(Book# 114/٣٩)-২৪১

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٩)-২৪১
www.motaher21.net

فَتَقَبَّلْ مِنِّىٓ ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

কাজেই আমার পক্ষ হতে তা গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

Accept this from me, Verily, You are the All-Hearer, the All-Knowing.

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-৩৫

إِذْ قَالَتِ امْرَأَتُ عِمْرٰنَ رَبِّ إِنِّى نَذَرْتُ لَكَ مَا فِى بَطْنِى مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّىٓ ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

(স্মরণ কর) যখন ‘ইমরানের স্ত্রী আরয করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার উদরে যা আছে, তাকে আমি একান্ত তোমার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, কাজেই আমার পক্ষ হতে তা গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-এর মা মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) ও তাঁর নানী ইমরানের স্ত্রী, যার নাম হান্না বিনতে ফাকুজ ও তাঁর জন্ম, মৃত্যু, মু‘জিযাহ এবং সম্প্রদায়ের সাথে যে কার্যকলাপ ও আচরণ হয়েছিল সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

শাব্দিক ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা:

مُحَرَّرًا একনিষ্ঠভাবে শুধু ইবাদত করার জন্য এবং খিদমত করার জন্য উৎসর্গ করে দেয়া। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নাবীদের শরীয়তে প্রচলিত ইবাদত-পদ্ধতির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নামে সন্তান উৎসর্গ করার রেওয়াজও চালু ছিল। এসব উৎসর্গিত সন্তানদের পার্থিব কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হত না। এ পদ্ধতি অনুযায়ী ঈসার নানী অর্থাৎ ইমরানের স্ত্রী নিজের গর্ভস্থ সন্তান সম্পর্কে মানত করলেন যে, তাকে বিশেষভাবে আল্লাহ তা‘আলার ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খেদমতে নিয়োজিত করা হবে।

(وَإِنِّيْ أُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا)

‘আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে আপনার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি’ হান্না এ দু‘আ করেছিলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এ দু‘আ কবূল করেছিলেন। ফলে মারইয়ামকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: প্রত্যেক শিশুকেই তার জন্মের সময় শয়তান আঘাত করে, এর কারণে সে চীৎকার করে কেঁদে উঠে; কিন্তু মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) ও তাঁর ছেলে ঈসা (আঃ) এটা হতে রক্ষা পেয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৩১)

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন ‌বলেছেন:-

‘ইমরানের মহিলা’ শব্দের অর্থ এখানে যদি ইমরানের স্ত্রী ধরা হয়, তাহলে বুঝতে হবে এখানে সেই ইমরানের কথা বলা হয়নি যার প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। বরং ইনি ছিলেন হযরত মারয়ামের (আঃ) পিতা। সম্ভবত এ নাম ছিল ইমরান। আর ‘ইমরানের মহিলা’ শব্দের অর্থ যদি ধরা হয় ইমরান বংশের মহিলা, তাহলে হযরত মারয়ামের (আঃ) মা ইমরান বংশের মেয়ে ছিলেন একথাই বুঝতে হবে। কিন্তু এই দু’টি অর্থের মধ্য থেকে কোন একটিকে চূড়ান্তভাবে অগ্রাধিকার দেবার জন্য কোন তথ্য মাধ্যম আমাদের হাতে নেই। কারণ হযরত মারয়ামের পিতা কে ছিলেন এবং তাঁর মাতা ছিলেন কোনো বংশের মেয়ে-এ বিষয়ে ইতিহাসে কোন উল্লেখ নেই। তবে হযরত ইয়াহ্‌ইয়ার মাতা ও হযরত মারয়ামের মাতা পরস্পর আত্মীয় ছিলেন, এই বর্ণনাটি যদি সঠিক বলে মেনে নেয়া হয়, তাহলে ইমরান বংশের মেয়ে-ই হবে “ইমরানের মহিলা” শব্দের সঠিক অর্থ। কারণ লুক লিখিত ইঞ্জিলে আমরা সুস্পষ্টভাবে পাই যে, হযরত ইয়াহ্‌ইয়ার মাতা হযরত হারুনের বংশধর ছিলেন। (লুকঃ ৫)

অর্থাৎ তুমি নিজের বান্দাদের প্রার্থনা শুনে থাকো এবং তাদের মনের অবস্থা জানো।

তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-

কাতাদা বলেন, ইমরানের স্ত্রী তার গর্ভে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে দিয়ে দেয়ার মনস্থ করেছিলেন। তারা সাধারণত: পুরুষ সন্তানদেরকে উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। যদি কাউকে উপসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হত, সে কখনো উপাসনালয় ত্যাগ করত না। তার কাজই হতো উপাসনালয়ের দেখাশোনা করা। কোন মহিলাকে এ কাজের জন্য দেয়া হতো না। কারণ, মহিলাকে এ কাজের উপযুক্ত বিবেচনা করা হতো না। কারণ, তার সৃষ্টিগত কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন, হায়েয ও নিফাস। যা উপাসনালয়ে অবস্থানের জন্য উপযুক্ত ছিল না। এ জন্যই ইমরান স্ত্রী যখন সন্তান প্রসব করে দেখলেন যে, তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন, তখন কি করবেন স্থির করতে না পেরে বলেছিলেন, ‘রব! আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব করেছি’। পরবর্তীতে মানত অনুসারে সে কন্যা সন্তানকেই উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। [তাবারী]

فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّى وَضَعْتُهَآ أُنثَىٰ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ ٱلذَّكَرُ كَٱلْأُنثَىٰۖ وَإِنِّى سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّىٓ أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ

অতঃপর যখন সে তাকে প্রসব করল, বলে উঠল, হে আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করেছি এবং আল্লাহ ভাল করেই জানেন যা সে প্রসব করেছে; বস্তুতঃ পুত্র কন্যার মত নয় এবং আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম এবং আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়ত্বান হতে তোমার আশ্রয়ে ছেড়ে দিলাম।
৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইমরানের যে পত্নী হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর মা ছিলেন তাঁর নাম ছিল হিন্না বিনতে ফাকুয। হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেনঃ তার ছেলে মেয়ে হতো না। একদা তিনি একটি পাখীকে দেখেন যে, সে তার বাচ্চাগুলোকে আদর করছে। এতে তাঁর অন্তরে সন্তানের বাসনা জেগে উঠে। ঐ সময়েই তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট আন্তরিকতার সাথে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করেন। আল্লাহ পাক তাঁর প্রার্থনা কবূল করেন; ঐ রাত্রেই তিনি গর্ভবতী হন।

গর্ভ ধারণের পূর্ণ বিশ্বাস হলে তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রতিজ্ঞা করেন (ন্যর মানেন) যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে সন্তান দান করলে তিনি তাঁকে বায়তুল মুকাদ্দাসের খিদমতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে আযাদ করে দেবেন। অতঃপর পুনরায় তিনি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এই নিষ্কলুষ নর কবুল করুন। আপনি আমার প্রার্থনা শুনতে রয়েছেন এবং আমার নিয়তের কথাও আপনি খুব অবগত আছেন। তখন পুত্র সন্তান হবে কি কন্যা সন্তান হবে তাতো আর জানা ছিল না। কাজেই সন্তান ভূমিষ্ট হলে দেখা যায়, তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। আর বায়তুল মুকাদ্দাসের সেবা কার্য পরিচালনার যোগ্যতা কন্যা সন্তানের থাকতে পারে না। ওর জন্যে তো পুত্র সন্তানের প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে স্বীয় দুর্বলতার কথা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রকাশ করতঃ বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তো তাকে আপনার নামে, আযাদ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ যে কন্যা হয়ে গেল। (আরবী) এরূপও পড়া হয়েছে। অর্থাৎ এ উক্তিটিও হযরত হিন্নারই ছিল। তাহলে অর্থ হবে ‘আমি যে কন্যা সন্তান প্রসব করেছি তা আল্লাহ তাআলা খুব ভাল জানেন। আবার ‘অযাআত’ও পড়া হয়েছে। তখন অর্থ হবে সে যে কি সন্তান প্রসব করেছে তা আল্লাহ তা’আলা খুব ভাল জানেন। হযরত হিন্না বলেনঃ নর ও নারী সমান নয়। আমি তার নাম মারইয়াম রাখলাম। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, জন্মের দিনও শিশুর নাম রাখা বৈধ। কেননা, পূর্ববর্তীদের শরীয়তও আমাদের শরীয়ত। আর এখানে এটা বর্ণনা করা হয়েছে এবং খণ্ডন করা হয়নি। বরং ওটাকে ঠিকই রাখা হয়েছে। হাদীস শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আজ রাত্রে আমার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে এবং তার নাম আমি আমার পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নামানুসারে ইবরাহীম রেখেছি’। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

হযরত আনাস (রাঃ)-এর একটি ভাই জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বহস্তে তার মুখে খাবার পুরে দেন এবং তার নাম রাখেন আবদুল্লাহ। এ হাদীসটিও সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ রাসূল! রাত্রে আমার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তার নাম কি রাখবো’? তিনি বলেনঃ “আবদুর রাহমান রাখ’-সহীহ বুখারী। আর একটি সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, হযরত আবু উসায়েদ (রাঃ)-এর একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাকে নিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট উপস্থিত হন, যেন তিনি স্বীয় পবিত্র হস্তে তার মুখে খাবার পুরে দেন। তিনি অন্য দিকে মনোযোগ দেন এবং শিশুটির কথা বিস্মরণ হন। হযরত উসায়েদ (রাঃ) শিশুটিকে বাড়ী পাঠিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) অবকাশ প্রাপ্ত হয়ে শিশুটির কথা খেয়াল করেন এবং তাকে দেখতে না পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। তার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করতঃ অবস্থা জানতে পেরে বলেনঃ “তার নাম রাখ মুনযির (অর্থাৎ ভয় প্রদর্শক)।” মুসনাদ-ই-আহ্মাদ ও সুনানের মধ্যে একটি হাদীস বর্ণিত আছে যাকে ইমাম তিরমিযী বিশুদ্ধ বলেছেন, তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশু স্বীয় ‘আকীকায় বন্ধক থাকে। সপ্তম দিনে আকীকাহ দিতে হবে অর্থাৎ জন্তু যবেহ করতে হবে, শিশুর নাম রাখতে হবে এবং মস্তক মুণ্ডন করতে হবে।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, রক্তপাত করতে হবে। এ বর্ণনাটিই বেশী সঠিক রূপে প্রমাণিত। কিন্তু যুবাইর ইবনে বাকারের বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় পুত্র হযরত ইবরাহীম (রাঃ)-এর ‘আকীকাহ’ করেছিলেন এবং নাম রেখেছিলেন ইবরাহীম (রাঃ)। এ হাদীসটি সনদ দ্বারা সাব্যস্ত নয় এবং এর বিপরীত বিশুদ্ধ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। সামঞ্জস্য এভাবে হতে পারে যে, ঐদিনে ঐ নামটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর মাতাও স্বীয় শিশু কন্যাকে ও তার ভবিষ্যৎ সন্তানদেরকে বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট হতে আল্লাহ তাআলার আশ্রয়ে সমর্পণ করেন। মহান আল্লাহ তাঁর এ প্রার্থনাটি ককূল করেন। মুসনাদ-ই-আবদুর রাজ্জাকের মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘শয়তান প্রত্যেক শিশুকেই তার জন্মের সময় আঘাত করে, ওরই কারণে সে চীষ্কার করে কেঁদে উঠে। কিন্তু হযরত মারইয়াম (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) এটা হতে রক্ষা পেয়েছিলেন। এ হাদীসটি বর্ণনা করে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা ইচ্ছে করলে (আরবী)-এ আয়াতটি পড়ে নাও।’ এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে। এটা আরও বহু কিতাবে বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত আছে। কোন একটিতে রয়েছে যে, এক ঘা বা দু ঘা দেয়। একটি হাদীসে শুধুমাত্র হযরত ঈসারই (আঃ) উল্লেখ আছে যে, শয়তান তাঁকেও ঘা দিতে চেয়েছিল কিন্তু তাঁকে লাগেনি, পর্দায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

অর্থাৎ মেয়েরা এমন অনেক প্রাকৃতিক দুর্বলতা ও তামাদ্দুনিক বিধি-নিষেধের আওতাধীন থাকে, যেগুলো থেকে ছেলেরা থাকে মুক্ত। কাজেই ছেলে জন্ম নিলে আমি যে উদ্দেশ্যে নিজের সন্তান তোমার পথে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলাম, তা ভালোভাবে পূর্ণ হতো।
তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, জন্মের দিনই নাম রাখা জায়েয। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “গত রাতে আমার এক সন্তান জন্ম হয়েছে, আমি তার নাম আমার পিতার নামানুসারে ইবরাহীম রাখলাম। [মুসলিমঃ ২৩১৫]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনঃ ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল, গত রাতে আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, আমি তার কি নাম রাখব? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার নাম রাখ আব্দুর রহমান’। [বুখারীঃ ৬১৮৬, মুসলিমঃ ২১৩৩]

[২] এ দো’আর বরকতে আল্লাহ্ তা’আলা মারইয়াম ও ঈসা ‘আলাইহিমাস্ সালামকে শয়তান থেকে হেফাযত করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘সন্তান জন্মগ্রহণের সাথে সাথে শয়তান তাকে স্পর্শ করে, ফলে সে চিৎকার করে। কেবলমাত্র মারইয়াম ও তার সন্তান এর ব্যতিক্রম’। [বুখারীঃ ৩৪৩১, ৪৫৪৮, মুসলিমঃ ২৩৬৬]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এই বাক্যে আফসোস প্রকাশ করা হয়েছে এবং ওযরও। আফসোস এই জন্য যে, মেয়ে হয়েছে যা আমার আশার বিপরীত। আর ওযর পেশ করা হয়েছে এইভাবে যে, মানত করার উদ্দেশ্য ছিল তোমার সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে একজন খাদেম উৎসর্গ করা, আর এই কাজ একজন পুরুষই উত্তমভাবে সম্পাদন করতে পারে। এখন যা কিছু পেয়েছি, হে আল্লাহ! তুমি তো তা জানো। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[২] হাফেয ইবনে কাসীর এই আয়াত এবং আরো অন্য হাদীসমূহকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে লিখেছেন যে, শিশুর নাম জন্মের প্রথম দিনেই রাখা উচিত। তিনি সাত দিনে নাম রাখার হাদীসকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। তবে হাফেয ইবনুল কাইয়্যেম এ ব্যাপারে হাদীসগুলিকে নিয়ে গবেষণা করে শেষে লিখেছেন যে, প্রথম দিনে, তৃতীয় দিনে এবং সপ্তম দিনে নাম রাখা যায়। এ ব্যাপারে পথ প্রশস্ত। (তুহফাতুল মাউলূদ)

[৩] মহান আল্লাহ এই দু’আ কবুল করেন। বলা বাহুল্য, হাদীসে এসেছে যে, “যখন কোন সন্তান জন্ম নেয়, তখন শয়তান তাকে স্পর্শ করে, ফলে সে চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা শয়তানের এই স্পর্শ থেকে মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম) এবং তাঁর পুত্র ঈসা (আঃ)-কে রক্ষা করেছেন।” (বুখারী ৩৪৩১, মুসলিম ২৩৬৬নং)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানত করা শরীয়ত সিদ্ধ; কিন্তু তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা জন্য।
২. কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে কোন মহিলা কোন পুরুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।

Leave a Reply