(Book# 790) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ০৫-০৮ নং আয়াত:- [ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ ও বহু উপকার রয়েছে; Blessing from Him .] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 790)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
০৫-০৮ নং আয়াত:-
[ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ
ও বহু উপকার রয়েছে;
Blessing from Him .]
www.motaher21.net
وَ الۡاَنۡعَامَ خَلَقَہَا ۚ لَکُمۡ فِیۡہَا دِفۡءٌ وَّ مَنَافِعُ وَ مِنۡہَا تَاۡکُلُوۡنَ ﴿۪۵﴾
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য ওতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে; আর তা হতে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক।
And the grazing livestock He has created for you; in them is warmth and [numerous] benefits, and from them you eat.
وَ لَکُمۡ فِیۡہَا جَمَالٌ حِیۡنَ تُرِیۡحُوۡنَ وَ حِیۡنَ تَسۡرَحُوۡنَ ﴿۪۶﴾
আর যখন তোমরা সন্ধ্যায় ওদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন ওদেরকে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা ওর সৌন্দর্য উপভোগ কর।
And for you in them is [the enjoyment of] beauty when you bring them in [for the evening] and when you send them out [to pasture].
وَ تَحۡمِلُ اَثۡقَالَکُمۡ اِلٰی بَلَدٍ لَّمۡ تَکُوۡنُوۡا بٰلِغِیۡہِ اِلَّا بِشِقِّ الۡاَنۡفُسِ ؕ اِنَّ رَبَّکُمۡ لَرَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ۙ﴿۷﴾
আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূর দেশে; যেথায় প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না; তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই চরম স্নেহশীল, পরম দয়ালু।
And they carry your loads to a land you could not have reached except with difficulty to yourselves. Indeed, your Lord is Kind and Merciful.
وَّ الۡخَیۡلَ وَ الۡبِغَالَ وَ الۡحَمِیۡرَ لِتَرۡکَبُوۡہَا وَ زِیۡنَۃً ؕ وَ یَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸﴾
তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। আর তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও।
And [He created] the horses, mules and donkeys for you to ride and [as] adornment. And He creates that which you do not know.

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
০৫-০৮ নং আয়াত:-
[ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ
ও বহু উপকার রয়েছে;
Blessing from Him .]
www.motaher21.net
৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা যে সকল চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলো থেকে মানুষ বিভিন্ন উপকার লাভ করছে সে নেয়ামতের বিবরণ দিচ্ছেন। যেমন উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সূরা আন‘আমের ১৪৩ নং আয়াতে আট প্রকার জন্তুর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এসব জন্তু থেকে মানুষ বিভিন্ন উপকার নেয়; যেমন-১. লোম থেকে মোটা কাপড় তৈরি করে শীত নিবারক পোশাক বানায়। ২. গাভীর পেট থেকে স্বচ্ছ দুধ পাওয়া যায়, ৩. জবাই করে গোশত খাওয়া যায়, ৪. চামড়া দিয়ে জুতোসহ অনেক উপকার নেয়া হয়। ৫. এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বোঝা বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। আগেকার দিনের প্রধান বাহন ছিল জন্তু, বিশেষ করে মরুর দেশে উট ছাড়া কোন বাহন ছিল না। সকল ধরণের বোঝা বহন ও সওয়ারী হিসেবে একমাত্র মাধ্যম ছিল এসব জন্তু। ৬. তাদের গোবর মানুষের জ্বালানী ও ক্ষেতের সার হিসেবে উপকারে আসে। ৭. গরু দিয়ে হাল চাষ করাসহ আরো অনেক উপকার চতুষ্পদ জন্তুতে আল্লাহ তা‘আলা রেখে দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاِنَّ لَکُمْ فِی الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًﺚ نُسْقِیْکُمْ مِّمَّا فِیْ بُطُوْنِھَا وَلَکُمْ فِیْھَا مَنَافِعُ کَثِیْرَةٌ وَّمِنْھَا تَاْکُلُوْنَﭤﺫ وَعَلَیْھَا وَعَلَی الْفُلْکِ تُحْمَلُوْنَﭥ)

“এবং তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে; তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা; তোমরা তা হতে আহার কর‎, এবং তার পিঠে ও নৌযানে তোমাদেরকে আরোহন করানো হয়।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:২১-২২)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা তাদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নেয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা তার ওপর স্থির হয়ে বস; এবং বল পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করার। আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:১২-১৪)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ط نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِه۪ مِنْۭ بَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشّٰرِبِيْنَ) ‏

“অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।” (সূরা নাহল ১৬:৬৬)

হাদীসে এসেছে:

রাসূলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একদা জনৈক ব্যক্তি তার একটি গরুকে পিঠে বোঝা বহন করিয়ে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গরু তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে: আমাকে এ জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বরং আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে চাষাবাদের জন্য। লোকটি বলল: সুবহানাল্লাহ, আশ্চর্যের বিষয়, গরু কথা বলছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন: এ কথা আমি, আবূ বকর ও উমার < বিশ্বাস করি। (সহীহ বুখারী হা: ৫১৮৯, সহীহ মুসলিম হা: ২৪৪৮)

جَمَالٌ অর্থাৎ এসব জন্তু লালন পালন করা, এদের মালিক হওয়া মানুষের কাছে এক প্রকার সৌন্দর্য। تُرِيْحُوْنَ যখন সন্ধ্যায় চারণভূমি থেকে বাড়িতে নিযে এসো, تَسْرَحُوْنَ যখন সকালে চারণভূমিতে নিয়ে যাও।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও করুণা যে, তিনি এসব জন্তু মানুষের উপকারার্থেই সৃষ্টি করেছেন। কোন বস্তুই অকল্যাণে সৃষ্টি করেননি এবং এগুলোকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন বাহন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এবং সৌন্দর্যের জন্য। আগের দিনে মানুষের একমাত্র বাহন ও বোঝা বহনকারী হিসেবে ব্যবহৃত হত ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। বর্তমানে বিভিন্ন যানবাহন ও মালবাহী গাড়ী তৈরি হওয়ায় এসব প্রাণী বাহন ও বোঝা বহনে প্রায় ব্যবহার ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তবুও মরুর দেশসহ অনুন্নত দেশে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যেদিন আবার মানুষ এসব প্রাণীগুলোকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করবে। সৌন্দর্যের বিষয়টি হল মানুষ এসব লালন-পালন করে তৃপ্তি লাভ করে, আনন্দ উপভোগ করে এবং এসব প্রাণী যখন সারিবদ্ধভাবে চলাচল করে তখন দেখতে খুব সুন্দর দেখায়। তাছাড়া ঘোড়ার সৌন্দর্যের কথা বলার অবকাশ রাখে না। ঘোড়াকে সাজিয়ে তার ওপর বসলে অন্য রকম আনন্দই লাগে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: উট মানুষের সম্মান, ছাগল তাতে বরকত রয়েছে এবং ঘোড়ার মাথার চুলে কল্যাণ রয়েছে। (ইবনু মাযাহ হা: ২৩০৫, সিলসিলা সহীহাহ হা: ১৭৬৩)

আয়াতে ঘোড়াকে খচ্চর ও গাধার সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে অনেকে মনে করেন যে, এগুলো শুধু বোঝা বহন ও সৌন্দর্যের জন্য, খচ্চর ও গাধার ন্যায় ঘোড়াও খাওয়া নিষেধ। তাদের বুঝ সঠিক হলেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং ঘোড়া খাওয়া নিষেধ করা যাবে না। কারণ হাদীসে এসেছে “জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের দিবসে গাধার মাংসকে হারাম করেছেন আর ঘোড়ার মাংস ভক্ষণ করার অনুমতি দিয়েছেন।” (সহীহ বুখারী হা: ৫৫২০, সহীহ মুসলিম হা: ১৪০৭)

তবে ঘোড়ার যাকাত নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মুসলিম ব্যক্তির দাসে ও ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৬৩, সহীহ মুসলিম হা: ৯৮২)

(وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ)

অর্থাৎ এমন কিছু সৃষ্টি করবেন যা কুরআন নাযিল হওয়ার সময়কার ব্যক্তিরা জানত না। যেমন বাস, ট্রেন, জলজাহাজ, বিমান ও রকেটসহ অত্যাধুনিক সকল উপকরণ ও ভবিষ্যতে আরো যা কিছু সৃষ্টি হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. চতুষ্পদ জন্তু মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
২. গরু চাষাবাদ ও গোশত খাওয়ার জন্য, বোঝা বহনের জন্য নয়।
৩. উট থেকে বোঝা বহন ও খাওয়া উভয় উপকার নেয়া যায়।
৪. এসব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা মানুষের একান্ত কর্তব্য।
৫.ঘোড়ার মাংস খাওয়া বৈধ, ঘোড়ার যাকাত নেই।
৬.গাধা ও খচ্চরের মাংস খাওয়া হারাম।
৭. এগুলো বোঝা বহন করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন।

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
বিপুল পরিমাণ জিনিস এমন আছে যা মানুষের উপকার করে যাচ্ছে। অথচ কোথায় কত সেবক তার সেবা করে যাচ্ছে এবং কি সেবা করছে সে সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

এই যে সুপ্রশস্ত প্রকৃতির-তথা আকাশ ও পৃথিবীর যে উন্মুক্ত প্রান্তরে মানুষের অবস্থান, সেখানেই আল্লাহ তায়ালা তার সেই সৃষ্টিগুলাের বিবরণ দিচ্ছেন, যেগুলােকে তিনি মানুষের অনুগত করেছেন। প্রথমে পশু দিয়ে শুরু করেছেন ‘পশুগুলােকে তিনি তােমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ওগুলােতে তােমাদের জন্যে প্রচুর লাভ ও উপকারিতা রয়েছে….'(আয়াত ৫-৮) যে পরিবেশে সর্বপ্রথম কোরআন নাযিল হয় সে ধরনের পরিবেশে- শুধু তাই নয়, আজও এই পরিবেশে গৃহপালিত পশু যে কতাে বড়াে নেয়ামত, তা বুঝতে কোনােই অসুবিধা হয় না। পশু ছাড়া বলতে গেলে মানুষের জীবনই অচল। সে যুগে সাধারণত যে সব পশুর ব্যাপক প্রচলন ছিলাে, তা হলাে উট, গরু, ভেড়া ও দুম্বা, ঘােড়া, গাধা ও খচ্চর শুধু বাহন ও বিলাসােপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হতাে। এগুলাে খাওয়া হতাে না।(ঘােড়া খাওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে মতভেদ আছে। যেহেতু আলােচ্য আয়াতে ঘােড়াকে শুধু বাহন ও বিলাসােপকরণ হিসাবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, তাই এ আয়াত ও অন্য কিছু হাদীস অনুসারে ইমাম আবু হানিফা ঘােড়ার গােস্ত খাওয়াকে হারাম গণ্য করেন। তবে কিছু সহীহ হাদীস ও রসুল(স.)-এর বাস্তব কর্মনীতির আলােকে অধিকাংশ ইমামই একে হালাল গন্য করেন) এই নেয়ামতটার বর্ণনা দেয়ার সময় কোরআন এ কথাও জানিয়ে দেয় যে, এতে মানুষের প্রয়ােজন ও শখ দুটোই পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। পশুর চামড়া, পশম, গােশত, দুধ ও ঘি ইত্যাদি দ্বারা উপকৃত হবার সুযােগ তাে রয়েছেই, উপরন্তু দূরবর্তী অঞ্চলগুলােতে মাল পরিবহনের ব্যবস্থাও রয়েছে, যা কিনা মানুষ নিজে বহন করতে কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হতাে। এ সব পশুতে শখ পূরণের ব্যবস্থাও আছে। যেমন সকাল বিকাল এর পিঠে চড়ে ঘােরাফেরা করা যায়। আর ঘােরাফেরার এ দৃশ্যটাও পরম উপভােগ্য ও মনােরম। এ জিনিসটা শহরবাসীর তুলনায় গ্রামবাসীরাই ভালাে উপলব্ধি করে। বস্তুত ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরে পরিবহনের প্রয়ােজনটাও যেমন পূরণ হয়, তেমনি সৌন্দর্যের চাহিদাও পূরণ হয়। আল্লাহ তায়ালা এ জন্যেই বলেন, যাতে তােমরা এগুলােতে আরােহণ করতে পারো এবং তােমাদের সৌন্দর্য চাহিদা পূরণ হয়।  *মানব জীবন সম্পর্কে কোরআনের দৃষ্টিভংগী : জীবন সম্পর্কে ইসলাম ও কোরআন যে দৃষ্টিভংগি পােষণ করে, তার আলােকে এ বিষয়টি যথেষ্ট মূল্যবান। এ দৃষ্টিভংগিতে সৌন্দর্য একটা মৌলিক উপকরণ । শুধু খাদ্য, পানীয় ও পরিবহনের প্রয়ােজন পূরণই নেয়ামত নয়, বরং প্রয়ােজনের অতিরিক্ত শখ পূরণও নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত। সৌন্দর্য, বিনােদন এবং পশুর প্রতি আকর্ষণ ও পশু দ্বারা প্রয়ােজন পূরণে যে উচ্চতর মানবীয় অনুভূতি তথা আভিজাত্য বােধের স্ফূরণ ঘটে, সে সবও এর আওতাভুক্ত। ‘তোমাদের প্রতিপালক তােমাদের প্রতি অনুকম্পা শীল।’ এ মন্তব্যটার তাৎপর্য এই যে, তােমরা প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া দূরবর্তী এলাকায় মালপত্র পরিবহন করতে পারতে না। অথচ পশু দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তােমাদের সে প্রয়ােজন পূরণ করেছেন। কেননা তিনি তােমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এভাবে পশুর সৃষ্টিই যে একটা নেয়ামত এবং এ নেয়ামত যে মানুষের ওপর আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পার নিদর্শন সে কথাই বুঝানাে হয়েছে। ‘আর তােমরা জানােনা এমনও অনেক কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন।’ খাদ্য, সৌন্দর্য চর্চা ও পরিবহনের সুবিধার জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে পশু সৃষ্টি করেছেন, বিশেষত ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরকে বিনােদন ও পরিবহনের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, এ বক্তব্যের ওপর মন্তব্য প্রসংগেই আল্লাহ তায়ালা এ কথা বলেছেন, যাতে মানুষের চিন্তাধারার আওতার মধ্যে সম্ভাব্য নতুন প্রয়ােগক্ষেত্র উন্মুক্ত থাকতে পারে এবং পরিবহন, আরােহণ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবিত হতে পারে। সমকালীন পরিবেশ ও রীতি প্রথার বাইরে চিন্তাভাবনা করার পথ ইসলাম রুদ্ধ করতে চায় না। বস্তুত প্রত্যেক যুগের প্রচলিত রীতি প্রথার বাইরেও কিছু রীতি প্রথা থাকতে পারে। আল্লাহ তায়ালা চান মানুষ যেন সে সবের জন্যে অনুসন্ধান চালায় এবং যখন তার সন্ধান পাবে, তখন তার কল্পনাশক্তি ও বােধশক্তি অনেক ব্যাপক ও প্রশস্ত হবে। এভাবে অনুসন্ধান করে যখন নতুন কোনাে পন্থা খুঁজে পাবে, তখন মানুষ তাকে গ্রহণ করুক, তার বিরােধিতা না করুক এবং তার ব্যবহার ও তা দ্বারা উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে গোড়ামী অবলম্বন করুক-তা ইসলামের কাছে বাঞ্ছিত নয়। ইসলাম কারাে এরূপ কথা বলা পছন্দ করে না যে, আমাদের বাপ-দাদ ঘােড়া-গাধা ও খচ্চরের পিঠে চড়তাে, আমরাও ওগুলাের ওপরই চড়বাে-অন্য কিছুর ওপর চড়বাে না, কিংবা কোরআন যেহেতু এই সব পশুর পিঠে চড়ার উল্লেখ করেছে, তাই আমরা এগুলাের পরিবর্তে অন্য কোনাে বাহন ব্যবহারই করবাে না। ইসলাম হচ্ছে এমন একটা উন্মুক্ত ও উদার আদর্শের নাম, যা সকল শক্তিকে কাজে লাগানাের যোগ্যতা রাখে এবং জীবনের সকল অবস্থায় সচল থাকে। এ জন্যে কোরআন মানুষের মনমস্তিস্ককে এমন যাবতীয় জিনিসকে গ্রহণ করার জন্যে প্রস্তুত করে, যা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত প্রতিভা ও বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ ভবিষ্যতে উদ্ভাবন করবে। এগুলােকে সে উদার ধর্মীয় আবেগ উদ্দীপনা নিয়েই গ্রহণ করবে, যা প্রাকৃতিক জগতের নিত্য নতুন বিস্ময়কর সৃষ্টিকে, বিজ্ঞানের নিত্য নতুন উদ্ভাবনকে এবং জীবনের সকল নব উদঘাটিত রহস্যকে গ্রহণ করার জন্যে প্রস্তুত থাকে। পরিবহন, যাতায়াত ও ভ্রমণের এমন বহু নতুন বাহন এ যুগে আবিষ্কৃত হয়েছে, যার কথা সেকালের লােকেরা জানতােই না। আবার ভবিষ্যতেও এমন বহু নতুন উপকরণ উদ্ভাবিত হবে, যা একালের লােকদের অজানা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি এমন আরাে বহু জিনিস সৃষ্টি করেন, যা তােমরা জানাে না।’ এই কথাটা দ্বারা মন মস্তিস্ককে সব ধরনের হঠকারিতা ও গোঁড়ামী ঝেড়ে ফেলে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার উদ্ভাবনকে গ্রহণ করার জন্যে প্রস্তুত করে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলি থেকে যে মানুষ বিভিন্ন প্রকারের উপকার লাভ করছে সেই নিয়ামতেরই তিনি বর্ণনা দিচ্ছেন। যেমন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি। যার বিস্তারিত বিবরণ তিনি সূরায়ে আন্ আমের আয়াতে আট প্রকার দ্বারা দিয়েছেন। মানুষ ওগুলির পশম দ্বারা গরম পোশাক তৈরী করে, দুধ পান করে, গোশত খায় ইত্যাদি। সন্ধ্যাকালে চরণ শেষে যখন ওগুলি ভরা পেটে মোটা স্তন ও উঁচু কুঁজসহ গৃহে ফিরে আসে। তখন ওগুলিকে কতই না সুন্দর দেখায়।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “ওরা তোমাদের ভারী ভারী বোঝা পিঠের উপর বহন করে এক শহর হতে অন্য শহরে নিয়ে যায়। ওদের সাহায্য না পেলে তথায় পৌঁছতে তোমাদের ওষ্ঠাগত প্রাণ হয়ে যেতো। হজ্জ, উমরা, জিহাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির জন্যে সফর করার কাজে ঐ গুলিই ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ঐ জন্তু গুলিই তোমাদেরকে ও তোমাদের বোঝাগুলি বহন করে নিয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেনঃ “এই চতুষ্পদ জন্তুগুলির মধ্যেও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। ওগুলির পেট থেকে আমি তোমাদের দুগ্ধ পান করিয়ে থাকি এবং ওগুলি দ্বারা বহু উপকার সাধন করি। তোমরা ওগুলির গোশতও ভক্ষণ কর এবং ওগুলির উপর সওয়ারও হও। সমুদ্রে ভ্রমণের জন্যে আমি নৌকাও বানিয়েছি।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির উপর আরোহণ কর এবং (দুধ, গোশত) ভক্ষণ কর। আর সেগুলিতে রয়েছে তোমাদের জন্যে আরো নানা প্রকারের উপকার এবং যেন তোমরা ওগুলি দ্বারা তোমাদের মনের চাহিদা পূরণ কর। তোমাদেরকে তিনি নৌকাতেও আরোহণ করিয়েছেন এবং বহুকিছু নিদর্শন দেখিয়েছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন্ নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?” এখানেও মহান আল্লাহ তাঁর নিয়ামত গুলি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনঃ “তিনি তোমাদের সেই প্রতিপালক যিনি এই চতুষ্পদ জন্তুগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। তিনি তোমাদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল ও দয়ালু।” যেমন সূরায়ে ইয়াসীনে তিনি বলেছেনঃ “তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিজ হাতে সৃষ্ট বস্তুগুলির মধ্যে তাদের জন্যে আমি সৃষ্টি করেছি চতুষ্পদ জন্তু এবং তারাই ওগুলির অধিকারী?” অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “ঐ আল্লাহ তাআ’লাই তোমাদের জন্যে নৌকা বানিয়েছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির উপর সওয়ার হও এবং তোমাদের প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং বলঃ “তিনি পবিত্র যিনি এগুলিকে আমাদের অনুগত করে দিয়েছেন, অথচ আমাদের কোন ক্ষমতা ছিল না, আমরা বিশ্বাস করি যে, তাঁরই নিকট আমরা ফিরে যাবো।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি) এর ভাবার্থ কাপড়। আর (আরবি) দ্বারা পানাহার করা, বংশ লাভ করা, সওয়ার হওয়া, গোশত খাওয়া এবং দুধ পান করা ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে।
এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর আর একটি নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি সৌন্দর্যের জন্যে এবং সওয়ারীর জন্যে ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। এই জন্তুগুলি সৃষ্টির বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের উপকার লাভ। এই জন্তগুলিকে অন্যান্য জন্তুগুলির উপর তিনি ফযীলত দান করেছেন এবং এই কারণে পৃথকভাবে এগুলির বর্ণনা দিয়েছেন। এ জন্যেই কতক আলেম এই আয়াত দ্বারা ঘোড়ার গোশত হারাম হওয়ার দলীল গ্রহণ করেছেন। যেমন ইমাম আবূহানীফা (রঃ) এবং তাঁর অনুসরণকারী ফকীহগণ বলেন যে, খচ্চর ও গাধার সাথে ঘোড়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আর প্রথম দুটি জন্তুর গোশতহারাম। সুতরাং এটির গোশতও হারাম হলো। খচ্চর ও গাধার গোশত হারাম হওয়ার কথা বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মাযহাব এটাই বটে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে এই তিনটি জন্তুর গোশত হারামহওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন যে, এই আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতে চতুষ্পদ জন্তুগুলির বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ঐ গুলি তোমরা ভক্ষণ করে থাকো। সুতরাং ঐগুলো হলো খাওয়ার জন্তু।” আর এখানে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা এগুলোর উপর সওয়ার হয়ে থাকো। সুতরাং এগুলো হলো সওয়ারী জন্তু।”

হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঘোড়া, খচ্চর এবং গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন। এ হাদীসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে সালিহ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু মিকদাদ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যার সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়েছে)

হযরত মিকদাদ ইবনু মা’দীকারাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “আমরা ‘সা’য়েকা’ যুদ্ধে হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালীদের (রাঃ) সাথে ছিলাম। আমার কাছে আমার এক সঙ্গী কিছু গোশত নিয়ে আসলো। আমার কাছে সে একটা পাথর চাইলো। আমি তাকে তা দিলাম। সে তাতে তা বাঁধলো। আমি বললামঃ থামো, আমি খালিদ ইবনু ওয়ালীদের (রাঃ) নিকট যাই এবং এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে আসি। অতঃপর আমি তার কাছে গেলাম এবং এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেনঃ “রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে আমরা খায়বারের যুদ্ধে ছিলাম। ইয়াহূদীদের শস্য ক্ষেত্রের ব্যাপারে জনগণ তাড়াহুড়া করতে শুরু করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন জনগণকে নামাযের জন্যে হাজির হওয়ার আহ্বান জানাই। আর একথাও যেন জানিয়ে দিই যে, মুসলমান ছাড়া অন্য কেউ যেন না আসে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা ইয়াহুদীদের বাগানে ঢুকে পড়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছো। জেনে রেখো যে, চুক্তিকৃতদের মাল হক ছাড়া হালাল নয় এবং পালিত গাধা, ঘোড়া ও খচ্চরের গোশত; আর। হিংস্র জন্তু ও থাবা দ্বারা শিকারী পাখীর গোশত হারাম।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ইয়াহুদীদের বাগানে অনুপ্রবেশের এই নিষেধাজ্ঞা সম্ভবতঃ ঐ সময়ে ছিল, যখন তাদের সাথে চুক্তি ও সন্ধি হয়েছিল। সুতরাং যদি এ হাদীসটি সহীহ হতো তবে অবশ্যই এটা ঘোড়ার গোশত হারাম হওয়ার ব্যাপারে দলীল হতে পারতো। কিন্তু এতে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের ঐ হাদীসের মুকাবিলা করার শক্তি নেই যাতে হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) পালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।

হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতেই বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “খায়বারের যুদ্ধের দিন আমরা ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা যবাহ করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে খচ্চর ও গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেন, কিন্তু ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেন নাই।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ ও ইমাম আবু দাউদ (রঃ) দু’ ইসনাদে বর্ণনা করেছেন এবং প্রত্যেকেই ইমাম মুসলিমের (রঃ) শর্তের উপর বর্ণনা করেছেন)

হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) উপস্থিতিতে ঘোড়া যবাহ করে ওর গোশত ভক্ষণ করেছি। ঐ সময় আমরা মদীনায় অবস্থান করেছিলাম।” (হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)

সুতরাং এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়, মযবূত ও প্রমাণ যোগ্য হাদীস। জমহুর উলামার মাযহাব এটাই। ইমাম মালিক (রঃ) ইমাম শাফিয়ী (রঃ), ইমাম আহমদ (রঃ) ও তাদের সকল সাথী এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অধিকাংশ গুরুজনও একথাই বলেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, পূর্বে ঘোড়ার মধ্যে জংলিপনা ছিল। আল্লাহ তাআলা হযরত ইসমাঈলের (আঃ) খাতিরে ওকে অনুগত করে দেন। অহাব (রাঃ) ইসরাঈলী রিওয়াইয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, দক্ষিণ হাওয়ায় ঘোড়ার জন্ম হয়ে থাকে। এ সব বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক জ্ঞান রাখেন।

এই তিনটি জন্তুর উপর সওয়ারীর বৈধতা তো কুরআন কারীমের শব্দ দ্বারাই সাব্যস্ত হয়েছে। রাসূলুল্লাহকে (সঃ) একটি খচ্চরও উপহার স্বরূপ দেয়া হয়েছিল, যার উপর তিনি সওয়ার হতেন। তবে ঘোড়ার সাথে গর্দভীর মিলন ঘটাতে তিনি নিষেধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ ছিল বংশ কর্তিতহওয়া। হযরত দেহইয়া কালবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আবেদন করেনঃ “আপনি যদি অনুমতি দেন, তবে আমরা ঘোড়া ও গর্দভীর মিলন ঘটাই এবং এর দ্বারা খচ্চর জন্ম গ্রহণ করবে। আপনি ওর উপর সওয়ারহবেন।” তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এই কাজ ওরাই করতে পারে যারা কিছুই জানে না।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 05-08
[ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ
ও বহু উপকার রয়েছে;
Blessing from Him .]
www.motaher21.net
The Cattle are part of the Creation of Allah and a Blessing from Him

Allah says:

وَالَانْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

And the cattle, He has created them for you; in them there is warmth (warm clothing), and numerous benefits, and you eat from them.

Allah reminds His servants of the blessing in His creation of An`am, this term includes camels, cows and sheep, as was explained in detail in Surah Al-An`am where the “eight pairs” are mentioned.

The blessings include the benefits derived from their wool and hair, from which clothes and furnishings are made, from their milk which is drunk, and their young which are eaten.

Their beauty is a kind of adornment, thus Allah says
وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ

And there is beauty in them for you, when you bring them home in the evening.

which is when they are brought back from the pasture in the evening.

This is a reference to how their flanks become fat, their udders fill with milk and their humps become bigger.

وَحِينَ تَسْرَحُونَ

and as you lead them forth to pasture (in the morning).

meaning when you send them out to the pasture in the morning
وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ

And they carry your loads,

meaning the heavy burdens that you cannot move or carry by yourselves,

إِلَى بَلَدٍ لَّمْ تَكُونُواْ بَالِغِيهِ إِلاَّ بِشِقِّ الَانفُسِ

to a land that you could not reach except with great trouble to yourselves,

meaning journeys for Hajj, Umrah, military campaigns, and journeys for the purpose of trading, and so on.

They use these animals for all kinds of purposes, for riding and for carrying loads, as Allah says:

وَإِنَّ لَكُمْ فِى الاٌّنْعَـمِ لَعِبْرَةً نُّسْقِيكُمْ مِّمَّا فِى بُطُونِهَا وَلَكُمْ فيِهَا مَنَـفِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُونَ

And verily, there is indeed a lesson for you in the An’am (cattle). We give you to drink (milk) of that which is in their bellies. And there are numerous (other) benefits in them for you. Of them you eat, and on them and on ships you are carried. (23:21-22)

اللَّهُ الَّذِى جَعَلَ لَكُمُ الاٌّنْعَـمَ لِتَرْكَـبُواْ مِنْهَا وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

وَلَكُمْ فِيهَا مَنَـفِعُ وَلِتَـبْلُغُواْ عَلَيْهَا حَاجَةً فِى صُدُورِكُمْ وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُونَ

وَيُرِيكُمْ ءَايَـتِهِ فَأَىَّ ءَايَـتِ اللَّهِ تُنكِرُونَ

Allah, it is He Who has made cattle for you, so that some you may ride, and some you may eat. And you find (many other) benefits in them; you may reach by their means a desire that is in your breasts (i.e. carry your goods, loads), and on them and on ships you are carried. And He shows you His Ayat.

Which, then of the Ayat of Allah do you deny! (40:79-81)

Thus here Allah says, after enumerating these blessings,

إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَوُوفٌ رَّحِيمٌ

Truly, your Lord is full of kindness, Most Merciful.

meaning, your Lord is the One Who has subjugated the An`am (cattle) to you.

This is like the Ayat:

أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّا خَلَقْنَا لَهُم مِمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَأ أَنْعـماً فَهُمْ لَهَا مَـلِكُونَ

وَذَلَّلْنَـهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُونَ

Do they not see, that of what Our Hands have created, We created the An’am (cattle) for them, so that they may own them, and We subdued them so that they may ride some and they may eat some. (36:71-72)

وَالَّذِى خَلَقَ الَازْوَجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالاٌّنْعَـمِ مَا تَرْكَبُونَ

لِتَسْتَوُواْ عَلَى ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُواْ نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُواْ سُبْحَـنَ الَّذِى سَخَّرَ لَنَا هَـذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ

وَإِنَّأ إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ

And He made mounts for you out of ships and cattle. In order that you may ride on their backs, and may then remember the favor of your Lord when you mount upon them, and say:

“Glory be to the One Who subjected this to us, and we could never have it (by our efforts). And verily, to Our Lord we indeed are to return!” (43:12-14)

Ibn Abbas said,

لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ
(In them there is warmth),

refers to clothing;

وَمَنَافِعُ
(and numerous benefits),

refers to the ways in which they derive the benefits of food and drink from them.
Allah says:

وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

And (He has created) horses, mules and donkeys for you to ride, and as an adornment. And He creates (other) things of which you have no knowledge.

This refers to another category of animals that Allah has created as a blessing for His servants; horses, mules and donkeys, all of which He made for riding and adornment. This is the main purpose for which these animals were created.

It was reported in the Two Sahihs that Jabir bin Abdullah said:

“The Messenger of Allah forbade us to eat the meat of domestic donkeys, but he allowed us to eat the meat of horses.”

Imam Ahmad and Abu Dawud reported with two chains of narration, each of which meet the conditions of Muslim, that Jabir said:

“On the day of Khyber we slaughtered horses, mules and donkeys. The Messenger of Allah forbade us from eating the mules and donkeys, but he did not forbid us from eating the horses.”

According to Sahih Muslim, Asma’ bint Abi Bakr (may Allah be pleased with them both) said:

“At the time of the Messenger of Allah we slaughtered a horse and ate it when we were in Al-Madinah.

Leave a Reply