أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 620)[মুনাফিক কি? ৮ নং বই]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৬১-৬৪ নং আয়াত:-
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ
মুনাফিকেরা সাধারণ লোকজনকে মিথ্যা বলে সন্তুষ্ট করতে চায়।
Hypocrites revert to Lies to please People.
وَ مِنۡہُمُ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ النَّبِیَّ وَ یَقُوۡلُوۡنَ ہُوَ اُذُنٌ ؕ قُلۡ اُذُنُ خَیۡرٍ لَّکُمۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ یُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ رَحۡمَۃٌ لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ رَسُوۡلَ اللّٰہِ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۶۱﴾
তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে প্রত্যেক কথায় কর্ণপাত করে থাকে।’ তুমি বলে দাও, ‘সে কর্ণপাত তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং মুমিনদের (কথাকে) বিশ্বাস করে। আর সে তোমাদের মধ্যে বিশ্বাসী লোকদের জন্য করুণাস্বরূপ। যারা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’
And among them are those who abuse the Prophet and say, “He is an ear.” Say, “[It is] an ear of goodness for you that believes in Allah and believes the believers and [is] a mercy to those who believe among you.” And those who abuse the Messenger of Allah – for them is a painful punishment.
یَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰہِ لَکُمۡ لِیُرۡضُوۡکُمۡ ۚ وَ اللّٰہُ وَ رَسُوۡلُہٗۤ اَحَقُّ اَنۡ یُّرۡضُوۡہُ اِنۡ کَانُوۡا مُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۶۲﴾
তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে থাকে। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রসূল হচ্ছেন বেশী হকদার (এই বিষয়ে) যে, তারা যেন তাঁকে সন্তুষ্ট করে; যদি তারা বিশ্বাসী হয়ে থাকে।
They swear by Allah to you [Muslims] to satisfy you. But Allah and His Messenger are more worthy for them to satisfy, if they should be believers.
اَلَمۡ یَعۡلَمُوۡۤا اَنَّہٗ مَنۡ یُّحَادِدِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ فَاَنَّ لَہٗ نَارَ جَہَنَّمَ خَالِدًا فِیۡہَا ؕ ذٰلِکَ الۡخِزۡیُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۶۳﴾
তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে সুনিশ্চিতভাবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন; সে তাতে অনন্তকাল থাকবে। এটা হচ্ছে চরম লাঞ্ছনা।
Do they not know that whoever opposes Allah and His Messenger – that for him is the fire of Hell, wherein he will abide eternally? That is the great disgrace.
یَحۡذَرُ الۡمُنٰفِقُوۡنَ اَنۡ تُنَزَّلَ عَلَیۡہِمۡ سُوۡرَۃٌ تُنَبِّئُہُمۡ بِمَا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ ؕ قُلِ اسۡتَہۡزِءُوۡا ۚ اِنَّ اللّٰہَ مُخۡرِجٌ مَّا تَحۡذَرُوۡنَ ﴿۶۴﴾
মুনাফিকরা আশংকা করে যে, তাদের (মুসলমানদের) প্রতি এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে পড়ে, যা তাদেরকে সেই মুনাফিকদের অন্তরের কথা অবহিত করে দেবে। তুমি বলে দাও, ‘তোমরা বিদ্রূপ করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বিষয়কে প্রকাশ করেই দিবেন, যে সম্বন্ধে তোমরা আশংকা করছিলে।’
They hypocrites are apprehensive lest a surah be revealed about them, informing them of what is in their hearts. Say, “Mock [as you wish]; indeed, Allah will expose that which you fear.”
৬১-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে পুনরায় মুনাফিকদের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁকে কষ্ট দিয়ে বলে هُوَ أُذُنٌ ‘সে কর্ণপাতকারী।’ অর্থাৎ তাকে যা কিছু বলা হয় সব সত্য বলে মেনে নেয়।
এমনকি আমাদের ব্যাপারে যা কিছু বলা হয় তাও বিশ্বাস করে। আমরা যখন তার কাছে কোন কিছু (মিথ্যা) শপথ করে বলি তাও বিশ্বাস করে। ইবনু আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ ও কাতাদাহ (রাঃ) এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কষ্ট দেয়া যেকোনভাবে হতে পারে- তাঁর আনুগত্য বর্জন করা, তাঁর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করা এবং তাঁকে নিয়ে বিদ্রƒপ ও ব্যঙ্গ করার মাধ্যমেও হতে পারে। যারা এরূপ করবে তাদের জন্য পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(يَحْلِفُوْنَ بِاللّٰهِ)
‘আল্লাহর নামে শপথ করে’কাতাদাহ (রাঃ) বলেন: বর্ণিত আছে যে, এক মুনাফিক বলল: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আমাদের এসব সর্দার ও নেতা খবুই জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ লোক। যদি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কথা সত্যই হতো তবে কি এরা এতই বোকা যে, তাঁর কথা মানতো না? তার এ কথা একজন সাহাবী শুনে ফেলে। তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথাই সত্য। আর যারা তাকে মেনে নিচ্ছে না তারা যে নির্বোধ এতে কোন সন্দেহ নেই। ঐ সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে হাযির হয়ে এ ঘটনাটি বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঐ লোকটিকে ডেকে পাঠান। কিন্তু সে দৃঢ় শপথ করে বলে: আমি এ কথা বলিনি। এ লোকটি আমার ওপর অপবাদ দিচ্ছে। তখন ঐ সাহাবী দু‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি সত্যবাদীকে সত্যবাদীরূপে এবং মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদীরূপে দেখিয়ে দিন। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়। (তাফসীর তাবারী হা: ১৬৯০৬)
(يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ أَنْ تُنَزَّلَ)
‘মুনাফিকেরা ভয় করে..’ এ আয়াতের সদৃশ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا جَا۬ءُوْكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ اللّٰهُ لا وَيَقُوْلُوْنَ فِيْ أَنْفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا اللّٰهُ بِمَا نَقُوْلُ ط حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ ج يَصْلَوْنَهَا ج فَبِئْسَ الْمَصِيْرُ)
“আর তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা তোমাকে এমন শব্দে অভিবাদন করে যার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেননি। আর তারা নিজেরা মনে মনে বলেঃ কেন আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেন না, আমরা যা বলি তার কারণে। তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। সেথায় তারা প্রবেশ করবে। বস্তুতঃ তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!” (সূরা মুজাদালাহ ৫৮: ৮)
তারা যা আশঙ্কা করে আল্লাহ তা‘আলা তা ফাঁস করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ أَنْ لَّنْ يُّخْرِجَ اللّٰهُ أَضْغَانَهُمْ)
“যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করেছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে দেবেন না?” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:২৯)
আমরা একটু লক্ষ করলে দেখতে পাব যে, বারবার আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক করছেন তাদের স্বভাব চরিত্রের কথা তুলে ধরছেন, কারণ তারা মু’মিনদের যত ক্ষতি করবে কাফিররা তত ক্ষতি করবে না। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকা জরুরী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যে কোন উপায়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কষ্ট দেয়া হারাম।
২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পৃথিবীবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ।
৩. যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৪. মুনাফিকদের কুচক্রের কথা আল্লাহ তা‘আলা ফাঁস করে দিয়েছেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মুনাফিকরা নবী (সা.) এর বিরুদ্ধে যেসব দোষারোপ করতো তার মধ্যে একটি ছিল এই যে, তিনি সবার কথা শুনতেন এবং প্রত্যেককে তার নিজের কথা বলার সুযোগ দিতেন। তাদের দৃষ্টিতে এ গুণটি ছিল দোষ। তারা বলতো, তিনি কান পাতলা লোক। যার ইচ্ছা হয়, সেই তার কাছে পৌঁছে যায়, যেভাবে ইচ্ছা তার কান ভরে দেয় এবং তিনি তার কথা মেনে নেন। এ ব্যাপারটির তারা খুব বেশী করে চর্চা করতো। এর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এই যে, সাচ্চা ঈমানদাররা এসব মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র, এদের শয়তানী কাজকারবার ও বিরোধিতাপূর্ণ কথাবার্তার রিপোর্ট নবী (সা.) এর কাছে পৌঁছে দিতেন। এতে এ মুনাফিকরা গোস্বা হয়ে বলতো, আপনি আমাদের মতো সম্মানিত ভদ্র লোকদের বিরুদ্ধে যে কোন কাঙ্গাল-ভিখারীর দেয়া খবরে বিশ্বাস করে বসেন।
* এ দোষারোপের জবাবে একটি ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলা হয়েছে। এর দুটো দিক রয়েছে।
এক, তিনি বিপর্যয়, বিকৃতি ও দুষ্কৃতির কথা শোনার মতো লোক নন। বরং তিনি শুধুমাত্র এমনসব কথায় কান দেন যেগুলোর মধ্যে রয়েছে মঙ্গল ও সুকৃতি এবং উম্মতের কল্যাণ ও দ্বীনের কল্যাণের জন্য যেগুলোতে কান দেয়া শুভ ফলদায়ক।
দুই, তার এমন ধরনের হওয়া তোমাদের জন্যই কল্যাণকর। যদি তিনি প্রত্যেকের কথা না শুনতেন এবং ধৈর্য ও সংযমের সাথে কাজ না করতেন, তাহলে তোমরা ঈমানের যে মিথ্যা দাবী করে থাকো, শুভেচ্ছার, যেসব লোক দেখানো বুলি, আওড়ে যাও এবং আল্লাহর পথ থেকে সটকান দেয়ার জন্য যেসব ঠুনকো ওযর পেশ করে থাকো, সেগুলো ধৈর্য সহকারে শুনার পরিবর্তে তিনি তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করতেন। তার ফলে এ মদীনা শহরে জীবনধারণ করা তোমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়তো। কাজেই তার এ গুণটি তোমাদের জন্য খারাপ নয় বরং ভাল।
* তিনি প্রত্যেকের কথা বিশ্বাস করেন, তোমাদের এ ধারণা ভুল। তিনি যদিও সবার কথাই শোনেন, কিন্তু বিশ্বাস করেন একমাত্র যথার্থ ও সাচ্চা মু’মিনদের কথা। তোমাদের যেসব শয়তানী ও দুষ্কৃতির খবর তার কাছে পৌঁছে গেছে এবং যেগুলো তিনি বিশ্বাস করে ফেলেছেন, সেগুলো দুষ্কৃতিকারী চোগলখোরদের সরবরাহ করা নয় বরং সৎ ঈমানদার লোকেরাই সেগুলো সরবরাহ করেছে এবং সেগুলো নির্ভরযোগ্য।
* তারা নবী (সা.) এর নবুওয়াতে সঠিক অর্থে বিশ্বাসী ছিল না। কিন্তু বিগত আট নয় বছরের অভিজ্ঞতায় তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিল যে, তার কাছে নিশ্চয়ই এমন কোন না কোন অতি প্রাকৃতিক তথ্য-মাধ্যম আছে, যার সাহায্যে তিনি তাদের গোপন কথা জানতে পারেন এবং এভাবে অনেক সময় কুরআনে (যাকে তারা রসূলের নিজের রচনা বলে মনে করতো) তাদের মুনাফিকী ও চক্রান্তসমূহ প্রকাশ করে দেন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা এখানে বলেন যে, মুনাফিকদের একটি দল রয়েছে, তারা বড়ই কষ্টদায়ক। তারা কথার দ্বারা নবী (সঃ)-কে দুঃখ দিয়ে থাকে। তারা বলে“নবী (সঃ) তো সবারই কথায় কর্ণপাত করে থাকেন। তিনি যার কাছে যা শুনেন তাই মেনে নেন। তিনি আমাদের মিথ্যা কসম করে বলার কথাও বিশ্বাস করে নিবেন।” আল্লাহ পাক বলেন, নবী (সঃ)-এর কান খুবই ভাল কান এবং খুব ভালই শুনে থাকেন। কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা তিনি ভালরূপেই জানেন। তিনি আল্লাহর কথা মেনে থাকেন এবং ঈমানদার লোকদের সত্যবাদিতা সম্পর্কেও তিনি পূর্ণ অবহিত। তিনি মুমিনদের জন্যে রহমত স্বরূপ। আর বেঈমান লোকদের জন্যে তিনি আল্লাহর হুজ্জত স্বরূপ। আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
কাতাদা (রঃ) এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে বলেন, বর্ণিত আছে যে, মুনাফিকদের একটি লোক বলে- “আল্লাহর শপথ! আমাদের এসব সর্দার ও নেতা খুবই জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ লোক। যদি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কথা সত্যই হতো তবে কি এরা এতই বোকা যে, তা মানতে না?” তার এ কথা আঁটি মুসলিম সাহাবী শুনতে পান। তিনি তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেনঃ “আল্লাহ কসম! রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সব কথাই সত্য। আর যারা তাকে মেনে নিচ্ছে না তারা যে নির্বোধ এতে কোন সন্দেহ নেই।” ঐ সাহাবী নবী (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ লোকটিকে (মুনাফিক) ডেকে পাঠান। কিন্তু সে শক্ত কসম করে বলে- “আমি তো এ কথা বলিনি। এ লোকটি আমার উপর অপবাদ দিচ্ছে। তখন ঐ সাহাবী দুআ করেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি সত্যবাদীকে সত্যবাদীরূপে এবং মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদীরূপে দেখিয়ে দিন!” তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ পাক বলেন, তাদের কি এ কথা জানা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণকারী চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে? সেখানে তারা অপমানজনক শাস্তি ভোগ করবে। এর চেয়ে বড় লাঞ্ছনা ও দুর্ভাগ্য আর কি হবে?
কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তারা (মুনাফিকরা) পরস্পর আলাপ আলোচনা করতো, কিন্তু সাথে সাথে এ আশংকাও করতো যে, না জানি আল্লাহ তাআলা হয়তো অহীর মারফত মুসলিমদেরকে তাদের গুপ্ত কথা জানিয়ে দিবেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ “(হে নবী)! যখন তারা (মুনাফিকরা) তোমার কাছে আগমন করে তখন তোমাকে এমনভাবে সম্বোধন করে যেভাবে আল্লাহ তোমাকে সম্বোধন করেন না, অতঃপর তারা মনে মনে বলে- আমরা যা বলছি তার কারণে আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছে না কেন? (এই মুনাফিকদের জেনে রাখা উচিত যে,) জাহান্নামই তাদের জন্যে যথেষ্ট, ওর মধ্যে তারা প্রবেশ করবে, আর ওটা খুবই নিকৃষ্ট স্থান। এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মুনাফিকরা! তোমরা মুসলিমদের অবস্থার উপর মন খুলে উপহাসমূলক কথা বলে নাও। কিন্তু জেনে রেখো যে, তোমাদের মনের সমস্ত গুপ্ত কথা আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন। আরো স্মরণ রেখো যে, একদিন তোমরা লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবেই। যেমন আল্লাহ পাক আর এক জায়গায় বলেনঃ “অন্তরে ব্যাধিযুক্ত এই লোকগুলো কি ধারণা করেছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের শক্রতাকে কখনো প্রকাশ করবে না? আর হে নবী (সঃ)! আমি যদি ইচ্ছা করতাম তবে তোমাকে তাদের পূর্ণ পরিচয় বলে দিতাম, তখন তুমি তাদেরকে তাদের আকৃতি দ্বারাই চিনতে পারতে, তবে তুমি তাদেরকে তাদের কথার ধরনে অবশ্যই চিনতে পারবে; আর আল্লাহ তোমাদের সকলের কার্যাবলী অবগত আছেন। এ জন্যেই কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এই সূরারই নাম হচ্ছে “সূরায়ে ফাযিহাহ্। কেননা, এই সূরায় মুনাফিকদের মুখোশ খুলে দেয়া হয়েছে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
* ইবনে আব্বাস বলেন, নবতাল ইবনুল হারেস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বসত। তারপর সেখানে যা শুনত তা মুনাফিকদের কাছে পাচার করত। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অর্থাৎ সে তাদের কাছে গিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে বলেছিল যে, তিনি কান কথা বেশী শুনেন। তিনি সবার কথা শুনেন। [তাবারী] অথবা তারা বলতে চেয়েছিল যে, আমরা যা বলছি তা যদি মুহাম্মাদের কানে যায়, তারপরও কোন অসুবিধা নেই, কারণ তার কাছে গিয়ে ওজর পেশ করব। আর তিনি সব কথাই শুনে থাকেন। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। এভাবে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এমন খারাপ মন্তব্য করতে লাগল যে, তিনি সত্য-মিথ্যা ও ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম নন। অথচ তিনি তাদের হিদায়াতের জন্যই প্রেরিত। এটা নিঃসন্দেহে রাসূলকে কষ্ট দেয়া। [সা’দী] আল্লাহ্ তা’আলা তার জবাবে বললেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল কথা শুনেন। তার কথাগুলো ঈমানদারদের জন্য কল্যাণকর। তিনি আল্লাহর উপর ঈমান রাখেন এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করেন। [তাবারী] শানকীতী বলেন, আয়াতে সে সমস্ত লোকদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত ও তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সেখানে এসেছে, “নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি” [সূরা আল-আহযাবঃ ৫૧]
* কাতাদা বলেন, মুনাফিকদের এক লোক বলেছিল যে, যদি মুহাম্মদ যা বলে তা সত্য হয় তবে তারা গাধার চেয়েও অধম ৷ একথা শুনে মুসলিমদের এক ব্যক্তি বলল যে, আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ যা বলে তা সত্য, আর তুমি গাধার চেয়েও অধম। মুসলিম লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঘটনাটি জানাল। তিনি মুনাফিকটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে, এ কথাটি তুমি কেন বলেছ? সে লা’নত দিতে লাগল এবং আল্লাহর নামে শপথ করে বলল যে, সে তা বলেনি। তখন মুসলিম লোকটি বলল, হে আল্লাহ! আপনি সত্যবাদীকে সত্যায়ন করুন আর মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করুন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবন কাসীর]
* অর্থাৎ তারা তোমাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ করে সন্তুষ্ট করতে চায়। অথচ তাদের উচিত ঈমান এনে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সন্তুষ্ট করবে। [মুয়াসসার] কারণ একজন মুমিনের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সন্তুষ্ট করা। মুমিন এর উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেয় না। তারা যেহেতু সেটা করছে না সেহেতু প্রমাণিত হলো যে, তারা ঈমানদার নয়। [সা’দী]
* তারা যেহেতু রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে, মুমিনদের কাছে মিথ্যা শপথ করে তাদেরকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করছে, সুতরাং তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতায় নেমেছে। আর যারাই আল্লাহ্ তা’আলা ও তার রাসূলের বিরোধিতায় নামে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। আর তা ‘নিঃসন্দেহে লাঞ্ছিত জীবন। [সা’দী; মুয়াসসার]
*আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে জানাচ্ছেন যে, মুনাফিকরা এ ভয়ে থাকে যে, কখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সূরা নাযিল হয়ে তাদের অপমানিত করবে, তাদের মনের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করে দিবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা দিলেন যে, তারা যতই গোপন করুক না কেন আল্লাহ তা অবশ্যই বের করে দেবেন। [আদওয়াউল বায়ান] মুজাহিদ বলেন, তারা নিজেদের মধ্যে কোন কথা বলে তারপর ভাবতে থাকে যে, এমনও তো হতে পারে যে, আল্লাহ আমাদের এ গোপন কথা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন? কাতাদা বলেন, তাদের মনের গোপন কথাগুলো বলে দিয়ে আল্লাহ তাদেরকে অপমানিত করলেন। আর এ জন্যই এ সূরার অপর নাম আল-ফাদিহা বা অপদস্থকারী বা অপমানকারী [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও তাদের এ আশঙ্কার কথা আল্লাহ জানিয়েছেন। যেমন, “যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ কখনো তাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন না, আর আমরা ইচ্ছে করলে আপনাকে তাদের পরিচয় দিতাম; ফলে আপনি তাদের লক্ষণ দেখে তাদেরকে চিনতে পারতেন। তবে আপনি অবশ্যই কথার ভংগিতে জানেন ” [সূরা মুহাম্মাদ: ২৯-৩০] অন্য আয়াতে তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত ভাবের কথা অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। “তারা যে কোন আওয়াজকেই তাদের বিরুদ্ধে মনে করে ” [সূরা আল-মুনাফিকুন:৪]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
এখানে পুনরায় মুনাফিক্বদের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। নবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে এক অশালীন আচরণ প্রদর্শন করে বলতে লাগল যে, সে বড় কান-পাতলা! অর্থাৎ, সে প্রত্যেকের (প্রত্যেক) কথা শোনে (ও মেনে) নেয়। (সম্ভবতঃ নবী (সাঃ)-এর সহনশীলতা, দয়া, ক্ষমাশীলতা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার দেখে তাদের এ ব্যাপারে ধোকা হয়েছিল।) আল্লাহ তাআলা বললেন, না! আমার পয়গম্বর মন্দ ও অশান্তির কোন কথা শোনে না। যা শোনে তা তোমাদের জন্য মঙ্গলদায়ক এবং ভাল। (যেমন তোমরা মিথ্যা কসম খেয়ে ও মিথ্যা ওজর পেশ করে তার কাছে ক্ষমা চাইলে সে তোমাদের মুখের কথা শুনে ক্ষমা করে দেয়। আর এটা তোমাদের জন্য অবশ্যই উত্তম।)
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 61-64
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ
Hypocrites revert to Lies to please Peoples.
Hypocrites annoy the Prophet
Allah says,
وَمِنْهُمُ الَّذِينَ يُوْذُونَ النَّبِيَّ وَيِقُولُونَ
And among them are men who annoy the Prophet and say:
Allah says, some hypocrites bother the Messenger of Allah by questioning his character, saying,
هُوَ أُذُنٌ
he is (lending his) ear,
to those who say anything about us; he believes whoever talks to him. Therefore, if we went to him and swore, he would believe us.
Similar was reported from Ibn Abbas, Mujahid and Qatadah.
Allah said,
قُلْ أُذُنُ خَيْرٍ لَّكُمْ
Say:”He listens to what is best for you,”
he knows who’s saying the truth and who is lying,
يُوْمِنُ بِاللّهِ وَيُوْمِنُ لِلْمُوْمِنِينَ
he believes in Allah; has faith in the believers,
he believes the believers,
وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ امَنُواْ مِنكُمْ
and is a mercy to those of you who believe,”
and a proof against the disbelievers,
وَالَّذِينَ يُوْذُونَ رَسُولَ اللّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
But those who annoy Allah’s Messenger, will have a painful torment.
Hypocrites revert to Lies to please People
Allah says;
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ وَاللّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَن يُرْضُوهُ إِن كَانُواْ مُوْمِنِينَ
They swear by Allah to you (Muslims) in order to please you, but it is more fitting that they should please Allah and His Messenger, if they are believers.
Qatadah said about Allah’s statement,
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ
(They swear by Allah to you (Muslims) in order to please you),
“A hypocrite man said, `By Allah! They (hypocrites) are our chiefs and masters. If what Muhammad says is true, they are worse than donkeys.’
A Muslim man heard him and declared, `By Allah! What Muhammad says is true and you are worse than a donkey!’
The Muslim man conveyed what happened to the Prophet who summoned the hypocrite and asked him,
مَا حَمَلَكَ عَلَى الَّذِي قُلْتَ
What made you say what you said?
That man invoked curses on himself and swore by Allah that he never said that.
Meanwhile, the Muslim man said, `O Allah! Assert the truth of the truthful and expose the lies of the liar.’
Allah revealed this Verse.”‘
Allah’s statement.
أَلَمْ يَعْلَمُواْ أَنَّهُ مَن يُحَادِدِ اللّهَ وَرَسُولَهُ
Know they not that whoever opposes and shows hostility to Allah and His Messenger,
means, have they not come to know and realize that those who defy, oppose, wage war and reject Allah, thus becoming on one side while Allah and His Messenger on another side,
فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا
certainly for him will be the fire of Hell to abide therein,
in a humiliating torment,
ذَلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ
That is the extreme disgrace.
that is the greatest disgrace and the tremendous misery.
The Hypocrites fear Public Exposure of Their Secrets
Allah tells;
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّيُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِم
The hypocrites fear lest a Surah should be revealed about them, showing them what is in their hearts.
Mujahid said,
“The hypocrites would say something to each other then declare, `We wish that Allah does not expose this secret of ours,”
There is a similar Ayah to this one, that is, Allah’s statement,
وَإِذَا جَأءُوكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ اللَّهُ وَيَقُولُونَ فِى أَنفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا اللَّهُ بِمَا نَقُولُ حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَا فَبِيْسَ الْمَصِيرُ
And when they come to you, they greet you with a greeting wherewith Allah greets you not, and say within themselves:”Why should Allah punish us not for what we say!”
Hell will be sufficient for them; they will burn therein. And worst indeed is that destination! (58:8)
Allah said in this Ayah,
قُلِ اسْتَهْزِوُواْ إِنَّ اللّهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُونَ
Say:”(Go ahead and) mock! But certainly Allah will bring to light all that you fear.”
He will expose and explain your reality to His Messenger through revelation.
Allah said in other Ayat,
أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ مَّرَضٌ أَن لَّن يُخْرِجَ اللَّهُ أَضْغَـنَهُمْ
وَلَوْ نَشَأءُ لَارَيْنَـكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُم بِسِيمَـهُمْ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِى لَحْنِ الْقَوْلِ
Or do those in whose hearts is a disease, think that Allah will not expose their ill-wills?
Had We so willed, We could have shown them clearly to you, so that you would know them by their marks; but you will know them by the tone of their speech! (47:29-30)
This is why, according to Qatadah, this Surah is called `Al-Fadihah’ (the Exposing), because it exposed the hypocrites.