(Book# 682) [ فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ امَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا কোন জনপদ বিশ্বাস করল না কেন, যাদের বিশ্বাস উপকারী হত; ইউনুসের সম্প্রদায়ের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র, Belief at the Time of Punishment did not help except with the People of Yunus .] www.motaher21.net

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 682)
[ فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ امَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا
কোন জনপদ বিশ্বাস করল না কেন, যাদের বিশ্বাস উপকারী হত; ইউনুসের সম্প্রদায়ের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র,
Belief at the Time of Punishment did not help except with the People of Yunus .]
www.motaher21.net
فَلَوۡ لَا کَانَتۡ قَرۡیَۃٌ اٰمَنَتۡ فَنَفَعَہَاۤ اِیۡمَانُہَاۤ اِلَّا قَوۡمَ یُوۡنُسَ ؕ لَمَّاۤ اٰمَنُوۡا کَشَفۡنَا عَنۡہُمۡ عَذَابَ الۡخِزۡیِ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ مَتَّعۡنٰہُمۡ اِلٰی حِیۡنٍ ﴿۹۸﴾
সুতরাং কোন জনপদ বিশ্বাস করল না কেন, যাদের বিশ্বাস উপকারী হত; ইউনুসের সম্প্রদায়ের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র, যখন তারা বিশ্বাস করল, তখন আমি তাদের থেকে পার্থিব জীবনে অপমানজনক শাস্তি বিদূরিত করে দিলাম এবং এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত তাদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দান করলাম।
Then has there not been a [single] city that believed so its faith benefited it except the people of Jonah? When they believed, We removed from them the punishment of disgrace in worldly life and gave them enjoyment for a time.
সুরা: ইউনুস
সুরা:১০
৯৮ নং আয়াত:-
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ امَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا
কোন জনপদ বিশ্বাস করল না কেন, যাদের বিশ্বাস উপকারী হত; ইউনুসের সম্প্রদায়ের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র,
Belief at the Time of Punishment did not help except with the People of Yunus .

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

ইউনুস (আ) (যাকে বাইবেলে যোনা নামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যার সময়কাল খৃষ্টপূর্ব ৮৬০ থেকে ৭৮৪ সালের মাঝামাঝি সময় বলা হয়ে থাকে) যদিও বনী ইসরাঈলী নবী ছিলেন তবুও তাকে আসিরিয়াবাসীদের হেদায়াতের জন্য ইরাকে পাঠানো হয়েছিল। এ কারণে আসিরিয়াবাসীদেরকে এখনে ইউনূসের কওম বলা হয়েছে। সে সময় এ কওমের কেন্দ্র ছিল ইতিহাস খ্যাত নিনোভা নগরী। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এ নগরীর ধ্বংসাবশেষ আজো বিদ্যমান। দাজলা নদীর পূর্ব তীরে আজকের মুসেল শহরের ঠিক বিপরীত দিকে এ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এ এলাকায় ইউনুস নবী নামে একটি স্থান আজো বর্তমান রয়েছে। এ জাতির রাজধানী নগরী নিনোভা প্রায় ৬০ মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত ছিল। এ থেকে এদের জাতীয় উন্নতির বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে।

# কুরআনে এ ঘটনার দিকে তিন জায়গায় শুধুমাত্র ইঙ্গিত করা হয়েছে। কোন বিস্তারিত বিবরণ সেখানে দেয়া হয়নি। (দেখুন আম্বিয়া ৮৭-৮৮ আয়াত , )

সুরা: আল-আম্বিয়া
আয়াত নং :- ৮৭

وَ ذَا النُّوْنِ اِذْ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنْ لَّنْ نَّقْدِرَ عَلَیْهِ فَنَادٰى فِی الظُّلُمٰتِ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ١ۖۗ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَۚۖ

আর মাছওয়ালাকেও আমি অনুগ্রহভাজন করেছিলাম। স্মরণ করো যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করবো না। শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে উঠলোঃ৮৫ “তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি।”

তাফসীর :

# হযরত ইউনুস (আ)। কোথাও সরাসরি তাঁর নাম নেয়া হয়েছে আবার কোথাও “যুন্নুন” ও “সাহেবুল হূত” বা মাছওয়ালা উপাধির মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা হয়েছে। তিনি মাছ ধরতেন বা বেচতেন বলে তাঁকে মাছওয়ালা বলা হতো না বরং আল্লাহর হুকুমে একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলেছিল, তাই তাঁকে বলা হয়েছে মাছওয়ালা। সূরা সাফফাতের ১৪২ আয়াতে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইউনূস ৯৮-১০০ এবং আস্ সাফ্ফাত ৭৭-৮৫ টীকা ।

# তিনি নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে চলে যান। আল্লাহর পক্ষ থেকে তখনো হিজরত করার হুকুম আসেনি, যার ফলে তাঁর পক্ষ থেকে নিজের কর্তব্য ত্যাগ করা জায়েয হতে পারতো।

# তিনি মনে করেছিলেন, আমার সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহর আযাব এসে যাচ্ছে। এখন আমাকে কোথাও গিয়ে আশ্রয় নেয়া উচিত। না হলে আমি নিজেও আযাবের মধ্যে ঘেরাও হয়ে যাবো। নীতিগতভাবে এ বিষয়টি তো পাকড়াওযোগ্য ছিল না। কিন্তু নবীর পক্ষে আল্লাহর হুকুম ছাড়া দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়া ছিল পাকড়াওযোগ্য।

# মাছের পেটের মধ্য থেকে সেখানে তো অন্ধকার ছিলই, তার ওপর ছিল সাগরের অন্ধকার।
(আস্ সাফফাত ১৩৯-১৪৮ আয়াত )
সুরা: আস-সাফ্ফাত
আয়াত নং :- ১৪২

فَالْتَقَمَهُ الْحُوْتُ وَ هُوَ مُلِیْمٌ

শেষ পর্যন্ত মাছ তাঁকে গিলে ফেললা এবং সে ছিল ধিকৃত।

তাফসীর :

# এ বাক্যগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে ঘটনার যে চিত্রটি সামনে ভেসে ওঠে তা হচ্ছেঃ

একঃ হযরত ইউনুস যে নৌকায় আরোহণ করেছিলেন তা তার ধারণা ক্ষমতার চাইতে বেশী বোঝাই (Overloade) ছিল।

দুইঃ নৌকায় লটারী অনুষ্ঠিত হয় এবং সম্ভবত এমন সময় হয় যখন সামূদ্রিক সফরে মাঝখানে মনে করা হয় যে, নৌকা তার ধারণ ক্ষমতার বেশী বোঝা বহন করার কারণে সকল যাত্রীর জীবন বিপদের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। কাজেই লটারীতে যার নাম উঠবে তাকেই পানিতে নিক্ষেপ করা হবে, এ উদ্দেশ্যে লটারী করা হয়।

তিনঃ লটারীতে হযরত ইউনুসের নামই ওঠে। তাঁকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলে।

চারঃ হযরত ইউনুসের এ পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তিনি নিজে প্রভুর (অর্থাৎ মহান আল্লাহ) অনুমতি ছাড়াই তাঁর কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। “আবাকা” শব্দটি এ অর্থই প্রকাশ করছে ওপরের ৭৮ টীকায় এ ব্যাখ্যাই করা হয়েছে। “মুলীম” শব্দটিও একথাই বলছে। মুলীম এমন অপরাধীকে বলা হয় যে নিজের অপরাধের কারণে নিজেই নিন্দিত হবার হকদার হয়ে গেছে, তাকে নিন্দা করা হোক বা না হোক। (يقال قد الام الرجل اذا مايلام عليه من الامر وان لم يلم- ابن جرير)

সুরা: আস-সাফ্ফাত
আয়াত নং :- ১৪৫

فَنَبَذْنٰهُ بِالْعَرَآءِ وَ هُوَ سَقِیْمٌۚ

শেষ পর্যন্ত আমি তাঁকে বড়ই রুগ্ন অবস্থায় একটি তৃণলতাহীণ বিরান প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম।

তাফসীর :

# অর্থাৎ হযরত ইউনুস (আ) যখন তাঁর অপরাধ স্বীকার করে নিলেন এবং একজন মু’মিন ও ধৈর্যশীল বান্দার ন্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা গাইতে লাগলেন তখন আল্লাহর হুকুমে মাছ তাঁকে উপকূলে উদগীরণ করলো। উপকূলে ছিল একটি বিরাণ প্রান্তর। সেখানে সবুজের কোন চিহ্ন ছিল না এবং এমন কোন জিনিসও ছিল না যা হযরত ইউনুসকে ছায়াদান করতে পারে। সেখানে খাদ্যেরও কোন সংস্থান ছিল না।

এখানে এসে অনেক বুদ্ধি ও যুক্তিবাদের দাবীদারকে একথা বলতে শুনা গেছে যে, মাছের পেটে ঢুকে যাবার পর কোন মানুষের জীবিত বের হয়ে আসা অসম্ভব। কিন্তু বিগত শতকের শেষের দিকে এ তথাকথিত বুদ্ধিবাদ ও যুক্তিবাদিতার কেন্দ্র ভূমির (ইংল্যাণ্ড) উপকূলের সন্নিকটে একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাটি তাদের দাবী খণ্ডন করে। “১৮৯১ সালের আগষ্ট মাসে Star of the East নামক জাহাজে চড়ে কয়েকজন মৎস্য শিকারী তিমি শিকারের উদেশ্যে গভীর সমুদ্রে যায়। সেখানে তারা ২০ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া ও ১০০ টন ওজনের একটি বিশাল মাছকে আহত করে। কিন্তু তার সাথে লড়াই করার সময় জেমস বার্ডলে নামক একজন মৎস্য শিকারীকে তার সাথীদের চোখের সামনেই মাছটি গিলে ফেলে। একদিন পরে জাহাজের লোকেরা মাছটিকে মৃত অবস্থায় পায়। বহু কষ্টে সেটিকে তারা জাহাজে ওঠায় এবং তারপর দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তার পেট কাটলে জেমস তার মধ্য থেকে জীবিত বের হয়ে আসে। এ ব্যক্তি মাছের পেটে পুরা ৬০ ঘণ্টা থাকে।” (উর্দূ ডাইজেষ্ট, ফেব্রুয়ারী ১৯৬৪) চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে, সাধারণ অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবে যদি এমনটি হওয়া সম্ভবপর হয়ে থাকে, তাহলে অস্বাভাবিক অবস্থায় আল্লাহর মু’জিযা হিসেবে এমনটি হওয়া কেমন করে অসম্ভব হতে পারে? ( বর্তমানে উইকিপিডিয়াতে ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করা আছে : James Bartley (1870–1909) is the central figure in a late nineteenth-century story according to which he was swallowed whole by a sperm whale. He was found still living days later in the stomach of the whale, which was dead from constipation. The story originated of an anonymous firm, began to appear in American newspapers. The anonymous article appeared in the St. Louis Globe Democrat of Saint Louis, Missouri, then the note appeared in other newspapers with the title “A Modern Jonah” or something similar in multiple newspapers. The news spread beyond the ocean in articles as “Man in a Whale’s Stomach. “Rescue of a Modern Jonah” in page 8 of the August 22, 2017 issue of the Yarmouth Mercury newspaper of Great Yarmouth on England.- এ্যাপ নির্মাতা, মো: নুর হোসেন, আরবী ও বাংলা সার্চ ( উইকিপিডিয়া লিংক )

( আল কলম ৪৮-৫০ আয়াত )
সুরা: আল-ক্বলম
আয়াত নং :- ৪৮

فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَ لَا تَكُنْ كَصَاحِبِ الْحُوْتِ١ۘ اِذْ نَادٰى وَ هُوَ مَكْظُوْمٌؕ

অতএব তোমার রবের চূড়ান্ত ফায়সালা পর্যন্ত ধের্য্যসহ অপেক্ষা করো। এবং মাছওয়ালার (ইউনুস আলাইহিস সালাম) মতো হয়ো না, যখন সে বিষাদ ভারাক্রান্ত হয়ে ডেকেছিলো।

তাফসীর :

# আল্লাহ‌ তা’আলা কর্তৃক তোমাদের বিজয় ও সাহায্য দেয়া এবং তোমাদের এসব বিরোধীদের পরাজিত করার চূড়ান্ত ফায়সালার সময় এখনও বহু দূরে। চূড়ান্ত ফয়সালার সে সময়টি আমার পূর্ব পর্যন্ত এ দ্বীনের তাবলীগ ও প্রচারের পথে যত দুঃখ-কষ্ট ও মুসিবত আসবে তা ধৈর্যের সাথে বরদাশত করতে থাকো।

# ইউনূস আলাইহিস সালামের মত অধৈর্য হয়ে পড়ো না। অধৈর্য হয়ে পড়ার কারণে তাকে মাছের পেটে যেতে হয়েছিলো। আল্লাহর চূড়ান্ত ফয়সালা না আসা পর্যন্ত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়ার পরক্ষণেই “ইউনুস আলাইহিস সাল্লামের মত হয়ো না” বলা থেকে স্বতঃই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আল্লাহর চূড়ান্ত ফয়সালা আসার আগেই তিনি অধৈর্য হয়ে কোন কাজ করে ফেলেছিলেন এবং এভাবে আল্লাহর অসন্তুষ্টি লাভ করেছিলেন। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফমুল কুরআন, সূরা ইউনূস, আয়াত ৯৮ , টীকা ৯৯ ; সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত ৮৭-৮৮ , টীকা ৮২ থেকে ৮৫; সূরা আস সাফ্ফাত, আয়াত ১৩৯ থেকে ১৪৮ , টীকা ৭৮ থেকে ৮৫।

# সূরা আম্বিয়াতে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাছের পেটের এবং সাগরের পানির অন্ধকারে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উচ্চস্বরে এ বলে প্রার্থনা করলেনঃ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ তোমার পবিত্র সত্তা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আসলে আমিই অপরাধী।” আল্লাহ‌ তা’আলা তাঁর ফরিয়াদ গ্রহণ করলেন এবং তাকে এ দুঃখ ও মুসিবত থেকে মুক্তি দান করলেন। (আয়াত ৮৭-৮৮ )

তাই “আযাবের ফায়সালা হয়ে যাবার পর কারোর ঈমান আনা তার জন্য উপকারী হয় না।” আল্লাহ‌ তার এ আইন থেকে হযরত ইউনুসের কওমকে কোন্ কোন্ কারণে নিষ্কৃতি দেন তা নিশ্চয়তার সাথে বলা সম্ভব নয়। বাইবেলে “যোনা ভাববাদীর পুস্তক” নাম দিয়ে যে সংক্ষিপ্ত সহীফা লিপিবদ্ধ হয়েছে তাতে কিছু বিবরণ পাওয়া গেলেও বিভিন্ন কারণে তা নির্ভরযোগ্য নয়। প্রথমত তা আসমানী সহীফা নয় এবং ইউনুস (আ) এর লেখাও না। বরং তার তিরোধানের চার পাচশো বছর পর কোন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ইউনূসের ইতিহাস হিসেবে লিখে এটিকে পবিত্র গ্রন্থসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেন। দ্বিতীয়ত এর মধ্যে কতক একেবারেই আজেবাজে কথাও পাওয়া যায়। এগুলো মেনে নেবার মত নয়। তবুও কুরআনের ইশারা ও ইউনুসের সহীফার বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করলে কুরআনের তাফসীরকারকগণ যে কথা বলেছেন তাই সঠিক বলে মনে হয়। তারা বলেছেন, হযরত ইউনূস (আ) যেহেতু আযাবের ঘোষণা দেবার পর আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই নিজের আবাসস্থল ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন তাই আযাবের লক্ষণ দেখে যখন আসিরীয়রা তওবা করলো এবং গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইলো তখন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ‌ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। কুরআন মজীদে আল্লাহর বিধানের যে মৌলিক নিয়ম কানুন বর্ণনা করা হয়েছে তার একটি স্বতন্ত্র ধারা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ কোন জাতিকে ততক্ষণ আযাব দেন না যতক্ষণ না পূর্ণাঙ্গ দলীল-প্রমাণ সহকারে সত্যকে তাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তোলেন। কাজেই নবী যখন সংশ্লিষ্ট জাতির জন্য নির্ধারিত অবকাশের শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত উপদেশ বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেননি এবং আল্লাহর নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজ দায়িত্বে হিজরত করে চলে গেছেন তখন আল্লাহর সুবিচার নীতি এ জাতিকে আযাব দেয়া সমীচীন মনে করেনি। কারণ তার কাছে পূর্ণাঙ্গ দলীল প্রমাণ সহকারে সত্যকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার আইনগত শর্তাবলী পূর্ণ হতে পারেনি। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা আস সাফাফাত এর ব্যাখ্যা ৮৫ টীকা) ।

# ঈমান আনার পর যে জাতিটির আয়ু বাড়িয়ে দেয়া হলো। পরে তারা আবার চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে ভুল পথে পা বাড়ানো শুরু করলো। নাহোম নবী (খৃষ্টপূর্ব ৭২০-৬৯৮) এ সময় তাদেরকে সতর্ক করলেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। তারপর সফনীয় নবী (খৃস্টপূর্ব ৬৪০-৬০৯) তাদেরকে শেষবারের মত সতর্ক করলেন। তাও কার্যকর হলো না। শেষ পর্যন্ত ৬১২ খৃষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে আল্লাহ‌ তাদের ওপর মিডিয়াবাসীদের আগ্রাসন সংঘটিত করালেন। মিডিয়ার বাদশাহ ব্যাবিলনবাসীদের সহায়তায় আসিরিয়া এলাকা আক্রমণ করলেন। আসিরীয় সেনাদল পরাজিত হয়ে রাজধানী নিনোভায় অন্তরীণ হলো। কিছুকাল পর্যন্ত তারা জোরেশোরে মোকাবিলা করলো। তারপর দাজলায় এলো বন্যা। এ বন্যায় নগর প্রাচীর ধ্বসে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণকারীরা নগরে প্রবেশ করলো এবং পুরো শহর জ্বালিয়ে ভস্ম করলো। আশপাশের এলাকারও একই দশা হলো। আসিরীয়ার বাদশাহও নিজের মহলে আগুন লাগিয়ে তাতে পুড়ে মরলো। আর এ সাথে আসিরীয় রাজত্ব ও সভ্যতারও ইতি ঘটলো চিরকালের জন্য। আধুনিক কালে এ এলাকায় প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খননের যে প্রচেষ্টা চলছে তাতে এখানে অগ্নিকান্ডের চিহ্ন অত্যন্ত স্পষ্ট দেখা গেছে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে لَوْلَا শব্দটি আফসোস প্রকাশের জন্য هلا এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ আমি যে জনপদগুলোকে ধ্বংস করেছি, তার মধ্য থেকে কোন একটি জনপদবাসী কেন এমন হল না যে, এমন সময়ে ঈমান নিয়ে আসত, যে সময়ে ঈমান আনলে তাদের উপকারে আসতো। তবে ইউনুস (عليه السلام)-এর সম্প্রদায় ব্যতীত, তাদের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। যখন তারা ঈমান আনল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর থেকে আযাব রহিত করে দিলেন।

সংক্ষিপ্ত ঘটনা হল যখন ইউনুস (عليه السلام) দেখলেন যে, তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগে তাঁর সম্প্রদায় ঈমান আনছে না, তখন তিনি নিজ জাতিকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনদিন পর তোমাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি আসবে এবং তিনি নিজে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন। যখন তাঁর জাতি মেঘের মত তাদের ওপর আযাবের লক্ষণাদি দেখতে পেল, তখন তারা শিশু, নারী এমনকি জীবজন্তু সমেত এক মাঠে সমবেত হল এবং আল্লাহ তা‘আলার দরবারে কাকুতি-মিনতির সাথে তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে আরম্ভ করল এবং ঈমান আনল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবাহ কবূল করে তাদের থেকে আযাব রহিত করে নিলেন। ইউনুস (عليه السلام) পথচারী পথিকের নিকট থেকে নিজ জাতির অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে থাকলেন। পরিশেষে তিনি যখন জানতের পারলেন যে, তাঁর জাতির ওপর আযাব আসেনি তখন যেহেতু সে জাতি তাঁকে মিথ্যাজ্ঞান করতে পারে তাই তিনি সে জাতির নিকট ফিরে যাওয়া পছন্দ করলেন না। বরং তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি অন্য কোন দিকে চলে গেলেন। এ সফরে তাঁকে নৌকা থেকে লটারী করে সাগরে ফেলে দিলে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে মাছ তাকে গিলে ফেলে। তাঁর অধিক পরিমাণ ইবাদত ও সৎআমল এবং তাওবা ইস্তিগফারের ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবূল করতঃ মাছের পেট থেকে জীবিত অবস্থায় নদীর তীরে তরুলতাহীন শূন্য এলাকায় রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর সুস্থ হয়ে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে নিজ জাতির কাছে ফিরে আসেন। জাতির লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান আনল এবং শির্কী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে লাগল, ফলে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সম্পদ ভোগ করার সুযোগ করে দেন।

তবে ইউনুস (عليه السلام)-এর সম্প্রদায় কখন ঈমান এনেছে এ বিষয়ে মুফাসসিরগণ মতানৈক্য করেছেন। কেউ বলেন, শাস্তি দেখার পর আবার কেউ বলেন, তখন তারা শাস্তি অবলোকন করেছিল তবে আয়াত অনুযায়ী প্রথম ব্যাখ্যাই সঠিক। এ সম্পর্কে বিস্তারিত সূরা সফফাতের ১৩৯-১৪৮ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা রহমত নাযিল ও দয়া করেন।
২. আল্লাহ তা‘আলা সহজে তাঁর বান্দাদের শাস্তি দিতে চান না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা বলেন, পূর্ববর্তী উম্মতদের কোন উম্মতেরই সমস্ত লোক ঈমান আনেনি, যাদের কাছে আমি নবী পাঠিয়েছিলাম। হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার পূর্বে যত নবী এসেছিল, সকলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “আফসোস বান্দাদের উপর! তাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি যাকে তারা পি না করেছে।” আল্লাহ তা’আলা আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “তাদের পূর্বে যাদের কাছেই কোন রাসূল এসেছে, তাকেই তারা যাদুকর অথবা পাগল বলেছে।” অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার পূর্বে যে গ্রামেই আমি কোন রাসূল পাঠিয়েছি, সেখানকারই স্বচ্ছল লোকেরা বলেছে- আমরা তো আমাদের বাপ-দাদাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবো।”

সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নবীদেরকে আমার সামনে পেশ করা হয়। কোন নবীর সাথে ছিল বড় বড় উম্মতের দল। আবার কোন নবীর সাথে ছিল একটিমাত্র লোক, কোন নবীর সাথে ছিল দু’টি লোক এবং কোন নবীর সাথে একটি লোকও ছিল না।” অতঃপর তিনি মূসা (আঃ)-এর উম্মতের আধিক্যের বর্ণনা দেন। তারপর তিনি নিজের উম্মতের আধিক্যের বর্ণনা দেন, যারা পূর্ব ও পশ্চিমকে ঢেকে নিয়েছিল। মোটকথা ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছাড়া কোন নবীরই কওমের সমস্ত লোক ঈমান আনেনি। ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছিল নিনওয়া গ্রামের অধিবাসী। আল্লাহর আযাব দেখার পর ভয়ে তারা ঈমান এনেছিল। আল্লাহ তা’আলার আযাব হতে ভয় প্রদর্শন করে নবী ইউনুস (আঃ) নিজেও কওমের মধ্য হতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তখন ঐ লোকগুলোর খুবই দুঃখ হলো। তারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করলো এবং অত্যন্ত কান্নাকাটি করলো। নিজেদের শিশু ও গৃহপালিত পশুগুলোকে নিয়ে মাঠের দিকে গেল এবং মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলোঃ “হে আল্লাহ! আপনার নবী যে আযাবের খবর দিয়ে আমাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে গেছেন তা দূর করে দিন। ঐ সময় আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সদয় হন এবং যে আযাব সামনে এসে গিয়েছিল তা সরিয়ে নেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “ইউনুস (আঃ)-এর কওম যখন ঈমান আনলো, তখন পার্থিব জীবনে আগত আযাব আমি তাদের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম এবং তাদের জীবনকাল পর্যন্ত ঐ আযাব থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম।”

ইউনুস (আঃ)-এর কওমের উপর থেকে শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের আযাব সরেছিল কি পারলৌকিক আযাবও সরেছিল এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের শাস্তি সরেছিল। কেননা, এই আয়াতে শুধু এর উপরই আলোকপাত করা হয়েছে। আবার অন্য কেউ কেউ বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “আমি নবীকে এক লক্ষাধিক লোকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারা ঈমান আনয়ন করে। তখন আমি একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত তাদেরকে লাভবান করি।” এখানে ঈমান শব্দটি মুতলক বা সাধারণ। এখানে কোন কয়েদ বা বাধ্যবাধকতা নেই। আর মুতলক ঈমান তো পারলৌকিক শাস্তি থেকে মুক্তিদানকারী হয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।

কাতাদা (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন যে, আযাব এসে যাওয়ার পর কোন কওম ঈমান আনলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় না। কিন্তু ইউনুস (আঃ) যখন নিজের কওমকে ছেড়ে চলে গেলেন এবং ললাকেরা বুঝতে পারলো যে, এখন আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না তখন তাদের অন্তরে তাওবার অনুভূতি জেগে উঠলো। তারা খারাপ কাপড় পরিধান করে নিজেদের অবস্থা খারাপ করে নিলো। অতঃপর তারা পশুগুলোর দল এবং শিশুদের দলকে পৃথক করলো। নিজেদের সাথে তারা পশুগুলোকে এবং শিশুদেরকে নিয়ে গেল। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তারা কান্নাকাটি করলো। আল্লাহ তা’আলা তাদের আন্তরিকতাপূর্ণ নিয়ত এবং তাওবার বিশুদ্ধতা দেখে এসে যাওয়া শাস্তি তাদের উপর থেকে উঠিয়ে নিলেন। ইউনুস (আঃ)-এর কওম মুসিল অঞ্চলের নিনওয়া গ্রামের অধিবাসী ছিল। ইবনে মাসউদ (রাঃ) (আরবী) কে (আরবী) পড়েছেন। মোটকথা, শাস্তি তাদের মাথার উপর এমনভাবে ঘুরতে লাগলো, যেমনভাবে অন্ধকার রাত্রে মেঘখণ্ড ঘুরতে তাকে। ঐ লোকগুলো তাদের এক আলেমের কাছে গিয়ে বললোঃ “আমাদেরকে এমন একটি দুআ’ লিখে দিন যার বরকতে আযাব সরে যায়।” ঐ আলেম নিম্নের দুআটি লিখে দেনঃ (আরবী) অর্থাৎ, “হে জীবিত! যখন কেউ জীবিত নেই। হে জীরিত! মৃতকে জীবিতকারী। হে জীবিত! আপনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নেই।” এর ফলে আযাব দূর হয়ে যায়। এ সমুদয় কাহিনী সূরায়ে সাফাতের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বর্ণিত হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] এখানে لَولاَ শব্দটি আফসোস প্রকাশের জন্য هَلاَّ এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে, অর্থাৎ আমি যে জনপদগুলিকে ধ্বংস করেছি, তার মধ্য থেকে কোন একটি জনপদবাসীও কেনই বা এমন হলো না যে, এমন সময়ে ঈমান নিয়ে আসত, যে সময়ে ঈমান আনলে তাদের জন্য ফলপ্রসূ হত! তবে ইউনুস (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। যখন তারা ঈমান আনল,তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর থেকে আযাব রহিত করে দিলেন। সংক্ষিপ্ত ঘটনা হল এই যে, যখন ইউনুস (আঃ) দেখলেন যে, তাঁর দাওয়াত ও তবলীগে তাঁর সম্প্রদায় প্রভাবিত হচ্ছে না, তখন তিনি নিজ সম্প্রদায়কে জানিয়ে দিলেন যে, অমুক দিন তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব আসবে এবং তিনি নিজে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন। যখন মেঘের মত তাদের উপর আযাবের লক্ষণাদি দেখা দিল, তখন তারা শিশু, নারী এমনকি জীবজন্তু সমেত এক মাঠে সমবেত হল এবং আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতির সাথে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে আরম্ভ করল। আল্লাহ তাআলা তাদের তওবা কবুল করে তাদের উপর থেকে আযাব রহিত করে দিলেন। ইউনুস (আঃ) পথচারী পথিকের নিকট থেকে নিজ সম্প্রদায়ের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে থাকলেন। পরিশেষে তিনি যখন জানতে পারলেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্প্রদায়ের উপর থেকে আযাব রহিত করে দিয়েছেন, তখন যেহেতু সেই সম্প্রদায় তাকে মিথ্যাজ্ঞান করেছিল, তাই তিনি সেই সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে যাওয়া পছন্দ করলেন না। বরং তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি অন্য কোন দিকে চলে গেলেন। এই সফরে তাঁকে নৌকা থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। (এ ঘটনা যথাস্থানে দ্রষ্টব্য।) (ফাতহুল কাদীর) অবশ্য ইউনুস (আঃ)-এর সম্প্রদায় কখন ঈমান এনেছিল তা নিয়ে মুফাসসিরগণের মাঝে মতভেদ আছে। (কেউ কেউ বলেন যে,) তারা আযাব দেখার পর ঈমান এনেছিল, যে সময়ের ঈমান ফলপ্রসূ হয় না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তা নিজের উক্ত রীতি থেকে স্বতন্ত্রভাবে তাদের ঈমান কবুল করেছেন। অথবা এমন পর্যায় আসেনি যে, সেই সময় তাদের ঈমান ফলপ্রসূ হত না। কিন্তু কুরআন কারীম ইউনুস (আঃ)-এর সম্প্রদায়কে إلاَّ দ্বারা যেভাবে আলাদা করেছে, তা প্রথম ব্যাখ্যাকেই সমর্থন করে। আর আল্লাহই ভালো জানেন।

[২] কুরআন পার্থিব আযাব রহিত হওয়ার ব্যাপারে পরিষ্কার বর্ণনা দিয়েছে, আখেরাতের আযাব রহিত হওয়ার ব্যাপারে কোন বর্ণনা দেয়নি। ফলে কিছু তফসীরবিদের ধারণা যে, তাদের উপর থেকে আখেরাতের আযাব রহিত করা হয়নি। কিন্তু যখন কুরআন পরিষ্কারভাবে বর্ণনা দিয়েছে যে, পার্থিব আযাব ঈমান আনার কারণে রহিত করা হয়েছিল, তখন আর আখেরাতের আযাব সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়ার কোন প্রয়োজনই থাকে না। কারণ আখেরাতের আযাবের ফায়সালা তো ঈমান আনা ও না আনার উপর ভিত্তি করেই হবে। ঈমান আনার পর ইউনুস (আঃ)-এর সম্প্রদায় যদি আপন ঈমানের উপর অটল থাকে, তবে অবশ্যই তারা আখেরাতের আযাব থেকেও রক্ষা পাবে। তবে এর বিপরীত হলে শুধু পৃথিবীতেই আযাব থেকে রক্ষা পাবে। আর আল্লাহই ভালো জানেন।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

[১] ইউনুস আলাইহিস সালামকে আসিরিয়ানদের হেদায়াতের জন্য ইরাকে পাঠানো হয়েছিল। এ কারণে আসিরীয়দেরকে এখানে ইউনুসের কওম বলা হয়েছে। সে সময় এ কওমের কেন্দ্র ছিল ইতিহাস খ্যাত নিনোভা নগরী। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এ নগরীর ধ্বংসাবশেষ আজো বিদ্যমান। দাজলা নদীর পূর্ব তীরে আজকের মুসেল শহরের ঠিক বিপরীত দিকে এ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এ জাতির রাজধানী নগরী নিনোভা প্রায় ৬০ মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত ছিল। এ থেকে এদের জাতীয় উন্নতির বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে।

[২] আয়াতের পরিষ্কার মর্ম এই যে, পৃথিবীর সাধারণ জনপদের অধিবাসীদের সম্পর্কে আফসোসের প্রকাশ হিসেবে বলা হয়েছে যে, তারা কেনই বা এমন হলো না যে, এমন সময়ে ঈমান নিয়ে আসত যে সময় পর্যন্ত ঈমান আনলে তা লাভজনক হতো! অর্থাৎ আযাব কিংবা মৃত্যুতে পতিত হবার আগে যদি ঈমান নিয়ে আসতো, তবে তাদের ঈমান কবুল হয়ে যেত। কিন্তু ইউনুস আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায় তা থেকে স্বতন্ত্র। কারণ তারা আযাবের লক্ষণাদি দেখে আযাবে পতিত হওয়ার পূর্বেই যখন ঈমান নিয়ে আসে, তখন তাদের ঈমান ও তাওবা কবুল হয়ে যায়। আয়াতের এই প্রকৃষ্ট মর্ম প্রতীয়মান করে যে, এখানে আল্লাহ্‌র চিরাচরিত নিয়মে কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি; বরং একান্তভাবে তাঁর নিয়মানুযায়ীই তাদের ঈমান ও তাওবা কবুল করে নেয়া হয়েছে।

অধিকাংশ মুফাস্‌সির এ আয়াতের এ মর্মই লিখেছেন যাতে প্রতীয়মান হয় যে, ইউনুস আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ে তাওবা কবুল হওয়ার বিষয়টি আল্লাহর সাধারণ রীতির আওতায়ই হয়েছে। তাবারী প্রমূখ তাফসীরকারও এ ঘটনাকে ইউনুস আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। সে সম্প্রদায়ের বিশুদ্ধ মনে তাওবা করা ও আল্লাহর জ্ঞানে তার নিঃস্বার্থ হওয়া প্রভৃতিই আযাব না আসার কারণ। ঘটনা এই যে, ইউনুস আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তিন দিন পর আযাব আসার দুঃসংবাদ শুনিয়ে দেন। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয় যে, আযাব আসেনি, তখন ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর মনে এ ভাবনা চেপে বসলো যে, আমি সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিরে গেলে তারা আমাকে মিথ্যুক বলে সাব্যস্ত করবে। অতএব, এ সময় এ দেশ থেকে হিজরত করে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু নবী-রাসূলগণের রীতি হলো এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দিকে হিজরত করার নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নিজের ইচ্ছামত তারা হিজরত করেন না। ইউনুস আলাইহিস সালাম- আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদন আসার পূর্বেই হিজরতের উদ্দেশ্যে নৌকায় আরোহণ করে বসেন। সূরা আস-সাফফাতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে

(اِذۡ اَبَقَ اِلَی الۡفُلۡکِ الۡمَشۡحُوۡنِ)

“স্মরণ করুন, যখন তিনি বোঝাই নৌযানের দিকে পালিয়ে গেলেন” [আস-সাফফাতঃ ১৪০] এতে হিজরতের উদ্দেশ্যে নৌকায় আরোহণ করাকে (اَبَقَ) শব্দে বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত কোন ক্রীতদাসের পালিয়ে যাওয়া। অন্য সূরায় এসেছে, “আর স্মরণ করুন, যুন-নূন-এর কথা, যখন তিনি ক্রোধ ভরে চলে গিয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, আমরা তাকে পাকড়াও করব না।” [আল-আম্বিয়াঃ ৮৭] এতে স্বভাবজাত ভীতির কারণে সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আত্মরক্ষা করে হিজরত করাকে ভর্ৎসনা সুরে ব্যক্ত করা হয়েছে। সুতরাং তার প্রতি ভর্ৎসনা আসার কারণ হলো, অনুমতির পূর্বে হিজরত করা। মোটকথা: পূর্বের কোন নবী-রাসূলের জনপদের সবাই ঈমান আনেনি। এর ব্যতিক্রম ছিল ইউনুসের কাওম। তারা ছিল নিনোভার অধিবাসী। তাদের ঈমানের কারণ ছিল, তারা তাদের রাসূলের মুখে যে আযাব আসার কথা শুনেছিল সেটার বিভিন্ন উপসর্গ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আর তারা দেখল যে, তাদের রাসূলও তাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছেন। তখন তারা আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইল, তাঁর কাছে উদ্ধার কামনা করল, কান্নাকাটি করল এবং বিনয়ী হল। আর তারা তাদের শিশু-সন্তান, জন্তু-জানোয়ারদের পর্যন্ত উপস্থিত করেছিল এবং আল্লাহ্‌র কাছে তাদের উপর থেকে আযাব উঠিয়ে নেয়ার আহবান জানিয়েছিল। আর তখনই আল্লাহ্‌ তাদের উপর রহমত করেন এবং তাদের আযাব উঠিয়ে নেন, তাদেরকে কিছু দিনের জন্য দুনিয়াকে উপভোগ করার সুযোগ প্রদান করেন [ইবন কাসীর]

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Yunus
Sura: 10
Verses :- 98
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ امَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا

Belief at the Time of Punishment did not help except with the People of Yunus .

Belief at the Time of Punishment did not help except with the People of Yunus

Allah said:

فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ امَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا

Was there any town (community) that believed (after seeing the punishment), and its faith (at that moment) saved it (from the punishment)–

Allah asked, `did any town from the previous nations, believe in its entirety when they received the Messengers All of the Messengers that We sent before you, O Muhammad, were denied by their people or the majority of their people.’

Allah said,

يحَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيهِمْ مِّن رَّسُولٍ إِلاَّ كَانُواْ بِهِ يَسْتَهْزِءُونَ

Alas for mankind! There never came a Messenger to them but they used to mock at him. (36:30)

كَذَلِكَ مَأ أَتَى الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ مِّن رَّسُولٍ إِلاَّ قَالُواْ سَـحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ

Likewise, no Messenger came to those before them but they said:”A sorcerer or a madman!” (51:52)

and,

وَكَذَلِكَ مَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوهَأ إِنَّا وَجَدْنَأ ءَابَأءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى ءَاثَـرِهِم مُّقْتَدُونَ

And similarly, We sent not a warner before you to any town (people) but the luxurious ones among them said:”We found our fathers following a certain way and religion, and we will indeed follow their footsteps.” (43:23)

As found in the authentic Hadith,

عُرِضَ عَلَيَّ الاَْنْبِيَاءُ فَجَعَلَ النَّبِيُّ يَمُرُّ وَمَعَهُ الْفِيَامُ مِنَ النَّاسِ وَالنَّبِيُّ يَمُرُّ مَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلَنِ وَالنَّبِيُّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَد

The Prophets were displayed before me. There was a Prophet who passed with a group of people, and a Prophet who passed with only one man, a Prophet with two men, and a Prophet with no one.

Then he mentioned the multitude of followers that Musa had, peace be upon him, then that he saw his nation of people filling from the west to the east.

The point is that between Musa and Yunus, there was no nation, in its entirety, that believed except the people of Yunus, the people of Naynawa (Nineveh). And they only believed because they feared that the torment from which their Messenger warned them, might strike them. They actually witnessed its signs. So they cried to Allah and asked for help. They engaged in humility in invoking Him. They brought their children and cattle and asked Allah to lift the torment from which their Prophet had warned them. As a result, Allah sent His mercy and removed the scourge from them and gave them respite.

Allah said:

إِلاَّ قَوْمَ يُونُسَ لَمَّأ امَنُواْ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الخِزْيِ فِي الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَى حِينٍ

Except the people of Yunus; when they believed, We removed from them the torment of disgrace in the life of the world, and permitted them to enjoy for a while.

In interpreting this Ayah, Qatadah said:

“No town has denied the truth and then believed when they saw the scourge, and then their belief benefited them, with the exception of the people of Yunus. When they lost their Prophet and they thought that the scourge was close upon them, Allah sent through their hearts the desire to repent. So they wore woolen fabrics and they separated each animal from its offspring. They then cried out to Allah for forty nights. When Allah saw the truth in their hearts and that they were sincere in their repentance and regrets, He removed the scourge from them.”

Qatadah said:

“It was mentioned that the people of Yunus were in Naynawa, the land of Mosul.” This was also reported from Ibn Mas`ud, Mujahid, Sa`id bin Jubayr and others from the Salaf.

Leave a Reply