أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٧٣)-২৭৬
www.motaher21.net
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوه
সে দিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে,
That’s the day some are growing.
সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-১০৬-১০৯
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمٰنِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
সে দিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হবে, যাদের মুখ কালো হবে, (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পরও কুফরী করেছিলে? কাজেই নিজেদের কুফরীর জন্য শাস্তি ভোগ করতে থাক।
وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِى رَحْمَةِ اللَّهِ هُمْ فِيهَا خٰلِدُونَ
যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে, তারা তাতে চিরকাল থাকবে।
تِلْكَ اٰیٰتُ اللّٰهِ نَتْلُوْهَا عَلَیْكَ بِالْحَقِّؕ وَ مَا اللّٰهُ یُرِیْدُ ظُلْمًا لِّلْعٰلَمِیْنَ
এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ
যা কিছু আসমানে আছে আর যমীনে আছে সব আল্লাহরই এবং যাবতীয় বিষয়াদি আল্লাহর দিকেই ফিরে যাবে।
১০৬-১০৯ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এর পর আল্লাহ পাক বলেন- ‘সেদিন কতকগুলো লোকের মুখমণ্ডল শ্বেতবর্ণ ধারণ করবে এবং কতকগুলো লোক কৃষ্ণ চেহারা বিশিষ্টও হবে।’ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মুখমণ্ডল শ্বেত বর্ণ ও আলোকোজ্জ্বল হবে এবং আহলে বিদ’আতের মুখমণ্ডল হবে কৃষ্ণ বর্ণের। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এ কৃষ্ণ বর্ণ বিশিষ্ট লোকেরা মুনাফিকের দল। তাদেরকে বলা হবে- তোমরা বিশ্বাস স্থাপনের পরিবর্তে অস্বীকার করেছিলে বলে আজকার স্বাদ গ্রহণ কর। আর শ্বেতবর্ণ বিশিষ্ট লোকগণ আল্লাহ তাআলার করুণার মধ্যে সদা অবস্থান। করবে। হযরত আবু উমামা (রাঃ) খারেজীদের মস্তকগুলো দামেশকের মসজিদের স্তম্ভে লটকানো দেখে বলেনঃ এরা নরকের কুকুর। এদের চেয়ে বেশী জঘন্য নিহত ব্যক্তি ভূ-পৃষ্ঠের কোথাও নেই। এদেরকে হত্যাকারীগণ উত্তম মুজাহিদ।’ অতঃপর (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। আবূ গালিব (রঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি এটা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ হতে শুনেছেনে?’ তিনি বলেনঃ “একবার দু’বার নয় বরং সাতবার শুনেছি। এরূপ না হলে আমি এ শব্দগুলো আমার মুখ দ্বারা বেরই করতাম না। এখানে ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) হযরত আবু যার (রাঃ)-এর বর্ণনায় একটি সুদীর্ঘ হাদীস নকল করেছেন, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর। কিন্তু সনদ হিসেবে এটা গারীব। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে নবী (সঃ)! ইহকাল ও পরকালে এ কথাগুলো আমি তোমার নিকট প্রকাশ করে দিচ্ছি। আল্লাহ ন্যায় বিচারক, তিনি মোটেই অত্যাচারী নন। প্রত্যেক জিনিসকেই তিনি খুব ভালই জানেন। প্রত্যেক জিনিসের উপর তিনি ক্ষমতাবানও বটে। সুতরাং তিনি যে কারও উপর অত্যাচার করবেন এটা মোটেই সম্ভব নয়। আকাশ ও পৃথিবীর সমুদয় জিনিস তারই অধিকারে রয়েছে। সবই তাঁর দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ। সমুদয় কৃতকর্ম তার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। ইহজগতের ও পরজগতের পূর্ণ ক্ষমতবান শাসক একমাত্র তিনিই।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
অর্থাৎ যেহেতু আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি কোন জুলুম করতে চান না তাই তিনি তাদেরকে সোজা পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। আবার শেষ পর্যন্ত কোন্ কোন্ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সে কথাও পূর্বাহ্ণেই জানিয়ে দিচ্ছেন। এরপরও যারা বাঁকা পথ ধরবে এবং নিজেদের ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি পরিহার করবে না, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করবে।
[১] উজ্জ্বল মুখ ও কালো মুখ কারা, এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। ইবনে-আব্বাস বলেনঃ আহলে সুন্নাত সম্প্রদায়ের মুখমণ্ডল শুভ্র হবে এবং বিদ’আতীদের মুখমণ্ডল কালো হবে। আতা বলেনঃ মুহাজির ও আনসারগণের মুখমণ্ডল সাদা হবে এবং বণী-নদ্বীরের মুখমণ্ডল কালো হবে। ইকরিমাহ বলেনঃ আহলে কিতাবগণের এক অংশের মুখমণ্ডল কালো হবে অর্থাৎ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত লাভের পূর্বে তিনি নবী হবেন বলে বিশ্বাস করতো কিন্তু নবুওয়ত প্রাপ্তির পর তাকে সাহায্য ও সমর্থন করার পরিবর্তে তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করে। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘খারেজী সম্প্রদায়ের মুখমণ্ডল কালো হবে। আর যারা তাদের হত্যা করবে, তাদের মুখমণ্ডল সাদা হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘এটি যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাতবার না শুনতাম, তবে বর্ণনাই করতাম না’। [তিরমিয়ী: ৩০০০]
[২] তাদের চেহারা কেন কালো হবে, তার কারণ বর্ণনায় এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদের চেহারা কালো হবার কারণ হচ্ছে, “তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে”। অন্য আয়াতে আল্লাহ্র উপর মিথ্যাচার করাকেই চেহারা কালো হওয়ার কারণ বলা হয়েছে, “আর যারা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, আপনি কিয়ামতের দিন তাদের চেহারাসমূহ কালো দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?” [সূরা আয-যুমার: ৬০]
আবার কোন কোন আয়াতে গোনাহ অর্জন করার কারণে তাদের চেহারা কালো হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। “আর যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করবে; আল্লাহ থেকে তাদের রক্ষা করার কেউ নেই; তাদের মুখমন্ডল যেন রাতের অন্ধকারের আস্তরণে আচ্ছাদিত। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে” [সূরা ইউনুস: ২৭]
কোন কোন আয়াতে কুফরী ও অপরাধী হওয়াকেই চেহারা কালো হবার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে, “আর অনেক চেহারা সেদিন হবে ধূলিধূসর, সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা। এরাই কাফির ও পাপাচারী।” [সূরা আবাসাঃ ৪০-৪১] বস্তুত: এগুলোতে কোন বিরোধ নেই। কারণ, এ সব কারণেই চেহারা কালো হবে। কাফেরদের চেহারা কালো হবেই।
[৩] শুভ্র মুখমণ্ডলবিশিষ্টদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা সর্বদা আল্লাহ্র অনুকম্পার মধ্যে অবস্থান করবে। ইবনে-আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এখানে আল্লাহ্র অনুকম্পা বলে জান্নাত বুঝানো হয়েছে। তবে জান্নাতকে অনুকম্পা বলার রহস্য এই যে, মানুষ যত ইবাদাতই করুক না কেন, আল্লাহ্র অনুকম্পা ব্যতীত জান্নাতে যেতে পারবে না। কারণ, ইবাদাত করা মানুষের নিজস্ব পরাকাষ্ঠা নয়; বরং আল্লাহ্র প্রদত্ত সামর্থের বলেই মানুষ ইবাদাত করতে পারে। সুতরাং ইবাদাত করলেই জান্নাতে প্রবেশ অপরিহার্য হয়ে যায় না। বরং আল্লাহ্র অনুকম্পার দ্বারাই জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] ইবনে আববাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এ থেকে আহলে-সুন্নাত এবং আহলে-বিদআতকে বুঝিয়েছেন। (ইবনে কাসীর ও ফাতহুল ক্বাদীর) (অর্থাৎ, কিয়ামতে সুন্নাহর অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং বিদআতীদের চেহারা কালো হবে।) আর এ থেকে এ কথাও পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, ইসলাম হল ওটাই, যার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আহলে-সুন্নাত। আহলে-বিদআত এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত। অথচ এটাই হল মুক্তির একমাত্র পথ।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
কিয়ামতের দিন কতক ব্যক্তির চেহারা হবে উজ্জ্বল, ইবনু আব্বাস বলেন, তারা হল: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ। আর কতক ব্যক্তির চেহারা মলিন হবে। তিনি (রাঃ) বলেন, তারা হল: বিদ‘আতী ও যারা দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: তারা হল মুনাফিক। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ২/১০০, ফাতহুল কাদীর, ১/৫০০)। সুতরাং দলে দলে বিভক্ত হবার কোন সুযোগ নেই। যারা দলে দলে বিভক্ত হবে তারা ইসলাম বহির্ভূত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামাতের দিন বিদ‘আতী ও যারা প্রবৃত্তি পূজারী তাদেরকে মলিন চেহারায় দেখা যাবে।
২. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত তারাই যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবাগণ যে আকীদাহ ও আমালের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
৩. সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্যের মাপকাঠি নয় বরং কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ-ই হলো সত্যের মাপকাঠি।