أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 608)
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৩৬ নং আয়াত:-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ
شَهْرًا
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই মাসসমূহের সংখ্যা হল বারো মাস।
Verily, the number of months with Allah is twelve months.
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّہُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰہِ اثۡنَا عَشَرَ شَہۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡہَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡہِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۳۶﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই মাসসমূহের সংখ্যা হল বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ (পবিত্র)। এটাই সরল বিধান। অতএব তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। আর অংশীবাদীদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ সাবধানীদের সাথে রয়েছেন।
তাফসী্রে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) তাঁর (বিদায়) হজ্বের ভাষণে বলেনঃ “যামানা ঘুরে ঘুরে নিজের মূল অবস্থায় এসে গেছে। বছরের বারোটি মাস হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে চারটি হচ্ছে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন মাস। তিনটি ক্রমিকভাবে রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে যুলক্বাদ, যুলহাজ্বা ও মুহাররম। আর চতুর্থটি হচ্ছে মুযার গোত্রের (কাছে অতি সম্মানিত) রজব মাস, যা জামাদিউল উখরা ও শা’বানের মধ্যভাগে রয়েছে। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) এটাকে তাঁর তাফসীরে পূর্ণতার সাথে তাখরীজ করেছেন) অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “আজ কোন্ দিন?” (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা উত্তরে বললামঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। আমরা মনে করলাম যে, তিনি হয়তো এর অন্য কোন নাম বলবেন। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “আজ কি ইয়াওমুন নাহর’ বা কুরবানীর ঈদের দিন নয়?” আমরা উত্তর দিলামঃ হ্যা। পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এটা কোন মাস?” আমরা জবাব দিলাম, এ সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরই (সঃ) ভাল জ্ঞান আছে। এবারও তিনি চুপ থাকলেন। সুতরাং আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি এ মাসের অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “এটা কি যুলহাজ্বাহ্ মাস নয়?” আমরা জবাব দিলামঃ হ্যা। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এটা কোন শহর?” আমরা উত্তরে বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সঃ) এটা ভাল জানেন। তিনি এবারও নীরব হয়ে যান এবং আমরা এবারও মনে করলাম যে, তিনি হয় তো এর অন্য কোন নাম রাখবেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এটা কি বালাদা (মক্কা) নয়?” আমরা জবাবে বললামঃ হ্যা। এরপর তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো যে, তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল, তোমাদের মান-মর্যাদা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে এরূপই মর্যাদাসম্পন্ন যেমন মর্যাদাসম্পন্ন তোমাদের এ দিনটি, এ মাসটি এবং এ শহরটি । সত্বরই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সাবধান! আমার পরে যেন তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং যেন একে অপরকে হত্যা না কর! আমি কি (শরীয়তের সমস্ত কথা তোমাদের কাছে) পৌঁছিয়ে দিয়েছি? জেনে নাও, তোমাদের যারা এখানে বিদ্যমান রয়েছে তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এসব কথা পৌছিয়ে দেয়। কেননা, হতে পারে যে, যারা উপস্থিত নেই তাদের কেউ কেউ শ্রোতাদের অপেক্ষা বেশী স্মরণশক্তির অধিকারী।”
অন্য রিওয়ায়াতে আছে যে, এটা হচ্ছে ‘মিনা’ নামক স্থানে ‘আইয়ামুত তাশরীক” (যিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে আইয়ামুত তাশরীক বলা হয়) এর মধ্যভাগে বিদায় হজ্বের ভাষণের আলোচনা। আবূ হামযা রুকাশী (রঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন যিনি একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ খুত্বার সময় আমি তাঁর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে ছিলাম এবং মানুষের ভীড় ঠেকিয়ে রাখছিলাম।” তাঁর “যামানা ঘুরে ফিরে নিজের আসল অবস্থায় ফিরে এসেছে এ উক্তির ভাবার্থ এই যে, অজ্ঞতার যুগে মুশরিকরা মাসগুলোর ব্যাপারে যে কম বেশী করতো এবং এগিয়ে দিতে বা পিছিয়ে দিতো, সেগুলো ঘুরে ফিরে এখন সঠিক অবস্থায় এসে গেছে। যে মাস এখন আছে তা প্রকৃত অবস্থাতেই আছে। যেমন মক্কা বিজয়ের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “এই শহর (মক্কা) সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত রয়েছে। আর কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিতই থাকবে।” সুতরাং আরবদের মধ্যে যে এই প্রথা চালু হয়েছিল যে, তারা তাদের অধিকাংশ হজ্ব যিলহজ্ব মাসে করতো না, ঐ বছর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হজ্বের ব্যাপারে এটা ঘটেনি, বরং হজ্ব সঠিক মাসেই হয়েছিল। কেউ কেউ এর সাথে একথাও বলেছেন যে, আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর হজ্ব যুলকা’দা মাসে হয়েছিল। কিন্তু এ উক্তির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আমরা এটা … (আরবী) আয়াতের তাফসীরে প্রমাণসহ বর্ণনা করবো। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজনের এ উক্তিও রয়েছে যে, ঐ বছর ঘটনাক্রমে ইয়াহূদী, খ্রীষ্টান ও মুসলমান সবারই হজ্ব একই দিনে হয়েছিল। অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিনে। কিন্তু এ উক্তিটি আরো বেশী গারীব বা দুর্বল।
‘ফসল’ বা পরিচ্ছেদ: শায়েখ ইলমুদ্দীন সাখাভী (রঃ) তাঁর (আরবী) নামক গ্রন্থে লিখেছে- মুহাররম মাসকে ওর সম্মানের কারণে মুহাররম বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার মতে তো এই নামের কারণ হচ্ছে ওর সম্মানের প্রতি গুরুত্ত্বারোপকরণ। কেননা, অজ্ঞতা যুগের আরবরা ওকে বদলিয়ে দিতো। কখনো হালাল করতো, আবার কখনো হারাম করতো। এর বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) এসে থাকে।
‘সফর’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে সাধারণতঃ তাদের ঘর খালি বা শূন্য থাকতো। কেননা, এই মাসটি তারা যুদ্ধ বিগ্রহে ও ভ্রমণে কাটি দিতো। ঘর শূন্য হয়ে গেলে আরবরা (আরবী) বলে থাকে। (আরবী) হলো এর বহুবচন। যেমন (আরবী)- এর বহুবচন (আরবী) এসে থাকে।
‘রাবীউল আওয়াল’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে আরবরা। বাড়ীতেই অবস্থান করে থাকে। অবস্থান করাকে (আরবী) বলা হয়। এর বহুবচন (আরবী) এসে থাকে। যেমন (আরবী)-এর বহুবচন (আরবী) এসে থাকে। এর বহুবচন (আরবী) ও হয়, যেমন (আরবী) -এর বহুবচন হয়।
‘রাবীউল আখির’ এর নামকরণের কারণও এটাই। এটা যেন বাড়ীতে অবস্থানের দ্বিতীয় মাস।
‘জামাদিউল উলা’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে পানি জমে যেতো। তাদের হিসাবে মাস আবর্তিত হতো না। অর্থাৎ ঠিক প্রতি মৌসুমেই প্রতিটি মাস আসতো। কিন্তু এ কথাটি যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা, ঐ মাসগুলোর হিসাব যখন চন্দ্রের উপর নির্ভরশীল তখন এটা পরিষ্কার কথা যে, প্রতি বছর প্রতি মাসে মৌসুমী অবস্থা একরূপ থাকবে না। হ্যা, তবে খুব সম্ভব, যে বছর এই মাসের নাম রাখা হয় ঐ বছর ঐ মাসটি খুব কনকনে শীতে এসেছিল এবং পানি জমে গিয়েছিল। যেমন একজন কবিও বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “জামাদিউর কঠিন অন্ধকার রাত, যার অন্ধকারে গোলাম তাঁবুর খুঁটি পর্যন্ত দেখতে পায় না। ঐ রাতে কুকুর একবার ছাড়া ঘেউ ঘেউ করতে পারে না, এমন কি শেষ পর্যন্ত সে (ককনে শীতের কারণে) তার লেজকে নাকের উপর গুটিয়ে নেয়। এর বহুবচন (আরবী) আসে। যেমন (আরবী) ও (আরবী)-এর ব্যবহার। এটা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয় রূপেই ব্যবহৃত হয়।
‘জামাদিউল উখরা এর নামকরণের কারণও এটাই। এটা যেন পানি জমে যাওয়ার দ্বিতীয় মাস।
‘রজব’ শব্দটি (আরবী) শব্দ থেকে গৃহীত। (আরবী) বলা হয় (আরবী) বা সম্মান। এই মাসটি মর্যাদাপূর্ণ মাস বলে একে রজব বলা হয়। এর বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) আসে।
‘শা’বান’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে আরবরা লুটপাট করার জল বিচ্ছিন্নভাবে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তো। (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে পৃথক পৃথক হওয়া। এজন্যেই এই মাসের এই নাম রাখা হয়েছে। এর বহুবচন (আরবী) ও (আরবী) এসে থাকে।
“রমাদান’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে অত্যাধিক গরমের কারণে উটের পা পুড়ে যায়। (আরবী) ঐ সময় বলা হয় যখন উন্ত্রীর বাচ্চা খুবই পিপাসার্ত থাকে। এর বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) এসে থাকে। কারো কারো মতে এটা অলাহ তা’আলার নামসমূহের একটি নাম। কিন্তু এটা ভুল ও অযৌক্তিক কথা মাত্র। আমি বলি যে, এই ব্যাপারে একটি হাদীসও এসেছে। কিন্তু ওটা দুর্বল। (আরবী) এ আমি এটা বর্ণনা করেছি।
‘শাওয়াল’ (আরবী) থেকে গৃহীত। এই মাসটি হচ্ছে উটের উত্তেজনার মাস। এই মাসে উট লেজ পিঠে করে দৌড়াতে শুরু করতো। এজন্যেই এই মাসের এই নাম হয়ে যায়। এর বহুবচন। (আরবী) এবং (আরবী) এসে থাকে।
‘যুলক্বাদা’ নাম হওয়ার কারণ এই যে, এই মাসে আরবের লোকেরা বাড়ীতে বসে থাকতো। তারা এই মাসে যুদ্ধের জন্যেও বের হতো না এবং সফরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতো না। এর বহুবচন (আরবী) এসে থাকে ।
‘যুলহাজ্বা’ মাসে হজ্বব্রত পালিত হতো বলেই এর নাম যুলহাজ্বা’ হয়ে যায়। এর বহুবচন (আরবী) এসে থাকে।
এতো হলো এই মাসগুলোর নামকরণের কারণ। এখন সপ্তাহের সাত দিনের নাম এবং এ নামগুলোর বহুবচন বর্ণনা করা হচ্ছে-
রবিবারকে (আরবী) বলে। এর বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) এসে থাকে ।
সোমবারকে (আরবী) বলা হয়। এর বহুবচন (আরবী) আসে।
মঙ্গলবারকে (আরবী) বলে। এটা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়রূপেই কথিত হয়। এর বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) আসে।
বুধবারকে (আরবী) বলা হয়। এর বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) এসে থাকে।
বৃহস্পতিবারকে (আরবী) বলে। এর বহুবচন (আরবী) ও (আরবী) এসে থাকে।
শুক্রবারকে (আরবী) বলে। এর (আরবী) বহুবচন (আরবী) এবং (আরবী) আসে।
শনিবারকে (আরবী) বলা হয়। (আরবী) এর অর্থ হচ্ছে শেষ হওয়া। সপ্তাহের গণনা এখানেই শেষ হয় বলে একে (আরবী) বলা হয়।
প্রাচীন আরবে সপ্তাহের দিনগুলোর নাম ছিল নিম্নরূপঃ
আওয়াল, আহ্ওয়ান, জুবার, দুবার, মুনাস, উরূবা এবং শিয়ার। প্রাচীন খাঁটি আরব কবিদের কবিতার মধ্যেও সপ্তাহের এ নামগুলোর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ এই বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস (বিশেষ) মর্যাদাপূর্ণ। অজ্ঞতার যুগের আরবরাও এ চার মাসকে সম্মানিত মাসরূপে স্বীকার করতো। কিন্তু বাসল’ নামক একটি দল তাদের গোঁড়ামীর কারণে আটটি মাসকে সম্মানিত মাস মনে করতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভাষণে রজব মাসকে মুযার’ গোত্রের দিকে সম্পর্কযুক্ত করার কারণ এই যে, যে মাসকে তারা রজব মাস হিসেবে গণনা করতো, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিকটেও ওটাই রজব মাস ছিল, যা জামাদিউল উখরা এবং শাবানের মাঝে রয়েছে। কিন্তু রাবীআ গোত্রের নিকট রজব মাস শাবান ও শাওয়াল মাসের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমযানের নাম ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্পষ্টভাবে বলে দিলেন যে, সম্মানিত মাস হচ্ছে মুযার গোত্রের রজব মাস, রাবীআ’ গোত্রের রজব মাস নয়।
সম্মানিত এই চারটি মাসের মধ্যে তিনটি ক্রমিকরূপে হওয়ার যৌক্তিকতা এই যে, হাজীরা যুলক্বাদা মাসে বাড়ী হতে বের হন। ঐ সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারপিট, ঝগড়া-বিবাদ এবং খুনাখুনি বন্ধ করে লোকেরা বাড়ীতে বসে থাকে। অতঃপর যুলহাজ্ব মাসে তারা হজ্বের আহকাম নিরাপত্তার সাথে এবং উত্তমরূপে আদায় করেন। তারপর মর্যাদাপূর্ণ মুহাররম মাসে তারা নিরাপদে বাড়ীর দিকে প্রত্যাবর্তন করে থাকেন। বছরের মধ্যভাগে রজব মাসকে সম্মানিত বানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন যিয়ারতকারিগণ বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফের আকাঙ্ক্ষা উমরার আকারে পূর্ণ করতে পারে। যারা বহু দূরের লোক তারাও যেন সারা মাস ধরে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। সুতরাং তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা এই মাসগুলোর যথাযথ মর্যাদা দান কর। বিশেষভাবে এই মাসগুলোতে পাপকার্য থেকে দূরে থাকো। কেননা, এতে পাপের দুস্ক্রিয়া আরো বৃদ্ধি পায়। যেমন হারাম শরীফে কৃত পাপ অন্যান্য স্থানে কৃত পাপ অপেক্ষা বেশী হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যে ব্যক্তি ওর মধ্যে (হারাম শরীফের মধ্যে) অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি করে ধর্মদ্রোহীতার কাজে লিপ্ত হবে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।” অনুরূপভাবে এই মাগুলোর মধ্যে পাপকার্য করলে আন্যান্য মাসে কৃত পাপকার্যের চেয়ে গুনাহ্ বেশী হয়। এ কারণেই ইমাম শাফিঈ (রঃ) এবং আলেমদের একটি বৃহৎ দলের মতে এই মাসগুলোর মধ্যে কেউ কাউকেও হত্যা করলে ওর রক্তপণও কঠিন হবে। এ রকমই হারাম শরীফের ভিতরের হত্যা ও নিকটতম আত্মীয়ের হত্যা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দ দ্বারা বছরের সমস্ত মাসকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ পাকের এ উক্তির মর্মার্থ হচ্ছে- তোমরা সমস্ত মাসে পাপকার্য থেকে বিরত থাকবে, বিশেষ করে এই চার মাসে। কেননা, এগুলো বড়ই মর্যাদা সম্পন্ন মাস। এ মাসগুলোতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং পুণ্য বা সাওয়াব প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, এই সম্মানিত মাসগুলোতে পাপের শাস্তির বোঝা বেড়ে যায়, যদিও অত্যাচার সর্বাবস্থাতেই খারাপ। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাঁর যে কাজকে ইচ্ছা বড় করে থাকেন। তিনি বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় সৃষ্টির মধ্য থেকেও বাছাই ও মনোনীত করেছেন। তিনি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে দূত মনোনীত করেছেন, মানব জাতির মধ্য থেকে রাসূলদেরকে মনোনীত করেছেন, কালামের মধ্য থেকে তাঁর যিকরকে পছন্দ করেছেন, যমীনের মধ্যে মসজিদসমূহকে পছন্দ করেছেন, মাসগুলোর মধ্যে রমযান ও হারাম মাসগুলোকে মনোনীত করেছেন, দিনগুলোর মধ্যে শুক্রবারকে পছন্দ করেছেন এবং রাতগুলোর মধ্যে লায়লাতুল কদরকে মনোনীত করেছেন। এভাবে মহান আল্লাহ যেটাকে ইচ্ছা করেছেন একটির উপর অন্যটিকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুতরাং যেগুলোকে আল্লাহ তা’আলা মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সেগুলোর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য কর্তব্য। বুদ্ধিমান ও বিবেচক লোকদের মতে কোন বিষয়ের ঐ পরিমাণ সম্মান করা উচিত যে পরিমাণ সম্মান আল্লাহ পাক ওতে দান করেছেন। ওগুলোর সম্মান না করা হারাম। এ মাসগুলোতে যা করা হারাম তা হালাল করা চলবে না এবং যা হালাল তা হারাম করা উচিত নয়, যেমন মুশরিকরা করতো। এটা তাদের কুফরীর মধ্যে বৃদ্ধিরই শামিল।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা এই মুশরিকদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মর্যাদা সম্পন্ন এই চার মাসের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা করা হারাম হওয়ার হুকুম মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কি এখনও এ হুকুম বিদ্যমান আছে এ ব্যাপারে আলেমদের দু’টি উক্তি রয়েছে। প্রথম উক্তি এই যে, এ হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এটাই প্রসিদ্ধতর উক্তি। এ আয়াতের শব্দগুলোর প্রতি চিন্তাযুক্ত দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রথমে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে-এ মাসগুলোতে যুলুম করো না। অতঃপর হুকুম করা হচ্ছে-তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর। বাহ্যিক শব্দ দ্বারা তো জানা যায় যে, এ হুকুম আম বা সাধারণ। এতে হারাম মাসগুলোও এসে গেল। যদি এ মাসগুলো স্বতন্ত্র হতো তবে এগুলো অতিক্রান্ত হওয়ার শর্ত অবশ্যই আরোপিত হতো। আল্লাহর রাসূল (সঃ) যুলক্বাদা মাসে তায়েফ অবরোধ করেছিলেন যা সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে একটি মাস। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) শাওয়াল মাসে হাওয়াযেন গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। তারা পরাজিত হয়। তাদের মধ্যে যারা প্রাণে বেঁচে যায় তারা পালিয়ে তায়েফে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেখানে গমন করেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত তায়েফ অবরোধ করে রাখেন। তারপর ওটা জয় না করেই তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাহলে জানা গেল যে, তিনি হারাম মাসে তায়েফ অবরোধ করেছিলেন।
দ্বিতীয় উক্তি এই যে, হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধের সূচনা করা হারাম এবং এই মাসগুলোর হুরমতের হুকুম মানসূখ হয়নি। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর প্রতীকসমূহের অসম্মান করো না এবং সম্মানিত মাসসমূহেরও না।” অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “সম্মানিত মাস সম্মানিত মাসের বিনিময়ে, আর এসব সম্মান তো পারস্পরিক বিনিময়ের বস্তু, সুতরাং যে ব্যক্তি তোমাদের উপর উৎপীড়ন করে, তোমরাও তাদের উপর উৎপীড়ন করবে, যেরূপ সে তোমাদের প্রতি উৎপীড়ন করেছে।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “অতএব যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হয়ে যায় তখন সেই মুশরিকদেরকে যেখানে পাও বধ কর।”
এ কথা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, এই নির্ধারিত চারটি মাস প্রতি বছরেই থাকবে, দু’টি উক্তির মধ্যে একটি উক্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র সফরের মাসগুলোতে নয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তোমরা সমস্ত মুসলিম ঐ মুশরিকদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।” হতে পারে যে, এটা পূর্ব হুকুম থেকে একটা স্বতন্ত্র হুকুম নয়। আবার এও হতে পারে যে, এটা একটা পৃথক ও নতুন হুকুম। আল্লাহ তা’আলা হয়তো মুসলিমদেরকে উৎসাহিত ও জিহাদের প্রতি উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে বলছেন-তারা যেমন তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সবাই চতুর্দিক থেকে সমবেতভাবে তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে, তদ্রুপ তোমরাও সমস্ত মুমিনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মুকাবিলা কর। এটাও সম্ভব যে, এই বাক্যে মুসলিমদেরকে নিষিদ্ধ মাসগুলোতেও যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যখন আক্রমণের সূচনা তাদের পক্ষ থেকে হবে। যেমন (আরবী) (২:১৯৪) এ আয়াতে রয়েছে এবং আরো রয়েছে। (আরবী) এই আয়াতে। অর্থাৎ “আর তোমরা তাদের (মুশরিকদের) সাথে মসজিদুল হারামের নিকট যুদ্ধ করো না, যে পর্যন্ত না তারা তথায় তোমাদের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়। যদি তারাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয় তবে তোমরাও তাদেরকে হত্যা কর।” (২:১৯১) সম্মানিত মাসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর তায়েফ অবরোধ করার জবাব এটাই যে, এটা ছিল হাওয়াযেন গোত্র ও তাদের মিত্র বানু সাকীফ গোত্রের যৌথ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যুদ্ধের সূচনা তাদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। তারা এদিক ওদিক থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিরোধী লোকদেরকে একত্রিত করে যুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছিল। সুতরাং নবী (সঃ) তাদের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁর এই অগ্রযাত্রাও আবার সম্মানিত মাসে ছিল না। এখানে পরাজিত হয়ে ঐ লোকগুলো পালিয়ে গিয়ে তায়েফে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেখানে দুর্গ স্থাপন করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ কেন্দ্রকে খালি করার উদ্দেশ্যে আরো সামনে অগ্রসর হন। তারা মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করে এবং মুসলমানদের একটি দলকে হত্যা করে ফেলে। এদিকে মিনজীক প্রভৃতি গোত্রসমূহের মাধ্যমে অবরোধ অব্যাহত থাকে। প্রায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাদেরকে ঘিরে রাখা হয়। মোটকথা, যুদ্ধের সূচনা সম্মানিত মাসে হয়নি। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সম্মানিত মাসও চলে আসে। কিছুদিন অতিবাহিত হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অবরোধ উঠিয়ে নেন। সুতরাং যুদ্ধ জারি রাখা এক কথা এবং যুদ্ধের সূচনা হওয়া আর এক কথা। এর বহু নবীর রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এ সম্পর্কে যেসব হাদীস এসেছে সেগুলো আমি “সীরাত”-এর মধ্যে বর্ণনা করেছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাপেক্ষা বেশী জ্ঞানের অধিকারী।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللّٰهِ اثْنَا عَشَرَ)
‘আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাসগুলোর সংখ্যা বারটি’ অর্থাৎ যেদিন আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট মাসের সংখ্যা বারটি। তার মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ মাস যাতে বিশেষ করে ঝগড়া-বিবাদ নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যুগ ঘুরে-ফিরে পুনরায় সেই অবস্থাতে এসে গেছে যে অবস্থাতে ছিল যখন আল্লাহ তা‘আলা আকাশ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তা হল বার মাসে এক বছর। যার মধ্যে চারটি হল নিষিদ্ধ মাস, তিনটি ধারাবাহিক যুলক্বাদাহ, যুলহাজ্জ ও মুহাররাম। আর চতুর্থটি হল রজব যা জুমাদাল আখির ও শাবানের মাঝে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৬২) এটাই সঠিক শরীয়ত। অর্থাৎ এমন মাসগুলো এ ক্রমানুসারে হওয়া যেমন আল্লাহ তা‘আলা করেছেন, যার মধ্যে চার মাস নিষিদ্ধ। তা যথাযথ হিসাব ও সংখ্যায় পূর্ণ।
হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধের সূচনা করা যাবে কিনা এ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়।
১. হারাম মাসে যুদ্ধ করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা রহিত হয়ে গেছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
(فَلَا تَظْلِمُوْا فِيْهِنَّ أَنْفُسَكُمْ)
“সুতরাং তোমরা তার মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না” আবার আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশও দিচ্ছেন।
আয়াতের পূর্বাপর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে বিষয়টি ব্যাপক। যদি হারাম মাসে যুদ্ধ করা নিষেধ থাকত তাহলে তা শর্তযুক্ত করে দেয়া হত। তাছাড়া নাবী (সাঃ) শাওয়াল মাসে হাওয়াযেন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৩২৫০)
২. হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম। এ বিধান রহিত হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلشَّھْرُ الْحَرَامُ بِالشَّھْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمٰتُ قِصَاصٌ ﺚ فَمَنِ اعْتَدٰی عَلَیْکُمْ فَاعْتَدُوْا عَلَیْھِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدٰی عَلَیْکُمْﺕ وَاتَّقُوا اللہَ وَاعْلَمُوْٓا اَنَّ اللہَ مَعَ الْمُتَّقِیْنَ)
“নিষিদ্ধ মাসের পরিবর্তে নিষিদ্ধ মাস এবং নিষিদ্ধ মাসেও বদলার ব্যবস্থা রয়েছে ঐ অবস্থায় যদি কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করে, তবে তোমরাও তার প্রতি সে পরিমাণ অত্যাচার কর যতটুকু সে করেছে। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা বাকারাহ ২:১৯৪) তবে প্রথম কথাই প্রসিদ্ধ ও অধিক গ্রহণযোগ্য।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
বারটি মাস আল্লাহ তা‘আলার নিকট পূর্ব নির্ধারিত তার মধ্যে চারটি মাস হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতার দ্বারা।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এর দ্বারা এদিকে ঈঙ্গিত করা হয় যে, মাসগুলোর ধারাবহিকতা নির্ধারিত হয় আসমান ও যমীনের সৃষ্টি পরবর্তী মুহুর্তে। [সা’দী]।
[২] এখানে (فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ) বলে স্পষ্ট করা হয় যে, বিষয়টি সৃষ্টির প্রথম দিনেই তাকদীরে সুনির্দিষ্ট করা আছে। সিা’দী আর সে অনুসারে লওহে মাহফুযে লিখিত রয়েছে। [কুরতুবী]
[৩] অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট গণনায় মাস হল বারটি। এখানে উল্লেখিত (عدة) অর্থ গণনা। (شهور) হল (شهر) এর বহুবচন। আয়াতের সারমর্ম হল, আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যাটি বারটি নির্ধারিত, এতে কম বেশি করার কারো সুযোগ নেই। জাহেলিয়াতের লোকেরা বদলালেও তোমরা সেটা বদলাতে পার না। তোমাদের কাজ হবে আল্লাহর এ নির্দেশ মোতাবেক সেটাকে ঠিক করে নেয়া। কুরতুবী]
[৪] বিদায় হজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খোতবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন: তিনটি মাস হল ধারাবাহিকযিলকদ, যিলহজ ও মহররম, অপরটি হল রজব। [বুখারী ৩১৯৭; মুসলিম: ১৬৭৯] আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সময় আবার ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মত। মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে, হারাম মাস। তিনটি পরপর যিলকদ, যিলহজ, ও মুহাররাম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাস সানী ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে। [বুখারী ৪৬৬২; মুসলিম: ১৬৭৯]
[৫] অর্থাৎ মাসগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ ও সম্মানিত মাসুগলোর সাথে সম্পৃক্ত হুকুমআহকামকে সৃষ্টির প্রথম পর্বের ইলাহী নিয়মের সাথে সঙ্গতিশীল রাখাই হল সঠিক দ্বীন। এতে কোন মানুষের কম-বেশী কিংবা পরিবর্তন – পরিবর্ধন করার প্রয়াস অসুস্থ বিবেক ও মন্দ স্বভাবের আলামত। এর দ্বারা আরও প্রমাণিত হয় যে, ধারাবাহিকতা এবং মাসগুলোর যে নাম ইসলামী শরীআতে প্রচলিত, তা মানবরচিত পরিভাষা নয়, বরং রাববুল আলামীন যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিনই মাসের তারতীব, নাম ও বিশেষ মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুম আহকাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আয়াত দ্বারা আরও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে শরীআতের আহকামের ক্ষেত্রে চন্দ্রমাসই নির্ভরযোগ্য। চন্দ্রমাসের হিসেব মতেই রোযা, হজ ও যাকাত প্রভৃতি আদায় করতে হয়। [কুরতুবী] তবে কুরআন মজীদ চন্দ্রের মত সূর্যকেও সন-তারিখ ঠিক করার মানদন্ডরূপে অভিহিত করেছেন। [সূরা আল-আনআমঃ ৯৬; সূরা আর-রাহমান: ৫ সূরা ইউনুস:৫] অতএব চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির মাধ্যমেই সনতারিখ নির্দিষ্ট করা জায়েজ। তবে চন্দ্রের হিসাব আল্লাহর অধিকতর পছন্দ। তাই শরীআতের আহকামকে চন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন। এজন্যে চন্দ্র বছরের হিসাব সংরক্ষণ করা ফরযে-কেফায়া, সকল উম্মত এ হিসাব ভুলে গেলে সবাই গোনাহগার হবে। চাদের হিসাব ঠিক রেখে অন্যান্য সূত্রের হিসাব ব্যবহার করা জায়েয আছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] আল্লাহর বিধান ‘কিতাবুল্লাহ’ থেকে উদ্দেশ্য হল ‘লাওহে মাহফূয’। সৃষ্টির প্রারম্ভিক কাল থেকেই আল্লাহ তাআলা (বছরে) বার মাস নির্ধারিত করেছেন। তার মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ মাস, যাতে বিশেষ করে লড়াই-ঝগড়া নিষিদ্ধ। এই কথাকে নবী (সাঃ) এইভাবে বর্ণনা করেছেন, “যামানা ঘুরে-ফিরে পুনরায় সেই অবস্থাতে এসে গেছে যে অবস্থাতে তখন ছিল, যখন আল্লাহ তাআলা আকাশ-পৃথিবী রচনা করেছেন; বার মাসে এক বছর। যার মধ্যে চারটি হল নিষিদ্ধ মাস; তিনটি মাস ক্রমান্বয়ে যুলকা’দাহ, যুলহাজ্জাহ ও মুহাররাম। আর চতুর্থ মাসটি হল রজব মুযার; যা জুমাদাল আখের ও শা’বান মাসের মধ্যস্থলে পড়ে। (বুখারঃ কিতাবুত তাফসীর সূরা তাওবাহ ৯:পরিচ্ছেদ, মুসলিম ক্বাসামাহ অধ্যায়) “যামানা ঘুরে-ফিরে পুনরায় সেই অবস্থাতে এসে গেছে” এর অর্থ হল আরবের মুশরিকরা মাসগুলিকে নিয়ে যে আগা-পিছা করত (যার বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে) এ কথায় তার খন্ডন করা হয়েছে।
[২] অর্থাৎ, এই মাসগুলি এই পর্যায়ক্রমে হওয়া যেমন আল্লাহ রেখেছেন, যার মধ্যে চার মাস হল নিষিদ্ধ মাস। আর এই হিসাবই সঠিক ও সংখ্যাও পরিপূর্ণ।
[৩] অর্থাৎ, এই নিষিদ্ধ ও পবিত্র মাসগুলিতে লড়াই-ঝগড়া করে তার পবিত্রতা বিনষ্ট করে এবং আল্লাহর অবাধ্য হয়ে।
[৪] কিন্তু এই নিষিদ্ধ মাসগুলি অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর। তবে যদি তারা যুদ্ধ করতে বাধ্য করে, তাহলে নিষিদ্ধ মাসগুলিতেও তোমাদের জন্য যুদ্ধ করা বৈধ হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
যখন আল্লাহ চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই এ হিসাবও চলে আসছে যে, প্রতি মাসে প্রথমার চাঁদ একবারই উঠে। এ হিসাবে এক বছরে ১২ মাস হয়। একথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, আরবের লোকেরা নাসীর কারণে ১৩ বা ১৪ মাসে বছর বানিয়ে ফেলতো। যে হারাম মাসকে তারা হালাল করে নিয়েছে তাকে এভাবে বছরের পঞ্জিকায় জায়গা দেবার ব্যবস্থা করতো। সামনের দিকেও এ বিষয়টির আরো ব্যাখ্যা করা হবে।
যেসব উপযোগিতা ও কল্যাণকারিতার ভিত্তিতে এ মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম করা হয়েছে সেগুলোকে নষ্ট করো না এবং এ দিনগুলোতে শান্তি ভঙ্গ করে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে নিজেদের ওপর জুলুম করো না। চারটি হারাম মাস বলতে যিলকদ্দ, যিল হজ্জ ও মহররম মাসে হজ্জের জন্য এবং উমরাহের জন্য রজব মাস।
মুশরিকরা যদি উল্লেখিত মাসগুলোতে লড়াই থেকে বিরত না হয় তাহলে তারা যেমন একমত ও একজোট হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়েছে, তোমরাও তেমনি একমত ও একজোট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়ো। সূরা আল বাকারার ১৯৪ আয়াতটির এর ব্যাখ্যা পেশ করেছে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 36
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا
Verily, the number of months with Allah is twelve months.
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّہُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰہِ اثۡنَا عَشَرَ شَہۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡہَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡہِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۳۶﴾
Indeed, the number of months with Allah is twelve [lunar] months in the register of Allah [from] the day He created the heavens and the earth; of these, four are sacred. That is the correct religion, so do not wrong yourselves during them. And fight against the disbelievers collectively as they fight against you collectively. And know that Allah is with the righteous [who fear Him].
The Year consists of Twelve Months
Allah said,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالَارْضَ
Verily, the number of months with Allah is twelve months (in a year), so was it ordained by Allah on the Day when He created the heavens and the earth;
Imam Ahmad recorded that Abu Bakrah said that the Prophet said in a speech during his Hajj,
أَلَا إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْيَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَوَاتِ وَالاَْرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعُةٌ حُرُمٌ ثَلَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَان
The division of time has turned to its original form which was current when Allah created the heavens and the earth. The year is of twelve months, out of which four months are sacred:Three are in succession Dhul-Qa`dah, Dhul-Hijjah and Muharram, and (the fourth is) Rajab of (the tribe of) Mudar which comes between Jumada (Ath-Thaniyah) and Sha`ban.”
The Prophet then asked,
أَيُّ يَوْمٍ هَذَا
What is the day today?
We said, “Allah and His Messenger know better.
He kept quiet until we thought that he might give that day another name.
أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ
He said:Isn’t it the day of Nahr?
We replied, “Yes.”
أَيُّ شَهْرٍ هَذَا
He further asked, Which month is this?
We again said, “Allah and His Messenger know better,” and he kept quiet and made us think that he might give it another name.
أَلَيْسَ ذَا الحِجَّةِ
Then he said, (Isn’t it the month of Dhul-Hijjah?
We replied, “Yes.”
أَيُّ بَلَدٍ هَذَا
He asked, What town is this?
We said, “Allah and His Messenger know better,” and he kept quiet until we thought that he might change its name.
أَلَيْسَتِ الْبَلْدَةَ
He asked, Isn’t this the (Sacred) Town?
We said, “Yes.”
He said,
فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَحْسِبُهُ قَالَ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا
Verily! Your blood, property and honor are sacred to one another like the sanctity of this day of yours, in this month of yours and in this city of yours.
وَسَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ فَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ
Verily, you will meet your Lord and He will question you about your actions.
أَلَا لَا تَرْجِعُوا بَعْدِي ضُلَّلاً يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ أَلَا
Behold! Do not revert to misguidance after me by striking the necks of one another.
هَلْ بَلَّغْتُ
Have I conveyed?
أَلَا لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَايِبَ فَلَعَلَّ مَنْ يُبَلِّغُهُ يَكُونُ أَوْعَى لَهُ مِنْ بَعْضِ مَنْ سَمِعَه
It is incumbent upon those who are present to inform those who are absent, because those who are absent might comprehend (what I have said) better than some who are present.
Al-Bukhari and Muslim collected this Hadith.
In a small book collected by Shaykh Alam ad-Din As-Sakhawi, entitled, Al-Mashhur fi Asma’ Al-Ayam wash-Shuhur, he mentioned that;
Muharram is so named because it is a sacred month. To me, it was so named to emphasize its sacredness. This is because the Arabs would switch it around. One year they would say it was a sacred month, the following year they would say that it was not.
The author said, “…and
Safar is so named because they used to leave their homes during that month for fighting and traveling. When saying `Safir’ a place, it means to leave it…
Rabi Al-Awwal is called that because they used to do Irtiba in it, that is to maintain one’s property… and
Rabi Al-Akhir, was so named for the same reasons.
Jumada is called that because the water would dry up (Jamud) then….They say Jumada Al-Uwla and Al-Awwal, or Jumada Al-Akhar or Al-Akhirah.
Rajab comes from Tarjib, meaning to honor.
Shaban because the tribes would separate and return to their homes.
Ramadan was so named because of the severity of the Ramda’ – that is – the heat, and they say that the branch Ramadat when it is thirsty…And the saying that it is a Name of Allah is a mistake, for there is no proof or support for that…”
The Sacred Months
Allah said,
مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ
of them four are sacred.
The Arabs used to consider these months sacred during the time of Jahiliyyah, except for a group of them called Al-Basl, who held eight months of the year to be sacred as way of exaggeration in religion.
The Prophet said,
ثَلَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَان
Three are in succession; Dhul-Qa`dah, Dhul-Hijjah and Muharram, and (the fourth is) Rajab (of (the tribe of) Mudar which comes between Jumada (Ath-Thani)) and Shaban.
The Prophet said “Rajab of Mudar” to attest to the custom of Mudar, in saying that Rajab is the month that is between Jumada and Shaban, not as the tribe of Rabiah thought, that it is between Shaban and Shawwal, which is Ramadan in the present calendar.
The four Sacred Months were made four, three in succession and one alone, so that the Hajj and Umrah are performed with ease.
Dhul-Qadah, the month before the Hajj month, was made sacred because they refrained from fighting during that month.
Dhul-Hijjah, the next month, was made sacred because it is the month of Hajj, during which they performed Hajj rituals.
Muharram, which comes next, was made sacred so that they are able to go back to their areas in safety (after performing Hajj).
Rajab, in the middle of the lunar year, was made sacred so that those coming from the farthest areas of Arabia are able to perform Umrah and visit the House and then go back to their areas safely.
Allah said next,
ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ
That is the right religion,
that is the Straight Law, requiring implementing Allah’s order concerning the months that He made sacred and their true count as it was originally written by Allah.
Allah said,
فَلَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ
so wrong not yourselves therein,
during these Sacred Months, for sin in them is worse than sin in other months.
Likewise, sins in the Sacred City are written multiplied,
وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
and whoever inclines to evil actions therein (in Makkah) or to do wrong, him We shall cause to taste from a painful torment. (22:25)
Similarly, sin in general is worse during the Sacred Months.
Ali bin Abi Talhah narrated that Ibn Abbas said, Allah’s statement,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ
(Verily, the number of months with Allah…), is connected to
فَلَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ
(so wrong not yourselves therein),
“In all (twelve) months. Allah then chose four out of these months and made them sacred, emphasizing their sanctity, making sinning in them greater, in addition to, multiplying rewards of righteous deeds during them.”
Qatadah said about Allah’s statement,
فَلَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ
(so wrong not yourselves therein),
“Injustice during the Sacred Months is worse and graver than injustice in other months. Verily, injustice is always wrong, but Allah makes things graver than others as He will.”
He also said,
“Allah has chosen some of His creation above others. He chose Messengers from angels and from men. He also chose His Speech above all speech, the Masajid above other areas of the earth, Ramadan and the Sacred Months above all months, Friday above the other days and Laylatul-Qadr (The Night of Decree) above all nights.
Therefore, sanctify what Allah has sanctified, for doing so is the practice of people of understanding and comprehension.”
Fighting in the Sacred Months
Allah said,
وَقَاتِلُواْ الْمُشْرِكِينَ كَأفَّةً
and fight against the idolators collectively, (all of you),
كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَأفَّةً
as they fight against you collectively, (all of them),
وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
But know that Allah is with those who have Taqwa,
and know that initiating battle during the Sacred Months is forbidden.
Allah said in other Ayat,
يَـأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُحِلُّواْ شَعَأيِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ
O you who believe! Violate not the sanctity of the symbols of Allah, nor of the sacred month. (5:2)
الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَـتُ قِصَاصٌ فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُواْ عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ
The Sacred Month is for the Sacred Month, and for the prohibited things, there is the law of equality (Qisas). Then whoever transgresses the prohibition against you, you transgress likewise against him. (2:194)
and,
فَإِذَا انسَلَخَ الَاشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ
Then when the Sacred Months have passed, kill the idolators… (9:5)
As for Allah’s statement,
وَقَاتِلُواْ الْمُشْرِكِينَ كَأفَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَأفَّةً
And fight against the idolators collectively as they fight against you collectively,
it includes permission for the believers to fight the idolators in the Sacred Month, if the idolators initiate hostilities therein.
Allah said in other Ayat,
الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَـتُ قِصَاصٌ
The Sacred Month is for the Sacred Month, and for the prohibited things, there is the law of equality (Qisas). (2:194)
and,
وَلَا تُقَـتِلُوهُمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّى يُقَـتِلُوكُمْ فِيهِ فَإِن قَـتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ
And fight not with them at Al-Masjid Al-Haram, unless they (first) fight you there. But if they attack you, then kill them. (2:191)
As for the Messenger of Allah laying siege to At-Ta’if until the Sacred Month started, it was a continuation of the battle against Hawazin and their allies from Thaqif. They started the fighting and gathered their men for the purpose of conducting war. The Messenger of Allah marched to meet them and when they took refuge in At-Ta’if, the Prophet laid siege to them so that they descend from their forts, but they inflicted casualties on Muslims. The siege continued for about forty days, during which a Sacred Month began, and the siege continued for several days in that month. The Messenger broke the siege and went back (to Makkah). So fighting that carries over into it (the Sacred Month) is not the same as initiating warfare during it, Allah knows best.