أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 736)
[ اللّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَى
আল্লাহ তা জানেন, প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে,
Allah knows what every female bears,]
www.motaher21.net
اَللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَحۡمِلُ کُلُّ اُنۡثٰی وَ مَا تَغِیۡضُ الۡاَرۡحَامُ وَ مَا تَزۡدَادُ ؕ وَ کُلُّ شَیۡءٍ عِنۡدَہٗ بِمِقۡدَارٍ ﴿۸﴾
প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং গর্ভাশয়ে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ্ তা জানেন এবং তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে।
Allah knows what every female carries and what the wombs lose [prematurely] or exceed. And everything with Him is by due measure.
عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَ الشَّہَادَۃِ الۡکَبِیۡرُ الۡمُتَعَالِ ﴿۹﴾
অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সম্বন্ধে তিনি অবগত; তিনি সুমহান, সর্বোচ্চ।
[He is] Knower of the unseen and the witnessed, the Grand, the Exalted.
سَوَآءٌ مِّنۡکُمۡ مَّنۡ اَسَرَّ الۡقَوۡلَ وَ مَنۡ جَہَرَ بِہٖ وَ مَنۡ ہُوَ مُسۡتَخۡفٍۭ بِالَّیۡلِ وَ سَارِبٌۢ بِالنَّہَارِ ﴿۱۰﴾
তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে বা যে তা প্রকাশ করে, রাতে যে আত্মগোপন করে এবং দিনে যে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সবাই আল্লাহ্র নিকট সমান।
It is the same [to Him] concerning you whether one conceals [his] speech or one publicizes it and whether one is hidden by night or conspicuous [among others] by day.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
৮-১০ নং আয়াত:-
اللّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَى
আল্লাহ তা জানেন, প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে,
Allah knows what every female bears,
৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সূক্ষ্মদর্শিতা ও সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন এ কথাই ফুটে উঠেছে। এ পৃথিবীর স্থলে-জলে, দিবালোকে-আধাঁরে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ও জমিনে-আকাশমণ্ডলীতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে, হবে এবং আছে কোন কিছুই আল্লাহ তা‘আলার নিকট অস্পষ্ট বা গোপন নয়। এমনকি একজন নারী গর্ভে কী ধারণ করে তাও আল্লাহ তা‘আলা জানেন। সন্তান জীবিত হবে না মৃত, সৌভাগ্যশীল হবে না দুর্ভাগা, ছেলে হবে না মেয়ে হবে ইত্যাদি আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব থেকেই জ্ঞাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنْشَأَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنْتُمْ أَجِنَّةٌ فِيْ بُطُوْنِ أُمَّهٰتِكُمْ)
“তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরূপে ছিলে।” (সূরা নাজম ৫৩:৩২)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ أُمَّهٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنْۭ بَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمٰتٍ ثَلَاثٍ)
“তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে এক অবস্থার পর অন্য অবস্থায় তিন স্তরের অন্ধকারের মধ্যে। তিনিই আল্লাহ তা‘আলা, তোমাদের প্রতিপালক, সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই।” (সূরা যুমার ৩৯:৬)
এখানে তিনটি অন্ধকার বলতে প্রথম অন্ধকার মায়ের পেট, দ্বিতীয় অন্ধকার গর্ভাশয়, তৃতীয় অন্ধকার ঝিল্লী, তা হল সেই পাতলা আবরণ যাতে বাচ্চা জড়ানো থাকে। এ সম্পর্কে সূরা ফাতিরের ১১ নং এবং সূরা ফুসসিলাতের ৪৭ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
এমনকি জরায়ুতে যা বাড়ে-কমে তাও আল্লাহ তা‘আলা জানেন। এখানে বাড়ে-কমে দ্বারা উদ্দেশ্য হল গর্ভের সময় কাল। অর্থাৎ কারো আট, আবার কারো দশ মাসেও সন্তান প্রসব হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুর একটি নির্দিষ্ট সময়কাল রয়েছে। অর্থাৎ কার জীবনকাল কত দিন? সে রিযিকের কত অংশ পাবে ইত্যাদি। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তাঁরই এক কন্যা তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে খবর দেন যে, তার এক ছেলে মৃত্যু শিয়রে দণ্ডায়মান। সুতরাং তিনি তাঁর উপস্থিতি কামনা করেন। এ খবর শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মেয়ের কাছে সংবাদ পাঠান: আল্লাহ তা‘আলা যা প্রেরণ করেন তা তাঁরই। তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুরই একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। তোমরা তাকে বল, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা করে। (সহীহ বুখারী হা: ১৬০২)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়েই অবগত আছেন আর প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্ধারিত সময়কাল রয়েছে।
শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতে বলছেন যে তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সকল বিষয়েই অবগত আছেন, তাঁর নিকট কোন বিষয় গোপন নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ط وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ)
“অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আনয়াম ৬:৭৩)
অতএব আল্লাহ তা‘আলা র নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। তিনি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সবই জানেন। আর তিনি সুমহান, সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে বড় আর কেউ নেই। এমনকি তিনি তাও জানেন যা মানুষ তাদের অন্তরে কল্পনা করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَإِنَّه۫ يَعْلَمُ السِّرَّ وَأَخْفٰي)
“যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে (জেনে রেখ) তিনি যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন।” (সূরা ত্বহা ২০:৭)
তিনি ছোট-বড় সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত এবং রাত্রের অন্ধকারে যে আত্মগোপন করে ও দিবসে যে বিচরণ করে সবই তাঁর জ্ঞানায়ত্ত্বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَأْنٍ وَّمَا تَتْلُوْا مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا إِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِ ط وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَا۬ءِ وَلَآ أَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَآ أَكْبَرَ إِلَّا فِيْ كِتٰبٍ مُّبِيْنٍ)
“তুমি যে কোন অবস্থায় থাক না কেন এবং তুমি কুরআন হতে যা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোন কার্যই কর না কেন, আমি তোমাদের পরিদর্শক যখন তোমরা তাতে পূর্ণরূপে মনোনিবেশ কর। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ নেই।” (সূরা ইউনুস ১০: ৬১)
অতএব, আল্লাহ তা‘আলা র দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। তাই সে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সকল পাপ কাজ ও আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী বর্জন করা প্রত্যেক মু’মিনের একান্ত কর্তব্য।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার নিকট সমস্ত কিছুর জ্ঞান রয়েছে।
২. আল্লাহ তা‘আলা অদৃশ্য বস্তুর খবর জানেন, এমনকি মায়ের গর্ভে যা কিছু বাড়ে-কমে তাও তিনি জানেন। তিনি ব্যতীত আর কেউ অদৃশ্যের বা গায়েবের খবর জানে না।
৩. মানুষকে তিনটি অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়।
৪. আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বড়, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই ইত্যাদি।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮-৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, কোন জিনিসই তাঁর অগোচরে নেই। সমস্ত মাদীরা, স্ত্রী লিঙ্গ জন্তুই হোক অথবা মানুষই হোক, ওদের পেটের বা গর্ভের বাচ্চা সম্পর্কে জ্ঞান বা অবগতি আল্লাহ তাআ’লার রয়েছে। পেটে কি আছে তা তিনি ভালরূপেই জানেন। অর্থাৎ পুংলিঙ্গ কি স্ত্রী লিঙ্গ, ভাল কি মন্দ, বেশী বয়স পাবে কি কম বয়স পাবে এ সব খবর তিনি রাখেন। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তিনি ভালরূপেই জানেন যখন তিনি তোমাদেরকে যমীন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যখন তোমাদের মাতাদের পেটে লুকায়িত থাকো (শেষ পর্যন্ত)।” (৫৩: ৩২) অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেটে সৃষ্টি করেন, এক সৃষ্টির পরে আর এক সৃষ্টি, তিন অন্ধকারের মধ্যে (শেষ পর্যন্ত)।” (৩৯: ৬) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর আমি ওকে শুক্র বিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। পরে আমি শুক্র বিন্দুকে পরিণত করি রক্ত পিন্ডে, অতঃপর রক্ত পিন্ডকে পরিণত করি মাংস পিন্ডে এবং মাংস পিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে, অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা, অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্ঠি রূপে; অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।” (২৩:১২-১৪)
হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমা হতে থাকে। অতঃপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত ওটা জমাট রক্তের আকারে থাকে। তারপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত ওটা মাংস পিন্ড রূপে থাকে। এরপর আল্লাহ তাআ’লা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন, যাকে চারটি কথা লিখে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওগুলি হচ্ছেঃ তার রিয্ক, তার বয়স, এবং তার ভাল ও মন্দ হওয়া।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসে আছে যে, ঐ সময় ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! সে নর হবে, না নারী হবে? হতভাগ্য হবে, না সৌভাগ্যবান। হবে? তার জীবিকা কি হবে? তার বয়স কত হবে?” আল্লাহ তাআ’লা তখন বলে দেন এবং তিনি লিখে নেন।
হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অদৃশ্যের পাঁচটি চাবী রয়েছে যা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। (১) আগামীকল্যের খবর আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়। (২) জরায়ুতে যা কিছু কমে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। (৩) বৃষ্টি কখন হবে তার অবগতিও শুধুমাত্র আল্লাহরই আছে। (৪) কে কোথায় মারা যাবে এ খবরও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এবং (৫) কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে এ খবরও একমাত্র আল্লাহই রাখেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
‘জরায়ুতে যা কিছু কমে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভ পড়ে যাওয়া। আর ‘জরায়ুতে যা কিছু বাড়ে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ কিভাবে তা পূর্ণ হয় এ খবরও আল্লাহ তাআ’লাই রাখেন। দেখা যায় যে, কোন কোন নারী গর্ভ ধারণ করে থাকে পূর্ণ দশ মাস। আবার কেউ ধারণ করেন ন’মাস। কারো গর্ভ বাড়ে এবং কারো কমে। ন’মাস থেকে কমে যাওয়া এবং নমাস থেকে বেড়ে যাওয়া আল্লাহ তাআ’লার অবগতিতে রয়েছে।
হযরত যহহাক (রঃ) বলেনঃ “আমি দু’বছর মায়ের পেটে থেকেছি। আমি যখন ভূমিষ্ঠ হই তখন আমার সামনে দু’টি দাঁত বেরিয়ে পড়েছিল।” হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, গর্ভধারণের শেষ সময়কাল হচ্ছে দু’বছর। কমে যাওয়া দ্বারা কারো কারো মতে উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভধারণের সময়কালের মধ্যে রক্ত আসা। আর বেড়ে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভধারণের সময়কাল ন’মাসের বেশী হওয়া। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ন’মাসের পূর্বে যদি স্ত্রীলোক রক্ত দেখে তবে গর্ভ ন’মাস ছাড়িয়ে যায় হায়েযের সময়কালের মত। রক্ত ঝরলে শিশু ভাল হয় এবং রক্ত না ঝরলে শিশু পূর্ণ ও বড় হয়। হযরত মাকহুল (রঃ) বলেনঃ “মায়ের পেটে শিশু সম্পূর্ণরূপে শান্তি ও আরামে থাকে। তার কোনই কষ্ট হয় না। তার মায়ের হায়েযের রক্ত তার খাদ্য হয়ে থাকে। তা অতি সহজে তার কাছে পৌঁছে থাকে। এ কারণেই গর্ভ ধারণের সময়কালে মায়ের হায়েয বা ঋতু হয় না। যখন সন্তান ভূমিষ্টি হয় তখন মাটিতে পড়া মাত্রই চীৎকার করে ওঠে। ঐ অপরিচিত জায়গায় সে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। যখন তার নাভি কেটে দেয়া হয় তখন তার খাদ্য আল্লাহ তাআ’লা তার মায়ের বক্ষে পৌঁছিয়ে দেন। তখনও বিনা সন্ধানে, বিনা চাওয়ায়, বিনা কষ্টে এবং বিনা চিন্তায় সে খাদ্য পেয়ে থাকে। তারপর কিছুটা বড় হলে সে নিজের হাতে পানাহার করতে শুরু করে। কিন্তু বালেগ হওয়া মাত্রই জীবিকার জন্যে সে হা-হুতাশ করতে থাকে। মরে যাওয়া এবং নিহত হওয়া পর্যন্ত রুযী লাভের সম্ভাবনা থাকলে তখনও তাতে সে কোন দ্বিধাবোধ করে না। আফসোস। হে বনি আদম (আঃ)! তোমাকে দেখে বিস্মিত হতে হয়! যিনি তোমাকে তোমার মায়ের পেটে আহার্য দিলেন, যিনি তোমাকে তোমার মায়ের কোলে আহার্য দিলেন, যিনি তোমাকে তোমার বয়োঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত খেতে দিলেন, এখন তুমি বয়োঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান হয়ে (তাকে ভুলে গেলে এবং) বলতে শুরু করলেঃ হায়! কোথা থেকে খেতে পাবো? আমার মরণ হোক বা আমি নিহত হই।” অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন (আরবি) (এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে)। এ সম্পর্কে কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তাঁর বিধানে প্রত্যেকেরই অয়ু, রিযক ইত্যাদি নির্ধারিত রয়েছে।
সহীহ হাদীসে আছে যে, নবীর (সঃ) এক কন্যা তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে খবর দেন যে, তাঁর এক ছেলে মৃত্যু শিয়রে দণ্ডায়মান। সুতরাং তিনি তাঁর উপস্থিতি কামনা করেন। এ খবর শুনে নবী (সঃ) তাঁর মেয়ের কাছে সংবাদ পাঠানঃ “আল্লাহ যা গ্রহণ করেন তা তাঁরই। তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুরই একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।” (অতঃপর তিনি জনগণকে বলেনঃ) “তোমরা তাকে নির্দেশ দাও যে, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা রাখে।”
আল্লাহ তাআ’লা ঐ সব কিছুই জানেন যা তাঁর বান্দাদের থেকে গোপনীয় রয়েছে এবং যা তাদের কাছে প্রকাশমান আছে। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। তিনি সর্বাপেক্ষা বড়। তিনি সবচেয়ে উচ্চ। সবকিছুই তাঁর অবগতিতে রয়েছে। সমস্ত মাখলুক তার কাছে বিনীত ও অবনত। এটা ইচ্ছায়ই হোক বা বাধ্য হয়েই হোক।
# আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর জ্ঞান সমস্ত মাখলুককে ঘিরে রয়েছে। কোন জিনিসই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই। তিনি নিম্ন ও উচ্চ শব্দ শুনতে পান। তিনি প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব কিছুই জানেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি যদি কথাকে প্রকাশ কর তবে জেনে রেখোঁরেখো যে, তিনি (ওটা তো জানতে পারেনই, এমন কি) অতি গোপনীয় কথাও জানেন।” (২০: ৭)
আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু গোপন কর এবং যা কিছু প্রকাশ কর তিনি তা জানেন।” (২৭: ২৫)
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “ঐ আল্লাহ পবিত্র যাঁর শ্রবণ সমস্ত শব্দকে ঘিরে রয়েছে। আল্লাহর শপথ! নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী একজন মহিলা রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করে তাঁর সাথে এমন আস্তে আস্তে কথা বলে যে, আমি পার্শ্বেই অথচ ভালরূপে তার কথা আমার কর্ণগোচর হয় নাই। ঐ সময় আল্লাহ তাআ’লা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “ (হে রাসূল (সঃ)!) আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকটও ফরিয়াদ করছে; আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (৫৮: ১)
যে ব্যক্তি তার ঘরের কোণায় রাত্রির অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে সে এবং যে ব্যক্তি দিনের বেলায় প্রকাশ্যভাবে জনবহুল পথে চলাচল করে, অল্লাহর অবগতিতে এরা দু’জন সমান। যেমন তিনি (আরবি) এই আয়াতে বলেছেন। (১১: ৫) মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তুমি যে কোন কর্মে রত হও এবং তুমি তৎসম্পর্কে কুরআন হতে যা আবৃত্তি কর এবং তোমরা যে কোন কার্য কর, আমি তোমাদের পরিদর্শক, যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও; আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয় এবং ওটা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই সুষ্পষ্ট কিতাবে নেই।” (১০: ৬১)
আল্লাহ তাআ’লার উক্তি : (আরবি) অর্থাৎ “মানুষের জন্যে তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে; ওরা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।” অর্থাৎ মানুষের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে তাদের চতুর্দিকে ফেরেশতাদেরকে মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। তারা মানুষকে কষ্ট ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন। যেমন তাদের কার্যাবলী পরিদর্শন করার জন্যে ফেরেশতাদের অন্য দল রয়েছে। যারা পর্যায়ক্রমে একের পর এক আসা যাওয়া করে থাকেন। রাত্রিকালের জন্যে পৃথক ফেরেশতা আছেন এবং দিবা ভাগের জন্যেও পৃথক ফেরেশতা রয়েছেন। যেমন মানুষের ডানে ও বামে দু’জন ফেরেশতা মানুষের আমল লিখবার জন্যে নিযুক্ত রয়েছেন। ডান দিকের ফেরেশতা পূণ্য লিখেন এবং বাম দিকের ফেরেশতা পাপ লিখেন। অনুরূপভাবে তার সামনে ও পেছনে দু’জন ফেরেশতা রয়েছেন যারা তার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ চারজন ফেরেশতার মধ্যে অবস্থান করে। দু’জন আমল লেখক ডানে ও বামে এবং দু’জন রক্ষণাবেক্ষণকারী সামনে ও পেছনে। তারপর রাত্রির পৃথক ও দিবসের পৃথক। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “তোমাদের কাছে ফেরেশতারা পালাক্রমে আগমন করে থাকেন দিবসে ও রজনীতে। ফজর ও আসরের নামাযে উভয় দলের মিলন ঘটে। রাত্রে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ রাত্রি শেষে আকাশে উঠে যান। বান্দাদের অবস্থা অবগত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআ’লা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছো?” তারা উত্তরে বলেনঃ “আমরা তাদের কাছে আগমনের সময় নামাযের অবস্থায় তাদেরকে পেয়েছি এবং বিদায়ের সময়ও তাদেরকে নামাযের অবস্থায় ছেড়ে এসেছি।”
অন্য হাদীসে এসেছেঃ “তোমাদের সাথে তাঁরা রয়েছেন যাঁরা তোমাদের পায়খানা ও সহবাসের সময় ছাড়া কোন অবস্থাতেই তোমাদের থেকে পৃথক হন না। সুতরাং তোমাদের উচিত তাদের থেকে লজ্জা করা ও তাদেরকে সম্মান করা।”
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা যখন বান্দার কোন ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেন তখন রক্ষক ফেরেশতা তা হতে দেন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক বান্দার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতা থাকেন যিনি তাকে ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় দানব, মানব, বিষধর প্রাণী এবং সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে পার্থিব বাদশাহ ও আমীরদের আলোচনা যারা প্রহরাধীনে অবস্থান করে থাকেন। যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, সম্রাট বা শাহান্শাহ আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণে থাকেন আল্লাহর আমর হতে এবং তারা হচ্ছে আলুশ শিরক ও আহলুয যাহির। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
সম্ভবতঃ এই উক্তির উদ্দেশ্য এই যে, বাদশাহ ও আমীরদেরকে যেমন সৈন্য প্রহরীরা পাহারা দিয়ে থাকে তেমনিভাবে আল্লাহ তাআ’লার বান্দাদেরকে পাহারা দিয়ে থাকেন তার পক্ষ থেকে নিযুক্ত ফেরেশতাগণ।
তাফসীরে ইবনু জারীরে একটি দুর্বল রিওয়াইয়াতে এসেছে যে, একদা হযরত উসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! বান্দার সাথে কতজন ফেরেশতা থাকেন?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “একজন ডান দিকে থাকেন, যিনি পূণ্য লিখেন এবং তিনি বামদিকে অবস্থানকারী পাপ লেখক ফেরেশতার উপর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। যখন তুমি কোন পূণ্যের কাজ কর তখন ঐ পূণ্য লেখক ফেরেশতা একটির বিনিময়ে দশটি পূণ্য লিখে ফেলেন। পক্ষান্তরে যখন তুমি কোন পাপকার্য কর তখন বাম দিকের ফেরেশতা তা লিখবার জন্যে ডানদিকের ফেরেশতার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। ডান দিকের ফেরেশতা তখন তাকে বলেনঃ “কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর, হয়তো সে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করবে।” তিন বার তিনি অনুমতি চান। তখন পর্যন্তই যদি সে তওবা না করে তখন ঐ পূণ্য লেখক ফেরেশতা পাপ লেখক ফেরেশতাকে বলেনঃ “এখন লিখে নাও। আল্লাহ তার থেকে আমাদেরকে আরাম দান করুন। সে কতই না নিকৃষ্ট সঙ্গী। সে আল্লাহ তাআ’লার প্রতি খেয়াল রাখে না এবং আমাদের থেকে লজ্জা করে না।” আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করবার জন্যে তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।” (৫০: ১৮) আর দু’জন ফেরেশতা তোমার সামনে ও পেছনে রয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “মানুষের সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে।” আর একজন ফেরেশতা তোমার মাথার চুল ধরে রয়েছেন। যখন তুমি আল্লাহর সামনে বিনয় ও নীচতা প্রকাশ কর তখন তিনি তোমার মর্যাদা উচ্চ করে দেন। আর যখন তুমি আল্লাহর সামনে অবাধ্যতা ও অহংকার প্রকাশ কর তখন তিনি তোমার মর্যাদা নিচু করে দেন এবং তোমাকে অপারগ ও অক্ষম করেন। দু’জন ফেরেশতা তোমার ওষ্ঠের উপর রয়েছেন। তুমি যে দরূদ আমার উপর পাঠ করে থাকো তিনি তা হিফাযত করেন। একজন ফেরেশতা তোমার মুখের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যেন সর্প ইত্যাদির ন্যায় কোন কিছু গলায় চলে না যায়। দু’জন ফেরেশতা তোমার চোখের উপর রয়েছেন। অতএব এই দশজন ফেরেশতা প্রত্যেক বনী আদমের সাথে রয়েছেন। দিনের ফেরেশতা আলাদা এবং রাতের ফেরেশতা আলাদা। এভাবে প্রত্যেক লোকের সাথে আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ হতে বিশজন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। আর এদিকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে সারা দিন ইবলীস কর্মব্যস্ত থাকে এবং রাত্রে এ কাজে লেগে থাকে তার সন্তানেরা।” (এ হাদীসটি তাফসীরে ইবনে জারীরে কিনানা’ আল আদাভী (রঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই গারীব বা দুর্বল)
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকের সাথে ভারপ্রাপ্ত সঙ্গী হিসেবে রয়েছে একজন জ্বিন ও একজন ফেরেশতা।” জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার সাথেও কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমার সাথেও রয়েছে। তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর সাহায্য করেছেন। সে আমাকে ভাল ছাড়া কিছুই হুকুম করে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মুসলিম একাকী এটা তাখরীজ করেছেন)
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবি) (তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে) কোন কোন কিরআতে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) রয়েছে। হযরত কা’ব (রঃ) বলেন যে, বনী আদমের জন্যে যদি প্রত্যেক নরম ও শক্ত খুলে যায় তবে অবশ্যই প্রতিটি জিনিস সে নিজেই দেখতে পাবে। আর যদি আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে এই রক্ষক ফেরেশতাগুলি নিযুক্ত না থাকেন যারা পানাহার ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করে থাকেন তবে আল্লাহর শপথ! তোমাদেরকে অবশ্যই ছিনিয়ে নেয়া হবে। আবু উমামা (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক মানুষের সাথে রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতা রয়েছেন যারা ভাগ্যে লিখিত ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বিপদ-আপদ তার থেকে দূর করে থাকে।
আবু মাজায (রঃ) বলেন যে, মুরাদ গোত্রের একটি লোক হযরত আলীর (রাঃ) নিকট আগমন করে তাঁকে নামাযে মশগুল দেখতে পান। অতঃপর তাঁকে তিনি বলেনঃ “মুরাদ গোত্রের লোক আপনাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সুতরাং আপনি প্রহরী নিযুক্ত করুন।” এ কথা শুনে হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে তার হিফাযতের জন্যে দু’জন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তকদীরে লিপিবদ্ধ ছাড়া কোন বিপদাপদ তারা তাঁর প্রতি আপতিত হতে দেন না। জেনে রেখোঁরেখো যে, ‘আজল’ একটা মযবুত দুর্গ ও উত্তম ঢাল স্বরূপ।”
কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবি) এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তারা আল্লাহর নির্দেশক্রমে তাকে তাঁর আমর থেকে হিফাযত করে থাকে। যেমন হাদীস শরীফে এসেছেঃ জনগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা যে ঝাড় ফুঁক করে থাকি তা কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীরের পরিবর্তন ঘটাতে পারে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ওটা স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।”
ইবরাহীম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বনী ইসরাঈলের কোন এক নবীর কাছে আল্লাহ তাআ’লা ওয়াহী করেনঃ “তোমার কওমকে বলে দাওঃ যে গ্রামবাসী বা যে গৃহবাসী আল্লাহর আনুগত্য করতে করতে তাঁর অবাধ্য হতে শুরু করে, আল্লাহ তাদের আরামের জিনিস গুলিকে তাদের থেকে দূর করে দিয়ে ঐ জিনিসগুলি তাদের কাছে আনয়ন করেন যেগুলি তাদের কষ্টের ও দুঃখের কারণ হয়।” (এটা ইবনু আবি হা’তিম (রঃ) স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু আবি শায়বার (রঃ) “সিফাতুল আর্শ’ নামক গ্রন্থে এই রিওয়াইয়াতটি মার’ রূপেও এসেছে)
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এর অর্থাৎ হচ্ছে, মায়ের গর্ভাশয়ে ভ্রূণের অংগ-প্রত্যংগ, শক্তি-সামর্থ্য, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার মধ্যে যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
# [১] মাতৃগর্ভে কি আছে; ছেলে না মেয়ে, সুশ্রী না কুশ্রী, সুজন না কুজন, দীর্ঘায়ু না অল্পায়ু? এসব শুধু মহান আল্লাহই জানেন।
[২] এ থেকে উদ্দিষ্ট গর্ভের সময়কাল; যা সাধারণতঃ নয় মাস হয়ে থাকে। কিন্তু তাতে কমা-বাড়াও হয়; কখনো দশ মাস, কখনো সাত মাস, কখনো আট মাস। এর জ্ঞানও মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে নেই।
[৩] অর্থাৎ কার জীবনকাল কত দিন? সে রুযীর কত অংশ পাবে? এর পূর্ণ জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# এর অর্থ হচ্ছে, মায়ের গর্ভাশয়ে ভ্রুণের অংগ-প্রত্যংগ, শক্তি-সামৰ্থ, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহ্র সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক নারী যা গর্ভধারণ করে, তা ছেলে কি মেয়ে, সুশ্রী কি কুশ্রী, সৎ কি অসৎ তা সবই আল্লাহ্ জানেন এবং নারীদের গর্ভাশয়ে যে হ্রাসবৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ কোন সময় এক বা একাধিক সন্তান জন্মগ্রহণ করে, কোন সময় দ্রুত কোন সময় দেরীতে তাও আল্লাহ্ তা’আলা জানেন। [আদওয়াউল বায়ান]
এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার একটি বিশেষ গুণ বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ‘আলেমুল গায়েব’। সৃষ্টিজগতের প্রতিটি অণু-পরমাণু ও সেসবের পরিবর্তনশীল অবস্থা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিফহাল। এর সাথেই মানব সৃষ্টির প্রতিটি স্তর, প্রতিটি পরিবর্তন ও প্রতিটি চিহ্ন সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর সত্যিকার ও নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই রাখেন। এ বিষয়টিই অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ
(وَيَعْلَمُ مَا فِي الْاَرْحَامِ)
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলাই জানেন যা কিছু গভাশয়ে রয়েছে। [সূরা লোকমানঃ ৩৪] আমরা যদি সূরা লোকমান এর এ আয়াতটির সাথে আলোচ্য সূরার
(وَمَا تَغِيْضُ الْاَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ)
আয়াতকে একসাথে মিলিয়ে তাফসীর করি তাহলে বর্তমান কালের এ আয়াত সংক্রান্ত অনেক সন্দেহের জবাব দেয়া সহজ হয়ে যাবে কারণ সূরা লোকমানের আয়াতে যা বলা হয়েছে এ আয়াত তার তাফসীর হতে পারে। ফলে গর্ভাশয়ে অবস্থিত সন্তানের অবস্থা বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও তা সূরা লোকমান এবং সহীহ হাদীসে বর্ণিত পাঁচটি গায়েব এর জ্ঞানের দাবী কেউ করতে পারবে না। বিশেষ করে সহীহ হাদীসে গায়েবের পাঁচটি বস্তু বর্ণনায় যে শব্দ ব্যবহার হয়েছে তাও এ তাফসীর সমর্থন করছে। হাদীসে এসেছে, “পাঁচটি বিষয় হলো সমস্ত গায়েবের চাবিকাঠি, আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ তা জানে না … আল্লাহ ব্যতীত কেউ গর্ভাশয়ে যা কিছু হ্রাস হয় তা জানে না।” [বুখারীঃ ৪৬৯৭] আর এটা সর্বজনবিদিত যে, গর্ভাশয়ে যা কিছু হ্রাস-বৃদ্ধি হয় বা হবে তা কেউ কোন দিন বলে দিতে পারবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত—যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রণরূপে ছিলে।” [সূরা আন-নাজম: ৩২] আরও বলেন, “তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন।” [সূরা আলে ইমরান: ৬] আয়াতের আরেক অর্থ হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন কোন মহিলা কোন ধরণের সন্তান গর্ভে ধারণ করবে। তখন (ما) টি হবে (موصولة) [আদওয়াউল বায়ান]
# আয়াতের অর্থ এই যে, এটা আল্লাহ্ তা’আলার বিশেষ গুণ যে, তিনি প্রত্যেক অনুপস্থিতকে এমনিভাবে জানেন, যেমন উপস্থিত ও বিদ্যমানকে জেনে থাকেন। (الْكَبِيْرُ) শব্দের অর্থ বড় এবং (الْمُتَعَالِ)-এর অর্থ উচ্চ। তিনি মান মর্যাদার দিক থেকে যেমন সবার উপরে, ক্ষমতার দিক থেকেও সবার উপরে। অনুরূপভাবে তিনি অবস্থানের দিক থেকেও সবার উপরে। [ইবনুল কাইয়েম, মাদারিজুস সালেকীন: ১/৫৫] উভয় শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি সবার চেয়ে বড়, তিনি সবকিছুর উপরে। [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে তিনি সৃষ্ট বস্তুসমূহের গুণাবলীর উর্ধ্বে। কাফের ও মুশরিকরা আল্লাহ্ তা’আলার মহত্ব ও উচ্চমর্যাদা স্বীকার করত, কিন্তু উপলদ্ধি-দোষে তারা আল্লাহকে সাধারণ মানুষের সমতুল্য জ্ঞান করে তাঁর জন্য এমন সব গুণাবলী সাব্যস্ত করত, যেগুলো তাঁর মর্যাদার পক্ষে খুবই অসম্ভব। তিনি সেগুলো থেকে অনেক উর্ধ্বে। [ফাতহুল কাদীর] উদাহরণতঃ ইয়াহূদী ও নাসারাগণ আল্লাহ্র জন্য পুত্র সাব্যস্ত করেছে। আরবের মুশরিকগণ আল্লাহ্র জন্য কন্যা সাব্যস্ত করেছে। অথচ তিনি এসব অবস্থা ও গুণ থেকে উচ্চে, উর্ধ্বে ও পবিত্র। কুরআনুল কারীম তাদের বর্ণিত গুণাবলী থেকে পবিত্রতা প্রকাশের জন্য বার বার বলেছেঃ
(سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)
[সূরা আল-মু’মিনূনঃ ৯১] -অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা ঐসব গুণ থেকে পবিত্র যেগুলো তারা বর্ণনা করে। প্রথম
(عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ)
এবং তৎপূর্ববর্তী
(اَللّٰهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى)
বাক্যে আল্লাহ্ তা’আলার জ্ঞানগত পরাকাষ্ঠা বর্ণিত হয়েছিল। দ্বিতীয়
(الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالِ)
বাক্যে শক্তি ও মাহাত্ম্যের পরাকাষ্ঠা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর শক্তি ও সামর্থ্য মানুষের কল্পনার উর্ধ্বে। এর পরবর্তী আয়াতেও এ জ্ঞান ও শক্তির পরাকাষ্ঠা একটি বিশেষ আঙ্গিকে বর্ণনা করা হয়েছে।
# আল্লাহ্ তা’আলা প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু সম্পর্কে পূর্ণভাবে জানেন। পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেনঃ “তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত। [সূরা আল-মুলকঃ ১৩-১৪] আরো বলেছেনঃ “যদি আপনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন।” [সূরা ত্বা-হাঃ ৭] অন্য আয়াতে বলেছেনঃ “এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর আর যা প্রকাশ কর” [সূরা আন-নামলঃ ২৫] অন্যত্র বলেছেনঃ “সাবধান! নিশ্চয়ই ওরা তাঁর কাছে গোপন রাখার জন্য ওদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। সাবধান! ওরা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন ওরা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। অন্তরে যা আছে, নিশ্চয়ই তিনি তা সবিশেষ অবহিত।” [সূরা হূদঃ ৫] আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার জ্ঞান সর্বব্যাপী। কাজেই যে ব্যক্তি আস্তে কথা বলে এবং যে ব্যক্তি উচ্চঃস্বরে কথা বলে, তারা উভয়ই আল্লাহ্র কাছে সমান। তিনি উভয়ের কথা সমভাবে শোনেন এবং জানেন। এমনিভাবে যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় এবং যে ব্যক্তি দিবালোকে প্রকাশ্য রাস্তায় চলে, তারা উভয়ই আল্লাহ্ তা’আলার জ্ঞান ও শক্তির দিক দিয়ে সমান। উভয়ের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অবস্থা তিনি সমভাবে জানেন এবং উভয়ের উপর তাঁর শক্তি সমভাবে পরিব্যপ্ত। কেউ তাঁর ক্ষমতার আওতাবহির্ভূত নয়।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 8-10
اللّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَى
Allah knows what every female bears,
Allah is All-Knower of Al-Ghayb (Unseen)
Allah says:
اللّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَى
Allah knows what every female bears,
Allah affirms His perfect knowledge, from which nothing is hidden, and that He has complete knowledge of whatever every female creature is carrying,
وَيَعْلَمُ مَا فِى الاٌّرْحَامِ
And He knows that which is in the wombs. (31:34),
whether male or female, fair or ugly, miserable or happy, whether it will have a long or a short life.
Allah said in other Ayat,
هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنشَأَكُمْ مِّنَ الاٌّرْضِ وَإِذْ أَنتُمْ أَجِنَّةٌ
He knows you well when He created you from the earth, and when you were fetuses. (53:32)
and,
يَخْلُقُكُمْ فِى بُطُونِ أُمَّهَـتِكُـمْ خَلْقاً مِّن بَعْدِ خَلْقٍ فِى ظُلُمَـتٍ ثَلَـثٍ
He creates you in the wombs of your mother:creation after creation in three veils of darkness. (39:6)
meaning stage after stage.
Allah also said,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الاِنْسَـنَ مِن سُلَـلَةٍ مِّن طِينٍ
ثُمَّ جَعَلْنَـهُ نُطْفَةً فِى قَرَارٍ مَّكِينٍ
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَـماً فَكَسَوْنَا الْعِظَـمَ لَحْماً ثُمَّ أَنشَأْنَـهُ خَلْقاً ءَاخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَـلِقِينَ
And indeed We created man out of an extract of clay. Thereafter We made him as a Nutfah in a safe lodging. Then We made the Nutfah into a clot, then We made the clot into a little lump of flesh, then We made out of that little lump of flesh bones, then We clothed the bones with flesh, and then We brought it forth as another creation. So Blessed is Allah, the Best of creators. (23:12-14)
In the two Sahihs it is recorded that Abdullah bin Mas`ud said that the Messenger of Allah said,
إِنَّ خَلْقَ أَحَدِكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ إِلَيْهِ مَلَكًا فَيُوْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَعُمْرِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيد
The matter of the creation of one of you is put together in the womb of the mother in forty days, and then he becomes a clot of thick blood for a similar period, and then a piece of flesh for a similar period. Then Allah sends an angel who is ordered to write four things. He is ordered to write down;
his provisions,
his life span,
his deeds, and
whether he will be blessed or wretched.”
In another Hadith, the Prophet said,
فَيَقُولُ الْمَلَكُ أَيْ رَبِّ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى أَيْ رَبِّ أَشَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقٌ فَمَا الاَْجَلُ فَيَقُولُ اللهُ وَيَكْتُبُ الْمَلَك
Then the angel asks, “O my Lord! Is it a male or a female, miserable or happy, what is its provisions and life span!”
Allah then ordains and the angel records it.
Allah said next,
وَمَا تَغِيضُ الَارْحَامُ
وَمَا تَزْدَادُ
and by how much the wombs fall short or exceed.
Al-Bukhari recorded that Abdullah bin Umar said that the Messenger of Allah said,
مَفَاتِيحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ اللهُ
لَاا يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ إِلاَّ اللهُ
وَلَا يَعْلَمُ مَا تَغِيضُ الاَْرْحَامُ إِلاَّ اللهُ
وَلَا يَعْلَمُ مَتَى يَأْتِي الْمَطَرُ أَحَدٌ إِلاَّ اللهُ
وَلَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ
وَلَا يَعْلَمُ مَتَى تَقُومُ السَّاعَةُ إِلاَّ الله
The Keys of the Ghayb (unseen knowledge) are five, nobody knows them but Allah.
Nobody knows what will happen tomorrow except Allah;
nobody knows what is in the womb except Allah;
nobody knows when it will rain except Allah;
no soul knows at what place he will die except Allah; and
nobody knows when the (Final) Hour will begin except Allah.
Al-Awfi reported from Ibn Abbas that he said,
وَمَا تَغِيضُ الَارْحَامُ
(and by how much the wombs fall short),
this refers to miscarriages,
وَمَا تَزْدَادُ
(or exceed),
this refers to carrying her fetus in her womb for the full term. Some women carry their fetus for ten months, while others for nine months. Some terms are longer or shorter than others. This is the falling short or exceeding that Allah the Exalted mentioned, and all this occurs by His knowledge.”
وَكُلُّ شَيْءٍ عِندَهُ بِمِقْدَارٍ
Everything with Him is in proportion.
Qatadah commented on Allah’s statement,
“For a term appointed. Allah has the records of the provisions and terms of His creation and made an appointed term for everything.”
An authentic Hadith mentioned that;
one of the Prophet’s daughters sent (a messenger) to him requesting him to come as her child was dying, but the Prophet returned the messenger and told him to say to her,
إِنَّ للهِ مَا أَخَذَ وَلَهُ مَا أَعْطَى وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى فَمُرُوهَا فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِب
Verily, whatever Allah takes is for Him and whatever He gives is for Him, and everything with Him has a limited fixed term (in this world), and so she should be patient and hope for Allah’s reward.
Allah said next,
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
All-Knower of the Ghayb (the unseen) and the Shahadah (the witness able),
Who knows everything that the servants see and all what they cannot see, and none of it ever escapes His knowledge,
الْكَبِيرُ
the Most Great,
greater than everything,
الْمُتَعَالِ
the Most High.
above everything,
قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَىْءٍ عِلْمَا
(Allah) surrounds all things in (His) knowledge. (65:12),
and has full power over all things, the necks are under His control and the servants are subservient to Him, willingly or unwillingly.
Allah’s Knowledge encompasses all Things Apparent and Hidden
Allah says:
سَوَاء مِّنكُم مَّنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَن جَهَرَ بِهِ
It is the same (to Him) whether any of you conceals his speech or declares it openly,
Allah declares that His knowledge is encompassing all of His creation, those who declare their speech or hide it, He hears it and nothing of it ever escapes His observation.
Allah said in other Ayat,
وَإِن تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَإِنَّهُ يَعْلَمُ السِّرَّ وَأَخْفَى
And if you speak aloud, then verily, He knows the secret and that which is yet more hidden. (20:7)
and,
وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُونَ وَمَا تُعْلِنُونَ
And (Allah) knows what you conceal and what you reveal.
A’ishah said, “All praise is due to Allah Whose hearing has encompassed all voices! By Allah, she who came to complain about her husband to the Messenger of Allah was speaking while I was in another part of the room, yet I did not hear some of what she said.
Allah sent down,
قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِى تُجَادِلُكَ فِى زَوْجِهَا وَتَشْتَكِى إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمأ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
Indeed Allah has heard the statement of her that disputes with you concerning her husband and complains to Allah. And Allah hears the argument between you both. Verily, Allah is All-Hearer, All-Seer. (58:1)
Allah said next,
وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِاللَّيْلِ
whether he be hid by night,
in his house in the darkness of the night,
وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ
or goes forth freely by day.
moves about during the daylight; both are encompassed by Allah’s knowledge.
Allah said in other Ayat,
أَلا حِينَ يَسْتَغْشُونَ ثِيَابَهُمْ
Surely, even when they cover themselves with their garments. (11:5)
and,
وَمَا تَكُونُ فِى شَأْنٍ وَمَا تَتْلُواْ مِنْهُ مِن قُرْءَانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ وَمَا يَعْزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الاٌّرْضِ وَلَا فِى السَّمَأءِ وَلَا أَصْغَرَ مِن ذَلِكَ وَلا أَكْبَرَ إِلاَّ فِى كِتَابٍ مُّبِينٍ
Neither you do any deed nor recite any portion of the Qur’an nor you do any deed, but We are witness thereof when you are doing it.
And nothing is hidden from your Lord (so much as) the weight of a speck of dust on the earth or in the heaven. Not what is less than that or what is greater than that but is (written) in a Clear Record. (10:61)
The Guardian Angels .