أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 728)
[ وَلَوْ شَاء رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে তিনি সকল মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন।
And if your Lord had so willed, He could surely have made mankind one Ummah,]
www.motaher21.net
وَ لَوۡ شَآءَ رَبُّکَ لَجَعَلَ النَّاسَ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّ لَا یَزَالُوۡنَ مُخۡتَلِفِیۡنَ ﴿۱۱۸﴾ۙ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে তিনি সকল মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন। কিন্তু তারা সদা মতভেদ করতেই থাকবে।
And if your Lord had willed, He could have made mankind one community; but they will not cease to differ.
اِلَّا مَنۡ رَّحِمَ رَبُّکَ ؕ وَ لِذٰلِکَ خَلَقَہُمۡ ؕ وَ تَمَّتۡ کَلِمَۃُ رَبِّکَ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَہَنَّمَ مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۱۹﴾
তবে তারা নয়, যাদেরকে আপনার রব দয়া করেছে এবং তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। আর ‘আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই’, আপনার রবের এ কথা পূর্ণ হয়েছে।
Except whom your Lord has given mercy, and for that He created them. But the word of your Lord is to be fulfilled that, “I will surely fill Hell with jinn and men all together.”
وَ کُلًّا نَّقُصُّ عَلَیۡکَ مِنۡ اَنۡۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِہٖ فُؤَادَکَ ۚ وَ جَآءَکَ فِیۡ ہٰذِہِ الۡحَقُّ وَ مَوۡعِظَۃٌ وَّ ذِکۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۲۰﴾
রসূলদের ঐ সব বৃত্তান্ত আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, এর দ্বারা আমি তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করি। এর মাঝে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং বিশ্বাসীদের জন্য উপদেশ ও স্মরণীয় বস্তু।
And each [story] We relate to you from the news of the messengers is that by which We make firm your heart. And there has come to you, in this, the truth and an instruction and a reminder for the believers.
وَ قُلۡ لِّلَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ اعۡمَلُوۡا عَلٰی مَکَانَتِکُمۡ ؕ اِنَّا عٰمِلُوۡنَ ﴿۱۲۱﴾ۙ
আর যারা ঈমান আনে না তাদেরকে বলুন, ‘তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমরাও কাজ করছি।
And say to those who do not believe, “Work according to your position; indeed, we are working.
وَ انۡتَظِرُوۡا ۚ اِنَّا مُنۡتَظِرُوۡنَ ﴿۱۲۲﴾
এবং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষা করছি।’
And wait, indeed, we are waiting.”
সুরা: হুদ।
সুরা:১১
১১৮-১২২.নং আয়াত:-
وَلَوْ شَاء رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে তিনি সকল মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন।
And if your Lord had so willed, He could surely have made mankind one Ummah,
১১৮-১২২ নং আয়াতের তাপসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে মূলত বুঝানো হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা কোন কিছু থেকে অপারগ নয়। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন। মানুষের মধ্যে বিভিন্ন দল দেখা যায়, আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তাদের সকলকে হকের ওপর রাখতে পারতেন, তিনি তাদেরকে সঠিক দীন দান করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি বরং তিনি এ দায়িত্ব মানুষকেই দিয়ে দিয়েছেন। তিনি ভাল-মন্দ উভয়টি দেখিয়ে দিয়েছেন এবং তাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করার মত জ্ঞান দিয়েছেন। তাই তারা নিজেরাই পছন্দ করে নেবে এবং সে অনুপাতে আমল করবে। যদি কেউ জাহান্নাম পছন্দ করে তাহলে সে মন্দ পথ বেছে নেবে আর যদি কেউ জান্নাত পছন্দ করে তাহলে সে ভাল পথ বেছে নেবে। এটা মানুষের ইচ্ছাধীন। তাই বলে এর অর্থ এই নয় যেমনটি বাতিল পন্থীরা গ্রহণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা আমার প্রতি রহম করেনি বা আমাকে সঠিক পথ দেখাননি যার ফলে আমি হিদায়েত প্রাপ্ত হইনি এবং জাহান্নামে যেতে হচ্ছে। এতে আমার দোষ নেই। বরং আল্লাহ তা‘আলার দোষ। نعوذ بالله এরূপ কথা-বার্তা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ এবং বললে বড় ধরনের অপরাধ হবে।
(وَلِذٰلِكَ خَلَقَهُمْ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার হিকমত এটাই যে, তিনি মানুষদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ সৌভাগ্যশীল হবে, কেউ দুর্ভাগা হবে। তাদের কেউ মতানৈক্য করবে, কেউ ঐক্যমতের ওপর থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে সৌভাগ্য দান করেছেন তারাই সঠিক পথে থাকবে আর যারা দুর্ভাগা তারাই ভুল পথে যাবে। আর আল্লাহ তা‘আলা অধিকাংশ মানুষ ও জিন জাতি দ্বারাই জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। যারা ভাল কাজ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যারা মন্দ আমল করবে তাদেরকে দিয়েই আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে পূর্ণ করবেন। ভাল ও মন্দ উভয় কাজ করার স্বাধীনতা মানুষকে দেয়া হয়েছে। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلأْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَّزِيْدٍ)
“সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব: তুমি পূর্ণ হয়ে গেছ? (জাহান্নাম) বলবে: আরো আছে কি?” (সূরা ক্বফ ৫০:৩০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জাহান্নামে যখন মানুষ ও জিন জাতি নিক্ষেপ করা হবে তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি কি পূর্ণ হয়েছ? তখন জাহান্নাম বলবে আরো বাকী আছে কি? তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মধ্যে নিজের পা রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে: আপনার মর্যাদার কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪৪৯)
(نُثَبِّتُ بِه۪ فُؤَادَكَ) অর্থাৎ পূর্ববর্তী নাবীদের ঘটনা বর্ণনা করার হিকমত উল্লেখ করা হয়েছে ১. এসব ঘটনা উল্লেখ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্তরকে দীনের ওপর অটল রাখেন। কারণ কাফির-মুশরিকরা নানাভাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দিত। হয়তো তাদের কষ্টে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মন ভেঙ্গে যেতে পারে, তাই পূর্ববর্তী নাবীদের ঘটনা উল্লেখ করে দেখিয়ে দিতেন যে, তারা দীনের জন্য কত কষ্ট করেছে। ২. এসব ঘটনার মাধ্যমে প্রকৃত ব্যাপার তুলে ধরেছেন। কেউ অতীত ইতিহাস বিকৃতি করবে বা নাবীদের নামে মিথ্যা ছড়াবে সে সুযোগ পাবে না। ৩. এসব ঘটনার মধ্যে মু’মিনদের জন্য রয়েছে শিক্ষা যে, পূর্ববর্তী জাতিরা নাবীদের অবাধ্য হওয়ার কারণে কী কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিল।
তাই আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন কাফিরদেরকে বলে দাও, এসব সত্য ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েও যদি ঈমান না আন তাহলে তোমরা তোমাদের আমল চালিয়ে যাও, আমিও আমার সঠিক আমলের ওপর রয়েছি। সময় হলেই প্রকৃত ব্যাপার জানতে পারবে, কে হকের ওপর আর কে বাতিলের ওপর।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. তাকদীরের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে দোষারোপ করা যাবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে জিন ও মানুষ দ্বারা পূর্ণ করবেন।
৩. কুরআনে পূর্ববর্তী নাবী ও তাঁদের জাতির ঘটনা উল্লেখ করার হিকমত জানতে পারলাম।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১৮-১১৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর ক্ষমতা কোন কাজ থেকে অপারগ নয়। তিনি ইচ্ছা করলে সবকেই ইসলামের উপর বা কুফরীর উপর একত্রিত করতে পারতেন। কিন্তু মানুষের মত, দ্বীন, মাযহাব সব সময় যে পৃথক পৃথক ও ভিন্ন ভিন্ন হবে এতে তাঁর বড়ই নিপূণতা রয়েছে। তাদের পন্থা হবে ভিন্ন এবং আর্থিক অবস্থাও হবে পৃথক পৃথক। এক অপরের অধীনে থাকবে। এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীন ও মাযহাবের বিভিন্নতা। হা, তবে যাদের উপর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ হয়, তারা সব সময় রাসূলদের অনুসরণ ও আল্লাহ তাআ’লার হুকুম পালনের কার্যে লেগে থাকে। এখন তারা শেষ নবীর (সঃ) অনুগত। এরাই হচ্ছে মুক্তিপ্রাপ্ত ও সফলকাম। মুসনাদ ও সুনানে হাদীস রয়েছে, যার প্রতিটি সনদ অন্য সনদকে শক্তিশালী করে থাকে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াহুদীদের একাত্তরটি দল হয়েছে এবং খৃষ্টানরা বাহাত্তরটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর আমার উম্মতের তেহাত্তরটি দল হয়ে যাবে। একটি দল ছাড়া সব দলই জাহান্নামী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ একটি দল কারা?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তারা হচ্ছে ওরাই যারা ওরই উপর রয়েছে যার উপর আমি রয়েছি এবং আমার সাহাবীগণ রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম হাকিম (রঃ) তার মুসতাদরাক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
আতা’র (রঃ) উক্তি অনুযায়ী দ্বারা (আরবি) এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও মাজুসী। আর আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত দল দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে একনিষ্ঠ ধর্ম ইসলামের অনুগত লোকেরা। কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এই দলই হচ্ছে আল্লাহ তাআ’লার রহমত প্রাপ্ত ও সংঘবদ্ধ দল, যদিও তাদের দেশ ও দেহ পৃথক। আর অবাধ্য লোকেরাই হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দল, যদিও তাদের দেশ ও দেহ এক হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের জন্য এ জন্যেই হয়েছে। দুর্ভাগা ও ভাগ্যবান এ দু’টো হচ্ছে আদি কালের বন্টন।
হযরত তাউসের (রাঃ) নিকট দু’জন লোক তাদের ঝগড়া নিয়ে হাযির হয়। তারা তাদের পারস্পরিক মতানৈক্যে খুবই বেড়ে যায়। তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা খুবই ঝগড়া করলে এবং তোমাদের পারস্পরিক মতানৈক্য অত্যন্ত বেড়ে গেছে।” তখন তাদের একজন বললো: “আমাদেরকে এ জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে।” তার এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ “তুমি ভুল কথা বললে।” লোকটি তার উক্তির অনুকূলে এই আয়াতটিই পাঠ করলো। তখন হযরত আতা’ (রাঃ) বললেনঃ “তোমাদেরকে এজন্যে সৃষ্টি করা হয় নাই যে, তোমরা পরস্পর মতভেদ সৃষ্টি করবে। বরং তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে দলবদ্ধভাবে ও একমতে থাকার জন্যে এবং রহমত লাভ করার উদ্দেশ্যে।” যেমন হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রহমতের জন্যে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আযাবের জন্যে নয়। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি দানব ও মানবকে আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি।” (৫১ :৫৬) তৃতীয় উক্তি এ-ও আছে যে, তাদের রহমত ও মতভেদের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন মা’লিক (রঃ) এর তাফসীরে বলেন যে, একটিদল জান্নাতী এবং একটি দল জাহান্নামী। এদেরকে রহমত লাভ করার জন্যে এবং ওদেরকে মতভেদ সৃষ্টি করার জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের এই ফায়সালা হয়ে আছে যে, তাঁর সৃষ্টির মধ্যে এই দু’প্রকারের লোক থাকবে এবং এই দু’প্রকারের লোক দ্বারা জান্নাত ও জাহান্নাম পূর্ণ করা হবে। এর পূর্ণ হিকমত একমাত্র তিনিই জানেন।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একবার তর্ক বিতর্ক হয়। জান্নাত বলে, আমার মধ্যে তো শুধুমাত্র দুর্বল লোকেরাই প্রবেশ করে থাকে। আর জাহান্নাম বলেঃ “আমাকে অহংকারী লোকদের জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।” তখন মহা মহিমান্বিত আল্লাহ জান্নাতকে বলেনঃ “তুমি আমার রহমত বা করুণা। আমি যাদেরকে ইচ্ছা করবো তোমার দ্বারা আরাম ও শান্তি দান করবো।” আর জাহান্নামকে বলেনঃ “তুমি আমার শাস্তি। আমি যাদেরকে চাইবো তোমার শাস্তি দ্বারা প্রতিশোধ গ্রহণ করবো। তোমরা উভয়েই পূর্ণ হয়ে যাবে।” বরাবরই বেহেশতে অতিরিক্ত জায়গা থাকবে। শেষ পর্যন্ত ওর জন্যে আল্লাহ তাআ’লা নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন এবং তাদেরকে ওর মধ্যে বসিয়ে দিবেন। জাহান্নামও সদা সর্বদা তার মধ্যে অতিরিক্ত কিছু চাইতে থাকবে। তখন আল্লাহ তাআ’লা ওর মধ্যে নিজের পা রেখে দিবেন। তখন সে বলে উঠবেঃ “আপনার মর্যাদার কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে”।
# ১২১-১২২ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নির্দেশের সুরে বলছেনঃ ধমকানো, ভয় প্রদর্শন এবং সতর্কতা হিসাবে কাফিরদেরকে বলে দাওঃ আচ্ছা, তোমরা তোমাদের নীতি থেকে না সরলে না সর, আমরাও আমাদের নীতির উপর কাজ করে যাচ্ছি। তোমাদের পরিণাম কি ঘটে তার জন্যে তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো, আমরাও আমাদের পরিণামের প্রতীক্ষায় থাকলাম। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যে, দুনিয়া কাফিরদের পরিণাম দেখেছে এবং ঐ মুসলমানদেরও পরিণাম লক্ষ্য করেছে যারা আল্লাহর ফযল ও করমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বিরুদ্ধবাদীদের উপর জয়যুক্ত হয়ে দুনিয়াকে মুঠের মধ্যে নিয়ে ফেলেছে। সুতরাং সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
সাধারণত এ ধরনের অবস্থায় তকদীরের নামে যে অবতারণা করা হয়ে থাকে এটি তার জবাব। ওপরে অতীতের জাতিদের ধ্বংসের যে কারণ বর্ণনা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা যেতে পারতো যে, তাদের মধ্যে সৎলোক না থাকা বা অতি অল্প সংখ্যা থাকাও আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যে শামিল ছিল, এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট জাতিদেরকে এজন্য দায়ী করা হচ্ছে কেন? তাদের মধ্যে আল্লাহ বিপুল সংখ্যক সৎলোক সৃষ্টি করে দিলেন না কেন? এর জবাবে মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কিত বাস্তব সত্যটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পশু, উদ্ভিদ ও অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষকেও প্রকৃতিগতভাবে একটি নির্দিষ্ট ও গতানুগতিক পথে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হবে এবং এ পথ থেকে সরে গিয়ে অন্য কোন পথে সে চলতে পারবে না, মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ এটা কখনোই চান না। যদি এটাই তাঁর ইচ্ছা হতো তাহলে ঈমানের দাওয়াত, নবী প্রেরণ ও কিতাব নাযিলের কি প্রয়োজন ছিল? সমস্ত মানুষ মু’মিন ও মুসলমান হিসেবে পয়দা হতো এবং কুফরী ও গুণাহগারীর কোন সম্ভাবনাই থাকতো না। কিন্তু মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা আসলে হচ্ছে এই যে, তাকে নির্বাচন ও গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হবে। তাকে নিজের পছন্দ মাফিক বিভিন্ন পথে চলার ক্ষমতা দেয়া হবে। তার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের পথ খুলে দেয়া হবে। তারপর প্রত্যেকটি মানুষকে ও মানুষের প্রত্যেকটি দলকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি পথ নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়ে তার ওপর চলার সুযোগ দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেকে নিজের প্রচেষ্টা ও উপার্জনের ফল হিসেবেই সবকিছু লাভ করবে। কাজেই যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে মানুষকে পয়দা করা হয়েছে তা যখন নির্বাচনের স্বাধীনতা এবং কুফরী ও ঈমানের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তখন যে জাতি নিজে অসৎ পথে এগিয়ে যেতে চায় আল্লাহ তাকে জোর করে সৎ পথে নিয়ে যাবেন এটা কেমন করে হতে পারে? কোন জাতি যখন নিজের নির্বাচনের ভিত্তিতে মানুষ তৈরীর এমন এক কারখানা বানিয়েছে যার ছাঁচ থেকে সবচেয়ে বড় অসৎ, ব্যভিচারী, জালেম ও ফাসেক লোক তৈরী হয়ে বেরিয়ে আসবে, তখন আল্লাহ কেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সেখানে এমন সব জন্মগত সৎলোক সরবরাহ করবেন যারা তার বিকৃত ছাঁচগুলোকে ঠিক করে দেবে? এ ধরনের হস্তক্ষেপ আল্লাহর রীতি বিরোধী। সৎ ও অসৎ উভয় ধরনের লোক প্রত্যেক জাতি নিজেই সরবরাহ করবে। যে জাতি সমষ্টিগতভাবে অসৎ পথ পছন্দ করবে, যার মধ্য থেকে সততার ঝাণ্ডা বুলন্দ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ লোক এগিয়ে আসবে না এবং যে তার সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কার প্রচেষ্টার বিকশিত হওয়া ও সমৃদ্ধি লাভ করার কোন অবকাশই রাখবে না, আল্লাহ তাকে জোর করে সৎ বানাতে যাবেন কেন? তিনি তো তাকে সেই পরিণতির দিকে এগিয়ে দেবেন যা সে নিজের জন্য নির্বাচন করে নিয়েছে। তবে আল্লাহর রহমতের অধিকারী যদি কোন জাতি হতে পারে তাহলে সে হবে একমাত্র সেই জাতি যার মধ্যে এমন বহু লোকের জন্ম হবে যারা নিজেরা সৎকর্মশীলতা, কল্যাণ ও ন্যায়ের দাওয়াতে সাড়া দেবে এবং এ সঙ্গে নিজেদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে সংস্কার সাধনকারীদের কাজ করতে পারার মতো পরিবেশ ও যোগ্যতা টিকিয়ে রাখবে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আনআম ২৪ টীকা)
যদি কেবলমাত্র সমস্ত মানুষকে কোন না কোনভাবে সত্যপন্থী বানানোই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে কিতাব নাযিল করা, মু’মিনদেরকে কাফেরদের মোকাবিলায় সংগ্রামরত করা এবং সত্যের দাওয়াতকে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের মনযিল অতিক্রম করাবার কি প্রয়োজন ছিল? আল্লাহর একটি মাত্র সৃজনী ইঙ্গিতেই এ কাজ সম্পন্ন হতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ এ কাজটি এ পদ্ধতিতে করতে চান না। তিনি চান সত্যকে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে লোকদের সামনে পেশ করতে। তারপর তাদের মধ্য থেকে যারা সঠিক ও নির্ভুল চিন্তা শক্তি প্রয়োগ করে সত্যকে চিনে নেবে, তারা নিজেদের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। নিজেদের চরিত্রকে তার ছাঁচে ঢালাই করে বাতিল পূজারীদের মোকাবিলায় নিজেদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবে। নিজেদের শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন, উন্নত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, উত্তম জীবনধারা এবং পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্র মাধুর্যে মানব সমাজের সত্যনিষ্ঠ ও সদাচারী ব্যক্তিদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে থাকবে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি সংগ্রাম চালিয়ে স্বাভাবিক পরিবর্তনের পথ ধরে আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার মনযিলে পৌঁছে যাবে। এ কাজে আল্লাহ তাদেরকে পথ দেখাবেন এবং যে পর্যায়ে তারা আল্লাহর কাছ থেকে যে ধরনের সাহায্য লাভের যোগ্য বলে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারবে সে পর্যায়ে তাদেরকে সে সাহায্যও দিয়ে যেতে থাকবেন। কিন্তু যদি কেউ চায় এ স্বাভাবিক পথ পরিহার করে আল্লাহ নিছক তাঁর প্রবল পরাক্রান্ত শক্তির জোরে খারাপ চিন্তা নির্মূল করে মানুষের মধ্যে সুস্থ চিন্তার বিস্তার ঘটাবেন এবং অসুস্থ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিলোপ সাধন করে সৎ ও সুস্থ জীবনধারা নির্মাণ করে দেবেন, তাহলে এমনটি কখনো হবে না। কারণ, যে প্রজ্ঞাপূর্ণ কর্মনীতির ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় একটি দায়িত্বশীল প্রাণী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তাকে কাজ করার ও আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুকে কাজে লাগাবার ক্ষমতা দিয়েছেন, আনুগত্য ও অবাধ্যতা করার স্বাধীনতা দান করেছেন, পরীক্ষার অবকাশ দিয়েছেন এবং তার প্রচেষ্টা অনুযায়ী পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের জন্য ফায়সালার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] ولذلك (এই জন্যই) শব্দে ‘এই’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে? অনেকে ‘মতভেদ’ এবং অনেকে ‘দয়া’ বুঝিয়েছেন। উভয় অবস্থাতেই উদ্দেশ্য এই যে, আমি মানুষ জাতিকে পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করেছি। যে ব্যক্তি সত্য দ্বীনের বিপরীত পথ অবলম্বন করবে, সে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে। আর যে তা বরণ ও গ্রহণ করে নেবে, সে কৃতকার্য এবং আল্লাহর রহমতের অধিকারী হবে।
[২] অর্থাৎ, আল্লাহর লিখিত তকদীরে ও ফায়সালাতে এ কথা নির্ধারিত হয়ে আছে যে, কিছু মানুষ জান্নাত ও কিছু মানুষ জাহান্নামের অধিকারী হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে মানুষ ও জীন দ্বারা পরিপূর্ণ করা হবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সাঃ) বলেছেন, “জান্নাত ও জাহান্নাম একদা আপোসে ঝগড়া আরম্ভ করল; জান্নাত বলল, কি ব্যাপার আমার মাঝে কেবল তারাই আসবে, যারা দুর্বল ও সমাজের নিম্নস্তরের লোক? জাহান্নাম বলল, আমার ভিতরে তো বড় বড় পরাক্রমশালী ও অহংকারী মানুষরা থাকবে।” আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বললেন, ‘তুমি আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যাকে চাইব, রহম করব।’ আর জাহান্নামকে বললেন, ‘তুমি আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে চাইব, শাস্তি দেব।’ আল্লাহ তাআলা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়কে পরিপূর্ণ করবেন। জান্নাতে সর্বদা তাঁর অনুগ্রহ ও দয়া থাকবে। জান্নাত খালি থাকলে পরিশেষে আল্লাহ তাআলা এমন সৃষ্টি সৃজন করবেন যারা জান্নাতের অবশিষ্ট স্থানে বসবাস করবে। আর জাহান্নাম, জাহান্নামীদের সংখ্যাধিক্য সত্ত্বেও যখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তুমি পরিপূর্ণ হয়েছ কি?’ তখন সে ‘আরো আছে কি?’ বলে আওয়াজ দেবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাতে নিজ পা রেখে দেবেন, যার ফলে জাহান্নাম ‘বাস! বাস! তোমার মর্যাদার কসম!’ বলে আওয়াজ দেবে।” (বুখারী)
# অবিলম্বে তোমরা জানতে পারবে যে, শুভ পরিণামের অধিকারী কে এবং এও জানতে পারবে যে যালেমরা কৃতকার্য হতে পারবে না। সুতরাং আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে পূর্ণ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে জয়যুক্ত করেছেন এবং পুরো আরব উপদ্বীপ ইসলামের অধীনে এসে গেছে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# তারা তাদের ধর্ম-বিশ্বাসে বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত হবেই। [ইবন কাসীর] তবে যাদেরকে আপনার প্রভু রহমত করেছেন তাদের ব্যাপারটি ভিন্ন। তারা হচ্ছেন রাসূলের প্রকৃত অনুসারী। যারা রাসূলের নির্দেশ অনুসারে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে ছিল, রাসূল যা জানিয়েছেন সেটা অনুসারে তারা চলেছে। তারপর যখন তাদের কাছে সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করলেন, তখন তার অনুসরণ করেছে, তাকে সত্য বলে মেনেছে, তাকে সাহায্য করেছে। এভাবে তারা দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা লাভ করেছে। আর তারাই হচ্ছে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। [ইবন কাসীর]
# রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম তাদের প্রভুর দরবারে বিবাদ করবে। জান্নাত বলবেঃ হে রব! আমার কাছে শুধু দূর্বল ও পতিত লোকজনই প্রবেশ করছে। আর জাহান্নাম বলবে, হে রব! আমাকে অহংকারীদের দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতকে বলবেনঃ “তুমি আমার রহমত, আর জাহান্নামকে বলবেনঃ তুমি আমার আযাব। যাকে ইচ্ছা সেখানে পৌছাব। তবে তোমাদের উভয়কে পূর্ণ করার দায়িত্ব আমারই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তবে জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাউকে সামান্যতম যুলুমও করবেন না। আর জাহান্নামের জন্য তিনি কিছু সৃষ্টি করবেন যা দ্বারা তিনি তা পুরা করবেন। তারপরও সে বলতে থাকবেঃ আর বেশী আছে কি? তিন বার বলবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ জাহান্নামে তাঁর পবিত্র পা রাখবেন ফলে তা পূর্ণ হয়ে যাবে। তার একাংশ অপরাংশের সাথে মিলিত হয়ে যাবে। এবং বলবেঃ কাত্ব, কাত্ব, কাত্ব। (অর্থাৎ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার শব্দ)। [বুখারীঃ ৭৪৪৯]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- HUD.
Sura: 11
Verses :- 118-122
وَلَوْ شَاء رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً
And if your Lord had so willed, He could surely have made mankind one Ummah,
Allah has not made Faith universally accepted
Allah says;
وَلَوْ شَاء رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً
And if your Lord had so willed, He could surely have made mankind one Ummah, but they will not cease to disagree.
Allah, the Exalted, informs that He is able to make all of mankind one nation upon belief, or disbelief.
This is just as He said,
وَلَوْ شَأءَ رَبُّكَ لامَنَ مَن فِى الاٌّرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا
And had your Lord willed, those on earth would have believed, all of them together. (10:99)
Allah goes on to say,
وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ
إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ
but they will not cease to disagree. Except him on whom your Lord has bestowed His mercy,
This means that people will always differ in religions, creeds, beliefs, opinions and sects.
Concerning Allah’s statement,
إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ
(Except him on whom your Lord has bestowed His mercy),
This means that those who have received the mercy of Allah by following the Messengers are excluded from this. They are those who adhere to what they are commanded in the religion by the Messengers of Allah.
That has always been their characteristic until the coming of the finality of the Prophets and Messengers (Muhammad). Those who received Allah’s mercy are those who followed him, believed in him and supported him. Therefore, they succeeded by achieving happiness in this life and the Hereafter.
وَلِذَلِكَ خَلَقَهُمْ
and for that did He create them.
They are the Saved Sect mentioned in the Hadith recorded in the Musnad and Sunan collections of Hadith. The routes of transmission of this Hadith all strengthen each other (in authenticity). In these narrations the Prophet said,
إِنَّ الْيَهُودَ افْتَرَقَتْ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَإِنَّ النَّصَارَى افْتَرَقَتْ عَلَى اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَسَتَفْتَرِقُ هَذِهِ الاُْمَّةُ عَلَى ثَلَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً كُلُّهَا فِي النَّارِ إِلاَّ فِرْقَةً وَاحِدَة
Verily, the Jews split into seventy-one sects, and the Christians split into seventy-two sects, and this nation (of Muslims) will split into seventy-three sects. All of them will be in the Fire except one sect.
They (the Companions) said, “Who are they (the Saved Sect) O Messenger of Allah!”
He said,
مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
The sect that is upon what my Companions and I are upon.
Al-Hakim recorded this narration in his Mustadrak with this additional wording.
Concerning Allah’s statement,
وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَامْلنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
And the Word of your Lord has been fulfilled (His saying):”Surely, I shall fill Hell with Jinn and men all together.”
Allah, the Exalted, informs that He precedes everything in His preordainment and decree, by His perfect knowledge and penetrating wisdom. The result of this decree is that from those whom He has created, some deserve the Paradise and some deserve the Hell Fire. From this decree is that He will fill the Hellfire with both mankind and Jinns. His is the profound evidence and the perfect wisdom.
In the Two Sahihs it is recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
اخْتَصَمَتِ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ الْجَنَّةُ مَا لِي لَا يَدْخُلُنِي إِلاَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ
Paradise and the Hellfire debated. Paradise said, `None will enter me except the weak and despised of the people.’
وَقَالَتِ النَّارُ أُوثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِينَ وَالْمُتَجَبِّرِينَ
The Hell- fire said, `I have inherited the haughty and the arrogant people.’
فَقَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِلْجَنَّةِ أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ
Then Allah said to the Paradise, `You are My mercy and I grant mercy with you to whoever I wish.’
وَقَالَ لِلنَّارِ أَنْتِ عَذَابِي أَنْتَقِمُ بِكِ مِمَّنْ أَشَاءُ
Then He said to the Hellfire, `You are My torment and I take vengeance with you upon whoever I wish.
وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْوُهَا
I will fill each one of you.’
فَأَمَّا الْجَنَّةُ فَلَأ يَزَالُ فِيهَا فَضْلٌ حَتَّى يُنْشِىءَ اللهُ لَهَا خَلْقًا يُسْكِنُ فَضْلَ الْجَنَّةِ
However, the Paradise will always have more bounties, to such an extent that Allah will create more creatures to dwell in it and enjoy its extra bounties.
وَأَمَّا النَّارُ فَلَأ تَزَالُ تَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهَا رَبُّ الْعِزَّةِ قَدَمَهُ
The Hellfire will continue saying, `Are there anymore (to enter me),’ until the Lord of might places His Foot over it.
فَتَقُولُ قَطْ قَطْ وَعِزَّتِك
Then it (Hell) will say, “Enough, enough, by Your might!
The Conclusion
Allah says;
وَكُـلًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُوَادَكَ
وَجَاءكَ فِي هَـذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُوْمِنِينَ
And all that We relate to you of the news of the Messengers is in order that We may make strong and firm your heart thereby. And in this has come to you the truth, as well as an admonition and a reminder for the believers.
Allah, the Exalted, is saying, `We relate all of these stories to you (Muhammad) concerning what happened with the Messengers who came before you with their nations. This is an explanation of what transpired in their arguments and disputes and how the Prophets were all rejected and harmed. These stories also explain how Allah helped His party of believers and disgraced His enemies, the disbelievers.
We relate all of this to you (Muhammad) in order to make your heart firm and so that you may take an example from your brothers who passed before you of the Messengers.’
Concerning Allah’s statement,
وَجَاءكَ فِي هَـذِهِ الْحَقُّ
(And in this has come to you the truth),
This is referring to this Surah itself.
This was said by Ibn Abbas, Mujahid and a group of the Salaf and it is the correct view.
This means,
This comprehensive Surah contains the stories of the Prophets and how Allah saved them, and the believers along with them and how He destroyed the disbelievers. There has come to you (Muhammad) stories of truth and true events in this Surah.
In this Surah is an admonition that prevents the disbelievers, and a reminder that causes the believers to reflect.
Allah says;
وَقُل لِّلَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ
And say to those who do not believe:
Allah, the Exalted, commands His Messenger to say to those who disbelieve in what he has come with from his Lord, by way of warning,
اعْمَلُواْ عَلَى مَكَانَتِكُمْ
Act according to your ability,
This means upon your path and your way.
إِنَّا عَامِلُونَ
We are acting (in our way).
This means that we are upon our path and our way (Islam).
وَانتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
And you wait ! We (too) are waiting.
This means,
فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن تَكُونُ لَهُ عَـقِبَةُ الدَّارِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّـلِمُونَ
And you will come to know for which of us will be the (happy) end in the Hereafter. Certainly the wrongdoers will not be successful. (6:135)
Verily, Allah fulfilled His promise to His Messenger, helped him and aided him. He made His Word uppermost (victorious), and the word of those who disbelieved lowly and disgraced.
Allah is truly the Most Mighty, Most Wise.