أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 633)[মরুবাসী (বেদুঈন) লোকেরা..]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
৯৭-৯৯ নং আয়াত:-
الَاعْرَابُ
মরুবাসী (বেদুঈন) লোকেরা..
The Bedouins are….
اَلۡاَعۡرَابُ اَشَدُّ کُفۡرًا وَّ نِفَاقًا وَّ اَجۡدَرُ اَلَّا یَعۡلَمُوۡا حُدُوۡدَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ عَلٰی رَسُوۡلِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۹۷﴾
মরুবাসী (বেদুঈন) লোকেরা কুফরী ও কপটতায় অতি কঠোরতম।আর তারা এই কথারই বেশী উপযুক্ত যে, আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তাদের ঐসব বিধি-সীমার জ্ঞান হয় না।আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
The bedouins are stronger in disbelief and hypocrisy and more likely not to know the limits of what [laws] Allah has revealed to His Messenger. And Allah is Knowing and Wise.
وَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مَا یُنۡفِقُ مَغۡرَمًا وَّ یَتَرَبَّصُ بِکُمُ الدَّوَآئِرَ ؕ عَلَیۡہِمۡ دَآئِرَۃُ السَّوۡءِ ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۹۸﴾
আর মরুবাসীদের কেউ কেউ, যা তারা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে তা জরিমানা গণ্য করে এবং তোমাদের বিপর্যয়ের প্রতীক্ষা করে। তাদের উপরই হোক নিকৃষ্টতম বিপর্যয় । আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
And among the bedouins are some who consider what they spend as a loss and await for you turns of misfortune. Upon them will be a misfortune of evil. And Allah is Hearing and Knowing.
وَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ مَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ یَتَّخِذُ مَا یُنۡفِقُ قُرُبٰتٍ عِنۡدَ اللّٰہِ وَ صَلَوٰتِ الرَّسُوۡلِ ؕ اَلَاۤ اِنَّہَا قُرۡبَۃٌ لَّہُمۡ ؕ سَیُدۡخِلُہُمُ اللّٰہُ فِیۡ رَحۡمَتِہٖ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿٪۹۹﴾
আর মরুবাসীদের কেউ কেউ আল্লাহ্ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহ্র সান্নিধ্য ও রাসূলের দো’আ লাভের উপায় গণ্য করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তা তাদের জন্য আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের উপায়; অচিরেই আল্লাহ্ তাদেরকে নিজ রহমতে দাখিল করবেন নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
But among the bedouins are some who believe in Allah and the Last Day and consider what they spend as means of nearness to Allah and of [obtaining] invocations of the Messenger. Unquestionably, it is a means of nearness for them. Allah will admit them to His mercy. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful.
৯৭-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্বে বর্ণিত আয়াতসমূহে ঐ সকল মুনাফিকদের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা মদীনায় বসবাস করত। আবার কিছু মুনাফিক ছিল যারা মদীনার বাইরে মরু এলাকায় বসবাস করত যাদের আরাব (বেদুঈন) বলা হয়। শহরবাসীর আচার-ব্যবহার অপেক্ষা তাদের আচার-ব্যবহার বেশি কঠোর ও রূঢ়। অনুরূপ তাদের মধ্যে যারা কাফির ও মুনাফিক ছিল তারা কুফরী ও মুনাফিকিতেও শহরবাসীদের চাইতে বেশি কঠোর এবং শরীয়তের বিষয়ে বেশি অজ্ঞ ছিল। এ আয়াতে তাদের আচরণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। হাদীসেও তাদের চাল-চলন সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়। যেমন একদা কিছু বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: তোমরা কি তোমাদের সন্তানদের চুমা দাও? সাহাবায়ে কিরাম বললেন: হ্যাঁ। তারা বলল: আল্লাহর শপথ! আমরা তো চুমা দেই না। তাদের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমাদের অন্তর থেকে মায়া-মমতা ছিনিয়ে নেন তাহলে আমার কী করার আছে? (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৯৮, সহীহ মুসলিম হা: ২৩১৭)
অতঃপর দু’প্রকার বেদুঈনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে:
১. যাদের বিবরণ ৯৮ নং আয়াতে দেয়া হয়েছে। এরা ছিল মুনাফিক, এরা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করাকে জরিমানা মনে করত এবং সর্বদা মু’মিনদের অমঙ্গল কামনা করত।
২. যাদের বিবরণ ৯৯ নং আয়াতে দেয়া হয়েছে। এরা ছিল প্রথম শ্রেণির মুনাফিকদের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করত খালেস নিয়তে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করার সুসংবাদ দিয়েছেন।
(صَلَوٰتِ الرَّسُوْلِ)
‘রাসূলের দু‘আ’ অর্থাৎ যা তারা ব্যয় করত তার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দু‘আ কামনা করত। যেমন হাদীসে এসেছে একজন স্বাদাকাহ প্রদানকারীর জন্য নাবী (সাঃ) এ বলে দু‘আ করতেন:
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰي آلِ أَبِيْ أَوْفَي
হে আল্লাহ! আবূ আউফার পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৯৭)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অধিকাংশ বেদুঈনরা আদব-আখলাক থেকে বঞ্চিত, এজন্য গ্রামে বাস করা প্রশংসনীয় নয় যদি ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য না হয়।
২. বেদুইন ভাল-মন্দ উভয় শ্রেণির হয়। তারা নিজ নিজ আক্বীদা ও আমলে খুব মজবুত।
৩. আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম।
৯৭-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা এখানে সংবাদ দিচ্ছেন যে, গ্রাম্য লোকদের মধ্যে কাফিরও রয়েছে, মুনাফিকও রয়েছে। আর তাদের কুফরী ও নিফাক অন্যদের তুলনায় খুবই বড় ও কঠিন এবং তারা এরই যোগ্য যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-এর উপর যে হুকুম ও আহকাম নাযিল করেছেন তা থেকে তারা বে-খবর থাকে। যেমন- আমাশ (রঃ) ইবরাহীম (রঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একজন গ্রাম্য বেদুঈন যায়েদ ইবনে সাওহান (রঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিল। তিনি তার সঙ্গীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। নাহাওয়ান্দের যুদ্ধে তাঁর হাত কেটে গিয়েছিল। বেদুঈনটি তাঁকে বললোঃ “আপনার কথাগুলো তো খুবই ভাল। এবং আপনাকে ভাল লোক বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনার কর্তিত হাত আমাকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।” তখন যায়েদ (রঃ) বললেনঃ “আমার কর্তিত হাত দেখে তোমার সন্দেহ হচ্ছে কেন? এটা তো বাম হাত।” বেদুঈন বললোঃ “আল্লাহর শপথ! চুরির অপরাধে ডান হাত কাটা হয় কি বাম হাত কাটা হয় তা আমার জানা নেই।” তখন যায়েদ ইবনে সাওহান (রঃ) বলে উঠলেন যে, আল্লাহ সত্য বলেছেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ “গ্রামবাসী লোকেরা কুফরী ও কপটতায় অতি কঠোর, আর তাদের এরূপ হওয়াই উচিত কারণ, তাদের ঐসব আহকামের জ্ঞান নেই যা আল্লাহ তাঁর রাসূল (সঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ করেছেন।”
ইমাম আহমাদ (রঃ) ইসনাদসহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যারা পল্লীতে বাস করে তারা যেন নির্বাসিত লোক, যারা শিকারের পিছে দৌড়াদৌড়ি করে তারা নির্বোধ এবং যারা কোন বাদশাহ্র সাহচর্য গ্রহণ করে তারা ফিত্রায় পতিত হয়ে থাকে।” (সুনানে আবি দাউদ, জামেউত তিরমিযী এবং সুনানে নাসাঈতেও সুফইয়ান সাওরী (রঃ) হতে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন। সাওরী (রঃ)-এর রিওয়ায়াত ছাড়া আর কারো রিওয়ায়াত আমাদের জানা নেই) বেদুঈনরা সাধারণতঃ বদ মেযাজী, বোকা এবং অভদ্র হয়ে থাকে, তাই আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে কোন রাসূলের জন্ম দেননি। নবুওয়াতের অধিকারী একমাত্র শহুরে ও দ্র লোকেরাই হয়ে থাকেন। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে জনপদবাসীদের মধ্য হতে পুরুষগণকেই প্রেরণ করেছিলাম যাদের নিকট ওহী পাঠাতাম।” (১২:১০৯)
একবার এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে কিছু হাদিয়া পাঠায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে পর্যন্ত তার কাছে ওর কয়েকগুণ বেশী হাদিয়া না পাঠান সেই পর্যন্ত সে খুশী হয়নি। ঐ সময় তিনি বলেছিলেনঃ “আমি এখন সংকল্প করেছি যে, কারাশী, সাকাফী, আনসারী এবং দাওসী ছাড়া আর কারো হাদিয়া কবুল করবো না । কেননা, এরা হচ্ছে শহুরে লোক। এরা মক্কা, তায়েফ, মদীনা এবং ইয়ামনের অধিবাসী। বেদুঈনের তুলনায় এদের চরিত্র বহুগুণে উত্তম। বেদুঈনরা সাধারণতঃ বোকাই হয়।
সন্তানকে চুম্বন করার ব্যাপারে বেদুঈনের হাদীসঃ
সহীহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, বেদুঈনদের কতকগুলো লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে বললোঃ “তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে চুম্বন করে থাকো?” তারা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা।” তখন তারা বললোঃ “আল্লাহর শপথ! আমরা কিন্তু (আমাদের) শিশুদেরকে চুম্বন করি না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাদেরকে বললেনঃ “আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে রহমত বের করে নেন তবে আমি কি করে তার যিম্মাদার হতে পারি?” (সহীহ বুখারীর ইবারত হচ্ছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কি তোমার জন্যে যিম্মাদার হতে পারি যদি আল্লাহ তোমার অন্তর থেকে রহমত বের করে নেন?)
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “আল্লাহ হচ্ছেন মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।” অর্থাৎ আল্লাহ ঐ লোকদেরকে ভালরূপেই জানেন যারা এর যোগ্য যে, তাদেরকে জ্ঞান ও ঈমানের তাওফীক দেয়া হবে। তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে জ্ঞান, অজ্ঞতা, ঈমান, কুফরী এবং নিফাকের বন্টন অত্যন্ত বিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার সাথে করেছেন। তিনি তার জ্ঞান ও নৈপুণ্যের ভিত্তিতে যা কিছু করেন এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারে না।
আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহর পথে কিছু খরচ করলে ওটাকে জরিমানা মনে করে থাকে এবং মুমিনরা কোন দৈব দুর্বিপাকে পতিত হাক তারা এরই প্রতীক্ষায় থাকে। কিন্তু তারা নিজেরাই সেই দুর্বিপাকে পতিত হবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের কথা খুবই ভাল শুনেন ও জানেন। অপমান ও ব্যর্থতার যোগ্য কারা এবং কারা সাহায্য প্রাপ্তি ও সফলতার যোগ্য এটাও তিনি ভালরূপেই জানেন।
পল্লীবাসীদের আর এক শ্রেণীর লোক প্রশংসার পাত্র। তারা হচ্ছে ওরাই যারা আল্লাহর পথে খরচ করাকে তাঁর নৈকট্য লাভ ও সন্তুষ্টির মাধ্যম মনে করে থাকে। তারা এটা কামনা করে যে, এর কারণে তারা তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দুআয়ে খায়ের লাভ করবে। হ্যা, অবশ্যই এই খরচ তাদের জন্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে স্বীয় রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
আমরা আগেই বলে এসেছি, বেদুঈন আরব বলতে এখানে গ্রামীণ ও মরুবাসীদের কথা বলা হয়েছে। এরা মদীনার আশপাশে বসবাস করতো। মদীনায় একটি মজবুত ও সংগঠিত শক্তির উত্থান ঘটতে দেখে এরা প্রথমে শংকিত হয়। তারপর ইসলাম ও কুফরের সংঘাতকালে বেশ কিছুকাল তারা সুযোগ সন্ধানী নীতি অবলম্বন করতে থাকে। এরপর ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব হেজায ও নজদের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এবং তার মোকাবিলায় বিরোধী গোত্রগুলোর শক্তি ভেঙ্গে পড়তে থাকলে তারা ইসলামের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করাকেই সে সময় নিজেদের জন্য সুবিধাজনক ও নিরাপদ মনে করে। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম লোকই ইসলামকে যথার্থ আল্লাহর সত্য দ্বীন মনে করে সাচ্চা দিলে ঈমান আনে এবং আন্তরিকতার সাথে তার দাবীসমূহ পূর্ণ করতে উদ্যোগী হয়। অধিকাংশ বেদুঈনের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ঈমান ও আকিদার ব্যাপার নয় বরং নিছক স্বার্থ, সুবিধা ও কৌশলের ব্যাপার ছিল। তারা চাচ্ছিল, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যপদ লাভ করার ফলে যেসব সুবিধা ভোগ করা যায় শুধু সেগুলোই তাদের ভাগে এসে যাক। কিন্তু ইসলাম তাদের ওপর যেসব নৈতিক বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল ইসলাম গ্রহণ করার পরপরই তাদের ওপর নামায পড়ার ও রোযা করার যে বিধান আরোপিত হতো, যথারীতি তহশীলদার নিযুক্ত করে তাদের খেজুর বাগান ও শস্যগুলো থেকে যে যাকাত উসূল করা হতো, তাদের জাতীয় ইতিহাসে এ প্রথম বারের মতো তাদেরকে যে আইন-শৃংখলার রশিতে শক্তভাবে বাঁধা হয়েছিল এবং লুটতরাজের যুদ্ধের জন্য নয় বরং খালেস আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য দিনের পর দিন তাদের কাছে থেকে যে জানমালের কুরবানী চাওয়া হচ্ছিল-এসব জিনিস তাদের কাছে ছিল অতিশয় অপ্রীতিকর, বিরক্তিকর এবং এগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা নানা ধরনের চালবাজী ও টালবাহানার আশ্রয় নিতো। সত্য কি এবং তাদের ও সমস্ত মানুষের যথার্থ কল্যাণ কিসে, তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। তারা শুধুমাত্র নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ, নিজেদের আয়েশ-আরাম, নিজেদের জমি, উট, ছাগল-ভেড়া এবং নিজেদের তাঁবুর চারপাশের জগত নিয়ে মাথা ঘামাতো। এ ঊর্ধ্বের কোন জিনিসের প্রতি তাদের কোন আকর্ষণ ছিল না। অবশ্য পীর-ফকীরদের কাছে যেমন নযরানা পেশ করা হয় এবং তার বিনিময়ে তারা আয় বৃদ্ধি, বিপদ থেকে নিষ্কৃতি এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য ঝাড়ফূঁক করেন, তাবীজ দেন ও তাদের জন্য দোয়া করেন ঠিক তেমনি ধরনের কোন কাল্পনিক জিনিসের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণের প্রবণতা হয়তো তাদের ছিল। কিন্তু এমন কোন ঈমান ও আকীদার জন্য তারা তৈরী ছিলো না, যা তাদের সমগ্র তামাদ্দুনিক ও সামাজিক জীবনকে একটি নৈতিক ও আইনগত বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে এবং এ সঙ্গে একটি বিশ্বজনীন সংস্কার কার্যক্রমের জন্য তাদের কাছে জান-মালের কুরবানীরও দাবী জানাবে।
তাদের এ অবস্থাটিকেই এখানে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, নগরবাসীদের তুলনায় এ গ্রামীন ও মরুবাসী লোকেরাই বেশী মুনাফিকী ও ভণ্ডালীর আচরণ অবলম্বন করে থাকে এবং সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা এদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। আবার এর কারণও বলে দেয়া হয়েছে যে, নগরবাসীরা তো জ্ঞানীগুণী ও সত্যানুসারী লোকদের সাহচর্যে এসে দ্বীন ও তার বিধি-বিধান সম্পর্কে কিছু না কিছু জ্ঞান লাভ করতেও পারে কিন্তু এ বেদুইনরা যেহেতু সারাটা জীবন নিরেট খাদ্যন্বেষী জীব-জানোয়ারের মতো দিন রাত কেবল রুজী রোজগারের ধান্দায় লেগে থাকে এবং পশু জীবনের প্রয়োজনের চাইতে উন্নত পর্যায়ের কোন জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেবার সময়ই তাদের থাকে না, তাই ইসলাম ও তার বিধি-বিধান সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকার সম্ভাবনাই বেশী।
এখানে এ বাস্তব সত্যটির প্রতি ইঙ্গিত করাও অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, এ আয়াতগুলো নাযিলের প্রায় দুবছর পর হযরত আবু বকরের (রা.) খিলাফতের প্রাথমিক যুগে মুরতাদ হওয়ার ও যাকাত বর্জনের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল আলোচ্য আয়াতগুলোতে বর্ণিত ও কারণটি তার অন্যতম ছিল।
যাকাত আদায় করা হয় তারা তাকে একটা জরিমান মনে করে। মুসাফিরদের আহার করাবার ও মেহমানদারীর যে দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, তা তাদের কাছে অসহনীয় বোঝা মনে হয়। আর যদি কোন যুদ্ধ উপলক্ষে তারা কোন চাঁদা দেয় তাহলে আন্তরিকভাবে আবেগ আপ্লুত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দেয় না। বরং নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিজেদের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার জন্য দিয়ে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] পূর্ব বর্ণিত আয়াতসমূহে ঐ সকল মুনাফিকদের আলোচনা ছিল, যারা মদীনা শহরে বসবাস করত। আর কিছু মুনাফিক ছিল যারা মদীনার বাইরে মরু এলাকায় বসবাস করত। মরু এলাকায় বসবাসকারীদেরকে ‘আ’রাব’ (বেদুঈন) বলা হয় যা ‘আ’রাবী’ শব্দের বহুবচন। শহরবাসীদের আচার-ব্যবহার অপেক্ষা তাদের আচার-ব্যবহারে বেশি কঠোরতা ও রুক্ষতা পাওয়া যায়। অনুরূপ তাদের মধ্যে যারা কাফের ও মুনাফিক ছিল তারা কুফরী ও মুনাফিকীর ব্যাপারে শহরবাসীদের চাইতে বেশি কঠোর ছিল এবং শরীয়তের বিধান সম্বন্ধেও বেশি অজ্ঞ ছিল। এই আয়াতে তাদের ও তাদের সেই আচরণের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদীসেও তাদের চাল-চলন সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন একদা কিছু বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কি তোমাদের সন্তানদেরকে চুমা দাও?’ সাহাবায়ে কিরামগণ উত্তরে বললেন ‘হাঁ।’ তারা বলল ‘আল্লাহর শপথ! আমরা তো চুমা দিই না।’ তাদের এই কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “আল্লাহ তাআলা যদি তোমাদের অন্তর থেকে মায়া-মমতা ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন, তবে আমার আর কি করার আছে?” (বুখারী ও মুসলিম)
[২] এর কারণ হল যেহেতু তারা শহর থেকে দূরে বসবাস করত এবং আল্লাহ ও রসূল (সাঃ)-এর কথা শ্রবণ করার সুযোগ পেত না ।
* [১] এখন সেই দুই শ্রেণী বেদুঈনদের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে, এরা প্রথম শ্রেণীর বেদুঈন।
[২] غُرْمٌ অর্থ জরিমানা। অর্থাৎ এমন ব্যয় যা মানুষকে একদম অনিচ্ছার সাথে নিরুপায় হয়ে করতে হয়।
[৩] – دَوَائِرُ- دَائِرَةٌ এর বহুবচন অর্থঃ কালের আবর্তন, বিপদাপদ। অর্থাৎ তারা মুসলিমদের উপর দুর্দিন ও বিপদ আসার অপেক্ষায় থাকে।
[৪] এটা বদ্দুআ। (অর্থাৎ, অশুভ আবর্তন তাদের উপরই পতিত হোক।) অথবা সংবাদ দেওয়া হচ্ছে যে, তাদেরই দুর্দিন আসবে। কারণ তারাই দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ার উপযুক্ত।
* [১] এটা বেদুঈনদের দ্বিতীয় শ্রেণী, শহর থেকে দূরে থাকার পরেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনার তাওফীক দান করেছিলেন এবং সেই ঈমান দ্বারা তাদের ঐ অজ্ঞতাও দূর করে দেন, যা বেদুঈন হওয়ার কারণে বেদুঈনদের মধ্যে সাধারণতঃ পাওয়া যেত। সুতরাং তারা আল্লাহর পথে ব্যয়কৃত সম্পদকে জরিমানা ভাবত না; বরং তা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দু’আ পাওয়ার উপায় মনে করত। এ দ্বারা স্বাদাক্বাহ প্রদানকারীদের জন্য নবী (সাঃ) যে বর্কতের দু’আ করতেন তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, একজন স্বাদাক্বাহ প্রদানকারীর জন্য নবী (সাঃ) এই বলে দু’আ করেছিলেন, (اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ أَبِيْ أَوْفَى) “হে আল্লাহ ! আবু আওফার বংশের উপর রহমত বর্ষণ করুন।” (বুখারী, মুসলিম)
[২] এটা সুসংবাদ যে, তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছে এবং তারা আল্লাহর রহমতের অধিকারী।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] (اعراب) শব্দটি (عرب) শব্দের বহুবচন নয়; বরং এটি একটি শব্দ পদ বিশেষ যা শহরের বাইরের অধিবাসীদের বুঝাবার জন্য ব্যবহার করা হয়। এর একজন বুঝাতে হলে (اعرابي) বলা হয়। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[২] আলোচ্য আয়াতে মরুবাসী বেদুঈনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এরা কুফরী ও মুনাফিকীর ব্যাপারে শহরবাসী অপেক্ষাও বেশী কঠোর। এর কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, এরা এলম ও আলেম তথা জ্ঞান ও জ্ঞানী লোকদের থেকে দূরে অবস্থান করে। ফলে এরা আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত সীমা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। কারণ, না কুরআন তাদের সামনে আছে, না তার অর্থ মর্ম ও বিধি বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে, বিশেষ করে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। এ জন্যই কাতাদা বলেন, এখানে রাসূলের সুন্নাত সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] এক হাদীসেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘যে কেউ মরুবাসী হবে সে অসভ্য হবে, যে কেউ শিকারের পিছনে ছুটবে সে অন্যমনস্ক হবে, আর যে কেউ ক্ষমতাশীনদের কাছে যাবে সে ফিৎনায় পড়বে।” [আবুদাউদ: ২৮৫৯] আর যেহেতু অসভ্যতা বেদুঈনদের সাধারণ নিয়ম, তাই আল্লাহ তা’আলা তাদের মধ্য থেকে কোন নবী-রাসূল পাঠান নি। আল্লাহ বলেন, “আর আমরা আপনার আগে কেবল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে পুরুষদেরকে রাসূল বানিয়েছিলাম” [সূরা ইউসুফঃ ১০৯] অন্য হাদীসে এসেছে, একবার এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু হাদীয়া দেয়। তিনি তাকে রাযী করতে দ্বিগুণ প্রদান করেন। তখন তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, হাদীয়া শুধু কুরাইশী অথবা সাকাফী অথবা আনসারী বা দাওসী থেকেই নেব।’ [তিরমিযী: ৩৯৪৫] কারণ এ গোত্রগুলো লোকালয়ে বাস করার কারণে তাদের মধ্যে সভ্যতা-সংস্কৃতি রয়েছে। [ইবন কাসীর]
*এ আয়াতেও এ সমস্ত বেদুঈনেরই একটি অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এরা যাকাত, জিহাদ প্রভৃতিতে যে অর্থ ব্যয় করে, তাকে এক প্রকার জরিমানা বলে মনে করে। তার কারণ, তাদের অন্তরে তো ঈমান নেই, শুধু নিজেদের কুফরীকে লুকাবার জন্য সালাতও পড়ে নেয় এবং ফরয যাকাতও দিয়ে দেয়। কিন্তু মনে এ কালিমা থেকেই যায় যে, এ অর্থ অনর্থক খরচ হয়ে গেল। আর সেজন্য অপেক্ষায় থাকে যে, কোন রকমে মুসলিমদের উপর কোন বিপদ নেমে আসুক এবং তারা পরাজিত হয়ে থাক; তাহলেই আমাদের এহেন অর্থদণ্ড থেকে মুক্তিলাভ হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের উত্তরে বলছেন, তাদেরই উপর মন্দ অবস্থা আসবে। আর এরা নিজেদের সেসব কাজ কর্ম ও কথাবার্তার কারণে অধিকতর অপমানিত। মুমিনদগ জন্য রয়েছে তাদের শক্রদের বিপরীতে উত্তম ফলাফল। [দেখুন, আইসারুত তাফাসীর; সা’দী]
*[১] এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা সে সব বেদুঈনের আলোচনা সংগত মনে করেছেন যারা সত্যিকার ও পাকা মুসলিম। আর তা এজন্য যাতে একথা প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, সব বেদুঈনই এক রকম নয়। তাদের মধ্যেও নিঃস্বার্থ, নিষ্ঠাবান ও জ্ঞানী লোক আছে। তাদের অবস্থা হল এই যে, তারা যে যাকাত-সদকা দেয়, তাকে তারা আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভের উপায় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোআ প্রাপ্তির আশায় দিয়ে থাকে। ইবন আব্বাস বলেন, এখানে (وَ صَلَوٰتِ الرَّسُوۡلِ) বলে রাসূল তাদের জন্য যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন সেটা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]।
[২] আলোচ্য আয়াত থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পাই। এক. বেদুঈনরাও শহরবাসীর মতই। তাদের মধ্যেও ভালো-খারাপ উভয় ধরনের লোক রয়েছে। সুতরাং তারা বেদুঈন হয়েছে বলেই তাদের দুর্নাম করা হয়নি। বরং তারা আল্লাহর নির্দেশ না জানাটাই তাদের নিন্দার কারণ। দুই, কুফর ও নিফাক অবস্থাভেদে বেশী, কম, কঠোর ও হাল্কা হয়ে থাকে। তিন. এ আয়াত দ্বারা ইলমের সম্মান বুঝা যাচ্ছে। যার ইলম নেই সে ক্ষতির অধিক নিকটবর্তী সে লোকের তুলনায়, যার কাছে ইলম আছে। আর এজন্যই আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন। চার. এ আয়াত থেকে আরও বুঝা যায় যে, উপকারী ইলম সেটাই যা মানুষের কাজে লাগে। যা থাকলে মানুষ আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা জানতে পারে। যেমন, ঈমান, ইসলাম, ইহসান, তাকওয়া, সফলতা, আনুগত্য, সৎ, সুসম্পর্ক সম্পর্কে জ্ঞান। অনুরূপভাবে, কুফর, নিফাক, ফিসক, অবাধ্যতা, ব্যভিচার, মদ, সুদ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা; কেননা এগুলো জানলে আল্লাহর নির্দেশগুলো মানা যায়, আর নিষেধকৃত বস্তুগুলো পরিত্যাগ করা যায়। পাঁচ. ঈমানদারের উচিত তার কর্তব্যকর্ম অত্যন্ত খুশীমনে আদায় করা। সে সবসময় খেয়াল রাখবে যে সে এগুলো করতে পেরে লাভবান, ক্ষতিগ্রস্ত নয়। [সা’দী]
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 97-99
الَاعْرَابُ
The Bedouins are….
The Bedouins are the Worst in Disbelief and Hypocrisy
Allah says;
الَاعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلاَّ يَعْلَمُواْ حُدُودَ مَا أَنزَلَ اللّهُ عَلَى رَسُولِهِ
The Bedouins are the worst in disbelief and hypocrisy, and more likely to not know the limits which Allah has revealed to His Messenger.
Allah states that there are disbelievers, hypocrites and believers among the Bedouins. He also states that the disbelief and hypocrisy of the Bedouins is worse and deeper than the disbelief and hypocrisy of others. They are the most likely of being ignorant of the commandments that Allah has revealed to His Messenger.
Al-A`mash narrated that Ibrahim said,
“A Bedouin man sat next to Zayd bin Sawhan while he was speaking to his friends. Zayd had lost his hand during the battle of Nahawand. The Bedouin man said, `By Allah! I like your speech. However, your hand causes me suspicion.’
Zayd said, `Why are you suspicious because of my hand, it is the left hand (that is cut).’
The Bedouin man said, `By Allah! I do not know which hand they cut off (for committing theft), is it the right or the left?’
Zayd bin Sawhan said, `Allah has said the truth,
الَاعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلاَّ يَعْلَمُواْ حُدُودَ مَا أَنزَلَ اللّهُ عَلَى رَسُولِهِ
The Bedouins are the worst in disbelief and hypocrisy, and more likely to not know the limits which Allah has revealed to His Messenger.”
Imam Ahmad narrated that Ibn Abbas said that the Messenger of Allah said,
مَنْ سَكَنَ الْبَادِيَةَ جَفَا
وَمَنِ اتَّبَعَ الصَّيْدَ غَفَلَ
وَمَنْ أَتَى السُّلْطَانَ افْتُتِن
He who lives in the desert becomes hard-hearted,
he who follows the game becomes heedless, and
he who associates with the rulers falls into Fitnah.
Abu Dawud, At-Tirmidhi and An-Nasa’i collected this Hadith.
At-Tirmidhi said, “Hasan Gharib.”
The Prophet once had to give a Bedouin man many gifts because of what he gave him as a gift, until the Bedouin became satisfied. The Prophet said,
لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ لَا أَقْبَلَ هَدِيَّةً إِلاَّ مِنْ قُرَشِيَ أَوْ ثَقَفِيَ أَوْ أَنْصَارِيَ أَوْ دَوْسِي
I almost decided not to accept a gift except from someone from Quraysh, Thaqafi, the Ansar or Daws.
This is because these people lived in cities, Makkah, At-Ta’if, Al-Madinah and Yemen, and therefore, their conduct and manners are nicer than that of the hard-hearted Bedouins.
Allah said next,
وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
And Allah is All-Knower, All-Wise.
Allah knows those who deserve to be taught faith and knowledge, He wisely distributes knowledge or ignorance, faith or disbelief and hypocrisy between His servants. He is never questioned as to what He does, for He is the All-Knower, All-Wise.
Allah also said that.
وَمِنَ الَاعْرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ
And of the Bedouins there are some who look upon what they spend,
in Allah’s cause),
مَغْرَمًا
as a fine,
as a loss and a burden,
وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوَايِرَ
and watch for calamities for you,
awaiting afflictions and disasters to strike you,
عَلَيْهِمْ دَايِرَةُ السَّوْءِ
on them be the calamity of evil,
evil will touch them instead,
وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
And Allah is All-Hearer, All-Knower.
Allah hears the invocation of His servants and knows who deserves victory, who deserve failure.
Allah’s said.
وَمِنَ الَاعْرَابِ مَن يُوْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الاخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ
And of the Bedouins there are some who believe in Allah and the Last Day, and look upon what they spend (in Allah’s cause) as means of nearness to Allah, and a cause of receiving the Messenger’s invocations.
This is the type of praiseworthy Bedouins. They give charity in Allah’s cause as way of achieving nearness to Allah and seeking the Messenger’s invocation for their benefit,
أَلا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ
Indeed these are a means of nearness for them.
they will attain what they sought,
سَيُدْخِلُهُمُ اللّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
Allah will admit them to His mercy. Certainly Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.