أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٦٤)-২৬৬
www.motaher21.net
اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Allah is Oft-Forgiving, Most Mercifil.
সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-৮৬-৮৯
كَیْفَ یَهْدِی اللّٰهُ قَوْمًا كَفَرُوْا بَعْدَ اِیْمَانِهِمْ وَ شَهِدُوْۤا اَنَّ الرَّسُوْلَ حَقٌّ وَّ جَآءَهُمُ الْبَیِّنٰتُؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ
ঈমানের নিয়ামত একবার লাভ করার পর পুনরায় যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করবেন, এটা কেমন করে সম্ভব হতে পারে? অথচ তারা নিজেরা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, রসূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তার কাছে উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহও এসেছে। আল্লাহ্ জালেমদের হিদায়াত দান করেন না।
أُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللَّهِ وَالْمَلٰٓئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
এরাই তারা যাদের প্রতিদান হলো, তাদের উপর আল্লাহ্র, ফেরেশ্তাগণের এবং সকল মানুষের লা’নত।
خٰلِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ
তারা তাতে স্থায়ী হবে, তাদের শাস্তি শিথিল করা হবে না এবং তাদেরকে বিরামও দেয়া হবে না;
إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُوا۟ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা এর পরে তাওবাহ্ করেছে এবং নিজেদেরকে সংশোধণ করে নিয়েছে। তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৮৬-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন আনসার ধর্ম ত্যাগ করে মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়ে যায়। অতঃপর অনুশোচনা করে স্বগোত্রীয় লোকেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রেরণ করে, যাতে তারা জিজ্ঞাসা করে তার জন্য কোন তাওবার সুযোগ আছে কিনা? তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়:
(كَيْفَ يَهْدِي اللّٰهُ قَوْمًا كَفَرُوْا بَعْدَ إِيْمَانِهِمْ…. )
(নাসাঈ হা: ৪০৬৮, সহীহ)
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, একজন আনসারী ধর্ম ত্যাগী হয়ে মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়। অতঃপর যে অনুশোচনা করতঃ স্বগোত্রীয় লোকের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সঃ) -কে জিজ্ঞেস করে যে, পুনরায় তার তাওবা গৃহীত হবে কি-না? তখন এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তার গোত্রের লোক তাকে বলে পাঠায়। তখন সে তাওবা করতঃ নতুনভাবে মুসলমান। হয়ে হাযির হয়। (তাফসীর-ই-ইবনে জারীর) ইমাম নাসাঈ (রঃ), ইমাম হাকিম (রঃ) এবং ইমাম ইবনে হিব্বান (রঃ)-এর গ্রন্থেও এ বর্ণনাটি বিদ্যমান রয়েছে। ইমাম হাকিম (রঃ) এ ইসনাদর্কে সহীহ বলেছেন। মুসনাদ-ই-আবদুর রাজ্জাকে রয়েছে যে, হযরত হারিস ইবনে সাভীদ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি ইসলাম পরিত্যাগ করতঃ স্বগোত্রের সঙ্গে মিলিত হন। তাঁর সম্বন্ধে এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তাঁর সম্প্রদায়ের একজন লোক এ আয়াতগুলো তাঁকে পড়ে শোনান। তিনি লোকটিকে বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! আমার ধারণায় আপনি একজন সত্যবাদী লোক, আর নবী (সঃ) তো আপনার চেয়ে বেশী সত্যবাদী এবং আল্লাহ তাআলা সমস্ত সত্যবাদী অপেক্ষা খুব বেশী সত্যবাদী।’ অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং খুব ভালভাবেই ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন। (আরবী) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতার উপর দলীল প্রমাণাদি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হওয়া। অতএব যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতা স্বীকার করেছে, দলীল প্রমাণাদি স্বচক্ষে দেখেছে, অতঃপর শিরকের অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে, তারা সুপথ প্রাপ্তির যোগ্য নয়। কেননা, চক্ষু থাকা সত্ত্বেও অন্ধত্বকে তারা পছন্দ করেছে। অবিবেচক লোকদেরকে আল্লাহ তা’আলা সুপথ প্রদর্শন করেন না। তাদের উপর আল্লাহও অভিশাপ দেন এবং তাঁর সৃষ্টজীবও তাদের প্রতি অভিশাপ দিয়ে থাকে। এ অভিশাপ হচ্ছে চিরস্থায়ী অভিশাপ। কোন সময়ের জন্য তাদের শাস্তি না হালকা করা হবে, না বন্ধ করা হবে। তারপর মহান আল্লাহ স্বীয় করুণা ও ক্ষমার কথা বর্ণনা করেছেন যে, এ জঘন্য পাপ কার্যের পরেও যদি কেউ আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হয় এবং সংশোধিত হয়ে যায় তবে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখানে আবার সে একই কথার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, যা ইতিপূর্বে বারবার বিবৃত করা হয়েছে অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ইহুদী আলেমরা একথা জানতে পেরেছিল এবং তারা এর সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ সত্য নবী এবং তিনি সেই একই শিক্ষা এনেছেন, যা ইতিপূর্বে অন্যান্য নবীগণও এনেছিলেন। এসব জানার পরও তারা যা কিছু করেছে তা ছিল নিছক বিদ্বেষ, হঠধর্মিতা ও সত্যের সাথে দুশমনির পুরাতন অভ্যাসের ফল। শত শত বছর থেকে তারা এ অপরাধ করে আসছিল।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আনসারদের এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুশরিকদের সাথে মিশে যায়। পরে সে লজ্জিত হয় ও তার স্বজাতির কাছে বলে পাঠায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা কর আমার কি কোন তাওবাহ্ আছে? তার স্বজাতির লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে জিজ্ঞাসা করলেন যে, অমুক লজ্জিত হয়েছে এবং জানতে চেয়েছে যে, তার জন্য তাওবাহ্ আছে কি না? তখন এ আয়াতসহ পরবর্তী চারটি আয়াত নাযিল হয়। পরে সে ফিরে আসে এবং পুনরায় ইসলামে প্রবেশ করে। [নাসায়ী: ৭/১০৭; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৪৭৭; মুসনাদে আহমাদঃ ১/২৪৮]
হাসান বলেন, এ আয়াত দ্বারা আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাদের গ্রন্থে স্পষ্ট দেখতে পেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্বে তিনি তাদের কাছে আগমন করলে তাকে সাথে নিয়ে কাফেরদের উপর জয়ী হবে ঘোষণা করত। কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে আসলেন, তখন তারা কূফরী করল। [তাবারী] তবে আয়াত দৃষ্টে মনে হয়; বক্তব্যটি ব্যাপক। যারাই এরকম কাজ করবে তারাই এ খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
আনসারদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে মুশরিকদের সাথে মিলে যায়। কিন্তু সত্বর সে অনুতপ্ত হয় এবং লোকদের মাধ্যমে রসূল (সাঃ)-এর কাছে জানতে চায় যে, তার তাওবা কবুল হবে কি না? তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুর্তাদ্দের শাস্তি যদিও অতি কঠিন, কারণ সে সত্যকে জানার পর বিদ্বেষ, ঔদ্ধত্য এবং অবাধ্যতাবশতঃ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তবুও সে যদি পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে তওবা করে এবং নিজের সংশোধন করে নেয়, তাহলে মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান; তিনি তার তওবা কবুল করবেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আলোচ্য আয়াতগুলোতে ধর্মত্যাগী মুরতাদের পরকালীন বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যারা ইসলাম গ্রহণ করার পর স্বজ্ঞানে সেচ্ছায় ইসলাম ত্যাগ করে তারাই মুরতাদ, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দেন না। তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত। তারা জাহান্নামে যাবে, তথায় তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না। কারণ তারা উত্তম জিনিস গ্রহণ করার পর তা বর্জন করেছে।
তবে যারা সঠিক তাওবাহ করে নিজের আমল সংশোধন করে নেবে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুরতাদদের দুনিয়ার শাস্তি ছাড়াও আখিরাতে তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
২. মুরতাদ হয়ে যাওয়ার পর তাকে তাওবাহ করে ফিরে আসতে বলা হবেন যদি ফিরে আসে তাহলে তাকে মাফ করে দেয়া হবে।