(Book# 650)[اِلَیۡہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا ؕ তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, To Him is your return all together.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 650)[اِلَیۡہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا ؕ
তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে,
To Him is your return all together.]
www.motaher21.net
সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
০৩-০৪ নং আয়াত:-
اِلَیۡہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا ؕ
তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে,
To Him is your return all together.
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ مَا مِنۡ شَفِیۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِہٖ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰہُ رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡہُ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۳﴾

নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশকারী কেউ নেই। ঐ (স্রষ্টা ও পরিচালক) আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?
Indeed, your Lord is Allah, who created the heavens and the earth in six days and then established Himself above the Throne, arranging the matter [of His creation]. There is no intercessor except after His permission. That is Allah, your Lord, so worship Him. Then will you not remember?

اِلَیۡہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا ؕ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقًّا ؕ اِنَّہٗ یَبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ یُعِیۡدُہٗ لِیَجۡزِیَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ بِالۡقِسۡطِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَہُمۡ شَرَابٌ مِّنۡ حَمِیۡمٍ وَّ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ بِمَا کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ ﴿۴﴾

তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য; নিশ্চয় তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করবেন, যাতে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে। আর যারা কুফরী করেছে তারা তাদের আচরিত কুফরীর ফলে পান করার জন্য পাবে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

To Him is your return all together. [It is] the promise of Allah [which is] truth. Indeed, He begins the [process of] creation and then repeats it that He may reward those who have believed and done righteous deeds, in justice. But those who disbelieved will have a drink of scalding water and a painful punishment for what they used to deny.

৩-৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

(الْعَرْشِ…….. إِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ)

আল্লাহ তা‘আলা স্ব সত্ত্বায় আরশে সমুন্নত, এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফ এর ৫৪ নং আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

(يُدَبِّرُ الْأَمْرَ) আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করার পর তিনি সমস্ত বিশ্বজাহানকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন যে, কখনো পরস্পরের মাঝে কোন সংঘর্ষ হয় না। প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মে অবিরত। তিনি তাতে দিয়েছেন জীবন, মৃত্যু, রিযিক। তিনি দিবা-রাত্রির পরিবর্তন করেন, মানুষের জন্য কষ্ট দূর করেন, যে চায় তাকে দেন ইত্যাদি কার্য তিনি পরিচালনা করেন।

(مَا مِنْ شَفِيْعٍ إِلَّا مِنْۭ بَعْدِ إِذْنِهِ)

আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ব্যতীত কেউ আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করতে পারবে না। অথচ মক্কার কাফিরদের বিশ্বাস ছিল যে, তাদের দেবতারা তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে সুপারিশ করবে। যেমন তারা বলত:

(مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَآ إِلَي اللّٰهِ زُلْفٰي)

“আমরা তো এদের উপাসনা এজন্য করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়।” (সূরা যুমার ৩৯:৩)

অথচ আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ব্যতীত কারো পক্ষে এটা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের একাধিক জায়গায় বলেন:

(وَلَا يَشْفَعُوْنَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضٰي)

“তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” (সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৮)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْۭ بَعْدِ أَنْ يَّأْذَنَ اللّٰهُ لِمَنْ يَّشَا۬ءُ وَيَرْضٰي)

“তাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন।” (সূরা নাজম ৫৩:২৬)

অতএব এসব আয়াত ও অনুরূপ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, কেউ সুপারিশ করার দাবি করলেই সুপারিশ করতে পারবে এমন নয়, বরং আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ সম্ভব নয়। আর আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি পেতে হলে অবশ্যই তাঁর মনঃপুত এবং অপরাধমুক্ত হতে হবে। অনুরূপ যার জন্য সুপারিশ করা হবে তার ক্ষেত্রেও আল্লাহ তা‘আলার সম্মতি থাকতে হবে। সুতরাং সুপারিশের দাবি করাও সহজ নয় এবং সুপারিশের জন্য কারো কাছে ধরণা দেয়াও ঠিক নয়।

(إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ)

‘তাঁরই নিকট তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন’ মানুষের বিশ্বাস যে, আমরা যখন মরে যাব তখন আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। আমাদেরকে শাস্তি পেতে হবে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে বলেছেন যে, তোমাদের মৃত্যুর পর পুনরায় আমার নিকট তোমাদেরকে আসতে হবে। আর আমি যেহেতু প্রথমবার সৃষ্টি করেছি সেহেতু এমনটি মনে কর না যে, তোমাদের মৃত্যুর পর পুনরায় আমি তোমাদেরকে জীবিত করতে পারব না। এতে আমি পুরোপুরি সক্ষম। আর সেদিন আমি প্রত্যেককে তার কর্মের ফলাফল দেব। যেমন

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَه۫ – وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَه۫)

“অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৯৯:৭-৮)

আর যে এতে অবিশ্বাস করবে তার জন্য শাস্তিস্বরূপ পানীয় হিসেবে গরম পানি থাকবে এবং এ অস্বীকারের কারণে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَسُقُوْا مَا۬ءً حَمِيْمًا فَقَطَّعَ أَمْعَا۬ءَهُمْ)

“এবং যাদেরকে এমন ফুটন্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি পর্যন্ত কেটে ফেলবে?” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৫) তার সাথে তাদের জন্য আরো থাকবে পুঁজ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَّا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا بَرْدًا وَّلَا شَرَابًا – إِلَّا حَمِيْمًا وَّغَسَّاقًا) ‏

“সেখানে তারা কোন প্রকার শীতলতার স্বাদও গ্রহণ করতে পারবে না, আর না কোন পানীয় বস্তুরও; ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ব্যতীত।” (সূরা নাবা ৭৮:২৪-২৫)

আরো থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(سَيُصِيْبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ)

“তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের ওপর শীঘ্রই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।” (সূরা তাওবাহ ৯:৯০)

সুতরাং কিয়ামতের দিন তারাই সফলকাম হবে যারা সঠিক ঈমান ও সৎআমল নিয়ে যাবে, আর যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করেছে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ছাড়া কিছুই থাকবে না।

আয়াত হতে শিক্ষনীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘য়াত করতে পারবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র মা‘বূদ, তাই তাঁরই ইবাদত করা সকলের কর্তব্য।
৩. কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তাদের প্রতিফল দেবেন।
৫. অবিশ্বাসীদের জন্য আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি, ইত্যাদি।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। বলা হয়েছে যে, এই দিন আমাদের দিনের মতই ছিল। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, হাজার বছরের একটি দিন ছিল, যার বর্ণনা সামনে আসবে । তারপর তিনি বড় আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন। আরশ হচ্ছে সমস্ত সৃষ্টবস্তুর মধ্যে সবচেয়ে বড় সৃষ্টবস্তু। ওটা লাল ইয়াকুতের তৈরী । অথবা এটাও হচ্ছে আল্লাহর একটি নূর। আল্লাহ তা’আলা হচ্ছেন সারা মাখলুকের পরিচালক, অভিভাবক এবং যামানতদার। তার রক্ষণাবেক্ষণ হতে যমীন ও আসমানের অণু পরিমাণ জিনিসও বাদ পড়ে না। তাঁর একদিকের মনোযোগ অন্য দিকের মনোযোগ থেকে বিরত রাখতে পারে না। তাঁর জন্যে কোন একটা ব্যাপার ভুলবশতঃ বাকী থাকতে পারে না। পাহাড়ে, সাগরে, লোকালয়ে এবং জঙ্গলে কোথাও কোন বড় তদবীর কোন ছোট তদবীরকে ভুলিয়ে রাখতে পারে না । ভূ-পৃষ্ঠে এমন কোন প্রাণী নেই যার আহারের দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলার উপর অর্পিত নয়। কোন কিছু নড়লে বা কোন একটা পাতা ঝরলে তারও খবর তিনি রাখেন। যমীনের অন্ধকারে কোন অণু পরিমাণ জিনিসও এমন নেই বা সিক্ত এবং শুষ্ক এমন কিছু নেই যে তাঁর লাওহে মাহফুষে বা ইলমের কিতাবে বিদ্যমান নেই। যখন (আরবী) -এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন এমন এক বিরাট যাত্রীদল মুসলিমদের দৃষ্টিগোচর হয় যাদেরকে বেদুঈন মনে করা হয়েছিল। জনগণ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেঃ “তোমরা কে?” তারা উত্তরে বলেঃ “আমরা জ্বিন জাতি। এই আয়াতের কারণে আমরা শহর হতে বেরিয়ে পড়েছি।”

আল্লাহ পাকের (আরবী) এই উক্তিটি তাঁর (আরবী) (২:২৫৫) ও (আরবী) (৫৩:২৬) এবং (আরবী) (৩৪:২৩) এই উক্তিগুলোর মতই।

(আরবী) অর্থাৎ ঐ লোকগুলো ইবাদতের জন্যে আল্লাহ তা’আলাকেই বিশিষ্ট করে নিয়েছে। আর হে মুশরিকরা! তোমরা ইবাদতে আল্লাহর সাথে তোমাদের অন্যান্য দেবতাদেরকেও শরীক করে নিচ্ছ! অথচ তোমরা ভালরূপেই জান যে, সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কারো উপাসনা করা যেতে পারে না। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে। তবে (উত্তরে) অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহ (তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন)।” (৪৩৪ ৮৭) আল্লাহ তা’আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি বল (অর্থাৎ তুমি জিজ্ঞেস কর) সাতটি আকাশ ও বিরাট আরশের প্রতিপালক কে? (তবে উত্তরে) অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহই (এগুলোর প্রতিপালক), তুমি বলে দাও- তবুও কি তোমরা ভয় করছো না?” (২৩:৮৬-৮৭) এরূপ আরও আয়াত এর পূর্বেও আছে এবং পরেও আছে।

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টজীব তার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। তাঁর সৃষ্ট সমস্ত প্রাণীকে অবশ্যই অবশ্যই তার কাছে ফিরে যেতে হবে। কেননা, যেমন তিনি তাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তেমনিই তিনি দ্বিতীয়বারও তাদেরকে সৃষ্টি করতে সক্ষম। আল্লাহ তা’আলা আদল ও ইনসাফের সাথে আমলের প্রতিদান প্রদান করবেন। একটুও কম করবেন না। আর কাফিরদেরকে তাদের কুফরীর কারণে কিয়ামতের দিন বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হবে। যেমন প্রচণ্ড লু হাওয়া, গরম পানি এবং এই ধরনের আরও শাস্তি। এই কাফিররা যে জাহান্নামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে তার মধ্যেই তাদেরকে চিরকাল বসবাস করতে হবে এবং সেখানে পাবে তারা তামার ন্যায় গলানো গরম পানি।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

* সৃষ্টি করার পরে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাননি। বরং নিজের সৃষ্ট বিশ্ব-জাহানের শাসন কর্তৃত্বের আসনে নিজেই সমাসীন হয়েছেন এবং এখন সমগ্র জগতের ব্যবস্থাপনা কার্যত তিনিই পরিচালনা করছেন। অবুঝ লোকেরা মনে করে, আল্লাহ‌ বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করে তারপর একে এমনিই ছেড়ে দিয়েছেন। যে যেভাবে চায় চলতে পারে। অথবা একে অন্যদের হাওয়ালা করে দিয়েছেন। তারা যেভাবে চায় একে চালাতে ও ব্যবহার করতে পারে। এ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত কুরআন যে সত্য পেশ করে তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ তাঁর এ সৃষ্টি জগতের সমগ্র এলাকায় নিজেই শাসন কর্তৃত্ব তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন স্থানে প্রতি মুহূর্তে যা কিছু হচ্ছে তা সরাসরি তাঁর হুকুমে বা অনুমতিক্রমে হচ্ছে। এ সৃষ্টি জগতের সাথে তাঁর সম্পর্ক শুধু এতটুকুই নয় যে, তিনি এক সময় একে সৃজন করেছিলেন বরং তিনিই সর্বক্ষণ এর পরিচালক ও ব্যবস্থাপক, একে তিনিই প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন বলেই প্রতিষ্ঠিত আছে এবং তিনি চালাচ্ছেন বলেই চলছে। (দেখুন সূরা আ’রাফ ৪০ টীকা ও ৪১ টীকা )।

* দুনিয়ার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অন্য কারোর হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কারোর আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তার কোন ফয়সালা পরিবর্তন করার অথবা কারোর ভাগ্য ভাঙা গড়ার ইখতিয়ারও নেই। বড়জোর সে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে। কিন্তু তার দোয়া কবুল হওয়া না হওয়া পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহর এ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার রাজ্যে নিজের কথা নিশ্চিতভাবে কার্যকর করিয়ে নেবার মতো শক্তিধর কেউ নেই। এমন শক্তি কারোর নেই যে, তার সুপারিশকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে এবং আল্লাহর আরশের পা জড়িয়ে ধরে বসে থেকে নিজের দাবী আদায় করে নিতে পারে।

* ওপরের তিনটি বাক্যে প্রকৃত সত্য বর্ণনা করা হয়েছিল, অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদের রব। এখন বলা হচ্ছে, এ প্রকৃত সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কোন্ ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। মূলত রবুবীয়াত তথা বিশ্ব-জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতা, নিরংকুশ কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব যখন পুরোপুরি আল্লাহর আয়ত্বাধীন তখন এর অনিবার্য দাবী স্বরূপ মানুষকে তাঁরই বন্দেগী করতে হবে। তারপর রবুবীয়াত শব্দটির যেমন তিনটি অর্থ হয় অর্থাৎ প্রতিপালন ক্ষমতা, প্রভুত্ব ও শাসন ক্ষমতা ঠিক তেমনি- এর পাশাপাশি ইবাদাত শব্দেরও তিনটি অর্থ হয় অর্থাৎ পূজা, দাসত্ব ও আনুগত্য।

আল্লাহর একমাত্র রব হওয়ার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, তাঁরই কাছে প্রার্থনা করবে এবং তাঁরই সামনে ভক্তি শ্রদ্ধা-ভালবাসায় মাথা নোয়াবে। এটি হচ্ছে ইবাদতের প্রাথমিক অর্থ।

আল্লাহর একমাত্র মালিক ও প্রভু হওয়ার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তাঁর বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে, তাঁর মোকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তাঁর ছাড়া আর কারোর মানসিক বা কর্মগত দাসত্ব করবে না। এটি ইবাদতের দ্বিতীয় অর্থ। আল্লাহকে একমাত্র শাসনকর্তা বলে মেনে নেবার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তার হুকুমের আনুগত্য করবে ও তার আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না এবং আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারোর শাসন কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না। এটি ইবাদতের তৃতীয় অর্থ।

* যখন এ সত্য তোমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তখন এরপরও কি তোমাদের চোখ খুলবে না এবং এবং তোমরা এমন বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকবে যার ফলে তোমাদের জীবনের সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত হয়েছে?

* এটি নবীর শিক্ষার দ্বিতীয় মূলনীতি। প্রথম মূলনীতি হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহই তোমাদের রব কাজেই তারই ইবাদাত করো। আর দ্বিতীয় মূলনীতি হচ্ছে, তোমাদের এ দুনিয়া থেকে ফিরে গিয়ে নিজেদের রবের কাছে হিসেব দিতে হবে।

* এ বাক্যটির মধ্যে দাবী ও প্রমাণ উভয়েরই সমাবেশ ঘটেছে। দাবী হচ্ছে, আল্লাহ‌ পুনর্বার মানুষকে সৃষ্টি করবেন। এর প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনিই প্রথমবার মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর যে ব্যক্তি একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অবশ্যি শুধুমাত্র পাদরীদের প্রচারিত ধর্ম থেকে দূরে অবস্থান করার লক্ষে স্রষ্টাবিহীন সৃষ্টির মতে নির্বোধ জনোচিত মতবাদ পোষণ করতে উদ্যোগী কিছু নাস্তিক ছাড়া আর কে এটা অস্বীকার করতে পারে! সে কখনো আল্লাহর পক্ষে এ সৃষ্টির পুনরাবৃত্তিকে অসম্ভব বা দুর্বোধ্য মনে করতে পারে না।

* এ প্রয়োজনটির ভিত্তিতেই আল্লাহ‌ মানুষকে পুনবার্র সৃষ্টি করবেন। একই জিনিসের পুনঃসৃজন সম্ভব এবং তাকে দুরধিগম্য মনে করার কোন কারণ নেই, একথা প্রমাণ করার জন্য ওপরে বর্ণিত যুক্তি যথেষ্ট ছিল। এখন এখানে বলা হচ্ছে, সৃষ্টির এ পুনরাবর্তন বৃদ্ধি ও ন্যায়নীতির দৃষ্টিতে অপরিহার্য। আর এ অপরিহার্য প্রয়োজন দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন পথেই পূর্ণ হতে পারে না। আল্লাহকে নিজের একমাত্র রব হিসেবে মেনে নিয়ে যারা সঠিক বন্দেগীর নীতি অবলম্বন করবে তারা নিজেদের এ যথার্থ কার্যধারার পূর্ণ প্রতিদান লাভ করার অধিকার রাখে। অন্যদিকে যারা সত্য অস্বীকার করে তার বিরোধী অবস্থানে জীবন যাপন করবে তারাও নিজেদের এ ভ্রান্ত কার্যধারার কুফল প্রত্যক্ষ করবে। এ প্রয়োজন যদি বর্তমান পার্থিব জীবনে পূর্ণ না হয় (এবং যারা হঠকারী নন তারা প্রত্যেকেই জানেন, এ প্রয়োজন পূর্ণ হচ্ছে না) তাহলে অবশ্যি এটা পূর্ণ করার জন্য পুনরুজ্জীবন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। (আরো বেশী জানার জন্য সূরা আরাফ ৩০ টীকা ও সূরা হুদ ১০৫ টীকা দেখুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
*[১] বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আ’রাফের ৭:৫৪ নং আয়াতের টীকা।

[২] অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করে তিনি এমনিই ছেড়ে দেননি, বরং সারা বিশ্ব-জাহানকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন যে, কখনো পরস্পরের মাঝে কোন সংঘর্ষ হয় না। সকল বস্তু তাঁরই নির্দেশে নিজ নিজ কর্মে রত আছে।

[৩] মুশরিক ও কাফের – যারা এখানে সম্বোধিত – তাদের বিশ্বাস ছিল যে, যে সকল মূর্তির তারা উপাসনা করে, তারা আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সেখানে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। আর এই অনুমতিও একমাত্র তাদের জন্য দেওয়া হবে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করবেন। الأنبياء-২৮ (وَلاَ يَشفَعُونَ إِلاَّ لِمَن ارتَضَى)

النجم-২৬) (لا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى)

[৪] অর্থাৎ এমন আল্লাহ যিনি বিশ্ব-জগতের স্রষ্টা এবং তার পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। এ ছাড়া সমস্ত এখতিয়ারের পরিপূর্ণ মালিক একমাত্র তিনিই। ফলে একমাত্র তিনিই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।

* এই আয়াতে কিয়ামত সংঘটন, আল্লাহর নিকট সকলের উপস্থিতি এবং উত্তম প্রতিদান ও শাস্তির বর্ণনা আছে। উক্ত বিষয় কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

* [১] এ আয়াতে তাওহীদকে এমন অনস্বীকার্য বাস্তবতার দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে, আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করার মধ্যে অতঃপর সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনার মধ্যে যখন আল্লাহ তা’আলার কোন শরীক-অংশীদার নেই, তখন ইবাদাত-বন্দেগী এবং হুকুম পালনের ক্ষেত্রে অন্য কেউ কি করে শরীক হতে পারে? বরং এতে (ইবাদাতে) অন্য কাউকে শরীক করা একান্তই অবিচার এবং সীমালঙ্ঘনের শামিল। এ আয়াতে এরশাদ হয়েছে যে, আসমান ও যমীনকে আল্লাহ্ তা’আলা মাত্র ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এখানে কি পরিমাণ সময় উদ্দেশ্য তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। যদিও কোন কোন মুফাসসির এ দিনগুলোকে আমাদের বর্তমান দিন’ এর মত মনে করেছেন। কোন কোন মুফাসসির মত প্রকাশ করেছেন যে, এ দিনগুলো অন্য আয়াতে বর্ণিত, একদিন সমান একহাজার বছরের মত। [ইবন কাসীর]

[২] তারপর বলেছেন

(ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ)

অর্থাৎ আরশের উপর উঠেছেন। কুরআন এবং হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ তা’আলার আরশ এক প্রকাণ্ড সৃষ্টি আর তা সমস্ত সৃষ্টিজগতের ছাদস্বরূপ। আল্লাহ্ তা’আলা তার আরশের উপর উঠা বাস্তব বিষয়। এটা আল্লাহর একটি মহান কার্যগত গুণ। তিনি যে রকম তার আরশের উপর উঠাও সেরকম। আমরা তার আরশের উপর উঠা কথাটা বুঝি তবে সে উঠার ধরণ আমরা জানিনা। আল্লাহর আরশের উপর উঠা সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা সূরা আল-বাকারায় করা হয়েছে।

[৩] সৃষ্টিজগতের যাবতীয় কর্মকাণ্ড তিনিই পরিচালনা করেন। “আসমান ও যমীনের অণু পরিমান বস্তুও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই।” [সাবাঃ ৩] কোন ব্যাপারে মনযোগ দিতে গিয়ে অন্য ব্যাপার তাঁর বাধা হয় না। [বুখারী] অগণিত আবেদনকারীর আবেদন তাঁর জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না। চাওয়ার প্রচণ্ডতায় তিনি বিরক্ত হোন না। বৃহৎ কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে ছোট ছোট বস্তুগুলো তার খেয়ালচু্যত হয়না। চাই তা সমুদ্রে বা পাহাড়ে বা জনবসতিপূর্ণ এলাকা যেখানেই হোক না কেন। [এ ব্যাপারে আরো দেখুনঃ সূরা হুদঃ ৬, সূরা আল-আনআমঃ ৫৯]

[৪] অর্থাৎ দুনিয়ার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অন্য কারোর হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কারো আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তাঁর কোন ফায়সালা পরিবর্তন করার অথবা করো ভাগ্য ভাঙা-গড়ার ইখতিয়ারও নেই। বড়জোর সে আল্লাহর কাছে দো’আ করতে পারে। কিন্তু তার দোআ কবুল হওয়া না হওয়া পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। আল্লাহর এ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার রাজ্যে নিজের কথা নিশ্চিতভাবে কার্যকর করিয়ে নেবার মতো শক্তিধর কেউ নেই। এমন শক্তি কারোর নেই যে,তার সুপারিশকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। এ সুপারিশের বিষয়টি আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করেছেন। [দেখুনঃ সূরা আল-বাকারাহঃ ২৫৫, সূরা আন-নাজমঃ ২৬, সূরা সাবাঃ ২৩]

[৫] উপরের তিনটি বাক্যে প্রকৃত সত্য বর্ণনা করা হয়েছিল, অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদের রব। এখন বলা হচ্ছে, এ প্রকৃত সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কোন ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। মূলত রবুবীয়াত তথা বিশ্ব-জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতা, নিরংকুশ কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব যখন পরোপুরি আল্লাহর আয়ত্বাধীন তখন এর অনিবার্য দাবী স্বরুপ মানুষকে তাঁরই বন্দেগী করতে হবে। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা’আলা সেটা বলেছেন, তিনি বলেন, “আর যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে , তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ। অতঃপর তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?” [সূরা আয-যুখরুফ ৮৭] আরও বলেন, “বলুন, সাত আসমান ও মহা-আরশের রব কে? অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ। বলুন, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” [সূরা আলমুমিনুন: ৮৬-৮৭] তাছাড়া সূরা ইউনুসের এ আয়াতের আগের ও পরের আয়াতেও একই বক্তব্য এসেছে।

৬) অর্থাৎ যখন এ সত্য তোমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তখন এরপরও কি তোমাদের চোখ খুলবে না এবং তোমরা এমন বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকবে? তোমরা কি তোমাদের অস্বীকার ও গোড়ামীতেই রত থাকবে যে তোমরা মোটেই উপদেশ গ্রহণ করবে না? [আইসারুত তাফাসীর]

* [১] অর্থাৎ তোমাদের এ দুনিয়া থেকে ফিরে গিয়ে নিজেদের রবের কাছে হিসেব দিতে হবে। সে সুনির্দিষ্ট সময়ে তিনি তোমাদের সবাইকে একত্রিত কববেন [ইবন কাসীর; সা’দী]

[২] এ আয়াতে সমগ্র সৃষ্টিজগতের বহু নিদর্শন উল্লেখিত হয়েছে, যা আল্লাহ্ তা’আলার পূর্ণ কুদরত ও পরিপূর্ণ হেকমতের স্বাক্ষর বহন করে এবং এ দাবী প্রমাণ হিসেবে দাড়িয়ে আছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকে ধ্বংস করে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম এবং পরে পুনরায় সেই কণাসমূহকে একত্রিত করে একেবারে নতুন অবস্থায় জীবিত করে হিসাব-নিকাশের পর পুরস্কার কিংবা শাস্তির আইন জারি করবেন। কুরাইশ কাফেরদের অধিকাংশই আল্লাহকে তাদের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানত। তাই আল্লাহ তা’আলা এর দ্বারাই তাদের উপর দলীল নিচ্ছেন যে, যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই ধ্বংসের পর দ্বিতীয়বার সেটাকে অস্তিত্বে আনতে সক্ষম। [কুরতুবী] আর এটা তাঁর ওয়াদা। এ ওয়াদা তিনি অবশ্যই পূরণ করবেন। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি যারা হৃদয় দিয়ে ঈমান এনেছে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে ওয়াজিব ও মুস্তাহাব পালন করে নেক আমল করেছে, তাদেরকে প্রতিফল দিবেন। [সা’দী]। আর যারা কুফরী করবে তাদেরকেও তাদের কুফরীর কারণে তিনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।

[৩] এ বাক্যটির মধ্যে দাবী ও প্রমাণ উভয়েরই সমাবেশ ঘটেছে। দাবী হচ্ছে, আল্লাহ পুনর্বার মানুষকে সৃষ্টি করবেন। এর প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনিই প্রথমবার মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর যে ব্যক্তি একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেছেন। সে কখনো আল্লাহর পক্ষে এ সৃষ্টির পুনরাবৃত্তিকে অসম্ভব বা দুর্বোধ্য মনে করতে পারে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যেভাবে আমরা প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; এটা আমার কৃত প্রতিশ্রুতি, আর আমরা তা পালন করবই।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪]

[৪] এ অত্যন্ত গরম পানীয় কাফেরদের জন্য শাস্তি স্বরূপ থাকবে। এ প্রচণ্ড গরম পানীয়ের বিভিন্ন গুণাগুণ অন্যান্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। সূরা আর-রাহমানের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ “তারা জাহান্নামের আগুন ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটোছুটি করবে” আবার কোথাও বলা হয়েছেঃ “এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভূঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫] আরো বলা হয়েছে “ তাদের মাথার উপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দ্বারা তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে”। [সূরা আল-হাজ্জঃ ১৯-২০]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে” [সূরা আল-কাহফঃ ২৯] আরো বলা হয়েছেঃ “তারপর তোমরা পান করবে তার উপর অতি উষ্ণ পানি, ফলে তারা পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায়।” [সূরা আল-ওয়াকি’আহঃ ৫৪-৫৫] কুরআনের কোন কোন আয়াতে এ গরম পানিকে পুঁজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, বলা হয়েছেঃ “এবং পান করানো হবে গলিত পুঁজ; যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গিলবে এবং তা গিলা প্রায় সহজ হবে না”। [সূরা ইবরাহীমঃ ১৬-১৭] আবার কোন কোন স্থানে বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য সমভাবে গরম পানীয় ও পুঁজ উভয়টিই থাকবে, “কাজেই তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ”। [সূরা সোয়াদঃ ৫৭] আরো এসেছেঃ “সেখানে তারা আস্বাদন করবে না শীত, না কোন পানীয়, ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া ; [সূরা আন-নাবা ২৪-২৫]।

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 03-04
اِلَیۡہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا ؕ
To Him is your return all together.

Allah is the Creator Who arranges the Affairs of the Universe

Allah says;

إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ

“Surely, your Lord is Allah Who created the heavens and the earth in six Days,

Allah tells us that He is the Lord of the entire existence. He tells us that He created the heavens and the earth in six days.

It was said:

“Like these days (meaning our worldly days).”

It was also said:

“Every day is like a thousand years of what we reckon.”

Later, this will be discussed further.

ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ

and then rose over (Istawa) the Throne.”

The Throne is the greatest of the creatures and is like a ceiling for them.

Allah’s statement:

يُدَبِّرُ الَامْرَ

arranging the affair (of all things).

means that He controls the affairs of the creatures.

لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَـوَتِ وَلَا فِى الااٌّرْضِ

Not even the weight of a speck of dust escapes His Knowledge in the heavens or in the earth. (34:3)

No affair distract’ Him from other affairs. No matter troubles Him. The persistent requests of His creatures do not annoy Him. He governs big things as He governs small things everywhere, on the mountains, in the oceans, in populated areas, or in wastelands.

وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الاٌّرْضِ إِلاَّ عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا

And no moving creature is there on earth but its provision is due from Allah. (11:6)

وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِى ظُلُمَـتِ الاٌّرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلاَّ فِى كِتَـبٍ مُّبِينٍ

Not a leaf falls, but He knows it. There is not a grain in the darkness of the earth nor anything fresh or dry, but is written in a Clear Record. (6:59)

Ad-Darawardi narrated from Sa`d bin Ishaq bin Ka`b bin Ujrah that he said:

“When this Ayah was revealed,
إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضَ
(Surely, your Lord is Allah Who created the heavens and the earth), they met a great caravan whom they thought should be Arabs. They said to them:`Who are you?’

They replied:`We are Jinns. We left Al-Madinah because of this Ayah.”‘

This was recorded by Ibn Abi Hatim.

Allah said:

مَا مِن شَفِيعٍ إِلاَّ مِن بَعْدِ إِذْنِهِ

No intercessor (can plead with Him) except after He permits.

This is similar to what is in the following Ayat:

مَن ذَا الَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ

Who is he that can intercede with Him except with His permission. (2:255)

and,

وَكَمْ مِّن مَّلَكٍ فِى السَّمَـوَتِ لَا تُغْنِى شَفَـعَتُهُمْ شَيْياً إِلاَّ مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَن يَشَأءُ وَيَرْضَى

And there are many angels in the heavens, whose intercession will avail nothing except after Allah has given leave for whom He wills and is pleased with. (53:26)

and;

وَلَا تَنفَعُ الشَّفَـعَةُ عِندَهُ إِلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ

Intercession with Him profits not except for him whom He permits. (34:23)

Allah then said:

ذَلِكُمُ اللّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلَ تَذَكَّرُونَ

That is Allah, your Lord; so worship Him (alone). Then, will you not remember!

meaning worship Him alone with no partners.

أَفَلَ تَذَكَّرُونَ
(Then will you not remember),

meaning “O idolators, you worship gods with Allah while you know that He alone is the Creator,”

as He said:

وَلَيِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ

And if you ask them who created them, they will surely say:”Allah.” (43:87)

قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَـوَتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَ تَتَّقُونَ

“Say:”Who is (the) Lord of the seven heavens, and (the) Lord of the Great Throne They will say:”Allah.”

Say:”Will you not then have Taqwa.” (23:86-87)

Similar is mentioned in the Ayah before this Ayah and after it.
The Return of Everything is to Allah

Allah says;

إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا وَعْدَ اللّهِ حَقًّا إِنَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ

To Him is the return of all of you. The promise of Allah is true. It is He Who begins the creation and then will repeat it,

Allah tells us that the return of the creatures on the Day of Resurrection is to Him. He will not leave anyone of them without bringing everyone into being as He brought them in the beginning. Then Allah states that He is going to bring all the creatures into being.

وَهُوَ الَّذِى يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ

And He it is Who originates the creation, then He will repeat it (after it has perished); and this is easier for Him. (30:27)

لِيَجْزِيَ الَّذِينَ امَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ بِالْقِسْطِ

that He may reward with justice those who believed and did deeds of righteousness.

meaning, the reward will be with justice and complete recompense.

وَالَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيمٍ وَعَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُواْ يَكْفُرُونَ

But those who disbelieved will have a drink of boiling fluids and painful torment because they used to disbelieve.

meaning, because of their disbelief they will be punished on the Day of Resurrection by different forms of torment, such as fierce hot winds, boiling water, and the shadow of black smoke.

هَـذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ

وَءَاخَرُ مِن شَكْلِهِ أَزْوَجٌ

This is so! Then let them taste it; a boiling fluid and dirty wound discharges. And other (torments) of similar kind all together! (38:57-58)

هَـذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِى يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ

يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ ءَانٍ

This is the Hell which the criminals denied. They will go between it (Hell) and the fierce boiling water! (55:43-44).

Leave a Reply