أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 708)
.[ نِّیۡ تَوَکَّلۡتُ عَلَی اللّٰہِ رَبِّیۡ وَ رَبِّکُمۡ
আমি তো নির্ভর করি আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ্র উপর;
I put my trust in Allah, my Lord and your Lord.]
www.motaher21.net
قَالُوۡا یٰہُوۡدُ مَا جِئۡتَنَا بِبَیِّنَۃٍ وَّ مَا نَحۡنُ بِتَارِکِیۡۤ اٰلِہَتِنَا عَنۡ قَوۡلِکَ وَ مَا نَحۡنُ لَکَ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۵۳﴾
তারা বলল, ‘হে হূদ! তুমি তো আমাদের সামনে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করনি। আর তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে বর্জন করব না এবং আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী নই।
They said, “O Hud, you have not brought us clear evidence, and we are not ones to leave our gods on your say-so. Nor are we believers in you.
اِنۡ نَّقُوۡلُ اِلَّا اعۡتَرٰىکَ بَعۡضُ اٰلِہَتِنَا بِسُوۡٓءٍ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اُشۡہِدُ اللّٰہَ وَ اشۡہَدُوۡۤا اَنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّمَّا تُشۡرِکُوۡنَ ﴿ۙ۵۴﴾
আমাদের কথা তো এই যে, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে হতে কেউ তোমাকে মন্দ দ্বারা স্পর্শ করেছে।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাক, তোমরা যে অংশী করছ নিশ্চিতভাবে আমি তা হতে মুক্ত।
We only say that some of our gods have possessed you with evil.” He said, “Indeed, I call Allah to witness, and witness [yourselves] that I am free from whatever you associate with Allah.
مِنۡ دُوۡنِہٖ فَکِیۡدُوۡنِیۡ جَمِیۡعًا ثُمَّ لَا تُنۡظِرُوۡنِ ﴿۵۵﴾
সুতরাং তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে, তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাও। অতঃপর আমাকে সামান্য অবকাশও দিয়ো না।
Other than Him. So plot against me all together; then do not give me respite.
اِنِّیۡ تَوَکَّلۡتُ عَلَی اللّٰہِ رَبِّیۡ وَ رَبِّکُمۡ ؕ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ اِلَّا ہُوَ اٰخِذٌۢ بِنَاصِیَتِہَا ؕ اِنَّ رَبِّیۡ عَلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۵۶﴾
আমি তো নির্ভর করি আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ্র উপর; এমন কোন জীব-জন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়াত্তাধীন নয় ; নিশ্চয় আমার রব আছেন সরল পথে।
Indeed, I have relied upon Allah, my Lord and your Lord. There is no creature but that He holds its forelock. Indeed, my Lord is on a path [that is] straight.”
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৫৩-৫৬ নং আয়াত:-
اِنِّیۡ تَوَکَّلۡتُ عَلَی اللّٰہِ رَبِّیۡ وَ رَبِّکُمۡ
আমি তো নির্ভর করি আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ্র উপর;
I put my trust in Allah, my Lord and your Lord.
৫৩-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লা সংবাদ দিচ্ছেন যে, হযরত হূদের (আঃ) কওম তাঁর উপদেশ শুনে তাঁকে বললো: “হে হূদ (আঃ)! তুমি যেই দিকে আমাদেরকে আহ্বান করছে তার তো কোন দলিল প্রমাণ আমাদের সামনে পেশ করছো না। আর আমরা এটা করতে পারি না যে, তোমার কথায় আমাদের মাবুদমা’বুদগুলির উপাসনা পরিত্যাগ করবো। আমরা এগুলি ছাড়বোও না এবং তোমাকে সত্যবাদী মেনে নিয়ে তোমার উপর ঈমানও আনবো না। বরং আমাদের তো ধারণা এই যে, যেহেতু তুমি আমাদেরকে আমাদের মাবুদমা’বুদগুলির উপাসনা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে এবং তাদের প্রতি দোষারোপ করছে, সেই হেতু তারা তোমার এই জ্বালাতন সহ্য করতে পারে নাই। তাই, তাদের কারো মার তোমার উপর পতিত হয়েছে। ফলে তোমার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে। তাদের এই কথা শুনে আল্লাহর নবী হযরত হূদ (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ ‘যদি তাই হয় তবে জেনে রেখোঁরেখো যে, আমি শুধু তোমাদেরকেই নয়, বরং স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লাকেও সাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ ছাড়া যেসব মা’বুদের ইবাদত করা হচ্ছে আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিমুখ ও মুক্ত। এখন শুধু তোমরা নও, বরং তোমাদের এই সব মিথ্যা ও বাজে মাবুদমা’বুদকেও ডেকে নাও এবং তোমরা সবাই মিলে যত পার আমার ক্ষতি সাধন কর। আর আমাকে মোটেই অবকাশ দিয়ো না এবং আমার প্রতি কোন সমবেদনাও প্রকাশ করো না। আমার ক্ষতি সাধন করার তোমাদের যতদূর ক্ষমতা থাকে তা প্রয়োগ করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করো না। আমার ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপর। যিনি আমার ও তোমাদের সকলেরই মালিক। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া আমার ক্ষতি করার কারো সাধ্য নেই। এমন কেউ নেই যে, তাঁর হুকুম অমান্য করে তাঁর রাজ্য ও রাজত্ব হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তিনি ন্যায় বিচারক। তিনি কখনো অত্যাচার করেন না। তিনি সরল ও সঠিক পথে রয়েছেন। বান্দাদের ঝুটি তাঁর হাতের মুঠের মধ্যে রয়েছে। সন্তানের উপর পিতামাতার যে দয়া রয়েছে, মুমিনমু’মিন বান্দার উপর আল্লাহর দয়া এর চেয়ে বহুগুণ বেশি রয়েছে। তিনি পরমদাতা ও দয়ালু। তাঁর দান ও দয়ার কোন শেষ নেই। এ কারণেই কতকগুলি লোক বিভ্রান্ত ও উদাসীন হয়ে পড়ে।’
হযরত হূদের (আঃ) এই কথাগুলির প্রতি লক্ষ্য করা যাক। তিনি আদি সম্প্রদায়ের জন্যে তাঁর এই উক্তির মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের বহু দলিল বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ ছাড়া কেউ যখন লাভ ও ক্ষতির মালিক নয়, তিনি ছাড়া কারো কোন জিনিসের উপর যখন কোন অধিকার নেই, তখন একমাত্র তিনিই যে উপাসনার যোগ্য এটা প্রমাণিত হয়ে গেল। আর তোমরা তাকে ছাড়া যে সব মা’বুদের ইবাদত করছো সেই সবগুলি বাতিল সাব্যস্ত হলো। আল্লাহ তাআ’লা তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। আধিপত্য, ব্যবস্থাপনা, অধিকার এবং ইখতেয়ার একমাত্র তাঁরই। সবাই তাঁর কর্তৃত্বাধীন। তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
সুতরাং তোমরা আমার কথার বিরুদ্ধাচরণ করে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং কুফরীর ওপর অটল থেকো না। এ কথা শুনে হূদ (عليه السلام)-এর সম্প্রদায় দলীল-প্রমাণ পেশ করতে বলল এবং তাদের ধারণা ছিল যে, যেহেতু হূদ তাদের উপাস্যদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করছে সেহেতু সেই উপাস্যদের বদদু‘আ তাঁর ওপর পড়েছে এবং তাঁর মস্তিষ্ক নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সে দলীল আনতে অক্ষম হবে। আর তারা বলল, কোন দলীল-প্রমাণ ব্যতীত আমরা তোমার কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করতে পারি না। তাদের এ কথা শুনে হূদ (عليه السلام) তাদেরকে বললেন, যদি ব্যাপার এমনই হয়, তাহলে আমি আল্লাহ তা‘আলাকে সাক্ষী রাখছি আর তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি তোমাদের এই সমস্ত বাতিল মা‘বূদ থেকে মুক্ত।
বর্তমানেও এই ধরনের কিছু নামধারী মুসলিম রয়েছে যারা গাছ পূজা, মাযার পূজা, কবর পূজা করে। তাদেরকে এ থেকে বারণ করলে তারা বলে এটা উপাস্য ব্যক্তিদের সাথে বেয়াদবী। সুতরাং তারা এই সমস্ত বেআদবদের বিপদগ্রস্ত করেন। نعوذ بالله অথচ তাদের কোন কিছুই করার ক্ষমতা নেই।
তখন হূদ (عليه السلام) বললেন, যদি তোমরা আমার এ কথায় বিশ্বাসী না হও তবে তোমরা ও তোমাদের সকল মা‘বূদরা মিলে কিছু করে দেখাও। আর আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার ওপরই ভরসা করলাম। যিনি সমস্ত ক্ষমতার মালিক। এরপরও যদি তোমরা বিশ্বাস না করে মুখ ফিরিয়ে নাও তবে মনে রেখ যে, আমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া। আমি আমার কাজ সমাপ্ত করলাম, যদি তোমরা না মান তবে হয়ত আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের পরিবর্তে এখানে অন্য এক জাতিকে পাঠাবেন যারা তাঁর আনুগত্য করবে ও তাঁর উপাসনা করবে। ফলে তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এমন কোন দ্ব্যর্থহীন আলামত অথবা কোন সুস্পষ্ট দলীল নিয়ে আসোনি যার ভিত্তিতে আমরা নিঃসংশয়ে জানতে পারি যে, আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছেন এবং যে কথা তুমি পেশ করছো তা সত্য।
# তুমি কোন দেব-দেবী, বা কোন মহাপুরুষের আস্তানায় গিয়ে কিছু বেয়াদবী করেছো, যার ফল এখন তুমি ভোগ করছো। এর ফলে তুমি আবোল-তাবোল কথা বলতে শুরু করেছো এবং গতকালও যেসব জনবসতিতে তুমি সম্মান ও মর্যাদা সহকারে বাস করছিলে আজ সেখানে গালিগালাজ ও মারধরের মাধ্যমে তোমাকে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে।
# তোমরা বলছো আমি কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে আসিনি অথচ ছোট ছোট সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করার পরিবর্তে আমি তো সবচেয়ে বড় আল্লাহর সাক্ষ্য পেশ করছি। তিনি তাঁর সমগ্র সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সহকারে সৃষ্টি জগতের সকল অংশে এবং তাঁর দীপ্তির প্রতিটি কণিকায় একথার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছেন যে, তোমাদের কাছে আমি যে সত্য বর্ণনা করেছি তা পুরোপুরি ও সম্পূর্ণ সত্য। তার মধ্যে মিথ্যার নাম গন্ধও নেই। অন্যদিকে তোমরা যেসব ধারণা-কল্পনা ও অনুমান দাঁড় করিয়েছো সেগুলো মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয় এবং সেগুলোর মধ্যে সত্যের গন্ধও নেই।
# তারা যে কথা বলে আসছিল যে, তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদের ত্যাগ করতে প্রস্তুত নই— এর জবাবেই একথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ আমার এ সিদ্ধান্তও শুনে রাখো, আমি তোমাদের এসব উপাস্যের প্রতি চরমভাবে বিরূপ ও অসন্তুষ্ট।
# ‘তোমার ওপর আমাদের কোন দেবতার অভিশাপ পড়েছে— তাদের এ বক্তব্যের জবাবেই একথা বলা হয়েছে। (তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা ইউনূস ৭১আয়াত )।
# তিনি যা কিছু করেন ঠিকই করেন। তাঁর প্রত্যেকটি কাজই সহজ-সরল। তিনি অন্ধকার ও অন্যায়ের রাজত্বে বাস করেন না। তিনি পূর্ণ সত্য ও ন্যায়ের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব করে যাচ্ছেন। তুমি পথভ্রষ্ট ও অসৎ কর্মশীল হবে এবং তারপরও আখেরাতে সফলকাম হবে আর আমি সত্য-সরল পথে চলবো ও সৎকর্মশীল হবো এবং তারপর ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল হবো, এটা কোনক্রমেই সম্ভবপর হতে পারে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# একজন নবী সর্বপ্রকার দলীল ও প্রমাণ পেশ করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু চামচিকা-চোখোদের তা নজরে আসে না। হূদ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ও ধৃষ্টতা প্রকাশ করে বলেছিল যে, আমরা প্রমাণ ব্যতীত শুধু তোমার কথামত আমাদের উপাস্যদেরকে কিভাবে বর্জন করব?
# [১] অর্থাৎ, তুমি যে আমাদের উপাস্যদের অপমান ও তাদের সাথে বেআদবী করছ এই কথা বলে যে, এরা কোন কিছু করতে সক্ষম নয়, মনে হচ্ছে আমাদের উপাস্যরাই তোমার এই বেআদবীর কারণে তোমার কিছু করে দিয়েছে এবং তাতে তোমার মন-মস্তিষ্ক খারাপ হয়ে গেছে। যেমন বর্তমানে নামধারী কিছু মুসলিমও এরূপ চিন্তা-ভাবনার শিকার হয়ে আছে। যখন তাদের বলা হয় যে, এই সকল মৃতব্যক্তি ও বুযুর্গদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। তখন তারা বলে যে, এটা তাঁদের শানে বেআদবী এবং বড় আশঙ্কা আছে যে, তাঁরা এরূপ বেআদবদেরকে বিপদগ্রস্ত করবেন! আল্লাহর কাছে এমন গাঁজারে গল্প ও মনগড়া মিথ্যা কথা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
[২] অর্থাৎ, আমি সেই সমস্ত মূর্তি ও উপাস্য থেকে সম্পর্কহীন। আর তোমাদের যে বিশ্বাস যে, তারা আমার কিছু ক্ষতি করে দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের এ ক্ষমতাই নেই যে, তারা কারোর উপকার করে অথবা অপকার।
# যদি আমার কথার উপর তোমাদের বিশ্বাস না হয়; বরং তোমরা নিজেদের এই দাবীতে সত্যবাদী হও যে, এই সকল মূর্তি কিছু করার ক্ষমতা রাখে, তাহলে এই নাও! আমি উপস্থিত আছি, তোমরা এবং তোমাদের উপাস্য সহ সকলে মিলে আমার বিরুদ্ধে কিছু করে দেখাও। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, নবী সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী হন। যার ফলে তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস থাকে যে, নিঃসন্দেহে তিনি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন।
# [১] অর্থাৎ, যে সত্তার হাতে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ আছে, তিনি সেই সত্তা যিনি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক। আমার সর্বপ্রকার ভরসা তাঁরই উপর রয়েছে। এই বাক্য দ্বারা হূদ (আঃ)-এর উদ্দেশ্য এই ছিল যে, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক করে রেখেছ, তাদের উপরেও একমাত্র আল্লাহরই ক্ষমতা ও কর্তৃতত্ত্ব আছে। আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে যা ইচ্ছা আচরণ করতে পারবেন; তারা কারোর কিছুই করতে পারবে না।
[২] অর্থাৎ, তিনি তওহীদের যে দাওয়াত দিচ্ছেন, নিঃসন্দেহে উক্ত দাওয়াতই হচ্ছে সরল সঠিক পথ। সেই পথ অবলম্বন করে তোমরা পরিত্রাণ ও কল্যাণ লাভ করতে পারবে। পক্ষান্তরে সেই সরল পথ বিচ্যুতি ও বিমুখতা ভ্রষ্টতা ও ধ্বংসের কারণ হবে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# আপনি আপনার দাবীর স্বপক্ষে এমন কোন দ্ব্যর্থহীন আলামত অথবা কোন সুস্পষ্ট দলীল নিয়ে আসেননি যার ভিত্তিতে আমরা নিসংশয়ে জানতে পারি যে, আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন এবং যে কথা আপনি পেশ করছেন তা সত্য। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] এখানে যদি কাফেররা তাদের পক্ষ থেকে দাবীকৃত কোন সুনির্দিষ্ট দলীল-প্রমাণের কথা বলে থাকে তবে সেটাই আনতে হবে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। বরং নবী-রাসূলগণ এমন নিদর্শন নিয়ে আসেন যা দেখে তাদের দাবীর সত্যতা ও বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। আর যদি তাদের উদ্দেশ্য হয় এটা যে, তিনি তাদের কাছে এমন কোন স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসেননি যা তার কথার সত্যতার প্রমাণ বহন করবে, তবে তারা মিথ্যা বলেছে। কেননা, প্রত্যেক নবীকেই তার কাওমের কাছে এমন কিছু নিদর্শন দিয়ে পাঠানো হয় যা দেখে কিছু লোক ঈমান আনে। এমনকি যদি তিনি একমাত্র আল্লাহর জন্য দ্বীনকে নির্দিষ্ট করা, তাঁর কোন শরীক না করা, প্রতিটি ভাল কাজ ও সুন্দর চরিত্রের প্রতি নির্দেশ প্রদান, প্রত্যেক খারাপ কাজ যেমন আল্লাহর সাথে শির্ক, অশ্লীলতা, যুলুম, অন্যায় কাজ কর্ম থেকে নিষেধকরণ, তাছাড়া হুদ আলাইহিসসালাম সে সমস্ত অনন্য গুণাবলীর অধিকারী হওয়া, যা কেবল ভাল ও সত্যনিষ্ঠ মানুষদেরই গুণ হয়ে থাকে, এগুলো ছাড়া আর কোন নিদর্শন না এনে থাকেন তাও তার সত্যবাদিতার জন্য নিদর্শন ও দলীল-প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। বরং বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা স্পষ্ট বুঝতে পারে যে অলৌকিক কিছুর চেয়েও এগুলো বেশী প্রমাণবহ। মু’জিযার মত কিছুর চেয়ে এগুলোর দাবী বেশী। তাছাড়া একজন লোক, যার কোন সাহায্য-সহযোগিতাকারী নেই, অথচ সে তার কাওমের মধ্যে চিৎকার করে আহবান করছে, তাদেরকে ডাকছে, তাদেরকে অপারগ করে দিচ্ছে এটা অবশ্যই তার সত্যতার উপর স্পষ্ট নিদর্শন। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন যে, “নিশ্চয় আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর, ‘আল্লাহ্ ছাড়া। সুতরাং তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর; তারপর আমাকে অবকাশ দিও না।” এটা তাদের সামনে ঘোষণা করছেন, যারা তার শক্র, যাদের রয়েছে প্রচুর ক্ষমতা ও প্রভাব। তারা চাচ্ছে যে কোনভাবে হোক তার কাছে যে আলো আছে সেটা নিভিয়ে দিতে, অথচ তিনি তাদের কোন প্রকার ভ্রক্ষেপ না করে, তাদের শক্তি-সামর্থ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে এ ঘোষণা দিয়েই চলেছেন। আর তারা তার কোন ক্ষতি করতে অপারগ হয়ে থাকল, এতে অবশ্যই বিবেকবান-জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। [সা’দী; ইবনুল কাইয়্যেম, মাদারেজুস সালেকীন: ৩/৪৩১]
# [১] হূদ আলাইহিসসালামের আহবানের জবাবে তার দেশবাসী মুর্খতা সুলভ উত্তর দিল যে, আপনি তো আমাদেরকে কোন মু’জিযা দেখালেন না। শুধু মুখের কথায় আমরা নিজেদের বাপ দাদার আমলের উপাস্য দেব-দেবীগুলোকে বর্জন করবো না এবং আপনার প্রতি ঈমানও আনব না। বরং সন্দেহ করছি যে আমাদের দেবতাদের নিন্দাবাদ করার কারণে আপনার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে গেছে। তাই আপনি এমন অসংলগ্ন কথা বলেছেন। অর্থাৎ আপনি কোন দেবদেবী, বা কোন মহাপুরুষের আস্তানায় গিয়ে কিছু বেয়াদবী করেছেন, যার ফল এখন আপনি ভোগ করছেন। এতে বুঝা গেল যে, তারা এক ধরনের অজানা ভয় করছিল – যা এক ধরনের শির্ক। সুবহানাল্লাহ! কিভাবে তারা এতবড় একজন বিবেকবান মানুষকে বিবেকহীন বলে অপবাদ দিলো। যদি আল্লাহ বর্ণনা না করতেন তবে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের নিঃস্বার্থ ও ভালো লোকের ব্যাপারে এ কথা বলা অত্যন্ত বেমানান। কিন্তু হুদ আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণভাবে নিজেকে এর থেকে বিমুক্ত ঘোষণা করেছেন এভাবে যে, এ ব্যাপারে আমার ভরসা আছে যে আমাকে কোন কিছু পেয়ে বসে নি। আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি আর তোমরাও সাক্ষী থেকো যে, আমি তোমাদের শরীকদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। [সা’দী] বর্তমানে অনেক মানুষ তাদের পীর বা কবরের মানত বন্ধ করলে বা তাদের কবর পুজার বিরোধিতা করলে কোন কারণে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এ ধরনের কথা বলে থাকে। তারা বলে যে, অমুক লোককে অমুক পীরের বদদো’আয় ধরেছে। অমুক কবরের শাপে অমুক ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে শির্ক। এটাকেই বলা হয়, ভয়ের মাধ্যমে শির্ক করা। এ ধরনের অজানা ভয়ই বর্তমানে অধিকাংশ শির্কের কারণ।
[২] অর্থাৎ তাদের কথার উত্তরে হুদ আলাইহিসসালাম নবীসুলভ নির্ভীক কষ্ঠে জবাব দিলেন, তোমরা যদি আমার কথা না মান তবে শোন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি আর তোমরাও সাক্ষী থাক যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সব অলীক উপাস্যদের প্রতি আমি রুষ্ট ও বিমুখ। এখন তোমরা ও তোমাদের দেবতারা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট সাধনের এবং আমার উপর আক্রমনের চেষ্টা করে দেখ আমাকে বিন্দুমাত্র অবকাশ দিও না। এত বড় কথা আমি এজন্য বলছি যে আমি আল্লাহ তা’আলার উপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখি; যিনি আমার এবং তোমাদের একমাত্র পালনকর্তা । নিশ্চয় আমার পালনকর্তা সরল পথে রয়েছেন। অথাৎ তিনি তাঁর যাবতীয় ফয়সালা, তাকদীর, তাঁর যাবতীয় শরীআত ও নির্দেশ, তাঁর সমস্ত প্রতিদান প্রদান, সওয়াব দান এবং শাস্তি প্রদানে ন্যায়, ইনসাফ, প্রজ্ঞা ও প্রশংসাপূর্ণ পথেই রয়েছেন। তার কোন কাজ তাকে প্রশংসাপূর্ণ সেই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে না। [সা’দী]
সমগ্র জাতির মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে এমন নির্ভীক ঘোষণা ও তাদের দীর্ঘ দিনের লালিত ধর্মীয় ধ্যান ধারণায় আঘাত হানা সত্বেও এত বড় সাহসী ও শক্তিশালী জাতির মধ্যে কেউ তার একটি কেশও স্পর্শ করতে পারল না। আসলে এটা হুদ আলাইহিসসালামের একটি মু’জিযা। এর দ্বারা একে তো তাদের এ কথার জবাব দেয়া হয়েছে যে, আপনি কোন মু’জিযা প্রদর্শন করেননি। দ্বিতীয়তঃ তারা যে বলত তাদের কোন কোন দেব-দেবী আপনার মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিয়েছে তাও বাতিল করা হল। কারণ দেব-দেবীর যদি কোন ক্ষমতা থাকত তবে এত বড় কথা বলার পর ওরা তাকে জীবিত রাখত না।
# তারা যে কথা বলে আসছিল যে, আপনার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদের ত্যাগ করতে প্রস্তুত নই -এর জবাবেই একথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ আমার এ সিদ্ধান্তও শুনে রাখো, আমি তোমাদের এসব উপাস্যের প্রতি চরমভাবে বিরূপ ও অসন্তুষ্ট।
# [১] পূর্বোক্ত বাক্যে তাদের দাবী ‘আপনার ওপর আমাদের কোন দেবতার অভিশাপ পড়েছে’ –তাদের এ বক্তব্যের জবাবেই একথা বলা হয়েছে। এর অর্থ প্রতিটি সৃষ্টিই তার সম্পূর্ণ কর্তৃত্বাধীন। আরবরা ‘ললাটের চুল’ কারো হাতে থাকা বলে কর্তৃত্ব থাকার কথা বুঝায় [তাবারী; মুয়াসসার] তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেটাকে ঘুরান, যেখান থেকে ইচ্ছা নিষেধ করেন। কেননা কেউ কারো ললাটের চুল ধরে ফেললে সে তার কর্তৃত্বাধীন হয়ে যায়। তাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘুরাতে পারে। [কুরতুবী] সুতরাং তোমরা আমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না। [কুরতুবী] অর্থাৎ সমস্ত জীব-জন্তুই যেহেতু তাঁর পূর্ণ কব্জায় সেহেতু তারা কিভাবে মুমিনের প্রতি কুদৃষ্টি বা অভিশাপ দিতে পারে? যারা আল্লাহ্র উপর ভরসা করে তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড আল্লাহ্ই দেখা-শুনা করবেন। এটাই তো স্বাভাবিক। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে এর অর্থ, তাঁর মুঠিতেই সমস্ত সৃষ্টিজীবের ভাগ্য নিহিত। [কুরতুবী] এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা ইউনূস ৭১ আয়াত।
[২] অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেন ঠিকই করেন। তাঁর প্রত্যেকটি কাজই সহজ সরল। তিনি পূর্ণসত্য ও ন্যায়ের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব করে যাচ্ছেন। তুমি পথ ভ্রষ্ট ও অসৎকর্মশীল হবে এবং তারপরও আখেরাতে সফলকাম হবে আর আমি সত্য-সরল পথে চলবো ও সৎকর্মশীল হবো এবং তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল হবো, এটা কোনক্রমেই সম্ভবপর হতে পারে না। তিনি যে সমস্ত নির্দেশ দেন তা তাদের প্রতি দয়াবশতঃ প্রদান করেন। তাদের প্রয়োজন পূরণার্থে, তাঁর নিজের কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। তিনি দয়া-দাক্ষিন্য, ইহসান ও রহমতের নিমিত্তে তাদেরকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নিজের কোন প্রযোজনে তা করেন নি। বান্দারা তাঁর কাছে কিছু পাবে সে হিসেবে তিনি দিচ্ছেন ব্যাপারটি এরকম নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে ন্যায়, ইনসাফ, হিকমত ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে যাকে যা দেবার তিনি দেবেন [ইবনুল কাইয়্যেম, মিফতাহু দারুস সা’আদাহ: ২/৭৯; মাদারেজুস সালেকীন, ৩/৪২৫]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 53-56
اِنِّیۡ تَوَکَّلۡتُ عَلَی اللّٰہِ رَبِّیۡ وَ رَبِّکُمۡ
I put my trust in Allah, my Lord and your Lord.
The Conversation between (the People of) `Ad and Hud
Allah, the Exalted, informs that they said to their Prophet,
قَالُواْ يَا هُودُ مَا جِيْتَنَا بِبَيِّنَةٍ
They said:”O Hud! No evidence have you brought us.
This means that they claimed that Hud had not brought them any proof or evidence for what he claimed.
وَمَا نَحْنُ بِتَارِكِي الِهَتِنَا عَن قَوْلِكَ
and we shall not leave our gods for your (mere) saying!
They were saying how could his mere statement, “Leave these gods,” be sufficient proof for them to leave their idols!
وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُوْمِنِينَ
and we are not believers in you.
This means that they did not believe what he was saying was true.
إِن نَّقُولُ إِلاَّ اعْتَرَاكَ بَعْضُ الِهَتِنَا بِسُوَءٍ
All that we say is that some of our gods have seized you with evil.
They were saying, “We think that some of our idols have afflicted you with madness and insanity in your intellect because you are trying to stop them from being worshipped and defame them.”
قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللّهِ وَاشْهَدُواْ أَنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ
مِن دُونِهِ
He said:”I call Allah to witness and bear you witness, that I am free from that which you ascribe as partners in worship besides Him (Allah).
Here, he is saying, “Verily, I am innocent of all of the rivals and idols (that you associate with Allah).
فَكِيدُونِي جَمِيعًا
So plot against me, all of you,
you and your gods if they are true.”
ثُمَّ لَا تُنظِرُونِ
and give me no respite.
the blinking of an eye.”
Then, Allah says.
إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ رَبِّي وَرَبِّكُم مَّا مِن دَابَّةٍ إِلاَّ هُوَ اخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا
I put my trust in Allah, my Lord and your Lord! There is not a moving creature but He has the grasp of its forelock.
Every creature is under His (Allah’s) power and His authority. He is the Best Judge, the Most Just, Who does not do any injustice in His ruling.
إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
Verily, my Lord is on the straight path (the truth).
For verily, He is upon the straight path. Verily, this argument contains a far-reaching proof and absolute evidence of the truthfulness of what Hud had come to them with.
It also proves the falsehood of them worshipping idols that could not benefit nor harm them. Rather, these idols were inanimate objects that could not hear, see, befriend, or make enmity.
The only One Who is worthy of having worship directed solely towards Him is Allah alone, without any partners. He is the One in Whose Hand is the sovereignty and He is in control of all things. There is nothing except that it is under His ownership, power and authority. Thus, there is no deity worthy of worship except Him and there is no Lord other than Him.