أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 748)
Sura: 13
Verses :- 31-32
[ وَلَقَدِ اسْتُهْزِىءَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ
নিঃসন্দেহে তোমার পূর্বেও অনেক রসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে।
And indeed (many) Messengers were mocked at before you.]
www.motaher21.net
وَ لَوۡ اَنَّ قُرۡاٰنًا سُیِّرَتۡ بِہِ الۡجِبَالُ اَوۡ قُطِّعَتۡ بِہِ الۡاَرۡضُ اَوۡ کُلِّمَ بِہِ الۡمَوۡتٰی ؕ بَلۡ لِّلّٰہِ الۡاَمۡرُ جَمِیۡعًا ؕ اَفَلَمۡ یَایۡـَٔسِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ لَّوۡ یَشَآءُ اللّٰہُ لَہَدَی النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ لَا یَزَالُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا تُصِیۡبُہُمۡ بِمَا صَنَعُوۡا قَارِعَۃٌ اَوۡ تَحُلُّ قَرِیۡبًا مِّنۡ دَارِہِمۡ حَتّٰی یَاۡتِیَ وَعۡدُ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُخۡلِفُ الۡمِیۡعَادَ ﴿٪۳۱﴾
যদি কোন কুরআন এমন হত, যার দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেত, (তবুও তারা তাতে বিশ্বাস করত না)। বরং সমস্ত বিষয়ই আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। তবে কি যারা বিশ্বাস করেছে তাদের প্রত্যয় হয়নি যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন; যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের কর্মফলের জন্য তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে অথবা বিপর্যয় তাদের আশে পাশে আপতিত হতেই থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে উপস্থিত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
And if there was any qur’an by which the mountains would be removed or the earth would be broken apart or the dead would be made to speak, [it would be this Qur’an], but to Allah belongs the affair entirely. Then have those who believed not accepted that had Allah willed, He would have guided the people, all of them? And those who disbelieve do not cease to be struck, for what they have done, by calamity – or it will descend near their home – until there comes the promise of Allah . Indeed, Allah does not fail in [His] promise.
وَ لَقَدِ اسۡتُہۡزِیٴَ بِرُسُلٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ فَاَمۡلَیۡتُ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ثُمَّ اَخَذۡتُہُمۡ ۟ فَکَیۡفَ کَانَ عِقَابِ ﴿۳۲﴾
আর অবশ্যই আপনার আগে অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে এবং যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়েছিলাম, তারপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম। সুতরাং কেমন ছিল আমার শাস্তি।
And already were [other] messengers ridiculed before you, and I extended the time of those who disbelieved; then I seized them, and how [terrible] was My penalty.
সুরা: রাদ
সুরা:১৩
৩১-৩২ নং আয়াত:-
وَلَقَدِ اسْتُهْزِىءَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ
নিঃসন্দেহে তোমার পূর্বেও অনেক রসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে।
And indeed (many) Messengers were mocked at before you.
৩১-৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(وَلَوْ اَنَّ قُرْاٰنًا…… )
এখানে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় পবিত্র গ্রন্থ কুরআনুল কারীমের প্রশংসা করছেন যে, এই কুরআন মাজীদ পেয়েও যেহেতু তারা ঈমান আনছে না তবে জেনে রেখো যদি পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহের কোনটার মু‘জিযার কারণে পাহাড় স্বীয় স্থান থেকে সরে যেত, জমিন বিদীর্ণ হয়ে যেত এবং মৃত মানুষ কথা বলত, তবুও তারা ঈমান আনবে না। কোন মু‘জিযাহ দেখে যদি ঈমান আনত তবে এই কুরআনই সর্বাপেক্ষা বেশি যোগ্য। কেননা, এটা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এতে এই মু‘জিযাও রয়েছে যে, সমস্ত মানব ও দানব মিলিত হয়েও এর একটি আয়াত তৈরি করতে পারেনি। তথাপি মুশরিকরা এই কুরআনকেও অস্বীকার করছে। এতে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, সমস্ত জিনিসের ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন। তিনি চাইলে সমস্ত মানুষকে সুপথ দেখাতে পারেন আবার চাইলে সকলকে গোমরাহও করতে পারেন। আর আল্লাহ তা‘আলা এরূপ করেন তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, কে স্বেচ্ছায় ঈমান আনে। সুতরাং যারা কাফির যতই মু‘জিযা প্রকাশ করা হোক না কেন তারা ঈমান আনবে না। বরং তারা ঈমান আনার পরিবর্তে রাসূলগণের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত। যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করলেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَكَذٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَآ أَخَذَ الْقُرٰي وَهِيَ ظٰلِمَةٌ إِنَّ أَخْذَه۫ أَلِيْمٌ شَدِيْدٌ)
“এরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন তারা যুলম করে থাকে। নিশ্চয়ই তাঁর শাস্তি কঠিন যন্ত্রণাদায়ক ।” (সূরা হূদ ১১:১০২)
সুতরাং যারা সৎপথ অবলম্বন করতে চায় তাদের উচিৎ কোন প্রকার ওযর-আপত্তি পেশ করা ব্যতীতই ঈমান নিয়ে আসা; অন্যথায় পূর্ববর্তী জাতিকে যেমন শাস্তি দেয়া হয়েছে তাদেরকেও তেমনি শাস্তি ঘ্রাস করে নিবে; কেউ তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমান আনার ব্যাপারে মু‘জিযা দেখে ঈমান আনব এই রকম ওযর পেশ করা ঠিক নয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ কোন ক্ষমতার অধিকারী নয়। সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর।
৩. হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। কোন পীর বা ওলি-আওলিয়া বা কবরে শায়িত ব্যক্তি নয়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ আয়াতটির অর্থ উপলব্ধি করার জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এখানে কাফেরদেরকে নয় বরং মুসলমানদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। মুসলমানরা কাফেরদের পক্ষ থেকে বার বার এসব নিদর্শন দেখাবার দাবী শুনতো। ফলে তাদের মন অস্থির হয়ে উঠতো। তারা মনে করতো, আহা, যদি এদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখিয়ে দেয়া হতো যার ফলে এরা মেনে নিতো, তাহলে কতই না ভালো হতো! তারপর যখন তারা অনুভব করতো, এ ধরনের কোন নিদর্শন না আসার কারণে কাফেররা নবী (সা.) এর নবুওয়াত সম্পর্কে লোকদের মনে সন্দেহ সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে তখন তাদের এ অস্থিরতা আরো বেড়ে যেতো। তাই মুসলমানদেরকে বলা হচ্ছে, যদি কুরআনের কোন সূরার সাথে এমন ধরনের নিদর্শনাদি অকস্মাৎ দেখিয়ে দেয়া হতো তাহলে কি তোমরা মনে করো যে, সত্যিই এরা ঈমান আনতো? তোমরা কি এদের সম্পর্কে এ সুধারণা পোষণ করো যে, এরা সত্য গ্রহণের জন্য একেবারে তৈরী হয়ে বসে আছে, শুধুমাত্র একটি নিদর্শন দেখিয়ে দেবার কাজ বাকি রয়ে গেছে? যারা কুরআনের শিক্ষাবলীতে, বিশ্ব-জগতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে, নবীর পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবনে, সাহাবায়ে কেরামের বিপ্লবমুখর জীবনধারায় কোন সত্যের আলো দেখতে পাচ্ছে না, তোমরা কি মনে করো তারা পাহাড়ের গতিশীল হওয়া, মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া এবং কবর থেকে মৃতদের বের হয়ে আসার মত অলৌকিক ঘটনাবলীতে কোন আলোর সন্ধান পাবে?
# নিদর্শনসমূহ না দেখাবার আসল কারণ এ নয় যে, আল্লাহর এগুলো দেখাবার শক্তি নেই বরং আসল কারণ হচ্ছে, এ পদ্ধতিকে কাজে লাগানো আল্লাহর উদ্দেশ্য বিরোধী। কারণ আসল উদ্দেশ্য হেদায়াত লাভ করা, নবীর নবুওয়াতের স্বীকৃতি আদায় করা নয়। আর চিন্তা ও অন্তরদৃষ্টির সংশোধন ছাড়া হেদায়াত লাভ সম্ভব নয়।
# জ্ঞান ও উপলব্ধি ছাড়া নিছক একটি অসচেতন ঈমানই যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে এ জন্য নিদর্শনাদি দেখাবার কষ্টের কি প্রয়োজন ছিল? আল্লাহ সমস্ত মানুষকে মুসলমান হিসেবে পয়দা করে দিলেই তো এ উদ্দেশ্য সফল হতে পারতো।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# এখানে আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের প্রশংসা করছেন যে, যদি পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহের কোনটার সাথে পাহাড় স্বীয় স্থান থেকে সরে গিয়ে থাকতো, যমীন বিদীর্ণ হয়ে থাকতো এবং মৃত কথা বলে থাকতো, তবে এই কুরআনই তো এ কাজের বেশী যোগ্য ছিল। কেননা, এটা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এতে তো এই মু’জিযা রয়েছে যে, সমস্ত দানব ও মানব মিলিত হয়েও এর সূরার মত একটি সূরাও রচনা করতে পারে নাই। তথাপি মুশরিকরা এই কুরআনকেও অস্বীকার করছে। তা হলে সব দায়িত্ব আল্লাহ তাআ’লার উপরই অর্পন করে দাও। তিনি সবকিছুরই ম’লিক। সবই তাঁর ইখতিয়ারভুক্ত। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। তিনি যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। এটা স্মরনযোগ্য বিষয় যে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলির উপরও কুরআনের প্রয়োগ হয়ে থাকে। কেননা, এটা সবটা থেকেই মুশতাক বা নির্গত। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত দাউদের (আঃ) উপর কুরআনকে এতো সহজ করে দেয়া হয়েছিল যে, তাঁর নির্দেশক্রমে সওয়ারী কষা হতো এবং ওটা প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পূর্বেই তিনি কুরআন খতম করে ফেলতেন। তিনি স্ব হস্তের উপার্জন ছাড়া কিছুই খেতেন না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) একাকী তাখরীজ করেছেন)সুতরাং এখানে কুরআন দ্বারা যাবুরকে বুঝানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তবে কি মুমিনমু’মিনদের এখনও এ বিশ্বাস হয়নি যে, সমস্ত মানুষ ঈমান আনবে না? তাদের কি এ বিশ্বাসও হয়নি যে, আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছা হলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ঈমান আনয়ন করতো। তারা আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে কি? এই কুরআনের পরে আর কোন মু’জিযার প্রয়োজন আছে কি? এর চেয়ে উত্তম, এর চেয়ে স্পষ্ট, এর চেয়ে পরিষ্কার এবং এর চেয়ে বেশি মনকে আকর্ষণকারী আর কোন কালাম হবে? এটা এমনই এক গ্রন্থ যে, যদি এটা বড় বড় পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ হতো তবে সেগুলি আল্লাহর ভয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতো। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক নবীকে এইরূপ জিনিস দেয়া হয়েছে যে, লোকেরা ওর উপর ঈমান এনেছে। আমার এই রূপ জিনিস হচ্ছে সেই ওয়াহী যা আল্লাহ তাআ’লা আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা রাখি যে, সমস্ত নবী অপেক্ষা আমার অনুগামী বেশি হবে।” ভাবার্থ এই যে, সমস্ত নবীর মু’জিযা তাঁদের বিদায়ের সাথে সাথেই বিদায় হয়ে গেছে। কিন্তু তার মু’জিযা তত দিন শেষ হবে না যতদিন দুনিয়া থাকবে। না এর বিষ্ময়কর বিষয়গুলি শেষ হবে, অধিক পঠনের কারণে এটা (কুরআন কারীম) পুরানো হবে, না এর থেকে আলেমদের চাহিদা মিটে যাবে বা তাদের পেট পূর্ণ হয়ে যাবে। নিশ্চয় এটা মীমাংসাকারী বাণী এবং এটা নিরর্থক নয়। যে অবাধ্য একে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাকে ধ্বংস করবেন। যে এটা ছাড়া অন্য কিছুতে হিদায়াত অনুসন্ধান করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কাফিররা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলেঃ “যদি আপনি পাহাড়কে এখান থেকে সরিয়ে দেন এবং এখানকার ভূমিকে ফসল উৎপাদনের যোগ্য করে দিতে পারেন, অথবা যেমনভাবে হযরত সুলাইমান (আঃ) বাতাস দ্বারা তার কওমের জন্যে মাটি কাটতেন তেমনিভাবে যদি আপনি আমাদের জন্যে মাটি কাটতে পারেন, অথবা যদি আপনি আমাদের জন্যে মৃতকে জীবিত করেন যেমন হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর কওমের জন্যে করতেন (তবে আমরা ঈমান আনবো)।” তখন আল্লাহ তাআ’লা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ যদি কোন কুরআনের সাথে এসব বিষয় প্রকাশ পেতো তবে তোমাদের কুরআনের সাথেও পেতো। সব কিছুই তাঁর অধিকারে রয়েছে। কিন্তু তিনি এরূপ করেন না। কারণ তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা যে, তোমরা নিজেদের ইচ্ছায় ঈমান আন কি আন না।
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “তবে কি ঈমানদারদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন? অন্য জায়গায় (আরবি) এর (আরবি) স্থলে ও রয়েছে। মু’মিনরা ঐ কাফিরদের হিদায়াত থেকে নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। হাঁ, তবে আল্লাহ তাআ’লার ইখতিয়ারের ব্যাপারে কারো কিছু বলার নাই। ইচ্ছা করলে তিনি সকলকেই সুপথ প্রদর্শন করতে পারেন। এটা কাফিররা বরাবর লক্ষ্য করে। এসেছে যে, তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে আল্লাহ তাআ’লা বরাবরই তাদের উপর শাস্তি আপতিত করতে থেকেছেন বা তাদের আশে পাশেই বিপর্যয় আপতিত করতেই থেকেছেন। তবুও তারা কেন উপদেশ গ্রহণ করছে না? যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ অবশ্যই আমি তোমাদের চতুষ্পর্শ্বের বহু গ্রামবাসীকে তাদের দুষ্কর্মের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং আমার বিভিন্ন প্রকারের নিদর্শনাবলী প্রকাশ করেছি যে, হয়তো তারা দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকবে।” (৪৬: ২৭) আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারা কি দেখে নাই যে, আমি যমীনকে কমিয়ে দিয়ে আসছি, তবুও কি এখনও তারা নিজেদেরকেই বিজয়ী মনে করবে?” (২১: ৪৪)
(আরবি) এর (আরবি) বা কর্তা হচ্ছে শব্দটি। এটাই প্রকাশমান এবং বাকরীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ কাফিরদের কর্মফলের কারণে তাদের কাছে পৌঁছে যাবে ক্ষুদ্র ইসলামী সেনাবাহিনী অথবা তুমি (মুহাম্মদ সঃ) নিজেই তাদের শহরের নিটকবর্তী স্থানে অবতরণ করবে যতক্ষণ না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পড়ে। এর দ্বারা মক্কা বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে যে, (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আসমানী শাস্তি এবং আশে পাশে অবতরণ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত মুহাম্মদের (সঃ) তাঁর সেনাবাহিনীসহ তাদের সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে যাওয়া এবং তাদের সাথে জিহাদ করা। মুজাহিদ (রঃ), কাতাদা’ (রঃ), ইকরামা (রঃ) প্রভৃতি গুরুজনও একথাই বলেছেন। তাঁদের সবারই উক্তি এটাই যে, এখানে আল্লাহর ওয়াদা দ্বারা মক্কা বিজয়কেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কিয়ামতের দিন। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে স্বীয় রাসূলদেরকে সাহায্য করা। এর ব্যতিক্রম হবার নয়। তাঁরা এবং তাঁদের অনুসারীরা অবশ্য অবশ্যই উর্ধে থাকবেন। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আল্লাহ তাঁর রাসূলদের সাথে কৃত ওয়াদার খেলাফ করবেন তা তুমি ধারণা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, দণ্ডদাতা।” (১৪:৪৭)।
# আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) সান্ত্বনা দিয়ে বলছেনঃ তোমার কওম যে তোমাকে অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এতে তুমি মোটেই দুঃখ ও চিন্তা করো না। তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকেও ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছিল। আমি ঐ কাফিরদেরকেও কিছুকাল ঢিল দিয়েছিলাম। শেষে তাদেরকে আমি মারাত্মকভাবে পাকড়াও করেছিলাম। আমার শাস্তির ধরণ কেমন ছিল তা তোমার জানা আছে কি? আর তাদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল সে সম্পর্কেও তুমি জ্ঞাত আছ কি? যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “বহু গ্রামবাসীকে আমি তাদের জুলুম সত্ত্বেও ঢিল দিয়েছিলাম, কিন্তু শেষে তাদের দুষ্কর্মের প্রতিফল হিসেবে তাদেরকে আমি আমার শাস্তির শিকারে পরিণত করেছিলাম।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন, অতঃপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন সেই যালিম একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) (১১ :১০২) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
# [১] এখানে উত্তর উহ্য আছে। কিন্তু উহ্য পদটি নির্ধারণে বিভিন্ন মত এসেছে।
এক, কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ হবেঃ ‘যদি কুরআন এমন হত যা দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা যমীনকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেত, তবুও তারা তাতে বিশ্বাস করত না, তারা রহমানের সাথে কুফরী করত’। [কুরতুবী] পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, “আর তারা রহমানের সাথে কুফরী করছে” এ বাক্যটি উপরোক্ত অর্থের স্বপক্ষে জোরালো দলীল।
দুই, কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ হবেঃ ‘যদি কোন কুরআন এমন হত যা দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেত তা হলে তা এ কুরআনই হতো’। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] কারণ, এ কুরআনে নিহিত রয়েছে চ্যালেঞ্জ। জিন ও মানব এর মত বা এর একটি সূরার মত কিছু আনতে অপারগ। সে হিসেবে কুরআন শব্দ দ্বারা পূর্ববর্তী সমস্ত কিতাবকেই বুঝানো হবে। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র ‘কুরআন’ শব্দটিকে পূর্ববর্তী গ্রন্থ সমূহের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “যেভাবে আমরা নাযিল করেছিলাম বিভক্তকারীদের উপর; যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে।” [সূরা আল-হিজরঃ ৯০-৯১]
আবার কোন কোন সহীহ হাদীসেও পূর্ববর্তী কোন কোন কিতাবকে কুরআন নাম দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাউদ আলাইহিসসালামের উপর পড়াকে এতই সহজ করে দেয়া হয়েছিল যে, তিনি তার বাহনের লাগাম লাগানোর নির্দেশ দিতেন। আর তা লাগানোর পূর্বেই তার কুরআন পড়া শেষ হয়ে যেত”। [বুখারীঃ ৩৪১৭]
এখানে কুরআন বলে নিঃসন্দেহে তার কাছে নাযিলকৃত কিতাব যাবূরকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থের দিক থেকেও পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহকে কুরআন বলা যায়। কারণ, কুরআন শব্দের অর্থ, জমা করা। সে সমস্ত গ্রন্থসমূহে আয়াত জমা করার পর তা কুরআনে পরিণত হয়েছে। [ইবন কাসীর] এ অর্থের আরেকটি দলীল হলোঃ (قُرْاٰنًا) শব্দের (تنوين) কারণ, এ তানভীনকে (تنكير) হলে তা আমাদের পরিচিত কুরআনকে বুঝানো হয়নি বলেই ধরে নিতে হয়।
[২] মূলত: এর কারণ হচ্ছে, সবকিছু আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ন্ত্রণে। তিনি চাইলে তা হবে আর না চাইলে হবে না। তিনি যার হিদায়াত চান তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। আর তিনি যার ভ্রষ্টতা চান তাকে কেউ হিদায়াত দিতে পারবে না। [ইবন কাসীর]
কারণ, তারা যে সব মু’জিযা প্রত্যক্ষ করেছে, সেগুলো এর চাইতে কম ছিল না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইশারায় চন্দ্রের দ্বিখণ্ডিত হওয়া, পাহাড়ের স্বস্থান থেকে সরে যাওয়া এবং বায়ুকে আজ্ঞাবহ করার চাইতে অনেক বেশী বিস্ময়কর। এমনিভাবে নিষ্প্রাণ কংকরের কথা বলা এবং তাসবীহ্ পাঠ করা কোন মৃত ব্যক্তির জীবিত হয়ে কথা বলার চাইতে অধিকতর বিরাট মু’জিযা। মি’রাজের রাত্রিতে মসজিদুল আকসা, অতঃপর সেখান থেকে নভোমণ্ডলের সফর এবং সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রত্যাবর্তন, সুলাইমান ‘আলাইহিসসালামের বায়ুকে বশ করার মু’জিযার চাইতে অনেক মহান। কিন্তু যালেমরা এগুলো দেখার পরও বিশ্বাস স্থাপন করেনি।
[৩] আয়াতের মূলশব্দ হচ্ছে, (يَايْـــــئـسِ) শব্দটির যে অর্থ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
সে অনুসারে অর্থ হবে, ঈমানদারগণ কি জানে না যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে সমস্ত মানুষকেই নিদর্শন দেখানো ছাড়াই হিদায়াত দিয়ে দিতে পারেন? [কুরতুবী] তাছাড়া শব্দটির অন্য আরেকটি অর্থ হলো, নিরাশ হওয়া। তখন আয়াতের ভাবার্থ এভাবে বলতে হবে যে, মুসলিমগণ মুশরিকদের হঠকারিতা দেখা ও জানা সত্বেও কি এখন পর্যন্ত তাদের ঈমানের ব্যাপারে নিরাশ হয়নি? আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে সমস্ত মানুষকেই হেদায়েত প্রদান করতেন। কারণ, মুসলিমরা কাফেরদের পক্ষ থেকে বার বার নিদর্শন দেখাবার দাবী শুনতো। ফলে তাদের মন অস্থির হয়ে উঠতো। তারা মনে করতো, আহা, যদি এদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখিয়ে দেয়া হতো যার ফলে এরা মেনে নিতো, তাহলে কতই না ভালো হতো! [কুরতুবী]
বস্তুত: যারা কুরআনের শিক্ষাবলীতে, বিশ্ব-জগতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে, নবীর পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবনে, সাহাবায়ে কেরামের পবিত্র জীবনধারায় কোন সত্যের আলো দেখতে পাচ্ছে না, তোমরা কি মনে করো তারা পাহাড়ের গতিশীল হওয়া, মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে যাওয়া এবং কবর থেকে মৃতদের বের হয়ে আসার মত অলৌকিক ঘটনাবলীতে কোন আলোর সন্ধান পাবে? আবুল আলীয়া বলেন, এর অর্থ অবশ্যই ঈমানদাররা তাদের হিদায়াত সম্পর্কে নিরাশ হয়েছে, তবে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকেই তিনি হিদায়াত দিতে পারেন। [ইবন কাসীর]
[৪] (قَارِعَةٌ) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য, আকাশ থেকে শাস্তি নাযিল হওয়া। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া [ইবন কাসীর] অথবা এর অর্থ, বিপদাপদ। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তাদের উপর আপদ-বিপদের এ ধারা অব্যাহতই থাকবে, যে পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলার ওয়াদা পূর্ণ না হয়ে যায়। কারণ, আল্লাহ্র ওয়াদা কোন সময়ই টলতে পারে না। ওয়াদা বলে এখানে মক্কা বিজয় বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]
উদ্দেশ্য এই যে, তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার আপদ আসতে থাকবে। এমন কি, পরিশেষে মক্কা বিজিত হবে এবং তারা সবাই পরাজিত ও পর্যুদস্ত হয়ে যাবে। তবে হাসান বসরীর মতে, ওয়াদার অর্থ এ স্থলে কেয়ামতও হতে পারে। [ইবন কাসীর] এ ওয়াদা সব নবীগণের সাথে সব সময়ই করা আছে। ওয়াদাকৃত সেই কেয়ামতের দিন প্রত্যেক কাফের ও অপরাধী কৃতকর্মের পুরোপুরি শাস্তি ভোগ করবে।
[৫] অর্থাৎ তিনি রাসূলদের সাথে যে সমস্ত ওয়াদা করেছেন সেটা তিনি ভঙ্গ করেন না। তিনি তাদেরকে ও তাদের অনুসারীদেরকে সাহায্য সহযোগিতার যে ওয়াদা করেছেন তা অবশ্যই ঘটবে। চাই তা দুনিয়াতে হোক বা আখেরাতে। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ সেটা বলেছেন, “সুতরাং আপনি কখনো মনে করবেন না যে, আল্লাহ্ তাঁর রাসূলগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। [সূরা ইবরাহীম: ৪৭]
# আল্লাহ্ তা’আলা পূর্ববর্তী রাসূলদের সাথে তাদের উম্মতদের কর্মকাণ্ড এবং তাদের সাথে কৃত আল্লাহ্র ব্যবহার সম্পর্কে জেনে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা তাদের বর্তমান ছাড় দেয়া অবস্থাকে যেন স্থায়ী মনে করে না নেয়। তিনি কাউকে পাকড়াও করলে তার আর রক্ষা নেই। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ্ অত্যাচারীকে ছাড় দিতে থাকেন তারপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার আর পালানোর কোন পথ থাকে না।” [বুখারীঃ ৪৬৮৬, মুসলিমঃ ২৫৮৩]।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] (‘কোন কুরআন’ থেকে বুঝা যায়, কুরআন একাধিক।) ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, প্রত্যেক আসমানী গ্রন্থকে কুরআন বলা হয়। যেমন একটি হাদীসে এসেছে যে, “দাউদ (আঃ) সওয়ারী প্রস্তুত করার হুকুম দিতেন, এবং এই অবসরে কুরআনের অযীফা পড়ে নিতেন। (বুখারী, আম্বিয়া অধ্যায়) এখানে স্পষ্ট যে কুরআনের অর্থ যাবূর। আয়াতের অর্থ এই যে, যদি পূর্বে কোন আসমানী গ্রন্থ অবতীর্ণ হত, যা শুনে পাহাড় চলতে আরম্ভ করত অথবা পৃথিবীর পথ-দূরত্ব কমে আসত (অথবা ভূমি বিদীর্ণ করে নদী সৃষ্টি হত) অথবা মৃতেরা কথা বলত, তাহলে কুরআন কারীমের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য উত্তম রূপে পাওয়া যেত। কেননা কুরআন পূর্ববর্তী সমস্ত গ্রন্থের তুলনায় মু’জিযা এবং সাহিত্য-শৈলীতে উচ্চতর। কেউ কেউ এর অর্থ বলেছেন যে, যদি কুরআনের মাধ্যমে উক্ত মু’জিযাগুলি প্রকাশ পেত, তবুও এই কাফেররা ঈমান আনয়ন করত না, কেননা কারো ঈমান আনয়নের ব্যাপার আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল; মু’জিযার উপর নয়। তাই বলেছেন, “সমস্ত বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।”
[২] যা তারা দেখতে অথবা জানতে অবশ্যই পারবে, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
[৩] অর্থাৎ, কিয়ামত চলে আসবে অথবা মুসলিমরা পূর্ণ বিজয় লাভ করবে।
# [১] হাদীসেও এসেছে, “আল্লাহ অত্যাচারীকে ঢিল দেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন আর ছাড়েন না।” অতঃপর নবী (সাঃ) এই আয়াত পাঠ করলেন, ﴿وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ﴾ অর্থাৎ, এরূপেই তখন তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন, যখন তারা অত্যাচার করে; নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যাতনাদায়ক, কঠিন। (সূরা হূদ ১১:১০২) (বুখারীঃ সূরা হূদের তাফসীর, মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র)।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ar-Ra’d
Sura: 13
Verses :- 31-32
وَلَقَدِ اسْتُهْزِىءَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ
And indeed (many) Messengers were mocked at before you,
Virtues of the Qur’an and the Denial of Disbelievers
Allah praises the Qur’an which He has revealed to Muhammad, peace be upon him, and prefers it to all other divinely revealed Books before it,
وَلَوْ أَنَّ قُرْانًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الَارْضُ
أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَى
And if there had been a Qur’an with which mountains could be moved (from their places), or the earth could be cloven asunder, or the dead could be made to speak (it would not have been other than this Qur’an).
Allah says, `If there were a Book among the previous Divine Books with which the mountains could be moved from their places, or the earth could be cleaved asunder, or the dead speak in their graves, it would have been this Qur’an and none else.’
Or, this Qur’an is more worthy to cause all this, because of its marvelous eloquence that defies the ability of mankind and the Jinns, even if all of them gather their forces together to invent something like it or even a Surah like it.
Yet, these idolators disbelieve in the Qur’an and reject it.
Allah said,
بَل لِّلّهِ الَامْرُ جَمِيعًا
But the decision of all things is certainly with Allah.
The decision over all affairs is with Allah Alone, whatever He wills, occurs and whatever He does not will, never occurs.
Certainly, he whom Allah misguides, will never find enlightenment and he whom Allah guides, will never be misled.
Ibn Abbas commented,
“He will only do what He wills and He decided that He will not do that.”
Ibn Ishaq reported a chain for this, and Ibn Jarir At-Tabari agreed with it.
We should state here that it is possible to call other Divine Books, Qur’an’, since this Qur’an is based on all of them.
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
خُفِّفَتْ عَلَى دَاوُدَ الْقِرَاءَةُ فَكَانَ يَأْمُرُ بِدَابَّتِهِ أَنْ تُسْرَجَ فَكَانَ يَقْرَأُ الْقُرْانَ مِنْ قَبْلِ أَنْ تُسْرَجَ دَابَّتُهُ وَكَانَ لَا يَأْكُلُ إِلاَّ مِنْ عَمَلِ يَدَيْه
Reciting was made easy for (Prophet) Dawud (David) in that he used to order that his animal be prepared for him to ride and in the meantime he would read the entire Qur’an. He used to eat only from what his hand made.
Al-Bukhari collected this Hadith.
The Qur’an mentioned here is refers to the Zabur.
Allah said next,
أَفَلَمْ يَيْأَسِ الَّذِينَ امَنُواْ
Have not then those who believed yet known,
that not all people would believe and understand and that,
أَن لَّوْ يَشَاء اللّهُ لَهَدَى النَّاسَ جَمِيعًا
had Allah willed, He could have guided all mankind,
Surely, there is not a miracle or evidence more eloquent or effective on the heart and mind than this Qur’an. Had Allah revealed it to a mountain, you would see the mountain shake and humbled from fear of Allah.
The Sahih recorded that the Messenger of Allah said,
مَا مِنْ نَبِيَ إِلاَّ وَقَدْ أُوتِيَ مَا امَنَ عَلَى مِثْلِهِ الْبَشَرُ وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُهُ وَحْيًا أَوْحَاهُ اللهُ إِلَيَّ فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَة
Every Prophet was given (a miracle) the type of which would make (some) people believe. What I was given, however, is a revelation from Allah to me, and I hope that I will have the most following among them (Prophets) on the Day of Resurrection.
This Hadith indicates that every Prophet’s miracle disappeared upon his death, but this Qur’an will remain as evidence for all times. Verily, the miracle of the Qur’an will never end, nor will it become old the more it is read, nor will scholars ever have enough of it.
The Qur’an is serious and is not meant for jest; any tyrant that abandons it, Allah will destroy him; he who seeks guidance in other than the Qur’an, then Allah will misguide him.
Allah said next,
وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُواْ تُصِيبُهُم بِمَا صَنَعُواْ قَارِعَةٌ
أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِّن دَارِهِمْ
And a disaster will not cease to strike those who disbelieved because of their (evil) deeds or it settles close to their homes,
because of their denial, disasters will still strike them in this life or strike those all around them, as a lesson and example for them.
Allah said in other Ayat,
وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرَى وَصَرَّفْنَا الاٌّيَـتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
And indeed We have destroyed towns round about you, and We have shown (them) the Ayat in various ways that they might return (to the truth). (46:27)
and,
أَفَلَ يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِى الاٌّرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَأ أَفَهُمُ الْغَـلِبُونَ
See they not that We gradually reduce the land (in their control) from its outlying borders! Is it then they who will overcome! (21:44)
Qatadah narrated that Al-Hasan commented on Allah’s statement,
أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِّن دَارِهِمْ
(or it settles close to their homes),
“It is in reference to the disaster.”
This is the apparent meaning here.
Al-`Awfi reported that bin Abbas said about,
تُصِيبُهُم بِمَا صَنَعُواْ قَارِعَةٌ
(And a Qari`ah (disaster) strikes them because of their (evil) deeds),
“A torment that descends on them from heaven,
أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِّن دَارِهِمْ
(or it settles close to their homes),
when the Messenger of Allah camps near their area and fights them.”
Similar was reported from Mujahid and Qatadah.
Ikrimah said in another narration he reported from Ibn Abbas that,
قَارِعَةٌ
(Qari’ah), means affliction.
These scholars also said that,
حَتَّى يَأْتِيَ وَعْدُ اللّهِ
until the promise of Allah comes to pass.
refers to the conquering of Makkah.
Al-Hasan Al-Basri said that;
it refers to the Day of Resurrection.
Allah said next,
إِنَّ اللّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ
Certainly, Allah breaks not His promise.
to His Messengers to aid them and their followers in this life and the Hereafter,
فَلَ تَحْسَبَنَّ اللَّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ رُسُلَهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ
So think not that Allah will fail to keep His promise to His Messengers. Certainly, Allah is All-Mighty, All-Able of Retribution. (14:47).
Comforting the Messenger of Allah
Allah says to His Messenger, while comforting him in facing his people’s denial of him,
وَلَقَدِ اسْتُهْزِىءَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ
And indeed (many) Messengers were mocked at before you,
so you have a good example in them,
فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ
but I granted respite to those who disbelieved,
deferred their judgment for a term appointed,
ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ
and finally I punished them.
with encompassing punishment.
How did you obtain the news of how I gave them respite and then took them with punishment!’
فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
Then how (terrible) was My punishment!
Allah said in another Ayah,
وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَمْلَيْتُ لَهَا وَهِىَ ظَـلِمَةٌ ثُمَّ أَخَذْتُهَا وَإِلَىَّ الْمَصِيرُ
And many a township did I give respite while it was given to wrongdoing. Then (in the end) I seized it (with punishment). And to Me is the (final) return (of all). (22:48)
It is recorded in the Two Sahihs that the Prophet said,
إِنَّ اللهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْه
Verily, Allah gives respite to the unjust until when He seizes him, He never lets go of him.
The Messenger next recited this Ayah,
وَكَذلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِىَ ظَـلِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
Such is the punishment of your Lord when He seizes the (population of) towns while they are doing wrong. Verily, His punishment is painful, (and) severe. (11:102).