(Book# 763) সুরা: ইব্রাহিম সুরা:১৪ ২১-২৩.নং আয়াত:- [ وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الَامْرُ যখন সব কিছুর ফায়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, And Shaytan will say when the matter has been decided:] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 763)
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
২১-২৩.নং আয়াত:-
[ وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الَامْرُ
যখন সব কিছুর ফায়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে,
And Shaytan will say when the matter has been decided:]
www.motaher21.net
وَ بَرَزُوۡا لِلّٰہِ جَمِیۡعًا فَقَالَ الضُّعَفٰٓؤُا لِلَّذِیۡنَ اسۡتَکۡبَرُوۡۤا اِنَّا کُنَّا لَکُمۡ تَبَعًا فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّغۡنُوۡنَ عَنَّا مِنۡ عَذَابِ اللّٰہِ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ قَالُوۡا لَوۡ ہَدٰىنَا اللّٰہُ لَہَدَیۡنٰکُمۡ ؕ سَوَآءٌ عَلَیۡنَاۤ اَجَزِعۡنَاۤ اَمۡ صَبَرۡنَا مَا لَنَا مِنۡ مَّحِیۡصٍ ﴿٪۲۱﴾
সবাই আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে; যারা অহংকার করত দুর্বলেরা তাদেরকে বলবে, ‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা কি আল্লাহর শাস্তি হতে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম; এখন আমাদের ধৈর্যচ্যুত হওয়া অথবা ধৈর্যশীল হওয়া একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।’
And they will come out [for judgement] before Allah all together, and the weak will say to those who were arrogant, “Indeed, we were your followers, so can you avail us anything against the punishment of Allah ?” They will say, “If Allah had guided us, we would have guided you. It is all the same for us whether we show intolerance or are patient: there is for us no place of escape.”
وَ قَالَ الشَّیۡطٰنُ لَمَّا قُضِیَ الۡاَمۡرُ اِنَّ اللّٰہَ وَعَدَکُمۡ وَعۡدَ الۡحَقِّ وَ وَعَدۡتُّکُمۡ فَاَخۡلَفۡتُکُمۡ ؕ وَ مَا کَانَ لِیَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ سُلۡطٰنٍ اِلَّاۤ اَنۡ دَعَوۡتُکُمۡ فَاسۡتَجَبۡتُمۡ لِیۡ ۚ فَلَا تَلُوۡمُوۡنِیۡ وَ لُوۡمُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ مَاۤ اَنَا بِمُصۡرِخِکُمۡ وَ مَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُصۡرِخِیَّ ؕ اِنِّیۡ کَفَرۡتُ بِمَاۤ اَشۡرَکۡتُمُوۡنِ مِنۡ قَبۡلُ ؕ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۲۲﴾
আর যখন বিচারের কাজ সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, ‘আল্লাহ্ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি , আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি শুধু তোমাদেরকে ডাকছিলাম তাতে তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, তোমরা নিজেদেরই তিরস্কার কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। তোমরা যে আগে আমাকে আল্লাহ্‌র শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
And Satan will say when the matter has been concluded, “Indeed, Allah had promised you the promise of truth. And I promised you, but I betrayed you. But I had no authority over you except that I invited you, and you responded to me. So do not blame me; but blame yourselves. I cannot be called to your aid, nor can you be called to my aid. Indeed, I deny your association of me [with Allah ] before. Indeed, for the wrongdoers is a painful punishment.”
وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ ؕ تَحِیَّتُہُمۡ فِیۡہَا سَلٰمٌ ﴿۲۳﴾
যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।
And those who believed and did righteous deeds will be admitted to gardens beneath which rivers flow, abiding eternally therein by permission of their Lord; and their greeting therein will be, “Peace!”

সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
২১-২৩.নং আয়াত:-
[ وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الَامْرُ
যখন সব কিছুর ফায়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে,
And Shaytan will say when the matter has been decided:]
www.motaher21.net

২১-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

برز অর্থ বের হওয়া, অর্থাৎ সকলেই কবর থেকে বের হয়ে হাশরের মাঠে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত হবে। তখন অধীনস্থ দুর্বল লোকেরা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে বলবে, আমরা তো দুনিয়াতে তোমাদের কথা-বার্তা মেনে চলতাম। আজ তোমরা কি আমাদের থেকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি সামান্যতম রহিত করতে পারবে? তাদের এ কথার উত্তরে সর্দারগণ বলবে: আমরা সৎ পথে পরিচালিত হলে তোমাদেরকেও সৎ পথে পরিচালিত করতাম। আমরা ভ্রান্ত ছিলাম যার ফলে তোমাদেরকেও ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করেছি, একথা বলে তারা তথায় বাগ-বিতণ্ডা করবে। কিন্তু কেউ কারো কোন উপকার করতে পারবে না। সুতরাং এসব পথভ্রষ্ট, দুনিয়া লিপ্সু পাপী যারা ধর্মের কোন পরওয়া করে না তাদের অনুসরণ করলে আখিরাতে জাহান্নাম ছাড়া কোন উপায় নেই।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَإِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِي النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفٰٓؤُا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّار ، قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا إِنَّا كُلٌّ فِيْهَآ إِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ)‏

“যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন দুর্বলেরা অহংকারীদেরকে বলবে: আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নিবারণ করতে পারবে? দাম্ভিকেরা বলবে: আমরা সবাই তো জাহান্নামে আছি; নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দাদের ফয়সালা করে ফেলেছেন।” (সূরা মু’মিন ৪০:৪৭-৪৮)

আবদুর রহমান বিন যায়েদ বলেন: জাহান্নামীরা একে অপরকে বলবে, জান্নাতীরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কান্নাকাটি করে এবং অনুনয় বিনয় করে জান্নাত লাভ করেছে, সুতরাং এসো আমরাও তাঁর সামনে অনুনয়-বিনয় করে আকুল আবেদন জানাই। অতঃপর তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়বে এবং করজোড়ে নিবেদন করবে কিন্তু সবই নি®ফল হয়ে যাবে। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করবে জান্নাতবাসীরা ধৈর্যধারণ করেছিল তাই তারা জান্নাতে গিয়েছে, এসো আমরাও আজ নিরবত ধৈর্য ধারণ করি। এভাবে তারা এমন ধৈর্য ধারণ করবে যা ইতোপূর্বে কখনো করেনি। কিন্তু তাও বৃথা যাবে, তখন তারা বলবে হায় হায় ধৈর্য ধারণ করাও বিফলে গেল এবং অনুনয় বিনয় কোন কাজে আসল না।

ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: এসব কথা বার্তা জাহান্নামে যাওয়ার পর হবে।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহ বলবেন, ‘তোমাদের পূর্বে যে জ্বিন ও মানবদল গত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ কর’। যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে, এমনকি যখন সকলে তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দাও। ‘আল্লাহ বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্যই দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না।’ তাদের পূর্ববর্তীগণ পরবর্তীদেরকে বলবে, ‘আমাদের ওপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ছিল না, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন কর।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৩৮-৩৯)

হাশরের ময়দানেও তারা বিবাদ করবে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা অহঙ্কারকারীদেরকে বলবে: তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মু’মিন হতাম। অহঙ্কারীরা যাদেরকে দুর্বল মনে করত তাদেরকে বলবে: তোমাদের নিকট সৎ পথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা হতে নিবৃত্ত করেছিলাম? বস্তুতঃ তোমরাই তো ছিলে অপরাধী। যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে: প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দেবা-রাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করি, যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে। এবং আমি কাফিরদের গলায় বেড়ী পরিয়ে দেব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।” (সূরা সাবা ৩৪:৩১-৩৩)

সুতরাং কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ক্ষমতাসীন নেতাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মুক্তি লাভ করা যাবে না। তারাও অস্বীকার করবে, তাই তাদের অনুসরণ বাদ দিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ করা উচিত।

(وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ…)
আল্লাহ তা‘আলা যখন সমস্ত কিছুর মীমাংসা শেষ করবেন আর জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবে তখন শয়তান জাহান্নামীদেরকে লক্ষ্য করে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তথা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলদের প্রতি ঈমান ও সৎ পথের অনুসরণের মধ্যেই মুক্তি নিহিত, তাই সত্য। আর আমি যে ওয়াদা দিয়েছিলাম তা প্রবঞ্চনা, প্রতারণা ছাড়া কিছুই ছিল না।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ ط وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطٰنُ إِلَّا غُرُوْرًا)‏

“(শয়তান) সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে; আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনামাত্র।” (সূরা নিসা ৪:১২০)

শয়তান আরো বলবে: তোমাদের ওপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তোমরা অযথা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছো, আমি তোমাদেরকে বাধ্য করিনি, সুতরাং আজ তোমরা আমাকে তিরস্কার না করে নিজেদেরকেই তিরস্কার কর। আজ আমাকে দোষারোপ করে তোমাদের কোনই লাভ হবে না। তোমরা আমাকে জাহান্নাম থেকে যেমন মুক্তি দিতে পারবে না, আমিও তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারব না। ইতোপূর্বে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে যাদেরকে শরীক করতে তাদের সাথে আজ আমি কুফরী করছি।

সুতরাং হে মুসলিম ভাই! যে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অন্যায়-অবিচার ইত্যাদি আল্লাহ তা‘আলাদ্রোহী কাজ করেই যাচ্ছেন সে শয়তান কিন্তু কিয়ামতের দিন এ ভাষণ দিয়ে বিদায় নেবে। তখন আপনি আফসোস করবেন কিন্তু সে আফসোস কোন কাজে আসবে না। অতএব এখনই সতর্ক হওয়া উচিত, শয়তানের অনুসরণ বাদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের অনুসরণ করুন।

কারণ যারা ঈমান ও সৎ আমল করবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তির অভাব হবে না, তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে, সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম। অর্থাৎ একে অপরকে শান্তির অভিবাদন জানাবে, কোন অসার ও বেহায়াপনা এবং নোংরা কথা বলবে না। তাছাড়া ফেরেশতারাও তাদের কাছে প্রবেশ কালে সালাম দিবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ)‏

“জান্নাতের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর।” (সূরা যুমার ৩৯:৭৩)

এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের ১০ নং আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. হাশরের মাঠে সকলকে একত্রিত করা হবে।
২. হাশরের মাঠে কেউ কারো কোন উপকার করতে পারবে না।
৩. শয়তান মানুষকে যেসব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিত তা সে স্বীকার করবে বিচারকার্য সম্পন্ন হয়ে যাবার পর।
৪. শয়তানের অনুসরণ করে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে পরে আফসোস করে লাভ নেই, কারণ সেদিন শয়তানও কোন উপকার করতে পারবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা বলেন, পরিস্কার সমতল ভূমিতে ভাল ও মন্দ এবং পূণ্যবান ও পাপী সমস্ত মাখলুককে আল্লাহর সামনে একত্রিত করা হবে। এ সময় অধীনস্থ লোকেরা নৈতৃস্থানীয় লোকদেরকে, যারা তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত এবং রাসূলের আনুগত্য হতে বিরত রাখতো, বলবেঃ “আমরা তোমাদের অনুগত ছিলাম। আমাদেরকে তোমরা যা হুকুম করতে তা আমরা মেনে চলতাম। সুতরাং আমাদেরকে তোমরা তো বহু কিছু আশা দিয়ে রেখেছিলে, আজ কি তাহলে আল্লাহর আযাব আমাদের থেকে সরাতে পারবে?” তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে নেতা ও সর্দারগণ বলবেঃ “আমরা নিজেরাই তো সুপথ প্রাপ্ত ছিলাম না। কাজেই তোমাদেরকে আমরা পথ দেখাতাম কিরূপে? বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তির কথা আমাদের সবারই উপর বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা সবাই শাস্তিরযোগ্য হয়ে গেছি। অতএব, এখন আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি অথবা ধৈর্য ধারণ করি একই কথা। শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার সমস্ত উপায় এখন হাতছাড়া হয়ে গেছে।”

আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রঃ) বলেন জাহান্নামবাসীরা একে অপরকে বলবেঃ “দেখো, এই জান্নাতবাসীরা জান্নাত লাভ করেছে এই কারণে যে, তারা মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে অত্যন্ত কান্নাকাটি করেছে। এবং কাতর প্রার্থনা করেছে। সুতরাং এসো, আমরাও তাঁর সামনে খুবই কান্নাকাটি করি এবং আকুল আবেদন জানাই।” সুতরাং তারা কান্নায় ফেটে পড়বে এবং করজোড়ে নিবেদন করবে। কিন্তু সবই নিষ্ফল হয়ে যাবে। তখন আবার তারা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “জান্নাতবাসীরা ধৈর্যধারণ করেছিল বলেই আজ তারা জান্নাত লাভ করেছে। অতএব, এসো, আমরাও আজ নীরবতা ও ধৈর্য অবলম্বন করি।” এভাবে তারা এমন ধৈর্য অবলম্বন করবে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায় নাই। কিন্তু এটাও বৃথা যাবে। তখন তারা বলবেঃ “হায়, হায়! সবরও বিফলে গেল এবং অনুনয় বিনয়ও কোন কাজে আসলো।” আমি বলিঃ প্রকাশ্য ব্যাপার তো এই যে, নেতা ও অনুগতদের এই কথাবার্তা হবে জাহান্নামে যাওয়ার পর। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যখন তারা জাহান্নামে ঝগড়া ও তর্কবিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বল লোকেরা অহংকারী লোকদের বলবেঃ “আমরা তো তোমাদের অনুগত ও হুকুমের বাধ্য ছিলাম, সুতরাং আজ তোমরা কি আমাদের উপর হতে জাহান্নামের শাস্তির কিছু অংশ সরাতে পারবে?” এ সময় অহংকারী লোকেরা বলবেঃ “আমরা সবাই তো জাহান্নামের মধ্যে রয়েছি! নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ “আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের পূর্বে যে জ্বিন ও মানব দলগত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা অগ্নিতে প্রবেশ করো; যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে, এমনকি যখন সকলে তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল; সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ। অগ্নিশাস্তি দিন! আল্লাহ বলবেনঃ প্রত্যেকের জন্যে দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জ্ঞাত নও।” তাদের পূর্ববর্তীগণ পরবর্তীদেরকে বলবেঃ “আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ কর।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “জাহান্নামীদের অধীনস্থরা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আনুগত্য করেছিলাম আমাদের নেতাদের ও বড়দের, তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদের উপর বড় রকমের অভিসম্পাত নাযিল করুন।”

হাশরের ময়দানে তাদের ঝগড়া ও তর্ক বিতর্কের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হায়! তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে যখন তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে তখন তারা পরস্পর বাদ প্রতিবাদ করতে থাকবে, যাদেরকে দুর্বল করা হতো তারা ক্ষমতাদপীদেরকে বলবেঃ “তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম।”

যারা ক্ষমতাদপী ছিল তারা, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা আসবার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বস্তুতঃ তোমরাই তো ছিলে অপরাধী।”

যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তারা ক্ষমতাদপীদেরকে বলবেঃ “প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি; যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলদেশে শৃংখল পরিয়ে দিবো; তাদেরকে তারা যা করতো তারই প্রতিফল দেয়া হবে।”

আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যখন তিনি বান্দাদের ফায়সালার কাজ শেষ করবেন এবং মুমিনরা জান্নাতে ও কাফিররা জাহান্নামে চলে যাবে, ঐ সময় অভিশপ্ত ইবলীস জাহান্নামের উপর দাঁড়িয়ে জাহান্নামীদেরকে সম্বোধন করে বলবেঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাথে যে ওয়াদা অঙ্গীকার করেছিলেন তা ছিল সম্পূর্ণরূপে সত্য। রাসূলদের অনুসরণ ও আনুগত্যই ছিল মুক্তি ও শান্তির পথ। আর আমার ওয়াদা তো ছিল প্রতারণা মাত্র। আমার কথা ছিল দলীল-প্রমাণহীন। তোমাদের উপর আমার কোন জোর যবরদস্তি ও আধিপত্য তো ছিল না। তোমরা অযথা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। আমি তোমাদেরকে যে হুকুম করেছিলাম তা তোমরা মেনে নিয়েছিলে। রাসূলদের সত্য প্রতিশ্রুতি, তাদের দলীল ও যুক্তিপূর্ণ কথা তোমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলে। তাঁদের তোমরা বিরোধিতা করেছিলে, আমার কথামত চলেছিলে। এর পরিণাম তোমরা আজ স্বচক্ষে দেখতে পেলে। এটা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। সুতরাং আজ তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, বরং নিজেদেরকেই দোষারোপ করো। পাপ তোমরা নিজেরাই করেছিল। দলীল-প্রমাণগুলি তোমরা ত্যাগ। করেছিলে। আমার কথাই তোমরা মেনে চলেছিলে। আজকে আমি তোমাদের কোনই কাজে আসবো না। না আজ আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পারবো, না তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো। আমি তোমাদের শিরকের কারণে তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমি আজ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি যে, আমি আল্লাহর শরীক নই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আহবান করে, যারা কিয়ামতের দিন তাদের আহবানে সাড়া দিতে পারবে না? বরং তারা তাদের আহবান হতে উদাসীন ও অমনোযোগী থাকবে। কিয়ামতের দিন তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।” (৪৬:৫) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় তারা তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের শত্রু হয়ে যাবে, তারা অত্যাচারী লোক কেন না তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, বাতিলের অনুসারী হয়েছে এইরূপ অত্যাচারীদের জন্যে বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (১৯:৮২)।

অতএব, এটা প্রকাশ্য কথা যে, জাহান্নামীদের সাথে ইবলীসের এই কথাবার্তা হবে জাহান্নামে প্রবেশের পর, যাতে তাদের আফসোস ও দুঃখ খুব বেশী হয়। কিন্তু হযরত উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদেরকে আল্লাহ তাআলা একত্রিত করবেন এবং তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবেন তখন একটা সাধারণ ভয় ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি হবে।” মু’মিনগণ বলবেঃ “আমাদের ফায়সালা হতে যাচ্ছে, এখন আমাদের সুপারিশের জন্যে দাঁড়াবে কে?” অতঃপর তারা হযরত আদম (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসার (আঃ) কাছে যাবে। হযরত ঈসা (আঃ) বলবেনঃ “তোমরা নবী উম্মীর (সঃ) কাছে গমন কর।” তখন আল্লাহ তাআলা আমাকে। দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি দিবেন। তৎক্ষণাৎ আমার মজলিস হতে পবিত্র এবং উত্তম সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়বে, যার মত উত্তম সুগন্ধি ইতিপূর্বে কেউ কখনো শুকেনি। সুতরাং আমি তখন বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আগমন করবো, আমার মাথার চুল থেকে নিয়ে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী পর্যন্ত সারাদেহ আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাবে। অতঃপর আমি সুপারিশ করবো এবং মহা কল্যাণময় আল্লাহ আমার সুপারিশ কবুল করবেন। এটা দেখে কাফিররা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “চলো, আমরাও কাউকে আমাদের সুপারিশকারী বানিয়ে নিয়ে তাকে আমাদের জন্যে সুপারিশ করতে বলি। আর এ কাজের জন্যে আমাদের কাছে ইবলীস ছাড়া আর কে আছে? সে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল। সুতরাং চল, আমরা তার কাছেই যাই এবং আর করি।” অতঃপর তারা ইবলীসের কাছে। গিয়ে বলবেঃ “মুমিনরা সুপারিশকারী পেয়ে গেছে, তুমি আমাদের জন্যে সুপারিশকারী হয়ে যাও। কারণ, তুমিই তো আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলে।” একথা শুনে ঐ অভিশপ্ত শয়তান দাঁড়িয়ে যাবে। তার মজলিস হতে এমন দুর্গন্ধ বের হবে যে, ইতিপূর্বে কারো নাকে এমন জঘন্য দুর্গন্ধ কখনো পৌঁছে নাই।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তারপর সে যা বলবে তাতো উপরে বর্ণিত হলো।

মুহাম্মদ ইবনু কা’ব কারাযী (রঃ) বলেন, জাহান্নামীরা যখন বলবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “এখন আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটুক বা আমরা ধৈর্যশীল হয়ে যাই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।” (১৪:২১) ঐ সময় ইবলীস তাদেরকে উপরোক্ত কথা বলবে। যখন তারা ইবলীসদের উপরোক্ত বক্তব্য শুনবে তখন তারা নিজেদের জীবনের উপরও ক্রোধান্বিত হয়ে যাবে। তখন তাদেরকে ডাক দিয়ে বলা হবেঃ “তোমরা আজ নিজেদের জীবনের উপর যেমন রাগান্বিত হয়েছে, এর চেয়ে অনেক বেশী রাগান্বিত হয়েছিলেন আল্লাহ তাআলা ঐ সময়, যে সময় তোমাদেরকে ঈমানের দিকে ডাক দেয়া হয়েছিল, আর তোমরা সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলে” ।

হযরত আমির শাবী (রঃ) বলেন, (কিয়ামতের দিন) সমস্ত মানুষের সামনে দু’জন বক্তা বক্তৃতা দেয়ার জন্যে দাঁড়াবে। হযরত ঈসা ইবনু মারইয়ামকে (আঃ) বলবেনঃ তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলেঃ “তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে মা’রূদ রূপে গ্রহণ করো? এই আয়াত থেকে নিয়ে (আরবি) (আল্লাহ বলবেনঃ “এই সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণ তাদের সত্যতার জন্যে উপকৃত হবে)। (৫:১১৯) এই আয়াত পর্যন্ত এই বর্ণনাই রয়েছে। আর অভিশপ্ত ইবলীস দাঁড়িয়ে বলবেঃ “আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি শুধু তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে (শেষ পর্যন্ত)।”

দুষ্ট ও পাপী লোকদের পরিণাম ও তাদের দুঃখ-বেদনা এবং ইবলীসের উত্তরের বর্ণনা দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখন সৎ ও পূণ্যবান লোকদের পরিণামের বর্ণনা দিচ্ছেন। মমিন ও সৎকর্মশীল লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তারা যথেচ্ছা গমনাগমন করবে, চলবে, ফিরবে এবং পানাহার করবে। চিরদিনের জন্যে তারা সেখানে অবস্থান করবে। সেখানে না তারা। চিন্তিত ও দুঃখিত হবে, না তাদের মন খারাপ হবে, না অস্বস্তি বোধ করবে, না মারা যাবে, না বহিষ্কৃত হবে, না নিয়ামত কমে যাবে। সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’ আর ‘সালাম’। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে ও ওর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবেঃ তোমাদের প্রতি সালাম।” (৩৯:৭৩) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) “প্রত্যেক দরজা দিয়ে ফেরেস্তারা তাদের কাছে প্রবেশ করবে এবং বলবেঃ “তোমাদের প্রতি সালাম।” আর এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদেরকে সেথায় অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে।” (২৬:২২)

আল্লাহ তাআলা আর এক স্থানে বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সেথায় তাদের ধ্বনি হবেঃ হে আল্লাহ! তুমি মহান! তুমি পবিত্র! এবং সেথায় তাদের অভিবাদন হবে, ‘সালাম এবং তাদের শেষ ধ্বনি হবেঃ প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।” (১০:১০)

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ibrahim
Sura: 14
Verses :- 21-23
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الَامْرُ

And Shaytan will say when the matter has been decided:
Disbelieving Chiefs and Their Followers will dispute in the Fire

Allah said,

وَبَرَزُواْ لِلّهِ جَمِيعًا

And they all shall appear before Allah;

meaning, all the creatures, the wicked and the righteous among them, will appear before Allah the One, the Irresistible. They will be gathered on a flat plain that does not have anything those present could use for cover,

فَقَالَ الضُّعَفَاء

then the weak will say,

the followers who used to obey their chiefs, leaders and notables will say,

لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ

to those who were arrogant,

who rebelled against worshipping Allah alone without partners and obeying the Messengers,

إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا

Verily, we were following you,

we obeyed your orders and implemented them,

فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللّهِ مِن شَيْءٍ

can you avail us anything against Allah’s torment!

They will ask, `can you prevent any of Allah’s torment from striking us as you used to promise and vow to us!’

قَالُواْ

They will say:

the leaders will say in response,

لَوْ هَدَانَا اللّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ

Had Allah guided us, we would have guided you.

but the statement of our Lord shall come to pass concerning us, and the destiny that He has appointed for us and you shall come true; the word of punishment shall befall the disbelievers,

سَوَاء عَلَيْنَأ أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ

It makes no difference to us (now) whether we rage, or bear (these torments) with patience; there is no place of refuge for us.

we have no means of escape from what we are in, whether we face it with patience or grief.’

I (Ibn Kathir) say that it appears that this conversation will occur in the Fire after they enter it, just as Allah said in other Ayat,

وَإِذْ يَتَحَأجُّونَ فِى النَّـارِ فَيَقُولُ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْـبَرُواْ إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعاً فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا نَصِيباً مِّنَ النَّارِ

قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ إِنَّا كُلٌّ فِيهَأ إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ

And, when they will dispute in the Fire, the weak will say to those who were arrogant:”Verily, we followed you, can you then take from us some portion of the Fire!”

Those who were arrogant will say:”We are all (together) in this (Fire)! Verily, Allah has judged between (His) servants!” (40:47-48)

قَالَ ادْخُلُواْ فِى أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّن الْجِنِّ وَالاِنْسِ فِى النَّارِ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُواْ فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لاٍّولَـهُمْ رَبَّنَا هَـوُلاءِ أَضَلُّونَا فَـَاتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـكِن لاَّ تَعْلَمُونَ

وَقَالَتْ أُولَـهُمْ لاٌّخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ فَذُوقُواْ الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ

(Allah) will say:

“Enter you in the company of nations who passed away before you, of men and Jinn, into the Fire.”

Every time a new nation enters, it curses its sister nation (that went before) until they will be gathered all together in the Fire. The last of them will say to the first of them:

“Our Lord! These misled us, so give them a double torment of the Fire.”

He will say:”For each one there is double (torment), but you know not.”

The first of them will say to the last of them:”You were not better than us, so taste the torment for what you used to earn.” (7:38-39)

and,

وَقَالُواْ رَبَّنَأ إِنَّأ أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلْ

رَبَّنَأ ءَاتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْناً كَبِيراً

Our Lord! Verily, we obeyed our chiefs and our great ones, and they misled us from the (right) way.

Our Lord! Give them a double torment and curse them with a mighty curse! (33:67-68)

Disbelievers will also dispute on the Day of Gathering,

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَن نُّوْمِنَ بِهَـذَا الْقُرْءَانِ وَلَا بِالَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّـلِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِندَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ الْقَوْلَ يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ لَوْلَا أَنتُمْ لَكُنَّا مُوْمِنِينَ

قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ أَنَحْنُ صَدَدنَـكُمْ عَنِ الْهُدَى بَعْدَ إِذْ جَأءَكُمْ بَلْ كُنتُمْ مُّجْرِمِينَ

وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ بَلْ مَكْرُ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَأ أَن نَّكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَندَاداً وَأَسَرُّواْ النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُاْ اْلَعَذَابَ وَجَعَلْنَا الاٌّغْلَـلَ فِى أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُواْ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلاَّ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

But if you could see when the wrongdoers will be made to stand before their Lord, how they will cast the (blaming) word one to another!

Those who were deemed weak will say to those who were arrogant:”Had it not been for you, we certainly have been believers!”

And those who were arrogant will say to those who were deemed weak:”Did we keep you back from guidance after it had come to you! Nay, but you were wrongdoers.”

Those who were deemed weak will say to those who were arrogant:”Nay, but it was your plotting by night and day:when you ordered us to disbelieve in Allah and set up rivals to Him!”

And We shall put iron collars round the necks of those who disbelieved. Are they requited aught except what they used to do! (34:31-33)
Shaytan disowns His Followers on the Day of Resurrection

Allah tells:

وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الَامْرُ

And Shaytan will say when the matter has been decided:

Allah narrates to us what Iblis will say to his followers after Allah finishes with the judgement between His servants, sending the believers to the gardens of Paradise and the disbelievers to the lows (of the Fire).

Iblis, may Allah curse him, will stand and address the latter, in order to add depression to their depression, sorrow to their sorrow and grief to their grief.

He will declare,

إِنَّ اللّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ

`Verily, Allah promised you a promise of truth.

by the words of His Messengers that if you follow them, you will gain safety and deliverance. Truly, Allah’s promise was true and correct news, while I promised you then betrayed you.’

وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ

And I too promised you, but I betrayed you.

Allah said in another Ayah,

يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمْ الشَّيْطَـنُ إِلاَّ غُرُوراً

He (Shaytan) makes promises to them, and arouses in them false desires; and Shaytan’s promises are nothing but deceptions. (4:120)

وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُم مِّن سُلْطَانٍ

I had no authority over you,
Shaytan will say, `I had no proof for what I called you to, nor evidence for what I promised you,

إِلاَّ أَن دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي

except that I called you, and you responded to me.

even though the Messengers establish the proof and unequivocal evidences against you and affirmed the truth of what they were sent to you with. But you disobeyed the Messengers and ended up earning this fate,

فَلَ تَلُومُونِي

So blame me not, (today),

وَلُومُواْ أَنفُسَكُم

but blame yourselves,

because it is your fault for defying the proofs and following me in the falsehood that I called you to.’
Shaytan will say next,

مَّا أَنَاْ بِمُصْرِخِكُمْ

I cannot help you,

I cannot benefit, save, or deliver you from what you are suffering,

وَمَا أَنتُمْ بِمُصْرِخِيَّ

nor can you help me.

nor can you save me and deliver me from the torment and punishment I am suffering,

إِنِّي كَفَرْتُ بِمَأ أَشْرَكْتُمُونِ مِن قَبْلُ

I deny your former act of associating me (Shaytan) as a partner with Allah.

or because you associated me with Allah before,’ according to Qatadah.

Ibn Jarir commented;

“I deny being a partner with Allah, the Exalted and Most Honored.”

This opinion is the most plausible, for Allah said in other Ayat,

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لاَّ يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَـمَةِ وَهُمْ عَن دُعَأيِهِمْ غَـفِلُونَ

وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُواْ لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمْ كَـفِرِينَ

And who is more astray than one who calls on others besides Allah, such as will not answer him till the Day of Resurrection, and who are (even) unaware of their calls to them!

And when mankind are gathered, they will become their enemies and will deny their worshipping. (46:5-6)

and,

كَلَّ سَيَكْفُرُونَ بِعِبَـدَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدّاً

Nay, but they (the so-called gods) will deny their worship of them, and become opponents to them. (19:82)

Allah said next,

إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

Verily, there is a painful torment for the wrongdoers.”

إِنَّ الظَّالِمِينَ
(Verily, the wrongdoers),

who deviate from truth and follow falsehood, will earn a painful torment.

It appears that this part of the Ayah narrates the speech that Shaytan will deliver to the people of the Fire after they enter it, as we stated.

Amir Ash-Sha`bi said,

“On the Day of Resurrection, two speakers will address the people. Allah the Exalted will say to `Isa, son of Maryam,

أَءَنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِى وَأُمِّىَ إِلَـهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ

Did you say unto men:”Worship me and my mother as two gods besides Allah!” (5:116)

until,

قَالَ اللَّهُ هَـذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّـدِقِينَ صِدْقُهُمْ

Allah will say:”This is a Day on which the truthful will profit from their truth.” (5:119)
Shaytan, may Allah curse him, will stand and address the people,

وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُم مِّن سُلْطَانٍ إِلاَّ أَن دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي

I had no authority over you except that I called you, and you responded to me.

Allah after mentioning the final destination of the miserable ones, who earned the disgrace and torment and having to listen to Shaytan address them, then He mentioned the final destination of the happy ones.

Allah says.

وَأُدْخِلَ الَّذِينَ امَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الَانْهَارُ

And those who believed and did righteous deeds, will be made to enter Gardens under which rivers flow,

wherever they wish them to flow and wherever they may be,

خَالِدِينَ فِيهَا

to dwell therein for ever,

and will never transfer or be transferred from it,

بِإِذْنِ رَبِّهِمْ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَمٌ

with the permission of their Lord. Their greeting therein will be:”Salam (peace!).”

Allah said in other Ayat,

حَتَّى إِذَا جَأءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَبُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَـمٌ عَلَيْكُـمْ

Till, when they reach it, and its gates will be opened and its keepers will say:”Salamun Alaykum (peace be upon you)!” (39:73)

وَالمَلَـيِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِّن كُلِّ بَابٍسَلَـمٌ عَلَيْكُمُ

And angels shall enter unto them from every gate (saying):”Salamun Alaykum (peace be upon you)!” (13:23-24)

وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَـماً

Therein they shall be met with greetings and the word of peace and respect. (25:75)

دَعْوَهُمْ فِيهَا سُبْحَـنَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَمٌ وَءَاخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ للَّهِ رَبِّ الْعَـلَمِينَ

Their way of request therein will be Subhanaka Allahumma (glory to you, O Allah) and Salam (peace!) will be their greetings therein (Paradise)!

And the close of their request will be:Al-Hamdu Lillahi Rabbil-‘Alamin (all praise to Allah the Lord of that exists). (10:10).

Leave a Reply