أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 781)
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৭৮-৭৯ নং আয়াত:-
[ اَصۡحٰبُ الۡاَیۡکَۃِ
আয়কাবাসীরাও,
The companions of the thicket.]
www.motaher21.net
وَ اِنۡ کَانَ اَصۡحٰبُ الۡاَیۡکَۃِ لَظٰلِمِیۡنَ ﴿ۙ۷۸﴾
And the companions of the thicket were [also] wrongdoers.
فَانۡتَقَمۡنَا مِنۡہُمۡ ۘ وَ اِنَّہُمَا لَبِاِمَامٍ مُّبِیۡنٍ ﴿ؕ٪۷۹﴾
So We took retribution from them, and indeed, both [cities] are on a clear highway.
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৭৮-৭৯ নং আয়াত:-
[ اَصۡحٰبُ الۡاَیۡکَۃِ
আয়কাবাসীরাও,
The companions of the thicket.]
www.motaher21.net
৭৮-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতে ‘আইকা’ (الْأَيْكَةِ) জনপদ দ্বারা শুয়াইব (عليه السلام)-এর সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। الْأَيْكَةِ শব্দের অর্থ ঘন গাছ-পালা। এটা বলার কারণ হল, এই অবাধ্য জাতি প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে নিজেদের বসতি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সেখানেই ধ্বংস করে দেন। এটাও বলা হয় যে, উক্ত জঙ্গলে ‘আইকা’ বলে একটা গাছকে তারা পূজা করত। যার আশপাশ জঙ্গল বেষ্টিত ছিল।
শু‘আইব (عليه السلام) লূত (عليه السلام)-এর পর নবুওয়াত পেয়েছিলেন। লূত (عليه السلام)-এর অবাধ্য জাতি ধ্বংসের অনতিকাল পরে তাঁকে নবুওয়াত দিয়ে মাদইয়ানবাসীদের হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। মাদইয়ান হল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডানের সামুদ্রিক বন্দর ‘মো‘আন’ (معان ) এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ছয়টি প্রাচীন জাতির মধ্যে ৫ম জাতি হল ‘আহলে মাদইয়ান’। এটি ছিল ইবরাহীম (عليه السلام)-এর পৌত্রের নাম, যার নামে এ এলাকার নামকরণ করা হয়। তাদের পাপ ছিল তারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করত, রাহাজানি করত, লোকদেরকে ওজনে কম দিত এবং নিজেরা মানুষের নিকট থেকে নেয়ার সময় বেশি নিত। তাদের এই সীমালংঘনের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন। এমনকি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
(لَبِإِمَامٍ مُّبِيْنٍ)
প্রকাশ্য পথ বলতে জনসাধারণের জন্য রাস্তা, যে রাস্তা দিয়ে লোকজন দিবারাত্রি যাওয়া-আসা করে। উভয় শহর বলতে লূত সম্প্রদায়ের শহর ও শুআইব (عليه السلام)-এর জাতির বসতি মাদইয়ানকে বুঝানো হয়েছে। এ দু’ শহর পাশাপাশি অবস্থিত। এদের সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৮৫-৯৩ ও হূদের ৮৪-৯৫ নং আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ওজনে কম-বেশি করা যাবে না।
২. নাবী-রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করা যাবে না।
৩. নাবী-রাসূলগণের দাওয়াতকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# হযরত শো’আয়েবের (আ) সম্প্রদায়ের লোক। এ সম্প্রদায়টির নাম ছিল বনী মাদ্ইয়ান। তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় শহরেরও নাম ছিল মাদ্ইয়ান এবং সমগ্র এলাকাটিকেও মাদ্ইয়ান বলা হতো। আর “আইকা” ছিল তাবুকের প্রাচীন নাম। এ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ঘন জংগল। বর্তমানে একটি পাহাড়ী ঝরণার নাম আইকা। এটি জাবালে নূরে উৎপন্ন হয়ে আফাল উপত্যকায় এসে পড়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য সূরা শূ’আরার ১১৫ টীকা দেখুন)
ফী জিলালিল কুরআন:
৭৮-৮৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৮৪ নং আয়াতে পড়ুন।
# আইকাবাসীদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ইতিপূর্বে সূরা আল হিজরের ৭৮-৮৪ আয়াতে করা হয়েছে। এখানে করা হচ্ছে তার বিস্তারিত আলোচনা। মাদয়ান ও আইকাবাসীরা দু’টি আলাদা জাতি অথবা একটি জাতির পৃথক নাম, এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। একদল মনে করেন, তারা দু’টি পৃথক জাতি। এজন্য তাদের সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে, সূরা আ’রাফে হযরত শো’আইবকে মাদয়ানবাসীদের ভাই বলা হয়েছেঃ
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا
আর এখানে আইকাবাসীদের উল্লেখ করতে গিয়ে শুধুমাত্র বলা হয়েছে إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ (যখন শু’আইব তাদেরকে বললো)। এখানে তাদের ভাই (اَخُوْهُمْ) শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। পক্ষান্তরে কোন কোন মুফাসসির উভয়কে একই জাতি গণ্য করেছেন। কারণ, সূরা আ’রাফ ও সূরা হূদে মাদয়ানবাসীদের যেসব রোগ ও গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে এখানে আইকাবাসীদের সে একই রোগ ও গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে। হযরত শো’আইবের দাওয়াত ও উপদেশও একই এবং শেষে তাদের পরিণতির মধ্যেও কোন ফারাক নেই।
গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, এ দু’টি উক্তি মূলতঃ সঠিক। সন্দেহাতীতভাবে মাদয়ানবাসী ও আইকাবাসীরা দু’টি আলাদা গোত্র। কিন্তু মূলত তারা একই বংশধারার দু’টি পৃথক শাখা। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী বা দাসী কাতুরার গর্ভজাত সন্তানরা আরব ও ইসরাঈলী ইতিহাসে বনী কাতুরা নামে পরিচিত। এদের একটি গোত্র সবচেয়ে বেশী খ্যাতি লাভ করে। মাদয়ান ইবনে ইব্রাহীমের বংশোদ্ভূত হবার ফলে তাদেরকে মাদয়ানী বা মাদয়ানবাসী বলা হয়। এদের বসতি উত্তর হেজায থেকে ফিলিস্তীনের দক্ষিণ পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সিনাই ব-দ্বীপের শেষ কিনারা পর্যন্ত লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরের পশ্চিম উপকূল এলাকায় বিস্তৃত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মাদয়ান শহর। আবুল ফিদার মতে এটি আকাবা উপসাগরের উপকূলে আইলা (বর্তমান আকাবা) থেকে পাঁচ দিনের দুরত্বে অবস্থিত। বনী কাতুরার অন্যান্য গোত্রের মধ্যে বনী দীদান (deanties) তুলনামূলকভাবে বেশী পরিচিত। উত্তর আরবে তাইমা, তাবুক ও আলা’উলার মাঝামাঝি স্থানে তারা বসতি গড়ে। তাদের কেন্দ্রীয় স্থান ছিল তাবুক। প্রাচীনকালে একে আইকা বলা হতো। (মু’জামুল বুলদান গ্রন্থে ইয়াকূত আইকা শব্দের আলোচনায় বলেছেন, এটি তাবুকের পুরাতন নাম এবং তাবুকবাসীদের মধ্যে একথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল যে, এ স্থানটিই এক সময় আইকা নামে পরিচিত ছিল।) মাদয়ানবাসী ও আইকাবাসীদের জন্য একজন রসূল পাঠাবার কারণ সম্ভবত এ ছিল যে, তারা একই বংশধারার সাথে সম্পর্কিত ছিল, একই ভাষায় কথা বলতো এবং তাদের এলাকাও পরস্পরের সাথে সংযুক্ত ছিল। বরং বিচিত্র নয়, কোন কোন এলাকায় তাদের বসতি একই সঙ্গে গড়ে উঠেছিল এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়ে সমাজে তারা মিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া বনী কাতুরার এ দু’শাখার লোকদের পেশাও ছিল ব্যবসা। তাদের মধ্যে একই ধরণের ব্যবসায়িক অসততা এবং ধর্মীয় ও চারিত্রিক দোষ পাওয়া যেত। বাইবেলের প্রথম দিকের পুস্তকগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় এ আলোচনা পাওয়া যায় যে, এরা বা’লে ফুগূরের পূজা করতো। বনী ইসরাঈল যখন মিসর থেকে বের হয়ে এদের এলাকায় আসে তখন তাদের মধ্যেও এরা শিরক ও ব্যভিচারের রোগ ছড়িয়ে দেয়। (গণনা পুস্তক ২৫: ১-৫ এবং ৩১: ১৬-১৭) তাছাড়া দু’টি বড় বড় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথের ওপর এদের বসতি গড়ে উঠেছিল। এ পথ দু’টি ইয়ামন থেকে সিরিয়া এবং পারস্য উপসাগর থেকে মিসরের দিকে চলে গিয়েছিল। এ দু’টি রাজপথের ধারে বসতি হবার কারণে এদের লুটতরাজ ও রাহাজানির কারবার ছিল খুবই রমরমা। অন্যসব জাতির বাণিজ্য কাফেলাকে বিপুল পরিমাণ কর না দিয়ে তারা এ এলাকা অতিক্রম করতে দিতো না। নিজেরা আন্তর্জাতিক পথ দখল করে রাখার ফলে পথের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে রেখেছিল। কুরআন মজীতে তাদের এ অবস্থানকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ إِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ “এ জাতি দু’টি (লূতের জাতি ও আইকাবাসী) প্রকাশ্য রাজপথের ওপর বসবাস করতো।” এদের রাহাজানির কথা সূরা আ’রাফে এভাবে বলা হয়েছেঃ وَلَا تَقْعُدُوا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوعِدُونَ “আর প্রত্যেক পথের ওপর লোকদেরকে ভয় দেখাবার জন্য বসে যেয়ো না।” এ সমস্ত কারণে আল্লাহ এ উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একই নবী পাঠিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একই ধরণের শিক্ষা দিয়েছিলেন।
হযরত শো’আইব ও মাদয়ানবাসীদের কাহিনী বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আল আ’রাফের ৮৫-৯৩ , হূদের ৮৪-৯৫ , এবং আল আনকাবুতের ৩৬-৩৭ আয়াত ।
# মাদ্ইয়ান ও আইকাবাসীদের এলাকাও হেজায থেকে ফিলিস্তিন ও সিরিয়া যাবার পথে পড়ে।
ফী জিলালিল কুরআন:
৭৮-৮৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৮৪ নং আয়াতে পড়ুন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৭৮-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর
“আসহাবে আয়কা’ দ্বারা হযরত শু’আইবের (আঃ) কওমকে বুঝানো হয়েছে। “আয়কা’ বলা হয় গাছের ঝাড়কে। শিরক, ও কুফরী ছাড়াও তাদের অত্যাচারমূলক কাজ ছিল এই যে, তারা লুণ্ঠন করতো এবং মাপে ও ওজনে কম করতো। তাদের বস্তিটি হযরত লুতের (আঃ) কওমের বস্তির নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। তাদের যুগটিও ছিল নূতীয়দের যুগের নিকটতম যুগ। তাঁদের দুষ্কর্ম এবং অবাধ্যতার কারণে তাদের উপরও আল্লাহর শাস্তি নেমে এসেছিল। এই উভয় বস্তিই লোক চলাচলের পথে অবস্থিত ছিল। হযরত শুআইব (আঃ) স্বীয় কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে গিয়ে বলেছিলেনঃ “তের (আঃ) কওমের যুগ তো তোমাদের যুগ হতে বেশী দূরের যুগ নয়।”
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al-Hijr
Sura: 15
Verses :- 78-79
[ اَصۡحٰبُ الۡاَیۡکَۃِ
The companions of the thicket.]
www.motaher21.net
The Destruction of the Dwellers of Al-Aykah, the People of Shu`ayb
Allah tells;
وَإِن كَانَ أَصْحَابُ الَايْكَةِ لَظَالِمِينَ
فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُّبِينٍ
And the Dwellers of Al-Aykah, were also wrongdoers. So, We took vengeance on them. They are both on an open route, plain to see.
The Dwellers of Al-Aykah, were the people of Shu`ayb.
Ad-Dahhak, Qatadah and others said that;
Al-Aykah refers to intertwined trees.
Their evildoing included associating partners with Allah (Shirk), banditry and cheating in weights and measures. Allah punished them with the Sayhah (the awful cry or torment), the earthquake, and the torment of the Day of Shadow. They lived near the people of Lut, but at a later time, and the people of Lut were known to them, which is why Allah says,
وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُّبِينٍ
They are both on an open route, plain to see.
Ibn Abbas, Mujahid, Ad-Dahhak and others said,
“a visible route.”
This is why, when Shu`ayb warned his people, he said to them,
وَمَا قَوْمُ لُوطٍ مِّنكُم بِبَعِيدٍ
And the people of Lut are not far off from you! (11:89).