(Book# 679) [ فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوۡسٰۤی اِلَّا ذُرِّیَّۃٌ مِّنۡ قَوۡمِہٖ মূসার প্রতি তার গোত্রের অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত আর কেউ ঈমান আনল না। Only a Few Youth from Fir`awn’s People believed in Musa www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 679)
[ فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوۡسٰۤی اِلَّا ذُرِّیَّۃٌ مِّنۡ قَوۡمِہٖ
মূসার প্রতি তার গোত্রের অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত আর কেউ ঈমান আনল না।
Only a Few Youth from Fir`awn’s People believed in Musa
www.motaher21.net

فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوۡسٰۤی اِلَّا ذُرِّیَّۃٌ مِّنۡ قَوۡمِہٖ عَلٰی خَوۡفٍ مِّنۡ فِرۡعَوۡنَ وَ مَلَا۠ئِہِمۡ اَنۡ یَّفۡتِنَہُمۡ ؕ وَ اِنَّ فِرۡعَوۡنَ لَعَالٍ فِی الۡاَرۡضِ ۚ وَ اِنَّہٗ لَمِنَ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۸۳﴾
কিন্তু ফির’আউন এবং তার পরিষদবর্গ নির্যাতন করবে এ আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের এক ছোট্ট নওজোয়ান দল ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঈমান আনেনি। আর নিশ্চয় ফির’আউন ছিল যমীনে পরাক্রমশীল এবং সে নিশ্চয় ছিল সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
But no one believed Moses, except [some] youths among his people, for fear of Pharaoh and his establishment that they would persecute them. And indeed, Pharaoh was haughty within the land, and indeed, he was of the transgressors

সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৮৩ নং আয়াত:-
فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوۡسٰۤی اِلَّا ذُرِّیَّۃٌ مِّنۡ قَوۡمِہٖ
মূসার প্রতি তার গোত্রের অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত আর কেউ ঈমান আনল না।
Only a Few Youth from Fir`awn’s People believed in Musa.

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

কুরআনের মূল বাক্যে ذُرِّيَّةٌ (যুররিয়াতুন) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে সন্তান-সন্ততি। আমি এর অনুবাদ করেছি নওজোয়ান। কিন্তু এ বিশেষ শব্দটির মাধ্যমে কুরআন মজীদে যে কথা বর্ণনা করতে চায় তা হচ্ছে এই যে, বিভীষিকাময় দিনগুলোতে গুটিকয় ছেলেমেয়েই তো সত্যের সাথে সহযোগিতা করার এবং সত্যের পতাকাবাহীকে নিজেদের নেতা হিসেবে মেনে নেয়ার দুঃসাহস করেছিল। কিন্তু মা-বাপ ও জাতির বয়স্ক লোকেরা এ সৌভাগ্য লাভ করতে পারেনি। তারা তখন বৈষয়িক স্বার্থ পূজা, সুবিধাবাদিতা ও নিরাপদ জীবন যাপনের চিন্তায় এত বেশী বিভোর ছিল যে, এমন কোন সত্যের সাথে সহযোগিতা করতে তারা উদ্যোগী হয়নি যার পথ তারা দেখছিল বিপদসংকুল। বরং তারা উল্টো নওজোয়ানদের পথ রোধ করে দাঁড়াচ্ছিল। তাদেরকে বলছিল, তোমরা মূসার ধারে কাছেও যেয়ো না, অন্যথায় তোমরা নিজেরা ফেরাউনের রোষাগ্নিতে পড়বে এবং আমাদের জন্যও বিপদ ডেকে আনবে।

কুরআনের একথা বিশেষভাবে সুস্পষ্ট করে পেশ করার কারণ হচ্ছে এই যে, মক্কার জনবসতিতেও মুহাম্মাদ ﷺ এর সাথে সহযোগিতা করার জন্য যারা এগিয়ে এসেছিলেন তারাও জাতির বয়স্ক ও বয়োবৃদ্ধ লোক ছিলেন না। বরং তারাও সবাই ছিলেন বয়সে নবীন। আলী ইবনে আবী তালেব (রা.), জাফর ইবনে তাইয়ার(রা.), যুবাইর (রা.), তালহা (রা.), সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.), মুসআব ইবনে উমাইর (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) মতো লোকদের বয়স ইসলাম গ্রহণের সময় ২০ বছরের কম ছিল। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), বিলাল (রা.) ও সোহাইবের (রা.) বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। আবু উবাদাহ ইবনুল জাররাহ (রা.), যায়েদ ইবনে হারেসাহ (রা.), উসমান ইবনে আফ্ফান (রা.) ও উমর ফারুকের (রা.) বয়স ছিল ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের সবার থেকে বেশী বয়সের ছিলেন হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)। তার বয়স ঈমান আনার সময় ৩৮ বছরের বেশী ছিল না। প্রথমিক মুসলমানদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন সাহাবীর নাম আমরা পাই যার বসয় ছিল নবী (সা.) এর চেয়ে বেশী। তিনি ছিলেন হযরত উবাদাহ ইবনে হারেস মুত্তালাবী (রা.)। আর সম্ভবত সাহাবীগণের সমগ্র দলের মধ্যে একমাত্র হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) ছিলেন নবী (সা.) এর সমবয়সী।

* মূল ইবারতে فَمَا آمَنَ لِمُوسَى ফামা আমানা লিমুছা শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। এতে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করেছেন, হয়তো বনী ইসরাঈলের সবাই কাফের ছিল এবং শুরুতে তাদের মধ্যে থেকে মাত্র গুটিকয় লোক ঈমান এনেছিল। কিন্তু ঈমান শব্দের পরে যখন লাম ব্যবহৃত হয় তখন সাধারণত এর অর্থ হয় আনুগত্য ও তাবেদারী করা। অর্থাৎ কারোর কথা মেনে নেয়া এবং তার কথায় ওঠাবসা করা। কাজেই মূলত এ শব্দগুলোর ভাবগত অর্থ হচ্ছে, গুটিকয় নওজোয়ানকে বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত বনী ইসরাঈল জাতির কেউই হযরত মুসাকে নিজের নেতা ও পথপ্রদর্শক হিসেবে মেনে নিয়ে তার আনুগত্য করতে এবং ইসলামী দাওয়াতের কাজে তাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত হয়নি। তারপর পরবর্তী বাক্যাংশ একথা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাদের এ কার্যধারার আসল কারণ এ ছিল না যে, হযরত মূসার সত্যবাদী ও তার দাওয়াত সত্য হবার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন সন্দেহ ছিল বরং এর কারণ শুধুমাত্র এই ছিল যে, তারা এবং বিশেষ করে তাদের প্রধান ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ হযরত মূসার সহযোগী হয়ে ফেরাউনের নির্যাতনের যাতাকলে নিষ্পেষিত হবার ঝুঁকি নিতে রাজী ছিল না। যদিও তারা বংশধারা ও ধর্মীয় উভয় দিক দিয়ে হযরত ইব্রাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব ও ইউসুফ (আ) এর উম্মত ছিল এবং এ দিক দিয়ে তারা সবাই মুসলমান ছিল। কিন্তু দীর্ঘকালীন নৈতিক অবক্ষয় এবং পরাধীনতার ফলে সৃষ্ট কাপুরুষতা তাদের মধ্যে কুফরী ও গোমরাহীর শাসনের বিরুদ্ধে ঈমান ও হেদায়াতের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে নিজেরা এগিয়ে আসার অথবা যে এগিয়ে এসেছে তাকে সাহায্য করার মত মনোবল অবশিষ্ট রাখেনি।

হযরত মূসা ও ফেরাউনের এ সংঘাতে সাধারণ বনী ইসরাঈলের ভূমিকা কি ছিল? একথা বাইবেলের নিম্নোক্ত অংশ থেকে আমরা জানতে পারি।

পরে ফেরাউনের নিকট ইহতে বাহির হইয়া আসিবার সময় তাহারা মূসার ও হারুণের সাক্ষাত পাইল। তাহারা পথে দাঁড়াইয়া ছিলেন। তাহারা তাহাদিগকে কহিল, সদা প্রভু তোমাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া বিচার করুনঃ কেননা, তোমরা ফেরাউনের দৃষ্টিতে ও তাহার দাসগণের দৃষ্টিতে আমাদিগকে দুর্গন্ধ স্বরূপ করিয়া আমাদের প্রাণনাশার্থে তাহাদের হস্তে খড়গ দিয়াছ। (যাত্রা পুস্তক৫: ২০-২১)

তালমুদে লেখা হয়েছে বনী ইসরাঈল মূসা ও হারুন (আ) কে বলতোঃ “আমাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, একটি নেকড়ে বাঘ একটি ছাগলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং রাখাল এসে নেকড়ের মুখ থেকে ছাগলটিকে বাঁচাবার চেষ্টা করলো। তাদের উভয়ের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ছাগলটা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। ঠিক এভাবেই তোমার ও ফেরাউনের টানা হেঁচড়ায় আমাদের দফা রফা হয়েই যাবে।”

সূরা আরাফে একথাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছেঃ বনী ইসরাইল হযরত মুসাকে বললোঃ

أُوذِينَا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَأْتِيَنَا وَمِنْ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا (اية-129)

“তুমি আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি, তুমি আসার পরেও নিপীড়নের শিকার হচ্ছি।”

* মূল ইবারতেمُسْرِفِينَ (মুসরিফীন) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, সীমা অতিক্রমকারী। কিন্তু এ শাব্দিক অনুবাদের সাহায্যে তার আসল প্রাণবস্তু সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে না। মুসরিফীন শব্দটির আসল অর্থ হচ্ছে, এমন সব লোক যারা নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য যে কোন নিকৃষ্টতম পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না। যারা কোন প্রকার জুলুম, নৈতিকতা বিগর্হিত কাজ এবং যে কোন ধরনের পাশবিকতা ও বর্বরতায় লিপ্ত হতে একটুও কুণ্ঠিত হয় না। যারা নিজেদের লালসা ও প্রবৃত্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। তারা এমন কোন সীমানাই মানে না যেখানে তাদের থেমে যেতে হবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, মূসা (আঃ) যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী পেশ করলেন, তখন ফিরআউনের কওম ও তার স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই তার উপর ঈমান আনলো। ঈমান আনয়নকারী নবযুবকদের এই ভয় ছিল যে, জোরপূর্বক তাদেরকে পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কেননা, ফিরআউন ছিল বড়ই দাম্ভিক, ধূর্ত ও উদ্ধত। তার শান-শওকত ও দবদবা ছিল খুই বেশী। তার কওম তাকে অত্যধিক ভয় করতো। বানী ইসরাঈল ছাড়া অন্যান্যদের মধ্য থেকে শুধু ফিরআউনের স্ত্রী, ফিরআউনের বংশধরের মধ্য হতে অন্য একটি লোক, তার কোষাধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী, এই অল্প সংখ্যক লোক ঈমান এনেছিল।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) দ্বারা মূসা। (আঃ)-এর বানী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ঐ লোকদের সন্তানাদি উদ্দেশ্য যাদের কাছে মূসা (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং তাদের এই সন্তানদেরকে ছেড়ে তারা বহু যুগ পূর্বে মারা গিয়েছিল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) মুজাহিদ (রঃ)-এর অভিমত পছন্দ করে বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ফিরআউনের কওম নয়, বরং মূসা (আঃ)-এর কওমের বানী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। কেননা (আরবী) বা সর্বনাম যখন কারো দিকে প্রত্যাবর্তিত হয় তখন তা নিকটতরের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে। এখানে নিকটতর হচ্ছে (আরবী) শব্দটি, (আরবী) শব্দটি নয়। আর এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, (আরবী) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নবযুবক লোকেরা। আর তারা ছিল বানী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত। প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, বানী ইসরাঈলের সবাই তো মূসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করেছিল এবং তাদেরকে সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল। তারা মূসা (আঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল ছিল। পবিত্র গ্রন্থাবলী হতে তারা এই সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ফিরআউনের বন্দীত্ব থেকে মুক্তিদান করবেন এবং তার উপর তাদেরকে করবেন জয়যুক্ত। আর এ কারণেই ফিরআউন যখন এ খবর জানতে পারলো তখন থেকে সে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে লাগলো। মূসা (আঃ) যখন তার কাছে প্রচারক হয়ে আসলেন তখন সে বানী ইসরাঈলের উপর যুলুম করতে শুরু করে। তখন তারা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনার আগমনের পূর্বেও আমাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে এবং আপনার আগমনের পরেও আমরা অত্যাচারিত হচ্ছি।” মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “কিছুদিন সবর কর। অল্পদিনের মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন। তারপর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা কি আমল কর তা তিনি দেখবেন।” কথা যখন এটাই তখন (আরবী) দ্বারা মূসা (আঃ)-এর কওম অর্থাৎ বানী ইসরাঈলকে ছাড়া আর কি উদ্দেশ্য হতে পারে? বানী ইসরাঈল ফিরআউনকে এবং নিজেদের কওমের কোন কোন লোককেও ভয় করতো যে, তারা তাদেরকে পুনরায় কাফির করে দেবে। বানী ইসরাঈলের মধ্যে কারূন ছাড়া অন্য কেউ এরূপ ছিল না যাকে তারা ভয় করতো। কারূন মূসা (আঃ)-এরই কওমের লোক ছিল। কিন্তু সে বিদ্রোহী হয়ে ফিরআউনের দলে মিলে গিয়েছিল।

এখন (আরবী)-এর সর্বনামটি বানী ইসরাঈলের দিকে ফিরেছে। কিন্তু যারা বলেন যে, এই সর্বনামটি ফিরআউন ও তার প্রধানদের দিকে ফিরেছে, কেননা, তার প্রধানরাও তারই অনুসারী ছিল, অথবা ফিরআউনের পূর্বে (আরবী) শব্দটি উহ্য রয়েছে, এ জন্যে সর্বনামটি বহুবচন আনা হয়েছে এবং (আরবী) এর স্থলে (আরবী) টি বসানো হয়েছে, অর্থাৎ (আরবী) শব্দের স্থলে (আরবী) শব্দটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে, এটা কিয়াস হতে খুবই দূরের কথা। যদিও ইবনে জারীর (রঃ) এ দুটো কথাই লিখেছেন। এসব বর্ণনা এটাই প্রমাণ করে যে, বানী ইসরাঈলের সবাই মুমিন ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] قَوْمِهِ -এর ‘ه’ (তার) সর্বনাম দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ ‘তার’ বলতে মূসা (আঃ)-কে ধরেছেন। কারণ উক্ত আয়াতে সর্বনামের পূর্বে তাঁরই নাম উল্লেখ হয়েছে। অর্থাৎ, মূসা (আঃ)-এর গোত্র থেকে কিছু মানুষ ঈমান এনেছিল। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর ও অন্যান্যরা ‘তার’ বলতে ফিরআউনকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ফিরআউনের সম্প্রদায় থেকে কিছু মানুষ ঈমান এনেছিল। এর প্রমাণ হল, বনী ইস্রাঈলরা তো একজন রসূল ও পরিত্রাতার অপেক্ষায় ছিল এবং মূসা (আঃ) রূপে তারা তা পেয়ে গিয়েছিল। আর সেই হিসেবে (কারূন) ছাড়া সকল বনী ইস্রাঈল তাঁর প্রতি ঈমান রাখত। ফলে এটাই সঠিক যে ذُرِّيَّةٌ مِنْ قَوْمِهِ (তার গোত্রের কিছু লোক) থেকে উদ্দেশ্য হল ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ, যারা মূসা (আঃ)-এর প্রতি ঈমান এনেছিল; তার মধ্যে তার স্ত্রী আসিয়াও ছিলেন।

[২] কুরআন কারীমের এই পরিষ্কার বর্ণনা থেকে এই কথাও বুঝা যাচ্ছে যে, এই অল্প সংখ্যক লোক যারা ঈমান এনেছিল, তারা ফিরআউনী সম্প্রদায়ের লোক ছিল। কারণ ফিরআউন, তার দরবারী ও শাসকবর্গের তরফ থেকে শাস্তির ভয় তাদেরই ছিল। যদিও বনী ইস্রাঈলরা ফিরআউনের দাসতত্ত্ব ও অধীনত্বের লাঞ্ছনা বেশ কিছু দিন থেকে সহ্য করে আসছিল। কিন্তু মূসা (আঃ)-এর প্রতি ঈমান আনার সাথে না তার কোন সম্পর্ক ছিল, আর না এই কারণে অতিরিক্ত শাস্তির সম্ভাবনা ছিল।

[৩] আর মু’মিনগণ তার সীমালংঘনকারী ও অত্যাচারী স্বভাব থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

[১] কুরআনের মূল বাক্যে (ذُرِّيَّةٌ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে সন্তান-সন্ততি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে যে মুষ্টিমেয় যুবকদেরকে ঈমান এনেছিল বলে জানানো হলো এরা কারা? তারা কি ফিরআউনের বংশের? নাকি মূসা আলাইহিসসালামের বংশের লোক? আল্লামা ইবনে কাসীর রাহেমাহুল্লাহ প্রথম মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এ মতের সমর্থনে বিভিন্ন প্রমাণাদি পেশ করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লামা ইবনে জরীর আত-তাবার রাহেমাহুল্লাহ ও আব্দুর রহমান ইবন নাসের আস-সাদী দ্বিতীয় মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দুটি মতের স্বপক্ষেই যুক্তি রয়েছে। তবে আয়াত থেকে একটি বিষয় বুঝা যাচ্ছে যে, যারাই তখন ঈমান এনেছিল তারা ছিল অল্প বয়স্ক যুবক। [ইবন কাসীর; সা’দী]

কুরআনের একথা বিশেষভাবে সুস্পষ্ট করে পেশ করার কারণ সম্ভবত এই যে, মক্কার জনবসতিতেও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সহযোগিতা করার জন্য যারা এগিয়ে এসেছিলেন তারাও জাতির বয়স্ক ও বয়োবৃদ্ধ লোক ছিলেন না বরং তাদের বেশিরভাগই ছিলেন বয়সে নবীন।

[২] আয়াতে (مُسۡرِفِیۡنَ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, সীমা অতিক্রমকারী। সে সত্যিকার অর্থেই সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। কারণ সে কুফরির সীমা অতিক্রম করেছিল। সে ছিল দাস, অথচ দাবী করল প্রভুত্বের। [কুরতুবী]

 

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 83
فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوۡسٰۤی اِلَّا ذُرِّیَّۃٌ مِّنۡ قَوۡمِہٖ
Only a Few Youth from Fir`awn’s People believed in Musa.

Allah tells;

فَمَا امَنَ لِمُوسَى إِلاَّ ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِ عَلَى خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَيِهِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الَارْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ

But none believed in Musa except the offspring of his people, because of the fear of Fir`awn and his chiefs, lest they should persecute them; and verily, Fir`awn was an arrogant tyrant on the earth, he was indeed one of the transgressors.

Allah tells us that despite all the clear signs and irrefutable evidence Musa came with, only a few offspring from Fir`awn’s followers believed in him. They were even scared that Fir`awn and his followers would force them to return to Kufr (disbelief). Fir`awn was an evil tyrant and extremely arrogant. His people feared him and his power too much.

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said:

فَمَا امَنَ لِمُوسَى إِلاَّ ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِ عَلَى خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَيِهِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ

But none believed in Musa except the offspring of his people because of the fear of Fir `awn and his chiefs, lest they should persecute them.

“The offspring that believed in Musa from Fir`awn’s people, other than Banu Israel, were few. Among them were Fir`awn’s wife, the believer who was hiding his faith, Fir`awn’s treasurer, and his wife.”

The Children of Israel, however, themselves believed in Musa, all of them. They were glad to see him coming. They knew of his description and the news of his advent from their previous Books. They knew that Allah was going to save them through him from the capture of Fir`awn and give them power over him. So when this knowledge reached Fir`awn he was very wary. But his caution and weariness didn’t help him one bit. When Musa arrived, Fir`awn subjected them to great harm, and

قَالُواْ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِن بَعْدِ مَا جِيْتَنَا قَالَ عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى الاٌّرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

They said:”We (Children of Israel) suffered troubles before you came to us, and since you have come to us.”

He said:”It may be that your Lord will destroy your enemy and make you successors on the earth, so that He may see how you act.’ (7:129)
The fact that all of the Children Israel became believers is evidenced by the following Ayat.

Leave a Reply