أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٩١)-২৯৩
www.motaher21.net
وَلَا يَحْزُنكَ
তাদের আচরণ যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়।
Let not those grieve you.
সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং ১৭৬-১৭৯
وَلَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسٰرِعُونَ فِى الْكُفْرِ ۚ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْـًٔا ۗ يُرِيدُ اللَّهُ أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِى الْءَاخِرَةِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যারা কুফরীতে দ্রুতগামী, তাদের আচরণ যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়। তারা কখনো আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ আখেরাতে তাদেরকে কোন অংশ দেবার ইচ্ছা করেন না। আর তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।
(১৭৭)
إِنَّ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْكُفْرَ بِالْإِيمٰنِ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْـًٔا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমানের বিনিময়ে কুফরী ক্রয় করেছে তারা কখনো আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(১৭৮)
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوٓا أَنَّمَا نُمْلِى لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِى لَهُمْ لِيَزْدَادُوٓا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
কাফিরগণ যেন কিছুতেই এ ধারণা পোষণ না করে যে, তাদেরকে আমি যে অবকাশ দিয়েছি তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক; আমি তাদেরকে শুধু এজন্য অবকাশ দেই যে, যেন তাদের পাপের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
(১৭৯)
مَا كَانَ اللّٰهُ لِیَذَرَ الْمُؤْمِنِیْنَ عَلٰى مَاۤ اَنْتُمْ عَلَیْهِ حَتّٰى یَمِیْزَ الْخَبِیْثَ مِنَ الطَّیِّبِؕ وَ مَا كَانَ اللّٰهُ لِیُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَیْبِ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ یَجْتَبِیْ مِنْ رُّسُلِهٖ مَنْ یَّشَآءُ ۪ فَاٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖۚ وَ اِنْ تُؤْمِنُوْا وَ تَتَّقُوْا فَلَكُمْ اَجْرٌ عَظِیْمٌ
তোমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না।পাক–পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন। কিন্তু তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়।গায়েবের খবর জানাবার জন্য তিনি নিজের রসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন। কাজেই (গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান রাখো। যদি তোমরা ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে।
১৭৬-১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
রাসূলুল্লাহ (সঃ) মানুষের উপর অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন বলে কাফিরদের পথভ্রষ্টতা তাঁর নিকট খুবই কঠিন ঠেকছিল। যেমন তারা কুফরীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তেমন তিনি চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন। এজন্যই মহান আল্লাহ তাঁকে এটা হতে বিরত রাখছেন এবং বলছেন-এরই মধ্যে আল্লাহ পাকের নিপুণতা রয়েছে। হে নবী (সঃ)! তাদের কুফরী তোমার বা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এসব লোক তাদের পরকালের অংশ ধ্বংস করতে রয়েছে এবং নিজেদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তাদের বিরুদ্ধাচরণ হতে আল্লাহ তোমাকে নিরাপদে রাখবেন। সুতরাং তুমি তাদের জন্য দুঃখ করো না। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন-“আমার নিকট এও নির্ধারিত নিয়ম রয়েছে যে, যারা ঈমানকে কুফরীর দ্বারা পরিবর্তিত করে সেও আমার কোন ক্ষতি করতে পারে না বরং তারা নিজেদেরই ক্ষতি করছে এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা যে কাফিরদেরকে অবকাশ ও সুযোগ দিচ্ছেন এ জন্য তাদের অহংকারের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। যেমন অন্য স্থানে রয়েছে- ‘আমি যে কাফিরদের মাল-ধন ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দিয়েছি এটা আমার পক্ষ হতে তাদের জন্য মঙ্গলের নিদর্শন এই কি তারা ধারণা করেছে? না, বরং তারা নির্বোধ ও অবুঝ। অন্য জায়গায় রয়েছে-‘আমাকে ও এ কথার অবিশ্বাসীদেরকে ছেড়ে দাও, আমি তাদেরকে এমন আস্তে আস্তে ধরবো যে, তারা জানতেই পারবে না। আর এক জায়গায় ইরশাদ হচ্ছে-তাদের মাল ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাকে প্রতারিত না করে, আমি ওরই কারণে তাদরেকে দুনিয়াতেও শান্তি দিতে চাই এবং তাদের মৃত্যু কুফরীর উপরেই হবে’।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
অর্থাৎ মুসলমানদের দলে সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিকরা এক সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে, মুসলমানদের দলকে আল্লাহ এভাবে দেখতে চান না।
অর্থাৎ আল্লাহ কখনো মু’মিন ও মুনাফিকের পার্থক্য সুস্পষ্ট করার জন্য গায়েব থেকে মুসলমানদের মনের অবস্থা বর্ণনা করে কে মু’মিন ও কে মুনাফিক একথা বলার রীতি অবলম্বন করেন না। বরং তাঁর নির্দেশে এমন সব পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে যার মাধ্যমে মু’মিন ও মুনাফিকের অবস্থা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এক্ষেত্রে কেউ যেন এমন কোন সন্দেহ না করে যে, আল্লাহ তা’আলা কাফেরদিগকে অবকাশ, দীর্ঘায়ু, স্বাস্থ্য-সামর্থ্য ও আরাম-আয়েশের উপকরণ এ জন্যই দিয়েছেন, যাতে তারা নিজেদের অপরাধ প্রবণতায় অধিকতর এগিয়ে যায়, তাহলে তো কাফেররা নির্দোষ। কারণ, আয়াতের উদ্দেশ্য হল এই যে, কাফেরদের সামান্য কয়েক দিনের এ অবকাশ ও ভোগ-বিলাসে যেন মুসলিমরা পেরেশান না হয়। কেননা, কুফর ও পাপ সত্ত্বেও তাদেরকে পার্থিব শক্তি-সামর্থ্য ও বৈভব দান করাটাও তাদের শাস্তিরই একটি পন্থা, যার অনুভূতি আজকে নয় এই পৃথিবী থেকে যাবার পরই হবে যে, তাদেরকে দেয়া পার্থিব ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ তারা পাপকর্মে ব্যয় করেছে প্রকৃতপক্ষে সেসবই ছিল জাহান্নামের অঙ্গার। এ বিষয়টিই কতিপয় আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন। বলা হয়েছে, “কাফেরদের ধন-সম্পদ এবং ভোগ-বিলাস তাদের জন্য গৌরবের বস্তু নয়; এগুলো আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আযাবেরই একটি কিস্তি যা আখেরাতে তাদের আযাব বৃদ্ধির কারণ হবে”। [সূরা আত-তাওবাহ ৫৫]
[২] এ আয়াতে কাফেরদেরকে কেন আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপের কারণে শাস্তি না দিয়ে অবকাশ দিয়ে থাকেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, তাদের এ অবকাশ তাদের জন্য মঙ্গল বা সুখকর নয়। এটা তাদের গোনাহ আরও বর্ধিত করে তাদেরকে ভালভাবে পাকড়াও করার জন্য। অন্য আয়াতে অবশ্য বলা হয়েছে যে, তাদেরকে এ অবকাশ প্রদানের পূর্বে আল্লাহ্ তা’আলা দুঃখ-কষ্ট দিয়ে আল্লাহ্র দিকে ফিরানোর সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারপরও যারা অবাধ্যতা অবলম্বন করে তাদেরকে তিনি শক্তহাতে পাকড়াও করেন। আল্লাহ বলেন, “আমি কোন জনপদে নবী পাঠালে সেখানকার অধিবাসীদেরকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আক্রান্ত করি, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। তারপর আমরা অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করেছে’। তারপর হঠাৎ তাদেরকে আমরা পাকড়াও করি, কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না” [সূরা আল-আরাফ: ৯৪-৯৫]
আরও বলেন, “আপনার আগেও আমরা বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি, তারপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পীড়িত করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়। আমাদের শাস্তি তাদের উপর যখন আপতিত হল তখন তারা কেন বিনীত হল না? কিন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল। তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমরা তাদের জন্য সবকিছুর দরজা খুলে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লাসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে ধরলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল” [সূরা আল-আনআমঃ ৪২-৪৪]
অন্য আয়াতে উল্লেখ করেছেন যে, এ অবকাশ প্রদান তাঁর মজবুত কৌশলের অন্তর্গত। আল্লাহ বলেনঃ “আর যারা আমাদের নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমরা তাদেরকে এমনভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারবে না। আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ”। [সূরা আল-আরাফঃ ১৮২-১৮৩]
আরও বলেন, “অতএব ছেড়ে দিন আমাকে এবং যারা এ বাণীতে মিথ্যারোপ করে তাদেরকে, আমরা তাদেরকে ক্রমে ক্রমে ধরব এমনভাবে যে, তারা জানতে পারবে না। আর আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ”। [সূরা আল-কালাম: ৪৪-৪৫]
[৩] অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ্ তা’আলা প্রদান করেন না। কিন্তু নবী-রাসূলদের যাকে ইচ্ছা আল্লাহ্ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে কিছু কিছু গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান দান করেন। যাতে তারা এর মাধ্যমে আল্লাহ্র দ্বীনকে প্রচার করতে সমর্থ হন। যেমন, মুনাফিকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তার রাসূলকে কিছু কিছু গায়েবী জ্ঞান দান করেছিলেন এবং তাদের ব্যাপারে সাবধান করেছিলেন। [আল-মুইয়াসসার] সুতরাং তোমাদের কাজ হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা। গায়েবী সংবাদ জানার জন্য বসে থাকা তোমাদের কাজ নয়। যদি প্রকৃত ঈমান ও তাকওয়া তোমাদের অর্জিত হয়, তবে এতেই তোমাদের সাফল্য রয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] রসূল (সাঃ)-এর মধ্যে এই আশা চরমভাবে বিদ্যমান ছিল যে, সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যাক। আর এরই কারণে তাদের অস্বীকার করায় ও মিথ্যা ভাবায় তিনি বড়ই কষ্টবোধ করতেন। তাই মহান আল্লাহ এই আয়াতে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন যে, তুমি কোন চিন্তা ও দুঃখ করবে না। এরা আল্লাহর কিছুই করতে পারবে না, তারা তো কেবল নিজেদের আখেরাত নষ্ট করছে।
[২] এই আয়াতে আল্লাহর সুযোগ ও অবসর দেওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা স্বীয় কৌশল ও ইচ্ছা অনুযায়ী কাফেরদেরকে সুযোগ ও অবসর দেন। সাময়িকভাবে তাদেরকে দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, বিজয় এবং মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততি দান করেন। মানুষ মনে করে যে তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ হচ্ছে, কিন্তু আল্লাহর যাবতীয় নিয়ামত দ্বারা যারা উপকৃত হয়, তারা যদি নেকী ও আল্লাহর আনুগত্যের রাস্তা অবলম্বন না করে, তাহলে দুনিয়ার এই সমস্ত নিয়ামত তাদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ হবে না, বরং তা হবে তাঁর দেওয়া অবসর। এর দ্বারা তাদের কুফরী ও পাপ আরো বর্ধিত হতে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের চিরন্তন আযাবের উপযুক্ত বিবেচিত হবে। এই বিষয়টাকে মহান আল্লাহ কুরআনের আরো কয়েকটি স্থানে উল্লেখ করেছেন। যেমন, [أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ، نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ بَلْ لا يَشْعُرُونَ] “তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্য স্বরূপ যে ধনৈশবর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি, তার দ্বারা তাদের জন্যে সর্বপ্রকার মঙ্গল তরান্বিত করছি? বরং তারা বুঝে না।” (সূরা মু’মিনূন ২৩:৫৫-৫৬)
[৩] এই জন্যই মহান আল্লাহ পরীক্ষার কষ্টিপাথরে ঘষে নেন, যাতে তাঁর প্রকৃত বন্ধু কে তা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তাঁর শত্রু লাঞ্ছিত হয়। আর ধৈর্যশীল মু’মিন মুনাফিক থেকে পৃথক হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা উহুদের দিন ঈমানদারদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন। সেদিন ঈমানদারগণ তাঁদের ঈমান, ধৈর্য, সুদৃঢ়তা এবং আনুগত্যের চরম উদ্দীপনার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পেশ করেছিলেন এবং মুনাফিকরা নিজেদেরকে মুনাফিক্বীর যে পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল, সে পর্দা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল।
[৪] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ যদি এইভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষদের অবস্থাসমূহ এবং তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারসমূহকে প্রকাশ না করে দেন, তাহলে তোমাদের নিকট তো এমন কোন গায়বী জ্ঞান নেই, যার দ্বারা তোমাদের নিকট এই জিনিসগুলো প্রকাশ হয়ে যাবে এবং তোমরা জানতে পারবে যে, মুনাফিক কে এবং খাঁটি মু’মিন কে?
[৫] অবশ্য মহান আল্লাহ তাঁর মনোনীত রসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান, তাঁকে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত করেন। ফলে তাঁদের নিকট মুনাফিকদের যাবতীয় অবস্থা এবং তাদের সমূহ চক্রান্তের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে যায়। অর্থাৎ, তা কখনো কখনো কোন কোন নবীর জন্য প্রকাশ করা হয়। সাধারণতঃ প্রত্যেক নবী (যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা না চান) মুনাফিকদের আভ্যন্তরিক মুনাফিক্বী এবং তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অনভিজ্ঞই থাকেন। (যেমন, সূরা তাওবার ৯:১০১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর কিছু কিছু তোমার আশে-পাশের মুনাফিক এবং কিছু লোক মদীনাবাসী কঠোর মুনাফিক্বীতে অনড়। তুমি তাদেরকে জান না, আমি তাদেরকে জানি।) এর অর্থ এও হতে পারে যে, আমি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কেবল আমার রসূলগণকেই অবহিত করি। কারণ, তাঁদের (নবুঅতী) পদের জন্য এটা জরুরী। এই আল্লাহর অহী এবং অদৃশ্য বিষয় দ্বারা তাঁরা মানুষদেরকে আল্লাহর প্রতি আহবান করেন এবং নিজেদেরকে আল্লাহর রসূল বলে সাব্যস্ত করেন। এই বিষয়টাকে অন্যত্র এইভাবে বলা হয়েছে, [عَالِمُ الْغَيْبِ فَلا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا، إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ] “তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্তু তিনি অদৃশ্য বিষয় কারোও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত।” (সূরা জিন ৭২:২৬-২৭) প্রকাশ থাকে যে, অদৃশ্য বিষয় বলতে সেগুলোকে বোঝানো হয়েছে, যা রিসালাতের পদ এবং তার দায়িত্ব পালনের সাথে সম্পর্কিত। তা অতীত ঘটিত এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত ঘটিতব্য বিষয়ের জ্ঞান নয়। যেমন, অনেক বাতিলপন্থী মনে করে ও করায় যে, আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম) এবং তাদের কিছু ‘নিষ্পাপ’ ইমামরা নাকি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
তাফসীর:
(نُمْلِيْ لَهُمْ)
‘আমরা তাদেরকে অবকাশ দিই।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে এ আশা চরমভাবে বিদ্যমান ছিল যে, সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যাক। আর এ কারণে তাদের অস্বীকার করায় ও মিথ্যা ভাবায় তিনি বড় কষ্টবোধ করলেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন যে, তুমি কোন চিন্তা ও দুঃখ করবে না। এরা আল্লাহ তা‘আলার কিছুই করতে পারবে না। তারা তো কেবল নিজেদের আখিরাত নষ্ট করছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে আমার বান্দারা তোমরা আমার ক্ষতি করতে পারবে না এবং কোন উপকারও করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৭৭)
(إِنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সুযোগ ও অবসর দেয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কৌশল ও ইচ্ছা অনুযায়ী কাফিরদেরকে সুযোগ ও অবসর দেন।
সাময়িকভাবে তাদেরকে দুনিয়ার সুখ-সাচ্ছন্দ্য, বিজয় এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করেন। মানুষ মনে করে যে, তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় নেয়ামত দ্বারা যারা উপকৃত হয়, তারা যদি নেকী ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের রাস্তা অবলম্বন না করে, তাহলে দুনিয়ার এ সমস্ত নেয়ামত তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ হবে না বরং তা হবে তাঁর দেয়া অবকাশ।
এ দ্বারা কুফরী ও পাপ আরো বর্ধিত হতে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের চিরন্তন আযাবের উপযুক্ত বিবেচিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(أَيَحْسَبُوْنَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِه۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ – نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ط بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করি, তা দিয়ে আমি তাদের সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না। (সূরা মু’মিনূন ২৩:৫৫-৫৬)
(مَا كَانَ اللّٰهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ)
আল্লাহ তা‘আলা কষ্টি পাথরে ঘষে পরীক্ষা করে নেন কে তাঁর প্রকৃত মু’মিন, আর কে মুনাফিক।
সুতরাং কাফিরের জন্য কোন আফসোস নেই, তারা ইসলাম ও মুসলিমদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। তারা কেবল নিজেদেরই ক্ষতি করছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়ার সাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশ ইত্যাদি দ্বারা ক্ষণিক সময়ের জন্য অবকাশ দেন। পরকালে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে তাদের পাপ কাজ বৃদ্ধি পাওয়া এবং শাস্তি কঠিন হওয়ার জন্য অবকাশ দেন।
২. কাফিরদের কুফরী যেন মু’মিনদেরকে চিন্তিত না করে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য যে, কে সত্য মু’মিন আর কে মুনাফিক।
৪. গায়েব কেবল আল্লাহ তা‘আলাই জানেন।
(نُمْلِيْ لَهُمْ)
‘আমরা তাদেরকে অবকাশ দিই।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে এ আশা চরমভাবে বিদ্যমান ছিল যে, সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যাক। আর এ কারণে তাদের অস্বীকার করায় ও মিথ্যা ভাবায় তিনি বড় কষ্টবোধ করলেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন যে, তুমি কোন চিন্তা ও দুঃখ করবে না। এরা আল্লাহ তা‘আলার কিছুই করতে পারবে না। তারা তো কেবল নিজেদের আখিরাত নষ্ট করছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে আমার বান্দারা তোমরা আমার ক্ষতি করতে পারবে না এবং কোন উপকারও করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৭৭)
(إِنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সুযোগ ও অবসর দেয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কৌশল ও ইচ্ছা অনুযায়ী কাফিরদেরকে সুযোগ ও অবসর দেন।
সাময়িকভাবে তাদেরকে দুনিয়ার সুখ-সাচ্ছন্দ্য, বিজয় এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করেন। মানুষ মনে করে যে, তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় নেয়ামত দ্বারা যারা উপকৃত হয়, তারা যদি নেকী ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের রাস্তা অবলম্বন না করে, তাহলে দুনিয়ার এ সমস্ত নেয়ামত তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ হবে না বরং তা হবে তাঁর দেয়া অবকাশ।
এ দ্বারা কুফরী ও পাপ আরো বর্ধিত হতে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের চিরন্তন আযাবের উপযুক্ত বিবেচিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(أَيَحْسَبُوْنَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِه۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ – نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ط بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করি, তা দিয়ে আমি তাদের সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না। (সূরা মু’মিনূন ২৩:৫৫-৫৬)
(مَا كَانَ اللّٰهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ)
আল্লাহ তা‘আলা কষ্টি পাথরে ঘষে পরীক্ষা করে নেন কে তাঁর প্রকৃত মু’মিন, আর কে মুনাফিক।
সুতরাং কাফিরের জন্য কোন আফসোস নেই, তারা ইসলাম ও মুসলিমদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। তারা কেবল নিজেদেরই ক্ষতি করছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়ার সাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশ ইত্যাদি দ্বারা ক্ষণিক সময়ের জন্য অবকাশ দেন। পরকালে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে তাদের পাপ কাজ বৃদ্ধি পাওয়া এবং শাস্তি কঠিন হওয়ার জন্য অবকাশ দেন।
২. কাফিরদের কুফরী যেন মু’মিনদেরকে চিন্তিত না করে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য যে, কে সত্য মু’মিন আর কে মুনাফিক।
৪. গায়েব কেবল আল্লাহ তা‘আলাই জানেন।