أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 634)[যারা প্রথম অগ্রগামী]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
১০০ নং আয়াত:-
وَالسَّابِقُونَ الَاوَّلُونَ
যারা প্রথম অগ্রগামী,
The first forerunners,
وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۰۰﴾
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন । আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য।
And the first forerunners [in the faith] among the Muhajireen and the Ansar and those who followed them with good conduct – Allah is pleased with them and they are pleased with Him, and He has prepared for them gardens beneath which rivers flow, wherein they will abide forever. That is the great attainment.
১০০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এ আয়াতগুলোতে চারশ্রেণির লোকের বিবরণ প্রদান করা হচ্ছে:
প্রথম শ্রেণি:
মুহাজিরগণ: যারা দীনের স্বার্থে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মক্কা ও অন্যান্য এলাকা থেকে হিজরত করত নিজের সকল কিছু ত্যাগ করে মদীনায় চলে আসেন।
দ্বিতীয় শ্রেণি: আনসারগণ:
এরা মদীনার অধিবাসী ছিলেন। এরা সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহায্য ও সুরক্ষা করেছিলেন। মদীনায় আগত মুহাজিরদের যথাযথ সম্মান করেছিলেন এবং নিজেদের সবকিছু তাদের খিদমতে কুরবান করে দিয়েছিলেন। এ সকল মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা ঈমান আনার দিক দিয়ে অগ্রগামী ও প্রথম সারির তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।
অগ্রগামী ও প্রথম সারির সাহাবী কারা সে ব্যাপারে কয়েকটি মত পাওয়া যায়-
বিশিষ্ট তাবেয়ী শাবী বলেন: ইসলামের সূচনা থেকে হুদায়বিয়ার বছর যারা বাইয়াতে রিদওয়ান পেয়েছেন।
আবূ মূসা আল-আশআরীসহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন: যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে দুই কেবলার দিকে ফিরে সালাত আদায় করেছেন।
ইমাম শাওকানী (রাঃ) বলেন: উভয় মতই সঠিক হতে পারে। (ফাতহুল কাদীর, ২/৫০৩)
তৃতীয় শ্রেণি:
ঐ সকল ব্যক্তি যারা মুহাজির ও আনসারদের একনিষ্ট অনুসারী, এদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা শর্ত করেছেন (باحسان) অর্থাৎ যারা কথায়, কাজে ও আক্বীদায় তাদের একনিষ্ঠ অনুসারী। একনিষ্ঠতা থাকলেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সন্তুষ্ট, অন্যথায় তাদের ওপর সন্তুষ্ট না।
এ শ্রেণির সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কারা, সে ব্যাপারে অনেক বক্তব্য পাওয়া যায়।
কেউ বলেছেন: তারা পারিভাষিক অর্থে তাবেয়ীগণ, যারা নাবী (সাঃ)-এর দর্শন লাভ করতে পারেননি। কিন্তু সাহাবাদের অনুসরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
কেউ বলেছেন: কিয়ামত পর্যন্ত যে সকল মুসলিম আনসার ও মুহাজিরদের একনিষ্ঠ অনুসারী হবে। এতে তাবেয়ীগণও এসে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সন্তুষ্ট, এর অর্থ হল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সৎ কর্ম গ্রহণ করেছেন, মানুষ হিসেবে তাঁদের কৃত-ভুল ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তিনি তাদের ওপর অসন্তুষ্ট নন।
অতএব দুর্ভোগ তাদের যারা সাহাবাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, গালি-গালাজ করে এবং কটাক্ষ করে কথা বলে। বিশেষ করে আবূ বকর (রাঃ)কে যিনি সকল সাহাবাদের নেতা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পরেই যার স্থান।
সকল সাহাবীদের ব্যাপারে আমাদের অন্তর থাকবে সম্পূর্ণ বিদ্বেষহীন আর জবান থাকবে সকল অসংগতিপূর্ণ কথা থেকে মুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ جَا۬ءُوْ مِنْمبَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَآ إِنَّكَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ)
“যারা তাদের পরে এসেছে (পৃথিবীতে) তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইদেরকে ক্ষমা কর যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।” (সূরা হাশর ৫৯:১০)
যেমন নাবী (সাঃ) বলেন: তোমরা আমার সাহাবাদের গালি-গালাজ কর না, ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলে তাদের এক মুদ বা তার অর্ধেক (আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করার সমান) পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৬৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৫৪১)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা অবগত করছেন যে, মদীনার আশেপাশে মরুবাসী ও মদীনাতে কতিপয় মুনাফিক রয়েছে যারা নিফাকীতে অটল।
(سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ)
‘আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব’ – হাসান বসরী (রাঃ) বলেন: দুনিয়াতে শাস্তি ও কবরের শাস্তি।
আবদুর রহমান বিন জায়েদ বলেন: দুনিয়ার শাস্তি হল, সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। তখন তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
(فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَآ أَوْلَادُهُمْ ط إِنَّمَا يُرِيْدُ اللّٰهُ لِيُعَذِّبَهُمْ بِهَا فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كٰفِرُوْنَ)
“সুতরাং তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাকে যেন আশ্চর্য না করে, আল্লাহ তার দ্বারাই তাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান। তারা কাফির থাকা অবস্থায় তাদের আত্মা দেহত্যাগ করবে।”(সূরা তাওবাহ ৯: ৫৫)
এসব মুসিবত হল তাদের জন্য দুনিয়ার শাস্তি আর মু’মিনদের জন্য পুণ্য। পরকালের শাস্তি হল জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ثُمَّ يُرَدُّوْنَ إِلٰي عَذَابٍ عَظِيْمٍ)
“পরে তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে।”
চতুর্থ শ্রেণি:
যারা সৎ আমল করেছে এবং পাপ কাজও করেছে। আবার পাপ কাজের কথা স্বীকারও করেছে। আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। এ আয়াত অবতীর্ণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জাবের (রাঃ) বলেন: যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তারা ছয়জন: ১. আবূ লুবাবা, ২. আউস বিন খিযাম, ৩. সালাবা বিন ওয়াদিয়া ৪. কাব বিন মালিক, ৫. মুরারা বিন রবী এবং হিলাল বিন উমাইয়া।
আবূ লুবাবা, আউস ও সালাবা এসে নিজেদেরকে মাসজিদে নববীতে বাঁধল সাথে সকল সম্পদও নিয়ে আসল। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! এসব গ্রহণ করুন আপনার জন্য সবকিছু বরাদ্দ করে রেখেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন:
لا أحلهم حتي يكون قتال
তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সনদ মজবুত, লুবাবুন নুকূল. পৃঃ ১৫০)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আজ রাতে দুজন আগুন্তুক আমার নিকট আগমন করে এবং আমাকে এমন এক শহর পর্যন্ত নিয়ে যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। সেখানে আমি এমন কতগুলো লোক দেখতে পেলাম যাদের দেহের অর্ধাংশ খুবই সুন্দর ছিল এবং বাকি অর্ধাংশ ছিল অত্যন্ত কুৎসিত। ওদিকে তাকাতেই বললো: তোমরা এই নদীতে ডুব দিয়ে এসো। তারা ডুব দিয়ে যখন বের হয়ে আসল তখন তাদের দেহের সর্বাংশ সুন্দর দেখালো। আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে বলল: এটা হল জান্নাতে আদন। এটা আপনার মঞ্জিল। অতঃপর তারা বলল: এই যে কতগুলো লোক দেখলেন যাদের দেহের অর্ধাংশ ছিল খুবই সন্দুর এবং বাকি অর্ধাংশ ছিল অত্যন্ত কুৎসিত, তারা ঐ সমস্ত লোক যারা নেক আমলের সাথে বদ আমলও মিশিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৭৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কল্যাণ কাজে অগ্রবর্তী হওয়ার ফযীলত।
২. অন্যান্যদের ওপর সাহাবাদের ফযীলত।
৩. সাহাবাদের প্রতি আমাদের কেমন আক্বীদাহ বিশ্বাস ও আচরণ দেখানো প্রয়োজন তা জানতে পারলাম।
৪. অন্যান্য মু’মিনগণ যখন সাহাবাদের মত আক্বীদাহ গ্রহণ ও আমল করবে তাদের ফযীলত কেমন তাও জানতে পারলাম।
৫. যারা সৎ আমলের সাথে অসৎ আমল করেছে আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করবেন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন- আমি ঐসব মুহাজির, আনসার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি সন্তুষ্ট যারা আমার সন্তুষ্টি লাভ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী হয়েছে। আমি যে তাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছি তা এইভাবে প্রমাণিত যে, আমি তাদের জন্যে সুখময় জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছি।
শাবী (রঃ) বলেন যে, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে অগ্রবর্তী ও প্রথম তারাই যারা হুদায়বিয়ায় বায়আ’তে রিযওয়ানের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। আর আবূ মূসা আশআরী (রাঃ), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ), হাসান (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তারা হচ্ছেন ঐসব লোক যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে দুই কিবলার (বায়তুল মুকাদ্দাস ও কাবা) দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন।
মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কারাসী (রঃ) বলেন যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এমন একজন লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করছিলেনঃ (আরবী) তখন উমার (রাঃ) তার হাতখানা ধরে নেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “কে তোমাকে এটা এরূপে পাঠ করালেন?” লোকটি উত্তরে বললেনঃ “উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)।” তখন উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “চলো, আমরা উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)-এর কাছে যাই এবং তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করি।” অতঃপর উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি এই আয়াতটিকে এভাবে পড়তে বলেছেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যাঁ।” তখন পুনরায় উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কি আপনি এভাবেই পড়তে শুনেছেন?” জবাবে তিনি বলেনঃ “হ্যা ।” উমার (রাঃ) তখন বললেনঃ “তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আমরা এমন এক মর্যাদা লাভ করেছি যা আমাদের পরে কেউ লাভ করতে পারবে না।” এ কথা শুনে উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণকারী সূরায়ে জুমাআ’র প্রথম দিকের আয়াতটিও বটে। তা হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ আর (উপস্থিতরা ব্যতীত) অন্যান্য লোকদের জন্যেও, যারা তাদের সাথে শামিল হবে, কিন্তু এখনও শামিল হয়নি, আর তিনি মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।”(৬২:৩) সূরায়ে হাশরেও রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর (তাদের জন্যেও) যারা (ইসলাম ধর্মে) তাদের (আনসার ও মুহাজিরদের) পরে এসেছে, যারা প্রার্থনা করে-হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের ঐ ভাইদেরকেও যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং ঈমানদারদের প্রতি আমাদের অন্তরে যেন ঈর্ষা না হয়। হে আমাদের রব! আপনি বড় স্নেহশীল, করুণাময়।” (৫৯:১০) সূরায়ে আনফালেও রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর যারা (নবী সঃ-এর হিজরতের) পরবর্তীকালে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে একত্রে জিহাদ করেছে, বস্তুতঃ তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (৮:৭৫) ইবনে জারীর (রঃ) এটা রিওয়ায়াত করেছেন এবং বলেছেন যে, হাসান বসরী (রঃ) শব্দটিকে পেশ দিয়ে অর্থাৎ পড়তেন এবং (আরবী) এর উপর করতেন। তখন অর্থ দাঁড়াবেঃ “মুহাজিরদের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম এবং আনসার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট।” আফসোস ঐ হতভাগ্যদের প্রতি যারা এই সাহাবীদের প্রতি হিংসা পোষণ করে থাকে, তাদেরকে গালি দেয়। অথবা কোন কোন সাহাবীকে গালি দিয়ে থাকে, বিশেষ করে ঐ সাহাবীকে যিনি সমস্ত সাহাবীর নেতা, নবী (সঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত, রাসলুল্লাহ (সঃ)-এর পরেই যার মর্যাদা, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন অর্থাৎ মহান খলীফা আবু বকর ইবনে আবি কুহাফা (রাঃ)! এরা হচ্ছে রাফেযী সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত দল। তারা সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে থাকে। তাকে তারা গালি-গালাজ করে। আমরা এই দুষ্কার্য থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এটা এ কথাই প্রমাণ করে যে, এদের বুদ্ধি-বিবেক লোপ পেয়েছে এবং অন্তর বিগড়ে গেছে। যদি এই দুৰ্বত্তের দল এমন লোকদেরকে গালি দেয় যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং পবিত্র কুরআনে তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার সনদ দিয়েছেন, তবে কোন্ মুখে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনার দাবী করে? এখন কুরআনের উপর ঈমানই আর কি করে থাকলো? আর আহলে সুন্নাত ঐ লোকদেরকে সম্মান করেন এবং ঐ লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন যাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট রয়েছেন। এই আহলে সুন্নাত ঐ লোকদেরকে মন্দ বলেন যাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) মন্দ বলেছেন। আর তাঁরা ঐ লোকদেরকে ভালবাসেন যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন। তারা ঐ লোকদের বিরুদ্ধাচরণ করেন স্বয়ং আল্লাহ যাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। তারা হিদায়াতের অনুসারী। তারা বিদআতী নন। তাঁরা নবী (সঃ)-এরই অনুসরণ করে থাকেন। তারাই হচ্ছেন আল্লাহর দল এবং তারাই সফলকাম। তারাই হচ্ছেন আল্লাহর মুমিন বান্দা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এই আয়াতে তিন শ্রেণীর লোকের বর্ণনা বিদ্যমান। প্রথমঃ মুহাজিরগণ, যাঁরা দ্বীনের খাতিরে আল্লাহ ও রসূলের আদেশ পালনার্থে মক্কা ও অন্যান্য এলাকা থেকে হিজরত করতঃ সকল কিছু ত্যাগ করে মদীনায় চলে যান। দ্বিতীয়ঃ আনসারগণ, এঁরা মদীনার অধিবাসী ছিলেন। এঁরা সর্বাবস্থায় রসূল (সাঃ)-এর সাহায্য ও সুরক্ষা বিধান করেছিলেন এবং মদীনায় আগত মুহাজিরদের যথাযথ সম্মান করেছিলেন এবং নিজেদের সবকিছু তাদের খিদমতে কুরবান করে দিয়েছিলেন। এখানে সেই উভয় শ্রেণীর ‘আস্-সাবিক্বূনাল আওয়ালূন’ (অগ্রবর্তী ও প্রথম) ব্যক্তিবর্গের কথা বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ সেই উভয় শ্রেণীর মধ্যে ঐ সকল ব্যক্তি যাঁরা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। এরা কারা ছিলেন তা নির্ধারণ করণে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের নিকট ‘আস্-সাবিক্বূনাল আওয়ালূন’ তাঁরা, যাঁরা উভয় ক্বিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়েছেন। অর্থাৎ ক্বিবলা পরিবর্তন হওয়ার পূর্বে যে সমস্ত মুহাজির ও আনস্বারগণ মুসলমান হয়েছিলেন তাঁরা। আবার অনেকের নিকট ‘আস্-সাবিক্বূনাল আওয়ালূন’ ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম, যাঁরা হুদাইবিয়ায় অনুষ্ঠিত বাইআতে-রিযওয়ানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আবার অনেকের নিকট ওঁরা হলেন তাঁরা, যাঁরা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইমাম শওকানী (রহঃ) বলেন, সকল অভিমতই সঠিক হতে পারে। তৃতীয়ঃ- ঐ সকল ব্যক্তি, যাঁরা একনিষ্ঠভাবে সেই মুহাজির ও আনস্বারদের অনুগামী ছিলেন। কেউ কেউ বলেন,তাঁরা হলেন পারিভাষিক অর্থে তাবেয়ীগণ, যাঁরা নবী (সাঃ)-এর দর্শন লাভ করতে পারেননি, কিন্তু সাহাবায়ে কিরামগণের সাথী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। আবার কেউ কেউ তা সাধারণ রেখেছেন, অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যে সকল মুসলিম মুহাজির ও আনস্বারদের সাথে মহব্বত রাখবেন ও তাঁদের আদর্শের উপর চলবেন, তাঁরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এতে পারিভাষিক অর্থে তাবেয়ীগণও এসে যাচ্ছেন।
[২] ‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট’ বাক্যটির অর্থ হল, আল্লাহ তাআলা তাঁদের সৎকর্ম গ্রহণ করেছেন, মানুষ হিসাবে তাঁদের কৃত ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তিনি তাঁদের উপর অসন্তুষ্ট নন। যদি তা না হত, তাহলে উক্ত আয়াতে তাঁদের জন্য জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতের সুসংবাদ দেওয়া হল কেন? এই আয়াত দ্বারা এটাও জানা গেল যে, আল্লাহর এই সন্তুষ্টি সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী নয়, বরং চিরস্থায়ী। যদি রসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কিরামগণের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত (যেমন এক বাতিল ফির্কার বিশ্বাস আছে), তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন না। এ থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, যখন আল্লাহ তাআলা তাঁদের সমস্ত ত্রুটি মার্জনা করে দিয়েছেন, তখন তাঁদের সমালোচনা করে তাঁদের ভুল-ত্রুটি বর্ণনা করা কোন মুসলিমের উচিত নয়। বস্তুতঃ এটাও জানা গেল যে, তাঁদের প্রতি মহব্বত রাখা এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ। আর তাঁদের প্রতি শত্রুতা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। {فَأَيُّ الْفَرِيقَيْنِ أَحَقُّ بِالأَمْنِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ}
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতে সাহাবাদের প্রশংসায় আল্লাহ্ তা’আলা “সাবেকীন আওয়ালীন” বা ‘প্রথম অগ্রগামী’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এ “সাবেকীন আওয়ালীন কারা তা নির্ধারণে বিভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়।
ক) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ আয়াতে “সাবেকীন আওয়ালীন” এর পরে
(مِنَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ)
বাক্যে ব্যবহৃত (مِنْ) অব্যয়টি কারো কারো মতে (تبعيض) বা কিছু সংখ্যক বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ তাফসীর অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরামের দুটি শ্রেণী সাব্যস্ত হয়েছে। একটি হল সাবেকীনে আওয়ালীনের, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কেবলা পরিবর্তন কিংবা বদরযুদ্ধ অথবা বাইআতে রেদওয়ান অথবা মক্কা বিজয়ের পরে যারা মুসলিম হয়েছে তারা সবাই। তখন সাহাবাগণ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত হবেন,
এক) মুহাজেরীন ও আনসারদের মধ্যে যারা “সাবেকীন আওয়ালীন” বা ঈমান গ্রহণে ও হিজরতে অগ্রবর্তী।
দুই) অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম। এ তাফসীর অনুসারে সাহাবাদের মধ্যে কারা “সাবেকীন আওয়ালীন’ বলে গণ্য হবেন এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি মত রয়েছেঃ
১) কোন কোন মনীষী সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে “সাবেকীন আওয়ালীন তাদেরকেই সাব্যস্ত করেছেন, যারা উভয় কেবল অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাস ও কাবার দিকে মুখ করে সালাত পড়েছেন। অর্থাৎ যারা কেবল পরিবর্তনের পূর্বে মুসলিম হয়েছে তাদেরকে “সাবেকীন আওয়ালীন” গণ্য করেছেন। এমনটি হল সাঈদ ইবন মুসাইয়োব ও কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু— এর মত [কুরতুবী]
২) আতা ইবন আবী রাবাহ বলেছেন যে, সাবেকীনে আওয়ালীন হলেন সে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। [কুরতুবী]
৩) ইমাম শা’বী রাহিমাহুল্লাহ এর মতে যেসব সাহাবী হুদায়বিয়ার বাইয়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারাই সাবেকীন আওয়ালীন। [কুরতুবী] লক্ষণীয় যে, সবার নিকটই যারা কিবলা পরিবর্তনের আগে হিজরত করেছেন তারা নিঃসন্দেহে সাবেকীন আওয়ালীন। আর যারাই বাই’আতে রিদওয়ান তথা হুদায়বিয়ার পরে হিজরত করেছেন তারা সবার মত অনুযায়ীই মুহাজির হোক বা আনসার সাবেকীনে আওয়ালীনের পর দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত। তবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হচ্ছে যে, হুদাইবিয়ার সন্ধির আগে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই সাবেকীনে আওয়ালীন। [ইবন তাইমিয়্যাহ, মিনহাজুস সুন্নাহ: ১/১৫৪-১৫৫]
খ) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ আয়াতে (مِنْ) অব্যয়টি আংশিক বুঝাবার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়নি বরং বিবরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। তখন এর মর্ম হবে এই যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম অন্যান্য সমস্ত উম্মতের তুলনায় সাবেকীনে আওয়ালীন। এ তাফসীরের মর্ম হল এই যে, সাহাবায়ে কেরামই হলেন মুসলিমদের মধ্যে সাবেকীনে আওয়ালীন। কারণ, ঈমান আনার ক্ষেত্রে তাঁরাই সমগ্র উম্মতের অগ্রবতী ও প্রথম। পরবর্তী কিয়ামত পর্যন্ত সবাই তাবেয়ীন বা তাদের অনুসারী [ফাতহুল কাদীর]
[২] অর্থাৎ যারা আমল ও চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে অগ্রবর্তী মুসলিমদের অনুসরণ করেছে পরিপূর্ণভাবে। উপরোক্ত প্রথম তফসীর অনুযায়ী যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে বলে হুদায়বিয়ার সন্ধি পরবতী সে সমস্ত সাহাবা এবং মুসলিম, যারা কেয়ামত অবধি ঈমান গ্রহণ, সৎকর্ম ও সচ্চরিত্রের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের উপর চলবে এবং পরিপূর্ণভাবে তাদের অনুসরণ করবে। [কুরতুবী] আর উপরোক্ত দ্বিতীয় তফসীর অনুযায়ী এর দ্বারা সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তী মুসলিমগণ অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে পারিভাষিকভাবে তাবেয়ী’ বলা হয়। এরপর পরিভাষাগত এই তাবেয়ীগণের পর কেয়ামত অবধি আগত সে সমস্ত মুসলিমও এর অন্তর্ভুক্ত যারা ঈমান ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে সাহাবায়ে কেরামের আনুগত্য ও অনুসরণ করবে। [ফাতহুল কাদীর]
[৩] সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। যদি দুনিয়াতে তাদের কারো দ্বারা কোন ক্রটি বিচ্যুতি হয়েও থাকে তবুও। এর প্রমাণ হলো কুরআন কারীমের এ আয়াত। এতে শর্তহীনভাবে সমস্ত সাহাবা সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে,
(رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ)
অবশ্য তাবেয়ীনদের ব্যাপারে বলেছেনঃ
(وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍ)
“যারা সুন্দরভাবে তাদের অনুসরণ করেছে”। সুতরাং তাবেয়ীনদের ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের পরিপূর্ণ সুন্দর অনুসরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরামের সবাই কোন রকম শর্তাশর্ত ছাড়াই আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টিধন্য। এ ব্যাপারে আরও প্রমাণ হলো, আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
(لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ)
অবশ্যই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন মুমিনদের থেকে, যখন তারা গাছের নীচে আপনার হাতে বাই’আত হচ্ছিল”। [সূরা আল-ফাতহঃ ১৮]। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা’আলা সূরা মুজাদালাহর ২২ নং আয়াতেও সাহাবাদের প্রশংসা করে তাদের উপর সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও সাহাবায়ে কেরামের জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে আরো স্পষ্ট দলীলের মধ্যে রুয়েছে , আল্লাহ্র বাণীঃ
( لَا یَسۡتَوِی الۡقٰعِدُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ غَیۡرُ اُولِی الضَّرَرِ وَ الۡمُجٰهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ ؕ فَضَّلَ اللّٰہُ الۡمُجٰهِدِیۡنَ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ عَلَی الۡقٰعِدِیۡنَ دَرَجَةً ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰہُ الۡحُسۡنٰی)
মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধনপ্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ হুসনা’ বা সবচেয়ে ভাল পরিণামের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আন-নিসাঃ ৯৫]। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র আরো বলেনঃ
(لَا یَسۡتَوِیۡ مِنۡکُمۡ مَّنۡ اَنۡفَقَ مِنۡ قَبۡلِ الۡفَتۡحِ وَ قٰتَلَ ؕ اُولٰٓئِکَ اَعۡظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِیۡنَ اَنۡفَقُوۡا مِنۡۢ بَعۡدُ وَ قٰتَلُوۡا ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰہُ الۡحُسۡنٰی)
“তোমাদের মধ্যে যারা ফাতহ তথা হুদায়বিয়ার সন্ধির আগে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে, তারা এবং পরবর্তীরা সমান নয়। তারা মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ ওদের চেয়ে, যারা পরবর্তী কালে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়ের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। [সূরা আল-হাদীদঃ ১০]। এতে বিস্তারিত এভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরাম প্রাথমিক পর্যায়ের হোন কিংবা পরবতী পর্যায়ের, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের সবার জন্যই জান্নাতের ওয়াদা করেছেন।
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 100
وَالسَّابِقُونَ الَاوَّلُونَ
The first forerunners,
Virtues of the Muhajirin, Ansar and Those Who followed Them in Faith
Allah says;
وَالسَّابِقُونَ الَاوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالَانصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الَانْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
And the foremost to embrace Islam of the Muhajirin and the Ansar and also those who followed them exactly (in faith). Allah is well-pleased with them as they are well-pleased with Him. He has prepared for them Gardens under which rivers flow (Paradise), to dwell therein forever. That is the supreme success.
Allah mentions that He is pleased foremost with the Muhajirin, Ansar and those who followed them in faith, and that they are well-pleased with Him, for He has prepared for them the gardens of delight and eternal joy.
Ash-Sha`bi said that,
وَالسَّابِقُونَ الَاوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالَانصَارِ
(The foremost Muhajirin and Ansar) are those who conducted the pledge of Ar-Ridwan in the year of Hudaybiyyah.
Abu Musa Al-Ash`ari, Sa`id bin Al-Musayyib, Muhammad bin Sirin, Al-Hasan and Qatadah said that;
they are those who performed the prayer towards the two Qiblahs with the Messenger of Allah (first toward Jerusalem and later toward the Ka`bah).
Allah, the Most Great, stated that He is pleased foremost with the Muhajirin, the Ansar and those who followed their lead with excellence. Therefore, woe to those who dislike or curse them, or dislike or curse any of them, especially their master after the Messenger, the best and most righteous among them, the Siddiq (the great truthful one) and the grand Khalifah, Abu Bakr bin Abi Quhafah, may Allah be pleased with him.
The failure group, the Rafidah (a sect of Shiites), are the enemies of the best Companions, they hate and curse them, we seek refuge with Allah from such evil.
This indicates that the minds of these people are twisted and their hearts turned upside down, for where are they in relation to believing in the Qur’an They curse those whom Allah stated He is pleased with!
As for the followers of the Sunnah, they are pleased with those whom Allah is pleased with, curse whomever Allah and His Messenger curse, and give their loyalty to Allah’s friends and show enmity to the enemies of Allah. They are followers not innovators, imitating (the Sunnah) they do not initiate it on their own. They are indeed the party of Allah, the successful, and Allah’s faithful servants.