(Book# 114/٦١)-২৬৩ www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٦١)-২৬৩
www.motaher21.net

كُونُوا رَبّٰنِيِّۦ

‘তোমরা আল্লাহ্ওয়ালা হও;

” Be you Rabbaniyyun”

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-৭৯-৮০

مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ یُّؤْتِیَهُ اللّٰهُ الْكِتٰبَ وَ الْحُكْمَ وَ النُّبُوَّةَ ثُمَّ یَقُوْلَ لِلنَّاسِ كُوْنُوْا عِبَادًا لِّیْ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَ لٰكِنْ كُوْنُوْا رَبّٰنِیّٖنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتٰبَ وَ بِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَۙ

কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ‌ কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করবেন আর সে লোকদের বলে বেড়াবে, তোমরা আল্লাহ‌র পরিবর্তে আমার দাস হয়ে যাও, এটা তার জন্য শোভনীয় নয়। সে তো একথাই বলবে, তোমরা খাঁটি রব্বানী হয়ে যাও, যেমন এই কিতাবের দাবী, যা তোমরা পড়ো এবং অন্যদের পড়াও।

وَ لَا یَاْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلٰٓئِكَةَ وَ النَّبِیّٖنَ اَرْبَابًاؕ اَیَاْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ۠

তারা তোমাদের কখনো বলবে না, ফেরেশতা বা নবীদেরকে তোমাদের রব হিসেবে গ্রহণ করো। তোমরা যখন মুসলিম তখন তোমাদেরকে কুফরীর হুকুম দেয়া একজন নবীর পক্ষে কি সম্ভব?

৭৯-৮০ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট যখন ইয়াহূদী ও নাজরানের খ্রীষ্টানগণ একত্রিত হয় এবং তিনি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানান তখন আবু রাফি’ ফারাযী বলেঃ আপনি চান যে, খ্রীষ্টানেরা যেমন হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর ইবাদত করে তদ্রুপ আমরাও আপনার ইবাদত করি? তখন নাজরানী খ্রীষ্টানদের মধ্যে আঈস’ নামক এক ব্যক্তিও এ কথাই বলেঃ ‘আপনি কি এটাই চান? এই কি আপনার দাওয়াত? তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি এটা হতে আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। না নিজে আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করি, না অন্য কাউকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করার শিক্ষা দেই। আমার প্রেরিতত্ত্বের উদ্দেশ্যও এটা নয়। এবং আল্লাহ তা’আলা আমাকে এর নির্দেশও দেননি। তখন এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় এবং বলা হয়-কোন মানুষের জন্যে বাঞ্ছনীয় নয় যে, ধর্মীয় গ্রন্থ, নবুওয়াত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান লাভের পর সে মানুষকে স্বীয় ইবাদতের জন্যে আহ্বান করে। এত বড় বড় নবী যাদেরকে এত বেশী শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান দান করা হয়েছে। তাদেরকেই যখন মানুষের ইবাদত গ্রহণের মর্যাদা দেয়া হয়নি। তখন অন্য লোক কোন মুখে মানুষকে নিজের ইবাদতের জন্যে আহ্বান করতে পারে? ইমাম হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ একজন সাধারণ মুমিন দ্বারাও এটা হতে পারে না যে, সে মানুষকে স্বীয় ইবাদতের দিকে আহ্বান করে। এখানে এটা বলার কারণ এই যে, ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানেরা পরস্পরের মধ্যেই একে অপরের ইবাদত করতো। পবিত্র কুরআনই তার সাক্ষী। ইরশাদ হচ্ছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেমদেরকে ও দরবেশদেরকে নিজেদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। (৯:৩১) মুসনাদ-ই-আহমাদ ও জামেউত্ তিরমিযীর এ হাদীসও আসছে যে, হযরত আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে আরয করেন যে, তারা তো তাদের পূজো করতো না। তখন তিনি বলেনঃ “কেন নয়? তারা তাদের উপর হারামকে হালাল করতো এবং হালালকে হারাম করতো এবং ওরা ওদের কথা মেনে চলতো। এটাই ছিল তাদের ইবাদত।’ সুতরাং মূর্খ দরবেশ এবং নির্বোধ আলেমরা এ ধমকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তার অনুসারী আলেমগণ এটা হতে সম্পূর্ণ পৃথক। কেননা, তারা তো শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার আদেশ ও নিষেধ এবং তার রাসূল (সঃ)-এর কথাই প্রচার করে থাকেন এবং এসব কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখেন যেসব কাজ হতে নবীগণ (আঃ) বিরত রাখতেন। নবীগণততা হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টের মাঝে দূত স্বরূপ। তারা প্রেরিতত্বের কার্যাবলী পালন করেন এবং আল্লাহ তাআলার আমানত অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তাঁর বান্দাদের নিকট পৌছিয়ে থাকেন। রাসূলদের সুপথ প্রদর্শন তো হচ্ছে মানুষকে প্রভুর ইবাদতকারী বানিয়ে দেয়া। ওর মাধ্যমে তারা জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, মুত্তাকী এবং পুণ্যবান হয়ে যায়।

হযরত যহহাক (রঃ) বলেন, কুরআন কারীম শিক্ষাকারীদের উপর এ দাবী রয়েছে যে, তারা যেন বিবেচক হয়। তাআলামুনা এবং তুআলেমুনা এ দুটো পঠনই রয়েছে। প্রথমটির অর্থ হচ্ছে অনুধাবন করা এবং দ্বিতীয়টির অর্থ হচ্ছে শিক্ষা দান করা। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে শব্দসমূহ মুখস্থ করা।

অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ সে এই নির্দেশ দেয় না যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর, সে আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত রাসূলই হোক বা তার নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাই হোক। এ কথা ঐ ব্যক্তিই বলতে পারে যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে আহবান করে। আর যে ব্যক্তি এ কাজ করে সে কুফরী করে এবং কুফরী করা নবীদের (আঃ) কাজ নয়। তাদের কাজ তো হচ্ছে ঈমান, আর ঈমান হচ্ছে একক আল্লাহর ইবাদত করার নাম। নবীদের কণ্ঠে এ শব্দই উচ্চারিত হয়। যেমন স্বয়ং কুরআন মাজীদ ঘোষণা করেঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমার পূর্বেও আমি যত রাসূল পাঠিয়েছিলাম সবারই উপরেই এ অহী করেছিলাম যে, আমি ছাড়া কেউ মা’বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমরাই ইবাদত কর। (২১:২৫) অন্য জায়গায় ঘোষণা করা হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত হতে বিরত থাক। (১৬:৩৬), অন্য স্থানে ইরশাদ হচ্ছেঃ “তোমার পূর্বেকার সমস্ত নবী (আঃ)-কে জিজ্ঞেস কর যে, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবুদ নির্ধারিত করেছি যাদের তারা ইবাদত করবে?’ ফেরেশতাদের পক্ষ হতে আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের মধ্যে যে বলে- আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমিই পূজনীয় আমি তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করাবো এবং এভাবেই আমি অত্যাচারীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (২১:২৯)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

ইহুদীদের সমাজে যারা আলেম পদবাচ্য হতেন, যারা ধর্মীয় পদ ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকতেন, ধর্মীয় ব্যাপারে লোকদের নেতৃত্বদান এবং ইবাদাত প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় বিধান প্রবর্তন করাই ছিল যাদের কাজ তাদের জন্য রব্বানী শব্দটি ব্যবহার করা হতো। যেমন কুরআনের একস্থান বলা হয়েছেঃ لَوْلَا يَنْهَاهُمُ الرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ عَنْ قَوْلِهِمُ الْإِثْمَ وَأَكْلِهِمُ السُّحْتَ (অর্থাৎ তাদের রব্বানী ও আলেমরা তাদেরকে গোনাহের কথা বলতে ও হারাম সম্পদ খেতে বাধা দিতো না কেন? ) অনুরূপভাবে খৃস্টানদের মধ্যে “রব্বানী” এর সমার্থক (ivine) প্রচলন দেখা যায়।

দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবীদের ওপর যেসব মিথ্যা কথা আরোপ করে নিজেদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে এবং যেগুলোর প্রেক্ষিতে নবী বা ফেরেশতারা কোন না কোনো দিক দিয়ে ইলাহ ও মাবুদ হিসেবে গণ্য হয়, এখানে তাদের সেই সমস্ত মিথ্যা কথার বলিষ্ঠ ও পূর্ণাংগ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এই আয়াতে একটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছেঃ যে শিক্ষা মানুষকে আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কোন সত্তার বন্দেগী ও পূজা-অর্চনায় লিপ্ত করে এবং তাকে আল্লাহর দাসত্বের পর্যায় থেকে খোদায়ীর পর্যায়ে উন্নীত করে, তা কখনো নবীর শিক্ষা হতে পারে না। কোন ধর্মী গ্রন্থে এধরনের বক্তব্য দেখা গেলে সেখানে বিভ্রান্ত লোকেরা এই বিকৃতি ঘটিয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যখন নাজরানের নাসারারা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলো, সেখানে ইয়াহূদী ও নাসারারা সবাই একত্রিত হলো, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানালেন, তখন আবু রাফে’ আল-কুরায়ী বলে বসল: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি চান যে, নাসারারা যেভাবে ঈসা ইবন মারইয়ামের ইবাদাত করে থাকে, সেভাবে আমরাও আপনার ইবাদাত করি? তখন নাসারাদের একজন যাকে আর-রায়িস বলা হয় সে দাঁড়িয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কি তা-ই চান? আর এটাই আপনার দাওয়াত? অথবা এরকম কোন কথা বলল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা আল্লাহ্‌ ছাড়া কারও ইবাদত করা বা আল্লাহ্‌ ছাড়া অপর কারও ইবাদতের প্রতি আহবান জানাবো এমন কাজ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ্‌ আমাকে এ জন্য পাঠান নি। অথবা এরকম কোন কথা তিনি বললেন। তখন আল্লাহ তা’আলা উপরোক্ত আয়াতসমূহ নাযিল করেন। [তাবারী]

[২] ‘রব্বানী’ শব্দের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মত এসেছে। ইবনে আব্বাস থেকে এক বর্ণনায় এর অর্থ এসেছে, (حُكَمَاء عُلَمَاء حُلَمَاء) অর্থাৎ প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী ও সহিষ্ণু হওয়া। হাসান বসরী বলেন, ফকীহ হওয়া। অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস, সা’য়ীদ ইবন জুবাইর, কাতাদাহ, আতা সহ অনেকের মতে এর অর্থ ইবাদত ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়া। [ইবন কাছীর] এগুলোতে কোন বিরোধ নেই। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ্‌ বলেন: এ শব্দটি (رُبَّانُ السَّفِيْنَةِ) (জাহাজের নাবিক) শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ কর্ণধার, পরিচালক, বিপদে নেতৃত্বপ্রদানকারী। [মাজমূ’ ফাতাওয়া]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এখানে খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে। তারা ঈসা (আঃ)-কে প্রভু বানিয়ে রেখেছে। অথচ তিনি হলেন একজন মানুষ। তাঁকে কিতাব, হিকমত এবং নবুঅত দানে ধন্য করা হয়েছিল। আর এ দাবী কেউ করতে পারে না যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার পূজারী ও দাস হয়ে যাও, বরং তিনি তো এ কথাই বলেন যে, তোমরা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাও। ‘রব্বানী’ রব্ব শব্দের সাথে সম্বন্ধ। ‘মুবালাগা’ তথা আধিক্য বুঝানোর জন্য ‘আলিফ’ ও ‘নুন’কে বৃদ্ধি করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[২] অর্থাৎ, আল্লাহর কিতাব শিখানো ও নিজেদের পড়ার ফলস্বরূপ প্রতিপালককে চেনা এবং তাঁর সাথে বিশেষ সম্পর্ক কায়েম হওয়া উচিত। অনুরূপ আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যক হল, তারা অন্য লোকদেরকেও তার শিক্ষা দেবে। এই আয়াত দ্বারা এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, যখন আল্লাহর পয়গম্বরদের এ অধিকার নেই যে, তাঁরা লোকদেরকে তাঁদের ইবাদত করার নির্দেশ দেবে, তখন অন্য আর কারো এ অধিকার কিভাবে থাকতে পারে? (তফসীর ইবনে কাসীর)

[৩] অর্থাৎ, নবী, ফিরিশতা অথবা অন্য কাউকে আল্লাহর গুণাবলীর অধিকারী বিশ্বাস করানো কুফরী। তোমাদের ইসলাম গ্রহণ করার পর একজন নবী এ কাজ কি করে করতে পারে? কারণ, একজন নবীর কাজ তো ঈমানের প্রতি আহবান করা। আর ঈমান হল সেই শরীকবিহীন এক আল্লাহর ইবাদত করার নাম। কোন কোন মুফাসসির এই আয়াতের শানে নুযুল (পটভূমিকা) সম্পর্কে বলেছেন যে, কিছু মুসলিম নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট তাঁকে সিজদা করার অনুমতি চাইলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) আবার কেউ কেউ এর শানে নুযুল সম্পর্কে বলেছেন, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা একত্রিত হয়ে নবী করীম (সাঃ)-কে বলল, ‘তুমি কি চাও যে, আমরা তোমার ঐভাবেই ইবাদত করি, যেভাবে খ্রিষ্টানরা ঈসার করে থাকে?’ তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদত করা থেকে অথবা কাউকে এর নির্দেশ দেওয়া থেকে আমি তাঁর আশ্রয় কামনা করছি। মহান আল্লাহ না আমাকে এর জন্য পাঠিছেন, আর না এর নির্দেশ দিয়েছেন।’ এই কথারই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়। (ইবনে কাসীর-সীরাতে ইবনে হিশাম)

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা যাকে কিতাব ও জ্ঞান এবং নবুওয়াত প্রদান করেছেন তিনি মানব জাতিকে বলবেন, হে জনগণ! তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে আমার ইবাদত কর এটা কোন দিন হতে পারে না এবং এটাও নির্দেশ দিতে পারে না- “তোমরা ফেরেশতা ও নাবীদেরকে রব বানিয়ে নাও।” মূলত এখানে খ্রিস্টানদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, কারণ তারা ঈসা (আঃ)-কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামাতের দিন ঈসা (আঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর (স্মরণ কর) আল্লাহ যখন বলবেন: ‘হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকেদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার জননীকে দুই মা‘বূদরূপে গ্রহণ কর?’ সে বলবে, ‘তোমার প্রবিত্রতা বর্ণনা করছি! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই; তুমি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’ তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ তা ব্যতীত তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি, তা এইঃ ‘তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমি সর্ববিষয়ে সাক্ষী।” (সূরা ময়িদাহ ৫:১১৬-১৭)

সুতরাং কোন নাবী বা নেককার ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত বাদ দিয়ে তার ইবাদত করার আহ্বান জানাতে পারে না। যদি কখনও এরূপ আহ্বান কেউ করে থাকে তাহলে সে কখনো মু’মিন থাকতে পারে না বরং সে হবে শয়তানের অনুসারী এবং প্রকাশ্য তাগুত।

رَبَّانِيِّيْنَ শব্দটি رباني এর বহুবচন, অর্থ হলো আল্লাহওয়ালা। রব্বানী বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যিনি আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি ইবাদত করেন এবং দীনের ব্যাপারে গভীর জ্ঞান রাখেন। অথবা সেই ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি মানুষকে দীনের পথে আহ্বান করেন, সমাজ সংস্কার করেন এবং তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। (আইসারুত তাফাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)।

আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক নাবীকে প্রেরণ করেছেন কেবল এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। কোন নাবীই নিজের ইবাদতের দিকে আহ্বান করেননি।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কোন নাবী বা রাসূল নিজের বা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের দিকে আহ্বান করেননি। বরং সকল নাবীদের দাওয়াতী মিশন ছিল একটাই: তাওহীদের প্রতি আহ্বান এবং তাগুত/শির্ক বর্জন।
২. আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যকে রব হিসাবে গ্রহণ করা প্রকাশ্য কুফরী।
৩. আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তির পরিচয় জানলাম।

Leave a Reply