أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 693)
[ مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
যারা শুধু পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য কামনা করে,
Whoever wants the Worldly Life,]
www.motaher21.net
مَنۡ کَانَ یُرِیۡدُ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتَہَا نُوَفِّ اِلَیۡہِمۡ اَعۡمَالَہُمۡ فِیۡہَا وَ ہُمۡ فِیۡہَا لَا یُبۡخَسُوۡنَ ﴿۱۵﴾
যারা শুধু পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য কামনা করে, আমি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মসমূহ (এর ফল) পৃথিবীতেই পরিপূর্ণরূপে প্রদান করে দিই এবং সেখানে তাদের জন্য কিছুই কম করা হয় না।
Whoever desires the life of this world and its adornments – We fully repay them for their deeds therein, and they therein will not be deprived.
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَیۡسَ لَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ اِلَّا النَّارُ ۫ۖ وَ حَبِطَ مَا صَنَعُوۡا فِیۡہَا وَ بٰطِلٌ مَّا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۶﴾
এরা এমন লোক যে, তাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই, আর তারা যা কিছু করেছে, তা সবই পরকালে নিষ্ফল হবে এবং যা কিছু করে থাকে, তাও নিরর্থক হবে।
Those are the ones for whom there is not in the Hereafter but the Fire. And lost is what they did therein, and worthless is what they used to do.
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১৫-১৬ নং আয়াত:-
مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
যারা শুধু পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য কামনা করে,
Whoever wants the Worldly Life,
১৫-১৬ নং আয়াত :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তি আমল করে আর সে আমলের বিনিময়ে দুনিয়া হাসিল করা বা দুনিয়ার সুনাম ও সুখ-সাচ্ছন্দ্য পাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়াতেই তার কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দেবেন, তাতে কম করে দেয়া হবে না। কিন্তু আখিরাতে তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া কিছুই থাকবে না, তারা দুনিয়াতে যা আমল করেছে সব বাতিল হয়ে যাবে, আখিরাতে কোন উপকারে আসবে না।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْاٰخِرَةِ نَزِدْ لَه۫ فِيْ حَرْثِه۪ ج وَمَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِه۪ مِنْهَا لا وَمَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ نَّصِيْبٍ)
“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বর্ধিত করে দেই এবং যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে এরই কিছু দেই, তবে আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না।” (সূরা শূরা ৪২:২০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَه۫ فِيْهَا مَا نَشَا۬ءُ لِمَنْ نُّرِيْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَه۫ جَهَنَّمَ ج يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا)
“কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেথায় সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।” (সূরা ইসরা ১৭:১৮)
উক্ত আয়াত দুটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে, তাতে যাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তারা হল রিয়াকারী। অর্থাৎ লোক দেখানো আমলকারী। অনেকে বলেন: এরা হল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান। আবার কেউ কেউ বলেন, এরা হল যারা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে আমল করে থাকে ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের বিনিময় দুনিয়াতেই দিয়ে দেন এবং আখিরাতে তারা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। কারণ তাদের আমলের বিনিময় তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আখিরাতে দেয়ার মত আর কিছুই থাকবে না।
যাই হোক, যারা কোন সৎ আমল করবে কিন্তু সে সৎ আমল মানুষকে দেখানোর জন্য করুক, আর প্রশংসা পাওয়ার জন্য করুক, বা দুনিয়া হাসিলের জন্য করুক তা গ্রহণ করা হবে না। যে ব্যক্তি এমন আমল করবে সে শির্কে লিপ্ত হবে। তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যেমন অনেকে সালাত আদায় করে মানুষকে দেখানোর জন্য, অনেকে দান করে প্রশংসা পাওয়ার জন্য, অনেকে জিহাদ করে বীরত্ব প্রকাশ করার জন্য। হাদীসে এসেছে: কিয়ামতের দিন তিনজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, তাদের একজন হল এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা অনেক সম্পদ দান করেছেন, তাকে নিয়ে আসা হবে। তাকে যেসকল নেয়ামত দান করা হয়েছিল তা স্বরণ করিয়ে দেয়া হবে, সে স্মরণ করতে পারবে। তাকে বলা হবে, কী আমল করেছ? সে বলবে, এমন কোন পথ নেই যা আপনি পছন্দ করেন সে পথে ব্যয় করিনি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি এজন্য দান করেছ যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। তা দুনিয়াতে বলা হয়েছে, তারপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে চেহারার ওপর ছেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার।
সুতরাং আমল করতে হবে আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য, কারো প্রশংসা পাওয়া কিংবাা কাউকে দেখানোর জন্য নয়। তাহলেই সৎ আমল আখিরাতে কাজে আসবে অন্যথায় নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে আমল করবে তারা জাহান্নামে যাবে।
২. দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে শরীয়তের আমল করা শির্ক।
৩. আখিরাতে তারা ভাল কোন প্রতিদান পাবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর
এই আয়াতের ব্যাপারে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রিয়াকার বা যারা মানুষকে দেখাবার জন্যে সৎ কাজ করে তাদের সৎ কাজের প্রতিদান তাদেরকে এই দুনিয়াতেই দিয়ে দেয়া হয়, একটুও কম করা হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি মানুষকে দেখাবার উদ্দেশ্যে নামায পড়ে বা রোযা রাখে অথবা তাহাজ্জুদ গুযারী করে, তার বিনিময় সে দুনিয়াতেই পেয়ে যায়। আখেরাতে সে সম্পূর্ণ শূন্য হস্ত ও আমলহীন অবস্থায় উঠবে।
হযরত আনাস ইবনু মা’লিক (রাঃ) এবং হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, এই আয়াত দু’টি ইয়াহুদী ও খৃস্টানদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আর হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, রিয়াকারদের ব্যাপারে এ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ হয়। মোট কথা, যার উদ্দেশ্য যেটা হবে সেটা অনুযায়ী তার সাথে ব্যবহার করা হবে। যে আমল দুনিয়া সন্ধানের উদ্দেশ্যে হবে আখেরাতে তা বিফল হয়ে যাবে। যেহেতু মু’মিনের আমল আখেরাত সন্ধানের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে সেই হেতু আল্লাহ তাআ’লা তাকে আখেরাতে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন এবং দুনিয়াতেও তার সৎকার্যাবলী তার উপকারে আসবে। একটি মারফূ’ (যে হাদীসের সনদ রাসূলুল্লাহ (সঃ) পর্যন্ত পৌঁছে গেছে সেই হাদীসকে মারফূ’ হাদীস বলে) হাদীসেও অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়্যত রাখবে, আমি তাকে ইহজগতে যতটুকু ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা, সত্ত্বরই প্রদান করবো, অতঃপর তার জন্যে দুযখ নির্ধারণ করবে, সে তাতে দুর্দশাগ্রস্ত (ও) বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি আখেরাতের নিয়্যত রাখবে এবং ওর জন্যে যেমন চেষ্টার প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে, যদি যে মু’মিন হয়, এইরূপ লোকের চেষ্টা গৃহীত হবে। তোমার প্রতিপালকের দান হতে তো আমি এদেরকেও সাহায্য করে থাকি এবং ওদেরকেও; আর তোমার প্রতিপালকের (এই পার্থিব) দান (কারো জন্যে) বন্ধ নয়। তুমি লক্ষ্য কর, আমি একজনকে অপরজনের উপর কিরূপে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি; আর নিশ্চয় পরকাল মর্যাদার হিসেবেও অনেক বড় এবং ফযীলতের হিসেবেও অতি শ্রেষ্ঠ।” আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেনঃ “যে ব্যক্তি পরকালের কৃষিক্ষেত্র চায়, আমি তার জন্যে তার কৃষি ক্ষেত্রে বরকত দান করে থাকি, পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়ার কৃষিক্ষেত্র কামনা করে, আমি তাকে তার থেকে প্রদান করে থাকি, কিন্তু পরকালে তার জন্যে কোনই অংশ নেই।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখানে যে প্রসঙ্গে ও যে সামঞ্জস্যের প্রেক্ষিতে একথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, সে যুগে যে ধরনের লোকেরা কুরআনের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করছিল এবং আজও প্রত্যাখ্যান করছে তাদের বেশীর ভাগই দুনিয়া পূজারী। বৈষয়িক স্বার্থ তাদের মন-মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে রাখে। আল্লাহর বাণী প্রত্যাখ্যান করার জন্য তারা যে অজুহাত দেখায় তা সবই মেকী। আসল করণ হচ্ছে তাদের দৃষ্টিতে দুনিয়া ও তার বস্তুবাদী স্বার্থের উর্ধ্বে কোন জিনিসের কোন মূল্য নেই এবং এ স্বার্থগুলো থেকে লাভবান হতে হলে তাদের প্রয়োজন লাগামহীন স্বাধীনতা।
# যার সামনে রয়েছে শুধু দুনিয়ার এ জীবন এবং এর স্বার্থ ও সুখ-সম্ভোগ লাভ সে এ বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেমন প্রচেষ্টা এখানে চালাবে তেমনি তার ফল সে এখানে পাবে। কিন্তু আখেরাত যখন তার লক্ষ্য নয় এবং সেজন্য সে কোন চেষ্টাও করেনি তখন তার দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধার প্রচেষ্টার ফল লাভ আখেরাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবার কোন কারণ নেই। সেখানে ফল লাভের সম্ভাবনা একমাত্র তখনই হতে পারে যখন দুনিয়ায় মানুষ এমন সব কাজের জন্য প্রচেষ্টা চালায় যেগুলো আখেরাতেও ফলদায়ক হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, যদি কেউ তার নিজের বসবাস করার জন্য একটি সুরম্য প্রাসাদ চায় এবং এখানে এ ধরনের প্রাসাদ তৈরী করার জন্য যেসব ব্যবস্থা অবলম্বন করা দরকার তা সবই সে অবলম্বন করে তাহলে নিশ্চয়ই একটি সুরম্য প্রাসাদ তৈরী হয়ে যাবে এবং তার কোন একটি ইটও নিছক একজন কাফের তাকে দেয়ালের গায় বসাচ্ছে বলে প্রসাদের দেয়ালে বসতে অস্বীকার করবে না। কিন্তু মৃত্যুর আগমন এবং জীবনের শেষ নিশ্বাসের সাথে সাথেই তাকে নিজের এ প্রাসাদ এবং এর সমস্ত সাজসরঞ্জাম এ দুনিয়ায় ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর কোন জিনিসও সে সঙ্গে করে পরলোকে নিয়ে যেতে পারবে না। যদি সে আখেরাতে প্রাসাদ তৈরী করার জন্য কিছু না করে থাকে তাহলে তার এ প্রাসাদ তার সাথে সেখানে স্থানান্তরিত হবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। দুনিয়ায় সে যদি এমন সব কাজে প্রচেষ্টা নিয়োজিত করে যেগুলোর সাহায্যে আল্লাহর আইন অনুযায়ী আখেরাতে প্রসাদ নির্মিত হয় তাহলে একমাত্র তখনই সে ওখানে কোন প্রাসাদ লাভ করতে পারে।
এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, এ যুক্তি দ্বারা তো শুধু এতটুকুই বুঝা যায় যে, সেখানে সে কোন প্রাসাদ পাবে না। কিন্তু প্রাসাদের পরিবর্তে সে আগুন লাভ করবে, এ কেমন কথা? এর জবাব হচ্ছে (কুরআনই বিভিন্ন সময় এ জবাবটি দিয়েছে) যে ব্যক্তি আখেরাতকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য কাজ করে সে অনিবার্য ও স্বাভাবিকভাবে এমন পদ্ধতিতে কাজ করে যার ফলে আখেরাতে প্রাসাদের পরিবর্তে আগুনের কুণ্ড তৈরী হয়। (সূরা ইয়াসীনের ১২ টীকা দেখুন)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
উক্ত আয়াত দু’টি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে, তাতে যাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তারা হল রিয়াকারী (লোক দেখানো বা সুনাম নেওয়ার জন্য আমলকারী)। অনেকের নিকট তারা হল ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান। আবার কেউ কেউ বলেন, এখানে দুনিয়াদারদের কথা বলা হয়েছে। কারণ অনেক দুনিয়াদার, যারা নেক আমল করে, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রাপ্য তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন, আখেরাতে তাদের জন্য শাস্তি ব্যতীত আর কিছুই থাকবে না। উক্ত বিষয়টি কুরআন মাজীদের সূরা বনী ইস্রাঈলের ১৭:১৮ নং আয়াত ও সূরা শূরার ৪২:২০ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
প্রতিটি সৎকার্য গ্রহণযোগ্য ও আখেরাতের মুক্তির কারণ হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে, সেটা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য তা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকা মোতাবেক হতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমানই রাখে না, তার যাবতীয় কার্যকলাপ গুণ গরিমা, নীতি নৈতিকতা প্রাণহীন দেহের ন্যায়। যার বাহ্যিক আকৃতি অতি সুন্দর হলেও আখেরাতে তার কানাকড়িরও মূল্য নেই। তবে দৃশ্যতঃ সেটা যেহেতু পূণ্যকার্য ছিল এবং তা দ্বারা বহু লোক উপকৃত হয়েছে, তাই আল্লাহ তা’আলা এহেন তথাকথিত সৎকার্যকে সম্পূর্ণ বিফল ও বিনষ্ট করেন না, বরং এসব লোকের যা মূখ্য উদ্দেশ্য ও কাম্য ছিল যেমন তার সুনাম ও সম্মান বৃদ্ধি হবে, লোকে তাকে দানশীল, মহান ব্যক্তিরূপে স্মরণ করবে, নেতারূপে তাকে বরণ করবে ইত্যাদি আল্লাহ তা’আলা স্বীয় ইনসাফ ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে দুনিয়ার জীবনেই তাকে দান করেন। অপরদিকে আখেরাতে মুক্তিলাভ করা যেহেতু তাদের কাম্য ছিল না এবং তাদের প্রাণহীন সৎকার্য আখেরাতের অপূর্ব ও অনন্ত নেয়ামতসমূহের মূল্য হওয়ার যোগ্য ছিল না, কাজেই আখেরাতে তার কোন প্রতিদানও লাভ করবে না। বরং নিজেদের কুফরী, শেরেকী ও গোনাহের কারণে জাহান্নামের আগুনে চিরকাল তাদের জ্বলতে হবে। আয়াতে বলা হয়েছে যে, “আখেরাতে তাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই।” এতে করে বোঝা যায় যে, এ আয়াত কাফেরদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে। কেননা, একজন মুসলিম যত বড় পাপীই হোক না কেন, তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করার পর অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আরাম আয়েশ ও নেয়ামত লাভ করবে।
কোন কোন মুফাসসিরের মতে এ আয়াতে ঐসব মুসলিমদের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে যারা কার্যের বিনিময়ে শুধু পার্থিব জীবনে সুখ শান্তি যশ খ্যাতি প্রত্যাশা করে। লোক দেখানো মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এমতাবস্থায় অত্র আয়াতের মর্ম হবে এই যে, তারা নিজেদের পাপের শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন ছাড়া অন্য কিছু পাবে না। পরিশেষে পাপের শাস্তি ভোগান্তে তারাও অবশ্য সৎকাজের প্রতিদান লাভ করবে। [কুরতুবী] সত্যনিষ্ঠ আলেমদের কারও কারও মতে, অত্র আয়াতে ঐসব লোকের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে, যারা তাদের যাবতীয় সৎকার্য শুধু পার্থিব ফায়দা হাসিলের জন্য করে থাকে, চাই সে আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাসী কাফের হোক অথবা নামধারী মুসলিম হোক। তাই যদি কোন মুসলিম শুধুমাত্র লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে সৎকাজ করে অথবা শুধু দুনিয়া অর্জনের জন্য করে, তবে এ সব দুনিয়াকামী লোক ইচ্ছা ও বাসনায় আল্লাহর সাথে শির্ককারী বলে বিবেচিত হবে। আর যে আল্লাহর সাথে শির্ক করে তার যাবতীয় আমলই বিনষ্ট হয়ে যায়। সে হিসেবে ঐসব নামধারী মুসলিমও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম। শির্ক করার কারণে তারা কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। মু’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু, মাইমুন ইবনে মেহরান ও মুজাহিদ রাহিমাহুমুল্লাহ এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন। [কুরতুবী]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 15-16
مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
Whoever wants the Worldly Life,
then He will have no Share of the Hereafter
Allah, the Exalted, says,
مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا
وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ
أُوْلَـيِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الاخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ
وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
Whosoever desires the life of the world and its glitter, to them We shall pay in full (the wages of) their deeds therein, and they will have no diminution therein. They are those for whom there is nothing in the Hereafter but Fire, and vain are the deeds they did therein. And of no effect is that which they used to do.
Al-Awfi reported that Ibn Abbas said concerning this verse,
“Verily those who show off, will be given their reward for their good deeds in this life. This will be so that they are not wronged, even the amount equivalent to the size of the speck on a date-stone.”
Ibn Abbas continued saying,
“Therefore, whoever does a good deed seeking to acquire worldly gain – like fasting, prayer, or standing for prayer at night – and he does so in order to acquire worldly benefit, then Allah says, `Give him the reward of that which he sought in the worldly life,’ and his deed that he did is wasted because he was only seeking the life of this world. In the Hereafter he will be of the losers.”
A similar narration has been reported from Mujahid, Ad-Dahhak and many others.
Anas bin Malik and Al-Hasan both said,
“This verse was revealed concerning the Jews and the Christians.”
Mujahid and others said,
“This verse was revealed concerning the people who perform deeds to be seen.”
Qatadah said,
“Whoever’s concern, intention and goal is this worldly life, then Allah will reward him for his good deeds in this life. Then, when reaches the next life, he will not have any good deeds that will be rewarded. However, concerning the believer, he will be rewarded for his good deeds in this life and in the Hereafter as well.”
Allah, the Exalted, says,
مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَـجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَأءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَـهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا
وَمَنْ أَرَادَ الاٌّخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُوْمِنٌ فَأُولَـيِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا
كُلًّ نُّمِدُّ هَـوُلاءِ وَهَـوُلاءِ مِنْ عَطَأءِ رَبِّكَ وَمَا كَانَ عَطَأءُ رَبِّكَ مَحْظُورًا
انظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَلَلٌّخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَـتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلً
Whoever desires the quick-passing (transitory enjoyment of this world), We readily grant him what We will for whom We like. Then, afterwards, We have appointed for him Hell; he will burn therein disgraced and rejected.
And whoever desires the Hereafter and strives for it, with the necessary effort due for it while he is a believer – then such are the ones whose striving shall be appreciated.
On each – these as well as those – We bestow from the bounties of your Lord. And the bounties of your Lord can never be forbidden. See how We prefer one above another, and verily, the Hereafter will be greater in degrees and greater in intricacy. (17:18-21)
Allah, the Exalted, says,
مَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الاٌّخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِى حَرْثِهِ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُوْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِى الاٌّخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ
Whosoever desires the reward of the Hereafter, We give him increase in his reward, and whosoever desires the reward of this world, We give him thereof, and he has no portion in the Hereafter. (42:20).