(Book# 660) [إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। The example of [this] worldly life is but like rain.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 660)
[إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء
বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি।
The example of [this] worldly life is but like rain.]
www.motaher21.net

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
২৪-২৫ নং আয়াত:-
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء
বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি।

The example of [this] worldly life is but like rain.

اِنَّمَا مَثَلُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا کَمَآءٍ اَنۡزَلۡنٰہُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخۡتَلَطَ بِہٖ نَبَاتُ الۡاَرۡضِ مِمَّا یَاۡکُلُ النَّاسُ وَ الۡاَنۡعَامُ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَخَذَتِ الۡاَرۡضُ زُخۡرُفَہَا وَ ازَّیَّنَتۡ وَ ظَنَّ اَہۡلُہَاۤ اَنَّہُمۡ قٰدِرُوۡنَ عَلَیۡہَاۤ ۙ اَتٰہَاۤ اَمۡرُنَا لَیۡلًا اَوۡ نَہَارًا فَجَعَلۡنٰہَا حَصِیۡدًا کَاَنۡ لَّمۡ تَغۡنَ بِالۡاَمۡسِ ؕ کَذٰلِکَ نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۴﴾
বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি।
The example of [this] worldly life is but like rain which We have sent down from the sky that the plants of the earth absorb – [those] from which men and livestock eat – until, when the earth has taken on its adornment and is beautified and its people suppose that they have capability over it, there comes to it Our command by night or by day, and We make it as a harvest, as if it had not flourished yesterday. Thus do We explain in detail the signs for a people who give thought.
وَ اللّٰہُ یَدۡعُوۡۤا اِلٰی دَارِ السَّلٰمِ ؕ وَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۲۵﴾
আল্লাহ (মানুষ)কে শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন।
And Allah invites to the Home of Peace and guides whom He wills to a straight path.

২৪-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:-

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার বাহ্যিক সৌন্দর্য, সজীবতা এবং এরপর ওর সত্বরই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ঐ লতাপাতা ও উদ্ভিদের সাথে যাকে তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে যমীন থেকে বের করে থাকেন। এগুলো মানুষ খেয়ে থাকে। যেমন খাদ্যশস্য এবং বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল। এগুলো শুধু মানুষেরই খাদ্য নয়, বরং চতুষ্পদ জন্তুগুলোও এর নাড়া খেয়ে থাকে। যখন যমীনের এই ধ্বংসশীল সৌন্দর্য বসন্তকালে দেখা দেয় এবং বিভিন্ন রূপের ও বর্ণের সবজিগুলো পূর্ণ সজীবতায় এসে পড়ে, তখন কৃষক ধারণা করে যে, ফসল কেটে নেবে এবং ফল পেড়ে নেবে। এমতাবস্থায় অকস্মাৎ ওর উপর বিদ্যুৎ অথবা ঘূর্ণিঝড় এসে গেল। ফলে গাছের সমস্ত পাতা শুকিয়ে জ্বলে গেল এবং ফুল-ফল যত কিছু ছিল সমস্তই ধ্বংস হয়ে গেল। আর ওর সজীবতা ও শ্যামলতার পরে ওটা শুষ্ক কাঠের ঢেরিতে পরিণত হলো। মনে হলো যেন ওটা কখনো সজীব ও সবুজ শ্যামল ছিলই না এবং কৃষককে এরূপ নিয়ামত কখনো দেয়াই হয়নি। এ জন্যেই হাদীসে এসেছে- দুনিয়াবাসীকে নিয়ামত দান করা হয়ে থাকে । অতঃপর তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তুমি কখনো শান্তি লাভ করেছিলে কি?” সে উত্তরে বলেঃ “না, কখনই না।” অন্য একটি লোক এমন হয় যে, সে দুনিয়ায় বড়ই শাস্তি ও কষ্ট ভোগ করেছে। অতঃপর তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তুমি কখনো কোন কষ্ট ভোগ করেছিলে কি?” সে জবাবে বলেঃ “না, কখনই না। আল্লাহ পাক ঐ ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের সম্পর্কে বলেনঃ “তারা তাদের বাসভূমিতে এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে যে, তারা যেন সেখানে কখনো বাসই করেনি।”

ইরশাদ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ এই ভাবেই আমি আয়াতগুলোকে বিশদরূপে বর্ণনা করি এমন লোকদের জন্যে যারা চিন্তা ভাবনা করে থাকে। মানুষ যেন এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে যে, দুনিয়া খুবই তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়ার উপর ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়া তার সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। যে ব্যক্তি দুনিয়ার দিকে অগ্রসর হয়, দুনিয়া তার থেকে পলায়ন করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়ার দিক থেকে পলায়ন করে, দুনিয়া তার পায়ের উপর এসে পতিত হয়। আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ার দৃষ্টান্ত উদ্ভিদের সাথে কুরআন কারীমের অন্য জায়গাতেও দিয়েছেন। সূরায়ে কাহাফে তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি তাদের কাছে পার্থিব জীবনের অবস্থা বর্ণনা কর যে, তা এরূপযেমন, আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি তৎপর তার সাহায্যে যমীনের উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবেশিত হয়ে যায়, অতঃপর তা (শুকিয়ে) চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় যে, বায়ু তা উড়িয়ে নিয়ে ফিরে (দুনিয়ার অবস্থাও দ্রুপ)। আর আল্লাহ্ প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (১৮:৪৫) অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা সূরায়ে যুমারে ও সূরায়ে হাদীদে পার্থিব দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ওরই সাথে প্রদান করেছেন।

হারিস ইবনে হিশাম (রঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি মারওয়ান ইবনে হাকাম (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর পড়তে শুনেছিঃ (আরবী) অর্থাৎ “তা (যমীন) শোভনীয় হয়ে উঠলো, আর এর মালিকরা মনে করলো যে, তারা এখন এর উপর পূর্ণ অধিকার লাভ করেছে, (এমন সময় সারা ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেল) শুধু এর মালিকদের পাপের কারণেই তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যা পাঠ করলাম তা কিন্তু মাসহাফে নেই। তখন আব্বাস ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন যে, ঐ রূপই। ইবনে আব্বাস (রাঃ) পাঠ করে থাকেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট লোক। পাঠিয়ে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) আমাকে এরূপই পড়িয়েছেন।” এ কিরআতটি গারীবই বটে। মনে হয়। এটা যেন তাফসীরে বেশী করে দেয়া হয়েছে। (এটা ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

(আরবী) আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার নশ্বরতা ও জান্নাতের প্রতি উৎসাহ প্রদানের বর্ণনার পর এখন জান্নাতের দিকে আহ্বান করছেন এবং ওটাকে ‘দারুস সালাম’ বলে আখ্যায়িত করছেন। অর্থাৎ জান্নাত হচ্ছে সমস্ত বিপদ-আপদ ও ক্ষয়-ক্ষতি থেকে আশ্রয় লাভের স্থান।

আবূ কালাবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে বলা হয়- আপনার চক্ষু যেন ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর যেন (জেগে জেগে) বুঝতে থাকে এবং কর্ণ যেন শ্রবণ করতে থাকে। সুতরাং আমার চক্ষু ঘুমিয়ে গেল, আমার অন্তর বুঝতে থাকলো এবং আমার কর্ণ শুনতে থাকলো। অতঃপর আমাকে বলা হলোঃ (আপনার দৃষ্টান্ত এইরূপ) যেমন একজন নেতা একটা ঘর নির্মাণ করলো ও ওর মধ্যে ভোজের ব্যবস্থা করলো। তারপর (লোকদেরকে দাওয়াত করার জন্যে) একজন দাওয়াতকারীকে পাঠালো। অতএব, যে ব্যক্তি তার দাওয়াত কবুল করলো সে ঘরে প্রবেশ করে খাদ্য গ্রহণ করলো এবং নেতা তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করলো না সে ঘরেও প্রবেশ করলো না ও খাবারও খেলো না এবং নেতা তার উপর সন্তুষ্টও হলো না। নেতা হলেন আল্লাহ, ঘর হলো ইসলাম, খাদ্য হলো জান্নাত এবং দাওয়াতকারী হলেন মুহাম্মাদ (সঃ)।” এ হাদীসটি মুরসাল। (হাদীসের বর্ণনাকারী কোন তাবেয়ী যদি সাহাবীকে বাদ দিয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তবে ঐ হাদীসকে মুরসাল বলে)

জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ “আমি স্বপ্নে দেখি যে, জিবরাঈল (আঃ) আমার মাথার কাছে রয়েছেন এবং মীকাঈল (আঃ) রয়েছেন আমার পায়ের কাছে। তাদের একজন স্বীয় সাথীকে বলছেন- এই (ঘুমন্ত ব্যক্তির একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন।’ তখন তিনি বললেন- “(হে ঘুমন্ত ব্যক্তি!) আপনি শ্রবণ করুন! আপনার কান শুনছে, আপনার অন্তর (জেগে জেগে) অনুধাবন করছে। আপনার দৃষ্টান্ত ও আপনার উম্মতের দৃষ্টান্ত হচ্ছে একজন বাদশাহ্র দৃষ্টান্তের মত, যিনি একটি ঘর বানিয়েছেন এবং তাতে একটি বড় কক্ষ তৈরী করেছেন। আর তাতে বিছিয়ে দিয়েছেন (খাদ্যের) দস্তরখানা। তারপর তার খাদ্য খাওয়াবার জন্যে একজন দূতকে পাঠিয়ে দিয়েছেন লোকজনকে ডেকে আনতে। সুতরাং কেউ কেউ ঐ দূতের আহ্বানে সাড়া দিলো এবং কেউ কেউ সাড়া দিলো না, বরং তা প্রত্যাখ্যান করলো। বাদশাহ হচ্ছেন আল্লাহ, ঘর হচ্ছে ইসলাম, কক্ষ হচ্ছে জান্নাত এবং হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনি হচ্ছেন দূত। অতএব, যে ব্যক্তি আপনার আহ্বানে সাড়া দিলো সে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলো। আর যে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করলো এবং যে জান্নাতে প্রবেশ করলো সে ওর থেকে (খাদ্য) ভক্ষণ করলো।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আবু দারদা (রাঃ) হতে মারফু’ রূপে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন সূর্য উদিত হয় তখনই ওর দু’দিকে দু’জন ফিরিশতা থাকেন এবং তারা উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিয়ে থাকেন, যে ডাক দানব ও মানব ছাড়া সবাই শুনতে পায়। তারা ডাক দিয়ে বলেন- হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ধাবিত হও। যদি কম পাওয়া যায় এবং তা যথেষ্ট মনে করা হয় তবে ঐ কম ঐ বেশী অপেক্ষা উত্তম যা (আল্লাহর স্মরণ থেকে) ভুলিয়ে রাখে।”

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দুনিয়ার জীবনের একটি উপমা পেশ করছেন। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষন করে ভূ-পৃষ্ঠে বিভিন্ন উদ্ভিদ, তরুলতা ও ঘন ঘন ঘাস ইত্যাদি জন্মান। এসব উদ্ভিদ থেকে কিছু রয়েছে যা মানুষ খায় এবং কিছু রয়েছে যা পশুপাখি খায়। অতঃপর যখন তা পরিপক্ক হয়, জমিন সবুজ শ্যামলে সুশোভিত হয়ে যায় ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং আর মালিকের কাছে পূর্ণ অধিকারে চলে আসে বলে মনে করে তখন দিনে বা রাতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এমন এক আযাব আসে যা কাটা ফসলের ন্যায় স্তুপে পরিণত করে ক্ষেত পরিষ্কার হয়ে যায়, যেন গতকালও এখানে কিছুই ছিল না। অনুরূপ এই পার্থিব জীবন, মানুষ তা সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে, কত আশা, কত স্বপ্ন দেখে। এভাবে স্বপ্নভরা পৃথিবীটা সাজিয়ে নেয়ার পর এমন একটি দিন আসে যখন তাকে এ ধরা থেকে বিদায় নিতে হয়। তেমনি একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে এ পৃথিবীটাও, এরও কোন অস্তিত্ব থাকবে না। যেমন

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا كَمَا۬ءٍ أَنْزَلْنٰهُ مِنَ السَّمَا۬ءِ فَاخْتَلَطَ بِه۪ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيْمًا تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُ ط وَكَانَ اللّٰهُ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا)

“তাদের নিকট উপমা বর্ণনা কর পার্থিব জীবনের: তা হল পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার সংমিশ্রণে মাটির গাছপালা সবুজ শ্যামল হয়ে উৎপন্ন হয়। অতঃপর সেটা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” (সূরা কাহাফ ১৮:৪৫)

এরূপ উপমা বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُه۫ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَامًا ط وَفِي الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيْدٌ لا وَّمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرِضْوَانٌ ط وَمَا الْحَيٰوةُ الدُّنْيَآ إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ)‏

“এর উপমা বৃষ্টি, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য-সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি ওটা হলুদ বর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা খড় কুটায় পরিণত হয়।” (সূরা হাদীদ ৫৭:২০)

আর আল্লাহ তা‘আলা এ সমস্ত দৃষ্টান্ত অনর্থক বর্ণনা করেননি, এ সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন উপদেশ গ্রহণ করার জন্য, দুনিয়ার ওপর আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনার জন্য। আর উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে যারা জ্ঞানী অর্থাৎ যাদের দীনের বিষয়ে সার্বিক জ্ঞান রয়েছে। যেমন

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(ثُمَّ يُخْرِجُ بِه۪ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُه۫ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُه۫ حُطَامًا ط إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰي لِأُولِي الْأَلْبَابِ)

“তারপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, অবশেষে তিনি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে খড়-কুটায় পরিণত করেন? অবশ্য এতে রয়েছে উপদেশ জ্ঞানীদের জন্য।” (সূরা যুমার ৩৯:২১)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়, একদিন তা শেষ হয়ে যাবে।
২. দুনিয়াকে আখিরাতের ওপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
৩. দুনিয়াতে কেউ স্থায়ী হবে না, যতই সুন্দর করে দুনিয়াকে সাজাই সব সাজ ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।

২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

পূর্বের আয়াতে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের বর্ণনা দেয়ার পর এখানে আখিরাতের শান্তি ও চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি তোমাদেরকে دَارِ السَّلٰمِ তথা জান্নাতের দিকে আহ্বান করেন। জান্নাতের অন্যতম একটি নাম হল ‘দারুস-সালাম’। সুতরাং দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য না দিয়ে আখিরাতের শান্তিময় জীবনকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন: আমি স্বপ্নে দেখলাম জিবরীল আমার মাথার কাছে ও মিকাঈল আমার পায়ের কাছে। একজন অপরজনকে বলছেন: এ ব্যক্তির একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন। তখন তিনি বললেন: হে ঘুমন্ত ব্যক্তি! আপনি শুনুন। আপনার কান শুনছে, অন্তর অনুধাবন করছে! আপনার ও আপনার উম্মতের উপমা হল যেমন একজন বাদশাহ, তিনি একটি ঘর বানিয়েছেন এবং তাতে একটি বড় কক্ষ তৈরি করেছেন আর তাতে বিছিয়ে দিয়েছেন একটি বড় খাদ্যের দস্তরখানা। তারপর একজন দূত প্রেরণ করলেন, সে মানুষদেরকে খাবারের জন্য আহ্বান করে। ফলে কেউ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসল, আর কেউ কেউ সাড়া দিল না। আল্লাহ তা‘আলা হলেন বাদশাহ, বাড়িটি হল ইসলাম, কক্ষটি হল জান্নাত এবং আপনি আহ্বানকারী হলেন মুহাম্মাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি আপনার আহ্বানে সাড়া দেবে সে ইসলামে প্রবেশ করল আর যে ইসলামে প্রবেশ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার ফলমূল ও নেয়ামত উপভোগ করবে। (তিরমিযী হা: ২৮৬০, সহীহুল জামে হা: ২৪৬৫)

সুতরাং যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডাকে সাড়া দেবে, তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে এবং তাঁর নেয়ামতসমূহ উপভোগ করতে পারবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা মানুষদেরকে জান্নাতের দিকে আহ্বান করেন। সুতরাং যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেবে তারা জান্নাতেরই পথ পাবে।
২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] حَصِيدًا – فعيل – مفعول অর্থে। أي محصودًا অর্থাৎ এমন ফসল যা কেটে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয় এবং ক্ষেত পরিষ্কার হয়ে যায়। পার্থিব্য জীবনকে এইরূপ ক্ষেতের সাথে তুলনা করে তা যে ক্ষণস্থায়ী; চিরস্থায়ী নয়, তা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। ফসলও বৃষ্টির পানি দ্বারা বড় এবং সবুজ ও সতেজ হয়, কিন্তু পরে তা কেটে-শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

দুনিয়ায় জীবন যাপন করার এমন পদ্ধতির দিকে তোমাদের আহবান জানানো, যা আখেরাতের জীবনে তোমাদের দারুস সালাম বা শান্তির ভবনের অধিকারী করে। দারুস সালাম বলতে জান্নাত বুঝানো হয়েছে এবং এর মানে হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তার ভবন বা গৃহ। এমন জায়গাকে দারুস সালাম বলা হয়েছে যেখানে কোন বিপদ, ক্ষতি, দুঃখ ও কষ্ট নেই।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু এতই ক্ষনস্থায়ী যে, সেটা হস্তচু্যত হয়ে গেলে এমন মনে হয় যেন তা কোনদিনই তার ছিল না। পক্ষান্তরে আখেরাতের নেয়ামত এমন হবে যে, তার তুলনায় দুনিয়ার সব দুঃখ কষ্ট মানুষ বেমালুম ভুলে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেনঃ “দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী নেয়ামতের অধিকারীকে কিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে তারপর তাকে জাহান্নামের আগুনে একবার ঢুকিয়ে আনার পর জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি কি তোমার দুনিয়ার জীবনে কোন ভাল বা কল্যাণ কিছু পেয়েছিলে? তুমি কি কোন নেয়ামত পেয়েছিলে? সে বলবেঃ না। অপরপক্ষে, দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কষ্টের মধ্যে ছিল এমন লোককে নিয়ে আসা হবে তারপর তাকে জান্নাতে ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি কখনো দুঃখ কষ্ট দেখেছিলে? সে বলবেঃ না ” [মুসলিমঃ ২৮০৭]

[২] কারণ চিন্তাশীল মাত্রই বুঝতে পারে যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। শুধু তাই নয় ধোঁকাবাজও। দুনিয়ার চরিত্রই হলো এমন যে, যারা এর পিছনে ছুটে সে তাদের থেকে দূরে ছুটে যায় আর যারা তার থেকে দূরে থাকতে চায় সে তাদের পিছু নেয়। দুনিয়ার উদাহরণ হিসেবে আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে যমীনের মধ্যে উৎপন্ন উদ্ভিদ বলে উল্লেখ করেছেন [ইবন কাসীরা] যেমন, “তাদের কাছে পেশ কর উপমা দুনিয়ার জীবনের: এটা পানির ন্যায় যা আমরা বর্ষণ করি আকাশ থেকে, যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, তারপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ্ সব কিছুর উপর শক্তিমান” [সূরা আল-কাহফ: ৪৫] অনুরূপ আয়াত আরও এসেছে সূরা আয-যুমার ও সূরা আল-হাদীদে। [ইবন কাসীর]
* [১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে শান্তির আলয়ের দিকে আহবান করেন। অর্থাৎ দুনিয়ায় জীবন যাপন করার এমন পদ্ধতির দিকে তোমাদের আহবান জানান, যা আখেরাতের জীবনে তোমাদের দারুস সালাম বা শান্তির ভবনের অধিকারী করে। যে শান্তি ভবনে রয়েছে সর্ববিধ নিরাপত্তা ও শান্তি। না আছে তাতে কোন রকম দুঃখ-কষ্ট, না আছে ব্যাথা-বেদনা, না আছে রোগ-তাপের ভয়, আর না আছে ধ্বংস। এখানে (السَّلامِ) শব্দ দিয়ে কি বোঝানো হয়েছে, এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছেঃ একঃ দারুস্ সালাম’-এর মর্মার্থ হলো জান্নাত। একে ‘দারুস্‌সালাম’ বলার কারণ হলো এই যে, প্রত্যেকেই এখানে সর্বপ্রকার নিরাপত্তা ও প্রশান্তি লাভ করবে। [বাগভী; ইবন কাসীর]
দুইঃ কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে সালাম অর্থ সম্ভাষণ, সালাম যা পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান হয়। সে হিসেবে ‘দারুস্‌সালাম’ এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে যে, এতে বসবাসকারীদের প্রতি সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এবং ফিরিশতাদের পক্ষ থেকেও সালাম পৌছতে থাকবে। অনুরূপভাবে তারাও একে অন্যের সাথে সালাম বিনিময় করতে থাকবে। [কুরতুবী]

তিনঃ হাসান ও কাতাদাহ্ বলেনঃ আস্‌সালাম যেহেতু আল্লাহর নাম, সেহেতু তার ঘর হলো জান্নাত, সে হিসেবে দারুস্‌সালাম’ অর্থ আল্লাহর ঘর। আর আল্লাহ তার ঘরের দিকে আহবানের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আমি স্বপ্নে দেখলাম, মনে হলো জিবরীল আমার মাথার কাছে, আর মীকাঈল পায়ের কাছে অবস্থান করছে, তাদের একজন অন্যজনকে বলছেঃ এর একটা উদাহরণ দাও। অপরজন তার উত্তরে বললঃ শুনুন! আমার কান শুনছে, অনুধাবন করুন, আপনার হৃদয় অনুধাবন করছে। আপনার এবং আপনার উম্মতের উদাহরণ হলো এমন বাদশাহ্‌র মত যিনি একটি বাড়ী নির্মাণ করে তাতে একটি ঘর বানালেন, তারপর সেখানে তিনি মেহমানদারীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন, তারপর সেখানে খাবার খাওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে দূত প্রেরণ করলেন। দাওয়াতকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ তার দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ তা বর্জন করল। এখানে আল্লাহ্‌ হলেন বাদশাহ্‌, তার বাড়ী হলো ইসলাম, তার ঘর হলো জান্নাত আর হে মুহাম্মাদ! আপনি হলেন দূত। যে আপনার দাওয়াত কবুল করল সে ইসলামে প্রবেশ করল, আর যে ইসলামে প্রবেশ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে জান্নাতে প্রবেশ করল সে তা থেকে খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করল। [তাবারীঃ ১৭৬২৪, মুসতাদরাকঃ ৩/৩৩৮-৩৩৯]

অন্য এক হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘প্রতিদিন সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে তার দু’পার্শ্বে দু’জন ফিরিশতা ডাকতে থাকে, যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সবাই শোনে। তারা বলতে থাকেঃ হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রভূর কাছে আস…। [তাবারীঃ ১৭৬২৩, ইবনে হিব্বানঃ ২৪৭৬, আহমাদঃ ৫/১৯৭]

[২] অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা’আলা যাকে ইচ্ছা সরল পথে পৌছে দেন। এখানে ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’-এর অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে, কুরআন। [কুরতুবী] কাতাদা ও মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ- হক, সত্য ও ন্যায়। আবুল আলীয়া ও হাসান বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার দুই সাথী আবু বকর ও উমর। [তাবারী] আবার কারও কারও মতে, ইসলাম। এর মর্মার্থ হলো এই যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে দারুসসালামের দাওয়াত সমগ্র মানবজাতির জন্যই ব্যাপক। এ অর্থের পরিপ্রেক্ষিতে হেদায়াতও ব্যাপক। কিন্তু হেদায়াতের বিশেষ প্রকার- সরল-সোজা পথে তুলে দেয়া এবং তাতে চলার তাওফীক বিশেষ বিশেষ লোকদের ভাগ্যেই জোটে। আর তারা হলেন ঐ সমস্ত ভাগ্যবান ব্যক্তিবর্গ যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। [বাগভী; কুরতুবী] ‘সিরাত’ এর তাফসীর ইসলাম দ্বারা করলে সমস্ত অর্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়। তাছাড়া এটি এক হাদীস দ্বারা সমর্থিত। যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিরাতে মুস্তাকীমের জন্য একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি একটি সোজা রাস্তা দেখালেন, যার দু’ পাশে দুটি দেয়াল রয়েছে, যাতে রয়েছে অনেকগুলো খোলা দরজা। যে দরজাগুলোতে আবার ঢিলে করে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর পথের উপর একজন আহবানকারী রয়েছেন। তিনি বলছেন, হে লোকসকল, তোমরা সকলে পথে প্রবেশ কর। বাঁকা পথে চলো না। (অথবা বাঁকা পথের দিকে তাকিয়ে আনন্দ নিতে চেষ্টা করো না) আর একজন ডাকছে রাস্তার মাঝখান থেকে। তারপর যখনই কেউ কোন দরজা খুলতে চেষ্টা করে, তখনি সে বলতে থাকে, তোমার জন্য আফসোস! তুমি এটা খুলো না, কেননা, তুমি এটা খুললে তাতে প্রবেশ করে বসবে। আর সে পথটি হচ্ছে ইসলাম। তার দু’ পাশের দু’টি দেয়াল হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা। আর খোলা দরজাগুলো হচ্ছে, আল্লাহর হারামকৃত বিষয়াদি। আর পথের মাথা থেকে যে ডাকছে সে হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর যে রাস্তার উপর বা মাঝখান থেকে ডাকছে সে হচ্ছে, প্রতিটি মুসলিমের অন্তরে আল্লাহর নসীহতকারী।’ [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৮২]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 24-25
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء
The example of [this] worldly life is but like rain.

The Parable of this Life

Allah says;

إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الَارْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالَانْعَامُ

Verily, the parable of the life of the world is as the water which We send down from the sky; so by it arises the intermingled produce of the earth of which men and cattle eat:

Allah the Almighty has set an example of the similitude of the life of this world, its glitter and the swiftness of its passage, likening it to the plant and vegetation that Allah brings out from the earth. This plant grows from the water that comes down from the sky. These plants are food for people, such as fruits and other different types and kinds of foods. Some other kinds are food for cattle such as clover plants (i.e. green fodder for the cattle) and herbage etc.

حَتَّىَ إِذَا أَخَذَتِ الَارْضُ زُخْرُفَهَا

until when the earth is clad in its adornments,

وَازَّيَّنَتْ

and is beautified,

meaning, it became good by what grows on its hills such as blooming flowers of different shapes and colors.

وَظَنَّ أَهْلُهَا

and its people think…

those who planted it and put it in the ground,

أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَأ

that they have all the powers of disposal over it,

to cultivate it and harvest it. But while they were in that frame of mind, a thunderbolt or a severe, cold storm came to it. It dried its leaves and spoiled its fruits.

Allah said:

أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلً أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا

Our command reaches it by night or by day and We make it like a clean-mown harvest,

it became dry after it was green and flourishing.

كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالَامْسِ

as if it had not flourished yesterday!

as if nothing existed there before.

Qatadah said:

“As if it had not flourished; as if it was never blessed.”

Such are things after they perish, they are as if they had never existed.

Similarly, the Hadith,

يُوْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا فَيُغْمَسُ فِي النَّارِ غَمْسَةً فَيُقَالُ لَهُ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ

هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ

فَيَقُولُ لَا

وَيُوْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا فِي الدُّنْيَا فَيُغْمَسُ فِي النَّعِيمِ غَمْسَةً ثُمَّ يُقَالُ لَهُ هَلْ رَأَيْتَ بُوْسًا قَطُّ

فَيَقُولُ لَا

A person who led the most prosperous life in this world will be brought up and dipped once in the Fire. He will then be asked:`Have you ever found any good or comfort!’

He will reply:`No.’

And a person who had experienced extreme adversity in this world will be brought up and dipped once in the bliss (of Paradise). Then he will be asked:’Did you ever face any hardship or misery!’

He will reply:`No.’

Allah said about those who were destroyed:

فَأَصْبَحُواْ فِى دِيَارِهِمْ جَـثِمِينَكَأَن لَّمْ يَغْنَوْاْ فِيهَأ

So they lay (dead), prostrate in their homes; as if they had never lived there. (11:67-68)

كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الايَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

Thus do We explain the Ayat in detail for the people who reflect.

Allah then said:

وَاللّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلَمِ وَيَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ.

Allah calls to the Abode of Peace (Paradise) and guides whom He wills to the straight path.

Jabir b Abdullah narrated that Prophet (peace be upon him) came to them and said;

I have seen in my sleep that it was as if Jibril was at my head and Mika’il at my leg. They were saying to each other:`Give an example for him.’

He said:`Listen, your ear may listen. And fathom, your heart may fathom. The parable of you and your Ummah is that of a king who has built a house on his land. He arranged a banquet in it. Then he sent a messenger to invite the people to his food. Some accepted the invitation and others did not. Allah is the King and the land is Islam, the house is Paradise and you Muhammad are the Messenger. Whosoever responds to your call enters Islam. And whosoever enters Islam enters Paradise. And whosoever enters Paradise eats from it.

Ibn Jarir recorded this Hadith.

It was also reported that Abu Ad-Darda’ said that Allah’s Messenger said:

مَا مِنْ يَوْمٍ طَلَعَتْ فِيهِ الشَّمْسُ إِلاَّ وَبِجَنْبَيْهَا مَلَكَانِ يُنَادِيَانِ يَسْمَعُهُ خَلْقُ اللهِ كُلُّهُمْ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَلُمُّوا إِلَى رَبِّكُمْ إِنَّ مَا قَلَّ وَكَفَى خَيْرٌ مِمَّا كَثُرَ وَأَلْهَى

Two angels descend every day in which the sun rises and say that which all Allah’s creatures would hear except Jinn and humans:`O people! Come to your Lord! Anything little and sufficient is better than a lot but distractive.’

And He sent this down in the Qur’an when He said:

وَاللّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلَمِ

“Allah calls to the Abode of Peace.”

Ibn Abi Hatim and Ibn Jarir recorded this.

Leave a Reply