(Book# 621)[মুনাফিক‌ কি? ৯ নং বই‌‌ ]

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

(Book# 621)[মুনাফিক‌ কি? ৯ নং বই‌‌ ]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৬৫- ৬৬ নং আয়াত:-
لَا تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ
তোমরা ওজর পেশ করো না। তোমরা তোম ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।
Make no excuse; you disbelieved after you had believed.
وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰہِ وَ اٰیٰتِہٖ وَ رَسُوۡلِہٖ کُنۡتُمۡ تَسۡتَہۡزِءُوۡنَ ﴿۶۵﴾
আর আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমর তো আলাপ-আলোচনা ও খেলা-তামাশা করছিলাম।‘ বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্‌, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে ?’
And if you ask them, they will surely say, “We were only conversing and playing.” Say, “Is it Allah and His verses and His Messenger that you were mocking?”

لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ کَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِکُمۡ ؕ اِنۡ نَّعۡفُ عَنۡ طَآئِفَۃٍ مِّنۡکُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَۃًۢ بِاَنَّہُمۡ کَانُوۡا مُجۡرِمِیۡنَ ﴿٪۶۶﴾
‘তোমরা ওজর পেশ করো না। তোমরা তোম ঈমান আনার পর কুফরী করেছ। আমরা তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব—কারণ তারা অপরাধী।
Make no excuse; you have disbelieved after your belief. If We pardon one faction of you – We will punish another faction because they were criminals.

৬৫-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

শানে নুযূল:

ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: তাবুক যুদ্ধে এক বৈঠকে জনৈক ব্যক্তি বলল: আমাদের এসব ক্বারীদের মত অধিক পেটুক ও অধিক মিথ্যুক এবং শত্রুদের সাথে মুখোমুখীর সময় এরূপ কাপুরুষ আর দেখিনি। (এ দ্বারা সাহাবায়ে কিরাম ও নাবী (সাঃ) উদ্দেশ্য নেয় )।

জনৈক সাহাবী বললেন: তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি একজন মুনাফিক। অবশ্যই আমি এ কথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জানিয়ে দেব। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছার পূর্বেই এ আয়াত নাযিল হয়। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন: আমি লোকটিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উটনীর লাগাম ধরে পাথরের সাথে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে চলতে দেখলাম। আর সে বলছিল: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমরা এসব কথা দ্বারা খোশগল্প ও খেল-তামাশা করছিলাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে: আমরা রাস্তা অতিক্রম করার জন্য এসব কথা বলছিলাম। (তাফসীর তাবারী, ১৬৯১২, ইমাম মুসলিম সহীহ মুসলিমে ও ইমাম বুখারী তার তারিখে বর্ণনা করেছেন।)

আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা কুফরী। কখনো একজন মুসলিম এসব কাজ করতে পারে না এবং মেনেও নিতে পারে না।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যা নাযিল করেছেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল যা শরীয়তসিদ্ধ করেছেন তা কেউ অপছন্দ করলে কাফির হয়ে যাবে। তাই কেউ সালাত, যাকাত বা সিয়াম বা হজ্ব অথবা একাধিক বিবাহের শরয়ী প্রবর্তনকে অপছন্দ বা ঘৃণা করলে কাফির হয়ে যাবে। এটা ঈমানের বিপরীত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলকে ভালবাসা আবশ্যক। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলকে ভালবাসবে না সে কাফির। সকল কিছুর ওপর আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন অথবা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কিতাব আকারে যা নিয়ে এসেছেন তা কেউ ঘৃণা করলে বা অপছন্দ করলে অথবা আল্লাহকে বা আল্লাহ ও রাসূল এবং ধর্মের কোন বিধান নিয়ে ঠাট্টা করলে কাফির-মুরতাদ হয়ে যাবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(ذٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ)‏

কারণ, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করছে; তাই আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৯)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অথবা ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফরী কাজ।
২. যারা এরূপ কাজ করবে তাদের কোন ওজর গ্রহণ করা হবে না। হয় তাওবাহ করবে অথবা তরবারী দ্বারা হত্যা করা হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
তাবুকের যুদ্ধের সময় মুনাফিকরা প্রায়ই তাদের আসরগুলোয় বসে নবী (সা.) ও মুসলমানদের নিয়ে হাসি-তামাসা ও বিদ্রূপ করতো। এভাবে তারা যাদেরকে সদুদ্দেশ্যে জিহাদ করতে প্রস্তুত দেখাতো নিজেদের বিদ্রূপ পরিহাসের মাধ্যমে তাদেরকে হিম্মাতহারা করার চেষ্টা করতো। হাদীসে এ ধরনের লোকদের বহু উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে। যেমন এক মাহফিলে কয়েক জন মুনাফিক বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদের একজন বললো, আরে এ রোমানদেরকেও কি তোমরা আরবদের মতো মনে করেছো? কালকে দেখে নিও এ যেসব বীর বাহাদুর লড়তে এসেছেন এদের সবাইকে রশি দিয়ে বেধে রাখা হবে। দ্বিতীয় জন বললো, মজা হবে তখন যখন একশটি করে চাবুক মারার নির্দেশ দেয়া হবে। আরেক মুনাফিক নবী (সা.) কে যুদ্ধ প্রস্তুতিতে বিপুলভাবে কর্মতৎপর দেখে নিজের ইয়ার বন্ধুদের বললোঃ উনাকে দেখো উনি রোমও সিরিয়ার দুর্গ জয় করতে চলেছেন।

বুদ্ধি সম্পন্ন ভাঁড়দেরকে তো তবুও মাফ করে দেয়া যেতে পারে। কারণ তারা হয়েতো এ ধরনের কথা শুধু এ জন্য বলে যাচ্ছে যে, তাদের কাছে দুনিয়ার কোন জিনিসেরই কোন গুরুত্ব নেই। সব কিছুতেই তারা হালকা নজরে দেখে। কিন্তু যারা জেনে-বুঝে নিজেদের ঈমানের দাবী সত্ত্বেও শুধুমাত্র রসূলকে এবং তিনি যে দ্বীন এনেছেন তাকে হাস্য সম্পদ মনে করার কারণেই একথা বলে থাকে এবং যাদের বিদ্রূপের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদারদের হিম্মাত ও সাহস যেন নিস্তেজ হয়ে যায় এবং তারা যেন পূর্ণ শক্তিতে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে না পারে। এরূপ অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত যারা তাদেরকে তো কোন ক্রমেই ক্ষমা করা যেতে পারে না। কারণ তারা ভাঁড় নয়, তারা অপরাধী।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৬৫-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর:

আবূ মা’শার আল মাদীনী (রঃ) মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কারাযী (রঃ) প্রমুখ হতে বর্ণনা করেছেন, তাঁরা বলেছেন যে, মুনাফিকদের মধ্যকার একটি লোক বলে- “আমাদের এই কুরআন পাঠকারী লোকদেরকে দেখি যে, তারা আমাদের মধ্যে বড় পেটুক, বড় মিথ্যাবাদী এবং যুদ্ধের সময় বড়ই কাপুরুষ।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এর আলোচনা হলে লোকটি তার কাছে এমন এক সময় আগমন করে যখন তিনি স্বীয় উস্ত্রীর উপর সওয়ার হয়ে কোন জায়গায় যাচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলে- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা শুধু হাসি তামাসা করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমরা আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সাথে তামাসা করছিলে” ঐ মুনাফিক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর তরবারীর উপর হাত রেখে পাথরের সাথে টক্কর খেতে খেতে তার সাথে সাথে চলছিল এবং ঐ কথা বলতেছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার দিকে চেয়েও দেখছিলেন না। যে মুসলিম তার এই কথা শুনছিলেন। তিনি তখনই তার কথার উত্তর দিয়ে বলছিলেনঃ “তুমি যা বলছো মিথ্যা বলছে। তুমি তো একজন মুনাফিক।” এটা হচ্ছে তাবুকের যুদ্ধের ঘটনা। তিনি মুনাফিক লোকটিকে মসজিদে এ কথা বলেছিলেন।

সীরাতে ইবনে ইসহাকে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাবুকের উদ্দেশ্যে গমন করছিলেন সেই সময় তাঁর সাথে মুনাফিকদের একটি দলও ছিল। তাদের মধ্যে ওয়াদীয়া ইবনে সাবিত এবং মাখশী ইবনে হুমাইর প্রমুখও ছিল। তারা পরস্পর বলতে বলতে যাচ্ছিলঃ “খ্রীষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করাকে আরবদের পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করার ন্যায় মনে করা চরম ভুল। আল্লাহর কসম! আগামীকাল আমরা খ্রীষ্টানদের কাছে মুসলিমদের মার খাওয়া দেখবো এবং দুরে দূরে থেকে আনন্দ উপভোগ করবো।” তার একথা শুনে তাদের অন্য নেতা মাখশী বললোঃ “এসব কথা বলো না, নতুবা এর বর্ণনা কুরআন কারীমে এসে যাবে। আল্লাহর কসম! এতে অপমানিত হওয়া অপেক্ষা আমার কাছে এটাই বেশী পছন্দনীয় যে, আমাদের প্রত্যেককে একশ চাবুক মারা হবে। আগে আগে এ লোকগুলো এসব কথা বলতে বলতে চলছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)-কে বললেনঃ “দেখো! এ লোকগুলো জ্বলে পুড়ে মরছে। তুমি গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, তারা কি আলোচনা করছিল। যদি তারা অস্বীকার করে তবে তুমি তাদেরকে বলবে, তোমরা এরূপ এরূপ বলছো।” আম্মার (রাঃ) তাদের কাছে গিয়ে একথা বললে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে ওর পেশ করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর সওয়ারীর উপর উপবিষ্ট ছিলেন এমতাবস্থায় ওয়াদীয়া ইবনে সাবিত তাঁর সওয়ারীর লাগাম ধরে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা শুধু হাসি তামাসা করছিলাম।” আর মাখশী ইবনে হুমাইর বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার পিতার নামের প্রতি লক্ষ্য করুন। এ কারণেই আমার মুখ দিয়ে এরূপ বাজে ও নির্বুদ্ধিতার কথা বেরিয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করা হাক!” আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করেও দেন। আর এ আয়াতে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার বর্ণনাও রয়েছে। এরপরে সে তার নাম পরিবর্তন করে আবদুর রহমান রাখে এবং খাঁটি মুসলিম হয়ে যায়। অতঃপর সে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে যে, যেন তাকে শহীদরূপে হত্যা করা হয় এবং তার স্থান অজানা থাকে। এরপর ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি শহীদ হন এবং তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।

এই আয়াত সম্পর্কে কাতাদা (রঃ) বলেন যে, নবী (সঃ) তাবুকের যুদ্ধে গমন করছিলেন এবং মুনাফিকদের একটি দল তার আগে আগে চলছিল। তারা পরস্পর বলাবলি করছিলঃ “দেখো! এ ব্যক্তি (নবী সঃ) ধারণা করছেন যে, তিনি রোমের প্রাসাদ ও দুর্গ জয় করে নিবেন। এটা তো বহু দুরের কথা!” তাদের। এই উক্তি নবী (সঃ)-এর কাছে প্রকাশ করে দেয়া হয়। তিনি তাদেরকে ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ “তোমরা কি এসব কথা বলেছিলে?” তারা তখন শপথ করে করে বলে যে, তারা শুধু হাসি তামাসা করছিল। তবে তাদের মধ্যে একটি লোক, যাকে হয়তো আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে থাকবেন, বলেঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার পাক কালামের একটি আয়াত শুনতে পাচ্ছি, যাতে আমার পাপ কার্যের বর্ণনা রয়েছে, যখনই তা শুনি তখনই আমার গায়ের পশম খাড়া হয়ে যায় এবং ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার তাওবা কবূল করুন এবং আমাকে আপনার পথে এমনভাবে শহীদ করুন যে, না কেউ আমাকে গোসল দেয়, না কাফন পরায়, না দাফন করে।” ইয়ামামার যুদ্ধে এ ঘটনাই ঘটে যায়। এ লোকটি শহীদদের সাথে শাহাদাত বরণ করেন। সমস্ত শহীদের মতদেহ পাওয়া যায় । কিন্তু এ লোকটির মতদেহের কোন পাত্তা পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য মুনাফিকদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জবাব দেয়া হচ্ছেএখন তোমরা কোন বাজে ওযর করো না। যদিও তোমরা মুখে ঈমানদার ছিলে, কিন্তু এখন ঐ মুখেই তোমরা কাফির হয়ে গেলে। এটা হচ্ছে কুফরী কালেমা যে, তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সঃ) এবং কুরআন কারীমের সাথে হাসি তামাসা করবে। আমি যদি কাউকে ক্ষমা করেও দেই, তবুও জেনে রেখো যে, সকলের সাথে এরূপ ব্যবহার করা হবে না। তোমাদের এই অপরাধ, এই জঘন্য পাপ এবং কুফরী কালেমার শাস্তি তোমাদেরকে ভোগ করতেই হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* মুনাফিক্বরা আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিদ্রূপ করত। মু’মিনদের সাথে ঠাট্টা-ব্যঙ্গ করত। এমনকি রসূল (সাঃ) সম্বন্ধেও অসভ্য কথা বলা হতেও বিরত থাকত না। যার খবর কোন না কোনভাবে কিছু মুসলিম এবং পরে রসূল (সাঃ)-এর কাছে পৌঁছে যেত। কিন্তু যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হত তখন পরিষ্কারভাবে বাহানা বের করত আর বলত যে, আমরা এমনি আপোসে হাসি-মজাক করছিলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, হাসি-মজাকের জন্য তোমাদের সামনে (সব বাদ দিয়ে কেবল) আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তাঁর রসূলই ছিলেন? উদ্দেশ্য এই যে, যদি উদ্দেশ্য আপোসে হাসি-মজাক করাই হত তাহলে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ ও রসূল তার মাঝে কেন আসত? এটা নিঃসন্দেহে তোমাদের সেই কূট আচরণ ও কপটতার বহিঃপ্রকাশ, যা আমার আয়াত ও পয়গম্বরের প্রতি তোমাদের অন্তরে লুক্কায়িত রয়েছে।

[১] অর্থাৎ, তোমরা যে ঈমান প্রকাশ করে আসছিলে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করার পর তার কোন মূল্য বাকী থাকল না। প্রথমতঃ সে ঈমানের ভিত্তিও মুনাফিক্বী ছিল। তবুও এরই অসীলায় প্রকাশ্যভাবে তোমরা মুসলিমদের মধ্যে পরিগণিত হতে। কিন্তু এখন সেখানেও কোন ঠাঁই নেই।

[২] এ থেকে উদ্দেশ্য এমন লোক যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে নিয়েছে এবং খাঁটি মুসলমান হয়ে গেছে।

[৩] এরা সেই লোক যাদের তওবা করার তওফীক ভাগ্যে জোটেনি এবং কুফরী ও মুনাফিক্বীর উপর অটল থেকেছে। এই জন্য এই শাস্তির কারণও বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা পাপিষ্ঠ ও অপরাধী ছিল।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

যায়দ ইবন আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক মুনাফিক আওফ ইবন মালিককে তাবুকের যুদ্ধে বলে বসল: আমাদের এ কারীসাহেবগণ (রাসূল ও সাহাবায়ে কিরামদেরকে মুনাফিকদের পক্ষ থেকে উপহাস করে দেয়া নাম) উদরপূর্তির প্রতি বেশী আগ্রহী, কথাবাতায় মিথ্যাচার, আর শক্রর সামনে সবচেয়ে ভীরু। তখন আওফ ইবন মালিক বললেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি মুনাফিক, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা জানাব। আওফ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানাতে গেলে দেখতে পেলেন কুরআন তার আগেই সেটা জানিয়েছে। যায়দ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমর বলেন, তখন আমি ঐ মুনাফিক লোকটিকে দেখতে পেলাম যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উষ্ট্রীর পেছনের দিকে ঝুলে ছিল, পাথর তার উপর ছিটে এসে পড়ছিল, সে বলছিল, আমরা তো কেবল আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম’। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলছিলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলকে নিয়ে বিদ্রুপ করছিলে?’ [তাবারী]
ইকরিমা বলেন, মুনাফিকদের একজনকে আল্লাহ্‌ তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক ক্ষমা করলে সে বলল, হে আল্লাহ! আমি একটি আয়াত শুনতে পাই যাতে আমাকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যা আমার চামড়া শিহরিত করে এবং অন্তরে আঘাত করে। হে আল্লাহ! সুতরাং আমার মৃত্যু যেন আপনার রাহে শাহাদাতের মাধ্যমে হয়। কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমি অমুককে গোসল দিয়েছি, তাকে কাফন দিয়েছি, তাকে দাফন করেছি। ইকরিমা বলেন, সে ইয়ামামাহ এর যুদ্ধে মারা গেল, কিন্তু অন্যান্য মুসলিমদের লাশ পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায় নি। [ইবন কাসীর]

Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 65-66

لَا تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ

Make no excuse; you disbelieved after you had believed.
The Hypocrites rely on False, Misguided Excuses

Allah said,

وَلَيِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللّهِ وَايَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِوُونَ

If you ask them (about this), they declare:”We were only talking idly and joking.”

Say:”Was it at Allah, and His Ayat and His Messenger that you were mocking!”

Abdullah bin Umar said,

“During the battle of Tabuk, a man was sitting in a gathering and said, `I have never seen like these reciters of ours! They have the hungriest stomachs, the most lying tongues and are the most cowardice in battle.’

A man in the Masjid said, `You lie. You are a hypocrite, and I will surely inform the Messenger of Allah.’

This statement was conveyed to the Messenger of Allah and also a part of the Qur’an was revealed about it.”‘

Abdullah bin Umar said,

“I have seen that man afterwards holding onto the shoulders of the Messenger’s camel while stones were falling on him, declaring, `O Allah’s Messenger! We were only engaged in idle talk and jesting,’ while the Messenger of Allah was reciting,

أَبِاللّهِ وَايَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِوُونَ

‘Was it at Allah, and His Ayat and His Messenger that you were mocking.”‘

Allah said.

لَا تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ

Make no excuse; you disbelieved after you had believed.

on account of your statement and mocking,

إِن نَّعْفُ عَن طَأيِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَأيِفَةً

If We pardon some of you, We will punish others among you,

for not all of you will be forgiven, some will have to taste the torment,

بِأَنَّهُمْ كَانُواْ مُجْرِمِينَ

 

because they were criminals,

they were criminals because of this terrible, sinful statement.

Leave a Reply