(Book# 695) [ وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ؕ আর ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? And who is more unjust than he who invents a lie about Allah ?] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 695)
[ وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ؕ
আর ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে?
And who is more unjust than he who invents a lie about Allah ?]
www.motaher21.net
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ؕ اُولٰٓئِکَ یُعۡرَضُوۡنَ عَلٰی رَبِّہِمۡ وَ یَقُوۡلُ الۡاَشۡہَادُ ہٰۤؤُلَآءِ الَّذِیۡنَ کَذَبُوۡا عَلٰی رَبِّہِمۡ ۚ اَلَا لَعۡنَۃُ اللّٰہِ عَلَی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۙ۱۸﴾
আর যারা আল্লাহ্‌র সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে তাদের চেয়ে অধিক যালিম কে? তাদেরকে তাদের রবের সামনে উপস্থিত করা হবে এবং সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের রবের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছিল , সাবধান! আল্লাহ্‌র লা’নত যালিমদের উপর।
And who is more unjust than he who invents a lie about Allah ? Those will be presented before their Lord, and the witnesses will say, “These are the ones who lied against their Lord.” Unquestionably, the curse of Allah is upon the wrongdoers.
الَّذِیۡنَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ یَبۡغُوۡنَہَا عِوَجًا ؕ وَ ہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ ﴿۱۹﴾
যারা আল্লাহ্‌র পথে বাধা দেয় এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; আর এরাই তো আখিরাত অস্বিকারকারী।
Who averted [people] from the way of Allah and sought to make it [seem] deviant while they, concerning the Hereafter, were disbelievers.
اُولٰٓئِکَ لَمۡ یَکُوۡنُوۡا مُعۡجِزِیۡنَ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا کَانَ لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مِنۡ اَوۡلِیَآءَ ۘ یُضٰعَفُ لَہُمُ الۡعَذَابُ ؕ مَا کَانُوۡا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ السَّمۡعَ وَ مَا کَانُوۡا یُبۡصِرُوۡنَ ﴿۲۰﴾
তারা (সমগ্র) ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহকে ব্যর্থ করতে পারত না, আর তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারীও ছিল না। ওদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। ওরা শুনতে সক্ষম ছিল না এবং দেখতও না।
Those were not causing failure [to Allah ] on earth, nor did they have besides Allah any protectors. For them the punishment will be multiplied. They were not able to hear, nor did they see.

اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ وَ ضَلَّ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ ﴿۲۱﴾
এরা তো নিজেদেরই ক্ষতি করল এবং তারা মিথ্যা রটনা করত তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেল ।
Those are the ones who will have lost themselves, and lost from them is what they used to invent.

لَا جَرَمَ اَنَّہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ ہُمُ الۡاَخۡسَرُوۡنَ ﴿۲۲﴾
এটা সুনিশ্চিত যে, পরকালে তারাই হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
Assuredly, it is they in the Hereafter who will be the greatest losers.

সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১৮-২২ নং আয়াত:-
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ؕ
আর ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে?
And who is more unjust than he who invents a lie about Allah ?
১৮-২২ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল লোকদের কথা বর্ণনা করছেন যারা আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করা, সৎপথ হতে মানুষকে বাধা দেয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা যে প্রকারের মিথ্যাই হোক না কেন। তাঁর সাথে শরীক করে, অথবা তাঁর জন্য এমন গুণ বর্ণনা করে যা তাঁর জন্য সমীচীন নয়। অথবা নবুওয়াতের দাবী করে, সে হবে সবচেয়ে বড় অত্যাচারী। তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে আর তাদের সাক্ষীরা তাদের ব্যাপারে বলবে যে, তারা ঐ সমস্ত লোক যারা আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করেছিল। আর তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত। এর ব্যাখ্যা হাদীসে এভাবে দেয়া হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা একজন মু’মিন ব্যক্তিকে তার পাপের কথা স্বীকার করাবেন, তিনি বলবেন, তুমি কি জান, তুমি অমুক অমুক পাপ করেছ? সে ব্যক্তি তা স্বীকার করে বলবে, হ্যাঁ, আমি করেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি সেই পাপসমূহ পৃথিবীতে প্রকাশ করিনি। যাও আজও তা ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু কাফিরদের ব্যাপারে এমন হবে যে, তাদেরকে সাক্ষীদের সম্মুখে ডাকা হবে এবং সাক্ষীগণ এ সাক্ষ্য দেবে যে, এরাই ঐ সমস্ত লোক, যারা নিজেদের প্রতিপালকের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা হূদ)

সুতরাং তাদের এই মিথ্যারোপ করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কঠিন শাস্তি দেবেন, তাদের ওপর লা‘নত বর্ষিত হবে। আর তারা ছিল মূলত কাফির। তারা ইসলামে বক্রতা অন্বেষণ করত, তারা চেষ্টা করত কিভাবে মানুষকে সৎ পথ থেকে বিরত রাখা যায়। তারা কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে তা মানুষের নিকট প্রচার করত আর মানুষদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধা প্রদান করত। তারা আখিরাত, পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসের প্রতি ঈমান আনত না। তাদের এই সমস্ত অপরাধের কারণে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ زِدْنٰهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يُفْسِدُوْنَ)‏

“আমি শাস্তি‎র পর শাস্তি‎ বৃদ্ধি করব কাফিরদের ও আল্লাহর পথে বাধাদানকারিদের; কারণ তারা অশান্তি‎ সৃষ্টি করত।” (সূরা নাহল ১৬:৮৮)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

حَتّٰيٓ إِذَا ادَّارَكُوْا فِيْهَا جَمِيْعًا لا قَالَتْ أُخْرٰهُمْ لِأُوْلٰهُمْ رَبَّنَا هٰٓؤُلَا۬ءِ أَضَلُّوْنَا فَاٰتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ ﺋ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ

“এমনকি যখন সকলে তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দাও। ‘আল্লাহ বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:৩৮)

তাদের অস্বীকার ও অপছন্দ করার বিষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, তাদেরকে যে কান দেয়া হয়েছিল তা দিয়ে তারা কোন হক জিনিস শ্রবণ করত না এবং যে চক্ষু দেয়া হয়েছিল তা দিয়ে তারা হক জিনিস দেখত না। বরং সকল বাতিল জিনিস দেখেছে ও শুনেছে ফলে তাদের এই সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ কোন কাজে আসেনি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَمَآ أَغْنٰي عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلَآ أَبْصَارُهُمْ وَلَآ أَفْئِدَتُهُمْ مِّنْ شَيْءٍ)

“কিন্তু তাদের কান, চোখ ও হৃদয় তাদের কোনো কাজে আসল না।” (সূরা আহক্বাফ ৪৬:২৬)

তারা হক শ্রবণে বধির ও হক দর্শনে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যেমন তাদেরকে যখন জাহান্নামে দেয়া হবে তখন তারা বলবে,

(وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِيْٓ أَصْحٰبِ السَّعِيْرِ)

“এবং তারা আরো বলবে: যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।” (সূরা মূলক ৬৭:১০) আর তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ব্যতীত যে সমস্ত উপাস্য গ্রহণ করেছিল সেদিন তারা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে আর তাদের উপসনাকারীরাই হবে সেদিন সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।

সুতরাং কাফির-মুশরিকদের পরিস্থিতি কেমন হবে তা অনুমেয় এবং তারা যাদেরকে মা‘বূদ হিসেবে ডাকত তারা সেদিন উধাও হয়ে যাবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করা যাবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপকারী সবচেয়ে বড় অত্যাচারী।
৩. আল্লাহ তা‘আলার পথে মানুষকে বাধা দেয়া যাবে না।
৪. কান দিয়ে ভাল জিনিস শুনতে হবে এবং চোখ দিয়ে ভাল জিনিস দেখতে হবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৮-২২ নং আয়াতের তাফসীর

যে সব লোক আল্লাহ তাআ’লার উপর মিথ্যা আরোপ করে, পরকালে তাদের ফেরেশতামন্ডলী, রাসূল, নবী এবং সমস্ত মানব ও দানব জাতির সামনে অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। হযরত সফওয়ান ইবনু মুহরিয্‌ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (একদা) আমি হযরত ইবনু উমারের (রাঃ) হাত ধরেছিলাম, এমন সময় একটি লোক তার কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো: “কিয়ামতের দিন গোপন আলাপ সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) কিরূপ বলতে শুনেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই মহা মহিমান্বিত আল্লাহ মু’মিন বান্দাকে নিজের নিকটবর্তী করবেন, এমনকি তিনি স্বীয় বাহুটি তার উপর রাখবেন এবং তাকে জনগণের দৃষ্টির অন্তরালে করবেন। অতঃপর তিনি তাকে তার গুনাহগুলির স্বীকারোক্তি করতে গিয়ে বলবেনঃ ‘অমুক পাপকার্য তোমার জানা আছে কি? অমুক শুনাহ তুমি জান কি? অমুক পাপকার্য সম্পর্কে তোমার অবগতি আছে কি?’ ঐ মু’মিন বান্দা তার পাপকার্যগুলি স্বীকার করতে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত সে মনে করবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। ঐ সময় পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে বলবেনঃ “হে আমার বান্দা! দুনিয়ায় আমি তোমার এই গুনাহগুলি ঢেকে রেখেছিলাম। জেনে রেখো যে, আজকেও আমি ওগুলি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর তাকে তার পুণ্যের আমলনামা প্রদান করা হবে। পক্ষান্তরে কাফির ও মুনাফিকদের উপর তো সাক্ষীদেরকে পেশ করা হবে। তারা বলবেঃ “এরা ঐ লোক যারা নিজেদের প্রতিপালকের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা আরোপ করেছিল, জেনে রেখো যে, এমন অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর লা’নত।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিমও (রঃ) নিজ নিজ সহীহ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবি) অর্থাৎ যে লোকগুলি জনগণকে সত্যের অনুসরণ করতে এবং হিদায়াতের পথে চলতে বাধা প্রদান করে থাকে, যে পথ অনুসরণ করলে তারা মহা মহিমান্বিত আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর তারা কামনা করে থাকে যে, তাদের পথ যেন সোজা না হয়ে বক্র হয় এবং আখেরাতের দিনকেও তারা স্বীকার করে না। অর্থাৎ কিয়ামত যে একদিন সংঘটিত হবে তা তারা বিশ্বাস করে না।

আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি) তারা ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহকে অক্ষম করতে পারে নাই, আর না তাদের জন্যে আল্লাহ ছাড়া কেউ সহায়ক হলো। অর্থাৎ তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অধীনস্থ। সব সময় তিনি তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে সক্ষম। তিনি ইচ্ছা করলে আখেরাতের পূর্বে দুনিয়াতেই তাদেরকে পাকড়াও করতে পারেন। কিন্তু তার পক্ষ থেকে তাদেরকে অল্প দিনের জন্যে অবকাশ দেয়া হয়েছে এবং শাস্তিকে ত্বরান্বিত না করে বিলম্বিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “কিন্তু তিনি তাদেরকে শুধু অবকাশ দিয়ে রেখেছেন সেইদিন পর্যন্ত, যেইদিন তাদের চক্ষুগুলি বিস্ফোরিত হয়ে থাকবে।” (১৪: ৪২)।

সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে রয়েছেঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন, অবশেষে যখন ধরেন তখন আর ছেড়ে দেন না। এ জন্যেই আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ ‘এরূপ লোকদের জন্যে দ্বিগুণ শাস্তি হবে।’ কারণ তারা আল্লাহর দেয়া শক্তিকে কাজে লাগায় নাই। সত্য কথা শোনা হতে কানকে বধির করে রেখেছে এবং সত্যের অনুসরণ হতে চক্ষুকে অন্ধ করে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা তাদের জাহান্নামে প্রবেশের সময়ের খবর দিয়েছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা বলবে- যদি আমরা শুনতাম কিংবা বুঝতাম, তবে আমরা দুযখবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না।” (৬৭: ১০)

আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথ হতে বাধা দিয়েছে, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করবো।” (১৬: ৮৮) এ জন্যেই তাদের প্রত্যাখ্যাত প্রতিটি আদেশের উপর ও প্রতিটি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার উপর তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। সুতরাং সর্বাধিক সঠিক উক্তি এই যে, আখেরাতের সম্পর্কের দিক দিয়ে কাফিরগণও শরীয়তের শাখাগুলি পালন করতে আদিষ্ট রয়েছে।

আল্লাহ তাআ’লার উক্তিঃ “এরা সেই লোক যারা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করে ফেলেছে, আর যেসব উপাস্য তারা গড়ে রেখেছিল, তাদের দিক থেকে ওরা সবাই উধাও হয়ে গেছে।” অর্থাৎ তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে। কারণ তারা গরম আগুনের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং ওর মধ্যেই তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। ক্ষণিকের জন্যেও ঐ শাস্তি হালকা করা হবে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “যখন অগ্নি শিখা প্রশমিত হবে তখন আমি ওর জ্বলন্ত তেজ আরো বাড়িয়ে দেবো।”

আল্লাহ ছাড়া যেসব উপাস্য দেবতা তারা গড়িয়ে নিয়েছিল ঐদিন সেগুলো তাদের কোনই উপকারে আসবে না। বরং তাদের সর্বপ্রকারের ক্ষতি সাধন করবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “যখন জনগণকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে তখন তাদের উপাস্য দেবতাগুলো তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে তারা অস্বীকার করে বসবে।” অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য উপাস্য নির্ধারিত করে নিয়েছে, যেন তারা তাদের জন্যে সম্মানের উপলক্ষ্য হয়। কখনই নয়, ওরা তো এদের উপাসনাই অস্বীকার করে বসবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে দাঁড়াবে।”

হযরত (ইবরাহীম) খলিল (আঃ) তাঁর কওমকে বলেছিলেনঃ “তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যান্য উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, পার্থিব জীবনে তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বজায় থাকবে বটে, কিন্তু কিয়ামতের দিন তোমাদের একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরের উপর লা’নত করবে, আর তোমাদের আশ্রয় স্থান হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “(কিয়ামতের দিন) শাস্তি অবলোকন করার সময় অনুসৃত লোকেরা অনুসারী লোকদের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।” এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে যেগুলি তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সংবাদ দেয়। নিঃসন্দেহে এই লোকগুলিই কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা, তারা জান্নাতের প্রকোষ্ঠের পরিবর্তে জাহান্নামের গর্তকে গ্রহণ করেছে। তারা গ্রহণ করে নিয়েছে আল্লাহর নিয়ামতরাশির পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনকে। আরো গ্রহণ করেছে বেহেশতের সুমিষ্টি ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে দুযখের অগ্নিতুল্য গরম পানিকে। ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট্য হূরের পরিবর্তে তারা রক্ত পূজকেই কবুল করে নিয়েছে। আর তারা কবুল করে নিয়েছে সুউচ্চ ও সুদৃশ্য প্রাসাদমালার পরিবর্তে জাহান্নামের সঙ্কীর্ণ আবাসস্থানগুলি। পরম করুণাময় আল্লাহর নৈকট্য ও দর্শন লাভের পরিবর্তে তারা লাভ করেছে। তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি। সুতরাং এটা সুনিশ্চিত যে, আখেরাতে এরাই হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তাঁর বন্দেগী লাভ করার অধিকারে অন্যকে শরীক করার কথা বলে। অথবা একথা বলে যে, নিজের বান্দাদের হেদায়াত ও গোমরাহীর ব্যাপারে আল্লাহর কোন আগ্রহ নেই এবং তিনি আমাদের পথ দেখাবার জন্য কোন কিতাব ও কোন নবী পাঠাননি। বরং তিনি আমাদের স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন, যেভাবে ইচ্ছা আমরা আমাদের জীবন যাপন করতে পারি। অথবা বলে, আল্লাহ‌ এমনি খেলাচ্ছলে আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সেভাবে আমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না। কাজেই আমাদের কোন পুরস্কার বা শাস্তিও লাভ করতে হবে না।

# এটা হচ্ছে আখেরাতের জীবনের বর্ণনা। সেখানে এ ঘোষণা দেয়া হবে।

# এটা প্রসঙ্গক্রমে মাঝখানে বলা একটা বাক্য। যেসব জালেমের ওপর পরকালে আল্লাহর লানতের কথা ঘোষণা করা হবে তারা হবে এমনসব লোক যারা আজ দুনিয়ায় এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।

# তাদের সামনে এই যে সোজা পথ পেশ করা হচ্ছে এ পথ তারা পছন্দ করে না। তারা চায় এ পথ যদি তাদের মানসিক প্রবৃত্তি এবং তাদের জাহেলী স্বার্থ প্রীতি-বিদ্বেষ ও তাদের ধারণা-কল্পনা অনুযায়ী বাঁকা হয়ে যায় তাহলেই তারা তা গ্রহণ করবে।

# এখানে আবার আখেরাতের জীবনের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।

# একটি আযাব হবে নিজের গোমরাহ হবার জন্য এবং আর একটি আযাব হবে অন্যদেরকে গোমরাহ করার এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য গোমরাহীর উত্তরাধিকার রেখে যাবার জন্য। (দেখুন সূরা আরাফের ৩০ টীকা)

# তারা আল্লাহ, বিশ্ব-জগত এবং নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে যেসব মতবাদ তৈরী করে নিয়েছিল তা সবই ভিত্তিহীন হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের উপাস্য, সুপারিশকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের ওপর যেসব আস্থা স্থাপন করেছিল সেগুলোও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। আর মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে যেসব চিন্তা-অনুমান করে রেখেছিল তাও ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-

# এটা হচ্ছে আখেরাতের জীবনের বর্ণনা। সেখানে এ ঘোষণা দেয়া হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন ঈমানদারকে রাববুল আলামীনের এত নিকটে আনা হবে যে, আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের কাঁধে হাত রেখে তার গুনাহ সমূহের স্বীকারোক্তি আদায় করিয়ে নেবেন। তাকে জিজ্ঞেস করবেন, অমুক গুনাহ জানা আছে কি? মনে আছে কি? ঈমানদার বলবে, হে আমার প্রভু, আমি আমার গুনাহর কথা স্বীকার করছি, এমন এমন গুনাহ অবশ্যই আমার থেকে সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং এভাবে দু’বার ঈমানদার স্বীকার করবে। তারপর আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার গুনাহ সমূহ ও অপরাধ গোপন রেখেছি। কিন্তু আজ তোমাকে মাফ করে দিচ্ছি। তারপর সৎকাজ সমূহের আমলনামা ভাঁজ করে তাকে দেয়া হবে। পক্ষান্তরে অপর দল তথা কাফেরদেরকে সাক্ষী-সমক্ষে ডেকে বলা হবে, এরাই ছিল সেসব লোক, যারা তাদের রবের উপর মিথ্যারোপ করেছিল। সাবধান! আল্লাহর লা’নত যালিমদের উপর।” [বুখারীঃ ৪৬৮৫]

[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যালেমকে ছাড় দিতে থাকেন শেষ পর্যন্ত যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার পক্ষে আর পালানো বা হস্তচ্যুত হওয়া সম্ভব হয় না।” [বুখারীঃ ৪৬৮৬, মুসলিমঃ ২৫৮৩]

[২] একটি আযাব হবে নিজের গোমরাহ হবার জন্য এবং আর একটি আযাব হবে অন্যদেরকে গোমরাহ করার [সা’দী] [এ ব্যাপারে আরো দেখুন, সূরাঃ আন-নাহলঃ ৮৮. আল-আরাফঃ ৩৮]

[৩] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে কাফের-মুশরিকদের ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন যে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জাহানেই আল্লাহ্‌র আনুগত্যে সক্ষম হবে না। দুনিয়াতে তারা আনুগত্য করতে সক্ষম হবে না যেমন এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “তাদের শুনার সামর্থ্যও ছিল না এবং ওরা দেখতেও পেত না”। আর আখেরাতের ব্যাপারে বলেছেনঃ “সেদিন তাদেরকে ডাকা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না; তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে” [সূরা আল-কালামঃ ৪২-৪৩]
# তারা আল্লাহ, বিশ্ব-জগত এবং নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে যেসব মতবাদ তৈরী করে নিয়েছিল তা সবই ভিত্তিহীন হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের উপাস্য, সুপারিশকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের ওপর যেসব আস্থা স্থাপন করেছিল সেগুলোও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। আর মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে যেসব চিন্তা-অনুমান করে রেখেছিল তাও ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। তারা তখন সত্যিই বুঝতে পারবে যে, তারা প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, আল্লাহ বলেনঃ “ যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন ঐগুলো হবে তাদের শক্র এবং ঐগুলো তাদের ‘ইবাদাত অস্বীকার করবে।” [সূরা আল-আহকাফঃ ৬] আরো বলেনঃ “তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ গ্রহণ করে এজন্যে যাতে ওরা তাদের সহায় হয়; কখনই নয়, ওরা তো তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।” [সূরা মারইয়ামঃ ৮১, ৮২] আরো বলেনঃ “ইব্‌রাহীম বললেন, তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তিগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছ, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পারিক বন্ধুত্বের খাতিরে। পরে কিয়ামতের দিন তোমরা একে অন্যকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে লা’নত দেবে। তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” [সূরা আল-আনকাবৃতঃ ২৫] আরো বলেনঃ “যখন নেতারা অনুসারীদের দায়িত্ব অস্বীকার করবে এবং তারা শাস্তি দেখতে পাবে ও তাদের পারস্পারিক সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে”। [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৬৬]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

# [১] অর্থাৎ, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ইহজগৎ পরিচালনা বা পরজগতে সুপারিশ করার ক্ষমতা দেননি, তাদের সম্পর্কে বলা যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এই ক্ষমতা বা এখতিয়ার দিয়েছেন।

[২] এর ব্যাখ্যা হাদীসে এইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা একজন মু’মিন ব্যক্তিকে তার পাপের কথা স্বীকার করাবেন, তিনি বলবেন, তুমি জান, তুমি অমুক অমুক পাপকাজ করেছ? সে ব্যক্তি তা স্বীকার করে বলবে, হ্যাঁ, আমি করেছি। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি সেই পাপসমূহকে পৃথিবীতেও প্রকাশ করিনি। যাও আজও তা ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু অন্য লোক বা কাফেরদের ব্যাপার এমন হবে যে তাদেরকে সাক্ষীদের সম্মুখে ডাকা হবে এবং সাক্ষী এই সাক্ষ্য দেবে যে, এরাই ঐ সমস্ত লোক, যারা নিজেদের প্রতিপালকের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।” (বুখারীঃ তফসীর সূরা হূদ)

# মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার জন্য তাতে বক্রতা ও দোষ বের করার চেষ্টা করত এবং লোকদেরকে সে ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ করত।

# তাদের সত্যকে অস্বীকার ও অপছন্দ করার ব্যাপার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, তারা তা শুনতে ও দেখতে সক্ষম ছিল না। অথবা এর অর্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা তো তাদেরকে কর্ণ ও চক্ষু দিয়েছিলেন; কিন্তু তার দ্বারা তারা হক কথা না শ্রবণ করেছে আর না হক দর্শন করেছে। ঠিক যেন (فَمَا أَغْنَى عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلا أَبْصَارُهُمْ وَلا أَفْئِدَتُهُمْ مِنْ شَيْء) “তাদের কর্ণ, তাদের চক্ষু ও তাদের হৃদয় তাদের কোন কাজে আসেনি।” (সূরা আহক্বাফ ৪৬:২৬) কারণ তারা হক শ্রবণে বধির ও হক দর্শনে অন্ধ হয়ে ছিল। যেমন তারা জাহান্নামে প্রবেশ করার সময় (আফসোস) করে বলবে, (لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِير) অর্থাৎ, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।” (সূরা মুলক ৬৭:১০)

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 18-22
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ؕ
And who is more unjust than he who invents a lie about Allah ?

Those Who invent Lies against Allah and hinder Others from His Path are the Greatest Losers

Allah, the Exalted says,

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أُوْلَـيِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الَاشْهَادُ

And who does more wrong than he who invents a lie against Allah. Such will be brought before their Lord, and the witnesses will say,

Allah, the Exalted, explains the condition of those who lie against Him and that their scandal in the Hereafter will be presented before the heads of creation (for testimony) from the angels, Messengers, Prophets and the rest of mankind and Jinns.

This is just as Imam Ahmad recorded from Safwan bin Muhriz. Safwan said,

“I was holding the hand of Ibn Umar when a man was brought to him. The man said, `How did you hear the Messenger of Allah describe An-Najwa (secret counsel or confidential talk) on the Day of Resurrection?”

Ibn Umar said, `I heard him say,

إِنَّ اللهَ

عزَّ وَجَلَّ يُدْنِي الْمُوْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ

وَيُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ

وَيَقُولُ لَهُ أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا

أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا

أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا

حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوبِهِ وَرَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ قَدْ هَلَكَ

قَالَ فَإِنِّي قَدْ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَإِنِّي أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْم

Verily, Allah, the Mighty and Sublime, will draw near the believer and He will place His shade over him. He will conceal him from the people and make him confess to his sins.

He will say to him, “Do you recognize this sin?

Do you recognize that sin?

Do you recognize such and such sin?”

This will continue until He makes him confess to all of his sins and he (the believer) will think to himself that he is about to be destroyed.

Then Allah will say, “Verily, I have concealed these sins for you in the worldly life and I have forgiven you for them today.”

Then he (the believer) will be given his Book of good deeds.

As for the disbelievers and the hypocrites, the witnesses will say,

هَـوُلاء الَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى رَبِّهِمْ

أَلَا لَعْنَةُ اللّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ

These are the ones who lied against their Lord! No doubt! The curse of Allah is on the wrongdoers.”

Both Al-Bukhari and Muslim recorded this narration in the Two Sahihs.

Concerning Allah’s statement.

الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا

Those who hinder (others) from the path of Allah, and seek a crookedness therein,

This means that they prevent the people from following the truth and traversing upon the path of guidance that leads to Allah, the Mighty and Sublime. In doing so they also keep the people away from Paradise itself.

Allah’s statement,
وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا
(and seek a crookedness therein),

This means that they want their path to be crooked and uneven.

Then, Allah’s statement,

وَهُم بِالاخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ

while they are disbelievers in the Hereafter.

This means that they deny the Hereafter and they reject the idea that any of its events will occur, or any of it exists at all.

Concerning Allah’s statement.

أُولَـيِكَ لَمْ يَكُونُواْ مُعْجِزِينَ فِي الَارْضِ وَمَا كَانَ لَهُم مِّن دُونِ اللّهِ مِنْ أَوْلِيَاء

By no means will they escape on earth, nor have they protectors besides Allah!

This means that these disbelievers are under the power of Allah and His force. They are in His grasp and are subject to His authority. He is Most Able to exact vengeance against them in this life before the coming of the Hereafter.

This is like Allah’s statement,

إِنَّمَا يُوَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الَابْصَـرُ

but He gives them respite up to a Day when the eyes will stare in horror. (14:42)

In the Two Sahihs it is recorded that the Prophet said,

إِنَّ اللهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْه

Verily Allah gives respite to the oppressor until He seizes him, then he will not be able to escape Him.

For this reason Allah says,

يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُ

Their torment will be doubled!

This means that the torment will be doubled upon them, because Allah gave them hearing, vision and hearts, but these things did not benefit them. Rather, they were deaf from hearing the truth and blinded away from following it. This is just as Allah has mentioned concerning them when they enter into the Hellfire.

Allah says,

وَقَالُواْ لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِى أَصْحَـبِ السَّعِيرِ

And they will say:”Had we but listened or used our intelligence, we would not have been among the dwellers of the blazing Fire!” (67:10)

Allah also says,

الَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّواْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ زِدْنَـهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ

Those who disbelieved and hinder (men) from the path of Allah, for them We will add torment to the torment. (16:88)

مَا كَانُواْ يَسْتَطِيعُونَ السَّمْعَ وَمَا كَانُواْ يُبْصِرُونَ

They could not bear to listen and they used not to see (the truth).

For this reason they will be punished for every command that they abandoned and every prohibition that they indulged in.

Then Allah continues by saying.
أُوْلَـيِكَ الَّذِينَ خَسِرُواْ أَنفُسَهُمْ

They are those who have lost their own selves,

They lost themselves, meaning that they be made to enter a blazing Fire, where they will be punished, and its torment will not be lifted from them for even the blinking of an eye.

This is as Allah said,

كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا

Whenever it abates, We shall increase for them the fierceness of the Fire. (17:97)

Concerning the statement,

وَضَلَّ عَنْهُم

and eluded them,

meaning that it has left them.

مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ

that which they invented.

besides Allah, such as rivals and idols. Yet, these things did not avail them in the slightest. In fact, these things actually caused them great harm.

This is as Allah says,

وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُواْ لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمْ كَـفِرِينَ

And when mankind are gathered, they will become their enemies and will deny their worshipping. (46:6)

Allah says,

إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُواْ مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الاٌّسْبَابُ

When those who were followed disown those who followed (them), and they see the torment, then all their relations will be cut off from them. (2:166)

Likewise, there are many other verses that prove this loss of theirs and their destruction.

For this reason Allah says,

لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الااخِرَةِ هُمُ الَاخْسَرُونَ
Certainly, they are those who will be the greatest losers in the Hereafter.

In this verse Allah informs about the direction of their end. He explains that they are the greatest losers among mankind in their transaction for the abode of the Hereafter.

That is because they exchanged the highest levels (of Paradise) for the lowest levels (of Hell) and they substituted the pleasure of Gardens (of Paradise) for the fierce boiling water (of Hell).

They exchanged the drink of sealed nectar with the fierce hot wind, boiling water, and a shade of black smoke.

They chose food from the filth of dirty wounds instead of wide-eyed lovely maidens. They preferred Hawiyah (a pit in Hell) instead of lofty castles.

They chose the anger of Allah and His punishment over nearness to Him and the blessing of gazing at Him.

Therefore, it is no injustice that such people should be the greatest losers in the Hereafter.

Leave a Reply