أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 672)
[ حَرَامًا وَحَلَلاً
তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ?
Which you have made lawful and unlawful?”]
www.motaher21.net
قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ لَکُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ فَجَعَلۡتُمۡ مِّنۡہُ حَرَامًا وَّ حَلٰلًا ؕ قُلۡ آٰللّٰہُ اَذِنَ لَکُمۡ اَمۡ عَلَی اللّٰہِ تَفۡتَرُوۡنَ ﴿۵۹﴾
বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও আল্লাহ্ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ , বলুন, ‘আল্লাহ্ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহ্র উপর মিথ্যা রটনা করছ ?
Say, “Have you seen what Allah has sent down to you of provision of which you have made [some] lawful and [some] unlawful?” Say, “Has Allah permitted you [to do so], or do you invent [something] about Allah ?”
وَ مَا ظَنُّ الَّذِیۡنَ یَفۡتَرُوۡنَ عَلَی اللّٰہِ الۡکَذِبَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی النَّاسِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَشۡکُرُوۡنَ ﴿٪۶۰﴾
আর যারা আল্লাহ্র উপর মিথ্যা রটনা করে, কিয়ামতের দিন সম্পর্কে তাদের কি ধারণা? নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
And what will be the supposition of those who invent falsehood about Allah on the Day of Resurrection? Indeed, Allah is full of bounty to the people, but most of them are not grateful.”
সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৫৯-৬০ নং আয়াত:-
حَرَامًا وَحَلَلاً
তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ?
Which you have made lawful and unlawful?”
৫৯-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
প্রথম আয়াতে মক্কার মুশরিকদের কিছু বিশ্বাস ও কর্মকে খণ্ডন করা হয়েছে। তারা কিছু কিছু প্রাণীর নামকরণ করে যেমন বাহিরাহ, সায়েবাহ, হাম ইত্যাদি পশুকে তাদের মূর্তির নামে উৎসর্গ করে নিজেদের জন্য তা হারাম করে নিত। আবার কিছু কিছু ফসলের কিছু অংশ মূর্তির নামে রেখে দিত এবং কিছু অংশ আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্ধারণ করত। এভাবে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া পবিত্র রিযিককে নিজেদের ইচ্ছামত যা খুশি হালাল করে নিত এবং যা খুশি হারাম করে নিত। এই সম্পর্কে সূরা আন‘য়ামের ১৩৬ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।
আউফ বিন মালেক বিন নায়লা, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করি। ঐ সময় আকৃতি ও পোশাক পরিচ্ছদের দিক থেকে আমার অবস্থা ভাল ছিল না। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কি কোন ধন-সম্পদ নেই? আমি বললাম: হ্যাঁ, আছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কী সম্পদ আছে? আমি বললাম: সব প্রকারের সম্পদ আছে। যেমন উট, দাস-দাসী, ঘোড়া এবং বকরী। আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন সেহেতু তিনি তার নিদর্শন তোমার গায়ে দেখতে চান। অতঃপর তিনি বললেন: তোমাদের উটনীর বাচ্চা হয়, ওর সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিখুঁত হয়, কিন্তু তোমরা ক্ষুর দিয়ে ওর কান কেটে থাক। আর ওটাকে বলে থাকো বাহায়ের। ওর চামড়া চিরে দাও আর বল সরম। এসব করে নিজেদের ওপর এমন কি পরিবারের ওপর হারাম করে নাও। এটা সত্য নয়কি? আমি বললাম; হ্যাঁ, সত্য। এরপর তিনি বললেন: জেনে রেখ, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যা কিছু দান করেছেন তা সবসময়ের জন্য হালাল। কক্ষনো হারাম হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলার হাত তোমাদের হাত অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী। আল্লাহ তা‘আলার চাকু তোমাদের চাকু অপেক্ষা বহুগুণে তীক্ষè। (তিরমিযী হা: ২০০৬, সহীহ)
তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: তোমরা যে এসব কর আল্লাহ তা‘আলা কি তার অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা তাঁর প্রতি অপবাদ দিয়ে থাকো। এটা জানা কথা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এসব করার অনুমতি দেননি। তারাই আল্লাহ তা‘আলার ওপর অপবাদ দিয়ে এসব করে থাকে।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কিয়ামত দিবসের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করে বলেন, যারা আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যা আরোপ করে, কিয়ামতের দিন সম্পর্কে তাদের ধারণা কী? আমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করব, তারা কি ভেবেছে আমি তাদের জন্য এসব অপবাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব না? সময়ই কথা বলে দেবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল। আর এই অনুগ্রহের কারণে তিনি দুনিয়াতে মানুষকে পাপের জন্য শাস্তি দেন না; বরং তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে রেখেছেন। অথবা এর অর্থ এও হতে পারে যে, তিনি পার্থিব নেয়ামত বিনা পার্থক্যে মু’মিন ও কাফির সকলকে প্রদান করেন। অথবা যে বস্তু মানুষের জন্য উপকারী তা হালাল করেছেন এবং যে বস্তু মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা হারাম করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না। সুতরাং নিজের খেয়াল-খুশি মত যা ইচ্ছা শরীয়ত বানিয়ে নেব তা হতে পারে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা যা শরীয়তসিদ্ধ করে দিয়েছেন তাই গ্রহণ করে নিতে হবে এবং সেভাবে ইবাদত করতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার হালালকৃত বস্তু হারাম এবং হারামকৃত বস্তুকে হালাল করা যাবে না।
২. দীনের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কিছু তৈরি করে প্রবেশ করানো বা বাদ দেয়া যাবে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার প্রতি স্নেহপরায়ণ, তিনি জুলুম করেন না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* রিযিক বলতে আমাদের ভাষায় শুধুমাত্র পানাহারের জিনিসপত্র বুঝায়। এ কারণে লোকেরা মনে করে ধর্মীয় সংস্কার ও রসম রেওয়াজের ভিত্তিতে খাদ্য সামগ্রীর ক্ষুদ্রতর পরিসরে লোকেরা যেসব আইন কানুন প্রণয়ন করে রেখেছে এখানে শুধুমাত্র তারই সমালোচনা করা হয়েছে। এ বিভ্রান্তিতে শুধুমাত্র অজ্ঞ অশিক্ষিত ও সাধারণ মানুষরাই ভূগছে না, শিক্ষিত সমাজ ও আলেমরাও এর শিকার হয়েছেন। অথচ আরবী ভাষায় রিযিক শব্দটি নিছক খাদ্যের অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং রকমারি দান, অনুদানও এর আওতাভুক্ত রয়েছে। আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে যা কিছু দিয়েছেন তা সবই তার রিযিক। এমন কি সন্তান সন্ততিও রিযিক। আসমাউর রিজাল তথা রাবীদের জীবনী গ্রন্থসমূহে রিযক রুযাইক ও রিযকুল্লাহ নামে অসংখ্য রাবী পাওয়া যায়। আমাদের দেশে আল্লাহ বখশ, খোদা বখশ, নামগুলো প্রায় এই একই অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি বহুল প্রচলিত দোয়ায় ভাষা হলোঃ
اللَّهُم ارنا الحق حقا وَارْزُقْنَا اتباعه
“হে আল্লাহ! সত্যকে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট করে দাও এবং আমাদের তার অনুসরণ করে চলার সুযোগ দাও।”
প্রচলিত আরবী প্রবাদে বলা হয়,رُزِقَ عِلمًا অর্থাৎ অমুক ব্যক্তিকে তাত্ত্বিক জ্ঞান দেয়া হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে আল্লাহ প্রত্যেক গর্ভবতীর পেটে একজন ফেরেশতা পাঠান। তিনি শিশুর রিযিক এবং তার আয়ু ও কর্ম লিখে দেন। এখানে রিযিক মানে শুধু খাদ্য নয়, যা ভূমিষ্ঠ হবার পরে এ শিশু লাভ করবে। বরং এ দুনিয়ায় তাকে যা কিছু দেয়া হবে সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে বলা হয়েছেঃوَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ অর্থাৎ”যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে।” কাজেই রিযিককে নিছক খাদ্যসামগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং পানাহারের জিনিসের ব্যাপারে মানুষ নিজেই নিজের ওপর যেসব বিধি-নিষেধ ও স্বাধীনতা আরোপ করেছে আল্লাহ কেবল তার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন, একথা মনে করা মারাত্মক ভুল। এটা কোন সামান্য ভুল নয়। এর কারণে আল্লাহর দ্বীনের একটি বিরাট মৌলিক ও নীতিগত শিক্ষা মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেছে। এ ভুলের ফলশ্রুতিতেই তো আজ পানাহারের জিনিসের মধ্যে হারাম ও হালাল এবং জায়েয ও নাজায়েযের ব্যাপারটিকে একটি দ্বীনি বিষয় মনে করা হয় কিন্তু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের ব্যাপকতর বিষয়াবলীতে যদি এ নীতি স্থির করে নেয়া হয় যে, মানুষ নিজেই নিজের সীমা নির্দিষ্ট করে নেয়ার অধিকার রাখে এবং এ কারণে আল্লাহ ও তার কিতাবের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবমুক্ত হয়ে আইন প্রণয়ন করা হতে থাকে তাহলে সাধারণ লোক তো দূরের কথা দ্বীনি উলামা, শরীয়াতের মুফতীবৃন্দ এবং কুরআনের মুফাসির ও হাদীসের শায়খগণের পর্যন্ত এ অনুভূতি হয় না, যে পানাহারের সামগ্রীর ক্ষেত্রে আল্লাহর শরীয়াতের প্রভাবমুক্ত হয়ে জায়েয ও না জায়েযের সীমা নির্ধারণ করার মতো এটিও দ্বীনের সাথে সমান সংঘর্ষশীল।
* তোমরা যে এটা কত বড় মারাত্মক বিদ্রোহাত্মক অপরাধ করছো তার কোন অনুভূতিই তোমাদের নেই। রিযিকের মালিক আল্লাহ। তোমরা নিজেরাও আল্লাহর অধীন। এ অবস্থায় আল্লাহর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ এবং তা ব্যবহার ও ভোগ করার জন্য তার মধ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করার অধিকার তোমরা কোথা থেকে পেলে? কোন চাকর যদি দাবী করে প্রভুর সম্পত্তি ব্যবহার করার এবং তার ওপর যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য তার নিজেরাই বিধি-নিষেধ আরোপ করার অধিকার আছে এবং এ ব্যাপারে প্রভুর কিছু বলার আদতে কোন প্রয়োজনই নেই, তাহলে তার ব্যাপারে তোমরা কি বলবে? তোমাদের নিজেদের কর্মচারী যদি তোমাদের গৃহ এবং গৃহের যাবতীয় জিনিসপত্র ব্যবহার করার এ কাজে লাগাবার ব্যাপারে এ ধরনের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার দাবী করে তাহলে তোমরা তার সাথে কেমন ব্যবহার করবে? আর যে চাকর আদতে এ কথাই মানে না যে, সে কারোর চাকর, কেউ তার প্রভু এবং তার হাতে যে সম্পদ আছে তার অন্য কারোর মালিকানাধীন, তার ব্যাপারটাই আলাদা। এখানে এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকের কথা আলোচনা করা হচ্ছে না। এখানে এমন ধরনের চাকরের কথা আলোচিত হচ্ছে, যে নিজে একথা মানে যে, সে কারোর চাকর এবং এই সাথে এ কথাও মানে যে, সে যার চাকর সেই সমস্ত সম্পদের মালিক। তারপর বলে, এ সম্পদ যথেচ্ছ ব্যবহার করার অধিকার আমি নিজে নিজেই লাভ করেছি এবং এ জন্য প্রভুকে জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজন নেই।
* তোমাদের এ মর্যাদা কেবলমাত্র তখনই সঠিক হতো যখন প্রভু নিজেই তোমাদের অধিকার দান করতেন এবং বলে দিতেন আমার সম্পদ তোমরা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করো এবং নিজেদের কাজ ও ব্যবহার করার সীমারেখা, আইন-কানুন ও নীতি-নিয়ম সবকিছু তৈরী করার যাবতীয় অধিকার তোমাদের দিয়ে দিলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রভু তোমাদের এ অধিকার ও ক্ষমতা যে দিয়েছেন এ মর্মে তোমাদের কাছে সত্যিই প্রভুর দেয়া কোন প্রমাণ পত্র আছে কি? নাকি কোন প্রমাণপত্র ছাড়াই তোমরা এ দাবী করছো যে, তিনি তোমাদের সমস্ত অধিকার দান করেছেন? যদি প্রথমটি সত্য হয় তাহলে মেহেরবানী করে সেই প্রমাণপত্রটি দেখাও। আর দ্বিতীয়টি সত্য হলে একথা পরিষ্কার যে, তোমরা বিদ্রোহের সাথে সাথে মিথ্যাচার ও মিথ্যা দোষারোপের অপরাধও করছো।
* এটা তো প্রভুর অপার অনুগ্রহ যে, তিনি তার ভৃত্যকে নিজেই বলে দিচ্ছেন, আমার গৃহে, আমার সম্পদে এবং স্বয়ং আমার ব্যাপারে কোন ধরনের কর্মনীতি অবলম্বন করলে তুমি আমার সন্তুষ্টি, পুরস্কার ও উন্নতি হাসিল করতে সক্ষম হবে এবং কোন কর্মনীতি অবলম্বন করলে অনিবার্যভাবে আমর ক্রোধ, শাস্তি ও অবনতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু অনেক নির্বোধ ভৃত্য এ অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা, প্রকাশ করে না। অর্থাৎ তাদের মতে যেন এমনটি হওয়া উচিত ছিল যে, প্রভু তাদেরকে নিজের গৃহে এনে স্বাধীন ছেড়ে দিতেন এবং সব সম্পদ তাদের কর্তৃত্বাধীন করে দেবার পর কোন ভৃত্য কি করে তা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে থাকতেন। তারপর যখনই কেউ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে-যা কোন ভৃত্য বা চাকরের জানা নেই-কোন কাজ করতো তখনই তাকে তিনি শাস্তি দিয়ে দিতেন। অথচ প্রভু যদি তার চাকরদেরকে এমন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করতেন তাহলে তাদের এক জনেরও শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হতো না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫৯-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), যহ্হাক (রঃ), কাতাদা (রঃ), আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন যে, মুশরিকরা কতকগুলো জন্তুকে ‘বাহায়ের ‘সাওয়ায়েব’ এবং ‘আসায়েল’ নামে নামকরণ করে কোনটাকে নিজেদের উপর হালাল এবং কোনটাকে হারাম করে নিতো, এখানে এটাকেই খণ্ডন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “জমি হতে যা উৎপন্ন হয় এবং যেসব পশুর জন্ম হয়, তা থেকে তারা একটা অংশ আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করে।”
আবুল আহওয়াস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি হচ্ছেন আউফ ইবনে মালিক ইবনে নালা, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করি। ঐ সময় আকৃতি ও পোশাক পরিচ্ছদের দিক দিয়ে আমার অবস্থা ভাল ছিল না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার কি কোন ধন-সম্পদ নেই?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যা আছে। তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেনঃ “কি মাল আছে?” আমি জবাব দিলামঃ সর্বপ্রকারের মাল রয়েছে। যেমন, উট, দাসদাসী, ঘোড়া এবং বকরী। তখন তিনি বলেনঃ “যখন তিনি তোমাকে মালধন দান করেছেন, তখন তিনি তার নিদর্শন তোমার উপর দেখতে চান।” অতঃপর তিনি বললেনঃ “তোমাদের উস্ত্রীর বাচ্চা হয়। ওর সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভাল ও নিখুঁত হয়। কিন্তু তোমরাই ক্ষুর উঠিয়ে নিয়ে ওর কান কেটে দিয়ে থাকো। আর এটাকে বলে থাকো ‘বাহায়ের’? তোমরা ওর চামড়া চিরে দাও এবং ওকে বলে থাকো সরম। তোমরা এগুলো নিজেদের উপরও হারাম করে নাও এবং পরিবারবর্গের জন্যেও। এটা সত্য নয় কি?” আমি বললামঃ হ্যাঁ, সত্য। এরপর তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, তা সর্বসময়ের জন্যে হালাল। কখনও তা হারাম হতে পারে না। আল্লাহর হাত তোমাদের হাত অপেক্ষা অনেক বেশী শক্তিশালী। আল্লাহর চাকু তোমাদের চাকু অপেক্ষা বহুগুণে তীক্ষ্ণ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদের প্রতি নিজের কঠিন অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করছেন, যারা তাঁর হালালকে নিজেদের উপর হারাম করে নেয় এবং তাঁর হারামকে নিজেদের জন্যে হালাল বানিয়ে নেয়। আর এটা শুধু নিজেদের ব্যক্তিগত মত ও প্রবৃত্তির উপর ভিত্তি করেই করে থাকে, যার কোন দলীল নেই।
এরপর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কিয়ামত দিবসের শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করছেন। তিনি বলছেন, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, কিয়ামতের দিন আমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবো এ সম্পর্কে তাদের ধারণা কি?
(আরবী) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ লোকদের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এটা ছেড়ে দেয়ার মধ্যে যেন দুনিয়াতেই তাদেরকে শাস্তি দিয়ে চিকিৎসা করা উদ্দেশ্য। আমি বলি- এটাও উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা লোকদের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল। কেননা, তিনি দুনিয়ায় তাদের জন্যে এমন বহু জিনিস হালাল করেছেন, যেগুলো পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং তাদের জন্যে সেগুলো উপকারী। পক্ষান্তরে তিনি মানুষের জন্যে এমন জিনিস হারাম করেছেন, যেগুলো তাদের জন্যে সরাসরি ক্ষতিকর ছিল। এটা হয় দ্বীনের দিক দিয়েই হাক, না হয় দুনিয়ার দিক দিয়েই হাক। কিন্তু অধিকাংশ লোকই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অর্থাৎ তারা আল্লাহর দেয়া নিয়ামতগুলো নিজেদের উপর হারাম করে নিচ্ছে এবং নফসের উপর সংকীর্ণতা আনয়ন করছে। এটা এইরূপে যে, নিজেদের পক্ষ থেকে কোন জিনিস হালাল করছে এবং কোন জিনিস হারাম করছে। মুশরিকরা এটাকে নিজেদের মধ্যে বহুল পরিমাণে প্রকাশ করেছে এবং একরূপ পন্থাই বানিয়ে নিয়েছে। যদিও আহলে কিতাবের মধ্যে এটা ছিল না, কিন্তু এখন তারাও এই বিদআত চালু করে দিয়েছে। মূসা ইবনে সাবাহ হতে, (আরবী) -এই উক্তির ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন তিন প্রকারের আল্লাহওয়ালা লোককে পেশ করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের মধ্যে প্রথম প্রকারের লোককে জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার বান্দা! কি উদ্দেশ্যে তুমি ভাল কাজ করেছিলে?” উত্তরে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি জান্নাত তৈরী করেছেন এবং তার মধ্যে বাগান, ফলমূল, বৃক্ষলতা, নদ-নদী, হুর ও প্রাসাদ এবং অনুগত বান্দাদের জন্যে সর্বপ্রকারের নিয়ামত সরবরাহ করে রেখেছেন। ঐগুলো লাভ করার আশাতেই আমি রাত্রি জেগে জেগে আপনার ইবাদত করেছি ও সারা দিন রোযা রেখেছি।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “তুমি যখন জান্নাত লাভের আশাতেই এসব আমল করেছো, তখন যাও, জান্নাতই তোমার ঠিকানা। কিন্তু এটা তোমার আমলের বিনিময়ে নয়। আমি তোমাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিলাম। এটা আমার অনুগ্রহ। আর তোমাকে আমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করছি আর এটাও আমার অনুগ্রহ।” তখন সে এবং তার সঙ্গীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর দ্বিতীয় প্রকারের লোককে হাযির করা হবে। তাকে আল্লাহ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার বান্দা! তুমি কেন ভাল কাজ করেছিলে?” উত্তরে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি জাহান্নাম তৈরী করেছেন এবং তার মধ্যে রেখেছেন জিঞ্জির, লু-হাওয়া ও গরম পানি। নাফরমান বান্দাদের জন্যে সেখানে সর্বপ্রকারের শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। আমি এই জাহান্নাম হতে রক্ষা পাওয়ার আশাতেই রাত্রি জেগে জেগে ইবাদত করেছি এবং সারা দিন রোযা রেখেছি।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “তুমি যখন জাহান্নামের ভয়ে ভাল কাজ করেছে, তখন আমি তোমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলাম। তারপর এটা অতিরিক্ত অনুগ্রহ যে, তোমাকে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার পর জান্নাতও দান করলাম।” সুতরাং সে এবং তার সাথীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর তৃতীয় প্রকারের লোককে পেশ করা হবে। তাকেও আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার বান্দা! তুমি কেন ভাল কাজ করেছিলে।” সে উত্তরে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি শুধু আপনার প্রতি প্রেম ও মহব্বতের কারণে আপনার ইবাদত করেছি। আমি রাত জেগে জেগে ইবাদত করেছি এবং ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করে সারা দিন রোযা রেখেছি একমাত্র আপনার সাথে সাক্ষাৎ লাভের আশায় এবং আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।” তখন মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ “তুমি যখন আমার মহব্বতে ও আমার সাথে সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্যে এরূপ করেছে, তখন আমি তোমার সামনে আমার ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ করছি। তুমি এখন আমাকে মন ভরে দেখে নাও এবং চক্ষু জুড়িয়ে নাও। তুমি সর্বাপেক্ষা বড় সম্পদ লাভ করলে।” এরপর তিনি তাকে বলবেনঃ “আমি আমার অনুগ্রহের বদৌলতে তোমাকে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি দিচ্ছি এবং জান্নাতেও প্রবিষ্ট করছি। আমার ফিরিশতামণ্ডলী তোমার পাশে হাযির থাকবে এবং আমি স্বয়ং তোমার উপর আমার শান্তি বর্ষণ করতে থাকবো।” সুতরাং সে ও তার সঙ্গীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে আবি হাতিমই (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে এটা বর্ণনা করেছেন)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
* এখানে মুশরিকরা যে সকল পশুকে তাদের মূর্তির নামে উৎসর্গ করে নিজেদের জন্য তা হারাম করে নিত, সেই সকল পশুকে হারাম বা অবৈধ করার কথা বুঝানো হয়েছে। সূরা আন্আমে এর বিস্তারিত আলোচনা পার হয়ে গেছে।
* [১] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবেন?
[২] (মানুষের প্রতি আল্লাহর একটি অনুগ্রহ) এই যে, তিনি পৃথিবীতে মানুষকে পাপের জন্য সত্ত্বর পাকড়াও করেন না; বরং তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে রেখেছেন। অথবা এর অর্থ এই যে, তিনি পার্থিব নিয়ামত বিনা পার্থক্যে মু’মিন ও কাফের সকলকে প্রদান করেন। অথবা যে বস্তু মানুষের জন্য উপকারী ও জরুরী, তা হালাল করেছেন, হারাম করেননি।
[৩] অর্থাৎ, আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না। অথবা তাঁর হালালকৃত বস্তুকে হারাম করে নেয়।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
* [১] আয়াত নাযিল হওয়া সম্পর্কে ইবন আব্বাস বলেন, জাহেলী যুগে তারা কিছু জিনিসকাপড় ইত্যাদি নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছিল, সেটার সংবাদই আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে প্রদান করেছেন। তারপর আল্লাহ অন্য আয়াতে সেটার ব্যাপারে বলেছেন, “বলুন, কে তোমাদের উপর সে সব বস্তু হারাম করেছেন যেগুলো আল্লাহ বান্দাদের জন্য বের করেছেন?” [সূরা আল-আরাফ: ৩২][তাবারী] মূলত: রিযিক শব্দটি নিছক খাদ্যের অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং রকমারি দান, অনুদানও এর আওতাভুক্ত রয়েছে। আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে যা কিছু দিয়েছেন তা সবই তার রিযিক। এমনকি সন্তান-সন্ততিও রিযিক। হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহ প্রত্যেক গর্ভবতীর পেটে একজন ফেরেশতা পাঠান। তিনি শিশুর রিযিক এবং তার আয়ু ও কর্ম লিখে দেন। [দেখুন, বুখারীঃ ৩০৩৬] এখানে রিযিক মানে শুধু খাদ্য নয়, যা ভূমিষ্ঠ হবার পরে এ শিশু লাভ করবে। বরং এ দুনিয়ায় তাকে যা কিছু দেয়া হবে সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে বলা হয়েছেঃ “যা কিছু আমি তাদের রিযক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে ” [সূরা আল-বাকারাহঃ ৩]
[২] তোমরা যে এটা কতবড় মারাত্মক বিদ্রোহাত্মক অপরাধ করছে তার কোন অনুভূতিই তোমাদের নেই। রিযিকের মালিক আল্লাহ। তোমরা নিজেরাও আল্লাহর অধীন। এ অবস্থায় আল্লাহর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ এবং তা ব্যবহার ও ভোগ করার জন্য তার মধ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করার অধিকার তোমরা কোথা থেকে পেলে ? বিধি-নিষেধ তো তিনিই দেবেন। তিনিই হালাল বা হারামকারী, অন্য কেউ নয়। আর তা তাঁর রাসূলের মাধ্যমেই আসতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]
[৩] আবুল আহওয়াছ আউফ ইবনে মালেক ইবনে নাদলাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খুব অবিন্যস্ত অবস্থায় আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ “তোমার কি সম্পদ আছে?” আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি বললেনঃ “কি সম্পদ”? আমি বললামঃ সবধরণের সম্পদ, উট, দাস, ঘোড়া এবং ছাগল। তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহ যদি তোমাকে কোন সম্পদ দিয়ে থাকেন তবে তা তোমার নিকট দেখা যাওয়া উচিত।” এরপর আরো বললেনঃ “তোমার সম্প্রদায়ের উটের বাচ্চা সুস্থ কান সম্পন্ন হওয়ার পরে তুমি ক্ষুর নিয়ে সেগুলোর কান কেটে বল না যে, এগুলো ‘বুহুর’? এবং সেগুলো ফাটিয়ে দিয়ে বা সেগুলোর চামড়া ফাটিয়ে তুমি কি বলনা যে, এগুলোঃ ‘ছুরম’? আর এতে করে তুমি সেগুলোকে তোমার এবং তোমার পরিবারের জন্য হারাম বানিয়ে নাও না? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আল্লাহ্ তোমাকে যা দান করেছেন তা অবশ্যই তোমার জন্য হালাল। আল্লাহ্র বাহুর ক্ষমতা তোমার বাহুর ক্ষমতা থেকে নিঃসন্দেহে বেশী শক্তিশালী, আর আল্লাহর ক্ষুর তোমার ক্ষুরের চাইতে ধারালো” [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৪৭৩] সুতরাং কোন হালাল বস্তুকে হারাম করার ক্ষমতা মানুষকে আল্লাহ দেন নি। তারপর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে আখেরাতের কঠিন ভয় দেখিয়ে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন।
* এ সমস্ত লোকদের সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা? তাদেরকে কি আল্লাহ্ এমনিই ছেড়ে দিবেন? কিয়ামতের দিন কি তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? [ইবন কাসীর] কিন্তু তিনি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। তাঁর অনুগ্রহের এক প্রকাশ হচ্ছে যে, তিনি তাদেরকে দুনিয়ার বুকে এর কারণে দ্রুত শাস্তি দেন না। [তাবারী] আরেক প্রকাশ হচ্ছে, তিনি ঐ সব বস্তুই হারাম করেছেন যা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিকর বিবেচিত। পক্ষান্তরে যা উপকারী তা অবশ্যই হালাল করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ্র শোকরিয়া জ্ঞাপন না করে আল্লাহ্ তাদের জন্য যা হালাল করেছেন তা হারাম করছে, এতে করে তারা তাদের নিজেদের উপর দুনিয়াকে সংকীর্ণ করে নিচ্ছে। আর এ কাজটা মুশরিকরাই করে থাকে, তারা নিজেদের জন্য শরী’আত প্রবর্তন করে নিয়েছে। অনুরূপভাবে আহলে কিতাবগণও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারাও দ্বীনের মধ্যে বিদ”আতের প্রবর্তন করেছে। [ইবন কাসীর]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 59-60
حَرَامًا وَحَلَلاً
Which you have made lawful and unlawful?”
None can make Anything Lawful or Unlawful except Allah or Those Whom Allah has allowed to do so
Allah says;
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلَلاً قُلْ اللّهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللّهِ تَفْتَرُونَ
Say:”Tell me, what provision Allah has sent down to you! And you have made of it lawful and unlawful.”
Say:”Has Allah permitted you (to do so), or do you invent a lie against Allah!”
Ibn Abbas, Mujahid, Ad-Dahhak, Qatadah, Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam and others said:
“This Ayah was revealed to criticize the idolators for what they used to make lawful and unlawful. Like the Bahirah, Sa’ibah and Wasilah.”
As Allah said:
وَجَعَلُواْ لِلَّهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالاٌّنْعَامِ نَصِيباً
And they assign to Allah a share of the tilth and cattle which He has created. (6:136)
Imam Ahmad recorded a narration from Malik bin Nadlah who said,
“I came to Allah’s Messenger while in filthy clothes. He said,
هَلْ لَكَ مَالٌ
Do you have wealth?
I answered, `Yes.’
He said,
مِنْ أَيِّ الْمَالِ
what kind of wealth?
I answered, `All kinds; camels, slaves, horses, sheep.’
So he said,
إِذَا اَتَاكَ اللَّهُ مَالاً فَلْيُرَ عَلَيْك
If Allah gives you wealth, then let it be seen on you.
Then he said,
هَلْ تُنْتَجُ إِبْلُكَ صِحَاحًا اذَانُهَا فَتَعْمِدَ إِلَى مُوسًى فَتَقْطَعَ اذَانَهَا فَتَقُولُ هَذِهِ بُحْرٌ وَتَشُقُّ جُلُودَهَا وَتَقُولُ هَذِهِ صُرُمٌ وَتُحَرِّمُهَا عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِك
It is not that your camels are born with healthy ears, you take a knife and cut them, then say, “This is a Bahr,” tear its skin, then say, `This is a Sarm,” and prohibit them for yourself and your family.
I replied, `Yes.’ He said,
فَإِنَّ مَا اتَاكَ اللهُ لَكَ حِلٌّ سَاعِدُ اللهِ أَشَدُّ مِنْ سَاعِدِكَ وَمُوسَى الله أَحَدُ مِنْ مُوسَاك
What Allah has given you is lawful. Allah’s Forearm is stronger than your forearm, and Allah’s knife is sharper then your knife.”
And he mentioned the Hadith in its complete form, and the chain for this Hadith is a strong, good chain.
Allah criticized those who make lawful what Allah has made unlawful or vice verse. This is because they are based on mere desires and false opinions that are not supported with evidence or proof.
Allah then warned them with a promise of the Day of Resurrection. He asked.
وَمَا ظَنُّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
And what think those who invent a lie against Allah, on the Day of Resurrection!
What do they think will happen to them when they return to Us on the Day of Resurrection!
إِنَّ اللّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ
Truly, Allah is full of bounty to mankind,
Ibn Jarir said that Allah’s statement:
indicated that the bounty is in postponing their punishment in this world.
I (Ibn Kathir) say, the meaning could be that the Grace for people is in the good benefits that He made permissible for them in this world or in their religion. He also has not prohibited them except what is harmful to them in their world and the Hereafter.
وَلَـكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ
but most of them are ungrateful.
So they prohibited what Allah has bestowed upon them and made it hard and narrow upon themselves. They made some things lawful and others unlawful. The idolators committed these actions when they set laws for themselves. And so did the People of the Book when they invented innovations in their religion.