(Book# 663) [ قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالَارْضِ বলুন, ‘কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরণ সরবারহ করেন, Say:”Who provides for you from the sky and the earth!”] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 663)
[ قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالَارْضِ
বলুন, ‘কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরণ সরবারহ করেন,
Say:”Who provides for you from the sky and the earth!”]
www.motaher21.net

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৩১-৩৩ নং আয়াত:-
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالَارْضِ
বলুন, ‘কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরণ সরবারহ করেন,
Say:”Who provides for you from the sky and the earth!”
قُلۡ مَنۡ یَّرۡزُقُکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ اَمَّنۡ یَّمۡلِکُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ مَنۡ یُّخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ یُخۡرِجُ الۡمَیِّتَ مِنَ الۡحَیِّ وَ مَنۡ یُّدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ فَسَیَقُوۡلُوۡنَ اللّٰہُ ۚ فَقُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۳۱﴾
বলুন, ‘কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরণ সরবারহ করেন অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন , জীবিতকে মৃত থেকে কে বের করেন এবং মৃতকে কে জীবিত হতে কে বের করেন এবং সব বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করেন?’ তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ্‌’। সুতরাং বলুন, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না।

Say, “Who provides for you from the heaven and the earth? Or who controls hearing and sight and who brings the living out of the dead and brings the dead out of the living and who arranges [every] matter?” They will say, ” Allah,” so say, “Then will you not fear Him?”

فَذٰلِکُمُ اللّٰہُ رَبُّکُمُ الۡحَقُّ ۚ فَمَا ذَا بَعۡدَ الۡحَقِّ اِلَّا الضَّلٰلُ ۚۖ فَاَنّٰی تُصۡرَفُوۡنَ ﴿۳۲﴾
সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। অতএব সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? তবে তোমরা (সত্য ছেড়ে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ?

For that is Allah, your Lord, the Truth. And what can be beyond truth except error? So how are you averted?

کَذٰلِکَ حَقَّتۡ کَلِمَتُ رَبِّکَ عَلَی الَّذِیۡنَ فَسَقُوۡۤا اَنَّہُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳۳﴾
এইভাবে সত্যত্যাগীদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই কথা সত্য প্রতিপন্ন হয়ে গেল যে, তারা বিশ্বাস করবে না।
Thus the word of your Lord has come into effect upon those who defiantly disobeyed – that they will not believe.

৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন সে সকল মুশরিকদেরকে জিজ্ঞাসা করার জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যদের ইবাদত করে, যে বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কোন দলীল-প্রমাণ দেননি, তোমরা বল, যারা আকাশ-জমিনে রয়েছে তাদের রিযিক কে দিয়ে থাকেন? তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তির মালিক কে? কে জীবিতকে মৃত করেন এবং মৃতকে জীবিত করেন এবং কে সব কিছু পরিচালনা করেন? এসব প্রশ্নের উত্তর তারা একটিই দেবে তা হল সব কিছু আল্লাহ তা‘আলা করেন। যেমন সূরা যুখরুফের ৯ ও ৮৭ নং, সূরা মু’মিনূনের ৮৪-৮৯ নং, ইত্যাদি আয়াতে তাদের এ স্বীকারোক্তি উল্লেখ রয়েছে। তারা আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহকে স্বীকার করেও আল্লাহ তা‘আলার উলুহিয়্যাহকে স্বীকার না করে বরং আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যের ইবাদত করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তাদেরকে বল: এরপরেও কি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে শির্ক বর্জন করবে না?

(فَذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمُ)

সুতরাং যাকে তোমরা সকল জিনিসের মালিক বলে স্বীকার কর তিনিই প্রকৃত পক্ষে ইবাদতের যোগ্য এবং তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত প্রভু আর তাকে ব্যতীত যে সমস্ত মা‘বূদদের তোমরা ইবাদত কর তারা সকলই ভ্রান্ত। তাই তাদের উপাসনা করা ভ্রষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়।

(كَذٰلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ)

অর্থাৎ যেরূপ এ মুশরিকরা সবকিছু স্বীকার করার পরেও নিজেদের শির্কের ওপর অটল আছে এবং তা বর্জন করতে প্রস্তুতই নয়, অনুরূপ তোমার প্রভুর এ কথাও সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, এরা ঈমান আনবে না। কারণ এরা ভ্রষ্টতার পথ ছেড়ে সঠিক পথ বেছে নেয়ার জন্য প্রস্তুতই নয়। সুতরাং হিদায়াত ও ঈমান তাদের নাসীবে জুটবে কিভাবে? এ কথা অন্য স্থানে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে

(وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَي الْكٰفِرِيْنَ)‏

“প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের প্রতি শাস্তির হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে।” (সূরা যুমার ৩৯:৭১) সুতরাং কেউ তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করলেই মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সম্পাদন করে। কারণ মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহ তা‘আলাকে সব কিছুর মালিক বলে স্বীকার করত, কিন্তু ইবাদতের সময় আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে সংযুক্ত করে ইবাদত করত। ফলে তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সমস্ত কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আল্লাহ তা‘আলা জীবিত থেকে মৃত আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন।
৩. সমস্ত কার্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই পরিচালনা করেন।
৪. সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য করতে হবে, কোন মাযহাব বা বাবা ও পীরের জন্য বৃথা যাবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের উপর হুজ্জত পেশ করছেন যে, তাদেরকে তাঁর প্রভুত্ব ও একত্ব স্বীকার করতেই হবে। অর্থাৎ (হে নবী সঃ)! মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশ হতে যিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন তিনি কে? যিনি নিজের ক্ষমতাবলে যমীনের মধ্য থেকে আঙ্গুর, নাশপাতি, যায়তুন, খেজুর, ঘন ঘন বাগান এবং গুচ্ছযুক্ত ফল সৃষ্টি করে থাকেন, তার সাথে অন্য কোন মাবুদ আছে। কি? উত্তরে তাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে যে, এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহরই কাজ। যদি তিনি তার রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে এমন আছে যে তা খুলতে পারে? যিনি এই শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি দান করেছেন এবং ইচ্ছা করলে যিনি এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন, তিনি কে? যিনি স্বীয় বিরাট ক্ষমতাবলে জীবন্তকে প্রাণহীন থেকে বের করেন এবং প্রাণহীনকে বের করেন জীবন্ত হতে, তিনি কে? এরূপ প্রশ্ন করলে তারা অবশ্যই জবাব দিতে বাধ্য হবে যে, এগুলো করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আল্লাহর। তিনিই এসব কাজ করে থাকেন। এই আয়াতের ব্যাপারে মতভেদ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে এবং এটা সাধারণ ও সবকেই পরিবেষ্টনকারী। সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপনা আল্লাহ পাকেরই দায়িত্বে রয়েছে। যা কিছু হচ্ছে সকলই তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হচ্ছে। তিনিই সকলকে আশ্রয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কাউকেও আশ্রয় দিতে পারে না। সবারই উপর তিনি হাকিম। তাঁর হুকুমের পর কারো হুকুমের কোনই মূল্য নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা প্রশ্ন করেন, কিন্তু তাঁকে কেউই কোন প্রশ্ন করতে পারে না । আসমান ও যমীনের সমস্ত মাখলুক তাঁরই রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। সব সময়েই তিনি একাই সব। আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত রাজত্ব তারই। ফিরিশতা, দানব ও মানব তাঁরই মুখাপেক্ষী এবং তাঁরই দাস। তাঁর কাছে সবারই জবাব এটাই যে, এ সমুদয় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার মধ্যেই রয়েছে। কাফির ও মুশরিকরাও এটা জানে এবং স্বীকারও করে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! (তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ) আচ্ছা! তাহলে তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করছো না কেন? কেন অজ্ঞতা প্রকাশ করতঃ তাঁকে ছেড়ে অন্যের উপাসনা করছো? প্রকৃত মা’বূদ তো সেই আল্লাহ যাকে তোমরাও স্বীকার করছো। অতএব, একমাত্র তিনিই তো ইবাদতের হকদার। সত্য ও সঠিক কথা বুঝে নেয়ার পরেও এরূপ ভ্রষ্টতার অর্থ কি? তিনি ছাড়া সমস্ত মাবুদই মিথ্যা ও বাতিল। প্রকৃত মাবুদের ইবাদত ছেড়ে কোন দিকে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছো?

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “এইভাবে সমস্ত অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল।” অর্থাৎ যেমনভাবে এই মুশরিকরা কুফরী করেছে এবং কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তেমনিভাবে তারা এ কথা স্বীকারও করে নিয়েছে যে, আল্লাহই হচ্ছেন মহান ও পবিত্র প্রতিপালক, তিনিই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা, সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপক তিনি একাই এবং তিনি রাসূলদেরকে তাওহীদসহ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং এই অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, তারা জাহান্নামী । যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “(রাসূলগণ তাদের কাছে এসেছিলেন কি-না, আল্লাহ তাআলার এই প্রশ্নের উত্তরে) তারা বলবেঃ হ্যা (এসেছিলেন), কিন্তু (আমরা অমান্য করেছিলাম, ফলে) কাফিরদের জন্যে আযাবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে রইলো।” (৩৯:৭১)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
যদি এসবই আল্লাহর কাজ হয়ে থাকে, যেমন তোমরা নিজেরও স্বীকার করে থাকো, তাহলে তো প্রমাণিত হলো যে, একমাত্র আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত মালিক, প্রতিপালক প্রভু এবং তোমাদের বন্দেগী ও ইবাদতের হকদার। কাজেই অন্যেরা যাদের এসব কাজে কোন অংশ নেই তারা কেমন করে রবের দায়িত্বে শরীক হয়ে গেলো।

* মনে রাখতে হবে, এখানে সাধারণ লোকদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে একথা বলা হচ্ছে না যে, তোমরা কোন দিকে চলে যাচ্ছো? বরং বলা হচ্ছে, তোমরা কোন দিকে চালিত হচ্ছো? এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, এমন কিছু বিভ্রান্তিকারী ব্যক্তি বা দল আছে যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে টেনে নিয়ে ভুল দিকে ফিরিয়ে দেয়। তাই মানুষকে আবেদন জানানো হচ্ছে, তোমরা অন্ধ হয়ে ভুল পথ প্রদর্শনকারীদের পেছনে ছুটে যাচ্ছো কেন? নিজেদের বুদ্ধি ব্যবহার করে চিন্তা করছো না কেন যে, প্রকৃত সত্য যখন এই, তখন তোমাদেরকে কোন দিকে চালিত করা হচ্ছে? এরূপ ক্ষেত্রে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় লোকদেরকে এ ধরনের প্রশ্ন করার রীতি অনুসৃত হয়েছে। এসব জায়গায় বিভ্রান্তকারীদের নাম না নিয়ে তাদেরকে উহ্য বা পর্দান্তরালে রাখা হয়েছে। যাতে তাদের ভক্ত অনুরক্তরা ঠাণ্ডা মাথায় নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করতে পারে এবং কোন ব্যক্তি একথা বলে তাদেরকে উত্তেজিত করার এবং তাদের চিন্তাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভারসাম্য বিনষ্ট করার সুযোগ না পায় যে দেখো তোমাদের মুরব্বী ও নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করা হচ্ছে এবং তাদেরকে আঘাত দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রচ্ছন্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে সজাগ থাকা উচিত।
* এমনি ধরনের সব স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ও সহজবোধ্য যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে বক্তব্য বুঝানো হয় কিন্তু যারা মানবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছে তারা একগুয়েমীর বশবর্তী হয়ে কোন প্রকারেই মেনে নিচ্ছে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এই আয়াত দ্বারাও পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মুশরিকরা আল্লাহ তাআলাকে মালিক, সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক এবং তাঁকে বিশ্ব-পরিচালক হিসাবে স্বীকার করত। কিন্তু স্বীকারের পরেও যেহেতু তারা তাঁর একতত্ত্ববাদে অন্যদেরকে শরীক করত, তার ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাহান্নামের জালানী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে অনেক ঈমানের দাবীদারও উক্ত তওহীদে উলুহিয়্যার অস্বীকারকারী। “তাদের অন্তরগুলি পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।” আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত করুন। আমীন।
*প্রভু ও উপাস্য তো তিনিই, যাঁর জন্য তোমরা নিজেরাই স্বীকার কর যে, তিনি সমস্ত বস্তুর স্রষ্টা, মালিক এবং পরিচালক। এরপরে সেই উপাস্যকে ছেড়ে তোমরা যে উপাস্য মনগড়াভাবে তৈরী করছ, তা ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা তোমাদের বুঝে আসছে না কেন? তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ?
* অর্থাৎ, যেরূপ এই মুশরিকরা সবকিছু স্বীকার করার পরেও নিজেদের শিরকের উপর অটল আছে এবং তা বর্জন করতে প্রস্ত্ততই নয়, অনুরূপ তোমার প্রভুর এই কথাও সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, এরা ঈমান আনবে না। কারণ এরা ভ্রষ্টতার পথ ছেড়ে সঠিক পথ বেছে নেওয়ার জন্য প্রস্ত্ততই নয়, সুতরাং হিদায়াত ও ঈমান তাদের নসীবে জুটবে কিভাবে? এই কথা অন্য স্থানে এই ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, (وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ) “কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে।” (সূরা যুমার ৩৯:৭১ আয়াত)

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
*[১] যিনি তোমাদেরকে শোনার শক্তি ও দেখার শক্তি দান করেছেন তিনি যদি ইচ্ছে করেন সেগুলোকে নিয়ে যেতে পারেন। সেগুলো তোমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেন। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন, “বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ” [সূরা আল-মুলক; ২৩] আরও বলেন, “বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয় মোহর করে দেন তবে আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ আছে যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে?” [সূরা আল-আনআমঃ ৪৬]

[২] আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াতসমূহে মুশরিকদের উপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করছেন যে, তাদেরই স্বীকৃতি মোতাবেক যদি তিনি আল্লাহই একমাত্র রব হয়ে থাকেন, তবে একমাত্র তার ইবাদত কেন করা হবে না? তাই তিনি বলছেন যে, কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করেন? অর্থাৎ কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তার ক্ষমতায় যমীন ফাটিয়ে তা থেকে বের করে আনেন, “নিশ্চয় আমরা প্রচুর বারি বর্ষণ করি, তারপর আমরা যমীনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি, অতঃপর তাতে আমরা উৎপন্ন করি শস্য; আংগুর, শাক-সব্‌জি, অনেক গাছবিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদি খাদ্য” [সূরা আবাসাঃ ২৫-৩১] তিনি ছাড়া কি আর কোন ইলাহ আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তারা অবশ্যই বলবে যে, এটা শুধু আল্লাহ্‌ই করে থাকেন। অন্য আয়াতেও আল্লাহ্‌ বলেন, “এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রিয্‌ক দান করবে, যদি তিনি তার রিয্‌ক বন্ধ করে দেন ? ” [সূরা আল-মুলক; ২১]।

* [১] যদি এসবই আল্লাহর কাজ হয়ে থাকে, যেমন তোমরা নিজেরাও স্বীকার করে থাকো, তাহলে তো প্রমাণিত হলো যে, একমাত্র আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত মালিক, রব, প্রভু এবং তোমাদের বন্দেগী ও ইবাদাতের হকদার। [ইবন কাসীর] কাজেই অন্যের, যাদের এসব কাজে কোন অংশ নেই তারা কেমন করে রবের দায়িত্বে শরীক হয়ে গেলো। কিভাবে তারা ইবাদত পেতে পারে?

[২] ইনিই হলেন সেই মহান সত্তা যাঁর গুণ-পরাকাষ্ঠার বিবরণ এইমাত্র বর্ণিত হলো, তারপরে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি থাকতে পারে? অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা’আলার নিশ্চিত উপাস্য হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন প্রমাণিত হলো যে, তিনি ছাড়া আর সবই বাতিল। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। [ইবন কাসীর] সুতরাং সেই নিশ্চিত সত্যকে পরিহার করে অন্যান্যদের প্রতি মনোনিবেশ করা কঠিন নির্বুদ্ধিতার কাজ। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যায় যে, ঈমান ও কুফরির মাঝে কোন সংযোগ নেই। যা ঈমান হবে না, তাই কুফর হবে। [কুরতুবী]

[৩] বলা হচ্ছে, “তোমাদেরকে কোথায় ফেরানো হচ্ছে?” অর্থাৎ যখন তোমরা জানতে পারলে যে, আল্লাহ্‌ই একমাত্র রব, তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন তখন কীভাবে তাঁর ইবাদাত ছেড়ে অন্যের ইবাদতের দিকে তোমাদের ফেরানো হয়? [ইবন কাসীর] এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, এমন কিছু বিভ্রান্তকারী রয়েছে যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে টেনে নিয়ে ভুল দিকে ফিরিয়ে দেয়। তাই মানুষকে আবেদন জানানো হচ্ছে, তোমরা অন্ধ হয়ে ভুল পথপ্রদর্শনকারীদের পেছনে ছুটে যাচ্ছে কেন? নিজেদের বুদ্ধি ব্যবহার করে চিন্তা করছে না কেন যে, প্রকৃত সত্য যখন এই, তখন তোমাদেরকে কোন দিকে চালিত করা হচ্ছে?

* এ মুশরিকরা যেহেতু কুফরী করেছে এবং কুফরি চালিয়েই যাচ্ছে, আর আল্লাহর সাথে অন্যের ইবাদাত করছে, অথচ তারা জানে ও স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, তিনিই স্রষ্টা, তাঁর রাজত্বের সবকিছুর একমাত্র নিয়ন্ত্রক, সেহেতু তাদের উপর আল্লাহর বাণী সত্য হয়ে গেছে যে, তারা হতভাগা। জাহান্নামের অধিবাসী। [ইবন কাসীর] অন্যত্রও আল্লাহ তা’আলা তা বলেছেন, “তারা বলবে, অবশ্যই হ্যাঁ। কিন্তু শাস্তির বাণী কাফিরদের উপর বাস্তবায়িত হয়েছে।” [সূরা আয-যুমার: ৭১]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 31-33
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالَارْضِ
Say:”Who provides for you from the sky and the earth!”

The Idolators recognize Allah’s Tawhid in Lordship and the Evidence is established against Them through this Recognition

Allah argues that the idolators’ recognition of Allah’s Oneness in Lordship is an evidence against them, for which they should admit and recognize the Oneness in divinity and worship. So Allah said:

قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالَارْضِ

Say:”Who provides for you from the sky and the earth!”

meaning, who is He Who sends down water from the sky and splits the earth with His power and will and allows things to grow from it,

أَءِلـهٌ مَّعَ اللهِ

Is there a god, besides Allah (Who provides)! (27:62)

فَأَنبَتْنَا فِيهَا حَبّاً

وَعِنَباً وَقَضْباً

وَزَيْتُوناً وَنَخْلً

وَحَدَايِقَ غُلْباً

وَفَـكِهَةً وَأَبّاً

Grains. And grapes and clover plants. And olives and date palms. And gardens dense with many trees. And fruits and herbage.” (80:27-31)

فَسَيَقُولُونَ اللّه

They will say:”Allah.”

أَمَّنْ هَـذَا الَّذِى يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ

“Who is he that can provide for you if He should withhold His provision! (67:21)

Allah’s statement,

أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والَابْصَارَ

Or who owns hearing and sight,

means that Allah is the One who granted you the power of sight and hearing. If He willed otherwise, He would remove these gifts and deprive you of them.

Similarly, Allah said:

قُلْ هُوَ الَّذِى أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالاٌّبْصَـرَ

Say it is He Who has created you, and endowed you with hearing and seeing. (67:23)

Allah also said:

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخَذَ اللَّهُ سَمْعَكُمْ وَأَبْصَـرَكُمْ

Say:”Tell me, if Allah took away your hearing and your sight. (6:46)

Then Allah said:

وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ

And who brings out the living from the dead and brings out the dead from the living!

by His great power and grace.

وَمَن يُدَبِّرُ الَامْرَ

And who disposes of the affairs!

In Whose Hand is the dominion of everything Who protects all, while against Whom there is no protector! Who is the One who judges with none reversing His judgement! Who is the One that is not questioned about what He does while they will be questioned

يَسْأَلُهُ مَن فِى السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِى شَأْنٍ

Whosoever is in the heavens and on earth begs of Him. Every day He is (engaged) in some affair! (55:29)

The upper and lower kingdoms and what is in them both, including the angels, humans, and Jinn are in desperate need of Him. They are His servants and are under His control.

فَسَيَقُولُونَ اللّهُ

They will say:”Allah.”

they say this knowingly and they admit it.

فَقُلْ أَفَلَ تَتَّقُونَ

Say:`Will you not then be afraid (of Allah’s punishment)!”

meaning, don’t you fear Him when you worship others because of your ignorance and false opinions!

Allah then said.
فَذَلِكُمُ اللّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ

Such is Allah, your Lord in truth.

This Lord that you admitted is the One Who does all this, is your Lord and the True Deity that deserves to be worshipped alone.

فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلَلُ

So after the truth, what else can there be, save error!

any one worshipped other than Him is false, for there is no God but Allah, He Has no partners.

فَأَنَّى تُصْرَفُونَ

How then are you turned away!

How then can you turn away from His worship to worship others while you know that He is the Lord that has created everything, the One who controls and governs everything!

Allah then said:

كَذَلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ عَلَى الَّذِينَ فَسَقُواْ أَنَّهُمْ لَا يُوْمِنُونَ

Thus is the Word of your Lord justified against those who rebel (disobey Allah), that they will not believe.

These idolators disbelieved and continued to practice their Shirk, and worship others beside Allah. But they knew that He is the Creator, the Sustainer and the only One of authority and control in this universe, the One Who sent His Messengers to single Him out for all worship. As they disbelieved and were persistent in their Shirk, Allah’s Word proved true and was justified that they would be miserable inhabitants of the Fire.

Allah said:

قَالُواْ بَلَى وَلَـكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَـفِرِينَ

They will say:”Yes,” but the Word of torment has been justified against the disbelievers! (39:71).

Leave a Reply