أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 725)
[ فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ
কাজেই আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন তাতে অবিচল থাকুন।
The Command to Stand Firm and Straight .]
www.motaher21.net
فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ وَ مَنۡ تَابَ مَعَکَ وَ لَا تَطۡغَوۡا ؕ اِنَّہٗ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۱۱۲﴾
কাজেই আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন তাতে অবিচল থাকুন এবং আপনার সাথে যারা তাওবা করেছে তারাও ; এবং তোমরা সীমালংঘন কর না তোমরা যা কর নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।
So remain on a right course as you have been commanded, [you] and those who have turned back with you [to Allah ], and do not transgress. Indeed, He is Seeing of what you do.
وَ لَا تَرۡکَنُوۡۤا اِلَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا فَتَمَسَّکُمُ النَّارُ ۙ وَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مِنۡ اَوۡلِیَآءَ ثُمَّ لَا تُنۡصَرُوۡنَ ﴿۱۱۳﴾
আর তোমরা যালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, অন্যথা তোমাদেরকে দোযখের আগুন স্পর্শ করবে, আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কেউ সহায় হবে না, অতঃপর তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না।
And do not incline toward those who do wrong, lest you be touched by the Fire, and you would not have other than Allah any protectors; then you would not be helped.
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১১২- নং আয়াত:-
فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ
কাজেই আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন তাতে অবিচল থাকুন।
The Command to Stand Firm and Straight .
১১২-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতগুলোতে যেসব জাতি মতানৈক্য ও দলাদলির কারণে সঠিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেনি তাদের কথা তুলে ধরার পর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে সারা মুসিলম জাতিকে বলছেন: তারা যেন দীনের প্রতি অটল থাকে, শরীয়ত যা নির্দেশ দিয়েছে তা পালন করে এবং আল্লাহ তা‘আলা যে সঠিক আকীদার সংবাদ দিয়েছেন তা ধারণ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে দীনের এমন কিছু বলুন যা আপনার পর ্কাউকে জিজ্ঞেস করব না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
قُلْ: آمَنْتُ بِاللّٰهِ، فَاسْتَقِم
তুমি বল আমি ঈমান আনলাম অতঃপর তার ওপর অটল থাক। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৮)
সুতরাং ঈমানের ওপর অটল থাকা মুসলিমদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। দ্বিতীয়ত: تَطْغَوْا সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করা হয়েছে, যা মু’মিনের চারিত্রিক শক্তি এবং উচ্চমানের মধ্যমপন্থী চরিত্র গঠনের জন্য একান্ত জরুরী। এমন কি শত্র“দের সাথেও সীমালঙ্ঘন করা যাবে না।
(وَلَا تَرْكَنُوْآ إِلَي الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا)
অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার জন্য, তাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য, কিংবা তাদেরকে ভয় করে তাদের সাথে নম্র-ভদ্র ব্যবহার ও তোষামোদ করো না। তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতার সুযোগ পাবে, তারা মনে করবে তোমরা তাদের অন্যায় কাজে সন্তুষ্ট এবং তাদেরকে পছন্দ কর। কারণ তোমরা যদি তাদের সাথে একমত হয়ে যাও এবং তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নাও তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাদেরকে গ্রাস করে নেবে।
সুতরাং যে সকল মুসলিম কাফির-মুশরিকদের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন পাওয়ার জন্য তাদেরকে তোষামোদ করে, তাদের কাছে ধরনা ধরে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলে তাদের এ আয়াত থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। জাহান্নামকে ভয় করে এবং আল্লাহ তা‘আলাকে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়ে কাফিরদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। অন্যথায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন কিছুর ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। এমনকি শত্র“দের ক্ষেত্রেও না।
২. কাফির-মুশরিকদের সাথে কোনরূপ সম্পর্ক রাখা যাবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১২-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসুল (সঃ) এবং তাঁর মুমিনমু’মিন বান্দাদেরকে সরল সোজা পথের উপর প্রতিষ্ঠিত ও অটল থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। এটাই সবচেয়ে বড় কথা। সাথে সাথে তিনি তাদেরকে বিরুদ্ধাচরণ ও হঠকারিতা থেকে নিষেধ করছেন। কেননা, এটাই হচ্ছে ধ্বংসকারী বিষয়। যদিও তা কোন মুশরিকের উপরও করা হয়। আর জেনে রেখোঁরেখো যে, আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বান্দাদের কার্যকলাপ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করছেন। তাদের কোন কাজ থেকেই তিনি উদাসীন ও অমনোযোগী নন এবং তার কাছে কোন কিছু গোপনও নেই।
(আরবি) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ তোমরা ধর্মের কাজে অবহেলা প্রদর্শন করো না। তাঁর থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ তোমরা শিরকের দিকে ঝুঁকে পড়ো না। আর আবুল আ’লিয়া (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলো: তোমরা তাদের (যালিমদের) কাজে সন্তুষ্ট হয়ো না। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ তোমরা যালিমদের দিকে ঝুঁকে পড়োনা। এটাই হচ্ছে উত্তম উক্তি। অর্থাৎ তোমরা যালিমদেরকে সাহায্য করো না। তাহলে তোমরা এই রূপ হবে যে, তোমরা তাদের কাজে সম্মত হয়ে গেছে। এরূপ হলে অগ্নি তোমাদের স্পর্শ করবে এবং তখন কে এমন হবে যে, তোমাদের থেকে শাস্তি দূর করতে পারে? এমতাবস্থায় তোমাদেরকে মোটেই সাহায্য করা হবে না।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] ইস্তেকামত শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ডান বা বাম কোনদিক একটু পরিমাণ না ঝুঁকে একদম সোজাভাবে থাকা। [কুরতুবী] মূলতঃ এটা সহজ কাজ নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল মুসলিমকে তাদের সর্বকার্যে সর্বাবস্থায় ইস্তেকামত অবলম্বন করার জন্য এ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘ইস্তেকামত’ শব্দটি ছোট হলেও এর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। কেননা, সর্বাবস্থায় দ্বীনের পথে সঠিকভাবে চলার অর্থ হচ্ছে- আকায়েদ, ইবাদত, লেন-দেন, আচার-ব্যবহার, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ উপার্জন ও ব্যয় তথা নীতি-নৈতিকতার যাবতীয় ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে থেকে তারই নির্দেশিত সোজা পথে চলা। তন্মধ্যে কোন ক্ষেত্রে, কোন কার্যে এবং পরিস্থিতিতে গড়িমসি করা, বাড়াবাড়ি করা অথবা ডানে বামে ঝুঁকে পড়া ইস্তেকামতের পরিপন্থী। দুনিয়ায় যত গোমরাহী ও পাপাচার দেখা যায়, তা সবই ইস্তেকামত হতে সরে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। আকায়েদ অর্থাৎ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইস্তেকামত না থাকলে, মানুষ বিদ’আত হতে শুরু করে কুফর ও শেরেকী পর্যন্ত পৌছে যায়। আল্লাহ তা’আলার তাওহীদ, তার পবিত্র সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সুষ্ঠ ও সঠিক মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র হ্রাস-বৃদ্ধি বা পরিবর্ধন পরিবর্জনকারী পথভ্রষ্টরূপে আখ্যায়িত হবে, তা তার নিয়ত যতই ভাল হোক না কেন। অনুরূপভাবে নবী ও রাসূল আলাইহিমুসসালামগণের প্রতি শ্রদ্ধার যে সীমারেখা নির্ধারিত হয়েছে, সে ব্যাপারে ক্রটি করা স্পষ্ট ধৃষ্টতা ও পথভ্রষ্টতা। তেমনি কোন রাসূলকে আল্লাহ্র গুণাবলী ও ক্ষমতার মালিক বানিয়ে দেয়াও চরম পথভ্রষ্টতা। ইয়াহুদী ও নাসারারা এহেন বাড়াবাড়ির কারণেই বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হয়েছে। ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য কুরআনে করীম নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পথের মধ্যে কোনরূপ কমতি বা গাফলতি মানুষকে যেমন কোন বাড়াবাড়ি বা পরিবর্ধনও মানুষকে বিদ’আতে লিপ্ত করে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে বিদ’আত ও নিত্য নতুন সৃষ্ট পথ ও মত হতে অত্যন্ত জোরালোভাবে নিষেধ করেছেন এবং বিদ’আতকে চরম গোমরাহী বলে অভিহিত করেছেন। [দেখুন, আবু দাউদ: ৪৬০৭] অতএব, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, যখন কোন কার্য সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইবাদত হিসাবে করতে চায়, তখন কাজ করার আগে পূর্ণ তাহকীক করে জানতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম উক্ত কার্য ঐভাবে করেছেন কি না? যদি না করে থাকেন, তবে উক্ত কাজে নিজের শক্তি ও সময়ের অপচয় করা কক্ষনো ঠিক হবে না। কারণ, আকায়েদ, ইবাদাত, মুআমালাত তথা লেন-দেন, আখলাক বা স্বভাব-চরিত্র ও আচার-ব্যবহার তথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআন করীম নির্দেশিত মূলনীতিগুলিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবে রূপায়িত করে একটা সুষ্ঠ সঠিক মধ্যপন্থার পত্তন করেছেন। বন্ধুত্ব, শক্রতা, ক্রোধ, ধৈর্য, মিতব্যয় ও দানশীলতা, জীবিকা উপার্জন, আল্লাহর উপর নির্ভরতা, আবশ্যকীয় উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করা এবং ফলাফলের জন্য আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহের প্রতি তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে মুসলিমদেরকে এক নজীরবিহীন মধ্যপন্থা দেখিয়ে দিয়েছেন। তা পুরোপুরি অবলম্বন করেই মানুষ সত্যিকার মানুষ হতে পারে। তা থেকে বিচ্যুত হলেই সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। সারকথা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলাই ইস্তেকামতের তাফসীর। সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে আরজ করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! ইসলাম সম্পর্কে আপনি আমাকে এমন একটি ব্যাপক শিক্ষা দান করুন যেন আপনার পরে আমার কারো কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন না হয়। তিনি বললেন, “আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আন, তারপর ইস্তেকামত অবলম্বন কর”। [মুসলিমঃ ৩৮] উসমান ইবন হাদের আলতিনি বললেন, ‘তুমি তাকওয়া অবলম্বন কর এবং ইস্তেকামত গ্রহণ কর। অনুসরণ কর এবং বিদ’আত থেকে দূরে থাক। [সুনান দারমীঃ ১৪১] [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, ইবন তাইমিয়্যা: আল-ইস্তিকামাহ ১/৩-৩২]
মূলত: ইস্তেকামতই সবচেয়ে দুস্কর কার্য। এজন্যই সালফে-সালেহীন বলতেন যে, কারামতের চেয়ে ইস্তেকামতের মর্যাদা উধের্ব। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সৰ্বকার্যে ইস্তেকামত অবলম্বন করে, যদি জীবনভর তার দ্বারা কোন অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত না হয়, তথাপি তার মর্যাদা সবার উর্ধ্বে।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন “পূর্ণ কুরআনের মধ্যে এ আয়াতের চেয়ে কঠিন ও কষ্টকর কোন হুকুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হয় নি।” তাই ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মতে রাসূলের বাণী “সূরা হুদ আমাকে বৃদ্ধ করেছে।” এ সূরার ইস্তেকামতের নির্দেশই ছিল তার বার্ধক্যের কারণ। [কুরতুবী]
[২] ইস্তেকামতের আদেশ দানের পর আল্লাহ বলেনঃ ‘সীমালঙ্ঘন করো না।’ এখানে সোজা পথে দৃঢ় থাকার আদেশ দান করেই শুধু ক্ষান্ত করা হয় নি। বরং তার নেতিবাচক দিকটিও স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে যে, আকায়েদ, ইবাদত, লেনদেন ও নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করো না। কেননা, এটাই পার্থিব ও ধর্মীয় সর্বক্ষেত্রে বিপর্যয় ও ফাসাদের মূল কারণ। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন আনুগত্যের সময় শরীআত নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন না করে। যেমন কেউ সাওম পালন করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে সেটাকে সবসময়ের জন্য করে নিল। আবার কেউ রাতে সালাতে দাড়াতে গিয়ে ঘুম বন্ধ করে দিল। যে বস্তু হালাল করা হয়েছে কেউ তা পরিত্যাগ করে দিল। [ফাতহুল কাদীর] যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অথচ আমি সাওম পালন করি, সাওম পালন থেকে বিরতও হই, রাতে সালাতের জন্য দাঁড়াই, সালাত থেকে বিরত হয়ে ঘুমও যাই। আর বিয়ে-শাদীও করি। অতঃপর যে আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ [বুখারী ৫০৬৩; মুসলিম: ১৪০১]
# এ আয়াতে মানুষকে ক্ষতি ও ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলা হচ্ছেঃ “ঐসব পাপিষ্ঠদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না, তাহলে কিন্তু তাদের সাথে সাথে তোমাদেরকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।” এখানে তাদের প্রতি সামান্যতম ঝোঁকা বা আকৃষ্ট হওয়া এবং তাদের প্রতি আস্থা বা সম্মতি জ্ঞাপন করাও নিষেধ করা হয়েছে। এই ঝোঁকা ও আকর্ষণের অর্থ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের কয়েকটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে পারস্পরিক কোন বিরোধ নেই। বরং প্রত্যেকটি উক্তিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে শুদ্ধ ও সঠিক ইবন আব্বাস বলেন, যালেমদের চাটুকার হবে না। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, তাদের শির্কী কর্মকাণ্ডের পক্ষপাতিত্ব করবে না। [ইবন কাসীর] কাতাদাহ বলেন, এর অর্থঃ “পাপিষ্ঠদের সাথে বন্ধুত্ব করবে না, তাদের কথামত চলবে না।” [মা’আনিল কুরআন লিন নাহহাস; কুরতুবী] ইবন জুরাইজ বলেন, এর অর্থঃ “পাপিষ্ঠদের প্রতি আদৌ আকৃষ্ট হবে না। [কুরতুবী] আবুল আলিয়া বলেনঃ “তাদের কার্যকলাপ ও কথাবার্তা পছন্দ করো না।” [কুরতুবী ইবন কাসীর সুদী]’ সুদ্দী বলেনঃ “যালেমদের চাটুকারিতা করবে না।” ইকরিমা বলেনঃ “তাদের আনুগত্য করবে না।” [বাগভী] ইবন যায়দ বলেন, তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা পরিত্যাগ করবে না। [তাবারী] ইবন আব্বাস থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমরা যালেমদের পক্ষ নিও না। তাদের সাহায্য নিও না, তাহলে মনে হবে যেন তোমরা তাদের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সাথে সন্তুষ্ট রয়েছে। [ইবন কাসীর] তাছাড়া বাহ্যিক আকৃতি-প্রকৃতিতে, লেবাস-পোশাকে, চাল-চলনে তাদের অনুকরণও এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হবে। ইবন যায়দ বলেন, এখানে যালেম বলে কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] কিন্তু মুমিনদের মধ্যে যারা যালেম হবে তাদের সাথে সম্পর্ক বিভিন্ন অবস্থার উপর নির্ভরশীল হবে। [ফাতহুল কাদীর] যদিও সত্যনিষ্ঠ আলেমদের মধ্যে অনেকেই এ আয়াতটিকে সবার ক্ষেত্রেই ব্যাপক বলে মন্তব্য করেছেন। [দেখুন, ইবন তাইমিয়্যা, মাজমু ফাতাওয়া: ১৩/২০৩; মিনহাজুস সুন্নাহ: ৬/১১৭]।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# এই আয়াতে প্রথমত নবী (সাঃ) ও মু’মিনগণকে অটল থাকার কথা বলা হচ্ছে, যা শত্রুর মুকাবিলা করার জন্য একটি বড় অস্ত্র। দ্বিতীয়ত طغيان (সীমালঙ্ঘন) করতে নিষেধ করা হয়েছে, যা মুমিনের চারিত্রিক শক্তি এবং উচ্চমানের মধ্যমপন্থী চরিত্র গঠনের জন্য একান্ত জরুরী। এমনকি উক্ত সীমালঙ্ঘন, শত্রুর সাথে ব্যবহার করার সময়েও বৈধ নয়।
# এর অর্থ হল, যালেমদের সাথে নম্রতা, তোষামোদ (ও সাদৃশ্য অবলম্বন) করে তাদের সাহায্য অর্জন করো না। এতে তারা এ কথা ভাবার সুযোগ পাবে যে, তোমরা তাদের অন্য কথাকেও পছন্দ কর। এইভাবে এটা তোমাদের এক বড় অন্যায় হবে; যা তোমাদেরকে তাদের সাথে জাহান্নামের আগুনের হকদার বানাতে পারে। এতে যালেম শাসকদের সাথে সম্পর্ক রাখার অবৈধতা প্রমাণ হয়। তবে যদি এতে কোন সাধারণ কল্যাণ অথবা দ্বীনী স্বার্থ পরিলক্ষিত হয়, তাহলে অন্তরে ঘৃণা রেখে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা বৈধ হবে। যেমন কোন কোন হাদীসে এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 112- 113
فَاسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ
The Command to Stand Firm and Straight .
Allah says;
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْاْ
So stand (ask Allah to make) you firm and straight as you are commanded and those who turn in repentance with you, and transgress not.
Allah, the Exalted, commands His Messenger and His believing servants to be firm and to always be upright. This is of the greatest aid for gaining victory over the enemy and confronting the opposition.
Allah also forbids transgression, which is to exceed the bounds (of what is allowed). Verily, transgression causes destruction to its practitioner, even if the transgression was directed against a polytheist.
إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
Verily, He is All-Seer of what you do.
Allah informs that He is All-Seer of the actions of His servants. He is not unaware of anything and nothing is hidden from Him.
Concerning Allah’s statement.
وَلَا تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ
And incline not toward those who do wrong,
Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas said,
“Do not compromise with them.”
Ibn Jarir said that Ibn Abbas said,
“Do not side with those who do wrong.”
This is a good statement. This means,
“Do not seek assistance from wrongdoers, because it will be as if you are condoning their actions (of evil).”
فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ
وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللّهِ مِنْ أَوْلِيَاء ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
lest the Fire should touch you, and you have no protectors other than Allah, nor you would then be helped.
This means that you will not have besides Allah any friend who can save you, nor any helper who can remove you from His torment.