أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 710)
[ وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا ۘ
আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম।
And to Thamud their brother Salih.]
www.motaher21.net
وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا ۘ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ ہُوَ اَنۡشَاَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ وَ اسۡتَعۡمَرَکُمۡ فِیۡہَا فَاسۡتَغۡفِرُوۡہُ ثُمَّ تُوۡبُوۡۤا اِلَیۡہِ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ قَرِیۡبٌ مُّجِیۡبٌ ﴿۶۱﴾
আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম । তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদেরকে বসবাস করিয়েছেন । কাজেই তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর আর তাঁর দিকেই ফিরে আস। নিশ্চয় আমার রব খুব কাছেই, ডাকে সাড়া প্রদানকারী ।
And to Thamud [We sent] their brother Salih. He said, “O my people, worship Allah ; you have no deity other than Him. He has produced you from the earth and settled you in it, so ask forgiveness of Him and then repent to Him. Indeed, my Lord is near and responsive.”
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৬১ নং আয়াত:-
وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا ۘ
আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম।
And to Thamud their brother Salih.
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এক্ষেত্রে সূরা আ’রাফের দশম রুকূ’র টীকাগুলো সামনে রাখুন।
#.প্রথম বাক্যাংশে যে দাবী করা হয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, এটি হচ্ছে সেই দাবীর সপক্ষে যুক্তি। মুশরিকরা নিজেরাও স্বীকার করতো যে, আল্লাহই তাদের স্রষ্টা। এ স্বীকৃত সত্যের ওপর যুক্তির ভিত্তি করে হযরত সালেহ (আ) তাদেরকে বুঝানঃ পৃথিবীর নিষ্প্রাণ উপাদানের সংমিশ্রণে যখন আল্লাহই তোমাদের এ পার্থিব অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তিনিই যখন এ পৃথিবীর বুকে জীবন ধারণের ব্যবস্থা করেছেন তখন সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকার সেই আল্লাহ ছাড়া আর কার থাকতে পারে? তিনি ছাড়া আর কে বন্দেগী, পূজা-উপাসনা লাভের অধিকার পেতে পারে?
#.এতদিন পর্যন্ত তোমরা অন্যের বন্দেগী ও পূজা-অর্চনা করে এসেছো। সে অপরাধের জন্য তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।
# এখানে মুশরিকদের একটি মস্ত বড় বিভ্রান্তির প্রতিবাদ করা হয়েছে। সাধারণভাবে প্রায় তাদের প্রত্যেকেই এর শিকার। যেসব মারাত্মক বিভ্রান্তি প্রতি যুগে মানুষকে শিরকে লিপ্ত করেছে, এটি তাদের অন্যতম। তারা আল্লাহকে দুনিয়ার অন্যান্য রাজা, মহারাজা ও বাদশাহদের সমান মনে করে। অথচ এ রাজা-বাদশাহরা প্রজাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে নিজেদের প্রসাদসমূহে বিলাসী জীবন যাপন করে। তাদের দরবারে সাধারণ প্রজারা পৌঁছতে পারে না এবং সেখানে কোন আবেদন পৌঁছাতে হলে ঐ রাজাদের প্রিয়পাত্রদের কারো শরণাপন্ন হতে হয়। এরপর আবার সৌভাগ্যক্রমে কারো আবেদন যদি তাদের সুউচ্চ বালাখানায় পৌঁছে যায়ও তাহলেও প্রভুত্বের অহমিকায় মত্ত হয়ে তারা নিজেরা এর জবাব দিতে পছন্দ করে না। বরং প্রিয়পাত্রদের মধ্য থেকে কারো ওপর এর জবাব দেবার দায়িত্ব অর্পণ করে। এ ভুল ধারণার কারণে তারা মনে করে এবং ধুরন্ধর লোকেরা তাদের একথা বুঝাবার চেষ্টাও করেছে যে, বিশ্ব-জাহানের অধিপতি মহাশক্তিধর আল্লাহর মহিমান্বিত দরবার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বহুদূরে অবস্থিত। কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর দরবারে পৌঁছে যাওয়া কেমন করে সম্ভবপর হতে পারে! মানুষের দোয়া ও প্রার্থনা সেখানে পৌঁছে যাওয়া এবং সেখান থেকে তার জওয়াব আসা তো কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ যদি পবিত্র আত্মাসমূহের ‘অসিলা’ ধরা হয় এবং যেসব ধর্মীয় পদাধিকারীরা ওপর তলায় নযর-নিয়ায ও আবেদন-নিবেদন পেশ করার কায়দা জানেন তাদের সহায়তা গ্রহণ করা হয় তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। এ বিভ্রান্তিটিই বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে বহু ছোট বড় মাবুদ এবং বিপুল সংখ্যক সুপারিশকারী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আর এই সাথে পুরোহিতগিরির (Priesthood) এক সুদীর্ঘ ধারা চালু হয়ে গেছে, যার মাধ্যমে ছাড়া জাহেলী ধর্মসমূহের অনুসারীরা তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানও পালন করতে সক্ষম নয়।
হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম জাহেলিয়াতের এ গোটা ধুম্রজালকে শুধুমাত্র দু’টি শব্দের সাহায্যে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। শব্দ দু’টির একটি হচ্ছে ‘কারীব —আল্লাহ নিকটবর্তী এবং দ্বিতীয়টি ‘মুজীব’ —আল্লাহ জবাব দেন। অর্থাৎ তিনি দূরে আছেন, তোমাদের এ ধারণা যেমন ভুল তেমনি তোমরা সরাসরি তাঁকে ডেকে নিজেদের আবেদন-নিবেদনের জবাব হাসিল করতে পারো না, এ ধারণাও একই রকম ভুল। তিনি যদিও অনেক উচ্চস্থানের অধিকারী ও অনেক উচ্চ মর্যাদাশালী তবুও তিনি তোমাদের নিকটেই থাকেন। তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাঁকে নিজের ঘনিষ্ঠতম সান্নিধ্যে পেতে পারে এবং তাঁর সাথে সঙ্গোপনে কথা বলতে পারে। প্রকাশ্য জনসমক্ষে এবং একান্ত গোপনে একাকী অবস্থায়ও নিজের আবেদন নিবেদন তাঁর কাছে পেশ করতে পারে। তারপর তিনি সরাসরি প্রত্যেক বান্দার আবেদনের জবাব নিজেই দেন। কাজেই বিশ্ব-জাহানের বাদশাহর সাধারণ দরবার যখন সব সময় সবার জন্য খোলা আছে এবং তিনি সবার কাছাকাছি রয়েছেন তখন তোমরা বোকার মতো এজন্য মাধ্যম ও অসীলা খুঁজে বেড়াচ্ছো কেন? (এছাড়া দেখুন সূরা বাকারার ১৮৮ টীকা)
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এ আয়াতগুলোতে সালেহ (عليه السلام) ও তাঁর সম্প্রদায় সামূদ জাতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে সালেহ (عليه السلام) সামূদ জাতির নিকট নাবী হিসেবে প্রেরিত হন। (তারীখুল আম্বিয়া ১/৪৯) ‘আদ ও সামূদ জাতি একই দাদা ‘ইরাম’ এর দুটি বংশধারার নাম। সামূদ জাতি আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজর’ যা সিরিয়ার অর্ন্তভুক্ত। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয়। ‘আদ জাতির ধ্বংসের পর সামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারশর্দী ছিল। (সূরা শু‘আরা ২৬:১৯) সমতল ভূমিতে বিশালাকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানারূপ প্রকোষ্ট নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান। এগুলোর গায়ে ইরামী ও সামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। এ এলাকাটি এখানো পরিত্যক্ত, তথায় কেউ বসবাস করে না।
আল্লাহ তা‘আলা সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহ (عليه السلام)-কে নাবী হিসেবে প্রেরণ করলেন। এখানে ভাই বলতে বংশীয় ভাই উদ্দেশ্য। (তাফসীর সা‘দী) তিনি অন্যান্য নাবীদের মত প্রথমে তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের দিকেই আহ্বান করেন এবং বলেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সঠিক মা‘বূদ নেই সুতরাং তোমরা তাঁরই উপাসনা কর। সালেহ (عليه السلام) বললেন, তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) সেই উপাস্য বা সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং পরবর্তীতে তোমাদেরকে তাতে আবাদ করিয়েছেন। এর দু‘টো অর্থ হতে পারে (১) আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام) কে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সকল মানুষ আদম (عليه السلام)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং সকল মানুষ মাটির সৃষ্টি। (২) অথবা অর্থ এই রকম হতে পারে যে, তোমরা যা কিছু ভক্ষণ করছ, তা মাটি থেকেই উৎপন্ন হয় এবং সেই খাবার দ্বারা সেই বীর্য তৈরি হয় যা মায়ের গর্ভাশয়ে গিয়ে মানুষ সৃষ্টির উপাদন হয়।
সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তোমরা যে অপরাধ করেছ তা ছেড়ে দিয়ে তাঁর নিকট তাওবাহ কর। তিনি তোমাদের নিকটেই রয়েছেন এবং তোমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ ط أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ)
“আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমি নিকটে; কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে ডাকে তখনই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি।” (সূরা বাক্বারা ২:১৮৬)।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লা বলেন যে, তিনি সালেহকে (আঃ) সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি স্বীয় কওমকে আল্লাহর ইবাদত করার এবং তিনি ছাড়া অন্যান্য মাবুদমা’বুদগুলির ইবাদত পরিত্যাগ করার উপদেশ দেন। তিনি তাদেরকে বলেনঃ আল্লাহ তাআ’লা মানুষের প্রথম সৃষ্টি মাটি দ্বারা শুরু করেছিলেন। তোমাদের সবারই পিতা হযরত আদমকে (আঃ) এই মাটি দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। আল্লাহ তাআ’লাই তোমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে ভূ-পৃষ্ঠে বসতি স্থাপন করিয়েছিলেন। ফলে তোমরা আজ এখানে কালাতিপাত করছে। তোমাদের পাপের জন্যে আল্লাহ পাকের নিকট তোমাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আর তাঁরই পানে মনোনিবেশ করা তোমাদের একান্ত কর্তব্য। তিনি খুবই নিকটে রয়েছেন এবং তিনি প্রার্থনা কবুলকারী। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “(হে নবী সাঃ)! যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (যে, আমি দূরে রয়েছি, না নিকটে রয়েছি, তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও) আমি (আল্লাহ) নিকটেই রয়েছি, আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। (২:১৮৬)।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] وإلى ثمودَ পূর্ব বাক্যের উপর সংযোজন হয়েছে, অর্থাৎ, وأرسلنا إلى ثمود অর্থাৎ আমি সা’মূদ সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছি। এ সম্প্রদায় তাবুক ও মদীনার মাঝে মাদায়েন সালেহ (হিজর) নামক স্থানে বসবাস করত এবং এ সম্প্রদায় আ’দ সম্প্রদায়ের পরে আবির্ভূত হয়েছিল। সালেহ (আঃ)-কে এখানেও সা’মূদের ভাই বলেছেন। এর উদ্দেশ্য হল তাদেরই বংশ ও গোত্রেরই এক ব্যক্তি।
[২] সালেহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে সর্বপ্রথম তওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন, যেমন সমস্ত নবীদের তরীকা তাই ছিল।
[৩] অর্থাৎ, প্রথমে তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তা এরূপ যে তোমাদের পিতা আদম (আঃ) মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। অতঃপর সকল মানুষ আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং সমস্ত মানুষ আসলে মাটি থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। অথবা অর্থ এই যে, তোমরা যা কিছু ভক্ষণ করছ, তা মাটি থেকেই উৎপন্ন হয় এবং সেই খাবার দ্বারা সেই বীর্য তৈরী হয় যা মায়ের গর্ভাশয়ে গিয়ে মানুষ সৃষ্টির উপাদান হয়।
[৪] অর্থাৎ, তোমাদের মাঝে ভূমি আবাদ ও চাষ করার ক্ষমতা ও যোগ্যতা সৃষ্টি করেছেন, যার দ্বারা তোমরা বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণ কর, খাবারের জন্য চাষাবাদ কর এবং জীবনের অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করার জন্য কারিগরী করে থাক।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] ৬১ থেকে ৬৮ পর্যন্ত ৮ আয়াতে সালেহ আলাইহিসসালামের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যিনি ‘আদ জাতির দ্বিতীয় শাখা ‘কাওমে সামূদ’ এর প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তার কাওমকে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিলেন। দেশবাসী তা প্রত্যাখান করে বলল “এ পাহাড়ের প্রস্তরখন্ড থেকে আমাদের সম্মুখে আপনি যদি একটি উষ্ট্রী বের করে দেখাতে পারেন তাহলে আমরা আপনাকে সত্য নবী বলে মানতে রাজী আছি? সালেহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে এই বলে সতর্ক করলেন যে, তোমাদের চাহিদা মোতাবেক মু’জিযা প্রদর্শনের পরেও তোমরা যদি ঈমান আনতে দ্বিধা প্রকাশ কর তাহলে কিন্তু আল্লাহ তা’আলার বিধান অনুসারে তোমাদের উপর আযাব নেমে আসবে, তোমরা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপরও তারা নিজেদের হঠকারিতা থেকে বিরত হল না। আল্লাহ তা’আলার তাঁর অসীম কুদরতে তাদের চাহিদা মোতাবেক মু’জিযা প্রকাশ করলেন। বিশাল প্রস্তরখন্ড বিদীর্ণ হয়ে তাদের কথিত গুণাবলী সম্পন্ন উষ্ট্রী আত্মপ্রকাশ করল। আল্লাহ তা’আলা হুকুম দিলেন যে, এ উন্ত্রীকে কেউ যেন কোনরূপ কষ্ট-ক্লেশ না দেয়। যদি এরূপ করা হয় তবে তোমাদের প্রতি আযাব নাযিল হয়ে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করল, উষ্ট্রীকে হত্যা করল। তখন আল্লাহ তা’আলা কঠোরভাবে তাদেরকে পাকড়াও করলেন। সালেহ আলাইহিসসালাম ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণ নিরাপদে রক্ষা পেলেন। অন্য সবাই এক ভয়াবহ গর্জনে ধ্বংস হল।
[২] প্রথম বাক্যাংশে যে দাবী করা হয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, এটি হচ্ছে সেই দাবীর সপক্ষে যুক্তি। মুশরিকরা নিজেরাও স্বীকার করতো যে, আল্লাহই তাদের স্রষ্টা। এ স্বীকৃত সত্যের ওপর যুক্তির ভিত্তি করে সালেহ আলাইহিস্সালাম তাদেরকে বুঝান, পৃথিবীর নিম্প্রাণ উপাদানের সংমিশ্রণে যখন আল্লাহই তোমাদের অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদমকে এ পার্থিব অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তিনিই যখন এ পৃথিবীর বুকে জীবন ধারণের ব্যবস্থা করেছেন, তখন তিনি ছাড়া আর কে বন্দেগী লাভের অধিকার পেতে পারে? সুতরাং তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না [সা’দী]
[৩] অর্থাৎ তিনি তাঁর অতি নিকটে যে তাঁকে কোন কিছু চাওয়ার জন্য ডাকে, বা তাঁর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁকে আহবান করে। তিনি তার ডাকে সাড়াও দেন। প্রার্থিত বিষয় তাকে দান করেন, ইবাদত কবুল করেন, সাওয়াব দেন পূর্ণরূপে। এখানে জানা আবশ্যক যে, আল্লাহর নৈকট্য দু’ধরনের, এক. ব্যাপক, দুই. বিশেষ। ব্যাপক নৈকট্য হচ্ছে, তিনি তাঁর জ্ঞানে সবার নিকটে, সমস্ত সৃষ্টি জগত সে হিসেবে তার নিকটে। আর এটাই আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেছেন, “আর আমরা তার গ্রীবাস্থিত ধমনীর চেয়েও নিকটতর” [সূরা কাফ: ১৬] আর বিশেষ নৈকট্য হচ্ছে, তিনি তার ইবাদাতকারী, যাচ্ঞাকারী, যারা তাকে ভালবাসে তাদের নিকটে থাকেন। আর এ নৈকট্য সম্পর্কে অন্যত্রও তিনি বলেছেন, “আর সিজদা করুন এবং আমার নিকটবতী হোন” [সূরা আল-আলাক:১৯] অনুরূপ সূরা হুদের আলোচ্য আয়াত। তাছাড়া আরও এসেছে, “আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৬] এ ধরনের নৈকট্য এমন যে, আল্লাহর বিশেষ দয়া, দো’আ কবুল হওয়া, উদ্দেশ্য হাসিল হওয়া এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এজন্যই এ আয়াতের শেষে ‘মুজীব’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। [সা’দী; ইবন তাইমিয়্যা, মাজমু’ ফাতাওয়া: ৫/৪৯৩]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 61
وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا ۘ
And to Thamud their brother Salih.
The Story of Salih and the People of Thamud
Allah, the Exalted, says,
وَ
And,
This is an introduction to that which is implied, “Verily, We sent.”
إِلَى ثَمُودَ
to Thamud,
They were a group of people who were living in cities carved from the rocks, between Tabuk and Al-Madinah (in Arabia). They lived after the people of `Ad, so Allah sent to them,
أَخَاهُمْ صَالِحًا
their brother Salih.
قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
He said:”O my people! Worship Allah:you have no other god but Him.
هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ الَارْضِ
He brought you forth from the earth,
This means:`He began your creation from it (the earth). From it He created your father, Adam.’
وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيهَا
and settled you therein,
This means:`He made you prosperous in the earth. You are settled in it and you treasure it.’
فَاسْتَغْفِرُوهُ
then ask forgiveness,
`This is in reference to your previous sins.’
ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ
and turn to Him in repentance.
`This is in reference to the future.’
إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُّجِيبٌ
Certainly, my Lord is Near (to all by His knowledge), Responsive.
This is similar to Allah’s statement,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
And when My servants ask you concerning Me, then (answer them), I am indeed Near (to them by My knowledge). I respond to the invocations of the supplicant when he calls on Me. (2:186).