أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 662)
[ فَکَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًۢا بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمۡ
বস্তুতঃ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট যে,
“So sufficient is Allah as a witness between us,
www.motaher21.net
সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
২৮-৩০ নং আয়াত:-
فَکَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًۢا بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمۡ
বস্তুতঃ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট যে,
“So sufficient is Allah as a witness between us,
وَ یَوۡمَ نَحۡشُرُہُمۡ جَمِیۡعًا ثُمَّ نَقُوۡلُ لِلَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا مَکَانَکُمۡ اَنۡتُمۡ وَ شُرَکَآؤُکُمۡ ۚ فَزَیَّلۡنَا بَیۡنَہُمۡ وَ قَالَ شُرَکَآؤُہُمۡ مَّا کُنۡتُمۡ اِیَّانَا تَعۡبُدُوۡنَ ﴿۲۸﴾
আর যেদিন আমরা তাদের সবাইকে একত্র করে যারা মুশরিক তাদেরকে বলব, ‘ তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর ;’ অতঃপর আমরা তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেব এবং তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ‘ইবাদাত করতে না।
And [mention, O Muhammad], the Day We will gather them all together – then We will say to those who associated others with Allah, “[Remain in] your place, you and your ‘partners.’ ” Then We will separate them, and their “partners” will say, “You did not used to worship us,
فَکَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًۢا بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمۡ اِنۡ کُنَّا عَنۡ عِبَادَتِکُمۡ لَغٰفِلِیۡنَ ﴿۲۹﴾
বস্তুতঃ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট যে, আমরা অবশ্যই তোমাদের উপাসনা সম্বন্ধে উদাসীন ছিলাম।’
And sufficient is Allah as a witness between us and you that we were of your worship unaware.”
ہُنَالِکَ تَبۡلُوۡا کُلُّ نَفۡسٍ مَّاۤ اَسۡلَفَتۡ وَ رُدُّوۡۤا اِلَی اللّٰہِ مَوۡلٰىہُمُ الۡحَقِّ وَ ضَلَّ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ ﴿٪۳۰﴾
সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় পূর্ব কৃতকর্মগুলো যাচাই করে নেবে এবং তাদেরকে তাদের প্রকৃত অভিভাবক (আল্লাহর) দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে। আর যেসব মিথ্যা (উপাস্য) তারা বানিয়ে নিয়েছিল সেসব তাদের নিকট থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
There, [on that Day], every soul will be put to trial for what it did previously, and they will be returned to Allah, their master, the Truth, and lost from them is whatever they used to invent.
২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা মানব ও জিন সকলকে একত্রিত করবেন।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَّحَشَرْنٰهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا)
“তাদের সকলকে আমি একত্র করব এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না।” (সূরা কাহাফ ১৮:৪৭)
তবে মু’মিনদেরকে কাফির-মুশরিকদের থেকে আলাদা করে ফেলবেন। যেমন
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ)
“আর (বলা হবে:) হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৫৯)
মুশরিকদের এবং তারা যাদের ইবাদত করত তাদের সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের মাঠে একত্রিত করে বলবেন: তোমরা তোমাদের স্থানে থাক, তোমাদের মাঝে ফায়সালা করা হবে এবং সত্য মিথ্যা জানিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর পৃথিবীতে তাদের মাঝে যে পরস্পর সম্পর্ক ছিল, তা শেষ করে দেয়া হবে, এরা একে অপরের শত্র“ হয়ে যাবে এবং তাদের তথাকথিত উপাস্য তাদের ইবাদতের কথা, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকার কথা তাদের নামে নযর মানার কথা অস্বীকার করবে।
মুশরিকরা যে সকল মা‘বূদের ইবাদত করত সে সকল মা‘বূদেরা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كَلَّا ط سَيَكْفُرُوْنَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا)
“কখনই নয়; তারা অচিরেই তাদের ‘ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।” (সূরা মারইয়াম ১৯:৮২)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ یَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللہِ مَنْ لَّا یَسْتَجِیْبُ لَھ۫ٓ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ وَھُمْ عَنْ دُعَا۬ئِھِمْ غٰفِلُوْنَﭔ وَاِذَا حُشِرَ النَّاسُ کَانُوْا لَھُمْ اَعْدَا۬ئً وَّکَانُوْا بِعِبَادَتِھِمْ کٰفِرِیْنَﭕ)
“সে ব্যক্তির চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্ল¬াহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও সাড়া দেবে না, বরং তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে গাফেল? (হাশরের ময়দানে) যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন যারা তাদেরকে ডাকত তারা তাদের দুশমন হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে ।” (সূরা আহকাফ ৪৬:৫-৬)
এমনকি তারা আল্লাহ তা‘আলাকে সাক্ষী রেখে বলবে: আমরা তোমাদের ইবাদত সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল ছিলাম। কখনো তোমাদেরকে আমাদের ইবাদতের দিকে আহ্বান করিনি, নির্দেশও দেইনি এবং এতে সন্তুষ্টও ছিলাম না। এভাবে মুশরিকদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। সুতরাং মানুষ যতই নেককার হোক, এমনকি নাবী-রাসূল হোক না কেন মৃত্যুর পর সে পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে বেখবর। আর তার অনুসারী ও বিশ্বাসীরা তাকে সাহায্যের জন্য ডাকে, তার নামে নযর মানে বা ইবাদত করে এ সম্পর্কে সে কিছুই জানেনা। এ শ্রেণির ব্যক্তিরা কিয়ামতের দিন সব অস্বীকার করবে। তাই যে সকল কবর পূজারী ও মাযার পূজারী রয়েছেন তাদের সাবধান হওয়া উচিত যাদেরকে ত্রাণকর্তা হিসেবে এবং কল্যাণদাতা হিসেবে আহ্বান করছে তারা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়।
(هُنَالِكَ تَبْلُوْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا أَسْلَفَتْ)
“সেখানে তাদের প্রত্যেকে তার পূর্ব কৃতকর্ম পরীক্ষা করে নেবে” (সূরা ইউনুস ১০:৩০) অর্থাৎ কিয়ামতের মাঠে প্রত্যেক আত্মা তার কৃত কর্মের জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন হবে এবং দুনিয়াতে যা আমল করেছে সব জানতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ تُبْلَي السَّرَا۬ئِرُ)
“যেদিন গোপন বিষয়সমূহের যাচাই-বাছাই করা হবে।” (সূরা ত্বরিক ৮৬:৯)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَنُخْرِجُ لَھ۫ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ کِتٰبًا یَّلْقٰٿھُ مَنْشُوْرًاﭜإِقْرَأْ کِتٰبَکَﺚ کَفٰی بِنَفْسِکَ الْیَوْمَ عَلَیْکَ حَسِیْبًاﺚ)
“এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। ‘তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট।’’ (সূরা ইসরা ১৭:১৩-১৪)
সুতরাং সকলকে সত্য মাওলা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফিরে যেতে হবে, তথাকথিত পীর মাওলা, বাবা মাওলা কোন কাজে আসবে না, বরং সবাই বিপদ দেখে পালাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা আখিরাতে সকলকে একত্রিত করবেন।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যাদের উপাসনা করা হত তারা তাদের উপাসনাকারীদেরকে আখিরাতে ভুলে যাবে।
৩. কিয়ামতের দিন মানুষ দুনিয়াতে কী আমল করেছে তা জানতে পারবে।
৪. কিয়ামতের মাঠে কারো সাথে কোন সম্পর্ক বহাল থাকবে না, কেবল ঈমানের সম্পর্ক বহাল থাকবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ দানব ও মানব এবং ভাল ও মন্দ সকলকেই আমি কিয়ামতের দিন হাযির করবো। কাউকে ছাড়া হবে না। মুশরিকদেরকে বলা হবে-তোমরা ও তোমাদের শরীকরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর এবং মুমিনদের হতে পৃথক থাকো। যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেই দিন এই দু’শ্রেণীর মানুষ পৃথক পৃথকভাবে অবস্থান করবে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।” (৩৬:৫৯) আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেই দিন তারা পৃথক পৃথক হয়ে যাবে।” (৩০:১৪) এটা ঐ সময় হবে যখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা মুকদ্দমার ফায়সালা করার ইচ্ছা করবেন। এজন্যেই বলা হয়েছে যে, মুমিনরা আল্লাহ তা’আলার কাছে আবেদন করবে- হে আল্লাহ! তাড়াতাড়ি মুকদ্দমার ফায়সালা করুন এবং আমাদেরকে এই স্থান হতে মুক্তিদান করুন।
হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আমরা অন্যান্য লোকদের চেয়ে উঁচু জায়গায় থাকবো। এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এই খবর দিচ্ছেন যে, ঐদিন তিনি বলবেন, হে মুশরিকদের দল! তোমরা এবং তোমাদের শরীকরা স্ব-স্ব স্থানে পৃথক পৃথকভাবে অবস্থান কর। এভাবে আল্লাহ পাক তাদের পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন এবং তাদের শরীকরা তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করে ফেলবে। মহান আল্লাহ তাই বলছেন যে, এই মুশরিকরা যাদের অনুসরণ করতো এবং এর উপর ভিত্তি করেই তাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক মনে করে নিয়েছিল, তারাই ঐ দিন এদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেছেনঃ ঐ লোকদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে, যারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন সব মা’দকে আহ্বান করছে যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ডাকে সাড়া দিতে সক্ষম নয় এবং তারা তাদের আহ্বান থেকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। আর যখন লোকদেরকে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে তখন ওরা (শরীকরা) তাদেরই ইবাদতকারীদের শত্রু হয়ে যাবে এবং বলবে- তোমরা যে আমাদের ইবাদত করতে তাতো আমাদের জানা নেই। তোমরা আমাদের উপাসনা এমনভাবে করতে যে, আমরা নিজেরা তা মোটেই অবগত নই! স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষী রয়েছেন যে, আমরা কখনো তোমাদেরকে আমাদের ইবাদত করার জন্যে ডাকিনি, তোমাদেরকে নির্দেশও দেইনি এবং এই ব্যাপারে আমরা তোমাদের প্রতি সন্তুষ্টও নই। এভাবে মুশরিকদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর ইবাদত করছে যারা শুনেও না, দেখেও না, তাদের কোন উপকারও করতে পারে না, তাদেরকে এর নির্দেশও দেয়নি এবং এতে তাদের সম্মতিও ছিল না । বরং তারা ছিল এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তারা এমন প্রতিপালকের ইবাদত পরিত্যাগ করেছে যিনি চিরঞ্জীব ও চিরবিরাজমান। যিনি সবকিছু শ্রবণকারী, সবকিছু দর্শনকারী ও যিনি সবকিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। যিনি তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন এই উদ্দেশ্যে যে, যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা হয় এবং তিনি ছাড়া অন্যদের ইবাদত পরিত্যাগ করা হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি (এবং বলতে বলেছি) যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাগুত (শয়তান) থেকে দূরে থাকবে, সুতরাং তাদের মধ্যে যারা সুপথ পাওয়ার তারা সুপথ প্রাপ্ত হলো এবং যারা পথভ্রষ্ট হওয়ার তারা পথভ্রষ্ট হলো।” আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলই পাঠিয়েছি তার কাছেই অহী করেছি। আমি ছাড়া কেউ উপাস্য নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো।” আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকে আমি জিজ্ঞেস করবো-তোমরা কি মানুষকে এই আদেশ করেছিলে যে, রাহমান (আল্লাহ)-কে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মা’ৰূদগুলোর ইবাদত করবে?”
মুশরিকদের অনেক প্রকার রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় কিতাবে তাদেরকে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের কথা ও অবস্থা বর্ণনা করে তাদের সবকিছু খণ্ডন করেছেন। ঘোষণা করা হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন হিসাবের জন্যে দাড়াবার স্থানে প্রত্যেকের পরীক্ষা হয়ে যাবে এবং ভাল ও মন্দ যা কিছু আমল করেছে তা সামনে হাযির করে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সেই দিন সকলের গুপ্ত বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “সেই দিন মানুষকে তার সমস্ত পূর্বকৃত ও পরে কৃত কার্যাবলী জানিয়ে দেয়া হবে।” আল্লাহ তা’আলা অন্য এক জায়গায় বলেনঃ “কিয়ামতের দিন আমি তার আমলনামা তার জন্যে বের করে তার সামনে হাযির করবো, যা সে উন্মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাবে । (বলা হবে) তোমার আমলনামা পাঠ কর; আজ তোমার হিসাব গ্রহণকারীরূপে তুমি নিজেই যথেষ্ট।”
কেউ কেউ (আরবী) এরূপ পড়েছেন। অর্থাৎ -এর স্থলে পড়েছেন, যার অর্থ হবে পাঠ করা। কেউ কেউ এর তাফসীর করেছেন- ভাল বা মন্দ কাজ যা সে করেছে তার ফল সে ভোগ করবে। যেমন হাদীসে রয়েছে- “প্রত্যেক উম্মত নিজ নিজ মা’ৰূদের পিছনে থাকবে। সূর্যপূজক থাকবে সূর্যের পিছনে, চন্দ্রপূজক থাকবে চন্দ্রের পিছনে এবং মূর্তিপূজক থাকবে মূর্তির পিছনে।
আল্লাহ পাকের উক্তি (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহরই কাছে। প্রত্যাবর্তিত হবে। শুধু তারা কেন, বরং সবকিছুই আল্লাহ তাআলার নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর তিনি ফায়সালা করে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেবেন। আর পথভ্রষ্ট লোকেরা নিজেদের পক্ষ হতে যেসব কপোলকল্পিত মাবুদ বানিয়ে নিয়েছিল তারা সব বাতাসের মত উড়ে যাবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* মূল আয়াতে বলা হয়েছে فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ ফাযায়্য়ালনা বাইনাহুম কোন কোন তাফসীরকার এর অর্থ করেছেনঃ আমরা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবো, যাতে কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে তারা পরস্পরকে মর্যাদা না দেয়। কিন্তু এ অর্থ প্রচলিত আরবী বাকরীতির সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। আরবী বাকরীতি অনুযায়ী এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে দেবো অথবা তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেবো। এ অর্থ প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে আমরা এ বর্ণনা পদ্ধতি অবলম্বন করেছি যে, তাদের মধ্য থেকে আমি অপরিচিতির পর্দা সরিয়ে দেবো। অর্থাৎ মুশরিকরা ও তাদের উপাস্যরা সামনাসামনি অবস্থান করবে এবং উভয় দলের পরিচিতি উভয়ের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। মুশরিকরা জানবে, এদেরকেই আমরা দুনিয়ায় মাবুদ বানিয়ে রেখেছিলাম। অন্যদিকে তাদের মাবুদরাও জানবে এরাই তাদেরকে মাবুদ বানিয়ে রেখেছিল।
* এমন সব ফেরেশতা যাদেরকে দুনিয়ায় দেবদেবী বানিয়ে পূজা করা হয়েছে এবং এমন সব জিন, রূহ, পূর্ববর্তী মনীষী, পূর্ব পুরুষ, নবী, অলী, শহীদ ইত্যাদি যাদেরকে আল্লাহর গুণাবলীতে অংশীদার করে এমন অধিকারসমূহ দান করা হয়েছে যেগুলো ছিল আল্লাহর অধিকার। তারা সেখানে নিজেদের পূজারীদেরকে পরিষ্কার বলে দেবে, তোমরা যে আমাদের পূজা করতে তা তো আমরা জানতামই না। তোমাদের কোন দোয়া, আকুতি, আবেদন, নিবেদন, ফরিয়াদ, নযরানা, মানত, শিরনী, প্রশংসা স্তবস্তুতি, জপতপ এবং কোন সিজদা, বেদী চুম্বন ও দরগাহ প্রদক্ষিণ আমাদের কাছে পৌঁছেনি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* [১] جَمِيْعًا(সকল) এর অর্থ হল শুরু থেকে শেষ অবধি পৃথিবীবাসী সমস্ত মানুষ ও জীন, আল্লাহ তাআলা সকলকে একত্রিত করবেন। যেমন অন্য স্থানে বলেছেন (وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا) অর্থ “আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৪৭ আয়াত)
[২] তাদের বিপরীত মু’মিনদেরকে অন্য দিকে স্থান দেওয়া হবে, অর্থাৎ মু’মিন এবং কাফের ও মুশরিকদেরকে আলাদা আলাদা করে এক অপর থেকে পৃথক করে দেওয়া হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, (وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ)”(বলা হবে) হে অপরাধীগণ! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৫৯ আয়াত) (يَوْمَئِذٍ يَصَّدَّعُونَ) “সেই দিন মানুষ দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।” (সূরা রূম ৩০:৪৩ আয়াত) অর্থাৎ দুই দলে। (ইবনে কাসীর)
[৩] অর্থাৎ, পৃথিবীতে তাদের পরস্পর যে বিশেষ সম্পর্ক ছিল, তা শেষ করে দেওয়া হবে, এরা এক অপরের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের তথাকথিত উপাস্য তাদের ইবাদতের কথা, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকার কথা, তাদের নামে নযর-নিয়ায পেশ করার কথা অস্বীকার করবে।
* তারা বলবে, আমাদের অস্বীকার করার কারণ হল যে, তোমরা কি করতে আমরা তো তার কিছুই জানতাম না। আর আমরা যদি মিথ্যা বলি, তাহলে আমাদের মাঝে আল্লাহ সাক্ষী আছেন এবং সাক্ষ্যের জন্য তিনি যথেষ্ট। তাঁর সাক্ষ্য দানের পর আর কোন প্রমাণের কোন প্রয়োজনই নেই। উক্ত আয়াত এই কথার স্পষ্ট দলীল যে, মুশরিকরা যাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকত, তা শুধু পাথরের মূর্তিই ছিল না (যেমন বর্তমান যুগের কবর পূজারীরা তাদের কবর পূজাকে বৈধ প্রমাণ করার জন্য বলে থাকে যে, এই ধরনের আয়াত মূর্তিপূজা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে); বরং তাদের জ্ঞান ও বুঝার শক্তি ছিল। তাদের মৃত্যুর পর মানুষ তাদের আকার ও মূর্তি বানিয়ে পূজা আরম্ভ করেছিল; যেমন নূহ (আঃ)-এর জাতির কর্ম-পদ্ধতি প্রমাণ করে এবং সহীহ বুখারীতে যার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এটাও বুঝা যাচ্ছে যে, মানুষ যতই নেক হোক, এমনকি নবী বা রসূল হোক, মৃত্যুর পর সে পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে বেখবর। তার অনুসারী ও বিশ্বাসীরা তাকে সাহায্যের জন্য ডাকে, তার নামে নযর-নিয়ায পেশ করে, তার কবরে মেলা-খেলার ব্যবস্থা করে, অথবা অন্য কিছু করে, সে কিন্তু এসব কর্ম থেকে বেখবর থাকে। এই শ্রেণীর সকল ব্যক্তিরা কিয়ামতের দিন সব অস্বীকার করবে। এই কথাই সূরা আহক্বাফের ৪৬:৫-৬নং আয়াতেও বর্ণনা করা হয়েছে।
*[১] অর্থাৎ জেনে নেবে বা স্বাদ গ্রহণ করবে।
[২] অর্থাৎ তথাকথিত কোন উপাস্য বা ত্রাণকর্তা সেখানে কোন কাজে আসবে না, কেউ কারোর কোন কষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখবে না।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা হাশরের মাঠে সবাইকে একত্রিত করবেন। কুরআনের অন্যত্রও আল্লাহ্ এ ঘোষণা দিয়েছেন। কোথাও কোথাও বলেছেন যে, তিনি কাউকেই ছাড়বেন না। যেমন, “আর আমরা তাদের সকলকে একত্র করব; তারপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।” [সূরা আল-কাহাফ: ৪৭] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমরা মানুষদের উপরে একটি উচু জায়গায় থাকব। তখন প্রত্যেক জাতিকে তাদের দেব-দেবীসহ ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ডাকা হবে। তারপর আমাদের মহান রব আসবেন এবং বলবেন, তোমরা কিসের অপেক্ষায় আছ? তখন তারা বলবে, আমরা আমাদের মহান রবের অপেক্ষায় আছি। তখন তিনি বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, আমরা তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখব। তখন তিনি তাদের জন্য তাজাল্লি দিবেন এমতাবস্থায় যে, তিনি হাসছেন। আর তখন মুমিন ও মুনাফিক প্রত্যেককে নুর দিবেন। যার উপরে অন্ধকার চাপা থাকবে। তারপর তারা তার অনুসরণ করবে পুল-সিরাতের দিকে। তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। সে পুল-সিরাতে থাকবে লোহার হুক ও বর্শি। এগুলো যাকে ইচ্ছা পাকড়াও করবে। তারপর মুনাফিকদের নুর নিভিয়ে দেয়া হবে। আর মুমিনরা নাজাত পাবে। তখন প্রথম দল যারা নাজাত পাবে তাদের চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের রাত্রির চাঁদের মত। সত্তর হাজার লোক, তাদের কোন হিসাব হবে না। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি হবে তারা হবে আকাশের সবচেয়ে উজ্জল তারকাটির মত। তারপর অন্যরা। শেষ পর্যন্ত শাফা’আত আপতিত হবে। ফলে তারা শাফা’আত করবে, এমনকি যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, যার অন্তরে যব পরিমাণ তা থাকবে তাকেও বের করা হবে। তাকে জান্নাতের আঙ্গিনায় রাখা হবে। আর জান্নাতিরা তাদের গায়ে পানি ফেলতে থাকবে, ফলে তারা বন্যার উদ্ভিদ যেভাবে উৎপন্ন হয় সেভাবে উদ্গত হবে। আর তাদের পোড়া চলে যাবে। তারপর তারা আল্লাহর কাছে চাইবে, শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য থাকবে দুনিয়া ও তার মত দশগুণ। [মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৪৫-৩৪৬]
[২] আয়াতে বলা হয়েছে, (فَزَیَّلۡنَا بَیۡنَهُمۡ) কোন কোন তাফসীরকার এর অর্থ করেছেনঃ আমরা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবো [বাগভী] আবার কোন কোন তাফসীরকারের মতে এর অর্থ হচ্ছে, আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে দেবো অথবা তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেবো। [তাবারী; সাদী] অথবা অর্থ হবে, তাদের মধ্যে এবং মুমিনদের মধ্যে আমরা পার্থক্য করে দেবো। [জালালাইন] যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আর ‘হে অপরাধিরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও” [সূরা ইয়াসীন ৫৯]
[৩] অর্থাৎ যাদেরকে দুনিয়ায় দেবদেবী বানিয়ে পূজা করা হয়েছে, তারা সেখানে নিজেদের পূজারীদেরকে পরিষ্কার বলে দেবে, তোমরা যে আমাদের পূজা করতে তা তো আমরা জানতামই না। আমরা তোমাদেরকে আমাদের ইবাদাত করার জন্য কোন নির্দেশই দেইনি। আল্লাহ সাক্ষী যে, আমরা তোমাদের ইবাদতে সন্তুষ্ট ছিলাম না। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] আর যদি মা’বুদ বলে এখানে শয়তানদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়ে থাকে, তখন অর্থ হবে, তারা এ কথাগুলো ভীত হয়ে কিংবা বাঁচার জন্য মিথ্যা বলবে। [কুরতুবী]
* আয়াতে এটা স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন প্রতিটি আত্মা পরীক্ষা করে নেবে এবং জানবে ভাল বা মন্দ যা সে আগে করেছে। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা বলেছেন, “সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কী আগে পাঠিয়েছে ও কী পিছনে রেখে গেছে” [সূরা আল-কিয়ামাহ ১৩] আরও বলেন, “যেদিন গোপন বিষয় পরীক্ষিত হবে” [সূরা আত-তারেক: ৯] আরও বলেন, “তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকেশের জন্য যথেষ্ট” [সূরা আল ইসরা: ১৪-১৫] আরও এসেছে, “আর উপস্থাপিত করা হবে আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধিদেরকে দেখবেন আতংকগ্ৰস্ত এবং তারা বলবে, হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে। আর তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে; আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না।” [সূরা আল-কাহাফ: ৪৯]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 28-30
فَکَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًۢا بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمۡ
“So sufficient is Allah as a witness between us,
The gods of the Idolators will claim Innocence from them on the Day of Resurrection
Allah said:
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا
And the Day whereon We shall gather them all together,
Allah will gather together all the creatures of earth, human and Jinn, righteous and rebellious.
He said in another Ayah:
وَحَشَرْنَـهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً
and We shall gather them all together so as to leave not one of them behind. (18:47)
ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُواْ مَكَانَكُمْ أَنتُمْ وَشُرَكَأوُ
كُمْ
then We shall say to those who did associate partners:”Stop at your place! You and your partners.”
He then will command the idolators to stay where they are and not to move from their destined places so they would be separated from the place of the believers.
فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ
Then We shall separate them,
Similarly, Allah said:
وَامْتَازُواْ الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ
(It will be said):”And O you the criminals! Get you apart this Day (from the believers). (36:59)
Allah also said:
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يَوْمَيِذٍ يَتَفَرَّقُونَ
And on the Day when the Hour will be established – that Day shall (all men) be separated (the believers will be separated from the disbelievers). (30:14)
In the same Surah Allah said:
يَوْمَيِذٍ يَصَّدَّعُونَ
On that Day men shall be divided. (30:43)
means, they shall be divided in two.
This is what will take place when Allah Almighty will come for Final Judgement. The believers intercede to Allah so the Final Judgement may come and they get rid of that state.
The Prophet said,
نَحْنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى كُومٍ فَوْقَ النَّاس
On the Day of Resurrection, we will be in a visible place above the (other) people.
Allah tells us here what He is going to command the idolators and their idols to do on the Day of Resurrection
مَكَانَكُمْ أَنتُمْ وَشُرَكَأوُ
كُمْ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ
“Stop at your place! You and your partners.” Then We shall separate them,
and that they would deny their worship and claim their innocence from them.
Similarly, Allah said:
كَلَّ سَيَكْفُرُونَ بِعِبَـدَتِهِمْ
Nay, but they will deny their worship of them. (19:82)
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُواْ مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُواْ
When those who were followed declare themselves innocent of those who followed (them). (2:166)
and;
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لاَّ يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَـمَةِ وَهُمْ عَن دُعَأيِهِمْ غَـفِلُونَ
وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُواْ لَهُمْ أَعْدَاءً
And who is more astray than one who calls on (invokes) besides Allah, such as will not answer him till the Day of Resurrection, and who are (even) unaware of their calls (invocations) to them. And when mankind are gathered (on the Day of Resurrection), they (false deities) will become their enemies. (46:5-6)
This refers to the partners responding to those who worshipped them,
وَقَالَ شُرَكَأوُهُم مَّا كُنتُمْ إِيَّانَا تَعْبُدُونَ
and their partners shall say:”It was not us that you used to worship.”
Then Allah said:
فَكَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ إِن كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِينَ
“So sufficient is Allah as a witness between us and you that we indeed knew nothing of your worship of us.”
They say that we did not know or think that you were worshipping us. Allah is a Witness between us and you that we never called upon you to worship us. We never ordered you to worship us; neither did we accept your worship of us.
Allah said.
هُنَالِكَ تَبْلُو كُلُّ نَفْسٍ مَّا أَسْلَفَتْ
There! Every person will know (exactly) what he had earned before,
This will be the state of accounting on the Day of Resurrection. Every soul shall know all that it had sent forth, both good and evil. Similarly, Allah said:
يَوْمَ تُبْلَى السَّرَايِرُ
The Day when all the secrets will be examined. (86:9)
يُنَبَّأُ الاِنسَـنُ يَوْمَيِذِ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ
On that Day man will be informed of what he sent forward (of deeds), and what he left behind. (75:13)
and,
وَكُلَّ إِنْسَـنٍ أَلْزَمْنَـهُ طَـيِرَهُ فِى عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ كِتَابًا يَلْقَـهُ مَنْشُوراً
اقْرَأْ كَتَـبَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا
and on the Day of Resurrection, We shall bring out for him a book which he will find wide open.
(It will be said to him):”Read your book. You yourself are sufficient as a reckoner against you this Day.” (17:13-14)
Then Allah said,
وَرُدُّواْ إِلَى اللّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ
and they will be brought back to Allah, their rightful Mawla.
All affairs and matters will be brought back to Allah, the Judge, the All-Just. He will judge everyone, and then admit the people of Paradise in Paradise and the people of Hell to Hell.
وَضَلَّ عَنْهُم
and will vanish from them,
meaning what the idolators worshipped,
مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ
what they invented.
what they worshipped besides Allah that they invented.