أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٨٤)-২৮৭
www.motaher21.net
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ كَفَرُوا
হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা কুফরী করে,
O you who believe! be not like the Unbelievers,
সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-১৫৬-১৫৮
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ قَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ اِذَا ضَرَبُوْا فِی الْاَرْضِ اَوْ كَانُوْا غُزًّى لَّوْ كَانُوْا عِنْدَنَا مَا مَاتُوْا وَ مَا قُتِلُوْاۚ لِیَجْعَلَ اللّٰهُ ذٰلِكَ حَسْرَةً فِیْ قُلُوْبِهِمْؕ وَ اللّٰهُ یُحْیٖ وَ یُمِیْتُؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ
হে ঈমানদারগণ! কাফেরদের মতো কথা বলো না। তাদের আত্মীয়স্বজনরা কখনো সফরে গেলে অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে (এবং সেখানে কোন দুর্ঘটনায় পতিত হলে) তারা বলে, যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো তাহলে মারা যেতোনা এবং নিহত হতো না। এ ধরনের কথাকে আল্লাহ তাদের মানসিক খেদ ও আক্ষেপের কারণে পরিণত করেন। নয়তো জীবন–মৃত্যু তো একমাত্র আল্লাহই দান করে থাকেন এবং তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপের ওপর তিনি দৃষ্টি রাখেন।
وَلَئِن قُتِلْتُمْ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তবে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা অতি উত্তম তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে।
وَلَئِن مُّتُّمْ أَوْ قُتِلْتُمْ لَإِلَى ٱللَّهِ تُحْشَرُونَ
তোমরা মারা গেলে বা নিহত হলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
১৫৬-১৫৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ পাক স্বীয় মুমিন বান্দাদেরকে কাফিরদের ন্যায় অসৎ ও জঘন্য বিশ্বাস রাখতে নিষেধ করছেন। এ কাফিরেরা মনে করতো যে, তাদের বন্ধু-বান্ধব যদি পৃথিবী পৃষ্ঠে ভ্রমণ না করতো বা যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত না হতো তবে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হতো না। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “এ বাজে ও ভিত্তিহীন ধারণা তাদের দুঃখ ও অনুশোচনা আরও বৃদ্ধি করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতেই রয়েছে। তাঁর ইচ্ছানুসারেই মানুষ মরে থাকে এবং তার চাহিদা হিসেবেই তারা জীবন লাভ করে। তাহলে তার ইচ্ছাক্রমে সমস্ত কাজ চালু করা তাঁরই অধিকার। তিনি ভাগ্যে যা লিখে দিয়েছেন টলবার নয়। তার জ্ঞান হতে ও দৃষ্টি হতে কোন কিছু বাইরে নেই। সমস্ত সৃষ্টজীবের প্রত্যেক কাজ তিনি খুব ভাল করেই জানেন। দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে- ‘আল্লাহর পথে নিহত হওয়া বা মরে যাওয়া তাঁর ক্ষমা ও করুণা লাভেরই মাধ্যম এবং এটা নিশ্চিতরূপে দুনিয়া ও ওর সমুদয় জিনিস হতে উত্তম। কেননা, এটা ক্ষণস্থায়ী এবং ওটা চিরস্থায়ী।’ এরপরে বলা হচ্ছে যে, মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করুক বা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে শহীদই হোক, যেভাবেই ইহজগত হতে বিদায় গ্রহণ করুক না কেন আল্লাহর নিকটই সকলে একত্রিত হবে। অতঃপর তারা তথায় তাদের কৃতকর্মের ফল স্বচক্ষে দর্শন করবে-কাজ ভালই হোক আর মন্দই হোক।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
অর্থাৎ একথাগুলো সত্য নয়। এর পেছনে কোন ভিত্তি নেই। আল্লাহর ফায়সালাকে কেউ নড়াতে পারে না। এটিই সত্য। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না এবং সবকিছুকে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের ওপর নির্ভরশীল বলে মনে করে, তাদের জন্য এ ধরনের আন্দাজ অনুমান কেবল তাদের আক্ষেপ ও হতাশাই বাড়িয়ে দেয়। তারা কেবল এই বলে আফসোস করতে থাকে, হায়! যদি এমনটি করতাম তাহলে এমনটি হতো।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] সুদ্দী বলেন, এখানে দেশে দেশে সফর করা বলে, ব্যবসা করা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন আবী হাতেম] অর্থাৎ মুনাফিকদের যখন কোন লোক মারা যেত, তখন তারা বলত: যদি আমাদের কথা শুনতো এবং যুদ্ধে বের না হতো তবে তারা মারা যেতো না। বস্তুত মুনাফিকরা যুদ্ধের আগেই তাদের ভাইদেরকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিত। অন্য আয়াতে এসেছে, “যারা ঘরে বসে রইল এবং তাদের ভাইদেরকে বলল যে, তারা তাদের কথামত চললে নিহত হত না” [সূরা আলে ইমরান: ১৬৮]
আরও এসেছে, “যারা পিছনে রয়ে গেল তারা আল্লাহ্র রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল, ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না” [সূরা আত-তাওবাহঃ ৮১]
আরও এসেছে, “আল্লাহ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে কারা বাধাদানকারী এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, ‘আমাদের দিকে চলে এসো’। তারা অল্পই যুদ্ধে যোগদান করে” [সূরা আল-আহযাব: ১৮]
আরও এসেছে, “তোমাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যে গড়িমসি করবেই। তোমাদের কোন মুসীবত হলে সে বলবে, ‘তাদের সংগে না থাকায় আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন” [সূরা আন-নিসা:৭২]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] ঈমানদারদেরকে সেই বিভ্রান্তিকর আকীদা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, যা কাফের ও মুনাফিকরা পোষণ করত। কারণ, এই বিশ্বাসই হল ভীরুতার মূল কারণ। পক্ষান্তরে যখন এই বিশ্বাস জান্মাবে যে, জীবন ও মরণ আল্লাহর হাতে এবং মৃত্যুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, তখন মানুষের মধ্যে সাহসিকতা এবং আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার উৎসাহ সৃষ্টি হবে।
[২] যদি তারা যুদ্ধের ময়দানে না গিয়ে বাড়িতেই বসে থাকত, তাহলে মৃত্যুর কবলে পড়া থেকে বেঁচে যেত –এ রকম ভ্রান্ত আকীদা আন্তরিক অনুতাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, মৃত্যু তো সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরেও আসে। মহান আল্লাহ বলেন, [أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ] “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরে অবস্থান কর তবুও।” (সূরা নিসা ৪:৭৮ আয়াত) কাজেই এই অনুতাপ থেকে মুসলিমরাই রক্ষা পেতে পারে। কারণ, তাদের আকীদা সঠিক ও শুদ্ধ।
[৩] যে কোনভাবেই হোক না কেন মৃত্যু তো আসবেই, তাই এমন মৃত্যু যদি ভাগ্যে জুটে, যে মৃত্যুর পর মানুষ আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর দয়া লাভের যোগ্য হয়ে যায়, তবে এটা হবে তার জন্য পার্থিব সেই সমূহ ধন-সম্পদ থেকেও উত্তম, যা মানুষ সারা জীবন উপার্জন করে থাকে। কাজেই আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছপা না হয়ে সেদিকে বড়ই উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে অগ্রসর হতে হবে। আর নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উৎসাহ থাকলে তাঁর ক্ষমা ও দয়া সুনিশ্চিত হয়ে যাবে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে মুনাফিকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে নিষেধ করছেন। তাদের বিশ্বাস ছিল আমরা যুদ্ধে না গেলে মারা যাব না। তাই তারা তাদের ভাই তথা অন্যান্য মুনাফিকদের সম্বন্ধে বলেছিল, যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে যদি তারা আমাদের কথা শুনে যুদ্ধে না যেত তাহলে মারা যেত না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَّذِيْنَ قَالُوْا لِإِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوْا لَوْ أَطَاعُوْنَا مَا قُتِلُوْا)
“যারা গৃহে বসে স্বীয় ভাইদের সম্পর্কে বলছিল, যদি তারা আমাদের কথা মান্য করত তবে নিহত হত না।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৬৮)
পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি তোমরা মৃত্যু বরণ কর অথবা শহীদ হও উভয় অবস্থাতেই তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰي مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ط يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে তার বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে স্বসস্ত্র যুদ্ধ করে, হত্যা করে ও নিহত হয়।” (সূরা তাওবাহ ৯:১১১)
সুতরাং মুনাফিকদের মত মৃত্যুর ভয়ে জিহাদ থেকে পিছনে থাকার কোন সুযোগ নেই। বরং একজন মু’মিন সর্বদা বিশ্বাস করবে আল্লাহ তা‘আলা জীবন-মৃত্যুর মালিক, আমার ভাগ্যে মৃত্যু থাকলে ঘরে থাকলেও হবে, জিহাদে গেলেও হবে। অতএব মৃত্যুর ভয় না করে মুসলিম দলনেতা জিহাদে আহ্বান করলে তাতে শরীক হওয়া আবশ্যক।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদের সাথে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল অবস্থায় সাদৃশ্য রাখা হারাম।
২. অতীতের বিষয়ে অনুশোচনা কেবল দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি করে, সুতরাং ভবিষ্যত জীবনে কল্যাণের চেষ্টা করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য চাইবে।
৩. শহীদদের অনেক মর্যাদা রয়েছে, অন্যতম হল প্রথমেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।