أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 794)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
২১-২৩ নং আয়াত:-
أَمْواتٌ غَيْرُ أَحْيَاء
সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা (বোধ) নেই।
Dead, not alive,
www.motaher21.net
اَمۡوَاتٌ غَیۡرُ اَحۡیَآءٍ ۚ وَ مَا یَشۡعُرُوۡنَ ۙ اَیَّانَ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿٪۲۱﴾
তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং পুনরুত্থান কবে হবে, সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা (বোধ) নেই।
They are, [in fact], dead, not alive, and they do not perceive when they will be resurrected.
اِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَالَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ مُّنۡکِرَۃٌ وَّ ہُمۡ مُّسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۲۲﴾
তোমাদের উপাস্য একক উপাস্য; সুতরাং যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্য বিমুখ এবং তারা অহংকারী।
Your god is one God. But those who do not believe in the Hereafter – their hearts are disapproving, and they are arrogant.
لَاجَرَمَ اَنَّ اللّٰہَ یَعۡلَمُ مَا یُسِرُّوۡنَ وَ مَا یُعۡلِنُوۡنَ ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡتَکۡبِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾
এটা নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে; তিনি অহংকারীকে অবশ্যই পছন্দ করেন না।
Assuredly, Allah knows what they conceal and what they declare. Indeed, He does not like the arrogant.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
২১-২৩ নং আয়াত:-
أَمْواتٌ غَيْرُ أَحْيَاء
সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা (বোধ) নেই।
Dead, not alive,
www.motaher21.net
২১-২৩ নং আয়তের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, মানুষ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যাদের উপাসনা করে তারা মূলত জড় পদার্থের ন্যায়। এরা কোন কিছু শোনে না, দেখে না এবং বুঝেও না। আর তারা এমন নির্বোধ যে, তারা কিয়ামত কখন হবে একথাও বলতে পারে না। অথচ তোমরা এই সমস্ত মৃত প্রাণহীন জন্তুর উপাসনা করছ। মৃত বলতে প্রাণহীন ও চেতনাহীন জড় (পাথর)ও বটে এবং মৃত সৎ লোকও বটে। কারণ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কথা বলা (যে ব্যাপারে তাদের কোন বোধ নেই) জড় ব্যতীত সৎ লোকদের জন্যই বেশি সঙ্গত বলে মনে হয়। তাদেরকে শুধু মৃতই বলা হয়নি; বরং জীবিত নয় বলে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যাতে কবর পূজোর স্পষ্ট খণ্ডন হচ্ছে। যারা বলে কবরে দাফন হওয়া ব্যক্তি মৃত নয়, জীবিত। আর আমরা জীবিতদেরকেই ডাকি। আল্লাহ তা‘আলার এ কথার পর জানা গেল মৃত্যু এসে যাবার পর আর কেউ পার্থিব জীবন পেতে পারে না, আর না পৃথিবীর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকে। সুতরাং মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যাদেরকে মা‘বূদ হিসেবে আহ্বান করে তারা এত দুর্বল যে, পুনরুত্থান কখন হবে তারা জানে না, তাহলে তাদের কাছ থেকে কী মঙ্গল কামনা করা যেতে পারে।
তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তোমরা যাদেরকে আহ্বান করছ তারা তোমাদের মা‘বূদ নয়, তোমাদের মা‘বূদ হচ্ছেন একজন, তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা। উপকার ও ক্ষতি করার একমাত্র মালিক তিনিই যিনি সকল মানুষের প্রতিপালক, যিনি সবার উপাসনা পাবার যোগ্য। তিনিই একমাত্র ইলাহ, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। সুতরাং যারা আখিরাতে বিশ্বাসী নয়, তাদের জন্য এক আল্লাহকে বিশ্বাস করা অসম্ভব, তাই এক আল্লাহ তা‘আলাকে মানতে তাদের অন্তর অস্বীকার করে এবং এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে অহঙ্কার করে। যেমন তারা বলত আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَجَعَلَ الْاٰلِھَةَ اِلٰھًا وَّاحِدًاﺊ اِنَّ ھٰذَا لَشَیْءٌ عُجَابٌﭔ)
“সে কি বহু উপাস্যের স্থানে একজন মাত্র উপাস্য সাব্যস্ত করে দিয়েছে? বস্তুতঃ এটা এক আশ্চর্য ব্যাপার।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَإِذَا ذُكِرَ اللّٰهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوْبُ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ ج وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِه۪ٓ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ)
“এক আল্লাহর কথা বলা হলে যারা আখিরাতকে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর ঘৃণায় ভরে যায় এবং আল্লাহর পরিবর্তে (তাদের দেবতাগুলোর) উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দিত হয়ে যায়।” (সূরা যুমার ৩৯:৪৫) তবে তারা অহঙ্কার করুক আর না-ই করুক, তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তারা যা গোপন করছে আর প্রকাশ করছে সব দেখছেন, শুনছেন। আল্লাহ তা‘আলা অহঙ্কারীদেরকে ভালবাসেন না, তিনি প্রত্যেককে কর্মের ফলাফল দেবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কবরে মৃত মানুষেরা কোন কিছুই শোনে না, তাই তাদেরকে আহ্বান করে কোন লাভ নেই।
২. ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৩. কবরে শায়িত ব্যক্তির কাছে চাওয়া আর মূর্তিপূজো করা একই কথা।
তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ শব্দগুলো পরিষ্কার একথা ঘোষণা করছে যে, এখানে বিশেষভাবে যেসব বানোয়াট মাবুদদের প্রতিবাদ করা হচ্ছে তারা ফেরেশতা, জিন, শয়তান বা কাঠ-পাথরের মূর্তি নয় বরং তারা হচ্ছে কবরবাসী। কারণ ফেরেশতা ও শয়তানরা তো জীবিত আছে তাদের প্রতি أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ (জীবিত নয় মৃত) শব্দাবলী প্রযোজ্য হতে পারে না। আর কাঠ-পাথর মূর্তির ক্ষেত্রে তো মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কোন প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ (তারা জানে না তাদের কবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে) ধরনের শব্দাবলীর ব্যবহার তাদেরকেও আলোচনার বাইরে রেখে দেয়। এখন এ আয়াতে وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ (আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব সত্তাকে লোকেরা ডাকে) এর মধ্যে নিশ্চিতভাবে নবী, আউলিয়া, শহীদ, সৎ ব্যক্তিবর্গ ও অন্যান্য অসাধারণ লোকদের কথাই বলা হয়েছে। অতি ভক্তের দল এসব সত্তাকে সংকট নিরসনকারী, অভিযোগের প্রতিকারকারী, দরিদ্রের সহায়, ধনদাতা এবং নাজানি আরো কত কিছু মনে করে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ডাকতে থাকে। এর জবাবে যদি কেউ বলে আরবে এ ধরনের মাবুদ বা দেব-দেবী পাওয়া যেতো না তহলে আমি বলবো এটা তার আরবীয় জাহেলিয়াতের ইতিহাস না জানার প্রমাণ। লেখাপড়া জানা লোকদের কে-ইবা একথা জানে না যে, বারী’আহ, কালব, তাগলাব, কুদা’আহ, কিনানাহ, হারস, কা’ব, কিনদাহ ইত্যাদি বহু আরব গোত্রে বিপুল সংখ্যক খৃস্টান ও ইহুদী ছিল। আর এ দু’টি ধর্মের লোকেরা ব্যাপকভাবে নবী, আউলিয়া ও শহীদদের পূজা করতো। তাছাড়া মৃত লোকরাই ছিল আরব মুশরিকদের অধিকাংশের না হলেও বহু লোকের উপাস্য। পরবর্তী প্রজন্ম পূর্ববর্তী মৃত লোকদেরকে নিজেদের খোদা বানিয়ে নিয়েছিল। ইমাম বুখারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছেঃ ওয়াদ্দা, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াউক, নাসর— এগুলো ছিল পূর্বকালের সৎ লোকদের নাম। পরবর্তীকালের লোকেরা তাদের দেব মূর্তি নির্মাণ করে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেনঃ ইসাফ ও নায়েলাহ উভয়ই মানুষ ছিল। এ ধরনের বর্ণনা লাত, মানাত ও উযযা সম্পর্কেও পাওয়া যায়। হাদীসে মুশরিকদের এ আকীদাও বর্ণিত হয়েছে যে, লাত ও উযযা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। ফলে তিনি শীতকালটি লাতের কাছে এবং গ্রীষ্মকালটি উযযার কাছে কাটাতেন। سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يَصِفُونَ (আল্লাহর প্রতি তারা যে দোষারোপ করে তা থেকে তিনি মুক্ত ও পবিত্র)।
# আখেরাত অস্বীকৃতি তাদেরকে এতই দায়িত্বহীন, বেপরোয়া ও পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাসে মত্ত করে দিয়েছে যে এখন যে কোন সত্য অস্বীকার করতে তারা কুন্ঠিত হয় না। তাদের কাছে কোন সত্যের কদর নেই। তারা নিজেরা কোন নৈতিক বাঁধন মেনে চলতে প্রস্তুত নয়। তারা যে পথে চলছে সেটি সত্য ও ন্যায়সঙ্গত কিনা এ বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা ও বিচার-বিশ্লেষণ করার কোন পরোয়াই তাদের নেই।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*সকল সৃষ্টি আল্লাহর একাত্মবাদের সাক্ষ্য দেয় : সৃষ্টি, নেয়ামত ও বিশ্ব পরিচালনার বিবরণ সম্বলিত আয়াতগুলাের পর এগুলাের ওপর মন্তব্য করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে এই নেয়ামতসমূহের বিবরণ দেয়া হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যটাই মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। শিরক পরিহার ও তাওহীদের অনুসরণের ওপর জোর দেয়াই ছিলাে আল্লাহর এসব নেয়ামত ও সৃষ্টির বিবরণ দানের উদ্দেশ্য। ‘তবে যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি যারা সৃষ্টি করে না তাদের সমকক্ষ হতে পারে? তােমরা কি স্মরণ করবে না। তােমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা করাে, তবে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না, তিনি দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তোমরা যা কিছু গোপন করাে ও যা কিছু প্রকাশ করাে, তা আল্লাহ তায়ালা জানেন। আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকো, তারা তাে কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই তাে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা মৃত নিষ্প্রাণ। তারা কখন পুনরুত্থিত হবে, তা তারা অনুভবই করে না।’ এটা খুবই সময়ােচিত মন্তব্য। ‘যিনি সষ্টি করেন, তিনি কি যারা সৃষ্টি করে না তাদের সমান?’ এ প্রশ্নের জবাবে মানুষ না বলতে বাধ্য। আসলে এর জবাব ‘না’ ছাড়া আর কিছু হতেও পারে না। কেননা যে সত্ত্বা সমগ্র সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা, কেউ এমন কোনাে সত্ত্বাকে তার সমান গণ্য করতে পারে না, যে ছােটো বা বড়াে এমন কি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। ‘তবে কি তােমরা স্মরণ করবে না?’ বস্তুত ব্যাপরটা এতােই স্পষ্ট ও সুনিশ্চিত যে, তা শুধু স্মরণ করাই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশী কোনাে যুক্তি প্রমাণ দর্শানাে বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার কোনােই প্রয়ােজন নেই। আল্লাহ তায়ালা বহু রকমের নেয়ামতের বিবরণ দিয়েছেন। অতপর এর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা করাে, তবে তা গুণে শেষ করতে পারবে না।’ অর্থাৎ নেয়ামতের শােকর আদায় করা তাে দূরের কথা, তা গুণে শেষ করাও অসম্ভব, আর অধিকাংশ নেয়ামত এমন যে, মানুষ তাে তা জানে না। কেননা এগুলাের সাথে মানুষের আজন্ম লালিত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই এ সব নেয়ামত যখন খােয়া যায়, ঠিক তখন ছাড়া আর কেউ এগুলাের খোঁজ রাখে না। এ হচ্ছে মানুষের দেহ কাঠামাে ও তার ভূমিকা। যখন তার রােগ ব্যাধির দরুণ দেহের কর্মক্ষমতা বিগড়ে যায়, তখন ছাড়া সে কি অনুভব করে যে, এতে কোনাে নেয়ামত আছে? এরূপ অবস্থায় তার অক্ষমতার জন্যে আল্লাহর ক্ষমা এবং দুর্বল মানুষের প্রতি আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার মতাে থাকতে পারে না। ‘আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল।’ স্রষ্টা তার গােপন ও প্রকাশ্য সব সৃষ্টিকেই জানেন। ‘তােমরা যা কিছু প্রকাশ করাে ও যা কিছু গােপন করাে, তা আল্লাহ তায়ালা জানেন। কাজেই যে সমস্ত তথাকথিত উপাস্য কিছুই সৃষ্টি করে না এবং কিছুই জানে না, তাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করা কিভাবে সমীচীন হতে পারে? আসলে যারা তাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করে, তারা মৃত এবং তাদের বেঁচে থাকার কোনাে যােগ্যতাই নেই। তাই তাদের কোনাে চেতনাও নেই, ‘যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের উপাসনা করে, তারা…. মৃত ও নির্জীব, কখনো তারা পুনরুত্থিত হবে, তাও তারা জানে না…’ এখানে কেয়ামত ও তার সময়কালের দিকে ইংগিত দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হচ্ছে যে, যিনি স্রষ্টা, তাঁর অবশ্যই তার সৃষ্টির পুনরুত্থানের সময় জানা দরকার। কেননা পুনরুত্থান হচ্ছে সৃষ্টিরই পূর্ণতা। এই পুনরুত্থানের মাধ্যমেই সকল প্রাণী তাদের কর্মফল লাভ করে। সুতরাং যে সকল উপাস্য জানে না কখন তার উপাসকদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে, সে সব উপাস্য উপাসনা লাভেরই অযােগ্য। আসলে তারা উপহাসের পাত্র। কেননা স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন। আর তা যখন পারেন, তখন কখন পুনরুজ্জীবিত করবেন, তাও তার অবশ্যই জানা থাকবে।
#
সংক্ষিপ্ত আলোচনা (২২-৫০) : পূর্ববর্তী অধ্যায়ে বা পূর্বে আমরা দেখেছি যে স্রষ্টার নিদর্শন হলাে তাঁর সৃষ্টি, তার বান্দাদেরকে দেয়া তার নেয়ামতসমূহ এবং গােপন ও প্রকাশ্য সব কিছু সম্পর্কে তার যথাযথ জ্ঞান। পক্ষান্তরে মিথ্যা খােদায়ীর দাবীদার যারা, তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি। তারা কিছুই জানে না, বরং তারা মৃত ও বেঁচে থাকার অযোগ্য। তারা এও জানে না যে, তাদের উপাসকদেরকে কর্মফল দেয়ার জন্যে কখন পুনরুত্থিত করা হবে। তারা যে উপাসনা পাওয়ার অযােগ্য, এটা তার অকাট্য প্রমাণ। এটা গোটা শিরক মতবাদের বাতিল হওয়ারও অকাট্য প্রমাণ। এই সূরায় তাওহীদ ও আখেরাত সংক্রান্ত যে আলােচনা রয়েছে, এটা তার প্রথমাংশ। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আমরা যেখানে আলােচনা শেষ করেছি, এখানে সেখান থেকেই তা পুনরায় শুরু করছি। এখানে আমরা একটা নতুন অধ্যায় শুরু করছি, যার প্রথম আলােচ্য সূচী হলাে আল্লাহর একত্ব বা তাওহীদ। আখেরাতে যারা বিশ্বাস করে না, এখানে তাদের অবিশ্বাসের কারণ দর্শানাে হয়েছে এই যে, তাদের মনই বিশ্বাস প্রবণ। অবিশ্বাস ও অস্বীকৃতি তাদের একটা মজ্জাগত স্বভাব, যা তাদেরকে আল্লাহর সুস্পষ্ট ও নিদর্শনাবলীকেও মেনে নিতে বাধা দেয়। তাছাড়া তারা অহংকারীও। অহংকার তাদেরকে বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ করা থেকে বিরত রাখে। এ অধ্যায়ের সমাপ্তি টানা হয়েছে একটা উদ্বুদ্ধকর দৃশ্য তুলে ধরার মধ্য দিয়ে। দৃশ্যটা হলাে সারা পৃথিবীর সমস্ত ছায়াগুলাে, আকাশ ও পৃথিবীর সকল প্রাণী এবং ফেরেশতারা সম্পূর্ণ অহংকারমুক্তভাবে, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে এবং একেবারেই নির্বিবাদে আল্লাহর আদেশের অনুগত হয়ে সিজদা রত। অধ্যায়ের শেষভাগের এই বিনয়াবনত ও অনুগত দৃশ্যের ঠিক বিপরীতে অবস্থান করছে অধ্যায়ের প্রথমভাগে আলােচিত অহংকারী বেঈমানদের দৃশ্য। সূচনা ও সমাপ্তির মাঝখানের আয়াতগুলোতে আলােচিত হয়েছে ওই ও কোরআনকে অস্বীকারকারী ওই সব অহংকারী কাফেরের বক্তব্য। তারা বলতাে যে, কোরআন ও ওহী আদিম যুগের মানুষের কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করা ও আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেননি তাকে হারাম করার কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলতাে যে, তাদের এই সব অন্যায় কাজই আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন। তারা এ কথাও কসম খেয়ে খেয়ে বলতাে যে, আল্লাহ তায়ালা কখনাে মরা মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। তাদের এসব উক্তির জবাব দেয়া হয়েছে এ অধ্যায়ে। এতে তাদের মত্যুকালীন অবস্থা ও মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন পরবর্তী অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যখন তারা নিজেদের উচ্চারিত ভিত্তিহীন কথাগুলাে অস্বীকার করবে। এ ছাড়া অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত কাফেরদের কিছু কিছু ঘটনাও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আরবের তৎকালীন মােশরেকদেরকে ভয় দেখানাে হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা অতীতের খােদাদ্রোহীদের মতো তাদেরকেও রাত বা দিনের যে কোনাে মুহূর্তে তাদের অজান্তে, দেশে দেশে ভ্রমণ করার সময়, অথবা তাদের আযাবের আশংকা বা অপেক্ষা করার সময়ে আকস্মিকভাবে আযাবে আক্রান্ত করতে পারেন। এর পাশাপাশি পরহেযগার মােমেনদের উক্তি এবং মৃত্যুকালে ও কেয়ামতের দিন তাদের জন্যে যে উত্তম প্রতিদান নির্ধারিত রয়েছে, তাও আলােচিত হয়েছে, সর্বশেষে দেখানাে হয়েছে আকাশ ও পৃথিবীতে ফেরেশতা, ছায়া ও প্রাণীসমূহের সবিনয় সেজদার দৃশ্য।
#.তােমাদের ইলাহ একজন ইলাহ। যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের মন অবিশ্বাসী এবং তারা অহংকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের গােপন ও প্রকাশ্য সব তৎপরতাই জানেন। তিনি অহংকারীদের ভালােবাসেন না।’ এখানে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ও পরকাল বিশ্বাসকে একত্রিত করা হয়েছে। বরঞ্চ এর একটিকে অপরটির অস্তিত্বের প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ এক আল্লাহর এবাদত পরকাল বিশ্বাসের সাথে ওৎপ্রােতভাবে জড়িত। কেননা আখেরাতের নিশ্চয়তা থাকা এক আল্লাহর বিজ্ঞতা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে ও বিচক্ষণতারই পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করে এবং কর্মফল দানের মধ্য দিয়ে তার ‘তােমাদের ইলাহ একজন ইলাহ মাত্র।’ বস্তুত এ সূরায় ইতিপূর্বে আল্লাহর সৃষ্টি, নেয়ামত ও জ্ঞান সংক্রান্ত যতােগুলাে আয়াত অতিবাহিত হয়েছে, তার সবই এই মহাসত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং সুস্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ প্রাকৃতিক নিয়মকানুন এবং তার পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযােগিতার মধ্যে নিহিত রয়েছে, যেমন ইতিপূর্বে আলােচিত হয়েছে। যারা এই মহাসত্যকে মানে না এবং আল্লাহর একত্ব, বিজ্ঞতা ও সুবিচারে ঈমান না আনার একটা অংশ হিসাবে আখেরাতেও ঈমান আনে না, তাদের কোনাে যুক্তি প্রমাণ, সাক্ষ্য ও নিদর্শনের অভাব নেই। এর আসল কারণ তাদের স্বভাব ও সত্ত্বার অভ্যন্তরেই নিহিত। তাদের মনই ঈমান বিমূখ । আল্লাহর নিদর্শনাবলী দেখেও তারা তা স্বীকার করতে চায় না। তারা অহংকারীও। তাই তারা অকাট্য সাক্ষ্য প্রমাণের কাছে নতিস্বীকার করে না এবং আল্লাহ ও রসূলের কাছে আত্মসমর্পণ করে না। কাজেই তাদের ঈমান আনার আসল কারণ তাদের স্বভাবগত ও মজ্জাগত। তাদের ব্যাধি তাদের অন্তরে বদ্ধমূল। তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা তাদের এই স্বভাব ও ব্যাধির কথা জানেন। তিনি তাদের গােপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই অবগত। তার জ্ঞান সমস্ত সন্দেহ ও সংশয়ের উর্ধে। তিনি তাদের ওই সব কু-স্বভাব ও ব্যাধি অপছন্দ করেন। ‘তিনি অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।’ কেননা অহংকারী মন কখনাে কোনাে যুক্তি মানে না এবং আত্মসমর্পণ করে না। কাজেই তাদের অহংকারের কারণেই তারা আল্লাহর কাছে ঘুণিত। আর এই অহংকারের কথা তিনি জানেন। কারণ তিনি তাদের আসল অবস্থা জানেন। গােপন ও প্রকাশ্য সবই জানেন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন :-
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনিই একমাত্র সত্য মাবুদ। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই। তিনি এক, একক, অংশী বিহীন এবং অভাবমুক্ত। কাফিরদের অন্তর ভাল কথা অস্বীকারকারী। তারা সত্য কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। এক আল্লাহর যিক্র শুনে তাদের অন্তর ম্লান হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্যদের যিক্র শুনে তাদের অন্তর খুলে যায়। তারা মহান আল্লাহর ইবাদত থেকে অহংকার প্রকাশ করে। তাদের অন্তরে ঈমানও নেই এবং তারা ইবাদতে অভ্যস্তও নয়। এ সব লোক অত্যন্ত লাঞ্ছিত ভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক গোপনীয় ও প্রকাশ্য কথা সম্যক অবগত। প্রত্যেক আমলের উপর তিনি পুরস্কার অথবা শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি অহংকারীদের ভালবাসেন না।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 21-23
أَمْواتٌ غَيْرُ أَحْيَاء
Dead, not alive,
أَمْواتٌ غَيْرُ أَحْيَاء
(They are) dead, not alive,
means, they are inanimate and lifeless, they do not hear, see, or think.
وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
and they know not when they will be resurrected.
meaning, they do not know when the Hour will come, so how can anyone hope for any benefit or reward from these idols! They should hope for it from the One Who knows all things and is the Creator of all things.
None is to be worshipped except Allah
Allah tells:
إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ
Your god is one God.
Allah tells that there is none to be worshipped besides Him, the One, the Unique, the Lone, the Self-Sufficient.
فَالَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِالاخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌ
But for those who believe not in the Hereafter, their hearts are in denial,
and He tells that the hearts of the disbelievers deny that and are astonished by that:
أَجَعَلَ الاٌّلِهَةَ إِلَـهاً وَحِداً إِنَّ هَـذَا لَشَىْءٌ عُجَابٌ
“Has he made the gods (all) into One God! Verily, this is a curious thing!” (38:5)
وَإِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِالاٌّخِرَةِ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
And when Allah alone is mentioned, the hearts of those who do not believe in the Hereafter are filled with disgust, and when those besides Him are mentioned, behold, they rejoice! (39:45)
وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ
and they are proud.
meaning they are too proud to worship Allah, and their hearts reject the idea of singling Him out, as Allah says:
إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِى سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَخِرِينَ
Verily! Those who scorn My worship they will surely enter Hell in humiliation! (40:60)
So here, Allah says.
لَا جَرَمَ
Certainly,
meaning truly,
أَنَّ اللّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ
Allah knows what they conceal and what they reveal.
meaning He will requite them for that in full.
إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ
Truly, He does not like the proud.