أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 654)
[وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ
মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন….
When affliction touches man…]
www.motaher21.net
সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
১২ নং আয়াত:-
وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ
মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন…..
When affliction touches man…
وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۡۢبِہٖۤ اَوۡ قَاعِدًا اَوۡ قَآئِمًا ۚ فَلَمَّا کَشَفۡنَا عَنۡہُ ضُرَّہٗ مَرَّ کَاَنۡ لَّمۡ یَدۡعُنَاۤ اِلٰی ضُرٍّ مَّسَّہٗ ؕ کَذٰلِکَ زُیِّنَ لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۲﴾
আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ডেকে থাকে । অতঃপর আমরা যখন তার দুঃখ-দৈন্য দূর করি, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে যেন তাকে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর তার জন্য সে আমাদেরকে ডাকেইনি। এভাবে সীমালংঘনকারীদের কাজ তাদের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে।
And when affliction touches man, he calls upon Us, whether lying on his side or sitting or standing; but when We remove from him his affliction, he continues [in disobedience] as if he had never called upon Us to [remove] an affliction that touched him. Thus is made pleasing to the transgressors that which they have been doing.
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১২ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে অধিকাংশ মানুষের একটি চিরাচরিত অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষ যখন বিপদে পড়ে বা কোন দুঃখ-দুর্দশা তাকে স্পর্শ করে তখন সে খুব বিনয়ী হয়ে শুয়ে, বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকে। আর যখনই সে বিপদ থেকে মুক্ত হয় তখন সাথে সাথেই সে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যায়। এমনভাবে ভুলে যায় যেন ইতোপূর্বে তার কোন দুঃখ-কষ্ট বা বিপদাপদ ছিল না। যেমন
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّه۫ مُنِيْبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَه۫ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْآ إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ)
“আর যখন মানুষের ওপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করতে থাকে একাগ্রচিত্তে তাঁর অভিমুখী হয়ে। পরে যখন তিনি তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ভুলে যায় সে কথা যার জন্য পূর্বে তাঁকে আহ্বান করেছিল।” (সূরা যুমার ৩৯:৮)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(فَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ز ثُمَّ إِذَا خَوَّلْنٰهُ نِعْمَةً مِّنَّا لا قَالَ إِنَّمَآ أُوْتِيْتُه۫ عَلٰي عِلْمٍ)
“মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করলে সে আমাকে ডাকে, অতঃপর যখন আমি তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদান করি আমার পক্ষ থেকে তখন সে বলে: আমাকে এটা দেয়া হয়েছে আমার জ্ঞানের বিনিময়ে।” (সূরা যুমার ৩৯:৪৯)
এটা ছিল পূর্ববর্তী লোকদের অভ্যাস যে, তারা সুখের সময় যদিও মূর্তি পূজা করত কিন্তু বিপদের সময় তারা আল্লাহ তা‘আলাকেই ডাকত। যদিও তারা ছিল মুশরিক। কিন্তু বর্তমান যুগের লোকেরা সুখের সময় তো আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকেই না বরং বিপদে পড়লেও তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা না করে চলে যায় ফকির বাবার মাজারে, বিভিন্ন কবরের কাছে অথচ আল্লাহ তা‘আলা এসমস্ত বদ আমল কোন অবস্থায় গ্রহণ করেন না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কেউ এমন আমল করল যে, তাতে আমার সাথে অন্যকে শরীক করল, আমি তাকে ও তার আমলকে ছেড়ে দেই অর্থাৎ গ্রহণ করি না। (সহীহ মুসিলম হা: ৭৬৬৬)
বিপদাপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকতে হবে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতে হবে। তিনিই সকল বিপদাপদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে বিপদ থেকে মুক্তি পাবার পর যেন আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে আবার অপরাধমূলক কাজে জড়িত না হই।
আয়াত হতে শিক্ষনীয় বিষয়:
১. বিপদে ও সুখে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকেই ডাকতে হবে।
২. আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা যাবে না।
৩. যে মন্দ অভ্যাসের কথা বলা হয়েছে তা পরিবর্তন করতে হবে।
৪. বিপদে ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না।
৫. বিপদ কেটে গেলে আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করতে হবে ইত্যাদি।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, মানুষ যখন কোন বিপদের সম্মুখীন হয় তখন সম্পূর্ণরূপে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে লম্বা চওড়া দুআ করতে শুরু করে।” (৪১:৫১) পূর্ববর্তী আয়াত এবং এই আয়াতের অর্থ একই। কেননা, যখন তার উপর বিপদ পৌছে তখন সে ব্যাকুল ও অধৈর্য হয়ে পড়ে । উঠতে, বসতে, শুইতে, জাগতে সর্বাবস্থাতেই বিপদের বৃষ্টি দূর হওয়ার জন্যে প্রার্থনা করতে শুরু করে। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক সেই বিপদ সরিয়ে দেন তখন সে আল্লাহকে এড়িয়ে চলে এবং পরামুখ হয়ে যায়। তার ভাব দেখে মনে হয় যে, তার উপর ইতিপূর্বে কোন বিপদই পৌছেনি। মহান আল্লাহ এই অভ্যাসের নিন্দে করে বলেন- এরূপ ব্যবহার তো পাপী ও বদকারদের জন্যেই শোভা পায়। আল্লাহ তা’আলা যাকে হিদায়াত ও তাওফীক দান করেন সে এর থেকে স্বতন্ত্র। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উক্তি রয়েছেঃ “মুমিনের কাজ। কারবার তো খুবই বিস্ময়কর। আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে তার উপর যা কিছু এসে পড়ে তা তার জন্যে কল্যাণকরই হয়ে থাকে। যদি তার উপর কোন বিপদ আপদ পৌঁছে এবং তাতে সে ধৈর্যধারণ করে তবে সে তার প্রতিদান লাভ করে থাকে। আর যদি সুখ শান্তি প্রাপ্ত হয় এবং তাতে সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তবে তাতেও পুণ্য লাভ করে। আল্লাহর এই দয়া ও করুণা শুধু মুমিনের জন্যেই বিশিষ্ট, আর কারো জন্যে নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এটা মানুষের ঐ অবস্থার বিবরণ, যা অধিকাংশ মানুষের অভ্যাস। বরং অনেক আল্লাহতে বিশ্বাসী মানুষও এই শিথিলতার শিকার হয়ে থাকে। আর তা এই যে, মসীবতের সময় খুব ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ করা হয়, দু’আ করা হয়, তওবা-ইস্তিগফারের যথাযথ খেয়াল রাখা হয়। কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলা মসীবতের সেই কঠিন সময় পার করে দেন, তখন আল্লাহর দরবারে দু’আ করা থেকে গাফেল হয়ে যায়। আর আল্লাহ তাআলা তাদের দু’আ কবুল করে তাদেরকে যে বালা-মসীবত থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার তওফীক তাদের ভাগ্যে জোটে না।
[২] এই আমল শোভন করা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ অথবা অবকাশস্বরূপ হতে পারে। শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা দ্বারাও হতে পারে। আবার মানুষের ঐ আত্মার পক্ষ থেকেও হতে পারে, যে আত্মা মানুষকে নোংরা কাজে উদ্বুদ্ধ করে।
((يوسف-৫৩) إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ বস্তুতঃ সীমালংঘনকারীরাই এর শিকার হয়। এখানে অর্থ এই দাঁড়ালো যে, দু’আ থেকে বিমুখতা, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা থেকে ঔদাস্য এবং প্রবৃত্তিপূজা ইত্যাদি কর্মকে তাদের জন্য সুশোভিত করে দেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর)
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
এ আয়াতে সাধারণ মানুষের এক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তা হলো এই যে, সাধারণ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় এরা আল্লাহ ও আখেরাতের বিরুদ্ধে যুক্তি-তর্কে লিপ্ত হয়, অন্যান্যদেরকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে এবং তাদেরই কাছে উদ্দেশ্য সিদ্ধির আশা করে, কিন্তু যখন কোন বিপদে পড়ে তখন এরা নিজেরাও আল্লাহ ব্যতীত সমস্ত লক্ষ্যস্থলের প্রতি নিরাশ হয়ে গিয়ে শুধু আল্লাহকেই ডাকতে আরম্ভ করে। শুয়ে, বসে, দাড়িয়ে সর্বাবস্থায় একমাত্র তাকেই ডাকতে বাধ্য হয়। [সা’দী] অথচ তারই সাথে তাদের অনুগ্রহ বিমুখতার অবস্থা হল এই যে, যখনই আল্লাহ্ তা’আলা তাদের বিপদাপদ দূর করে দেন, তখনই আল্লাহ্ তা’আলার ব্যাপারে এমন মুক্ত হয়ে যায়, যেন কখনো তাকে ডাকেইনি, তার কাছে যেন কোন বাসনাই প্রার্থনা করেনি। এ বিষয়টি আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনের অন্যান্য স্থানেও উল্লেখ করেছেন। যেমন, সূরা আয-যুমারঃ ৮, আয-যুমারঃ ৪৯, আল-ইসরাঃ ৮৩, ফুসসিলাতঃ ৫১ ৷
কিন্তু যাদের হেদায়াত নসীব হয়েছে এবং ঈমান এনেছে, তারা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ রাখে। আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে সূরা হুদের ১১ নং আয়াতে ব্যতিক্রম বলে ঘোষণা করেছেন। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনের কাজ-কারবার দেখে আশ্চৰ্য্য হতে হয়, আল্লাহ তার জন্য যা কিছুই ঘটাক সেটাই তার জন্য কল্যাণের রূপ নেয়। যদি তার কোন ক্ষতি বা দুঃখজনক কিছু ঘটে তখন সে তাতে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার কোন খুশী বা লাভজনক কিছু হয় তাতে সে কৃতজ্ঞ হয়, শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। এটা একমাত্র মুমিনই পেতে পারে, আর কারো পক্ষে নয়’। [মুসলিমঃ ২৯৯৯]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 12
وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ
When affliction touches man…
Man remembers Allah at Times of Adversity and forgets Him at Times of Prosperity
Allah says;
وَإِذَا مَسَّ الاِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَأيِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ
And when harm touches man, he invokes Us, lying on his side, or sitting or standing. But when We have removed his harm from him,
Allah tells us about man and how he becomes annoyed and worried when he is touched with distress.
وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَأءٍ عَرِيضٍ
but when evil touches him, then he has recourse to long supplications. (41:51)
`Long supplications’ also means many supplications.
When man suffers adversity he becomes worried and anxious. So he supplicates more. He prays to Allah to lift and remove the adversity. He prays while standing, sitting or laying down. When Allah removes his adversity and lifts his distress, he turns away and becomes arrogant. He goes on as if nothing were wrong with him before.
مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ
He passes on as if he had never invoked Us for a harm that touched him!
Allah then criticized and condemned those who have these qualities or act this way, so He said:
كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
Thus it is made fair seeming to the wasteful that which they used to do.
But those on whom Allah has bestowed good guidance and support are an exception.
إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ وَعَمِلُواْ الصَّـلِحَاتِ
Except those who have patience believe and do righteous good deeds. (11:11)
The Prophet said:
عَجَبًا لاَِمْرِ الْمُوْمِنِ لَا يَقْضِي اللهُ لَهُ قَضَاءً إِلاَّ كَانَ خَيْرًا لَهُ وَلَيْسَ ذَلِكَ لاَِحَدٍ إِلاَّ لِلْمُوْمِن
إِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ فَصَبَرَ كَانَ خَيْرًا لَهُ
وَإِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ فَشَكَرَ كَانَ خَيْرًا لَهُ
How wonderful is the case of a believer; there is good for him in everything and this is not the case with anyone except a believer.
If prosperity attends him, he expresses gratitude to Allah, and that is good for him.
And if adversity befalls him, he endures it patiently and that is also good for him.