(Book# 114/٦٧)-২৬৯ www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٦٧)-২৬৯
www.motaher21.net

فَاتْلُوهَآ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ

বল, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও,

Say, if you are truthful.

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-৯৩-৯৫

كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِّبَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ اِلَّا مَا حَرَّمَ اِسْرَآءِیْلُ عَلٰى نَفْسِهٖ مِنْ قَبْلِ اَنْ تُنَزَّلَ التَّوْرٰىةُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِالتَّوْرٰىةِ فَاتْلُوْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ

এসব খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীতে যেগুলো হালাল) বনী ইসরাঈলদের জন্যও হালাল ছিল।তবে এমন কিছু বস্তু ছিল যেগুলোকে তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈল নিজেই নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তার কোন বাক্য পেশ করো।

فَمَنِ افْتَرٰى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ مِنۢ بَعْدِ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُونَ

এরপরও যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তারাই অত্যাচারী।

قُلْ صَدَقَ ٱللَّهُۗ فَٱتَّبِعُوا۟ مِلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ

বলে দাও, আল্লাহ‌ যা কিছু বলেছেন, সত্য বলেছেন। কাজেই তোমাদের একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত। আর ইব্রাহীম শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

৯৩-৯৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একবার কয়েকজন ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করতঃ বলেঃ আমরা আপনাকে এমন কতগুলো কথা জিজ্ঞেস করছি যেগুলো নবী ছাড়া অন্য কেউ জানে না। আপনি ঐগুলোর উত্তর দিন।’ তিনি বলেনঃ ‘যা ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস কর, কিন্তু আল্লাহ তা’আলাকে সম্মুখে বিদ্যমান জেনে আমার নিকট ঐ অঙ্গীকার কর যে অঙ্গীকার হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্রদের (বানী ইসরাঈল) নিকট নিয়েছিলেন। তা এই যে, আমি যদি ঐ কথাগুলো তোমাদেরকে ঠিক ঠিক বলে দেই তবে তোমরা ইসলাম গ্রহণ করতঃ আমার অনুগত হয়ে যাবে।’ তারা শপথ করে বললোঃ “আমরা একথা মেনে নিলাম। যদি আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারেন তবে আমরা ইসলাম গ্রহণ করতঃ আপনার অনুগত হয়ে যাবো।

অতঃপর তারা বললোঃ আমাদেরকে এ চারটি প্রশ্নে উত্তর দিনঃ (১) হযরত ইসরাঈল (হযরত ইয়াকূব আঃ) নিজের উপর কোন খাদ্য হারাম করেছিলেন? (২) পুরুষের বীর্য ও স্ত্রীলোকের বীর্য কিরূপ হয়, কখনো পুত্র ও কখনো কন্যা হয় কেন? (৩) নিরক্ষর নবীর ঘুম কিরূপ হয়? এবং (৪) ফেরেশতাদের মধ্যে কোন্ ফেরেশতা তাঁর নিকট অহী নিয়ে আসেন?’ এরপর তিনি দ্বিতীয়বার তাদের নিকট অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি উত্তরে বলেনঃ (১) হযরত ইসরাঈল (আঃ) কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, যদি আল্লাহ তা’আলা তাকে ঐ রোগ হতে আরোগ্য দান করেন তবে তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস পরিত্যাগ করবেন। তারপরে তিনি আরোগ্য লাভ করলে উটের গোশত খাওয়া ও দুধ পান পরিত্যাগ করেন। (২) পুরুষের বীর্যের রং সাদা ও গাঢ় হয় এবং নারীর বীর্যের রং হলদে ও তরল হয়। এ দু-এর মধ্যে যা উপরে এসে যায় ওর উপরে সন্তান ছেলে বা মেয়ে হয়ে থাকে এবং আকার ও অনুরূপতাও ওর উপর নির্ভর করেই হয়। (৩) এ নিরক্ষর নবীর ঘুমের সময় চক্ষু ঘুমিয়ে থাকে বটে কিন্তু অন্তর জেগে থাকে এবং (৪) আমার নিকট ঐ ফেরেশতাই অহী নিয়ে আসেন যিনি সমস্ত নবীর নিকট অহী নিয়ে আসতেন। অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল (আঃ)।’ একথা শুনেই তারা চীৎকার করে বলে উঠেঃ ‘যদি অন্য কোন ফেরেশতা আপনার বন্ধু হতেন তবে আপনার নবুওয়াতকে মেনে নিতে আমাদের কোন আপত্তি থাকতো না। প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে শপথ করাতেন ও প্রশ্ন করতেন এবং তারা স্বীকার করতে যে উত্তর সঠিক হয়েছে। তাদের ব্যাপারেই (আরবী) (২:৯৭)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত ইসরাঈল (আঃ)-এর ‘আরাকুন নিসা’ রোগ ছিল এবং ঐ বর্ণনায় ইয়াহুদীদের ৫ম প্রশ্ন ছিলঃ বজ্র কি জিনিস?’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহর ফেরেশতাদের মধ্যে একজন ফেরেশতা রয়েছেন যিনি মেঘের উপর নিযুক্ত রয়েছেন। তার হাতে একটি আগুনের চাবুক রয়েছে যার সাহায্যে তিনি মেঘকে ঐদিকে নিয়ে যান যেদিকে আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ হয় এবং এ গর্জনের শব্দ হচ্ছে ওরই শব্দ। হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর নাম শুনে ঐ ইয়াহূদীরা বলেঃ ‘তিনি তো হলেন শাস্তি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের ফেরেশতা এবং তিনি আমাদের শত্রু। যদি উৎপাদন ও মেঘের ফেরেশতা হযরত মীকাঈল (আঃ) আপনার বন্ধু হতেন তবে আমরা মেনে নিতাম।’ হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর সন্তানাদিও তাঁর নীতির উপরই ছিলেন এবং তাঁরাও উটের গোশত খেতেন না। পূর্ববর্তী আয়াতের সঙ্গে এ আয়াতের সম্পর্ক এক তো এ রয়েছে যে, ইসরাঈল (আঃ) যেমন তাঁর প্রিয় জিনিস আল্লাহ তা’আলার নযর’ করেছিলেন দ্রুপ তোমরাও কর। কিন্তু হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর শরীয়তে এর নিয়ম এই ছিল যে, তারা স্বীয় পছন্দনীয় জিনিস আল্লাহ পাকের নামে পরিত্যাগ করতেন। কিন্তু আমাদের শরীয়তে ঐ নিয়ম নেই। বরং আমাদেরকে এই বলা হয়েছে যে, আমরা যেন আমাদের প্রিয় জিনিস হতে আল্লাহ তাআলার পথে ব্যয় করি। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ মালের প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও সে তা প্রদান করে থাকে। (২:১৭৭) অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, পিতৃহীন এবং বন্দীকে ভোজন করিয়ে থাকে’। (৭৬:৮) দ্বিতীয় সম্পর্ক এও রয়েছে যে, পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে খ্রীষ্টানদের রীতি-নীতির কথা বর্ণিত ছিল। কাজেই এখানে ইয়াহুদীদের রীতি-নীতির কথা বর্ণিত হচ্ছে যে, তাদের রীতিতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঠিক জন্মের ঘটনা বর্ণনা করতঃ তাদের বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হচ্ছে। এখানে তাদের ধর্ম রহিতকরণের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর তাদের বাজে বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে। তাদের গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বিদ্যমান ছিল যে, হযরত নূহ (আঃ) যখন নৌকা হতে স্থলভাগে অবতরণ করেন তখন তার জন্য সমস্ত জন্তু হালাল ছিল। অতঃপর হযরত ইয়াকূব (আঃ) উটের গোশত ও দুধ হারাম করে নেন এবং তাঁর সন্তানেরাও ও দুটো জিনিস হারামই মনে করতে থাকে। অতএব তাওরাতেও ওর অবৈধতা অবতীর্ণ হয়। এতদ্ব্যতীত আরও বহু জিনিস হারাম করা হয়। এটা রহিত ছাড়া আর কি হতে পারে? প্রাথমিক যুগে হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানদের মধ্যে পরস্পর সহোদর ভাই বোনের বিবাহও বৈধ ছিল। কিন্তু পরে তা হারাম করে দেয়া হয়। পরীদের উপর কৃতদাসীর বিয়ে ইবরাহীম (আঃ)-এর শারীয়াতে বৈধ ছিল। স্বয়ং হযরত ইবরাহীম (আঃ) সারার (রাঃ) উপর হাজেরাকে বিয়ে করেন। কিন্তু আবার তাওরাতে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে দু’ ভগ্নীকে বিয়ে করা ইয়াকুব (আঃ)এর যুগে বৈধ ছিল। স্বয়ং হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর ঘরে একই সাথে দু’ সহোদরা ভগ্নী পত্নীরূপে বিদ্যমান ছিলেন। কিন্তু তাওরাতে এটাও হারাম করা হয়। এটাকেই রহিতকরণ বলে। এগুলো তারা দেখছে এবং স্বীয় গ্রন্থে পাঠ করছে। অথচ রহিতকরণকে অস্বীকার করত ও ইঞ্জীল ও হযরত ঈসা (আঃ)-কে অমান্য করছে। অতঃপর তারা শেষ নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাথেও এ ব্যবহারই করছে। তাই তাদেরকে বলা হচ্ছে, ইসরাঈল (আঃ) নিজের উপর যা হারাম করেছিলেন তাছাড়া তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সমস্ত খাবারই হালাল ছিল। সুতরাং তোমরা তাওরাত আনয়ন করতঃ তা পাঠ কর। তাহলেই দেখতে পাবে যে, এ সব কিছুই ওর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। অতঃপর এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলার প্রতি তোমাদের এ অপবাদ প্রদান যে, তিনি তোমাদের জন্য শনিবার দিনকে চিরদিনের জন্য সাপ্তাহিক খুশির দিন করেছেন, তোমাদের নিকট অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তোমরা সদা-সর্বদা তাওরাতের উপরেই আমল করবে এবং অন্য কোন নারীকে মানবেনা, এটা কত বড় অত্যাচারমূলক কথা! এসব কথা সত্ত্বেও তোমাদের এ ব্যবহার নিঃসন্দেহে তোমাদেরকে অত্যাচারী সাব্যস্ত করছে। আল্লাহ তাআলা সত্য সংবাদ প্রদান করেছেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্ম ওটাই যা পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে। তোমরা এ কিতাব ও এ নবী (সঃ)-এর অনুসরণ কর। তার চেয়ে বড় কোন নবীও নেই এবং তাঁর শরীয়ত অপেক্ষা উত্তম শরীয়তও, আর নেই। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তুমি বল যে, নিশ্চয়ই আমার প্রভু আমাকে সরল-সঠিক পথ-প্রদর্শন করেছেন।’ (৬:১৬১) অন্য জায়গায় বলেছেনঃ “আমি তোমার নিকট অহী করেছি যে, তুমি ইবরাহীমের সুদৃঢ় ধর্মের অনুসরণ কর এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

ইহুদী আলেমরা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার বিরুদ্ধে যখন কোন নীতিগত আপত্তি জানাতে পারলো না (কারণ যেসব বিষয়ের ওপর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত ছিল, তার ব্যাপারে পূর্ববর্তী নবীদের শিক্ষা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার মধ্যে সামান্য চুল পরিমাণ পার্থক্যও ছিল না) তখন তারা ফিকাহ্ ভিত্তিক আপত্তি উত্থাপন করতে লাগলো। এ প্রসঙ্গে তারা এই বলে আপত্তি জানালো-আপনি পানাহার সামগ্রীর মধ্যে এমন কিছুকে হালাল গণ্য করেছেন, যা পূর্ববর্তী নবীদের সময় থেকে হারাম হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। এখানে এই আপত্তিটির জবাব দেয়া হয়েছে।

ইসরাঈল বলতে যদি এখানে বনী ইসরাঈল বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে এর অর্থ হবে, তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈলরা কিছু জিনিস নিছক প্রথাগতভাবে নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। আর একথায় যদি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ হবে, নিজের প্রকৃতিগত অপছন্দ অথবা কোন রোগের কারণে তিনি কোন কোন জিনিস পরিহার করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সন্তানরা সেগুলো নিষিদ্ধ মনে করে নিয়েছিল। এ শেষোক্ত বক্তব্যটি বেশী প্রচলিত। পরবর্তী আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, বাইবেলে উট ও খরগোশ হারাম হবার যে বিধান লিখিত হয়েছে তা মূল তাওরাতের বিধান নয়। বরং ইহুদী আলেমরাই পরবর্তীকালে এ বিধান কিতাবের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। (বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন সূরা আন’আম-এর ১২২ টীকা)।

এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা ফিকাহর এ সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ের বিতর্ক আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছো, অথচ এক আল্লাহর বন্দেগী করাই হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি। আর এ ভিত্তিকে বাদ দিয়ে তোমরা শিরকের পুতিগন্ধময় আবর্জনা গায়ে মেখে চলছো। আবার এখন ফিকাহর বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো। অথচ এগুলো আইনের অহেতুক চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তোমাদের উলামা সম্প্রদায়ের নিজেদের তৈরী। অধঃপতনের বিগত শতাব্দীগুলোতে আসল ইবরাহিমী মিল্লাত থেকে সরে গিয়ে তারা এগুলো তৈরী করেছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] যেহেতু এখানে যুদ্ধ, খুনাখুনি এবং শিকার করা –এমনকি গাছ কাটাও নিষিদ্ধ। (বুখারী-মুসলিম)

[২] ‘যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে’ অর্থাৎ, সম্পূর্ণ রাহা-খরচ পূরণ হওয়ার মত যথেষ্ট পাথেয় যার কাছে আছে। অনুরূপ রাস্তার ও জান-মালের নিরাপত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। মহিলার জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সঙ্গে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোন লোক) থাকাও জরুরী। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই আয়াত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল। হাদীস দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হজ্জ জীবনে একবারই ফরয। (ইবনে কাসীর)

[৩] সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে কুরআন ‘কুফরী’ (অস্বীকার) বলে আখ্যায়িত করেছে। এ থেকে হজ্জ ফরয হওয়ার এবং তা যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। বহু হাদীসেও সাহাবীদের উক্তিতে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ্জ করে না, তার ব্যাপারে কঠোর ধমক এসেছে। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

আলোচ্য আয়াতগুলো ইয়াহূদীদের অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য অবতীর্ণ হয়। তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল, আপনি ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করেন আর উটের গোশত খান, অথচ ইবরাহীমের দীনে উটের গোশত এবং তার দুধ হারাম ছিল।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ইয়াহূদীদের এ অভিযোগ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। কারণ ইবরাহীমের দীনে এ জিনিসগুলো হারাম ছিল না। তবে ইয়া‘কূব (আঃ) নিজের ওপর কিছু জিনিস হারাম করে নিয়েছিলেন। তার মধ্যে উটের গোশত ও দুধ ছিল। এটা ছিল তার মানত বা রোগের কারণে। ইয়া‘কূব (আঃ)-এর এ কাজ ছিল তাওরাত নাযিলের পূর্বে। তাওরাত ইবরাহীম ও ইয়া‘কূবের অনেক পরে অবতীর্ণ হয়। তাছাড়া তাওরাতে কিছু জিনিস হারাম করা হয়েছে তাদের জুলুম ও অবাধ্যতার কারণে। (দ্রষ্টব্য: সূরা আনআম ৬:৪৬ এবং সূরা নিসা ৪:১৬০)

(قُلْ فَأْتُوْا بِالتَّوْرٰةِ)

“তোমরা তাওরাত নিয়ে আস” ইমাম বুখারী (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীরে একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, ইয়াহূদীরা তাদের মধ্য থেকে একজন মহিলা ও পুরুষকে নিয়ে আসল যারা ব্যভিচার করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যারা তোমাদের মধ্যে ব্যভিচার করত তাদেরকে কী করতে? তারা বলল, আমরা ব্যভিচারী দু’জনকে প্রহার করতাম অতঃপর কালি মাখিয়ে ছেড়ে দিতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমরা কি তাওরাতে রজমের কথা পাওনি? তারা বলল: আমরা এরূপ কিছুই পাইনি। আবদুল্লাহ বিন সালাম বললেন: তোমরা মিথ্যা বলছ। তোমরা তাওরাত নিয়ে এসো এবং তেলাওয়াত কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৫৬)

ইয়াহূদীরা তাদের ধর্মের বিধি-বিধান বিকৃত করে নিজেদের সুবিধামত কতকগুলো বিধান তৈরি করে নিয়েছিল। প্রকৃত বিধান জিজ্ঞাসা করলে অস্বীকার করত আর নিজেদের তৈরি করা বিধান আল্লাহ তা‘আলার নামে চালিয়ে দিত। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, যাদের কাছে সত্য সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করে তারা যালিম।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ইয়াহূদীদের দাবি মিথ্যা। ইবরাহীম (আঃ)-এর জন্য উটের গোশত ও দুধ হারাম ছিল না।
২. ইয়াহূদীরা হিংসুক-বিদ্বেষী, যার কারণে তারা বারবার এরূপ অভিযোগ এনেছে।
৩. না জেনে আল্লাহ তা‘আলার দিকে কোন কথার সম্পর্ক করা হারাম।

Leave a Reply