أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 795)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
২৪-২৫ নং আয়াত:-
[ قَالُوۡۤا اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۲۴﴾
উত্তরে তারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা।’
They say, “Legends of the former peoples,”]
www.motaher21.net
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ مَّا ذَاۤ اَنۡزَلَ رَبُّکُمۡ ۙ قَالُوۡۤا اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۲۴﴾
যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছেন?’ উত্তরে তারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা।
And when it is said to them, “What has your Lord sent down?” They say, “Legends of the former peoples,”
لِیَحۡمِلُوۡۤا اَوۡزَارَہُمۡ کَامِلَۃً یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ۙ وَ مِنۡ اَوۡزَارِ الَّذِیۡنَ یُضِلُّوۡنَہُمۡ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ اَلَا سَآءَ مَا یَزِرُوۡنَ ﴿٪۲۵﴾
ফলে কিয়ামত দিবসে তারা বহন করবে তাদের পাপভার পূর্ণমাত্রায় এবং তাদেরও পাপভার যাদেরকে তারা অজ্ঞতা হেতু বিভ্রান্ত করেছে। দেখ, তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট।
That they may bear their own burdens in full on the Day of Resurrection and some of the burdens of those whom they misguide without knowledge. Unquestionably, evil is that which they bear.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
২৪-২৫ নং আয়াত:-
[ قَالُوۡۤا اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۲۴﴾
উত্তরে তারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা।’
They say, “Legends of the former peoples,”]
www.motaher21.net
২৪-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ….)
অত্র আয়াতে কাফির-মুশরিকদের চরম মিথ্যা প্রতিপন্নতার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যদি তাদেরকে বলা হয় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর কী নাযিল করা হয়েছে? তারা বলে কিছুই নাযিল করা হয়নি। সে পূর্ববর্তী কিতাবে লিখিত মিথ্যা কাহিনী ব্যক্ত করে। اَسَاطِیْرُ শব্দটি اسطور এর বহুবচন, অর্থ হল পূর্ববর্তীদের কিতাবে লিখিত মিথ্যা ও বাতিল কাহিনী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالُوْآ أَسَاطِيْرُ الْأَوَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰي عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا)
“তারা বলে: ‘এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট পাঠ করা হয়।’’ (সূরা ফুরকান ২৫:৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَإِذَا تُتْلٰي عَلَيْهِمْ اٰيٰتُنَا قَالُوْا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَا۬ءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هٰذَآ لا إِنْ هٰذَآ إِلَّآ أَسَاطِيْرُ الْأَوَّلِيْنَ)
“যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তারা তখন বলে, ‘আমরা তো শ্রবণ করলাম, ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি; এগুলো সেকালের লোকদের উপকথা ছাড়া কিছুই না।’’ (সূরা আনফাল ৮:৩১)
মূলত তারা আল্লাহ তা‘আলার অবতীর্ণ বিধানের প্রতি ঈমান আনয়ন করত না।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: কাফিররা এসব কথা বলে নিজেরা ঈমান আনা থেকে বিরত থাকত এবং অন্যদেরকেও ঈমান আনতে বাধা দিত। তাদের এসব কার্যকলাপের কারণে কিয়ামতের দিন নিজেদের পাপের বোঝা পূর্ণরূপে তো বহন করবেই সেই সাথে যাদেরকে এসব কথা বলে পথভ্রষ্ট করেছে তাদের পাপের বোঝাও বহন করবে। যেহেতু দাওয়াতে তাদের বাধা দেয়াতে এবং তাদের কারণে এসব লোকেরা ঈমান আনতে পারেনি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ ز وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ)
“তারা অবশ্যই নিজেদের পাপের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরও কিছু বোঝা; আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত সে সম্পর্কে কিয়ামাত দিবসে অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৩)
হাদীসে এসেছে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করে তার জন্য সে পরিমাণ প্রতিদান রয়েছে যে পরিমাণ অনুসারী ব্যক্তি পায়, তবে কারো প্রতিদান কম করা হবে না। আর যদি মানুষকে গোমরাহ ও পাপ কাজের দিকে আহ্বান করে তার জন্য সে পরিমাণ পাপ হয় যে পরিমাণ পাপ অনুসারীর হয়, তবে কারো পাপ কমবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৪)
এর দ্বারা বুঝো যায় যে, তারা তাদের অনুসারীদের বোঝা বহন করবে বটে কিন্তু অনুসারীদের বোঝা একটুও হালকা হবে না। আর এটা তাদের জন্য খুবই নিকৃষ্ট ও অপমানকর একটি বিষয়। সুতরাং নিজে অন্যায় করা তো যাবেই না, অন্য কাউকে অন্যায় কাজ করার প্রতি উৎসাহও প্রদান করা যাবে না। বস্তুত সকলকেই খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
(بِغَيْرِ عِلْمٍ) এ কথা প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাওয়াত পৌঁছনোর পর কাফিররা ওজর পেশ করতে পারবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে দীনকে পূর্ণ করে দেয়ার পর অজ্ঞতা বলতে কোন কিছু নেই।
(قَدْ مَكَرَ الَّذِينَ….)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, এ চক্রান্তকারী দ্বারা নমরূদকে বুঝানো হয়েছে। সে একটি বিরাট প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল। জমিনে সর্বপ্রথম সবচেয়ে বড় ঔদ্ধত্যপনা সেই দেখিয়েছিল। তাকে ধ্বংস করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা একটা মশাকে প্রেরণ করেছিলেন, যে তার নাকের ছিদ্র দিয়ে তার মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং চারশ বছর পর্যন্ত তার মস্তিষ্ক চাটতে থাকে। এ সুদীর্ঘ সময়কালে ঐ সময় সে কিছুটা শান্তি লাভ করত যখন তার মস্তকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হত। চারশ বছর পর্যন্ত সে রাজ্য শাসন করেছিল। কেউ বলেছেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য বখতে নসর। তার চক্রান্তও এত কঠিন ছিল যে, মনে হয় যেন তার চক্রান্তে পাহাড় এক স্থান থেকে অন্যস্থানে চলে যাবে।
যেমন সূরা ইবরাহীমে বলা হয়েছে:
(وَقَدْ مَكَرُوْا مَكْرَهُمْ وَعِنْدَ اللّٰهِ مَكْرُهُمْ ط وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُوْلَ مِنْهُ الْجِبَالُ)
“তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর সামনেই ছিল যদিও তাদের চক্রান্ত এমন ছিল, যাতে পর্বত টলে যেত।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৪৬)
কেউ বলেছেন: কাফির-মুশরিকরা যে আল্লাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করে এটা তাদের আমল নষ্ট হওয়ার দৃষ্টান্ত। যেমন নূহ (عليه السلام) বলেছিলেন:
(وَمَكَرُوْا مَكْرًا كُبَّارًا)
“আর তারা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছে।” (সূরা নূহ ৭১:২২)
মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য যত রকম চক্রান্ত করা দরকার সব চক্রান্ত তারা করেছে। যেমন তাদের অনুসারীরা কিয়ামতের দিন বলবে:
(وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُوْنَنَآ أَنْ نَّكْفُرَ بِاللّٰهِ وَنَجْعَلَ لَه۫ٓ أَنْدَادًا ط وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ)
“যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে: প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবা-রাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি, যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৩)
কিন্তু সঠিক কথা হল ঐ সকল জাতির পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করা, যারা নাবীদের মিথ্যা মনে করে। আর শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার আযাবে তারা তাদের ঘরসহ ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন ‘আদ জাতি, লূত সম্প্রদায়, ইত্যাদি।
(بُنْيَانَهُمْ مِّنَ الْقَوَاعِدِ)
অর্থাৎ ইমারতগুলো খুঁটি থেকে আলাদা করে উলটিয়ে ছাদ তাদের ওপর নিপতিত করা হয়েছিল। নমরূদসহ সকল যুগের কাফিরদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এমন শাস্তি দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُه۫ وَمَا كَانُوْا يَعْرِشُوْنَ)
“আর ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করে দিয়েছি।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৩৭)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কেউ মানুষকে সৎ পথ দেখালে, অনুসারী ব্যক্তি সৎ কাজ করে যত নেকী পাবে সে ব্যক্তিও তত নেকী পাবে, কারো নেকীর কোন কমতি হবে না। পক্ষান্তরে কেউ অসৎ পথ দেখালে অনুসারী অসৎ কাজ করলে যে পরিমাণ গুনাহ করবে সে গুনাহ তারও হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখান থেকে ভাষণের মোড় ফিরে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের মোকাবিলায় মক্কার কাফেরদের পক্ষ থেকে যেসব শয়তানী কাজ-কারবার চালানো হচ্ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হচ্ছিল, ঈমান না আনার জন্য যেসব বাহানাবাজী করা হচ্ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি আনা হচ্ছিল, —সবগুলোকে এক একটি করে পর্যালোচনা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে উপদেশ দান, ভয় দেখানো ও নসিয়ত হয়েছে।
# নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের চর্চা যখন চারদিকে হতে লাগলো তখন মক্কার লোকেরা যেখানেই যেতো সেখানেই তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হতো, তোমাদের ওখানে যে ব্যক্তি নবী হয়ে এসেছেন তিনি কি শিক্ষা দেন? কুরআন কোন্ ধরনের কিতাব তার মধ্যে কি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে মক্কার কাফেররা সবসময় এমন সব শব্দ প্রয়োগ করতো যাতে প্রশ্নকারীর মনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম এবং তিনি যে কিতাবটি এনেছেন সে সম্পর্কে কোন না কোন সন্দেহ জাগতো অথবা কমপক্ষে তার মনে নবীর বা তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারে সকল প্রকার আগ্রহ খতম হয়ে যেতো।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তােমাদের প্রভু কী নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে, আদিম মানুষদের কল্পকথা।…'(আয়াত ২৪-২৫) অর্থাৎ ঈমান বিমুখ মনের অধিকারী এসব অহংকারী ব্যক্তি কোনাে যুক্তি তাে মানেই না, রসূলের দাওয়াতে সাড়া তাে দেয়ই না, উপরস্তু অন্য কেউ যখন জিজ্ঞেস করে যে তােমাদের জন্যে কী ওহী নাযিল হয়, তখন স্বাভাবিক ও প্রত্যক্ষ জবাবও দেয় না। স্বাভাবিক ও প্রত্যক্ষ জবাব দিলে তারা কোরআনের কোনাে একটা অংশ উদ্ধৃত করে অথবা তার বক্তব্যের সার সংক্ষেপ যথাযথভাবে শুনিয়ে দিতে পারতো। তারা নিজেরা কোরআনে বিশ্বাসী না হয়েও অন্তত অবিকৃতভাবে তা উদ্ধৃত করে সততা ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারতাে। বরং তারা আসল জবাব না দিয়ে সত্যকে বিকৃত করে বলে, ‘আদিম মানুষদের কল্পকথা।’ ‘আসাতীর’ বলা হয়, ভিত্তিহীন অলীক ও আজগুবী কিচ্ছা-কাহিনীকে। যে কোরআন মানুষের মনমগযকে ব্যাধিমুক্ত ও বিশুদ্ধ করে, যে কোরআন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানব সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক, আচরণ ও চাল চলনকে পরিশুদ্ধ করে, সেই কোরআনকেই তারা এভাবে বিকৃত করে। প্রাচীন যুগের লােকদের যে ইতিহাস কোরআন তুলে ধরে, তার জন্যে তারা কোরআনকে এভাবে পরিচিত করে। এভাবে তাদের দাম্ভিকতা ও ধৃষ্টতা তাদের ঘাড়ে তাদের নিজেদের পাপের বােঝা তাে চাপায়ই, উপরন্তু কোরআনের এরূপ বিকৃত পরিচয় দিয়ে যে নিরীহ অজানা লােকদেরকে কোরআন ও ঈমান থেকে তারা বিপথগামী করে, তাদের পাপেরও একটা অংশ তাদের কাঁধে চাপে। আয়াতে এই পাপরাশিকে ভারী বােঝা আখ্যায়িত করা হয়েছে। আসলে এর চেয়ে নিকৃষ্ট বােঝা আর কিছুই নেই। মালের বােঝা যেমন মানুষের দেহকে ক্লিষ্ট করে, তেমনি এ বােঝা মনকে করে ভারাক্রান্ত। বস্তুগত বােঝা যেমন বহনকারীকে ক্লান্ত ও অবসন্ন করে, এ বােঝাও তেমনি বহনকারীকে করে ক্ষতিগ্রস্ত। বরঞ্চ সত্যি বলতে কি, এ বােঝা আরাে ভয়ংকর ও সর্বনাশা। *রাসূলের বিরুদ্ধে কুরাইশদের প্রচারাভিযান : সুদ্দী থেকে ইবনে আবী হাতেম বর্ণনা করেন যে, একবার মুহাম্মদ(স.)-এর দাওয়াতী কাজকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যে কোরায়শদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রস্তাব রাখে যে, দেখাে, মােহাম্মদ এতাে মিষ্টভাষী যে কেউ তার সাথে কথা বললেই সে তার মাথা বিগড়ে দেয়। সুতরাং তােমরা তােমাদের মধ্য থেকে এমন কিছু বিচক্ষণ বুদ্ধিমান লােক নির্বাচন কর, যাদের বংশ পরিচয় সবাই জানে। তাদেরকে প্রতিদিন অথবা একদিন পর একদিন মক্কার প্রত্যেকটা সড়কে দাঁড় করাও। যে কেউ মুহাম্মদ(স.)-এর সাথে দেখা করতে আসবে, তাকে তারা তার সাথে দেখা করতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেবে। কথামত প্রত্যেক সড়কে মােড়ে মােড়ে কিছু লােক দাড়া করানো হলাে। যখনই কোনাে ব্যক্তি কোনাে গোত্রের প্রতিনিধি হিসাবে মােহাম্মদ কী বলে, সে খোঁজ নিতে আসে, অমনি তাদের একজন তাকে বলে, শুনুন! আমি অমুকের ছেলে অমুক। মােহাম্মদ সম্পর্কে আমি ভালো করে জানি যে, সে একজন মিথ্যাবাদী লােক। তার কথা নির্বোধ, গােলাম ও অপদার্থ লােকেরা ছাড়া আর কেউ শােনে না। তার গােত্রের প্রবীণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও তাকে ত্যাগ করেছে। এ কথা শুনে আগন্তুক চলে যেতাে। এ প্রসংগেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তােমাদের প্রতিপালক কী নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে যে, ‘আদিম মানুষদের কল্পকথা।’ আগন্তুক যদি এমন নাছােড় বান্দা গােছের লােক, যাকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াতের পথে পরিচালিত করতে চান, তবে সে কোরায়শদের ওই কথা শােনার পর মনে মনে বলে যে, আমি যদি একদিনের পথ এসেও মােহাম্মদের সাথে দেখা না করি, সে কী বলে তার খোঁজ না নিয়ে এবং তার দাওয়াতের কোনাে বিশদ বিবরণ না নিয়ে গােত্রের কাছে ফিরে যাই, তাহলে আমি আমার গোত্রের অতীব নিকৃষ্ট প্রতিনিধি বলে সাব্যস্ত হবে। এরপর সে মক্কায় প্রবেশ করতাে, মােমেনদের সাথে দেখা করতো এবং তাদের কাছে মুহাম্মদ(স.)-এর বক্তব্য কী তা জানতে চাইতাে। তখন মােমেনরা তার সম্পর্কে ভালাে কথা বলতাে। এভাবে ইসলামী দাওয়াতের বিরুদ্ধে কুরাইশদের বিভিন্ন ধরনের সুপরিকল্পিত প্রচারাভিযান চালাতাে। এ ধরনের প্রচারাভিযান তাদের মতাে আরাে বহু লােক চালিয়ে থাকে সর্বযুগে ও সর্বত্র। তারাও এক রকম দাম্ভিক এবং সত্য ও যুক্তির কোনাে ধার ধারে না। কোরায়শদের মধ্যকার দাম্ভিকেরা প্রথম প্রত্যাখ্যানকারীও ছিলাে না, প্রথম চক্রান্তকারীও ছিলাে না। আয়াতে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের পূর্ববর্তী চক্রান্তকারীদের কেমন পরিণতি হয়েছে, এবং কী পরিণতি কেয়ামতের দিন হবে। এমনকি মৃত্যুর পর থেকে আখেরাতে কর্মফল লাভ পর্যন্ত তাদের কি ধরনের পরিণতি ভােগ করতে হবে। সেটাও জানানাে হয়েছে। কোরআনের রীতি মােতাবেক এসব কিছু ছবির আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৪-২৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলেন, এই মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের যখন বলা হয়ঃ “আল্লাহর কিতাবে কি অবতীর্ণ করা হয়েছে?” তখন তারা প্রকৃত উত্তর দান থেকে সরে গিয়ে হুট করে বলে ফেলেঃ ‘এতে পূর্ববর্তীদের কাহিনী ছাড়া আর কিছুই অবতীর্ণ করা হয় নাই। ঐ গুলিই লিখে নেয়া হয়েছে এবং সকালসন্ধ্যায় বার বার পাঠ করা হচ্ছে। সুতরাং তারা আল্লাহর রাসূলের (সঃ) উপর মিথ্যা আরোপ করছে। কখনো তারা একটা কথা বলে, আবার কখনো তার বিপরীত কথা বলে। প্রকৃত পক্ষে তারা একটা কথার উপর স্থির থাকতে পারে না। আর তাদের সমস্ত উক্তি বাজে ও ভিত্তিহীন হওয়ার এটাই বড় প্রমাণ। যারাই এভাবে হক থেকে সরে যায় তারা এভাবেই বিভ্রান্ত হয়ে ফিরে। কখনো তারা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) যাদুকর বলে, কখনো বলে-কবি, কখনো বলেভবিষ্যদ্বক্তা, আবার কখনো বলে-পাগল। অতঃপর তাদের বৃদ্ধগুরু ওয়ালীদ ইবনু মুগীরা বলেঃ “তোমরা সবাই মিলিতভাবে তার কথাকে যাদু বল।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদেরকে এই পথে এজন্যেই চালিত করেছি যে, যেন তারা তাদের নিজেদের পূর্ণপাপসহ তাদের অনুসারীদের পাপও নিজেদের স্কন্ধে চাপিয়ে নেয়। সুতরাং তাদের ঐ উক্তির ফল হবে অতি মারাত্মক। যেমন হাদীসে এসেছেঃ যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে আহ্বান করে। সে ওটা মান্যকারীদের সমপরিমাণ পূণ্য লাভ করে, কিন্তু তাদের পুণ্যের একটুও কম হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অসৎ কাজের দিকে আহ্বান করে সে ওটা পালনকারীদের সমপরিমাণ পাপের অধিকারী এবং তাদের পাপ মোটেই কম করা হয় না। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এবং অবশ্যই তারা নিজেদের পাপের সাথে সাথে আরো পাপের বোঝা বহন করবে এবং তাদের মিথ্যা আরোপের কারণে কিয়ামতের দিন অবশ্যই তারা জিজ্ঞাসিত হবে।” (২৯:১৩) সুতরাং তারা তাদের অনুসারীদের পাপের বোঝা বহন করবে বটে, কিন্তু অনুসারীদের পাপের বোঝা মোটেই হালকা করা হবে না (বরং তাদেরকে তাদের পাপের বোঝা বহন করতেই হবে)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 24-25
The Destruction of the Disbelievers and Intensification of their Punishment for rejecting the Revelation
Allah says:
وَإِذَا قِيلَ لَهُم
And when it is said to them:
Allah informs us that when it is said to those liars,
مَّاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ قَالُواْ
“What is it that your Lord has revealed!” They say,
not wanting to answer,
أَسَاطِيرُ الَاوَّلِينَ
“Tales of the men of old!”
meaning nothing is revealed to him, what he is reciting to us is just tales of the men of old, taken from the previous Books.
As Allah says,
وَقَالُواْ أَسَـطِيرُ الاٌّوَّلِينَ اكْتَتَبَهَا فَهِىَ تُمْلَى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَأَصِيلً
And they say:”Tales of the ancients, which he has written down, and they are dictated to him morning and afternoon.” (25:5)
i.e., they tell lies against the Messenger and say things contradicting one another, but all of it is false, as Allah says,
انْظُرْ كَيْفَ ضَرَبُواْ لَكَ الاٌّمْثَالَ فَضَلُّواْ فَلَ يَسْتَطِيعْونَ سَبِيلً
Look at the parables they make of you, so they have gone astray, and they are not able to find the right way. (17:48)
Once they have gone beyond the bounds of the truth, whatever they say will be in error. They used to say that he (the Prophet) was a sorcerer, a poet, a soothsayer, or a madman, then they settled on an idea proposed by their leader, an individual known as Al-Walid bin Al-Mughirah Al-Makhzumi, when:
إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ
فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ
ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ
ثُمَّ نَظَرَ
ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ
ثُمَّ أَدْبَرَ وَاسْتَكْبَرَ
فَقَالَ إِنْ هَـذَا إِلاَّ سِحْرٌ يُوْثَرُ
He thought, and plotted. So let him be cursed, how he plotted! And once more let him be cursed, how he plotted! Then he thought. Then he frowned and he looked in a bad tempered way; then he turned back, and was proud. Then he said:”This is nothing but the magic of old.” (74:18-24)
meaning something that had been transmitted and passed down. So they dispersed having agreed on this opinion, may Allah punish them.
As Allah says.
لِيَحْمِلُواْ أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ
They will bear their own burdens in full on the Day of Resurrection, and also of the burdens of those whom they misled without knowledge.
meaning, `We decreed that they would say that, so they will carry the burden of their own sins and some of the burden of those who followed them and agreed with them,’ i.e., they will be held guilty not only for going astray themselves, but also for tempting others and having them follow them.
As it says in a Hadith:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الاَْجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنِ اتَّبَعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْيًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الاِْثْمِ مِثْلُ اثَامِ مَنِ اتَّبَعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ اثَامِهِمْ شَيْيًا
Whoever invites people to guidance, he will receive a reward like that of those who follow him, without diminishing their reward in the least. And whoever invites people to misguidance, he will bear a burden of sin like that of those who follow him, without diminishing their burden in the least.
Allah says;
وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالاً مَّعَ أَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْـَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ عَمَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ
They shall bear their own loads, and other loads besides their own; and they shall be questioned about their false allegations on the Day of Resurrection. (29:13)
Al-Awfi reported from Ibn Abbas that it is like the Ayah:
لِيَحْمِلُواْ أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَـمَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ
That they may bear their own burdens in full on the Day of Resurrection, and also of the burdens of those whom they misled without knowledge. (16:25)
Allah says,
وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالاً مَّعَ أَثْقَالِهِمْ
They shall bear their own loads, and other loads besides their own. (29:13)
Mujahid said:
“They will bear the burden of their own sins, and they will bear the sins of those who obeyed them, but that will not lessen the punishment of those who obeyed them at all.”
And Allah says here;
أَلَا سَاء مَا يَزِرُونَ
Evil indeed is that which they shall bear.