أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 687)
[ کِتٰبٌ اُحۡکِمَتۡ اٰیٰتُہٗ
এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট,
A Book the Ayat whereof are perfect.]
www.motaher21.net
الٓرٰ ۟ کِتٰبٌ اُحۡکِمَتۡ اٰیٰتُہٗ ثُمَّ فُصِّلَتۡ مِنۡ لَّدُنۡ حَکِیۡمٍ خَبِیۡرٍ ۙ﴿۱﴾
আলিফ লা-ম রা। এ (কুরআন) এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলি মজবুত (সুবিন্যস্ত) করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞাতা (আল্লাহ)র পক্ষ হতে।
Alif, Lam, Ra. [This is] a Book whose verses are perfected and then presented in detail from [one who is] Wise and Acquainted.
اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّا اللّٰہَ ؕ اِنَّنِیۡ لَکُمۡ مِّنۡہُ نَذِیۡرٌ وَّ بَشِیۡرٌ ۙ﴿۲﴾
এই (বলা হয়েছে) যে, আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করো না; আমি (নবী) তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
[Through a messenger, saying], “Do not worship except Allah . Indeed, I am to you from Him a warner and a bringer of good tidings,”
وَّ اَنِ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ثُمَّ تُوۡبُوۡۤا اِلَیۡہِ یُمَتِّعۡکُمۡ مَّتَاعًا حَسَنًا اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی وَّ یُؤۡتِ کُلَّ ذِیۡ فَضۡلٍ فَضۡلَہٗ ؕ وَ اِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنِّیۡۤ اَخَافُ عَلَیۡکُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ کَبِیۡرٍ ﴿۳﴾
আরও এই যে, তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তিনি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দান করবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার যথাযথ মর্যাদা দান করবেন।আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্য মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করি।
And [saying], “Seek forgiveness of your Lord and repent to Him, [and] He will let you enjoy a good provision for a specified term and give every doer of favor his favor. But if you turn away, then indeed, I fear for you the punishment of a great Day.
اِلَی اللّٰہِ مَرۡجِعُکُمۡ ۚ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۴﴾
আল্লাহরই নিকট তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
To Allah is your return, and He is over all things competent.”
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
০১-০৪ নং আয়াত:-
کِتٰبٌ اُحۡکِمَتۡ اٰیٰتُہٗ
এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট,
A Book the Ayat whereof are perfect.
১-৪ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
(১১-হুদ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল : এ সূরার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে একথা উপলব্ধি করা যায় যে, এটা সূরা ইউনূসের সমসময়ে নাযিল হয়েছিল। এমনকি তার অব্যবহিত পরেই যদি নাযিল হয়ে থাকে তবে তাও বিচিত্র নয়। কারণ ভাষণের মূল বক্তব্য একই। তবে সতর্ক করে দেয়ার ধরনটা তার চেয়ে বেশী কড়া।
(১১-হুদ) : নাযিলের উপলক্ষ / প্রেক্ষাপট :\n হাদীসে আছে হযরত আবু বকর (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেনঃ “আমি দেখছি আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, এর কারণ কি?” জবাবে তিনি বলেন, شَيَّبَتْنِى هُودٌ وَاَخوَاتُهَا “সূরা হূদ ও তারই মতো বিষয়বস্তু সম্বলিত সূরাগুলো আমাকে বুড়ো করে দিয়েছে।” এ থেকে অনুমান করা যাবে, যখন একদিকে কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নিজেদের সমস্ত অস্ত্র নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যের দাওয়াতকে স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছিল এবং অন্যদিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একের পর এক এসব সতর্কবাণী নাযিল হচ্ছিল, তখনকার সময়টা তাঁর কাছে কত কঠিন ছিল। সম্ভবত এহেন অবস্থায় সর্বক্ষণ এ আশংকা তাঁকে অস্থির করে তুলছিল যে, আল্লাহর দেয়া অবকাশ কখন না জানি খতম হয়ে যায় এবং সেই শেষ সময়টি এসে যায় যখন আল্লাহ কোন জাতির ওপর আযাব নাযিল করে তাকে পাকড়াও করার সিদ্ধান্ত নেন। আসলে এ সূরাটি পড়ার সময় মনে হতে থাকে যেন একটি বন্যার বাঁধ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে এবং যে অসতর্ক জনবসতিটি এ বন্যার গ্রাস হতে যাচ্ছে তাকে শেষ সাবধান বাণী শুনানো হচ্ছে।
(১১-হুদ) : বিষয়বস্তু : যেমন একটু আগেই বলেছি, ভাষণের বিষয়বস্তু সূরা ইউনূসের অনুরূপ। অর্থাৎ দাওয়াত, উপদেশ ও সতর্কবাণী। তবে পার্থক্য হচ্ছে, সূরা ইউনূসের তুলনায় দাওয়াতের অংশ এখানে সংক্ষিপ্ত, উপদেশের মধ্যে যুক্তির পরিমাণ কম ও ওয়াজ-নসীহত বেশী এবং সতর্কবাণীগুলো বিস্তারিত ও বলিষ্ঠ। এখানে দাওয়াত এভাবে দেয়া হয়েছেঃ নবীর কথা মেনে নাও, শির্ক থেকে বিরত হও অন্য সবার বন্দেগী ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও এবং নিজেদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত ব্যবস্থা আখেরাতে জবাবদিহির অনুভূতির ভিত্তিতে গড়ে তোল। উপদেশ দেয়া হয়েছেঃ দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকের ওপর ভরসা করে যেসব জাতি আল্লাহর নবীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে ইতিপূর্বেই তারা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায় ইতিহাসের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায় যে পথটি ধ্বংসের পথ হিসেবে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সেই একই পথে তোমাদেরও চলতেই হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা আছে নাকি? সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছেঃ আযাব আসতে যে দেরী হচ্ছে, তা আসলে একটা অবকাশ মাত্র। \n । আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের এ অবকাশ দান করছেন। এ অবকাশকালে যদি তোমরা সংযত ও সংশোধিত না হও তাহলে এমন আযাব আসবে যাকে হটিয়ে দেবার সাধ্য কারোর নেই এবং যা ঈমানদারদের ক্ষুদ্রতম দলটি ছাড়া বাকি সমগ্র জাতিকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। এ বিষয়বস্তুটি উপলব্ধি করাবার জন্য সরাসরি সম্বোধন করার তুলনায় নূহের জাতি, আদ, সামুদ, লূতের জাতি, মাদ্য়ানবাসী ও ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলীর সাহায্য গ্রহণ করা হয়েছে বেশী করে। এ ঘটনাবলী বর্ণনা করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশী স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ আল্লাহ যখন কোন বিষয়ের চূড়ান্ত মীমাংসা করতে উদ্যত হন তখন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পদ্ধতিতেই মীমাংসা করেন। সেখানে কাউকে সামান্যতমও ছাড় দেয়া হয় না। তখন দেখা হয় না কে কার সন্তান ও কার আত্মীয়। কোন নবীপুত্র বা নবী পত্নী কেউই বাঁচতে পারে না। শুধু এখানেই শেষ নয়, বরং যখন ঈমান ও কুফরীর চূড়ান্ত ফায়সালার সময় এসে পড়ে তখন দ্বীনের প্রকৃতির এ দাবীই জানাতে থাকে যে, মু’মিন নিজেও যেন পিতা-পুত্র ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভুলে যায় এবং আল্লাহর ইনসাফের তরবারির মতো পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে একমাত্র সত্যের সম্বন্ধ ছাড়া অন্য সব সম্বন্ধ কেটে ছিঁড়ে দূরে নিক্ষেপ করে। এহেন অবস্থায় বংশ ও রক্ত সম্বন্ধের প্রতি সামান্যতম পক্ষপাতিত্বও হবে ইসলামের প্রাণসত্তার সম্পর্ক বিরোধী। তিন চার বছর পরে বদরের ময়দানে মক্কার মুসলমানরা এ শিক্ষারই প্রদর্শনী করেছিলেন।
# মূল আয়াতে ‘কিতাব’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে বর্ণনাভঙ্গীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার অনুবাদ করা হয়েছে “ফরমান।” আরবী ভাষায় এ শব্দটি কেবলমাত্র কিতাব ও লিপি অর্থে ব্যবহৃত হয় না বরং হুকুম ও বাদশাহী ফরমান অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
# এ ফরমানে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো পাকা ও অকাট্য কথা এবং সেগুলোর কোন নড়চড় নেই। ভালোভাবে যাচাই পর্যালোচনা করে সে কথাগুলো বলা হয়েছে। নিছক বড় বড় বুলি আওড়াবার উদ্দেশ্যে বলা হয়নি। বক্তার বক্তৃতার যাদু এবং ভাব-কল্পনার কবিত্ব এখানে নেই। প্রকৃত ও হুবহু সত্য বর্ণনা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্যের চেয়ে কম বা তার চেয়ে বেশী একটি শব্দও এতে নেই। তারপর এ আয়াতগুলো বিস্তারিতও। এর মধ্যে প্রত্যেকটি কথা খুলে খুলে ও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বক্তব্য জটিল, বক্র ও অস্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি কথা আলাদা আলাদা করে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে।
# দুনিয়ায় তোমাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত তিনি তোমাদের খারাপভাবে নয় বরং ভালোভাবেই রাখবেন। তাঁর নিয়ামতসমূহ তোমাদের ওপর বর্ষিত হবে। তাঁর বরকত ও প্রাচূর্যলাভে তোমরা ধন্য হবে। তোমরা সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ থাকবে। তোমাদের জীবন শান্তিময় ও নিরাপদ হবে। তোমরা লাঞ্ছনা, হীনতা ও দীনতার সাথে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করবে। এ বক্তব্যটিই সূরা নাহলের ৯৭ আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً (النحل: 97)
“যে ব্যক্তিই ঈমান সহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।”
লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে ছড়িয়ে থাকা একটি বিভ্রান্তি দূর করাই এর উদ্দেশ্য। বিভ্রান্তিটি হচ্ছে, আল্লাহ ভীতি, সততা, সাধুতা ও দায়িত্বানুভূতির পথ অবলম্বন করলে মানুষ আখেরাতে লাভবান হলেও হতে পারে কিন্তু এর ফলে তার দুনিয়া একদম বরবাদ হয়ে যায়। এ মন্ত্র শয়তান প্রত্যেক দুনিয়ার মোহে মুগ্ধ অজ্ঞ-নির্বোধের কানে ফুঁকে দেয়। এ সঙ্গে তাকে এ প্ররোচনাও দেয় যে, এ ধরনের আল্লাহ ভীরু ও সৎলোকদের জীবনে দারিদ্র, অভাব ও অনাহার ছাড়া আর কিছুই নেই। আল্লাহ এ ধারণার প্রতিবাদ করে বলেন, এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে তোমাদের শুধুমাত্র আখেরাতই নয়, দুনিয়াও সমৃদ্ধ হবে। আখেরাতের মতো ও এ দুনিয়ায় যথার্থ মর্যাদা ও সাফল্যও এমনসব লোকের জন্য নির্ধারিত, যারা আল্লাহর প্রতি যথার্থ আনুগত্য সহকারে সৎ জীবন যাপন করে, যারা পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী হয়, যাদের ব্যবহারিক জীবনে ও লেনদেনে কোন ক্লেদ ও গ্লানি নেই, যাদের ওপর প্রত্যেকটি বিষয়ে ভরসা করা যেতে পারে, যাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি কল্যাণের আশা পোষণ করে এবং কোন ব্যক্তি বা জাতি যাদের থেকে অকল্যাণের আশঙ্কা করে না।
এছাড়া متاع حسن (উত্তম জীবন সামগ্রী) শব্দের মধ্যে আর একটি দিকও রয়েছে। এ দিকটি দৃষ্টির অগোচরে চলে যাওয়া উচিত নয়। কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার জীবন সামগ্রী দু’প্রকারের। এক প্রকারের জীবন সামগ্রী আল্লাহ বিমুখ লোকদেরকে ফিত্নার মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য দেয়া হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে তারা নিজেদেরকে দুনিয়া পূজা ও আল্লাহ বিস্মৃতির মধ্যে আরো বেশী করে হারিয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে এটি নিয়ামত ঠিকই কিন্তু গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলে দেখা যাবে এটি আল্লাহর লানত ও আযাবের পটভূমিই রচনা করে। কুরআন মজীদ (আরবী) তথা প্রতারণার সামগ্রী নামেও একে স্মরণ করে। দ্বিতীয় প্রকারের জীবন সামগ্রী মানুষকে আরো বেশী সচ্ছল, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে তাকে তার আল্লাহর আরো বেশী কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে। এভাবে সে আল্লাহর, তাঁর বান্দাদের এবং নিজের অধিকার আরো বেশী করে আদায় করতে সক্ষম হয়। আল্লাহর দেয়া উপকরণাদির সাহায্যে শক্তি সঞ্চয় করে সে দুনিয়ায় ভালো, ন্যায় ও কল্যাণের উন্নয়ন এবং মন্দ, বিপর্যয় ও অকল্যাণের পথ রোধ করার জন্য এর বেশী প্রভাবশালী ও কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ হচ্ছে কুরআনের ভাষায় উত্তম জীবন সামগ্রী। অর্থাৎ এমন উন্নত পর্যায়ের জীবন সামগ্রী যা নিছক দুনিয়ার আয়েশ-আরামের মধ্যেই খতম হয়ে যায় না বরং পরিণামে আখেরাতেরও শান্তির উপকরণে পরিণত হয়।
# যে ব্যক্তি চরিত্রগুণে ও নেক আমলে যত বেশী এগিয়ে যাবে আল্লাহ তাকে ততই বড় মর্যাদা দান করবেন। আল্লাহর দরবারে কারোর কৃতিত্ব ও সৎকাজকে নষ্ট করা হয় না। তাঁর কাছে যেমন অসৎকাজ ও অসৎবৃত্তির কোন মর্যাদা নেই তেমনি সৎকাজ ও সৎবৃত্তিরও কোন অমর্যাদা হয় না। তাঁর রাজ্যের রীতি এ নয় যে,
“আরবী ঘোড়ার পিঠে জরাজীর্ণ জিন
আর গাধার গলায় ঝোলে সোনার শৃংখল।”
যে ব্যক্তিই নিজের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে যেরূপ মর্যাদার অধিকারী প্রমাণ করবে তাকে আল্লাহ সে মর্যাদা অবশ্যই দেবেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
নামকরণ ও গুরুত্ব:
সূরার ৫০ থেকে ৬০ নং আয়াত পর্যন্ত আদ জাতি ও তাদের কাছে প্রেরিত নাবী হূদ (عليه السلام) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেখান থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এই সূরাতেও সে সকল জাতির কথা আলোচনা করা হয়েছে; যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াত ও পয়গম্বরদেরকে মিথ্যা মনে করে আল্লাহ তা‘আলার আযাবের সম্মুখীন হয়েছিল। ইতিহাসের পাতা থেকে হয় ভুল অক্ষরের মত মিটিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা ইতিহাসের পাতায় শিক্ষাস্বরূপ লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এ কারণেই হাদীসে এসেছে: একদা আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার আপনাকে বৃদ্ধ মনে হচ্ছে কেন? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন: সূরা হূদ, ওয়াকিয়া, আম্মা ইয়াতাসাআলুন (সূরা নাবা) এবং ইযাশশামছু কুওবিরাত (সূরা তাকভীর) ইত্যাদি সূরাগুলো আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। (তিরমিযী হা: ৩২৯৭, সহীহ)
১-৪ নং আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়::
الٓرٰ (আলিফ-লাম-রা) এ গুলো হচ্ছে “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এসব অক্ষর সূরার শুরুতে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য কী তা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। যদিও এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম শানক্বিতী (রহঃ) বলেন: বিদ্বানদের সেসব মতামতের মধ্যে গ্রহণযোগ্য মত হলযে সকল সূরার শুরুতে “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” উল্লেখ করা হয়েছে তা কুরআনের মু‘জিযাহ বা অলৌকিকত্ব বুঝানোর জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। কুরআনের এ বিচ্ছিন্ন অক্ষরগুলো একত্রিতভাবে উল্লেখ থাকলেও তার উদ্দেশ্য নিয়ে আসতে সৃষ্টিকুল অক্ষম। এ অক্ষরগুলো যে মু‘জিযাহ স্বরূপ তার প্রমাণ হল যে সকল সূরার শুরুতে এসকল অক্ষর নিয়ে আসা হয়েছে তার পরে পরেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে। যেমন এ সূরার শুরুতে এ অক্ষরগুলো উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে: ‘এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।’
সুতরাং কুরআনের মাঝে দুর্বলতা ধরতে পারলে ধরে নিয়ে আসো। কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত এ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে আসেনি, অথচ তৎকালীন আরবরা ছিল ভাষা ও সাহিত্যের শীর্ষচূড়ায়। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার প্রথম আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে।
أُحْكِمَتْ শব্দের শাব্দিক অর্থ-দৃঢ় করা, মজবুত করা। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন: কোন কিতাব তা রহিত করতে পারবে না। যেমন তাওরাত ও ইনজিলকে রহিত করে দিয়েছে। কাতাদাহ বলেন: কুরআনের সকল আয়াতগুলো মুহকাম, তাতে কোন ভ্রান্তি নেই এবং কোন বাতিল কিছু নেই। মোট কথা কুরআনের আয়াতগুলো বিধি-বিধানের দিক থেকে মজবুত, সংবাদের দিক থেকে সত্যবাদী এবং শব্দ বিন্যাস ও অর্থের দিক থেকে কোন প্রকার ত্র“টি নেই।
অতঃপর তাতে আহকাম ও শরঈ বিধি-বিধান, নসীহত ও কাহিনী, আক্বায়েদ ও ঈমান সংক্রান্ত বিষয় এবং চরিত্র ও ব্যবহারনীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলোকে পরিষ্কার ও বিস্তারিতভাবে মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করে দিয়েছেন, পূর্ব কিতাবসমূহে এর দৃষ্টান্ত মেলে না। সুতরাং মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা যিনি অগ্র-পশ্চাত সব জানেন তিনি এ কুরআনকে সকল প্রেক্ষাপট ও সময়ের জন্য উপযোগী করে নাযিল করেছেন। কারো বলার সুযোগ নেই, বর্তমান আধুনিক যুগে কুরআন উপযোগী নয়। এ শুধু আধুনিক নয় বরং এর চেয়ে যত বেশি আধুনিক ও অত্যাধুনিক আসুক না কেন তাতেও কুরআন উপযোগী।
অতএব আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বাণী জ্ঞান ও হিকমত থেকে খালি নয়। আল্লাহ তা‘আলার হিকমত-এর মধ্য থেকে এটাও একটি হিকমত যে, তিনি সকল নাবী-রাসূলকে একই বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আর তাদের সকলের দা‘ওয়াত এটাই ছিল যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত কর অন্য কারো ইবাদত করো না এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। সুতরাং তাঁর কথা অনুপাতে আমল করলেই তোমরা উভয় জগতের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারবে। অন্যথায় তোমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আর যদি তোমাদের দ্বারা পাপ হয়ে যায় তাহলে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর নিকট তাওবাহ কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে উত্তম ভোগের বস্তু দান করবেন। এখানে উত্তম ভোগ্য সামগ্রী বলতে দুনিয়ার ভোগ্য সামগ্রীকেই বুঝানো হয়েছে। কারণ যে ব্যক্তি দুনিয়ার বস্তু উপার্জনের মাধ্যমে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে তার জন্য এই দুনিয়ার সরঞ্জামাদিই উৎকৃষ্ট সরঞ্জামাদিতে পরিণত হবে। কারণ সে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অনুসারে তা করেছে।
(وَيُؤْتِ كُلَّ ذِيْ فَضْلٍ فَضْلَه۫)
এই উক্তির ব্যাখ্যায় ইবনু জারীর (রহঃ) ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে তবে তার জন্য একটি পাপ লিখে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করে তার জন্য দশটি নেকী লিখে দেয়া হয়। মূলত এখানে অনুগ্রহ বলতে এটাই বুঝানো হয়েছে।
আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার কর তবে অবশ্যই তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর সর্বাবস্থায়ই তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরে যেতে হবে। সুতরাং অস্বীকার করলে কঠিন দিবসের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. এই কিতাবের আয়াতগুলো মানুষের উপকারার্থে সুন্দরভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।
২. মানুষকে দুনিয়াতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠানো হয়েছে, সময় শেষ হয়ে গেলে চলে যেতে হবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ওপর স্নেহপরায়ণ।
৪. মানুষকে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার নিকটই ফিরে যেতে হবে।
৫. কুরআন সকল যুগের উপযোগী একটি আসমানী কিতাব।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
হযরত ইকরামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেছেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলাম- কোন্ জিনিষে আপনাকে বুড়ো করেছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমাকে সূরায়ে হুদ, সূরায়ে ওয়াকিয়া, আম্মা-ইয়াতাসাআলুন এবং ওয়া ইযাশ্শামসু কুভ্ভিরাত বুড়ো করে দিয়েছে। (এ হাদীসটি এই সনদে হাফিজ আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আবু বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিসে আপনাকে বৃদ্ধ করে দিলো? “উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমাকে সূরায়ে হুদ, ওয়াকিয়া, আল-মুরসালাত, আম্মা-ইয়াতাসাআলুন এবং ওয়া ইযাশ্শামসু কুভ্ভিরাত বৃদ্ধ করে ফেলেছে। (এ হাদীসটি এই সনদে বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ)) অন্য বর্ণনায় আছেঃ “সূরায়ে হুদ এবং ওর সঙ্গীয় সূরাগুলি আমাকে বৃদ্ধ করেছে” কোন কোন বর্ণনায় সূরায়ে আল-হাক্কাহ এর কথাও রয়েছে।
১-৪ নং আয়াতের তাফসীর
সূরায়ে বাকারায় হুরূফে হিজার উপর আলোচনা হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে তার পুনরাবৃত্তির কোনই প্রয়োজন নেই। তাই (আরবি) এর উপর আলোকপাত করা হচ্ছে না। আল্লাহর আয়াতগুলি দৃঢ় ও মজবুত। (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে- আকার ও অর্থের দিক দিয়ে এই আয়াতগুলি পূর্ণ। এটা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞাতা আল্লাহর পক্ষ হতে অবতারিত। তিনি কথায় প্রজ্ঞাময় এবং কাজের পরিণাম সম্পর্কে মহাজ্ঞাতা। নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না। মহান আল্লাহ বলেন এর পূর্বেও যে কোন রাসূলের কাছে আমি যে ওয়াহী পাঠিয়েছিলাম তা ছিল এটাই- আমি আল্লাহ এক। সুতরাং তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদত করো। আমি প্রত্যেক কওমের মধ্যে নবী পাঠিয়ে এই নির্দেশই দিয়েছিলাম- তোমরা শুধু আল্লাহরই ইবাদত করো এবং প্রতিমা-পূজা থেকে দূরে থাকো। আমি (নবী সঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে ভয় প্রদর্শন করছি, আবার জান্নাতের সুসংবাদও দিচ্ছি।
সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাফা পাহাড়ের উপর চড়ে কুরায়েশের গোত্রগুলিকে ডাক দিয়ে বলেনঃ “হে কুরায়েশের দল! আমি যদি তোমাদেরকে সংবাদ দেই যে, সকালে তোমাদের উপর শত্রুরা আক্রমণ চালাবে, তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি?” সবাই সমস্বরে বলে উঠলো: “আপনি যে কোন দিন মিথ্যা কথা বলেছেন তা তো আমাদের জানা নেই।” তখন তিনি বললেনঃ “তাহলে জেনে রেখো যে, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কঠিন শাস্তি থেকে ভয় প্রদর্শন করছি।” এ শাস্তি অবশ্যই হবে। সুতরাং এখনও তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাওবা করে নাও। এরূপ করলে আল্লাহ পাক তোমাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবেন এবং যে ব্যক্তি অনুগ্রহ লাভের যোগ্য তার প্রতি তিনি অনুগ্রহ করবেন। তিনি দুনিয়াতেও তোমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবেন এবং আখিরাতেও করবেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ “যে কেউই পুরুষ হোক বা নারী হোক, ঈমান আনয়ন করবে, মৃত্যুর পর আমি তাকে পবিত্র জীবনের সাথে উঠাবো।
সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সা’দকে (রাঃ) বলেনঃ “তুমি যদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কারো উপর কিছু খরচ কর, তবে অবশ্যই তুমি তার প্রতিদান পাবে, এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর উপর যা খরচ করবে তারও প্রতিদান তুমি প্রাপ্ত হবে।”
(আরবি) মহান আল্লাহর এই উক্তির ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন- যে ব্যক্তি খরাপ কাজ করে তার জন্যে একটি পাপ লিখে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ভাল কাজ করে’ তার উপর দশটি পুণ্য লিপিবদ্ধ হয়। দুনিয়ায় যদি একটি খারাপ আমলের শাস্তি প্রদান করা হয়, তবে তার পক্ষে দশটি পুণ্য থেকে যায়। আর যদি দুনিয়ায় তাকে শাস্তি দেয়া না হয় তবে দশটি পুণ্যের মধ্যে মাত্র একটি পুণ্য খোয়া যায় বা নষ্ট হয়, ন’টি পুণ্য তার পক্ষে থেকেই যায়। এরপর বলেন যে, ঐ ব্যক্তি বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত যার একটি (পাপ) দশটি (পুণ্যে)-র উপর জয়যুক্ত হয়।
মহান আল্লাহ বলেনঃ আর যদি তোমরা মুখ ফিরাতেই থাকো, তবে তোমাদের জন্যে ভীষণ দিনের শাস্তির আশঙ্কা করি। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ তাআ’লার নির্দেশাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। তাকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ আল্লাহরই নিকট তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তিনি স্বীয় বন্ধুদের প্রতি ইহসান করতে এবং শত্রুদেরকে শাস্তি দিতে সক্ষম। পুনরায় সৃষ্টি করার উপরও তিনি ক্ষমতাবান। এটা হচ্ছে ভীষণ সতর্কবাণী, যেমন এর পূর্বের বাণী ছিল উৎসাহব্যঞ্জক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] অর্থাৎ, তা এত পাকাপোক্ত যে, তার শব্দবিন্যাস ও অর্থ বিবৃতিতে কোন প্রকার ত্রুটি নেই। অথবা তার মধ্যে কোন অস্পষ্টতা ও জটিলতা নেই। অথবা তা পরিবর্তন ও রহিত হওয়ার নয়।
[২] তারপর তাতে আহকাম ও শরয়ী বিধি-বিধান, নসীহত ও কাহিনী, আক্বায়েদ ও ঈমানসংক্রান্ত বিষয় এবং চরিত্র ও ব্যবহার নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলোকে যেভাবে পরিষ্কার ও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, পূর্ব কিতাবসমূহে তার দৃষ্টান্ত মিলে না।
[৩] অর্থাৎ, আপন বাণীতে তিনি প্রজ্ঞাময়, ফলে তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণকৃত বাণী হিকমত থেকে খালি নয়। তিনি মহাজ্ঞাতাও অর্থাৎ, তিনি সমস্ত বিষয় ও তার শেষ পরিণতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ফলে তাঁর কথার উপর আমল করার মাধ্যমেই মানুষ অমঙ্গল থেকে বাঁচতে পারবে।
# [১] যে পার্থিব সুখ-সরঞ্জামকে কুরআন ‘ধোঁকার সরঞ্জাম’ বলেছে, সেই পার্থিব সুখ-সরঞ্জামকেই এখানে ‘উৎকৃষ্ট সরঞ্জাম’ বলে অভিহিত করেছে। এর মর্মার্থ হল এই যে, যে ব্যক্তি আখেরাত থেকে অমনোযোগী হয়ে পার্থিব সরঞ্জাম দ্বারা উপকৃত হবে, তার জন্য তা ‘ধোঁকার সরঞ্জাম’ রূপে গণ্য হবে, কারণ এর পরে তাকে নিকৃষ্ট পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে। আর যে আখেরাতের জন্য প্রস্ত্ততি নেওয়ার সাথে সাথে তার দ্বারা উপকৃত হবে, তার জন্য এই কিছু দিনের সরঞ্জাম ‘উৎকৃষ্ট সরঞ্জাম’। কারণ সে তা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবহার করে।
[২] (অথবা প্রত্যেক অধিক আমলকারীকে অধিক সওয়াব দান করবেন। অথবা যে পাপ করবে তাকে একটি পাপেরই শাস্তি দেবেন; কিন্তু যে পুণ্য করবে, তাকে ঐ একটির বিনিময়ে ১০টি পুণ্য দান করবেন। আর সে মর্যাদা ও পুণ্য হল, ইহকালে সম্মান এবং পরকালে জান্নাত। -সম্পাদক)
[৩] মহাদিন বলতে কিয়ামতের দিন।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
সূরা সংক্রান্ত আলোচনাঃ
আয়াত সংখ্যাঃ ১২৩।
নাযিল হওয়ার স্থানঃ
সূরা হুদ মক্কায় নাযিল হয়েছে। [ইবন কাসীর]
নামকরণঃ
এ সূরার নাম সূরা হুদ। একজন প্রখ্যাত রাসূলের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। তার বাহ্যিক কারণ হচ্ছে, এ সূরার ৫৩ নং আয়াতে এর উল্লেখ আছে। যেখানে হুদ আলাইহিস সালাম ও তার কাওমের মধ্যকার কথোপকথন আলোচনা করা হয়েছে।
সূরা সংক্রান্ত বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ
এ সূরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সুরা হুদ ঐসব সুরার অন্যতম যাতে পূর্ববর্তী জাতি সমুহের উপর আপতিত আল্লাহর গযব ও বিভিন্ন কঠিন আযাবের এবং পরে কেয়ামতের ভয়াবহ ঘটনাবলী এবং পুরস্কার ও শাস্তির কথা বিশেষ বর্ণনারীতির মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন দেখতে পাচ্ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেনঃ হ্যাঁ, সুরা হুদ এবং ওয়াকি’আ, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসাআলুন, ইযাস-শামছু কুওওয়িরাত আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [তিরমিয়ীঃ৩২৯৭] উদ্দেশ্য এই যে, উক্ত সুরাগুলিতে বর্ণিত বিষয়বস্তু অত্যন্ত ভয়াবহ ও ভীতিপ্রদ হওয়ার কারণে এসব সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর পবিত্র চেহারায় বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দেয়। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ সূরার একটি আয়াতে এসেছে,
(فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ)
“যেভাবে আপনাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে দৃঢ়পদ থাকুন” [সূরা হুদ – ১১২] এ নির্দেশই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [কুরতুবী]।
—————
[১] অর্থাৎ এ কিতাবে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো পাকা ও অকাট্য কথা এবং সেগুলোর কোন নড়াচড় নেই। ভালোভাবে যাচাই পর্যালোচনা করে সে কথাগুলো বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন পাকের আয়াতসমূহ সামগ্রিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত, অপরিবর্তিত। বাতিল এর কাছে প্রবেশের কোন সুযোগ পায় না [তাবারী] তাওরাত, ইঞ্জীল ইত্যাদি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ পবিত্র কুরআন নাযিলের ফলে যেভাবে মনসূখ বা রহিত হয়েছে কুরআন পাক নাযিল হওয়ার পর যেহেতু নবীর আগমন এবং ওহীর ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হয়ে গেছে সুতরাং কেয়ামত পর্যন্ত এ কিতাব আর রহিত হবে না। [কুরতুবী] এর আয়াতসমূহ শব্দের দিক থেকে মুহকাম বা সুপ্রতিষ্ঠিত ও অপরিবর্তিত। হাসান ও আবুল আলীয়া বলেন, নির্দেশ ও নিষেধ দ্বারা এটাকে মজবুত করা হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী]
[২] অর্থাৎ এ আয়াতগুলো বিস্তারিতও। এর মধ্যে প্রত্যেকটি কথা খুলে খুলে ও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বক্তব্য জটিল, বক্র ও অস্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি কথা আলাদা আলাদা করে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এর অর্থ, ওয়াদা, ধমক, সাওয়াব ও শাস্তির বিষয়াদি এতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী] কাতাদা বলেন, আল্লাহ্ এটাকে বাতিলের জন্য অপ্রতিরোধ্য করেছেন, তারপর হালাল ও হারাম সংক্রান্ত বিষয়াদি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, সামগ্রিকভাবে এটাকে মজবুত করেছেন। তারপর তাওহীদ, নবুওয়াত ও আখেরাতের পুনরুত্থানের বর্ণনা এক একটি আয়াত করে প্রদান করা হয়েছে। [কুরতুবী] সুতরাং এতে আকায়েদ, ইবাদত, লেন-দেন আচার ব্যবহার ও নীতি নৈতিকতার বিষয়বস্তুগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে পৃথক পৃথক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর আরেক অর্থ এও হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে তো পূর্ণ কুরআন মজীদ একসাথে লাওহে মাহফুজে উৎকীর্ণ করা হয়েছে, কিন্তু তারপর স্থান কাল পাত্র পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছে, যাতে এর স্মরণ রাখা, মর্ম অনুধাবণ ক্রমানুসারে তদনুযায়ী আমল করা সহজ হয়। [কুরতুবী] অথবা এক এক আয়াত করে পর্যায়ক্রমে নাযিল করা হয়েছে যাতে এর মধ্যে চিন্তা-গবেষণা করা যায়। [কুরতুবী]
[৩] অর্থাৎ এসব আয়াত এমন এক মহান সত্তার পক্ষ হতে আগত হয়েছে, যিনি তাঁর বাণীসমূহ ও বিধানসমূহে মহা প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ [ইবন কাসীর]
# [১] এখানে কুরআনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ তাওহীদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করবে না। অর্থাৎ এ কুরআন মজবুত ও বিস্তারিতভাবে এজন্যই নাযিল করা হয়েছে যাতে তোমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত না কর। [ইবন কাসীর] আয়াতের এটাও অর্থ হতে পারে যে, কুরআনকে এভাবে নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারও ইবাদত করবে না। [কুরতুবী] মোটকথা: আয়াতে কুরআনের বিষয়বস্তুর মধ্যে সর্বাধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না, যাকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বলা হয়। এটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে। মূলতঃ এটাই সমস্ত নবী-রাসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য। এ কথা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের অন্যান্য আয়াতেও বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। [যেমন, সূরা আল-আম্বিয়াঃ ২৫, সূরা আন-নাহলঃ ৩৬]
[২] এখানে কুরআনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে, আর তা হচ্ছেঃ রিসালাত। ইরশাদ হচ্ছে, “নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা”। এ আয়াতে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তিনি সারা বিশ্ববাসীকে যেন জানিয়ে দেন যে, আমি আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ প্রদানকারী। যে আমার অনুসরণ করবে সে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে যাবে, আর যে আমার বিরোধিতা করবে সে কঠোর শাস্তিতে নিপতিত হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে কুরাইশদের সমস্ত শাখা গোত্রকে ডেকে বললেনঃ “হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি যদি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেই যে, এক আক্রমণকারী সেনাদল তোমাদেরকে আক্রমণ করতে যাচ্ছে তাহলে কি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস করতে পারবে?” তারা বললঃ আমরা তো আপনাকে কখনো মিথ্যা বলতে শুনিনি। তখন তিনি বললেনঃ “তাহলে আমি তোমাদের জন্য এক কঠোর শাস্তির ভীতিপ্রদর্শনকারী”। [বুখারীঃ ১৩৯৪, মুসলিমঃ ২০৮]
#[১] অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে পূর্ববর্তী যাবতীয় গুণাহ হতে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসার আহবান জানাই। এবং ভবিষ্যতে একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকার প্রচেষ্টা চালাতে বলি। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, কারণ আমি দিনে একশত বার তার কাছে তাওবা করি। [মুসলিম: ২৭০২]
[২] অর্থাৎ দুনিয়ায় তোমাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত তিনি তোমাদের খারাপভাবে নয় বরং ভালোভাবেই রাখবেন। তাঁর নিয়ামতসমূহ তোমাদের ওপর বর্ষিত হবে। তাঁর বরকত ও প্রাচুর্য লাভে তোমরা ধন্য হবে। তোমরা সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ থাকবে। তোমাদের জীবন শান্তিময় ও নিরাপদ হবে। তোমরা লাঞ্ছনা, হীনতা ও দীনতার সাথে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করবে। এ বক্তব্যটিই সূরা নাহ্লের ৯৭নং আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তিই ঈমান সহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।” অনুরূপভাবে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাই খরচ করবে তাতেই আল্লাহ্র কাছ থেকে এর জন্য সওয়াব পাবে। এমনকি যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তাতেও”। [বুখারীঃ ৫৬, মুসলিমঃ ১৬২৮] আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ “যদি কেউ গুণাহর কাজ করে তখন তার জন্য একটি গুণাহ লিখা হয়। পক্ষান্তরে যদি সওয়াবের কাজ করে তবে তার জন্য দশটি সওয়াব লিখা হয়। তারপর যদি দুনিয়াতে তার গুণাহের শাস্তি পেয়ে যায় তবে তার জন্য আখেরাতে দশটি সওয়াবই বাকী থাকে, কিন্তু যদি দুনিয়াতে শাস্তি না পায় তবে আখেরাতে একটি গুণাহের বিনিময়ে একটি সওয়াব চলে গেলেও তার আরও নয়টি সওয়াব অবশিষ্ট থাকে। সুতরাং যার একক দশকের উপর প্রাধান্য পায় তার তো ধ্বংসই অনিবার্য। [তাবারী]। এরপর আয়াতে বলা হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ উত্তম জীবন সামগ্রী প্রদান করবেন। এ হচ্ছে ইস্তেগফার ও তাওবার ফল। [কুরতুবী] উন্নত অবস্থা, দুনিয়াতে সার্বিক নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে। আর ‘নির্দিষ্ট সময়’ বলে মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে। অন্য আয়াতেও সেটা বলা হয়েছে, যেমন হুদ আলাইহিস সালাম তার কাওমকে বলেছিলেন, “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তার দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না” [সূরা হুদ: ৫২] অনুরূপ নূহ আলাইহিস সালামের সাথে তার কাওমের কথোপকথন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “অতঃপর বলেছি, জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা” [সূরা নূহ ১০-১২] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, কারণ আমি দিনে একশত বার তার কাছে তাওবা করি। [মুসলিম: ২৭০২]
[৩] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, তার যে সমস্ত কাজ সে সওয়াবের আশায় করেছে। চাই তা সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে হোক অথবা হাত বা পা দ্বারা কোন ভাল আমল করেছে, অথবা কোন ভাল কথা বলেছে, অথবা তার যে সমস্ত ভাল কাজ অতিরিক্ত করেছে সে সবই তাকে প্রদান করা হবে। [তাবারী] কাতাদা বলেন, তা আখেরাতে প্রদান করা হবে [তাবারী]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 01-04
کِتٰبٌ اُحۡکِمَتۡ اٰیٰتُہٗ
A Book the Ayat whereof are perfect.
The Qur’an and its Call to (worship) Allah Alone
Allah says:
الَر
Alif Lam Ra.
A discussion concerning the letters of the alphabet (which appear at the beginning of some chapters of the Qur’an) has already preceded at the beginning of Surah Al-Baqarah. That discussion is sufficient without any need for repetition here.
كِتَابٌ
.
(This is) a Book, (referring Quran).
Concerning Allah’s statement,
أُحْكِمَتْ ايَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ
The Ayat whereof are perfect and then explained in detail
This means perfect in its wording, detailed in its meaning. Thus, it is complete in its form and its meaning.
This interpretation was reported from Mujahid and Qatadah, and Ibn Jarir (At-Tabari) preferred it.
Concerning the meaning of Allah’s statement,
مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ
from One (Allah), Who is All-Wise, Well-Acquainted.
This means that it (the Qur’an) is from Allah, Who is Most Wise in His statements and His Laws, and Most Aware of the final outcome of matters.
أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ اللّهَ
(Saying) worship none but Allah.
This means that this Qur’an descended, perfect and detailed, with the purpose of Allah’s worship alone, without any partners.
This is similar to the statement of Allah, the Exalted,
وَمَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلاَّ نُوحِى إِلَيْهِ أَنَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ أَنَاْ فَاعْبُدُونِ
And We did not send any Messenger before you but We revealed to him (saying):There is no God but I, so worship Me. (21:25)
It is similar to Allah’s statement,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِى كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللَّهَ وَاجْتَنِبُواْ الْطَّـغُوتَ
And verily, We have sent among every Ummah a Messenger (proclaiming):`Worship Allah (Alone), and avoid Taghut (calling false deities).’ (16:36)
In reference to Allah’s statement,
إِنَّنِي لَكُم مِّنْهُ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ
Verily, I am unto you from Him a warner and a bringer of glad tidings.
This means, “Verily, I am unto you a warner of the punishment if you oppose Him (Allah), and a bringer of the good news of reward if you obey Him.”
This meaning has been recorded in the authentic Hadith which states that the Messenger of Allah ascended mount As-Safa and called out to his near relatives of the Quraysh tribe. When they gathered around him, he said,
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا تُصَبِّحُكُمْ أَلَسْتُمْ مُصَدِّقِيَّ
O people of Quraysh, if I informed you that a cavalry was going to attack you in the morning, would you not believe me?
They replied, “We have not found you to be a liar.”
He said,
فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَي عَذَابٍ شَدِيد
Verily I am a warner unto you before a severe punishment.
Concerning His statement.
وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُوْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ
And (commanding you):`Seek the forgiveness of your Lord, and turn to Him in repentance, that He may grant you good enjoyment, for a term appointed, and bestow His abounding grace to every owner of grace.
This means, “I am commanding you to seek forgiveness from previous sins and to turn to Allah from future sins, and thereafter you abide by that.”
يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا
(that He may grant you good enjoyment),
This is in reference to this worldly life.
إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُوْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ
(for a term appointed, and bestow His abounding grace to every owner of grace).
This refers to the Hereafter, according to Qatadah.
This is like the statement of Allah,
مَنْ عَمِلَ صَـلِحاً مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُوْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَوةً طَيِّبَةً
Whoever works righteousness — whether male or female — while a true believer, verily to him We will give a good life. (16:97)
Concerning Allah’s statement,
وَإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
But if you turn away, then I fear for you the torment of a Great Day.
This is a severe threat for whoever turns away from the commandments of Allah, the Exalted, and rejects His Messengers. Verily, the punishment will afflict such a person on the Day of Resurrection and there will be no escape from it.
إِلَى اللّهِ مَرْجِعُكُمْ
To Allah is your return,
This means your return on the Day of Judgement.
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
and He is able to do all things.
This means that He is capable of doing whatever He wishes, whether it be goodness towards His Awliya’ (friends and allies), or vengeance upon His enemies.
This also includes His ability to repeat the creation of His creatures on the Day of Resurrection.
This section encourages fear, just as the previous section encourages hope.