أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 755)
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
১-৩ নং আয়াত:-
[ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ
পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিত পথের দিকে,
To the path of the All-Mighty,]
www.motaher21.net
الٓرٰ ۟ کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ اِلَیۡکَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ۙ﴿۱﴾
আলিফ-লাম্-রা, এ কিতাব, আমরা এটা আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষদেরকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে বের করে আনতে পারেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে , পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিত পথের দিকে।
Alif, Lam, Ra. [This is] a Book which We have revealed to you, [O Muhammad], that you might bring mankind out of darknesses into the light by permission of their Lord – to the path of the Exalted in Might, the Praiseworthy –
اللّٰہِ الَّذِیۡ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ وَیۡلٌ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ مِنۡ عَذَابٍ شَدِیۡدِۣ ۙ﴿۲﴾
আল্লাহর পথে; যাঁর মালিকানাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে। কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ অবিশ্বাসীদের জন্য।
Allah, to whom belongs whatever is in the heavens and whatever is on the earth. And woe to the disbelievers from a severe punishment.
الَّذِیۡنَ یَسۡتَحِبُّوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا عَلَی الۡاٰخِرَۃِ وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ یَبۡغُوۡنَہَا عِوَجًا ؕ اُولٰٓئِکَ فِیۡ ضَلٰلٍۭ بَعِیۡدٍ ﴿۳﴾
যারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে অধিক ভালবাসে এবং মানুষকে ফিরিয়ে রাখে আল্লাহ্র পথ থেকে, আর আল্লাহ্র পথ বাঁকা করতে চায়; তারাই ঘোর বিভ্রান্তিতে নিপতিত।
The ones who prefer the worldly life over the Hereafter and avert [people] from the way of Allah, seeking to make it (seem) deviant. Those are in extreme error.
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
১-৩ নং আয়াত:-
[ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ
পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিত পথের দিকে,
To the path of the All-Mighty,]
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
নামকরণ:
ইবরাহীম (عليه السلام) একজন অন্যতম উলুল আযম (শ্রেষ্ঠ পাঁচজনের একজন) নাবী। ইবরাহীম (عليه السلام) কর্তৃক মক্কার জন্য, নিজের জন্য, ছেলে ইসমাইলের জন্য এবং সারা জাহানের মু’মিনদের জন্য দু‘আ ও আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা সম্পর্কে এ সূরার ৩৫-৪১ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, সে ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরার শুরুতে কুরআন অবতীর্ণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের মাতৃভাষায় রাসূল প্রেরণ, মূসা (عليه السلام) ও বানী ইসরাঈলদের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত, শুকরিয়া আদায় ও অনাদায়ের ফলাফল এবং পূর্ববর্তী কয়েকটি জাতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলগণ মানুষ ছিলেন, তাদের ওপর উম্মাতের অবাধ্য লোকেরা যে সকল নির্যাতন করত তার বিবরণ, কাফিরদের সৎ আমলের উপমা, কিয়ামতের মাঠে শয়তানের বক্তব্য এবং যারা দুনিয়াতে ঈমান ও সৎ আমল করবে তারা কবরেও ঈমানের ওপর অটল থাকতে পারবে এই সম্পর্কে সূরার মাঝে আলোচনা করা হয়েছে। তারপর ইবরাহীম (عليه السلام)-এর কথাসহ কাফিরদের আখিরাতে যে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে সে সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর:
الٓرٰ-(আলিফ-লাম-রা) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর সঠিক উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন অবতীর্ণের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। আর তা হল তিনি তাঁর নাবীর ওপর এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন যাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানব জাতিকে কুফর, ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে ঈমান, হিদায়াত ও জ্ঞানের আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰي عَبْدِه۪ اٰيٰتٍۭ بَيِّنٰتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَي النُّوْرِ)
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, তোমাদেরকে সকল প্রকার অন্ধকার হতে আলোর দিকে আনার জন্য।” (সূরা হাদীদ ৫৭:৯)
তবে যে কেউ ইচ্ছা করলেই হিদায়াত গ্রহণ করতে পারবে না, এমনকি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা না করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং কাউকে ইচ্ছা করলেও হিদায়াত দিতে পারবেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَا۬ءُ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন।” (সূরা কাসাস ২৮:৫৬)
বরং হিদায়াত সে ব্যক্তিই পাবে আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য ইচ্ছা করবেন এবং তাওফীক দেবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللّٰهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَي النُّوْر)
“মু’মিনদের অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন।” (সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৭)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাজ হল মানব জাতিকে হিদায়াতের রাস্তা দেখিয়ে দেয়া। কথাটি যদিও এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলেছেন, কিন্তু তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চিরদিন থাকার জন্য আসেননি, তিনি একদিন চলে যাবেন এবং চলে গেছেনও বটে। তাঁর পর মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করবে তাঁর ওয়ারিশ আলেমগণ, তাই আলেমগণ সঠিক পথ দেখানোর পর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেবেন, যার ভাগ্যে হিদায়াতের মর্যাদা রয়েছে সে-ই তা পাবে। সুতরাং মানব জাতিকে কুরআন দেয়া হয়েছে এজন্য যে, তারা এ থেকে হিদায়াতের পথ গ্রহণ করবে আর আলেমদের উচিত হবে তারা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী মানব জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন, কোন তরীকাহ, মত, পথ ও দলের দিকে নয়।
আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ব্যতীত কেউ সঠিক পথ লাভ করতে পারবে না। সঠিক পথ পাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হল তাঁর রাসূলের অনুসরণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللّٰهِ)
“রাসূলকে একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে।” (সূরা নিসা ৪:৬৪)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সব কিছুর সৃষ্টি, পরিচালনা, রিযিক ও সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র তিনি। তিনি যা বলেন তাই হয়, তিনি যেভাবে চালান সেভাবেই চলে এবং তিনি যাকে যতটুকু পরিমাণ রিযিক দেয়ার ইচ্ছা করেন সে ততটুকুই রিযিক পায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لِلّٰهِ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ)
“আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর।” (সূরা বাক্বারা ২:২৮৪)
সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করবে, আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিবে না তারাই কাফির তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
অতএব সে সমস্ত ইঁদুর কপালে লোকদের বিবরণ তুলে ধরছেন যারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জীবনের ওপর প্রাধান্য দেয় তথা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে না, আখিরাতকে ভয় করে পাপ ও আল্লাহ তা‘আলাদ্রোহী কাজ বর্জন করে না এবং দীন-ধর্মের কোন পরওয়া না করে লাগামহীন চলাফেরা করে । আর মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার পথে চলতে ও আসতে বাধা দেয়। আল্লাহ তা‘আলার পথে মানুষকে বাধা দেয়ার অনেক পদ্ধতি ও দিক রয়েছে; যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে কুধারণা সৃষ্টি করা, যারা দীন মেনে চলে তাদেরকে বিভিন্ন নামে ও উপাধি দিয়ে ব্যঙ্গ করা ও শারীরিক নির্যাতন করে ইসলামের পথে চলতে ও আসতে বাধা দেয়া। অনেকেই ইসলামের পথে চলতে চায় কিন্তু কেউ পারিবারিক কারণে, রাষ্ট্রীয় কারণে বা অন্য জাতির চাপের কারণে ইসলাম গ্রহণ ও তার পথে চলতে পারে না। মোট কথা যে কোন উপায়ে ইসলামের পথে বাধা এবং তাতে বক্রতা সৃষ্টি করা, তা যে কোন পদ্ধতি ও উপায়ে হোক আল্লাহ তা‘আলাদ্রোহী কাজ, তারা সুদূর গোমরাহীতে রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
أَنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الْأَئِمَّةُ الْمُضِلُّونَ
আমি আমার উম্মতের পথভ্রষ্ট নেতাদের ব্যাপারে বেশি ভয় করি। কারণ তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে এবং সঠিক পথে চলতে বাধা দিবে। (মুসনাদে আহমাদ হা: ২৬৯৩৯, সহীহুল জামে হা: ১৫৫১, সহীহ)
সুতরাং যারা আখেরাতের ওপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিবে, মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার পথে আসতে ও চলতে বাধা দেয় এবং ইসলামের নামে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়। আমাদের উচিত এদের প্রপাগাণ্ডায় প্ররোচিত না হয়ে আল্লাহ তা‘আলা যে দীন দিয়ে যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চয়ন করেছেন তাঁর সে দীনের পথে বহাল থাকা এবং মানুষের মাঝে তার প্রচার করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য।
২. আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ব্যতীত কেউ সঠিক পথ লাভ করতে পারবে না।
৩. আখিরাতের ওপর ইহকালের প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
৪. আলেমদের উচিত মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়া, কোন মত, তরীকাহ বা দলের দিকে নয়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
(১৪-ইবরাহীম) : নামকরণ:
৩৫ নং আয়াতে উল্লেখিত وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِنًا বাক্যাংশ থেকে এ সূরার নাম গৃহীত হয়েছে। এ নামকরণের মানে এ নয় যে, এ সূরায় হযরত ইবরাহীমের জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। বরং অধিকাংশ সূরার নামের মতো এখানেও আলামত হিসেবে এ নাম ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এটি এমন একটি সূরা যেখানে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(১৪-ইবরাহীম) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
সূরাটির সাধারণ বর্ণনা পদ্ধতি মক্কার শেষ যুগের সূরাগুলোর মতো। তাই এটি সূরা রা’আদের নিকটবর্তী কালে অবতীর্ণ বলে মনে হয়। বিশেষ করে ১৩ নং আয়াতের وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِنْ أَرْضِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا এবং অস্বীকারকারীরা নিজেদের রসূলদের বললো, তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের ধর্মীয় জাতিসত্তার মধ্যে, অন্যথায় আমরা তোমাদের বের করে দেবো (আমাদের দেশ থেকে) শব্দাবলী থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সে সময় মক্কায় মুসলমানদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। মক্কাবাসীরা অতীতের কাফের জাতিগুলোর মতো তাদের দেশের মুমিন সমাজকে দেশ থেকে উৎখাত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। এ জন্য অতীতে তাদের মতো যেসব জাতি একই কর্মনীতি অবলম্বন করেছিল তাদেরকে যে ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও সেই একই হুমকি দেয়া হয়। অতীতের কাফের জাতিসমূহকে হুমকি দেয়া হয়েছিল, لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِينَ (আমি জালেমদেরকে ধ্বংস করে ছাড়বো, । অন্যদিকে মুমিনদেরকে তাদের পূর্ববর্তীদের মতো একই সান্ত্বনা দেয়া হয়। তাদেরকে বলা হয়ঃ لَنُسْكِنَنَّكُمُ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِهِمْ অর্থাৎ এ জালেমদেরকে খতম করার পর আমি এ ভূখন্ডে তোমাদের বসতি স্থাপন করাবো।
। এভাবে শেষ রুকূ’র আলোচ্য বিষয় থেকেও অনুমান করা যায় যে, এ সূরাটি মক্কার শেষ যুগের সাথে সম্পর্ক রাখে।
(১৪-ইবরাহীম) : কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :
যারা নবী (সা.) এর রিসালাত মেনে নিতে অস্বীকার করছিল এবং তাঁর দাওয়াতকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য সব রকমের নিকৃষ্টতম প্রতারণা ও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের প্রতি উপদেশ ও সতর্কবাণী এ সূরার কেন্দ্রীয় বক্তব্য। কিন্তু উপদেশের তুলনায় এ সূরায় সতর্কীকরণ, তিরষ্কার হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের ভাবধারাই বেশী উচ্চকিত। এর কারণ, এর আগের সূরাগুলোতে বুঝাবার কাজটা পুরোপুরি এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপরও কুরাইশ কাফেরদের হঠকারিতা, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, অনিষ্টকর ক্রিয়াকর্ম ও জুলুম-নির্যাতন দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছিল ।
তাফসীর :
টিকা:১) অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে আনার মানে হচ্ছে, শয়তানের পথ থেকে সরিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। অন্য কথায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নেই সে আসলে অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে বিভ্রান্তের মতো পথ হাতড়ে মরেছে। সে নিজেকে যতই উন্নত চিন্তার অধিকারী এবং জ্ঞানের আলোকে যতই উদ্ভাসিত মনে করুক না কেন তাতে আসল অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের সন্ধান পেয়েছে, গ্রামীণ এলাকার একজন অশিক্ষিত লোক হলেও সে আসলে জ্ঞানের আলোর রাজ্যে পৌঁছে গেছে।
তারপর এই যে, বলা হয়েছে “যাতে তুমি এদেরকে রবের প্রদত্ত সুযোগ ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে আল্লাহর পথে নিয়ে এসো” এ উক্তির মধ্যে আসলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন প্রচারক, তিনি নবী হলেও, সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া ছাড়া তিনি আর বেশী কিছু করতে পারেন না। এটা পুরোপুরি আল্লাহর দেয়া সুযোগ ও সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে। আল্লাহ কাউকে সুযোগ দিলে সে হেদায়াত লাভ করতে পারে। নয়তো নবীর মতো সফল ও পূর্ণ শক্তিধর প্রচারকও নিজের সকল শক্তি নিয়োগ করেও তাকে হেদায়াত দান করতে পারেন না। আর আল্লাহর সুযোগ দান সম্পর্কে বলা যায়, এর একটি স্বতন্ত্র বিধান রয়েছে। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এটি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত লাভের সুযোগ একমাত্র সেই ব্যক্তি পায় যে নিজেই হেদায়াতের প্রত্যাশী হয়, জিদ, হঠকারিতা ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত থাকে, নিজের প্রবৃত্তি ও কামনা বাসনার দাস হয় না, পরিষ্কার খোলা চোখে দেখে সজাগ ও সতর্ক কানে শোনে, মুক্ত সুস্থ ও পরিষ্কার মস্তিষ্কে চিন্তা করে এবং যুক্তিসঙ্গত কথাকে কোন প্রকার পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় না নিয়ে মেনে নেয়।
টিকা:২) মূল আয়াতে বলা হয়েছে ‘হামীদ’। হামীদ শব্দটি ‘মাহমুদ’ (প্রশংসিত)-এর সমার্থক হলেও উভয় শব্দের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। কাউকে মাহমুদ তখনই বলা হবে যখন তার প্রশংসা করা হয়েছে বা হয়। কিন্তু “হামীদ” বললে বুঝা যাবে কেউ তার প্রশংসা করুক বা না করুক সে নিজেই প্রশংসার অধিকারী ও যোগ্য। এখানে প্রশংসিত, প্রশংসার যোগ্য ও প্রশংসা লাভের হকদার ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে এ শব্দটির পূর্ণ অর্থ প্রকাশ হয় না। তাই আমি এর অনুবাদ করেছি আপন সত্তায় আপনি প্রশংসিত শব্দাবলীর মাধ্যমে।
টিকা:৩) অথবা অন্য কথায় যারা শুধুমাত্র দুনিয়ার স্বার্থ ও লাভের কথাই চিন্তা করে, আখেরাতের কোন পরোয়া করে না। যারা বৈষয়িক লাভ, স্বাদ ও আরাম-আয়েশের বিনিময়ে আখেরাতের ক্ষতি কিনে নিতে পারে কিন্তু আখেরাতের সাফল্য ও সমৃদ্ধির বিনিময়ে দুনিয়ার কোন ক্ষতি, কষ্ট ও বিপদ এমনকি কোন স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়াও বরদাশত করতে পারে না। যারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের পর্যালোচনা করে ধীরে ও সুস্থ মস্তিষ্কে দুনিয়াকে বেছে নিয়েছে এবং আখেরাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তার স্বার্থ যেসব ক্ষেত্রে দুনিয়ার স্বার্থের সাথে সংঘর্ষশীল হবে সেসব ক্ষেত্রে তাকে ত্যাগ করে যেতে থাকবে।
টিকা:৪) অর্থাৎ তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে থাকতে চায় না। বরং আল্লাহর দ্বীনকে নিজেদের ইচ্ছার অনুগত করে রাখতে চায়। নিজেদের প্রত্যেকটি ভাবনা-চিন্তা, মতবাদ ও ধারণা-অনুমানকে তারা নিজেদের আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করে এবং এমন কোন আকীদাকে নিজেদের চিন্তারাজ্যে অবস্থান করতে দেয় না যা তাদের ভাবনার সাথে খাপ খায় না। তারা চায় আল্লাহর দ্বীন তাদের অনুসৃত প্রত্যেকটি রীতি-নীতি, আচার-আচরণ ও অভ্যাসকে বৈধতার ছাড়পত্র দিক এবং তাদের কাছে এমন কোন পদ্ধতির অনুসরণের দাবী না জানাক যা তারা পছন্দ করে না। এরা নিজেদের প্রবৃত্তি ও শয়তানের অনুসরণে যেদিকে মুখ ফিরায়, আল্লাহর দ্বীনও যেন এদের গোলাম হয়ে ঠিক সেদিকেই মুখ ফিরায়। সে যেন কোথাও এদেরকে বাধা না দেয় বা সমালোচনা না করে এবং কোথাও এদেরকে নিজের পথের দিকে ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা না করে। আল্লাহ তাদের কাছে এ ধরনের দ্বীন পাঠালেই তারা তা মানতে প্রস্তুত।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর
‘হুরূফে মুকাত্তাআ’হ’ যা সূরাসমূহের শুরুতে এসে থাকে ওগুলির বর্ণনা পূর্বেই গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এরপর আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! এই ব্যাপক মর্যাদা সম্পন্ন কিতাবটি আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি। এই কিতাবটি অন্যান্য সমূদয় আসমানী কিতাব হতে বেশী উন্নত মানের এবং রাসূলও (সঃ) অন্যান্য সমস্ত রাসূল হতে শ্রেষ্ঠ। যে জায়গায় এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সেই জায়গাটিও দুনিয়ার সমস্ত জায়গা হতে উত্তম-এর প্রথম গুণ এই যে, তুমি এর মাধ্যমে জনগণকে অজ্ঞতার অন্ধকার হতে জ্ঞানের আলোকের দিকে নিয়ে আসবে। তোমার প্রথম কাজ এই যে, তুমি পথ ভ্রষ্টতাকে হিদায়াত এবং মন্দকে ভালোর দ্বারা পরিবর্তন ঘটাবে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন মুমিনদের সহায়ক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন। আর কাফিরদের সঙ্গী হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ, যা তাদেরকে আলো থেকে সরিয়ে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। প্রকৃত হিদায়াতকারী আল্লাহ তাআ’লাই। রাসূলদের মাধ্যমে যাদের হিদায়াতের তিনি ইচ্ছা করেন তারাই সুপথ প্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং তারাই অপরাজেয়, বিজয়ী এবং সব কিছুর বাদশাহ বনে যায় এবং সর্বাবস্থায় প্রশংসিত আল্লাহর পথের দিকে পরিচালিত হয়।
(আরবি) শব্দটির অন্য কিরআত (আরবি) ও রয়েছে। প্রথমটি (আরবি) হিসেবে এবং দ্বিতীয়টি নতুন বাক্য হিসেবে। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে নবী, সঃ) তুমি বলঃ হে লোক সকল! নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের নিকট সেই আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি যার জন্যে রয়েছে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্ব।” (৭:১৫৮)
আল্লাহপাক বলেনঃ কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ কাফিরদের জন্যে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে। তারা পার্থিব জীবনকে পারলৌকিক জীবনের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তারা দুনিয়া লাভের জন্যে পুরো মাত্রায় চেষ্টা-তদবীর করে এবং আখেরাত হতে থাকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। তারা রাসূলদের আনুগত্য হতে অন্যদেরকেও বিরত রাখে। আল্লাহর পথ হচ্ছে সোজা ও পরিষ্কার, তারা সেই পথকে বক্র করতে চায়। তারাই অজ্ঞতা ও ঘোর বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর পথ বক্র হয়ও নি এবং হবেও না। সুতরাং এ অবস্থায় তাদের সংশোধন সুদূর পরাহত।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ibrahim
Sura: 14
Verses :- 1-3
إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ
To the path of the All-Mighty,
Describing the Qur’an and warning Those Who defy it
Allah says,
الَر
Alif-Lam-Ra.
Previously we discussed the meaning of the separate letters that appear in the beginnings of some Surahs.
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ
(This is) a Book which We have revealed unto you…
Allah says, `This is a Book that We have revealed to you, O Muhammad. This `Book’, is the Glorious Qur’an, the most honored Book, that Allah sent down from heaven to the most honored Messenger of Allah sent to all the people of the earth, Arabs and non-Arabs alike,
لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
in order that you might lead mankind out of darkness into light,
We sent you, O Muhammad, with this Book in order that you might lead mankind away from misguidance and crookedness to guidance and the right way,’
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ ءامَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَـتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَأوُهُمُ الطَّـغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَـتِ
Allah is the Wali (Protector or Guardian) of those who believe. He brings them out from darkness into light.
But as for those who disbelieve, their Awliya (supporters and helpers) are Taghut (false deities), they bring them out from light into darkness. (2:257)
and,
هُوَ الَّذِى يُنَزِّلُ عَلَى عَبْدِهِ ءَايَـتٍ بَيِّنَـتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَـتِ إِلَى النُّورِ
It is He Who sends down manifest Ayat to His servant that He may bring you out from darkness into light. (57:9)
Allah said next,
بِإِذْنِ رَبِّهِمْ
by their Lord’s leave,
He guides those whom He destined to be guided by the hand of His Messenger, whom He sent to guide them by His command,
إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ
to the path of the All-Mighty,
Who can never be resisted or overpowered. Rather, Allah is Irresistible above everything and everyone else,
الْحَمِيدِ
the Praised.
Who is glorified and praised in all His actions, statements, legislation, commandments and prohibitions and Who only says the truth in the information He conveys.
Allah’s statement.
اللّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الَارْضِ
Allah to Whom belongs all that is in the heavens and all that is in the earth!,
is similar to,
قُلْ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِى لَهُ مُلْكُ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ
Say:”O mankind!
Verily, I am sent to you all as the Messenger of Allah – to Whom belongs the dominion of the heavens and the earth. (7:158)
Allah’s statement,
وَوَيْلٌ لِّلْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ شَدِيدٍ
And woe unto the disbelievers from a severe torment.
means, `woe to them on the Day of Judgment because they defied you, O Muhammad, and rejected you.’
Allah says
الَّذِينَ يَسْتَحِبُّونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الاخِرَةِ
Those who prefer the life of this world to the Hereafter,
Allah described the disbelievers as preferring the life of the present world to the Hereafter, coveting the former life and working hard for its sake. They have forgotten the Hereafter and abandoned it behind their backs,
وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ
and hinder (men) from the path of Allah,
from following the Messengers,
وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا
and seek crookedness therein,
they seek to make Allah’s path crooked, even though it is straight itself and does not deviate on account of those who defy or betray it. When the disbelievers do this, they become engulfed in ignorance and misguidance far away from truth, and therefore, there is no hope that they will gain guidance and correctness while on this state.
أُوْلَـيِكَ فِي ضَلَلٍ بَعِيدٍ
they are far astray.