أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
(Book# 642)[অংশীবাদীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা সঙ্গত নয়;]
www.motaher21.net
সুরা: আত্ তাওবাহ
সুরা:০৯
১১৩-১১৬ নং আয়াত:-
يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ
অংশীবাদীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা সঙ্গত নয়;
The Prohibition of supplicating for Polytheists
مَا کَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ یَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِکِیۡنَ وَ لَوۡ کَانُوۡۤا اُولِیۡ قُرۡبٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُمۡ اَنَّہُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ ﴿۱۱۳﴾
অংশীবাদীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও বিশ্বাসীদের জন্য সঙ্গত নয়; যদিও তারা আত্মীয়ই হোক না কেন, তাদের কাছে একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।
It is not for the Prophet and those who have believed to ask forgiveness for the polytheists, even if they were relatives, after it has become clear to them that they are companions of Hellfire.
وَ مَا کَانَ اسۡتِغۡفَارُ اِبۡرٰہِیۡمَ لِاَبِیۡہِ اِلَّا عَنۡ مَّوۡعِدَۃٍ وَّعَدَہَاۤ اِیَّاہُ ۚ فَلَمَّا تَبَیَّنَ لَہٗۤ اَنَّہٗ عَدُوٌّ لِّلّٰہِ تَبَرَّاَ مِنۡہُ ؕ اِنَّ اِبۡرٰہِیۡمَ لَاَوَّاہٌ حَلِیۡمٌ ﴿۱۱۴﴾
আর ইব্রাহীমের নিজ পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা তো কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে ছিল, যা সে তার সাথে করেছিল। অতঃপর যখন তার নিকট এ সুস্পষ্ট হল যে, সে (পিতা) আল্লাহর দুশমন, তখন সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিল। বাস্তবিকই ইব্রাহীম ছিল অতিশয় কোমল হৃদয়, সহনশীল।
And the request of forgiveness of Abraham for his father was only because of a promise he had made to him. But when it became apparent to Abraham that his father was an enemy to Allah, he disassociated himself from him. Indeed was Abraham compassionate and patient.
وَ مَا کَانَ اللّٰہُ لِیُضِلَّ قَوۡمًۢا بَعۡدَ اِذۡ ہَدٰىہُمۡ حَتّٰی یُبَیِّنَ لَہُمۡ مَّا یَتَّقُوۡنَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۱۱۵﴾
আর আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে পথপ্রদর্শন করার পর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেন; যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেসব বিষয় পরিষ্কারভাবে বলে দেন, যা হতে তারা বেঁচে থাকবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
And Allah would not let a people stray after He has guided them until He makes clear to them what they should avoid. Indeed, Allah is Knowing of all things.
اِنَّ اللّٰہَ لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ؕ وَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ ﴿۱۱۶﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব নিশ্চয়ই আল্লাহরই; তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন; আর তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া না কোন বন্ধু আছে, আর না কোন সাহায্যকারী।
Indeed, to Allah belongs the dominion of the heavens and the earth; He gives life and causes death. And you have not besides Allah any protector or any helper.
১১৩-১১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
শানে নুযূল:
সাঈদ বিন মুসাইয়েব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: যখন (নাবী (সাঃ)-এর চাচা) আবূ তালেব মুমূর্ষু অবস্থায় তখন নাবী (সাঃ) তার কাছে প্রবেশ করলেন, সেখানে আবূ জাহল, আবদুল্লাহ বিন আবূ উমাইয়াও ছিল। নাবী (সাঃ) বললেন: হে চাচা! তুমি
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
বাক্যটি পড়, এর মাধ্যমে আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আপনার জন্য সুপারিশ করব। আবূ জাহল ও আবদুল্লাহ বলল: হে আবূ তালেব! আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে? বর্ণনাকারী বলেন: তারা দু’জনে সর্বদা তার সাথে কথা বলতেই থাকল। সর্বশেষে আবূ তালিব বলল: আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের ওপর (রয়ে গেলাম)। নাবী (সাঃ) বললেন: ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে এ থেকে নিষেধ না করা হবে। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়:
(مَا کَانَ لِلنَّبِیِّ وَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْٓا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِکِیْنَ وَلَوْ کَانُوْٓا اُولِیْ قُرْبٰی مِنْۭ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَھُمْ اَنَّھُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ﯀)
(সহীহ বুখারী হা: ৪৬৭৫ । এছাড়াও এ আয়াতের আরো অনেক শানে নুযূল পাওয়া যায়। যেমন মুসনাদে আহমাদের ৩১০১ নং হাদীস, সে বর্ণনাও সহীহ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মায়ের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করার ইচ্ছা করলেন। আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করলেন। তখন নাবী (সাঃ) বললেন: আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেছেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (ইবনে কাসীর, ৪/ ৩২৯)
বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমরা একদা নাবী (সাঃ)-এর সাথে সফরে ছিলাম। এক জায়গায় আমরা তাঁর সাথে অবতরণ করলাম। সাথে এক হাজার আরোহী ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে অশ্র“সিক্ত অবস্থায় অভিমুখী হলেন। উমার (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনার কী হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছিলাম। তিনি অনুমতি দেননি। (আহমাদ: ৫/৩৫৫ পৃঃ, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ১/১১৬ পৃঃ)
অতএব কোন ব্যক্তি মুশরিক অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা কোন মু’মিনের জন্য বৈধ নয়।
কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّه۫ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوٰهُ النَّارُ)
“কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম।” (সূরা মায়িদা ৫:৭২)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতার জন্য যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তা ছিল পূর্ব প্রতিশ্র“তির কারণে। তা হল:
(قَالَ سَلٰمٌ عَلَيْكَ ج سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّيْ ط إِنَّه۫ كَانَ بِيْ حَفِيًّا)
“ইব্রাহীম বলল: ‘তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।”(সূরা মারইয়াম ১৯:৪৭)
যখন ইবরাহীম (আঃ) জানতে পারলেন যে, তাঁর পিতা আল্লাহ তা‘আলার শত্রু ও জাহান্নামী তখন তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন এবং আর ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।
(وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُضِلَّ قَوْمًا)
‘আল্লাহ এমন নয় যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করার পর তাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন’ আল্লাহ তা‘আলা যখন মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করে দিলেন, তখন কিছু সাহাবী যারা এ কর্ম করেছিলেন তারা চিন্তিত হলেন যে, তারা তাদের মুশরিক আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে পথভ্রষ্ট হননি তো? আল্লাহ তা‘আলা বললেন: তিনি যতক্ষণ কোন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি না করেন ততক্ষণ তিনি তার এ ব্যাপারে পাকড়াও করেন না এবং তাকে পথভ্রষ্ট বলেও গণ্য করেন না। তবে নিষিদ্ধ কর্ম থেকে কেউ বিরত না থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পথভ্রষ্ট করেন।
সুতরাং আয়াত প্রমাণ করছে অপরাধ মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায় ও হিদায়াতের অন্তরায় হয়। তাই অপরাধমূলক কাজ থেকে বেঁচে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু’আ করতে হবে তিনি যেন সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কেউ মুশরিক অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হারাম।
২. ওয়াদা পূর্ণ করা ওয়াজিব।
৩. সম্পূর্ণভাবে অবগত না করে আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দা বা জাতিকে পথভ্রষ্ট করেন না।
৪. সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৫. মু’মিনদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-113
مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِیْنَ وَ لَوْ كَانُوْۤا اُولِیْ قُرْبٰى مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ
নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সঙ্গত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।
* কোন ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আবেদন জানানোর অনিবার্য অর্থ হচ্ছে এই যে, আমরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তাকে ভালবাসি। আমরা তার দোষকে ক্ষমা যোগ্য মনে করি। যারা বিশ্বস্তদের অন্তর্ভুক্ত এবং শুধুমাত্র গোনাহগার তাদের ক্ষেত্রে এ দুটো কথাই ঠিক। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া তাকে ভালবাসা ও তার অপরাধকে ক্ষমা যোগ্য মনে করা শুধু যে নীতিগতভাবে ভুল তাই নয় বরং এর ফলে আমাদের নিজেদের বিশ্বস্ততা ও সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে। আর যদি শুধুমাত্র আমাদের আত্মীয় বলে আমরা তাকে মাফ করে দিতে চাই তাহলে এর মানে হবে, আমাদের কাছে আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ততার দাবীর তুলনায় অনেক বেশী মূল্যবান। আল্লাহ ও তার দ্বীনের প্রতি আমাদের ভালবাসা নির্ভেজাল ও শর্তহীন নয়। আল্লাহ দ্রোহীদের সাথে আমরা যে সম্পর্কে জুড়ে রেখেছি তার ফলে আমরা চাচ্ছি, আল্লাহ নিজেও যেন এ সম্পর্ক গ্রহণ করেন এবং আমাদের আত্মীয়কে যেন অবশ্যই ক্ষমা করে দেন, যদিও এ একই অপরাধ করার কারণে অন্যান্য অপরাধীদেরকে তিনি জাহান্নামের শাস্তি দিয়ে থাকেন। বস্তুত এ সমস্ত কথাই ভুল আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার বিরোধী এবং সেই একনিষ্ঠ ঈমানের পরিপন্থী যার দাবী হচ্ছে, আল্লাহ ও তার দ্বীনের প্রতি আমাদের ভালবাসা নির্ভেজাল হতে হবে, আল্লাহর বন্ধু হবে আমাদের বন্ধু এবং তার শত্রু হবে আমাদের শত্রু। এ কারণে মহান আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, তোমরা মুশরিকদের জন্য মগফিরাতের দোয়া করো না। বরং তিনি বলেছেন তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা তোমাদের পক্ষে শোভা পায় না। অর্থাৎ আমার মানা করায় যদি তোমরা বিরত থাকো তাহলে তো এর তেমন কোন গুরুত্ব থাকে না। মূলত তোমাদের মধ্যে আনুগত্যও বিশ্বস্ততার অনুভূতি এত বেশী তীব্র হওয়া উচিত যার ফলে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারীদের সাথে সহানুভূতির সম্পর্ক রাখা এবং তাদের অপরাধকে ক্ষমা যোগ্য মনে করা তোমাদের নিজেদের কাছেই অশোভন ঠেকে।
এখানে আরো এতটুকু বুঝে নিতে হবে যে, আল্লাহ দ্রোহীদের প্রতি যে সহানুভূতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা কেবলমাত্র এমন পর্যায়ের সহানুভূতি যা দ্বীনের ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে মানবিক সহানুভূতি এবং পার্থিব সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আত্মীয়তা ও রক্ত সম্পর্ক এবং স্নেহ-সম্প্রীতি পূর্ণ ব্যবহার এসব নিষিদ্ধ নয় বরং প্রশংসনীয়। আত্মীয় কাফের হোক বা মু’মিন, তার সামাজিক অধিকার অবশ্যই প্রদান করতে হবে। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সকল অবস্থায় সাহায্য দিতে হবে। অভাবীকে যে কোন সময় সহায়তা দন করতে হবে। রুগ্ন ও আহতের সেবা ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের ব্যাপারে কোন ত্রুটি দেখানো যাবে না। ইয়াতীমের মাথায় অবশ্যই স্নেহের হত বুলাতে হবে। এসব ব্যাপারে কখনো মুসলিম ও অমুসলিমের বাচবিচার করা চলবে না।
* সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-114
وَ مَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرٰهِیْمَ لِاَبِیْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِیَّاهُ١ۚ فَلَمَّا تَبَیَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُ١ؕ اِنَّ اِبْرٰهِیْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِیْمٌ
ইবরাহীম তার বাপের জন্য যে মাগফিরাতের দোয়া করেছিল তা তো সেই ওয়াদার কারণে ছিল যা সে তার বাপের সাথে করেছিল্ কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, তার বাপ আল্লাহর দুশমন তখন সে তার প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে। যথার্থই ইবরাহীম কোমল হৃদয়, আল্লাহ ভীরু ও ধৈর্যশীল ছিল।
তাফসীর :
* হযরত ইবরাহীম তার মুশরিক পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় যে কথা বলেছিলেন সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তিনি বলেছিলেনঃ
سَلَامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا
আপনার প্রতি সালাম, আপনার জন্য আমি আমার রবের কাছে দোয়া করবো যেন তিনি আপনাকে মাফ করে দেন। তিনি আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান। (মারয়ামঃ ৪৭) তিনি আরো বলেছিলেনঃ
لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ
আমি আপনার জন্য অবশই ক্ষমা চাইবো। তবে আপনাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা আমার নেই। (আল মুমতাহিনাঃ ৪) উপরোক্ত ওয়াদার ভিত্তিতে তিনি নিজের পিতার জন্য এ দোয়া করেছিলেনঃ
وَاغْفِرْ لِأَبِي إِنَّهُ كَانَ مِنَ الضَّالِّينَ – وَلَا تُخْزِنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ – يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ – إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
আর আমার পিতাকে মাফ করে দাও, তিনি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আর যেদিন সকল মানুষকে উঠানো হবে সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না। যেদিন ধনসম্পদ এবং সন্তান সন্তুতি কারোর কোন কাজে লাগবে না। একমাত্র সেই নাজাত পাবে, যে আল্লাহর সামনে হাযির হবে বিদ্রোহ মুক্ত হৃদয় নিয়ে। (আশ শুআরাঃ ৮৬-৮৯)
এ দোয়া তো প্রথমত অত্যন্ত সতর্ক ও সংযত ভাষায় করা হয়েছিল। কিন্তু পরক্ষনেই হযরত ইবরাহীম চিন্তা করলেন যে, তিনি যে ব্যক্তির জন্য দোয়া করেছেন সে তো ছিল প্রকাশ্য আল্লাহ দ্রোহী এবং আল্লাহর দ্বীনের ঘোরতর শত্রু তখন তিনি এ থেকে বিরত হলেন এবং একজন যথার্থ বিশ্বস্ত মু’মিনের মত বিদ্রোহীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো থেকে পরিষ্কারভাবে সরে দাঁড়লেন। অথচ এ বিদ্রোহী ছিল তার পিতা, যে এক সময় স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে তাকে লালন পালন করেছিল।
* মূলে اواه (আওওয়াহুন) ও حَكِيم(হালীমুন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আওওয়াহুন মানে হচ্ছে, যে অনেক বেশী হা-হুতাশ করে, কান্নাকাটি করে, ভয় পায় ও আক্ষেপ করে। আর হালীম এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে নিজের মেজায সংযত রাখে, রাগে, শত্রুতায় ও বিরোধিতায় বেসামাল আচরণ করে না এবং অন্যদিকে ভালবাসায়, বন্ধুত্বের ও হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে যায় না। এখানে এ শব্দ দু’টি দ্বিবিধ অর্থ প্রকাশ করছে। হযরত ইবরাহীম (আ) তার পিতার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেছেন। কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল হৃদয় বৃত্তির অধিকারী। তার পিতা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হবে, একথা ভেবে তিনি কেঁপে উঠেছিলেন। আবার তিনি ছিলেন “হালিম”-সংযমী ও ধৈর্যশীল। তার পিতা ইসলামের পথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বাধা দেবার জন্য তার ওপর যে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছিল তা সত্ত্বেও তার মুখ থেকে পিতার জন্য দোয়া বের হয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি দেখলেন, তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন, তাই তিনি তার থেকে নিজেকে দায়মুক্ত করে নিলেন। কারণ তিনি আল্লাহকে ভয় করতেন এবং কারোর প্রতি ভালোবাসায় সীমা অতিক্রম করতেন না।
* সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-115
وَ مَا كَانَ اللّٰهُ لِیُضِلَّ قَوْمًۢا بَعْدَ اِذْ هَدٰىهُمْ حَتّٰى یُبَیِّنَ لَهُمْ مَّا یَتَّقُوْنَ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ
লোকদেরকে হেদায়াত দান করার পর আবার গোমরাহীতে লিপ্ত করা আল্লাহর রীতি নয়, যতক্ষণ না তিনি তাদেরকে কোন জিনিস থেকে সংযত হয়ে চলতে হবে তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন। আসলে আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের জ্ঞান রাখেন।
তাফসীর :
* লোকদের কোন চিন্তা কার্যধারা ও পদ্ধতি থেকে বাঁচতে হবে তা আল্লাহ আগেই বলে দেন। তারপর যখন তারা তা থেকে বিরত হয় না এবং ভুল চিন্তা ও কাজে লিপ্ত হয়ে তার ওপর অবিচল থাকে তখন আল্লাহও তাদের হেদায়াত করার ও সঠিক পথ নির্দেশনা দেয়া থেকে বিরত হন এবং যে ভুল পথে তারা যেতে চায় তার ওপর তাদেরকে ঠেলে দেন।
এ বক্তব্যটি থেকে একটি মূলনীতি অনুধাবন করা যায়। আল্লাহ কুরআন মজীদের যেসব জায়গায় হেদায়াত দেয়া ও গোমরাহ করাকে তার নিজের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলো এ মূলনীতিটির মাধ্যমে ভালভাবে বুঝে যেতে পারে। আল্লাহর হেদায়াত দেয়ার মানে হচ্ছে, তিনি নিজের নবী ও কিতাসমূহের সাহায্যে লোকদের সামনে সঠিক চিন্তা ও কর্মধারা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তারপর যারা স্বেচ্ছায় এ পথে চলতে উদ্যোগী হয় তাদের চলার সুযোগ ও সামর্থ্য দান করেন। আর আল্লাহর গোমরাহীতে লিপ্ত করার মানে হচ্ছে তিনি যে সঠিক চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন যদি তার বিপরীত পথে চলার জন্য কেউ জোর প্রচেষ্টা চালায় এবং সোজা পথে চলতে না চায় তাহলে আল্লাহ জোর করে তাকে সত্য পথ দেখান না এবং সত্যের দিকে চালিত ও করেন না বরং যেদিকে সে নিজে যেতে চায় সেদিকে যাবার সুযোগ ও সামর্থ্য তাকে দান করেন।
আলোচ্য ভাষণটি একথাটি কোন প্রসঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে, আগের ও পরের ভাষণ গুলো গভীর মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করলে তা সহজেই বুঝা যেতে পারে। এটা এক ধরনের সতর্কবাণী। একে অত্যন্ত সঙ্গত ভাবে আগের বর্ণনার সমাপ্তি হিসাবেও গণ্য করা যেতে পারে। আবার পরে যে আলোচনা আসছে তার ভূমিকা ও বলা যেতে পারে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১৩-১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
মুসনাদে আহমাদে ইবনুল মুসাইয়াব (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আবু তালিব যখন মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছিলেন, সেই সময় নবী (সঃ) তাঁর কাছে গমন করেন। ঐ সময় তাঁর কছে আবু জাহেল ও আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই উমাইয়া উপস্থিত ছিল। রাসূলুল্লাহ (স) বললেনঃ “হে চাচা! আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করুন! এই বাক্যটিকেই আমি আপনার মার্জনার পক্ষে আল্লাহর নিকট হুজ্জত হিসেবে পেশ করবো।” তখন আবূ জাহেল এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই উমাইয়া বললোঃ “হে আবু তালিব! তুমি আব্দুল মুত্তালিবের মিল্লাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে?” আবু তালিব তখন বললেনঃ “আমি আব্দুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরই রয়ে গেলাম।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “আমি ঐ পর্যন্ত আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবো যে পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমাকে নিষেধ না করেন। আল্লাহ তাআলা তখন। (আরবী) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। অর্থাৎ “নবী (সঃ) ও মুমিনদের জন্যে এটা জয়েয নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (আরবী) আয়াতটিও এই সম্পর্কেই নাযিল হয়। অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! নিশ্চয়ই তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত করতে পার না, বরং আল্লাহই যাকে চান তাকে তিনি হিদায়াত করে থাকেন।” (২৮:৫৬)
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমি একজন লোককে দেখলাম যে, তার মুশরিক পিতা-মাতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। আমি তাকে বললাম, তুমি তোমার মুশরিক পিতা-মাতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছো! সে তখন বললোঃ “ইবরাহীম (আঃ) কি তার মুশরিক পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি?” আমি ঘটনাটি নবী (সঃ)-এর সামনে বর্ণনা করলাম। তখন (আরবী) -এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
(আরবী) -এর পরে (আরবী) -এই শব্দগুলোও বলা হয়েছে। কিন্তু আমি বলতে পারি না যে, সুফিয়ান (রঃ) স্বয়ং বলেছেন, কিংবা ইসরাঈল (রঃ) বলেছেন, অথবা স্বয়ং হাদীসেই এই শব্দগুলো রয়েছে। আমি বলি- এটা প্রমাণিত যে, এই শব্দগুলো মুজাহিদ (রঃ) বলেছেন।
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সফরে নবী (সঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমরা এক জায়গায় অবতরণ করি। আমরা প্রায় এক হাজার আরোহী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেখানে দু’রাকাআত সালাত পড়েন। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসেন। আমরা দেখলাম যে, তার চক্ষু দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। উমার (রাঃ) তার কাছে এসে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর উৎসর্গিত হোন! আপনার কাঁদার কারণ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেছিলমি যে, আমাকে যেন আমার মায়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। তখন আগুনের ভয়ে আমার মায়ের প্রতি আমার করুণার উদ্রেক হলো এবং এ কারণেই আমার চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। ইতিপূর্বে আমি তোমাদেরকে তিনটি জিনিস থেকে নিষেধ করেছিলাম। তোমাদেরকে আমি কবর যিয়ারত হতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন থেকে তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার; উদ্দেশ্য শুধু এটাই যে, এর ফলে তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে এবং তোমরা কল্যাণের দিকে ঝুঁকে পড়বে। ইতিপূর্বে আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশী জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম। এখন হতে তোমরা যত ইচ্ছা খেতে পার এবং যত দিন ইচ্ছা জমা করে রাখতে পার। ইতিপূর্বে আমি তোমাদেরকে চারটি পান-পাত্র থেকে নিষেধ। করেছিলাম। কিন্তু এখন থেকে তোমরা যে কোন পাত্র থেকেই পনি করতে পার। কিন্তু কোন নেশা আনয়নকারী জিনিস পান করো না। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সঃ) যখন মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন তখন তিনি পথে একটি কবরের পার্শ্বে এসে বসে পড়েন এবং কবরকে সম্বোধন করতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে উঠে পড়েন। তখন আমরা বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি যা করেছেন তা আমরা দেখেছি। তিনি বলেনঃ “আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আমার মায়ের কবর যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। অতঃপর আমি তাঁর জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি।” সেই দিন তিনি এতো বেশী কেঁদেছিলেন যে, ইতিপূর্বে আমরা তাকে কখনো এতো কাঁদতে দেখিনি। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) গোরস্থানের দিকে বেরিয়ে যান। আমরাও তাঁর অনুসরণ করি। তিনি একটি কবরের পাশে বসে পড়েন। অতঃপর তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে মুনাজাত করতে থাকেন। তারপর তিনি কাঁদতে শুরু করেন। তাঁকে কাঁদতে দেখে আমরাও কাঁদতে থাকি। উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) তাঁর কাছে যান। তিনি উমার (রাঃ)-কে এবং আমাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কাঁদছিলে কেন?” আমরা উত্তরে বলি, আপনাকে কাদতে দেখে আমাদেরও কান্না এসে যায়। তিনি তখন বলেনঃ “আমি যে কবরের নিকট বসেছিলাম সেটা আমার মায়ের কবর । আমি আল্লাহ তাআলার নিকট এই কবর যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দান করেন।” (এই হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) তাঁর তাফসীরে বর্ণনা করেছেন) এ হাদীসটি অন্যভাবেও বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীসটিরই প্রায় অনুরূপ। তবে তাতে এ কথাও রয়েছে- “আমি আমেনার জন্যে দুআ করার অনুমতি চাই। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা অনুমতি দেননি এবং তিনি উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন। সুতরাং মাতার জন্যে ছেলের মন যেমন দুঃখিত হয় দ্রুপ আমার মনও দুঃখিত হয়েছে। আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন হতে তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কেননা, এটা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।”
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাবুকের যুদ্ধ হতে ফিরে আসেন ও উমরার নিয়ত করেন এবং যখন তিনি ‘গাসফান’ ঘাঁটি হতে অবতরণ করেন তখন স্বীয় সাহাবীদেরকে নির্দেশ দেনঃ “তোমরা আকাবায় বিশ্রাম কর, আমি তোমাদের কাছে (কিছুক্ষণের মধ্যেই) ফিরে আসছি।” তিনি সেখানে তার মায়ের কবরের পার্শ্বে অবস্থান করলেন। সেখানে তিনি অনেকক্ষণ স্বীয় প্রতিপালকের নিকট মুনাজাত করলেন। তারপর তিনি কাঁদতে লাগলেন। এবং বহুক্ষণ ধরে কাঁদলেন। তাঁকে কাঁদতে দেখে লোকেরাও কাঁদতে লাগলেন। এবং বললেনঃ “এখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কোন জিনিস কাঁদালো? তার উম্মতের ব্যাপারে এমন নতুন কিছু কি ঘটেছে যা তিনি সহ্য করতে পারছেন না?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) লোকদেরকে কাঁদতে দেখে তাদের কাছে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা কাঁদছো কেন?” তারা উত্তরে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনাকে কাঁদতে দেখে আমাদেরও কান্না এসে গেল। আমাদের ধারণা হলো যে, আপনার উম্মতের ব্যাপারে হয়তো এমন নতুন কিছু ঘটেছে যা আপনি সহ্য করতে পারছেন না। তিনি তখন বললেন, না, না, এটা একটা সাধারণ ব্যাপার ছিল। ঘটনা এই যে, আমি আমার মায়ের কবরের পার্শ্বে অবস্থান করছিলাম এবং কিয়ামতের দিন তার শাফাআতের জন্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করেছিলাম। কিন্তু তিনি অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছেন। এতে আমার অন্তর ফেটে যায়। কেননা তিনি আমার মা। তাই, আমি কাঁদছিলাম । এরপর জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট আগমন করেন এবং বলেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর তাঁর পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা শুধু এ কারণেই ছিল যে, তিনি তাঁর পিতার সাথে অঙ্গীকার করে বলেছিলেনঃ “আমি আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারলেন যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন তিনি তা থেকে বিরত থাকেন। সুতরাং হে নবী (সঃ)! ইবরাহীম (আঃ) যেমন তাঁর পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা থেকে বিরত থেকেছিলেন, তদ্রুপ আপনিও আপনার মায়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকুন।” তিনি তো আমার মা ছিলেন। কাজেই এটা আমার মনে রেখাপাত করবে না কেন? আর আমি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি আমার উম্মত হতে যেন চারটি জিনিসের বোঝা উঠিয়ে নেন। তখন অল্লিাহ তা’আলা দুটি শাস্তি উঠিয়ে নেন এবং দু’টি বাকী রেখে দেন। আমি দুআ করেছিলাম যে, আমার উম্মতের উপর যেন আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত না হয়, যেমন অন্যান্য উম্মতদের উপর বর্ষিত হয়েছিল।
আমি প্রার্থনা করেছিলাম যে, শাস্তি হিসাবে আমার উম্মতকে যেন যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া না হয়। আরও প্রার্থনা করেছিলাম যে, আমার উম্মত যেন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ে।
আমার আর একটি প্রার্থনা ছিল এই যে, আমার উম্মত যেন পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে না পড়ে। আল্লাহ তা’আলা প্রথম দু’টি ককূল করেন বটে, কিন্তু পরের দু’টি কবুল করেননি।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
রাসূলুল্লাহ (সঃ) রাস্তা কেটে তাঁর মায়ের কবরের নিকট গিয়েছিলেন। কেননা তাঁর মায়ের কবর একটি টিলার নীচে ছিল। এ হাদীসটি গারীব। এর বর্ণনা বিস্ময়কর বটে। এর চেয়ে বেশী বিস্ময়কর ও অস্বীকারযোগ্য হচ্ছে ঐ রিওয়ায়াতটি যা খাতীব বাগদাদী তাঁর কিতাবুস সায়েক ওয়াল লাহিক’ নামক গ্রন্থে অপরিচিত সনদে বর্ণনা করেছেন এবং আয়েশা (রাঃ) হতে ইসনাদ জুড়ে দিয়েছেন। কাহিনীটি এইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মাতা আমেনাকে জীবিত করেছিলেন এবং জীবিত হয়ে তিনি ঈমান এনেছিলেন । তারপর মারা গিয়েছিলেন। সাহীলীও ‘রাও’ এর মধ্যে অপরিচিত একটি দলের সনদে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিতা ও মাতা উভয়কেই জীবিত করেছিলেন এবং তাঁরা ঈমান এনেছিলেন। হাকিম ইবনে দাহইয়া (রঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি মিথ্যা। কুরআন ও ইজমা উভয়ই এটাকে রদ করছে। আল্লাহ তী’আলা স্বয়ং কুরআন কারীমে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ আর ঐ লোকদেরকে ক্ষমা করা হবে না যারা কুফরী অবস্থায় মারা গেছে।” (৪:১৮) আবু আবদিল্লাহ কুরতুবী (রঃ) বলেন। যে, এই হাদীসের দাবীর উপর চিন্তা করা হাক এবং তিনি বড় রকমের তীর মেরে এই দলীল পেশ করেছেন যে, এই নব জীবন দান ঠিক এই রূপেই হতে পারে যেমন আসরের সময় চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মু’জিযা বলে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর পুনরায় বেরিয়ে আসে এবং তিনি আসরের সালাত আদায় করেন। এই দলীল দ্বারা তিনি ইবনে দাহ্ইয়ার উক্তি খণ্ডন করেছেন। সূর্য পুনঃউদয় হাদীসটি প্রমাণিত। কুরতবী বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিতা-মাতার পুনর্জীবন লাভ জ্ঞানের দিক দিয়েও অসম্ভব নয় এবং শরীয়তের দিক দিয়েও অসম্ভব নয়। আমি তো এ কথাও শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচা আবু তালিবকেও জীবিত করেছিলেন এবং তিনি ঈমান এনেছিলেন।” আমি বলি-এটা হাদীসের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভরশীল। যদি হাদীস বিশুদ্ধ হয় তবে তা মানতে কোন বাধা নেই। আর যদি হাদীসই সহীহ না হয় তবে কোন ঝগড়াই নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।
আওফী (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) তাঁর মাতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার ইচ্ছা করেছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে তা থেকে নিষেধ করে দেন। তখন তিনি বলেন “ইবরাহীম খালীলুল্লাহ (আঃ) তো তাঁর পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। এ সময় আল্লাহ তা’আলা (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।
এই আয়াতের ব্যাপারে ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, লোকেরা তাদের মৃতদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতো। তখন (আরবী) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। জনগণ তখন ঐ নাজায়েয ক্ষমা প্রার্থনা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু মুসলিমদেরকে তাদের জীবিত মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করা হয়নি।
কাতাদা (রঃ) এই আয়াত সম্পর্কে বলেন যে, নবী (সঃ)-এর সাহাবীদের কতকগুলো লোক তাকে বললেন, হে আল্লাহর নবী (সঃ)! আমাদের পূর্বপুরুষরা বড়ই সৎ লোক ছিল। তারা প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখতে অভ্যস্ত ছিল। তারা বন্দীদেরকে ছাড়িয়ে নেয়ার এবং জনগণের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে টাকা পয়সা খরচ করতো। আমরা কি ঐ মৃতদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো না? উত্তরে নবী (সঃ) বললেনঃ “কেন করবে না? আল্লাহর শপথ! আমিও ইবরাহীম (আঃ)-এর মত আমার পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো।” তখনই উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-কে ক্ষমার্হ সাব্যস্ত করে বলছেন যে, তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা শুধুমাত্র ঐ ওয়াদার কারণে ছিল যা তিনি তাঁর পিতার সাথে করেছিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা আমার উপর এমন কতকগুলো কালেমার অহী করলেন যা আমার কানে গুঞ্জরিত হচ্ছে এবং আমার অন্তরে বদ্ধমূল হয়েছে। আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্যে আমি ক্ষমা প্রার্থনা না করি। আর যে ব্যক্তি তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল সাদকা করে দিলো সেটা তার জন্যে বড় রকমের কল্যাণ লাভের কারণ হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা থেকে বিরত থাকলো, সেটা তার জন্যে হবে বড়ই ক্ষতির কারণ। যারা প্রয়োজন মোতাবেক আহার করে ও খরচ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার কোন আপত্তি নেই।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার একজন ইয়াহুদী মারা যায়। তার পুত্র ছিল মুসলিম। সে তার ঐ পিতার কাফন দাফনের জন্যে বেরিয়ে আসলো না। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এটা জানতে পেরে বললেনঃ “তার পুত্রের উচিত ছিল তার (ইয়াহূদী) পিতার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করে দেয়া এবং তার জীবিত থাকা পর্যন্ত তার কল্যাণের নিমিত্ত প্রার্থনা করা এবং মৃত্যুর পরে তার নিজের অবস্থার উপর সমর্পণ করা। এরপর আর তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা চলবে না।” এর সঠিকতার প্রমাণ পাওয়া যায় আলী (রাঃ)-এর নিম্ন বর্ণিত রিওয়ায়াত দ্বারা তিনি বলেন, যখন (আমার পিতা) আবু তালিব মারা যান তখন আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার পথভ্রষ্ট পিতৃব্য মারা গেছেন, সুতরাং এখন কি করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “তাকে দাফন করে দাও। আর কিছুই করতে হবে না। এরপর আমার কাছে আসবে।” অতঃপর সম্পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ করা হয়। আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে যখন আবূ তালিবের জানাযা গমন করে তখন তিনি (আবেগে তার মৃতদেহকে) সম্বোধন করে বলেনঃ “হে চাচা! আমি আপনার আত্মীয়তার সম্পর্কের হক আদায় করে দিয়েছি।” আতা ইবনে আবু রাবাহ (রঃ) বলেনঃ “আমি কোন আহলৈ কিবলার জানাযার সালাত পড়তে বাধা দেবো না, যদিও সে ব্যভিচার দ্বারা গর্ভধারিণী হাবশী মহিলাও হয়। কেননা, জানাযার সালাত হচ্ছে দুআ। আর মুশরিক ছাড়া আর কারো জন্যে দুআ করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেননি।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
রামিল (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর দয়া করুন যে ব্যক্তি আবু হুরাইরা (রাঃ) ও তাঁর মাতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কৱে।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ “আর তাঁর পিতার জন্যে?” তিনি উত্তরে বললেন- “না, আমার পিতা মুশরিক অবস্থায় মারা গিয়েছে।”
(আরবী) সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইবরাহীম (আঃ) তার পিতার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তার মৃত্যুর পর যখন তিনি অবহিত হলেন যে, সে আল্লাহর শত্রু ছিল তখন তিনি তা থেকে বিরত থাকেন।
সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ) যখন পিতার সাথে মিলিত হবেন তখন দেখবেন যে, সে অত্যন্ত ব্যাকুল ও উদ্বিগ্ন হয়ে ফিরছে। তিনি তার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিমুখ হয়ে যাবেন। ঐ সময় তাঁর পিতা তাঁকে বলবেঃ “হে ইবরাহীম (আঃ)! (দুনিয়ায়) আমি তোমার কথা মানিনি। কিন্তু আজ আমি তোমার কোন কথাই অমান্য করবো না।” তখন ইবরাহীম (আঃ) বলবেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি কি আমার সাথে ওয়াদা করেননি যে, কিয়ামতের দিন আমাকে অপমানিত করবেন না? তাহলে আজকের দিন এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে (যে, আমার পিতা অত্যন্ত লাঞ্ছিতভাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে)?” তখন তাকে বলা হবেঃ “তোমার পিছন দিকে তাকাও।” তিনি তখন দেখতে পাবেন যে, একটি অর্ধমৃত জানোয়ার পড়ে রয়েছে এবং একটি বেজীর আকারে রূপান্তরিত হয়েছে। ওর পা ধরে টেনে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ (আরবী) ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, শব্দের অর্থ হচ্ছে অত্যধিক প্রার্থনাকারী। শাদ্দাদ ইবনুল হাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা নবী (সঃ)-এর নিকট বসেছিলেন। এমন সময় একটি লোক জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! শব্দের অর্থ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “অত্যন্ত বিনয় প্রকাশকারী ।” ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর অর্থ ‘দয়ালু’ বলেছেন। হাসনি বসরী (রঃ), কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি দয়ালু। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর অর্থ মুমিন বলেছেন। আলী ইবনে আবি তলিহা (রঃ) এর অর্থ তাওবাকারী মুমিন বলেছেন।
উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যুন্নাজাদীন (রাঃ) নামক একটি লোক সম্পর্কে বলেনঃ “নিশ্চয়ই এই লোকটি (আরবী) বটে।” এর কারণ এই যে, কুরআন কারীমের মধ্যে যেখানেই আল্লাহ তা’আলার নাম আসতো সেখানেই তিনি উচ্চৈঃস্বরে প্রার্থনা করতে শুরু করতেন। (এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সকাল বেলায় যে ব্যক্তি তাসবীহ পাঠরত থাকে তাকেই (আরবী) বলা হয়। আবু আইয়ুব (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে নিজের গুনাহকে স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মুসলিম ইবনে বায়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক খুব বেশী তাসবীহ পাঠ করতেন, তখন আল্লাহর নবী (সঃ) তাঁকে (আরবী) বলেন। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর নবী (সঃ) একটি লোককে দাফন করার পর বলেনঃ “আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন! তুমি তো একজন (আরবী) ছিলে।” এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল এই যে, লোকটি কুরআন কারীমের একজন বড় পাঠক ছিলেন। একটি লোক কাবা শরীফ তাওয়াফ করা অবস্থায় দুআ’ করার সময় আহ! আহ! করতেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে তাঁর আলোচনা হলে তিনি বলেনঃ সে (আরবী) ছিল।
আবু যার (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাত্রে আমি বাইরে বের হয়ে দেখি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ লোকটিকেই দাফন করছেন এবং তার সাথে প্রদীপ রয়েছে।” এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল। এটা ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সর্বাপেক্ষা উত্তম কথা এই যে, শব্দের অর্থ হচ্ছে দুআ’ বা প্রার্থনা। আর এটা বচন রীতির উপযুক্ত ও যোগ্যও বটে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বর্ণনা করলেন যে, ইবরাহীম (আঃ)-এর দুআ’র ভিত্তি ছিল ওয়াদার উপর এবং তিনি অধিক প্রার্থনাকারী ছিলেন, দুর্ব্যবহারকারীর ব্যাপারে তিনি ছিলেন সহিষ্ণু। তাই তো তিনি পিতার নিকট থেকে কষ্ট পাওয়া সত্ত্বেও তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে (ইবরাহীমের আঃ পিতা) বললো, হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার মা’দগণ হতে ফিরে আছ (এবং আমাকেও বারণ করছে)? (স্মরণ রেখো) যদি তুমি এটা হতে নিবৃত্ত না হও, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে প্রস্তরাঘাতে মেরে। ফেলবো, আর দূর হয়ে যাও আমা হতে চিরতরে। ইবরাহীম বললো, আমার সালাম গ্রহণ কর, এখন আমি তোমার জন্যে আমার প্রতিপালকের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবো; নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।” (১৯:৪৬-৪৭) মোটকথা, পিতা থেকে কষ্ট পাওয়া সত্ত্বেও ইবরাহীম (আঃ) সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেছিলেন। তিনি পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে (আরবী) বা সহিষ্ণু উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
১১৫-১১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় মহান সত্তা ও ন্যায়নীতিপূর্ণ হিকমত সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি যেই পর্যন্ত না কোন কওমের নিকট রাসূল পাঠিয়ে ফিতনা খতম করেন সেই পর্যন্ত তাদেরকে পথভ্রষ্টতার জন্যে ছেড়ে দেন। যেমন তিনি অন্য এক জায়গায় বলেনঃ “সামূদ সম্প্রদায়কে আমি পথ প্রদর্শন করেছিলাম।” মুজাহিদ (রঃ) আল্লাহ তাআলার (আরবী) -এই উক্তি সম্পর্কে বলেন যে, মৃত মুশরিকদের জন্যে মুমিনদের ক্ষমা প্রার্থনা করা। ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে মহিমান্বিত আল্লাহর বর্ণনাটি হচ্ছে বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। আর তাদের তাঁর আনুগত্য এবং অবাধ্যতার কাজটি হচ্ছে সাধারণ । অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে। ইচ্ছানুযায়ী হয় তোমরা আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার কর, না হয় তার নাফরমানী কর। তোমরা এটা কর বা ছেড়ে দাও। কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনা পরিত্যাগ করার বর্ণনাটি সাধারণ নয়, বরং বিশিষ্ট।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ পাক বলেন, যদি তোমরা তোমাদের মধ্যস্থিত মৃত মুশরিকদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর তবে কেন তিনি। তোমাদের উপর পথভ্রষ্টতার ফায়সালা দিবেন না? কেননা তিনি আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর ঈমান আনয়নের তাওফীক দিয়েছেন। আর তোমাদেরকে নিষিদ্ধ বিষয় হতে দূরে রেখেছেন এবং তোমরা তা থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু এর পূর্বে নয় যে, তিনি। ঐ নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর নিকৃষ্টতা বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং তোমরা ঐগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। ঐ অবস্থায় কি করে তিনি তোমাদের উপর পথভ্রষ্টতার হুকুম লাগাতে পারেন? কেননা, আনুগত্য ও অবাধ্যতা তো আদেশ ও নিষেধের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু যে ঈমানই আনেনি এবং বিরতও থাকেনি, তাকে অনুগত বলা যাবে না এবং অবাধ্যও বলা চলবে না।
আল্লাহ তা’আলার উক্তি-“আল্লাহরই রাজত্ব রয়েছে আসমানসমূহে ও যমীনে এবং তিনিই জীবন দান করেন ও তিনিই মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন।” এটা দ্বারা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রদান করা হয়েছে এবং এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, তাদের আল্লাহ তা’আলার সাহায্যের উপর ভরসা করা উচিত এবং তার শত্রুদেরকে ভয় করা মোটেই উচিত নয়। কেননা তারা আল্লাহকে ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং তাদের না কোন বন্ধু আছে, না আছে কোন সাহায্যকারী ।
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে বসেছিলাম। এমন সময় তিনি বললেনঃ “আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা তোমরা শুনতে পাচ্ছ কি?” তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেনঃ “আমরা তো কিছুই শুনতে পাচ্ছিনে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আমি আকাশের চড় চড় শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর আকাশ চড় চড় কেন করবে না? তাতে আধহাত পরিমাণও জায়গা এমন নেই যেখানে কোন না কোন ফেরেশতা সিজদা বা দাঁড়ানো অবস্থায় বিদ্যমান না রয়েছেন।” (এই হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
কা’বুল আহবার (রঃ) বলেন যে, যমীনের মধ্যে সূঁচের ছিদ্র পরিমাণও এমন জায়গা নেই যেখানে কোন ফেরেশতা আল্লাহর তাসবীহ্ পাঠে রত না আছেন। আর আকাশের ফেরেশতাদের সংখ্যা মাটির অণু-পরমাণুর সংখ্যা অপেক্ষাও বেশী। আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের পায়ের গিট হতে পদনালি পর্যন্ত জায়গার ব্যবধান একশ বছরের দূরত্ব।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এই আয়াতের তফসীর সহীহ বুখারীতে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী (সাঃ)-এর চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল, তখন নবী (সাঃ) তার নিকট গেলেন। তার নিকট আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ বিন আবী উমাইয়্যাহ বসেছিল। নবী (সাঃ) বললেন, “চাচাজান! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ে নিন, যাতে আমি আল্লাহর নিকট আপনার জন্য প্রমাণ পেশ করতে পারি। আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ বিন আবী উমাইয়্যাহ বলল, “হে আবু তালেব! (মৃত্যুর) সময় আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করবে?” (শেষে ঐ অবস্থাতেই তার মৃত্যু হল।) নবী (সাঃ) বললেন, “যতক্ষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে নিষেধ না করা হবে, ততক্ষণ আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব।” তখন উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হল, যাতে মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। (সহীহ বুখারী) এবং সূরা ক্বস্বাস্বের ২৮:৫৬ নং আয়াত (إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ) আয়াতটিও এই মর্মে অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনায় আছে যে, একদা নবী (সাঃ) তাঁর মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মুসনাদ আহমদ ৫ম খন্ড ৩৫৫পৃঃ) আর নবী (সাঃ) নিজ সম্প্রদায়ের জন্য যে দু’আ করেছিলেন, (اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِيْ فَإِنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُوْنَ) “হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও, কারণ তারা অজ্ঞ।” তা এই আয়াতের বিরোধী নয়। কারণ এই দু’আর অর্থ হল তাদের জন্য হিদায়াত কামনা করা। অর্থাৎ তারা আমার মর্যাদা ও সম্মান থেকে বেখবর, তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দাও, যাতে তারা ক্ষমার যোগ্য হয়ে যায়। আর জীবিত কাফের ও মুশরিকের জন্য হিদায়াতের দু’আ করা বৈধ।
* [১] অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ) যখন পরিষ্কার বুঝতে পারলেন যে, তাঁর পিতা আল্লাহর শত্রু ও জাহান্নামী, তখন তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন এবং তারপর আর ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।
[২] আর শুরুতে পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাও তাঁর কোমল-হৃদয় ও সহনশীলতার কারণেই ছিল।
* আল্লাহ তাআলা যখন মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করে দিলেন, তখন কিছু সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ), যাঁরা এই কর্ম করেছিলেন, তাঁরা এই ভেবে চিন্তিত হলেন যে, তাঁরা তাঁদের মুশরিক আত্মীয়দের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ভ্রষ্টতার কাজ করেননি তো? আল্লাহ তাআলা বললেন যে, আল্লাহ তাআলা যতক্ষণ কোন বস্তুর নিষিদ্ধতা ঘোষণা না করেন, ততক্ষণ তিনি তার উপর কোন ধর-পাকড় করেন না এবং তাকে ভ্রষ্টতাও গণ্য করেন না। তবে নিষিদ্ধ কর্ম থেকে কেউ বিরত না থাকলে আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করে দেন। ফলে যাঁরা উক্ত আদেশের পূর্বে মৃত মুশরিক আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাঁদের ধর-পাকড় হবে না, কারণ তাঁরা উক্ত নির্দেশ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে এ আয়াত আবু তালেবের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [দেখুন, বুখারী ৪৬৭৫; মুসলিম: ২৪] অন্য বর্ণনায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এসেছে, তিনি বলেন, এক লোককে তার পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা চাইতে দেখলাম। অথচ তারা ছিল মুশরিক। আমি বললাম, তারা মুশরিক হওয়া সত্বেও তুমি কি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছ? সে বলল, ইবরাহীম কি তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন নি? তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [তিরমিযী]
(اواه) শব্দটির অর্থ নির্ধারণে* কয়েকটি মত এসেছে। ইবন মাসউদ ও উবাইদ ইবন উমায়রের মতে এর অর্থ, বেশী বেশী প্রার্থনাকারী। হাসান ও কাতাদা বলেন, এর অর্থ আল্লাহর বান্দাদের প্রতি বেশী দরদী। ইবন আব্বাস বলেন, এটি হাবশী ভাষায় মুমিনকে বোঝায়। কালবী বলেন, এর অর্থ যিনি জনমানবশূণ্য ভূমিতে আল্লাহকে আহবান করে। কারও কারও মতে, বেশী বেশী যিকিরকারী। কারও কারও মতে, ফকীহ। আবার কারও কারও মতে বিনয়ী ও বিনম্র। কারও কারও মতে, এর অর্থ এমন ব্যক্তি যে নিজের গোনাহের কথা স্মরণ হলেই ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। কারও কারও মতে এর অর্থ, যিনি আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা থেকে সর্বদা প্রত্যাবর্তন করতে থাকে। কারও কারও মতে এর অর্থ, যিনি কল্যাণের কথা মানুষদের শিক্ষা দেন। তবে এ শব্দটির মূল অর্থ যে বেশী বেশী আহ্ আহ্ বলে কোন গোনাহ হয়ে গেলে আফসোস করতে থাকে। মনে ব্যথা অনুভব হতে থাকে এবং এর জন্য তার মন থেকে আফসোসের শব্দ হতে থাকে। [ফাতহুল কাদীর]
Sura Tawbah
Sura:09
Verses :- 113-116
يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ
The Prohibition of supplicating for Polytheists .
The Prohibition of supplicating for Polytheists
Allah
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ امَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُواْ أُوْلِي قُرْبَى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
It is not (proper) for the Prophet and those who believe to ask Allah’s forgiveness for the Mushrikin, even though they be of kin, after it has become clear to them that they are the dwellers of the Fire (because they died in a state of disbelief).
Imam Ahmad recorded that Ibn Al-Musayyib said that his father Al-Musayyib said,
“When Abu Talib was dying, the Prophet went to him and found Abu Jahl and Abdullah bin Abi Umayyah present.
The Prophet said,
أَيْ عَمِّ قُلْ لَا إِلَهَ إِلاِّ اللهُ كَلِمَةً أُحَاجُّ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَل
O uncle! Say, `La ilaha illa-llah,’ a word concerning which I will plea for you with Allah, the Exalted and Most Honored.
Abu Jahl and Abdullah bin Abi Umayyah said, `O Abu Talib! Would you leave the religion of Abdul-Muttalib!’
Abu Talib said, `Rather, I will remain on the religion of Abdul-Muttalib.’
The Prophet said,
لَاأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْك
I will invoke Allah for forgiveness for you, as long as I am not prohibited from doing so.
This verse was revealed,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ امَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُواْ أُوْلِي قُرْبَى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
It is not (proper) for the Prophet and those who believe to ask Allah’s forgiveness for the Mushrikin, even though they be of kin, after it has become clear to them that they are the dwellers of the Fire.)
Concerning Abu Talib, this Ayah was revealed,
إِنَّكَ لَا تَهْدِى مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَـكِنَّ اللَّهَ يَهْدِى مَن يَشَأءُ
Verily, you guide not whom you like, but Allah guides whom He wills.” (28:56)
This Hadith is recorded in the Two Sahihs.
Ibn Jarir recorded that Sulayman bin Buraydah said that his father said,
“When the Prophet came to Makkah, he went to a grave, sat next to it, started talking and then stood up with tears in his eyes. We said, `O Allah’s Messenger! We saw what you did.’
He said,
إِنِّي اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّي فَأَذِنَ لِي وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي الاْسْتِغْفَارِ لَهَا فَلَمْ يَأْذَنْ لِي
I asked my Lord for permission to visit the grave of my mother and He gave me permission. I asked for His permission to invoke Him for forgiveness for her, but He did not give me permission.
We never saw him more tearful than on that day.”‘
Al-Awfi narrated from Ibn Abbas about Allah’s statement,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ امَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ
(It is not (proper) for the Prophet and those who believe to ask Allah’s forgiveness for the Mushrikin,
“The Prophet wanted to invoke Allah for forgiveness for his mother, but Allah did not allow him. The Prophet said,
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلَ اللهِ صلى الله عليه وسلّم قَدِ اسْتَغْفَرَ لاَِبِيه
Ibrahim, Allah’s Khalil, invoked Allah for his father.
Allah revealed.
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لاَِبِيهِ إِلاَّ عَن مَّوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ
And Ibrahim’s invoking (of Allah) for his father’s forgiveness was only because of a promise he (Ibrahim) had made to him (his father).”
Ali bin Abi Talhah narrated that Ibn Abbas commented on this Ayah,
“They used to invoke Allah for them (pagans) until this Ayah was revealed. They then refrained from invoking Allah to forgive the dead among them, but were not stopped from invoking Allah for the living among them until they die. Allah sent this Ayah,
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لاَِبِيهِ
(And Ibrahim’s invoking (of Allah) for his father’s forgiveness was only…).”
Allah said next,
فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ
But when it became clear to him (Ibrahim) that he (his father) is an enemy of Allah, he dissociated himself from him.
Ibn Abbas commented,
“Ibrahim kept asking Allah to forgive his father until he died, when he realized that he died as an enemy to Allah, he disassociated himself from him.”
In another narration, he said,
“When his father died he realized that he died as an enemy of Allah.”
Similar was said by Mujahid, Ad-Dahhak, Qatadah and several others.
Ubayd bin `Umayr and Sa`id bin Jubayr said,
“Ibrahim will disown his father on the Day of Resurrection, but he will meet his father and see dust and fatigue on his face. He will say, `O Ibrahim! I disobeyed you, but today, I will not disobey you.’
Ibrahim will say, `O Lord! You promised me that You will not disgrace me on the Day they are resurrected. What more disgrace than witnessing my father being disgraced!’
He will be told, `Look behind you,’ where he will see a bloody hyena — for his father will have been transformed into that — and it will be dragged from its feet and thrown in the Fire.”‘
Allah’s statement,
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لاوَّاهٌ حَلِيمٌ
Verily, Ibrahim was Awwah and was forbearing.
According to Abdullah bin Mas`ud,
means, he invoked Allah always,
Several narrations report this from Ibn Mas`ud.
It was also said that, `Awwah’, means,
`who invokes Allah with humility’, `merciful’, `who believes with certainty’, `who praises (Allah)’, and so forth.
Recompense comes after Proof is established
Allah says;
وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِلَّ قَوْمًا بَعْدَ إِذْ هَدَاهُمْ حَتَّى يُبَيِّنَ لَهُم مَّا يَتَّقُونَ إِنَّ اللّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
And Allah will never lead a people astray after He has guided them until He makes clear to them what they should avoid. Verily, Allah is the All-Knower of everything.
Allah describes His Honorable Self and just judgment in that He does not lead a people astray but after the Message comes to them, so that the proof is established against them.
For instance, Allah said,
وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْنَـهُمْ
And as for Thamud, We showed and made clear to them the path of truth (41:17)
Mujahid commented on Allah’s saying;
وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِلَّ قَوْمًا بَعْدَ إِذْ هَدَاهُمْ
(And Allah will never lead a people astray after He has guided them),
“Allah the Mighty and Sublime is clarifying to the believers about not seeking forgiveness for the idolators in particular, and in general, it is an exhortation to beware of disobeying Him, and encouragement to obey Him. So either do or suffer.”
Ibn Jarir commented,
“Allah says that He would not direct you to misguidance, so that you invoke Him for forgiveness for your dead idolators, after He gave you guidance and directed you to believe in Him and in His Messenger!
First, He will inform you of what you should avoid, so that you avoid it. Before He informs you that this action is not allowed, you would not have disobeyed Him and fallen into what He prohibited for you (if you indulge in this action). Therefore, in this case, He will not allow you to be misguided. Verily, guidance or misguidance occurs after commands and prohibitions are established.
As for those who were neither commanded nor prohibited, they can neither be obedient nor disobedient in doing what they were neither ordered nor prohibited from doing.”
Allah said,
إِنَّ اللّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ يُحْيِـي وَيُمِيتُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
Indeed to Allah belongs the dominion of the heavens and the earth, He gives life and He causes death. And besides Allah you have neither any protector nor any helper.
Ibn Jarir commented,
“This is an encouragement from Allah for His believing servants to fight the idolators and chiefs of disbelief. It is also a command for them to trust in Allah’s aid, for He is the Owner of the heavens and earth, and not to fear His enemies. Verily, they have no protector besides Allah, nor a supporter other than Him.