(Book# 630)[মুনাফিক কি?১৭ নং ‌বই] {‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..} www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

(Book# 630)[মুনাফিক কি?১৭ নং ‌বই] {‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..}
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৮৬-৯০ নং আয়াত:-
أُولُوا الطَّوْلِ

‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..
Those of wealth among them…

وَ اِذَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَۃٌ اَنۡ اٰمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَ جَاہِدُوۡا مَعَ رَسُوۡلِہِ اسۡتَاۡذَنَکَ اُولُوا الطَّوۡلِ مِنۡہُمۡ وَ قَالُوۡا ذَرۡنَا نَکُنۡ مَّعَ الۡقٰعِدِیۡنَ ﴿۸۶﴾
আর ‘আল্লাহ্‌ প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলের সঙ্গী হয়ে জিহাদ কর’—এ মর্মে যখন কোন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের মধ্যে যাদের শক্তিসামর্থ্য আছে তারা আপনার কাছে অব্যাহতি চায় এবং বলে, ‘আমাদেরকে রেহাই দিন, যারা বসে থাকে আমরা তাদের সাথেই থাকব।‘
And when a surah was revealed [enjoining them] to believe in Allah and to fight with His Messenger, those of wealth among them asked your permission [to stay back] and said, “Leave us to be with them who sit [at home].”

رَضُوۡا بِاَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَ طُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ فَہُمۡ لَا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۸۷﴾

তারা অন্তঃপুর বাসিনীদের সাথে অবস্থান করাই পছন্দ করেছে এবং তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দেয়া হলো; ফলে তারা বুঝতে পারে না।
They were satisfied to be with those who stay behind, and their hearts were sealed over, so they do not understand.

لٰکِنِ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ جٰہَدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡخَیۡرٰتُ ۫ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۸۸﴾
কিন্তু রাসূল এবং যারা তাঁরা সাথে ঈমান এনেছে তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করেছে; আর তারা তাদের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম।
But the Messenger and those who believed with him fought with their wealth and their lives. Those will have [all that is] good, and it is those who are the successful.

اَعَدَّ اللّٰہُ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿٪۸۹﴾
আল্লাহ্‌ তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যারা নিচে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা স্থায়ী হবে; এটাই মহাসাফল্য।
Allah has prepared for them gardens beneath which rivers flow, wherein they will abide eternally. That is the great attainment.
وَ جَآءَ الۡمُعَذِّرُوۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ لِیُؤۡذَنَ لَہُمۡ وَ قَعَدَ الَّذِیۡنَ کَذَبُوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ سَیُصِیۡبُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۹۰﴾
আর মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক অজুহাত পেশ করতে আসল যেন এদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছিল, তারা বসে রইল, তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে অচিরেই তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাবে।

And those with excuses among the bedouins came to be permitted [to remain], and they who had lied to Allah and His Messenger sat [at home]. There will strike those who disbelieved among them a painful punishment.

৮৬-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

যারা শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে নানা অজুহাত দেখিয়ে জিহাদে শরীক হয় না তাদেরকে এ আয়াতগুলোতে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করা হচ্ছে। এরাও পূর্বে আলোচিত মুনাফিকদের দলে।

(أُولُوا الطَّوْلِ)

‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক।

خوالف শব্দটি خالفة এর বহুবচন। অর্থ পিছনে থাকা নারীগণ। অর্থাৎ নারীরা যেমন ঘরে বসে থাকে মুনাফিকরাও জিহাদে না গিয়ে ঘরে বসে থাকে। এসব অমার্জনীয় অপরাধের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মু’মিনগণ তাদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে থাকে, কখনো অজুহাত পেশ করে না। তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তৈরি করে রেখেছেন নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।

(وَجَاءَ الْمُعَذِّرُوْنَ مِنَ الْأَعْرَابِ)

‘মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক অজুহাত পেশ করতে আসল’আয়াতে উল্লিখিত অজুহাত পেশকারী কারা? এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন: এরা শহর থেকে দূরে বসবাসকারী ঐ সমস্ত লোক যারা মিথ্যা ওজর পেশ করে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। এদের দ্বিতীয় প্রকার ছিল তারা, যারা এসে ওজর পেশ করার কোন প্রয়োজন মনে না করেই বসে রইল। আলোচ্য আয়াতে মুনাফিকদের উক্ত দুই শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যারা সত্য ও সঠিক ওজর পেশ করে অনুমতি নিয়েছিল।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ইসলামী শরীয়তের উৎস দু’টি: কুরআন ও সুন্নাহ।
২. শরীয়তসম্মত প্রয়োজনে যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি চাওয়া জায়েয।
৩. সামর্থ থাকা সত্ত্বেও জিহাদে অংশ গ্রহণ না করা হরাম।
৪. জানমাল দ্বারা জিহাদ করার ফযীলত জানলাম।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

 

এখানে আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদের কটাক্ষ করছেন যারা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জিহাদে না গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকে এবং আল্লাহর নির্দেশ শোনার পরেও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে বাড়ীতে থাকার অনুমতি প্রার্থনা করে। তারা এতই নিষ্ক্রিয় যে, নারীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। সেনাবাহিনী অভিযানে বের হয়ে পড়েছে, অথচ তারা অন্তঃপুরবাসিনী মহিলাদের মত পিছনে রয়ে গেছে। যুদ্ধের সময় তারা ভীরু ও কাপুরুষের মত লেজ গুটিয়ে ঘরে অবস্থানকারী। আর শান্তি ও নিরাপত্তার সময় তারা বড় বড় কথা বলে এবং বীরতুপনা প্রকাশ করে থাকে। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ

অর্থাৎ “যখন তারা ভয়ের (যুদ্ধের) সম্মুখীন হয় তখন তুমি তাদেরকে দেখতে পাও যে, তারা তোমার প্রতি এমনভাবে তাকাতে থাকে যে, তাদের চক্ষুসমূহ ঘুরতে থাকে, যেমন কারো উপর মরণ-বিভীষিকা আচ্ছন্ন হয়, অতঃপর সেই ভয় যখন দূরীভূত হয় তখন তোমাদেরকে অতি তীব্র ভাষায় তিরস্কার করতে থাকে।” তারা শান্তি ও নিরাপত্তার সময় শক্তিশালী বীরপুরুষ, কিন্তু যুদ্ধের সময় অত্যন্ত ভীরু ও কাপুরুষ। যেমন কোন কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা শান্তি ও নিরাপত্তার সময় অত্যন্ত ধূর্ত, উদ্দমশীল ও বড় বড় বক্তব্য পেশকারী, কিন্তু যুদ্ধের সময় তারা অন্তঃপুরবাসিনী মহিলাদের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত।” শান্তির সময় তারা মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং বীরত্ব প্রকাশকারী। কিন্তু যুদ্ধের সময় তারা নারীদের মত চুড়ি পরিধান করে পর্দানশীন বনে যায় এবং খাল ও ছিদ্র খুঁজে খুঁজে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। মুসলিমরাতো সূরা অবতীর্ণ হওয়ার ও আল্লাহর হুকুম নাযিল হওয়ার দিকে অপেক্ষমান থাকে। কিন্তু রোগাক্রান্ত হৃদয়ের লোকেরা যখন জিহাদের নির্দেশ সম্বলিত কোন আয়াত অবতীর্ণ হতে দেখে তখন চক্ষু বন্ধ করে নেয়। তাদের জন্যে শত আফসোস! তাদের জন্যে ধ্বংসাত্মক বিপদ। যদি তারা অনুগত হতো এবং তাদের মুখ হতে ভাল কথা বের হতো, আর তাদের উদ্দেশ্য সৎ হতো তবে অবশ্যই অরা আল্লাহর কথার সত্যতা স্বীকার করতো। এটাই হতো তাদের জন্যে কল্যাণকর। কিন্তু তাদের দুস্কার্যের দরুন তাদের অন্তরের উপর মোহর লেগে গেছে। এখন তাদের মধ্যে এই যোগ্যতাই নেই যে, তারা নিজেদের লাভ ও লোকসান বুঝতে পারে।

 

মুনাফিকদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করার পর আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের প্রশংসা ও তাদের পারলৌকিক কল্যাণ ও সুখের বর্ণনা দিচ্ছেন। মুমিনরা জিহাদের জন্যে কোমর বেঁধে উঠে পড়ে লেগে যায়। তারা নিজেদের জান ও মাল আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেয়। তাদের ভাগ্যেই মঙ্গল ও কল্যাণ। তারাই হচ্ছে সফলকাম। তাদেরই জন্যে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। আর তাদেরই জন্যে রয়েছে উচ্চতম মর্যাদা। তারা তাদের গন্তব্যস্থানেও সফলতায় পৌছে যাবে।

এখানে আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন যারা বাস্তবিকই শরঈ ওযরের কারণে জিহাদে অংশগ্রহণে অক্ষম ছিল। মদীনার চার পাশের এ লোকগুলো এসে নিজেদের দুর্বলতা ও অক্ষমতার কথা বর্ণনা করে আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে যে, যদি তিনি তাদেরকে বাস্তবিকই মা’যুর মনে করেন তবে যেন অনুমতি দান করেন। তারা ছিল বানু গিফার গোত্রের লোক। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কিরআতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ ওর বিশিষ্ট লোকেরা (অনুমতি প্রার্থনা করেছিল। এই অর্থটিই বেশী স্পষ্ট। কেননা, এই বাক্যের পরে ঐ লোকদের বর্ণনা রয়েছে যারা ছিল মিথ্যাবাদী। তারা না আগমন করেছিল, না জিহাদ থেকে বিরত থাকার কোন কারণ দর্শিয়েছিল, না রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে বিরত থাকার অনুমতি প্রার্থনা করেছিল। কোন কোন গুরুজন বলেন যে, ওযর পেশকারীরাও প্রকৃতপক্ষে ওযর বিশিষ্ট ছিল না। এ কারণেই তাদের ওযর গৃহীত হয়নি। কিন্তু প্রথম উক্তিটি গ্রহণযোগ্য বটে এবং ওটাই বেশী প্রকাশ্য এর একটি কারণ ওটাই যা আমরা উপরে বর্ণনা করেছি। আর দ্বিতীয় কারণ এই যে, শাস্তির অঙ্গীকারও ঐ লোকদের সাথেই করা হয়েছে। যারা যুদ্ধে গমন না করে বাড়ীতে বসেই রয়েছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

যদিও এটা বড়ই লজ্জার ব্যাপার ছিল যে, স্বাস্থ্যবান, বলিষ্ঠ, সুঠামদেহী ও সামর্থ্যবান লোকেরা ঈমানদের দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও কাজের সময মাঠে ময়দানে বের হবার পরিবর্তে ঘরের মধ্যে ঢুকে বসে থাকবে এবং মেয়েদের দলে শামিল হবে, তবুও যেহেতু এ লোকেরা জেনে বুঝে নিজেদের জন্য এ পথটি পছন্দ করে নিয়েছেল তাই প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী তাদের থেকে এমন সব পবিত্র অনুভূতি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে যেগুলোর উপস্থিতিতে মানুষ এ ধরনের ঘৃন্য আচরণ করতে লজ্জাবোধ করে।

গ্রামীণ আরব মানে আশেপাশে বসবাসকারী পল্লী ও মরুবাসী আরবরা। এদেরকে সাধারণভাবে বেদুঈন বা বাদ্দু বলা হয়।

* মুনাফিক সুলভ তথা ভণ্ডামী পূর্ণ ঈমানের প্রকাশ, যার ভেতরে নেই সত্যের যথার্থ স্বীকৃতি, আত্মসমর্পণ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও আনুগত্য এবং যার বাহ্যিক স্বীকৃতি সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহ‌ ও তার দ্বীনের তুলনায় নিজের স্বার্থ এবং পার্থিব মোহ ও আশা-আকাংখাকে প্রিয়তর মনে করে। এ ধরনের ঈমান প্রকৃতপক্ষে কুফরী ও অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। দুনিয়ার এ ধরনের লোকদেরকে কাফের গণ্য না করা এবং তাদের সাথে মুসলমানের মতো ব্যবহার করা হলেও আল্লাহর দরবারে তাদের সাথে অবাধ্য অস্বীকারকারী ও বিদ্রোহীদের মতো, আচরণ করা হবে। এ পার্থিব জীবনে মুসলিম সমাজের ভিত্তি যে আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ বিধানের ভিত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্র ও তার বিচারক আইন প্রয়োগ করেন তার প্রেক্ষিতে মুনাফিকীকে কুফরী বা কুফরী সদৃশ কেবল তখনই বলা যেতে পারে যখন অস্বীকৃতি, বিদ্রোহ বিশ্বসঘাতকতা ও অবিশ্বস্ততার প্রকাশ সুস্পষ্টভাবে হবে। তাই মুনাফিকীর এমন অনেক ধরন ও অবস্থা থেকে যায় শরীয়াতের বিচারে যেগুলোকে কুফরী নামে অভিহিত করা যায় না। কিন্তু শরীয়াতের বিচারে কোন মুনাফিকের কুফরীর অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহর বিচারেও সে এ অভিযোগ এর শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাবে।

তাফসীরে‌ আহসানুল ‌বায়ান বলেছেন:-
* এটা হল সেই মুনাফিক্বদের বর্ণনা যারা ছল-বাহানা করে যুদ্ধে শরীক হওয়া থেকে পিছনে থাকা পছন্দ করেছিল। أولو الطَّول থেকে উদ্দেশ্য সামর্থ্যবান, ধনী শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ। অর্থাৎ, এমন লোকেদেরকে পিছনে থাকা উচিত ছিল না। কেননা, তাদের কাছে আল্লাহর দেওয়া সব কিছু মওজুদ ছিল। قاعِدِين থেকে কিছু অসুবিধার কারণে ‘বসে থাকা’ ব্যক্তিরা উদ্দেশ্য। যেমন, পরবর্তী আয়াতে তাদেরকে অন্তঃপুরবাসী নারীদের সাথে তুলনা করে خَوَالِف বলা হয়েছে। যা خَالِفَة এর বহুবচন অর্থাৎ, পিছনে থাকা নারীগণ।

* অন্তরে মোহর লেগে যাওয়াঃ এটি অব্যাহতভাবে গোনাহ করতে থাকার কুফল। যার বিশদ আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে। অন্তরে মোহর লাগার পর মানুষ চিন্তা-ভাবনা করা ও কিছু বুঝার যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

*মুনাফিক্বদের বিপরীত ঈমানদারদের অভ্যাস হল, তারা নিজ জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। আল্লাহর পথে জান-মাল কুরবান করার ব্যাপারে কোন পরোয়া ও দ্বিধাবোধ করে না। তাদের নিকটে আল্লাহর আদেশ পালনই হল সর্ব উচ্চে। তাদেরই জন্য আখেরাতের মঙ্গল ও জান্নাতের নিয়ামত প্রস্তুত রয়েছে; মতান্তরে দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণ রয়েছে। আর এরাই লাভ করবে পরিত্রাণ ও মহাসাফল্য।

* উক্ত অজুহাত পেশকারীদের ব্যাপারে তফসীরবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এরা শহর থেকে দূরে বসবাসকারী সেই লোক, যারা মিথ্যা ওজর পেশ করে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। এদের দ্বিতীয় প্রকার ছিল তারা, যারা এসে ওজর পেশ করার কোন প্রয়োজন মনে না করেই বসে রইল। আলোচ্য আয়াতে মুনাফিক্বদের উক্ত দুই শ্রেণীর লোকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিতে উভয় ধরনের লোকেরাই শামিল। আর ‘তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে’ বলে মিথ্যা ওজর পেশকারী ও বসে থাকা উভয় প্রকার ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যান্য তফসীরবিদরা ‘অজুহাত পেশকারীদল’ বলতে এমন মরুবাসী বেদুঈন মুসলিমদেরকে বুঝিয়েছেন, যারা সঠিক ও সত্য ওজর পেশ করে অনুমতি নিয়েছিল। আর مُعَذِّرُوْنَ আসলে তাদের নিকটে مُعْتَذِرُوْنَ ছিল। ت হরফটিকে ذ হরফে পরিবর্তন করে সমীকরণ করা হয়েছে। আর ‘مُعْتَذِر’এর অর্থ হল আসলেই যাদের ওজর আছে। এই হিসাবে আয়াতের পরবর্তী বাক্যতে মুনাফিক্বদের কথা উল্লেখ আছে এবং আয়াতে উভয় দলের কথা বর্ণনা হয়েছে। এর প্রথম অংশে সেই সব মুসলিমদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের সত্যিকার ওজর ছিল। আর দ্বিতীয় অংশে সেই মুনাফিক্বদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ওজর পেশ না করেই বসে ছিল। আর আয়াতের শেষাংশে যে ধমক এসেছে, তা হল এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদের জন্যই। আর আল্লাহই অধিক জানেন।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

আয়াতের অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, এসব বেদুইন যাযাবরদের মধ্যে দু’রকম লোক ছিল। প্রথমত, যারা ছল-ছুতা পেশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয় যাতে তাদেরকে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে অব্যাহতি দান করা হয়। আর কিছু লোক ছিল এমন উদ্ধত যারা অব্যাহতি লাভের তোয়াক্কা না করেই নিজ নিজ অবস্থানে নিজের মতেই বসে থাকে। এতে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, তাদের ওযর গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে তাদেরকে বেদনাদায়ক আযাবের দুঃসংবাদ শুনিয়ে দেয়া হয়। [ইবন কাসীর]

আল্লামা সা’দী বলেন, আয়াতের অর্থ, যারা রাসূলের সাথে বের হওয়ার ব্যাপারটি গুরুত্বহীন মনে করেছে এবং বের হতে কসুর করেছে, তাদের অসভ্যতা ও লজ্জাহীনতার কারণে এবং তাদের দুর্বল ঈমানের কারণে, রাসূলের কাছে এসে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি চাইতে লাগল। কিন্তু যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা মনে করেছিল তারা সম্পূর্ণ বেপরোয়া হয়ে বসে রইল, অব্যাহতি নেয়াও ছেড়ে দিল। অথবা আয়াতে ‘ওজর পেশকারীরা বলে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদের সত্যিকার অর্থেই ওজর ছিল। তারা রাসূলের কাছে ওজর পেশ করার জন্য এসেছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল যে, কেউ ওজর পেশ করলে তিনি তা গ্রহণ করতেন। আর যারা অভিযানে বের হওয়ার আবশ্যকতা সংক্রান্ত ঈমানের দাবীতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা বলেছিল তারা বসেই রইল, বের হওয়ার ব্যাপারে কোন কাজ করল না। [সা’দী]

Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 86-90
أُولُوا الطَّوْلِ
Those of wealth among them…

Admonishing Those Who did not join the Jihad

Allah says;

وَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ امِنُواْ بِاللّهِ وَجَاهِدُواْ مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُوْلُواْ الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُواْ

And when a Surah is revealed, enjoining them to believe in Allah and to strive hard and fight along with His Messenger, the wealthy among them ask your leave to exempt them and say,

Allah chastises and admonishes those who stayed away from Jihad and refrained from performing it, even though they had the supplies, means and ability to join it. They asked the Messenger for permission to stay behind, saying,

ذَرْنَا نَكُن
مَّعَ الْقَاعِدِينَ

“Leave us (behind), we would be with those who sit (at home).”

thus accepting for themselves the shame of lagging behind with women, after the army had left. If war starts, such people are the most cowardice, but when it is safe, they are the most boastful among men.

Allah described them in another Ayah,

فَإِذَا جَأءَ الْخَوْفُ رَأَيْتَهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ تَدورُ أَعْيُنُهُمْ كَالَّذِى يُغْشَى عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَإِذَا ذَهَبَ الْخَوْفُ سَلَقُوكُم بِأَلْسِنَةٍ حِدَادٍ

Then when fear comes, you will see them looking to you, their eyes revolving like (those of) one over whom hovers death; but when the fear departs, they will smite you with sharp tongues. (33:19)

their tongues direct their harsh words against you, when it is safe to do so. In battle, however, they are the most cowardice among men.

Allah said in other Ayah,

وَيَقُولُ الَّذِينَ ءَامَنُواْ لَوْلَا نُزِّلَتْ سُورَةٌ فَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَذُكِرَ فِيهَا الْقِتَالُ رَأَيْتَ الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ مَّرَضٌ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِىِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَأَوْلَى لَهُمْ

طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَّعْرُوفٌ فَإِذَا عَزَمَ الاٌّمْرُ فَلَوْ صَدَقُواْ اللَّهَ لَكَانَ خَيْراً لَّهُمْ

Those who believe say:”Why is not a Surah sent down (for us)! But when a decisive Surah (explaining and ordering things) is sent down, and fighting is mentioned therein, you will see those in whose hearts is a disease looking at you with a look of one fainting to death. But it was better for them. Obedience (to Allah) and good words (were better for them). And when the matter is resolved on, then if they had been true to Allah, it would have been better for them. (47:20-21)

Allah said next.

رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ الْخَوَالِفِ

They are content to be with those who sit behind.

وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ

Their hearts are sealed up,

because of their staying away from Jihad and from accompanying the Messenger in Allah’s cause,

فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ

so they understand not.

they neither understand what benefits them so that they perform it nor what hurts them so that they avoid it.
After Allah mentioned the sins of the hypocrites, He praised the faithful believers and described their reward in the Hereafter,

لَـكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ امَنُواْ مَعَهُ جَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَأُوْلَـيِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

أَعَدَّ اللّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الَانْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
But the Messenger and those who believed with him strove hard and fought with their wealth and their lives. Such are they for whom are the good things, and it is they who will be successful.For them Allah has prepared Gardens (Paradise) under which rivers flow, to dwell therein forever. That is the supreme success.

This describes the qualities, as well as, the reward of faithful believers.

Allah said,
وَأُوْلَـيِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ
(Such are they for whom are the good things),

in the Hereafter, in the gardens of Al-Firdaws and the high grades.
Allah says;

وَجَاء الْمُعَذِّرُونَ مِنَ الَاعْرَابِ لِيُوْذَنَ لَهُمْ

And those who made excuses from the Bedouins came asking your permission to exempt them (from the battle),

Allah describes here the condition of the Bedouins who lived around Al-Madinah, who asked for permission to remain behind from Jihad when they came to the Messenger to explain to him their weakness and inability to join the fighting.

Ad-Dahhak said that Ibn Abbas said that;

they were those who had valid excuses, for Allah said next,

وَقَعَدَ الَّذِينَ كَذَبُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ

and those who had lied to Allah and His Messenger sat at home,

and did not ask for permission for it;

and Allah warned them of painful punishment,

سَيُصِيبُ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

a painful torment will seize those of them who disbelieve.

Leave a Reply