয়ার সুযোগ থাকবে না; বরং নিজের অপরাধের বোঝা নিজেকেই বহন করে লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে যেতে হবে।

তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তিনি প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব কথাই ভালই জানেন। কোন ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্ৰমত কথাও তাঁর নিকট লুক্কায়িত থাকে না। তার জ্ঞান সমস্ত জিনিসকে প্রতি মুহূর্তে বেষ্টন করে রয়েছে। পৃথিবী প্রান্তে, পর্বতে, সমুদ্রে, আকাশে, বাতাসে, ছিদ্রে মোটকথা যেখানে যা কিছু আছে সবই তাঁর গোচরে রয়েছে। সব কিছুর উপরেই তাঁর পূর্ণ ক্ষমতা বিদ্যমান। তিনি যেভাবেই চান রাখেন, যাকে ইচ্ছে করেন শাস্তি দেন। সুতরাং এত ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী ও এতবড় ক্ষমতাবান হতে সকলেরই সদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা, সদা-সর্বদা তাঁর আদেশ পালনে নিয়োজিত থাকা এবং অবাধ্যতা হতে বিরত থাকা উচিত। তিনি সবজান্তাও বটে এবং অসীম ক্ষমতার অধিকারীও বটে। সম্ভবতঃ তিনি কাউকে ঢিল দিয়ে রাখবেন, কিন্তু যখন ধরবেন তখন এমন কঠিনভাবে ধরবেন যে, পালিয়ে যাবার কোন উপায় থাকবে না। এমন একদিন আসবে যেদিন সমস্ত ভাল-মন্দ কাজের হিসেব সামনে রেখে দেয়া হবে। পুণ্যের কাজ দেখে আনন্দ লাভ হবে এবং মন্দ কাজ দেখে দাঁত কামড়াতে থাকবে ও হা-হুতাশ করবে। সেদিন তারা ইচ্ছে পোষণ করবে যে, যদি তার মধ্যে ও ঐ মন্দ কার্যের মধ্যে বহু দূরের ব্যবধান থাকতো তবে কতই না চমৎকার হতো! কুরআন কারীমের আর এক স্থানে ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ সেদিন মানুষকে তার পূর্বের ও পরের কৃৎকর্মের সংবাদ দেয়া হবে। (৭৫:১৩) দুনিয়ায় যে শয়তান তার সঙ্গে থাকতো এবং তাকে অন্যায় কার্যে উত্তেজিত করতো সেদিন তার উপরও সে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে এবং বলবেঃ (আরবী) অর্থাৎ হে শয়তান, যদি তোমার ও আমার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান হতো তবে কতই না ভাল হতো! তুমি মন্দ সাথী।’ (৪৩:৩৮)

আল্লাহ তা’আলা বলেন-“আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় অস্তিত্ব হতে অর্থাৎ স্বীয় শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় সৎ বান্দাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা যেন তাঁর দয়া ও স্নেহ হতেও নিরাশ না হয়। কেননা, তিনি। অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহশীল। ইমাম হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ “এটাও তার সরাসরি দয়া ও ভালবাসা যে, তিনি স্বীয় অস্তিত্ব হতে বান্দাদেরকে ভয় দেখিয়েছেন। এও ভাবার্থ হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। সুতরাং বান্দাদেরও উচিত যে, তারা যেন সরল-সঠিক পথ হতে সরে না পড়ে, পবিত্র ধর্মকে পরিত্যাগ না করে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে না নেয়।

তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
আল্লাহ্ তা’আলা প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু সম্যকরূপে জানেন। মানুষের অন্তরে কি আছে, এমনকি কি উদিত হবে তাও আল্লাহ্‌ জানেন। কারণ, হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলা যখন প্রথম কলম সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে বললেন, লিখ। তখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা সবই লিখা হতে লাগল। ” [মুসনাদে আহমাদ ৫/৩১৭] সুতরাং মানুষের মনে কি উদিত হবে সেটাও কলম লিখে রেখেছে।

অর্থাৎ তার মধ্যে এবং তার আমলের মধ্যে বিশাল ব্যবধান কামনা করবে। তারা চাইবে যেন তাদের আমলনামা তাদেরকে দেয়া না হয়।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষ যা প্রকাশ করে ও গোপন করে এমনকি আকাশে ও জমিনে যা আছে তাও আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
২. ভাল-মন্দ সবকিছুর প্রতিদান মানুষ পাবে।
৩. পাপাচারীগণ কিয়ামতের দিন আফসোস করবে; কিন্তু তাদের আফসোস কোন কাজে আসবে না।

Leave a Reply