أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 715)
[ وَقَالَ هَـذَا يَوْمٌ عَصِ
আর বলল, ‘আজকের দিনটি অতি কঠিন।
He said:”This is a distressful day.” ]
www.motaher21.net
وَ لَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوۡطًا سِیۡٓءَ بِہِمۡ وَ ضَاقَ بِہِمۡ ذَرۡعًا وَّ قَالَ ہٰذَا یَوۡمٌ عَصِیۡبٌ ﴿۷۷﴾
And when Our messengers, [the angels], came to Lot, he was anguished for them and felt for them great discomfort and said, “This is a trying day.”
وَ جَآءَہٗ قَوۡمُہٗ یُہۡرَعُوۡنَ اِلَیۡہِ ؕ وَ مِنۡ قَبۡلُ کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ السَّیِّاٰتِ ؕ قَالَ یٰقَوۡمِ ہٰۤؤُلَآءِ بَنَاتِیۡ ہُنَّ اَطۡہَرُ لَکُمۡ فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ لَا تُخۡزُوۡنِ فِیۡ ضَیۡفِیۡ ؕ اَلَـیۡسَ مِنۡکُمۡ رَجُلٌ رَّشِیۡدٌ ﴿۷۸﴾
And his people came hastening to him, and before [this] they had been doing evil deeds. He said, “O my people, these are my daughters; they are purer for you. So fear Allah and do not disgrace me concerning my guests. Is there not among you a man of reason?”
قَالُوۡا لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا لَنَا فِیۡ بَنٰتِکَ مِنۡ حَقٍّ ۚ وَ اِنَّکَ لَتَعۡلَمُ مَا نُرِیۡدُ ﴿۷۹﴾
They said, “You have already known that we have not concerning your daughters any claim, and indeed, you know what we want.”
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
৭৭ নং আয়াত:-
وَقَالَ هَـذَا يَوْمٌ عَصِ
আর বলল, ‘আজকের দিনটি অতি কঠিন।
He said:”This is a distressful day.”
৭৭-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অতঃপর যখন ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর নিকট উপস্থিত হল তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তায় মগ্ন হলেন, আর তাঁর হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং বললেন যে, আজকের দিনটি বড়ই কঠিন। কারণ তাঁর সম্প্রদায় যখনই কোন সুন্দর-সুদর্শন যুবককে দেখত তখনই তারা তার সাথে অপকর্মে লিপ্ত হতে চাইত। আর এ ফেরেশতারা সুদর্শন যুবকের বেশ ধরে আগমন করেছেন। তিনিও জানতেন যে, আগত যুবকেরা মানুষ নয় বরং ফেরেশতা। যার ফলে তিনি তাদের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা (এসব সুদর্শন যুবকদের) ফেরেশতাদের আগমনের কথা জানতে পারল তখন তারা তাদের সাথে অপকর্ম করার জন্য আনন্দে আত্মহারা হয়ে দ্রুত ছুটে আসল। আর তাদেরকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে লাগল। যাতে তাদের (ফেরেশতা) সাথে তাদের মন্দ কামনা চরিতার্থ করতে পারে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ رَاوَدُوْھُ عَنْ ضَیْفِھ۪ فَطَمَسْنَآ اَعْیُنَھُمْ فَذُوْقُوْا عَذَابِیْ وَنُذُرِ)
“তারা মেহমানদের জন্য লূতকে ফুসলিয়েছিল, তখন আমি তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম (এবং বললামঃ) আস্বাদন কর আমার আযাব এবং সতর্কবাণীর পরিণাম!” (সূরা কমার ৫৪:৩৭) তখন লূত (عليه السلام) তাদের এ অবস্থা দেখে বললেন যে, যদি তোমাদের উদ্দেশ্য যৌন চাহিদা পূরণ করাই হয়ে থাকে তাহলে এই যে আমার মেয়েরা রয়েছে তাদেরকে নিয়ে যাও এবং বিবাহের মাধ্যমে তাদের সাথে যৌন চাহিদা পূরণ কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# সূরা আ’রাফের ১০ রুকূ’র টীকাগুলো দেখুন।
# এ ঘটনার যে বিস্তারিত বিবরণ কুরআন মজীদে দেয়া হয়েছে তার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ফেরেশতারা সুন্দর ছেলেদের ছদ্মবেশে হযরত লূতের গৃহে এসেছিলেন। তারা যে ফেরেশতা একথা হযরত লূত জানতেন না। এ কারণে এ মেহমানদের আগমনে তিনি খুব বেশী মানসিক উৎকন্ঠা অনুভব করছিলেন এবং তাঁর মনও সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি নিজের সম্প্রদায়কে জানতেন। তারা কেমন ব্যভিচারী এবং কী পর্যায়ের নির্লজ্জ হয়ে গেছে তা তাঁর জানা ছিল।
# হতে পারে হযরত লূত সমগ্র সম্প্রদায়ের মেয়েদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কারণ নবী তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে থাকেন। আর সম্প্রদায়ের মেয়েরা তাঁর দৃষ্টিতে নিজের মেয়ের মতো হয়ে থাকে। আবার এও হতে পারে যে, তাঁর ইঙ্গিত ছিল তাঁর নিজের মেয়েদের প্রতি। তবে ব্যাপার যাই হোক না কেন উভয় অবস্থাতেই একথা ধারণা করার কোন কারণই নেই যে, হযরত লূত তাদেরকে যিনা করার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন। “এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর”–একথাই যাবতীয় ভুল অর্থের অবকাশ খতম করে দিয়েছে। হযরত লূতের বক্তব্যের পরিষ্কার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আল্লাহ যে জায়েয পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন সেই পদ্ধতিতেই নিজেদের যৌন কামনা পূর্ণ করো এবং এজন্য মেয়েদের অভাব নেই।
# এ বাক্যটি তাদের মানসিক অবস্থার পূর্ণচিত্র এঁকে দেয়। বুঝা যায় লাম্পট্যের ক্ষেত্রে তারা কত নিচে নেমে গিয়েছিল। তারা স্বভাব-প্রকৃতি ও পবিত্রতার পথ পরিহার করে একটি পূতিগন্ধময় প্রকৃতি বিরোধী পথে চলতে শুরু করেছিল, ব্যাপার শুধুমাত্র এতটুকুই ছিল না বরং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল যে, এখন শুধুমাত্র এ একটি নোংরা পথের প্রতিই ছিল তাদের সমস্ত ঝোঁক-প্রবণতা, আকর্ষণ ও অনুরাগ। তাদের প্রবৃত্তি এখন শুধুমাত্র এ নোংরামিরই অনুসন্ধান করে ফিরছিল। প্রকৃতি ও পবিত্রতার পথ তো আমাদের জন্য তৈরীই হয়নি একথা বলতে তারা কোন লজ্জা অনুভব করতো না। এটা হচ্ছে নৈতিক অধঃপতন ও চারিত্রিক বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়। এর চেয়ে বেশী নিম্নগামিতার কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তি নিছক নফ্স ও প্রবৃত্তির দুর্বলতার কারণে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, এ সত্ত্বেও হালালকে কাংখিত এবং হারামকে পরিত্যাজ্য মনে করে, তার বিষয়টি খুবই হালকা। এমন ব্যক্তি কখনো সংশোধিত হয়ে যেতে পারে। আর সংশোধিত হয়ে না গেলেও তার সম্পর্কে বড় জোর এতটুকু বলা যেতে পারে যে, সে একজন বিকৃত চরিত্র সম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তির সমস্ত আগ্রহ হারামের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় এবং সে মনে করতে থাকে হালাল তার জন্য তৈরীই হয়নি তখন তাকে মানুষের মধ্যেই গণ্য করা যেতে পারে না। সে আসলে একটি নোংরা কীট। মল-মূত্র ও দুর্গন্ধের মধ্যেই সে প্রতিপালিত হয় এবং পাক-পবিত্রতার সাথে তার প্রকৃতিগত কোন সম্পর্কই নেই। এ ধরনের কীট যদি কোন পরিচ্ছন্নতা প্রিয় মানুষের ঘরে জন্ম নেয় তাহলে প্রথম সুযোগেই সে ফিনাইল ঢেলে দিয়ে তার অস্তিত্ব থেকে নিজের গৃহকে মুক্ত করে নেয়। তাহলে আল্লাহ তাঁর যমীনে এ ধরনের নোংরা কীটদের সমাবেশকে কতদিন বরদাশত্ করতে পারতেন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৭৭-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা সংবাদ দিচ্ছেন যে, এই ফেরেশতারা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) কাছে তাঁদের আগমনের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে সেখান থেকে বিদায় গ্রহণ করেন এবং হযরত লূতের (আঃ) বাসভূমিতে বা তার বাড়িতে পৌঁছেন। তাঁরা সুদর্শন যুবকদের রূপ ধারণ করেছিলেন, যেন হযরত লূতের (আঃ) কওমের পূর্ণ পরীক্ষা হয়ে যায়। হযরত লূত (আঃ) ঐ মেহমানদেরকে দেখে স্বীয় কওমের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে অত্যন্ত চিন্তান্বিত হয়ে পড়েন এবং মনে মনে ঘোর পেঁচ খেতে থাকেন। তিনি মনে মনে বলেনঃ “যদি আমি এদেরকে মেহমান হিসেবে রেখে দেই, তবে খুব সম্ভব আমার কওমের লোকেরা সংবাদ পেয়ে (তাদের সাথে দুস্কার্য করার উদ্দেশ্যে) দৌড়িয়ে আসবে। আর যদি অতিথি হিসেবে আমার বাড়িতে না রাখি তবে এরা তাদেরই হাতে পড়ে যাবে।” তাঁর মুখ দিয়েও বেরিয়ে গেলঃ- আজকের দিনটি খুবই কঠিন ও ভয়াবহ দিন। আমার কওম তাদের দুষ্কার্য থেকে বিরত থাকবে না, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাদের সাথে মুকাবিলা করারও আমার শক্তি নেই। সুতরাং কিবা ঘটবে!”
হযরত কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এই ফেরেশতাগুলি মানুষের আকারে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ঐ সময় হযরত লূত (আঃ) তাঁর বাসভূমিতে অবস্থান করছিলেন এমতাবস্থায় তাঁরা তাঁর মেহমান হন। লজ্জা বশতঃ তিনি তাঁদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করতে সরাসরি অস্বীকার করতে পারছিলেন না এবং বাড়িতে নিয়ে যেতেও সাহস করছিলেন না। তিনি তাঁদের আগে আগে চলছিলেন তাঁরা যেন ফিরে যান শুধু এই উদ্দেশ্যে পথিমধ্যে তাদেরকে বলছিলেনঃ “আল্লাহর শপথ! এখানকার মত খারাপ ও দুশ্চরিত্র লোক আমি আর কোথাও দেখি নাই।” কিছু দূর গিয়ে আবার এ কথাই বলেন। মোট কথা, বাড়ি পৌছা পর্যন্ত এ কথা তিনি চারবার উচ্চারণ করেন। ফেরেশতাদেরকে এই নির্দেশই দেয়া হয়েছিল যে, যে পর্যন্ত না তাদেরকে নবী তাদের মন্দ কার্যের বর্ণনা দেন, সেই পর্যন্ত যেন তাদেরকে ধ্বংস করা না হয়।
হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, হযরত ইবরাহীমের (আঃ) নিকট থেকে বিদায় হয়ে ফেরেশতারা দুপুরের সময় নাহরে সুদূমে পৌঁছেন। সেখানে হযরত লূতের (আঃ) কন্যা পানি নিতে আসলে তাদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। তাঁকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেনঃ “এখানে আমরা কোথায় অবস্থান করতে পারি?” হযরত লূতের (আঃ) কন্যা উত্তরে বলেনঃ “আপনারা এখানে থাকুন, আমি ফিরে এসে উত্তর দিচ্ছি।” তিনি ভয় পেলেন যে, কওমের লোকেরা যদি এদেরকে পেয়ে যায় তবে তো এরা খুবই অপদস্থ হবেন। তাই তিনি বাড়ি গিয়ে তাঁর পিতাকে বলেনঃ “শহরের দরজার উপর কয়েকজন বিদেশী যুবককে আমি দেখে এলাম, যাদের মত সুদর্শন লোক আমি জীবনে দেখি নাই। যান, তঁদেরকে নিয়ে আসুন, নতূবা আপনার কওম তাঁদের প্রতি যুলুম করবে।” ঐ গ্রামের লোকেরা হযরত লূতকে (আঃ) বলে রেখেছিলঃ “কোন বিদেশী লোক এখানে আসলে তুমি তাকে তোমার কাছে রাখবে না। আমরাই সব কিছু করবো।” কন্যার মুখে খবর শুনে তিনি গিয়ে গোপনীয়ভাবে তাঁদেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলেন। কেউই এ খবর জানতে পারলো না। কিন্তু তারই মাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এ সংবাদ শোনা মাত্রই তাঁর কওম আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাঁর বাড়িতে ছুটে আসে। পুরুষ লোকদের সাথে দুষ্কার্য করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ঐ সময় আল্লাহর নবী হযরত লূত (আঃ) তাদেরকে উপদেশ দিতে লাগলেন। তিনি বললেনঃ “তোমরা তোমাদের এই অভ্যাস পরিত্যাগ কর।” স্ত্রীলোকদের দ্বারা তোমাদের কাম প্রবৃত্তি পূর্ণ কর।” (আরবি) অর্থাৎ ‘আমার কন্যাগুলি’ একথা তিনি এ কারণেই বলেন যে, প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতের যেন পিতা। কুরআন কারীমের অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তারা বলেছিল ? আমরা তো তোমাকে নিষেধ করেছিলাম যে, তোমার কাছে কাউকেও রাখবে না।” অর্থাৎ কোন পুরুষ লোককে তোমার বাড়িতে মেহমান হিসেবে স্থান দেবে না। হযরত লূত (আঃ) তাদেরকে বুঝাতে থাকেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সম্পর্কে তাদেরকে উপদেশ দেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে যে, তিনি তাদেরকে বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তোমরা কি বিশ্ববাসীদের মধ্য হতে পুরুষদের সাথে অপকর্ম করছো? আর তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে যেই স্ত্রীসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে বর্জন করছো? বরং তোমরা সীমা লংঘনকারী লোক।” (২৬: ১৬৫-১৬৬)
হযরত লূত (আঃ) তাঁর কওমকে বললেনঃ স্ত্রী লোকেরাই এ কাজের যোগ্য; সুতরাং তোমরা তাদেরকে বিয়ে করে তোমাদের কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ কর, এটাই হবে পবিত্র কাজ।’ হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ একথা আমাদের অনুধাবন করা দরকার যে, হযরত লূত (আঃ) তাঁর কওমকে তার নিজের কন্যাদের সম্পর্কে এটা বলেন নাই। বরং নবী তাঁর সমস্ত উম্মতের পিতা স্বরূপ। হযরত কাতাদা’ (রঃ) প্রভৃতি গুরুজনও একথাই বলেন।
ইমাম ইবনু জুরাইজ (রঃ) বলেনঃ এটা আমাদের মনে করা উচিত নয় যে, হযরত লূত (আঃ) স্ত্রীলোকদেরকে বিয়ে না করেই তাদের সাথে মেলা মেশা করতে বা সহবাস করতে বলেছেন; তাঁর উদ্দেশ্য এটা ছিল না, বরং তিনি স্ত্রী লোকদেরকে বিয়ে করে তাদের সাথে সহবাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি তার কওমকে বলেনঃ “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, স্ত্রীলোকদের প্রতি আগ্রহান্বিত হও, তাদেরকে বিয়ে করে কাম বাসনা পূর্ণ কর। আর এ উদ্দেশ্যে পুরুষ লোকদের কাছে যেয়ো না। বিশেষ করে এরা তো আমার মেহমান। তোমরা আমার মর্যাদার দিকে খেয়াল কর। তোমাদের মধ্যে কি সুবুদ্ধি সম্পন্ন একজন লোকও নেই? একজনও কি ভাল লোক নেই?” তাঁর এ কথার জবাবে দুবৃত্তেরা বলেছিলঃ তোমার কন্যাদের সাথে আমাদের কোনই সম্পর্ক নেই।” এখানেও (আরবি) অর্থাৎ তোমার কন্যাগণ দ্বারা কওমের স্ত্রীলোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে। তারা আরও বললো: “আমরা কি চাই তা তুমি অবশ্যই জানো।” অর্থাৎ আমাদের মনের বাসনা হচ্ছে যুবকদের সাথে মিলিত হওয়া এবং তাদের দ্বারা কাম বাসনা মেটানো। সুতরাং আমাদের সাথে তর্কবিতর্ক ও আমাদেরকে উপদেশ দান বৃথা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] যখন সেই সমকাম লোভী লম্পটরা জানতে পারল যে, কিছু সুন্দর যুবক লূতের বাড়িতে মেহমান এসেছে, তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে এল এবং তাদেরকে নিজেদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে লাগল, যাতে তাদের সাথে আপন বিকৃত যৌন-কামনা চরিতার্থ করতে পারে।
#!লূত (আঃ)-এর অস্থিরতার কারণ তফসীরবিদগণ এই লিখেছেন যে, উক্ত ফিরিশতাগণ দাঁড়িবিহীন তরুণের আকৃতিতে এসেছিলেন, ফলে লূত (আঃ) নিজ সম্প্রদায়ের নোংরা স্বভাবের কারণে এই পরিস্থিতিকে বড় সংকটজনক ভাবছিলেন। কারণ তিনি জানতেন না যে, আগত উক্ত তরুণগুলি, (মানুষ) মেহমান নয়; বরং আল্লাহর প্রেরিত ফিরিশতা, যাঁরা এই সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্যই এসেছেন।
[২] অর্থাৎ, যদি এখানে আসার পিছনে তোমাদের উদ্দেশ্য যৌন-প্রবৃত্তিই পূরণ করে শান্তি ও তৃপ্তি অর্জন করাই হয়, তাহলে তার জন্য আমার নিজের মেয়েরা উপস্থিত আছে, তাদেরকে তোমরা বিয়ে করে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করে নাও। এটাই তোমাদের জন্য সর্বদিক থেকে কল্যাণকর হবে। কোন কোন তফসীরকার বলেন, (লূত (আঃ) আমার) কন্যা বলে সমগ্র জাতির মহিলাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং তাদেরকে স্বীয় কন্যা এই জন্য বলেছেন যে, পয়গম্বরগণ নিজ উম্মতের জন্য পিতৃতুল্য। উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের উক্ত কাজের জন্য নারীজাত আছে, তাদেরকে বিবাহ কর ও নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ কর। (ইবনে কাসীর)
[৩] অর্থাৎ, আমার বাড়িতে আগত মেহমানদের সাথে জোরপূর্বক দুর্ব্যবহার করে আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মাঝে কি এমন কোন ন্যায়নিষ্ঠ ভাল মানুষ নেই, যে অতিথিপরায়ণতার চাহিদা ও এই স্পর্শকাতর অবস্থাকে বুঝতে পারে এবং তোমাদেরকে তোমাদের নোংরা সংকল্প থেকে বিরত রাখে? লূত (আঃ) এ সব কথা এই জন্য বলেছিলেন যে, তিনি সেই ফিরিশতাগণকে অভ্যাগত (মানুষ) মুসাফির ও মেহমান ভাবছিলেন। ফলে তিনি তাদের হিফাযত করাকে নিজ ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য জরুরী ভাবছিলেন। যদি তিনি জানতে পারতেন, কিংবা তিনি ‘আ-লিমুল গায়ব’ হতেন, তাহলে ঐ অস্থিরতায় ভুগতেন না; যে অস্থিরতার কথা কুরআন মাজীদ এখানে বর্ণনা করেছে।
# বৈধ ও স্বাভাবিক নিয়মকে তারা একদম অস্বীকার করে দিল এবং অস্বাভাবিক কর্ম এবং নির্লজ্জতার উপর অটল থাকল। যাতে আন্দাজ করা যায় যে, এই সম্প্রদায় তাদের সেই অশ্লীল কুকর্মে কত বাড়া বেড়েছিল এবং বিকৃত যৌনাচারে কতটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# আলোচ্য আয়াতসমূহে লূত আলাইহিসসালাম ও তার দেশবাসীর অবস্থা ও দেশবাসীর উপর কঠিন আযাবের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। লুত আলাইহিসসালামের কাওম একে তো কাফের ছিল অধিকন্তু এমন এক জঘন্য অপকর্ম ও লজ্জাকর অনাচারে লিপ্ত ছিল যা পূর্বে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে পাওয়া যায়নি, বন্য পশুরাও যা ঘৃনা করে। অর্থাৎ পুরুষ কর্তৃক অন্য পুরুষের মৈথুন করা। ব্যাভিচারের চেয়েও ইহা জঘন্য অপরাধ। এ জন্যই তাদের উপর এমন কঠিন আযাব নাযিল হয়েছে যা অন্য কোন অপকর্মকারীদের উপর কখনো নাযিল হয়নি। লূত আলাইহিসসালামের ঘটনা যা আলোচ্য আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈল আলাইহিসসালাম সহ কতিপয় ফেরেশতাকে কওমে লূতের উপর আযাব নাযিল করার জন্য প্রেরণ করেন। যাত্রাপথে তারা ফিলিস্তীনে প্রথমে ইবরাহীম আলাইহিসসালামের সমীপে উপস্থিত হন। আল্লাহ তা’আলা যখন কোন জাতিকে আযাব দ্বারা ধ্বংস করেন তখন তাদের কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আযাবই নাযিল করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও ফেরেশতাগণকে নওজোয়ানরূপে প্রেরণ করেন। লুত আলাইহিসসালাম ও তাদেরকে মানুষ মনে করে তাদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হলেন। কারণ মেহমানের আতিথেয়তা নবীর নৈতিক দায়িত্ব। পক্ষান্তরে দেশবাসীর কু-স্বভাব তার অজানা ছিল না। উভয় সংকটে পড়ে তিনি স্বগতোক্তি করলেন “আজেকের দিনটি বড় সংকটময়”। লূত আলাইহিসসালামের স্ত্রী নবীর বিরুদ্ধাচারন করে কাফেরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত। সম্মানিত ফেরেশতাগণ সুদৰ্শন নওজোয়ান আকৃতিতে যখন লূত আলাইহিসসালামের গৃহে উপনীত হলেন তখন তার স্ত্রী সমাজের দুষ্ট লোকদের খবর দিল যে আজ আমাদের গৃহে এরূপ মেহমান আগমন করেছেন। [কুরতুবী]
# [১] লূত আলাইহিসসালামের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হল। আল্লাহ্ বলেনঃ “তার কওমের লোকেরা আত্মহারা হয়ে তার গৃহপানে ছুটে এল। এর আগে থেকেই তারা কু-কর্মে অভ্যস্ত ছিল”। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, জঘন্য কু-কর্মের প্রভাবে তারা এতদূর চরম নির্লজ্জ হয়েছিল যে, লূত আলাইহিসসালামের মত একজন সম্মানিত নবীর গৃহ প্রকাশ্যভাবে অবরোধ করেছিল।
[২] এ আয়াতে কন্যা বলে কাদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছে,
একঃ হতে পারে লূত সমগ্র সম্প্রদায়ের মেয়েদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কারণ নবী তার সম্প্রদায়ের জন্য বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে থাকেন। আর সম্প্রদায়ের মেয়েরা তার দৃষ্টিতে নিজের মেয়ের মতো হয়ে থাকে। প্রত্যেক নবী নিজ উম্মতের জন্য পিতৃতুল্য এবং উম্মতগণ তার সন্তানস্বরূপ। যেমন কুরআনের সূরা আহযাবের ৬ষ্ঠ আয়াতের সাথে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ক্বেরাতে (وَهُوَ اَبٌ لَّهُمْ) বাক্যও বর্ণিত আছে। যার মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র “উম্মতের পিতা” বলে অভিহিত করা হয়েছে। সে হিসাবে লুত আলাইহিসসালামের কথার অর্থ হল, তোমরা নিজের কদাচার হতে বিরত হও এবং ভদ্রভাবে কওমের কন্যাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে বৈধভাবে স্ত্রী রূপে ব্যবহার কর। [তাবারী; কুরতুবী]
দুইঃ আবার এও হতে পারে যে, তাঁর ইঙ্গিত ছিল তাঁর নিজের মেয়েদের প্রতি। “এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর” -একথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি তাদের কাছে তার মেয়েদের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। লুতের বক্তব্যের পরিষ্কার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আল্লাহ যে জায়েয পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন সেই পদ্ধতিতেই নিজেদের যৌন কামনা পূর্ণ করো এবং এ জন্য মেয়েদের অভাব নেই। [কুরতুবী]
# এরপর লুত আলাইহিসসালাম তাদেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখিয়ে বললেন “আল্লাহকে ভয় কর” এবং কাকুতি মিনতি করে বললেন “আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে অপমানিত করো না”। তিনি আরো বললেন “তোমাদের মাঝে কি কোন ন্যায়নিষ্ঠ ভাল মানুষ নেই?” আমার আকুল আবেদনে যার অন্তরে এতটুকু করুণার সৃষ্টি হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে শালীনতা ও মনুষ্যত্বের লেশমাত্রও ছিল না। তারা একযোগে বলে উঠল “আপনি তো জানেনই যে, আপনার বধু কন্যাদের প্রতি আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আর আমারা কি চাই তাও আপনি অবশ্যই জানেন”।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 77-79
وَقَالَ هَـذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ
He said:”This is a distressful day.”
The Coming of the Angels to Lut, His Grief, and His Discussion with His People
Allah tells;
وَلَمَّا جَاءتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا
And when Our messengers came to Lut, he was grieved on account of them and was concerned for them.
Allah, the Exalted, informs about the coming of His messenger angels. After they informed Ibrahim of their mission to destroy the people of Lut, they left him and set out to destroy Lut’s people that very night. After leaving Ibrahim, they came to Lut.
Some say that they came to him while he was on a piece of land that belonged to him. Others say that they came to him while he was in his home.
They approached him while they were in the most handsome of forms. They appeared in the forms of young men with handsome faces. This was a test from Allah that contained much wisdom and a firm evidence.
Their appearance saddened him (Lut) and he felt grief in his soul because of them. He was afraid that if he did not host them as his guests, someone else of his people would host them and harm them.
وَقَالَ هَـذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ
He said:”This is a distressful day.”
Ibn Abbas and others said that this means,
“A severe test for him.”
This was because he knew that he would have to defend them and it would cause great problems for him.
Qatadah said,
“They came to him while he was on a piece of land that belonged to him. They requested him to host them. He agreed, but he was shy of them and he walked in front of them. On the way to his home he said to them in attempt to convince them to go away,
`By Allah, I do not know any people on the face of the earth more wicked and disgusting than these people of this town.’
Then he walked on a little further. Then he repeated the same statement to them. He continued doing this until he had repeated the same thing four times.”
Then Qatadah said,
“They were ordered not to destroy them until their Prophet testified against them of this.
Concerning Allah’s statement,
وَجَاءهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ
And his people came rushing towards him,
meaning, they made haste and rushed due to their delight of this (new young men).
Concerning the statement,
وَمِن قَبْلُ كَانُواْ يَعْمَلُونَ السَّيِّيَاتِ
and since aforetime they used to commit crimes.
This means that this did not cease being their behavior until they were seized (by Allah’s torment) and they were still in the same condition.
قَالَ يَا قَوْمِ هَـوُلاء بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ
He said:”O my people! Here are my daughters (the women of the nation), they are purer for you…”
This was his attempt to direct them to their women, for verily the Prophet is like a father for his nation. Therefore, he tries to guide them to that which is better for them in this life and the Hereafter.
This is similar to his statement to them in other verse,
أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَـلَمِينَ
وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ أَزْوَجِكُمْ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ
Go you in unto the males of the nation, and leave those whom Allah has created for you to be your wives Nay, you are a trespassing people! (26:165-166)
Allah said in another verse,
قَالُواْ أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَـلَمِينَ
They (the people of the city) said:”Did we not forbid you from entertaining any of the `Alamin!” (15:70)
This means, “Didn’t we forbid you from hosting men (male) guests!”
قَالَ هَـوُلاءِ بَنَاتِى إِن كُنْتُمْ فَـعِلِينَ
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِى سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
(Lut) said:”These (the girls of the nation) are my daughters, if you must act (so).” Verily, by your life, in their wild intoxication, they were wandering blindly. (15:71-72)
Then, Allah said, in this noble verse,
هَـوُلاء بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ
(Here are my daughters, they are purer for you).
Mujahid said,
“Actually, they were not his daughters, but they were from among his nation. Every Prophet is like a father to his nation.”
A similar statement has been reported from Qatadah and others.
Concerning the statement,
فَاتَّقُواْ اللّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي
So have Taqwa of Allah and disgrace me not with regard to my guests!
This means, “Accept what I command you by limiting the fulfillment of your desires to your women.”
أَلَيْسَ مِنكُمْ رَجُلٌ رَّشِيدٌ
Is there not among you a single right-minded man!
This means, “Is there not a good man among you who will accept what I am enjoining upon you and abandon what I have forbidden for you!
قَالُواْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّ
They said:”Surely, you know that we have no need of your daughters…”
This means, “Verily, you know that we do not want our women, nor do we desire them.”
وَإِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيدُ
and indeed you know well what we want!
This means, “We only want males and you know that. So what need is there for you to continue speaking to us about this!