أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 760)
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
১৩-১৭ নং আয়াত:-
[ لَنُہۡلِکَنَّ الظّٰلِمِیۡنَ
সীমালংঘনকারীদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব।
We will surely destroy the wrongdoers.]
www.motaher21.net
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِرُسُلِہِمۡ لَنُخۡرِجَنَّکُمۡ مِّنۡ اَرۡضِنَاۤ اَوۡ لَتَعُوۡدُنَّ فِیۡ مِلَّتِنَا ؕ فَاَوۡحٰۤی اِلَیۡہِمۡ رَبُّہُمۡ لَنُہۡلِکَنَّ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۙ۱۳﴾
অবিশ্বাসীগণ তাদের রসূলদেরকে বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করব, অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হতেই হবে।’ অতঃপর রসূলদের প্রতিপালক তাদের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করলেন, ‘সীমালংঘনকারীদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব।
And those who disbelieved said to their messengers, “We will surely drive you out of our land, or you must return to our religion.” So their Lord inspired to them, “We will surely destroy the wrongdoers.
وَ لَنُسۡکِنَنَّـکُمُ الۡاَرۡضَ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ خَافَ مَقَامِیۡ وَ خَافَ وَعِیۡدِ ﴿۱۴﴾
তাদের পরে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে দেশে পুনর্বাসিত করব; এটা তাদের জন্য যারা ভয় রাখে আমার সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার এবং ভয় রাখে আমার (শাস্তির) হুমকির।’
And We will surely cause you to dwell in the land after them. That is for he who fears My position and fears My threat.”
وَ اسۡتَفۡتَحُوۡا وَ خَابَ کُلُّ جَبَّارٍ عَنِیۡدٍ ﴿ۙ۱۵﴾
তারা ফায়সালা কামনা করল এবং প্রত্যেক উদ্ধত হঠকারী ব্যর্থকাম হল।
And they requested victory from Allah, and disappointed, [therefore], was every obstinate tyrant.
مِّنۡ وَّرَآئِہٖ جَہَنَّمُ وَ یُسۡقٰی مِنۡ مَّآءٍ صَدِیۡدٍ ﴿ۙ۱۶﴾
তাদের প্রত্যেকের সম্মুখে রয়েছে জাহান্নাম এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে পূঁজমিশ্রিত পানি।
Before him is Hell, and he will be given a drink of purulent water.
یَّتَجَرَّعُہٗ وَ لَا یَکَادُ یُسِیۡغُہٗ وَ یَاۡتِیۡہِ الۡمَوۡتُ مِنۡ کُلِّ مَکَانٍ وَّ مَا ہُوَ بِمَیِّتٍ ؕ وَ مِنۡ وَّرَآئِہٖ عَذَابٌ غَلِیۡظٌ ﴿۱۷﴾
যা সে অতি কষ্টে এক ঢোক এক ঢোক করে গিলতে থাকবে এবং তা গিলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে; সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু-যন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং তার পরে থাকবে কঠোর শাস্তি।
He will gulp it but will hardly [be able to] swallow it. And death will come to him from everywhere, but he is not to die. And before him is a massive punishment.
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
১৩-১৭ নং আয়াত:-
[ لَنُہۡلِکَنَّ الظّٰلِمِیۡنَ
সীমালংঘনকারীদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব।
We will surely destroy the wrongdoers.]
১৩-১৭ আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, কাফিরগণ যখন যুক্তিতর্কে হেরে গেল আর রাসূলগণ দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছেন এবং তাতে অটল অবস্থানে রয়ে গেলেন তখন তারা ধমক ও ভয় দেখিয়ে বলল: আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব যদি আমাদের ধর্মের অনুসরণ না কর। শু‘আইব (عليه السلام) ও লূত (عليه السلام)-এর জাতির লোকেরা বলেছিল যে, আমাদের বাসভূমি থেকে তাদেরকে বের করে দাও। যেমন সূরা আ‘রাফের ৮৮ নং আয়াত এবং সূরা নামলের ৫৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে মক্কার কুরাইশরাও এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং বলেছিল তাকে বন্দী কর, হত্যা কর অথবা দেশ থেকে তাড়িয়ে দাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ أَوْ يَقْتُلُوْكَ أَوْ يُخْرِجُوْكَ ط وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللّٰهُ ط وَاللّٰهُ خَيْرُ الْمٰكِرِيْنَ )
“স্মরণ কর! যখন কাফিরগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার বা হত্যা করার অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” (সূরা আনফাল ৮:৩০)
কাফিরদের এসব কথায় আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে সাহস দিয়ে ওয়াহী প্রেরণ করলেন যে, তোমাদেরকে সাহায্য করব আর জালিমদেরকে ধ্বংস করব।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ سَبَقَتْ کَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِیْنَﯺﺊ اِنَّھُمْ لَھُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَﯻﺕ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَھُمُ الْغٰلِبُوْنَﯼ )
“আমার রাসূল বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এবং আমার বাহিনী, অবশ্যই তারাই জয়ী হবে।” (সূরা স্বফফাত ৩৭:১৭১-১৭৩)
এরূপ সূরা আ‘রাফের ১২৮ নং এবং সূরা মুজাদালার ২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
আমরা দৃষ্টিপাত করলেই দেখতে পাব যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে সহযোগিতা করেছেন, কাফির-মুশরিকদেরকে ধ্বংস করেছেন। নূহ, হূদ, সালেহ, লূত, ইবরাহীম, ঈসা ও মূসা আলাইহিমুস সালাম-সহ সকল নাবীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছেন। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছেন। যখন মক্কার কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সুন্দরভাবে মদীনায় পৌঁছে দিলেন এবং সেখানে দীনের সাহায্যকারী সহচর্য বানিয়ে দিলেন, তারা তাঁর সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলামকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে নিয়ে যায় এমনকি শেষ পর্যন্ত যে মক্কা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বের করে দেয়া হয়েছিল সে মক্কাই তারা জয় করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
(مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ ط وَالَّذِيْنَ مَعَه۫ أَشِدَّا۬ءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَا۬ءُ بَيْنَهُمْ)
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল।” (সূরা ফাতহ ৪৮:২৯)
(وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ الْأَرْضَ مِنْۭ بَعْدِهِمْ)
কাফিরদেরকে ধ্বংস করে, তাদেরকে হীন ও অপদস্ত করে পরাজয় বরণ করিয়ে সে দেশ তোমাদের অধীনস্থ করে দেব। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয় করলেন, উমার (রাঃ) অর্ধ-জাহান ইসলামের শাসনাধীনে নিয়ে এসেছিলেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِيْنَ كَانُوْا يُسْتَضْعَفُوْنَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِيْ بٰرَكْنَا فِيْهَا)
“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত (সিরিয়া) রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করেছি।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৩৭)
মু’মিনদের জয় আর কাফিরদের পরাজয় দুনিয়াতেও হয়েছিল এবং হবে আখিরাতেও। কাফিররা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে যাবে, আর মু’মিনরা জান্নাতের ওয়ারিশ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْۭ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصّٰلِحُوْنَ)
“আমি অবশ্যই লাওহে মাহফুযে যা লেখার তা লেখার পর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৫)
তবে এ জয় সে সকল মু’মিনদের যারা আল্লাহ তা‘আলার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে ভয় করে। কারণ যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলে তারাই দীনের ওপর অটল থাকতে পারে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه۪ وَنَهَي النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰي فَإِنَّ الْـجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوٰي)
“পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় রেখেছে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রেখেছে, অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জান্নাত।” (সূরা নাযিআত ৭৯:৪০-৪১)
وَاسْتَفْتَحُوْا অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফায়সালা কামনা করল। যদি নাবীদের দীন সঠিক হয় তাহলে আমাদেরকে পাথরের বৃষ্টি দ্বারা ধ্বংস করে দাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ قَالُوا اللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ هٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَا۬ءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ)
“স্মরণ কর! যখন তারা বলছিল, ‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তবে আমাদের ওপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দাও।” (সূরা আনফাল ৮:৩২)
যারা কুফরী করেছে, ঈমান আনতে অহংকার করেছে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। দুনিয়াতে পরাজয়ের গ্লানি আর (وَمِنْ وَّرَا۬ئِه۪) তথা আখিরাতে জাহান্নাম। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ لا مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيْبِ لا نِالَّذِيْ جَعَلَ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيْدِ )
‘‘আদেশ করা হবে:) তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অবাধ্য কাফিরকে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধা দানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য মা‘বূদ গ্রহণ করত তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।” (সূরা ক্বফ ৫০:২৪-২৬)
(مَّا۬ءٍ صَدِيْدٍ) বলা হয় জাহান্নামীদের শরীর ও চামড়া থেকে নির্গত পূঁজ ও রক্তকে। কতক হাদীসে এসেছে عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ অর্থাৎ জাহান্নামীদের দেহ-নিঃসৃত রক্ত ও পূঁজ ইত্যাদি। আর কতক হাদীসে এসেছে উক্ত পুঁজ ও রক্ত এত গরম হবে যে, তাদের মুখ পর্যন্ত পৌঁছতেই তাদের মুখমণ্ডলের চামড়া খসে পড়বে এবং এর এক ঢোক পান করতেই তাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। (তিরমিযী হা: ২৪৯২, সহীহ)
আর তাদের নিকট সর্বদিক থেকে আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা, কিন্তু তারা তথায় মৃত্যু বরণ করবেনা। বরং এরপরেও তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। সুতরাং যারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাাস্তি আস্বাদন করাবেন, আর যদি মু’মিন হয়ে সঠিক ঈমান ও আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুনিয়াতেও প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফির-মুশরিকরা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত ও লাঞ্ছিত হবে।
২. কাফিরদের ধ্বংস ও পরাজিত করে পৃথিবীতে মু’মিনগণ ক্ষমতাসীন থাকবেন।
৩. পানীয় হিসেবে তথায় (জাহান্নামে) থাকবে গলিত পুঁজ।
৪. কাফিররা তথায় মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করবে কিন্তু মৃত্যু বরণ করবে না।
৫. মু’মিনদের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৩-১৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, কাফিরগণ যখন যুক্তিতর্কে হেরে গেল তখন নবীদেরকে ধমক দিতে ও ভয় দেখাতে লাগলো যে, তাদেরকে তারা দেশ থেকে তাড়িয়ে দিবে। হযরত শুআইবের (আঃ) কওমও তাদের নবী ও মুমিনদের এ কথাই বলেছিলঃ “আমরা তোমাদের বাসভূমি হতে বের করে দিবো।’ হযরত লূতের (আঃ) সম্প্রদায়ও অনুরূপ কথাই বলেছিলঃ ‘নূত (আঃ) ও তার অনুসারীদেরকে তোমাদের গ্রাম থেকে বের করে দাও। কুরাইশ মুশরিকরাও এইরূপই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং বলেছিলঃ ‘তাকে বন্দীকর, হত্যা কর অথবা দেশ থেকে বের করে দাও। তাদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করবার চুড়ান্ত চেষ্টা করেছিল তোমাকে সেথা হতে বহিষ্কার করবার জন্যে; তা হলে তোমার পর তারাও সেথায় অল্পকাল টিকে থাকতো।” (১৭:৭৪)।
আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন কাফিরগণ চক্রান্ত করে তোমাকে বন্দী করার অথবা হত্যা করার এবং দেশে হতে) বের করে দেয়ার, তারা চক্রান্ত করেছিল, আল্লাহও কৌশল করেন আর আল্লাহ চক্রান্তের উত্তম প্রতিফল প্রদানকারী।” (৮:৩০) তিনি স্বীয় নবীকে (সঃ) নিরাপদে মক্কায় পৌছিয়ে দিলেন। মদীনাবাসীকে তাঁর আনসার বা সাহায্যকারী বানিয়ে দিলেন। তাঁরা তাঁর সেনাবাহিনীর অন্তভূক্ত হয়ে তাঁর পতাকা তলে এসে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং ধীরে ধীরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে উন্নতি দান করেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কাও জয় করে নেন। ফলে এখন দ্বীনের দুশমনদের চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যায় এবং তাদের আশার গুড়ে বালি পড়ে যায়। লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং আল্লাহর কালেমা এবং তার দ্বীন অল্প সময়ের মধ্যে পূর্বে ও পশ্চিমে সমস্ত দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “রাসূলদের কাছে তাদের প্রতিপালক ওয়াহী করলেনঃ যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করবো। আর তাদের পরে আমি তোমাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করবই। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থিরহয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই হবে। বিজয়ী।” (৩৮:১৭১-৭৩) মহান আল্লাহ অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেনঃ অবশ্যই আমি এবং আমার রাসূলগণ জয়যুক্ত হবো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।” (৫৮:২১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছিঃ আমার যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (২১:১০৫)
হযরত মূসা (আঃ) তাঁর কওমকে বলেছিলেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয় যমীন আল্লাহর, তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান যমীনের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং ভাল পরিণাম খোদাভীরুদের জন্যেই।” আর এক জায়গায় ঘোষণা করা হয়েছেঃ “দুর্বল লোকদেরকে আমি যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়ারিস বানিয়ে দিয়েছি, যেখানে আমি বানী ইসরাঈলের ধৈর্য ধারণের কারণে আমার উত্তম ওয়াদা পুরণার্থে বরকত দান করেছিলাম; আর তাদের শত্রু ফিরাউন ও তার কওমের শিল্প এবং তাদের নির্মিত প্রাসাদসমূহ ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।”
ঘোষিত হয়েছেঃ “যমীন তোমাদের অধিকারে চলে আসবে, এই ওয়াদা ঐ লোকদের জন্যে যারা কিয়ামতের দিন আমার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে।” যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি সীমা লংঘন করলো ও পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিলো, তার বাসস্থান জাহান্নাম।” (৭৯:৩৭-৩৯) তিনি আরো বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান।” (৫৫:৪৬)
রাসূলগণ তাঁদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্য, বিজয় ও ফায়সালা প্রার্থনা করলেন অথবা তাদের কওম এইরূপ প্রার্থনা করলো। রাসূলদের এইরূপ প্রার্থনা করা এটা হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি। আর তাঁর কওমের এইরূপ প্রার্থনা করা এটা হযরত আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলামের (রঃ) উক্তি। যেমন মক্কার মুশরিক কুরায়েশরা বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! যদি এটা সত্য হয় তবে তুমি আকাশ হতে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ কর অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আমাদের উপর নাযিল করো।” আবার এও হতে পারে যে, এদিকে কাফিররা এটা প্রার্থনা করলো, আর ওদিকে রাসূলগণও দুআ করলেন। যেমন বদরের যুদ্ধের দিন ঘটেছিল যে, একদিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট কাতর কণ্ঠে দুআ করেছিলেন, আর অপরদিকে কাফির নেতৃবর্গই প্রার্থনা করছিলঃ “হে আল্লাহ! আজ তুমি হক বা সত্যকে জয়যুক্ত কর।” হয়েছিলও তাই। মুমিনরা হক পথে ছিলেন, কাজেই তাঁরাই বিজয়ী হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বলেছিলেনঃ “তোমরা বিজয় প্রার্থনা করছিলে, তাতো এসে গেছে এবং এখনও যদি তোমরা (দুষ্কর্ম থেকে) বিরত থাক তবে এটাই হবে তোমাদের জন্যে কল্যাণকর।” এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান এক মাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে।
মহান আল্লাহর উক্তিঃ “উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ মনোরথ হলো।” যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেনঃ “(আদেশ করা হবে) নিক্ষেপ কর, নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক উদ্ধত কাফিরকে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য মা’বুদ গ্রহণ করতো তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।”
হাদীসেও রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে, তখন সে সমস্ত মাখলুককে ডাক দিয়ে বলবেঃ “আমি প্রত্যেক অহংকারী ও হঠকারীর জন্যে নির্ধারিত রয়েছি।” সেই দিন এ মন্দলোকদের কতইনা দূরাবস্থা হবে যেই দিন নবীগণ পর্যন্ত মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ তাআলার সামনে কড়জোড়ে দাড়িয়ে থাকবেন।
এখানে (আরবি) শব্দটি (আরবি) (সামনে) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে নৌকা সকল ছিনিয়ে নিতো।” (১৮:৭১)
হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কিরআত (আরবি) এইরূপই রয়েছে। মোটকথা, সামনে জাহান্নাম তার অপেক্ষায় থাকবে, যেখানে প্রবেশ করার পর আর বের হতে হবে না। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তো জাহান্নাম সকাল-সন্ধ্যায় সামনে আসতেই থাকবে। তারপর ওটাই স্থায়ী ঠিকানা বা বাসস্থান হয়ে যাবে। অতঃপর সেখানে তার জন্যে পানির পরিবর্তে আগুনের মত পুঁজ রয়েছে এবং সীমাহীন ঠাণ্ডা এবং দুর্গন্ধময় পানি রয়েছে, যা জাহান্নামীদের ক্ষতস্থান হতে নির্গত হয়ে আসবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা হচ্ছে ফুটন্ত পানি ও পূজ সুতরাং এটার যেন তারা স্বাদ গ্রহণ করে।” (৩৮:৫৭)
(আরবি) বলা হয় পুঁজ ও রক্তকে যা জাহান্নামীদের গোশতও চামড়া থেকে বয়ে আসবে। এটাকেই (আরবি) ও বলা হয়ে থাকে। এটা কাতাদা’র (রঃ) উক্তি।
হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) (আরবি) (গলিত পুঁজ পান করানো হবে যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে) এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেন যে, যখন তার কাছে তা নিয়ে যাওয়া হবে তখন তার খুব কষ্ট হবে। মুখের কাছে পৌছা মাত্রই সমস্ত চেহারার চামড়া ঝলসে গিয়ে তাতে পড়ে যাবে। এক চুমুক নেয়া মাত্রই পেটের নাড়িভূড়ি পায়খানার দ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ি কেটে দিবে। আল্লাহ পাক আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “প্রার্থনাকারীর চাহিদা গলিত তামার ন্যায় ফুটন্ত গরম পানি দ্বারা মেটানো হবে যা তার চেহারা দগ্ধিভূত করবে।” অতিকষ্টে সে চুক চুক করে গলাধঃকরণ করবে। ফেরেশতারা লোহার ঘন মেরে মেরে পান করাবে। বিস্বাদ, দুর্গন্ধ, গরমের তীব্রতা বা ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে গলা থেকে নামা অসম্ভব হয়ে যাবে। দেহে, অঙ্গ-প্রতঙ্গে, জোড়ে জোড়ে ব্যথা ও কষ্ট হবে। মনে হবে যেন মৃত্যু চলে আসছে। কিন্তু মৃত্যু হবে না। শিরায় শিরায় শাস্তি দেয়া হবে, কিন্তু প্রাণ বের হবে না। এক একটি পশম অসহনীয় শাস্তিতে পতিত, কিন্তু আত্মাদেহ হতে বের হতে পারবে না। সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে হতে যেন মৃত্যু চলে আসছে, কিন্তু এসে পড়ছে না। বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি, জাহান্নামের আগুন পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কিন্তু মৃত্যুকে ডেকেও আসে না। মৃত্যুও আসে না, শাস্তিও সরে না, যেন সার্বক্ষণিক শাস্তি হতে থাকে। প্রত্যেক শাস্তি এমন যে, তা মৃত্যুর জন্যে যথেষ্ট হওয়ার চাইতেও বেশী। কিন্তু সেখানে তো মৃত্যুও হয়ে যাবে। এসব শাস্তির সাথে আরো কঠিন ও বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা যাককুম বৃক্ষ সম্বন্ধে বলেছেনঃ “এই বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে। এর মোচা যেন শয়তানের মাথা। তারা এটা হতে ভক্ষণ করবে এবং এর দ্বারা উদরপূর্ণ করবে। তদুপরি তাদের জন্যে থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্জ্বলিত অগ্নির দিকে।” মোট কথা, কখনো যাককুম খাওয়া, কখনো গরম ফুটন্ত পানি পান করা, কখনো আগুনে পোড়ানো, কখনো পুঁজ পান করানো ইত্যাদি বিভিন্ন শাস্তি তাদেরকে দেয়া হবে। আমরা এর থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অনুরূপ আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটাই সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা অবিশ্বাস করে। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে” (৫৫:৪৩-৪৪) প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই যাকুম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য। গলিত তারে মত, ওটা তার উদরে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত। (ফেরেস্তাদেরকে বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও। আর বলা হবেঃ আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। এটাতো ওটাই, যে বিষয়ে তুমি সন্দেহ করতে।” তিনি আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “এটাই, আর সীমালংঘনকারীদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্টতম পরিণাম জাহান্নাম, সেথায় তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল। এটা সীমালংঘনকারীদের জন্যে, সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পূজ। আরো আছে এইরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।” এমন আরো বহু শাস্তি রয়েছে যা মহা মহিমান্বিত ও প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে মুহাম্মদ সঃ!) তোমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করেন না।” (৪১:৪৬)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ibrahim
Sura: 14
Verses :- 13-17
[ لَنُہۡلِکَنَّ الظّٰلِمِیۡنَ
We will surely destroy the wrongdoers.]
Disbelieving Nations threaten Their Messengers with Expulsion
Allah tells;
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِرُسُلِهِمْ
لَنُخْرِجَنَّـكُم مِّنْ أَرْضِنَأ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا
And those who disbelieved, said to their Messengers:”Surely, we shall drive you out of our land, or you shall return to our religion.”
Allah narrates to us how the disbelieving nations threatened their Messengers, that being, expulsion from their land and banishment.
For instance, the people of Prophet Shu`ayb, peace be upon him, said to him and to those who believed in him,
لَنُخْرِجَنَّكَ يـشُعَيْبُ وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَأ
We shall certainly drive you out from our town, O Shu`ayb, and those who have believed with you. (7:88)
The people of Prophet Lut, peace be upon him, said,
أَخْرِجُواْ ءَالَ لُوطٍ مِّن قَرْيَتِكُمْ
Drive out the family of Lut from your city. (27:56)
Allah said about the idolators of Quraysh,
وَإِن كَادُواْ لَيَسْتَفِزُّونَكَ مِنَ الاٌّرْضِ لِيُخْرِجُوكَ مِنْهَا وَإِذًا لاَّ يَلْبَثُونَ خِلَـفَكَ إِلاَّ قَلِيلً
And verily, they were about to frighten you so much as to drive you out from the land. But in that case they would not have stayed after you, except for a little while. (17:76)
and,
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَـكِرِينَ
And when the disbelievers plotted against you to imprison you, or to kill you, or to expel you out; they were plotting and Allah too was plotting; and Allah is the Best of those who plot. (8:30)
Allah gave victory and aid to His Messenger after he emigrated from Makkah and gathered followers, supporters, and soldiers around him, who fought in the cause of Allah, the Exalted. Allah kept granting His Messenger more dominance until He opened for him Makkah, which sought to expel him. Allah gave him dominance over it, even when his enemies from Makkah and the rest of the people of the earth disliked it. Soon after, people began embracing the religion of Allah in large crowds and in a very short time Allah’s Word and religion became high over all other religions, from the eastern and western parts of the world.
Hence Allah’s statement,
فَأَوْحَى إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِينَ
وَلَنُسْكِنَنَّـكُمُ الَارْضَ مِن بَعْدِهِمْ
So their Lord revealed to them:”Truly, We shall destroy the wrongdoers. And indeed, We shall make you dwell in the land after them.”
Allah said in other Ayat,
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ
إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُورُونَ
وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَـلِبُونَ
And, verily, Our Word has gone forth of old for Our servants, the Messengers, that they verily, would be made triumphant, and that Our hosts! They verily, would be the victors. (37:171-173)
كَتَبَ اللَّهُ لاّغْلِبَنَّ أَنَاْ وَرُسُلِى إِنَّ اللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
Allah has decreed:”Verily, it is I and My Messengers who shall be the victorious. Verily, Allah is All-Powerful, All-Mighty.” (58:21)
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِى الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ
And indeed We have written in Az-Zabur after Adh-Dhikr. (21:05)
قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُواْ بِاللَّهِ وَاصْبِرُواْ إِنَّ الَارْضَ للَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَأءُ مِنْ عِبَادِهِ وَالْعَـقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
Musa said to his people:”Seek help in Allah and be patient. Verily, the earth is Allah’s. He gives it as a heritage to whom He wills of His servants:and the (blessed) end is for the those who have Taqwa.” (7:128)
and,
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُواْ يُسْتَضْعَفُونَ مَشَـرِقَ الاٌّرْضِ وَمَغَـرِبَهَا الَّتِى بَارَكْنَا فِيهَا وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَى عَلَى بَنِى إِسْرءِيلَ بِمَا صَبَرُواْ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُواْ يَعْرِشُونَ
And We made the people who were considered weak to inherit the eastern parts of the land and the western parts thereof which We have blessed. And the fair Word of your Lord was fulfilled for the Children of Israel, because of their endurance. And We destroyed completely all the great works and buildings which Fir`awn and his people erected. (7:137)
Allah said next,
ذَلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِي وَخَافَ وَعِيدِ
This is for him who fears standing before Me and also fears My threat.
this warning is for he who fears standing before Him on the Day of Resurrection and fears His warnings and torment.
Allah said in other instances,
فَأَمَّا مَن طَغَى
وَاثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى
فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى
Then for him who transgressed all bounds, and preferred the life of this world, verily, his abode will be Hellfire. But as for him who feared standing before his Lord, and restrained himself from impure evil desires and lusts. Verily, Paradise will be his abode. (79:37-41)
and,
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
But for him who fears the standing before his Lord, there will be two Gardens. (55:46)
Allah said next
وَاسْتَفْتَحُواْ
And they sought victory and help,
refers to the Messengers who sought the help and victory of their Lord over their nations, according to Abdullah bin Abbas, Mujahid and Qatadah.
Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said that;
this Ayah refers to the nations, invoking Allah’s victory against themselves!
Some idolators said,
اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَـذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَأءِ أَوِ ايْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
O Allah! If this (Qur’an) is indeed the truth (revealed) from You, then rain down stones on us from the sky or bring on us a painful torment. (8:32)
It is possible that both meanings are desired here, for the idolators (of Quraysh) invoked Allah against themselves on the day of Badr, and the Messenger of Allah invoked Him for victory and support.
Allah said to the idolators then,
إِن تَسْتَفْتِحُواْ فَقَدْ جَأءَكُمُ الْفَتْحُ وَإِن تَنتَهُواْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ
(O disbelievers) if you ask for a judgment, now has the judgment come unto you; and if you cease (to do wrong), it will be better for you. (8:19)
Allah knows best.
Allah said next,
وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ
and every obstinate, arrogant dictator was brought to a complete loss and destruction.
those who were arrogant and rebelled against the truth.
Allah said in other Ayat,
أَلْقِيَا فِى جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٍ
مَّنَّـعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيبٍ
الَّذِى جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلَـهاً ءَاخَرَ فَأَلْقِيَـهُ فِى الْعَذَابِ الشَّدِيدِ
(Allah will say to the angels):”Both of you throw into Hell every stubborn disbeliever – hinderer of good, transgressor, doubter, who set up another deity with Allah. Then both of you cast him in the severe torment.” (50:24-26)
The Prophet said,
إِنَّهُ يُوْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَتُنَادِي الْخَلَيِقَ فَتَقُولُ إِنِّي وُكِّلْتُ بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيد
On the Day of Resurrection, Jahannam (Hellfire) will be brought and it will call the creatures, saying, “I was given the responsibility of every rebellious tyrant.”
Therefore, every tyrant has earned utter demise and loss when the Prophets invoked Allah, the Mighty, the Able for victory.
Allah said next
مِّن وَرَايِهِ جَهَنَّمُ
In front of him is Hell,
Allah says that Jahannam is in front of every obstinate tyrant, awaiting him, and he will reside in it forever on the Day of Return. He will be brought to it in the morning and the afternoon until the Day of the Call,
وَيُسْقَى مِن مَّاء صَدِيدٍ
and he will be made to drink boiling, festering water.
in the Fire, his only drink will be from Hamim and Ghassaq, the former is very hot and the latter is very cold and rotten.
Allah said in another instance,
هَـذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ
وَءَاخَرُ مِن شَكْلِهِ أَزْوَجٌ
This is so! Then let them taste it – Hamim and Ghassaq. And other (torments) of similar kind all together! (38:57-58)
Mujahid and Ikrimah said that;
this festering water is made of puss and blood.
Allah said in other Ayat,
وَسُقُواْ مَأءً حَمِيماً فَقَطَّعَ أَمْعَأءَهُمْ
And be given to drink boiling water so that it cuts up their bowels. (47:15)
and,
وَإِن يَسْتَغِيثُواْ يُغَاثُواْ بِمَأءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوجُوهَ
And if they ask for help, they will be granted water like boiling oil, that will scald their faces. (18:29)
Allah’s statement
يَتَجَرَّعُهُ
He will sip it unwillingly,
indicates that he will hate to drink this water, but he will be forced to sip it; he will refuse until the angel strikes him with an iron bar,
وَلَهُمْ مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ
And for them are hooked rods of iron. (22:21)
Allah said next,
وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ
and he will find great difficulty in swallowing it down his throat,
meaning, he will hate to swallow it because of its awful taste, color and unbearable heat or coldness,
وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ
and death will come to him from every side,
his organs, limbs and entire body will suffer pain because of this drink.
Amr bin Maymun bin Mahran commented,
“Every bone, nerve and blood vessel.”
Ad-Dahhak reported that Ibn Abbas commented on Allah’s statement,
“All types of torment that Allah will punish him with on the Day of Resurrection in the fire of Jahannam will come to him carrying death, if he were to die. However, he will not die because Allah the Exalted said,
لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَا
Neither will it affect them that they die nor shall its torment be lightened for them.” (35:36)
Therefore, according to Ibn Abbas, may Allah be pleased with him and his father, every type of punishment will come to him (the obstinate, rebellious tyrant) carrying death with it, if he will ever die there. Yet, he will not die, he will instead receive eternal punishment and torment.
Hence Allah’s statement here,
وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ
وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ
and death will come to him from every side, yet he will not die,
Allah said,
وَمِن وَرَايِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ
and in front of him, will be a great torment.
even in this condition, he will still suffer another severe type of torment, more severe and painful from the one before it, harsher more bitter.
Allah described the tree of Zaqqum,
إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِى أَصْلِ الْجَحِيمِ
طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَـطِينِ
فَإِنَّهُمْ لاّكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِيُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ
ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْباً مِنْ حَمِيمٍ
ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لاِلَى الْجَحِيمِ
Verily, it is a tree that springs out of the bottom of Hellfire, the shoots of its fruits stalks are like the heads of Shayatin; Truly, they will eat thereof and fill their bellies therewith.
Then on top of that they will be given boiling water to drink so that it becomes a mixture. Then thereafter, verily, their return is to the flaming fire of Hell. (37:64-68)
Allah states that they will either be eating from the Zaqqum, drinking the Hamim, or being tormented in the Fire, again and again; we seek refuge with Allah from all of this.
Allah also said,
هَـذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِى يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ
يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ ءَانٍ
This is the Hell which the criminals denied. They will go between it (Hell) and the fierce boiling water! (55:43-44)
إِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّومِ
طَعَامُ الاٌّثِيمِ
كَالْمُهْلِ يَغْلِى فِى الْبُطُونِ
كَغَلْىِ الْحَمِيمِ
خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَى سَوَاءِ الْجَحِيمِ
ثُمَّ صُبُّواْ فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ
ذُقْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ
إِنَّ هَـذَا مَا كُنتُمْ بِهِ تَمْتَرُونَ
Verily, the tree of Zaqqum will be the food of the sinners. Like boiling oil, it will boil in the bellies, like the boiling of scalding water.
(It will be said) “Seize him and drag him into the midst of blazing Fire, then pour over his head the torment of boiling water. Taste you (this)!
Verily, you were the mighty, the generous!
Verily, this is that whereof you used to doubt!” (44:43-50)
وَأَصْحَـبُ الشِّمَالِ مَأ أَصْحَـبُ الشِّمَالِ
فِى سَمُومٍ وَحَمِيمٍ
وَظِلٍّ مِّن يَحْمُومٍ
لااَّ بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ
And those on the Left Hand – how (unfortunate) will be those on the Left Hand In fierce hot wind and boiling water, and shadow of black smoke, neither cool nor pleasant. (56:41-44)
and,
هَـذَا وَإِنَّ لِلطَّـغِينَ لَشَرَّ مَـَابٍ
جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِيْسَ الْمِهَادُ
هَـذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ
وَءَاخَرُ مِن شَكْلِهِ أَزْوَجٌ
This is so! And for the Taghun will be an evil final return. Hell! Where they will burn, and worst is that place to rest! This is so! Then let them taste it Hamim and Ghassaq. And other (torments) of similar kind all together! (38:55-58)
There are many other similar Ayat that indicate that the punishment they will receive is of different kinds, and that it is repeated in various types and forms that only Allah the Exalted knows, as just recompense,
وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّـمٍ لِّلْعَبِيدِ
And your Lord is not at all unjust to (His) slaves. (41:46).