(Book# 799) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ৩৫-৩৭ নং আয়াত:- [ وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ আর যারা শির্ক করেছে, And those who worshipped others with Allah said:] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 799)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৩৫-৩৭ নং আয়াত:-
[ وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ
আর যারা শির্ক করেছে,
And those who worshipped others with Allah said:]
www.motaher21.net
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ مَا عَبَدۡنَا مِنۡ دُوۡنِہٖ مِنۡ شَیۡءٍ نَّحۡنُ وَ لَاۤ اٰبَآؤُنَا وَ لَا حَرَّمۡنَا مِنۡ دُوۡنِہٖ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ کَذٰلِکَ فَعَلَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ ۚ فَہَلۡ عَلَی الرُّسُلِ اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۳۵﴾
আর যারা শির্ক করেছে, তারা বলল, আল্লাহ্‌ ইচ্ছে করলে আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁকে ছাড়া অন্য কোন কিছুর ইবাদাত করতাম না । আর কোন কিছু তাঁকে ছাড়িয়ে হারামও ঘোষণা করতাম না । তাদের পূর্ববর্তীরা এরূপ করত। রাসূলদের কর্তব্য কি শুধু সুস্পষ্ট বাণী পৌছে দেয়া নয়?
And those who associate others with Allah say, “If Allah had willed, we would not have worshipped anything other than Him, neither we nor our fathers, nor would we have forbidden anything through other than Him.” Thus did those do before them. So is there upon the messengers except [the duty of] clear notification?
وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ ہَدَی اللّٰہُ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡہِ الضَّلٰلَۃُ ؕ فَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۳۶﴾
অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও তাগূত থেকে দূরে থাক। অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তাদের কতকের উপর ভ্রষ্টতা অবধারিত হয়। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে দেখ, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে, তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
And We certainly sent into every nation a messenger, [saying], “Worship Allah and avoid Taghut.” And among them were those whom Allah guided, and among them were those upon whom error was [deservedly] decreed. So proceed through the earth and observe how was the end of the deniers.
اِنۡ تَحۡرِصۡ عَلٰی ہُدٰىہُمۡ فَاِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِیۡ مَنۡ یُّضِلُّ وَ مَا لَہُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ ﴿۳۷﴾
তুমি তাদের পথপ্রাপ্তির ব্যাপারে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন তাকে নিশ্চয় তিনি সৎপথে পরিচালিত করবেন না এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই।
[Even] if you should strive for their guidance, [O Muhammad], indeed, Allah does not guide those He sends astray, and they will have no helpers.

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৩৫-৩৭ নং আয়াত:-
[ وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ
আর যারা শির্ক করেছে,
And those who worshipped others with Allah said:]
www.motaher21.net

৩৫-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا….)

উক্ত আয়াতে মুশরিকদের একটি ভুল ধারণা দূর করছেন। মুশরিকরা বলে: আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করি এবং শিরক করি, আমাদের বাপ-দাদারাও করেছিল এবং তাঁরই ইচ্ছায় অনেক জন্তু হারাম করে নিয়েছি। যেমন বাহিরা, সায়েবা, ওসিলা, হাম, ইত্যাদি। (এগুলোর পরিচয় সূরা মায়িদার ১০৩ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে) আামাদের এসকল কর্মে যদি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা না থাকত তাহলে তিনি আমাদেরকে এসব কাজ করতে সামর্থ্য দিতেন না এবং বাঁধা দিতেন। মুশরিকদের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকে বলে থাকে: আমরা যে পাপ কাজ করি তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় করি, আল্লাহ ইচ্ছা না করলে করতে পারতাম না। তাদের এসব ভুল ধারণার জবাব দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তাদের পূর্বের লোকেরা এসব বলেছিল, কিন্তু শাস্তি থেকে রেহাই পায়নি। এসব কাজের প্রতি যদি আল্লাহর ইচ্ছা থাকত তাহলে আল্লাহ কি শাস্তি দিতেন? কখনো না, তিনি যে কাজ ইচ্ছা করেন বা ভালবাসেন সে কাজের জন্য কাউকে শাস্তি দেবেন না, বরং তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।

আয়াতের পরের অংশ আরো সুস্পষ্ট করে দিয়েছে; তিনি যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করে ঐ জাতিকে শিরক থেকে বাধা প্রদান করেছেন। যদি শিরক পছন্দ করতেন তাহলে রাসূল প্রেরণ করে বাধা দিতেন না। বরং আরো উৎসাহ দিতেন। সুতরাং তাদের দাবী মিথ্যা ও ভ্রান্ত। আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন তা দু’ প্রকার:

১. الإرادة الكونية

জাগতিক বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা, অর্থাৎ দুনিয়াতে যা কিছু হয় সব আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় হয়। যা তিনি ভালবাসেন তা এবং যা ভালবাসেন না তাও এ ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত।

২. الإرادة الشرعية

শরয়ী বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা। যা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন তা এ ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কুফর, শিরক, পাপ কাজ ভালবাসেন না। তাই এগুলো আল্লাহ তা‘আলার এ ইচ্ছায় হয় না, ফলে তিনি এসব কাজের জন্য মানুষকে শাস্তি দেবেন।

(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ….)

এখানে মূলত আল্লাহ তা‘আলার একত্বের কথা বলা হয়েছে। সকল ভ্রান্ত মা‘বূদদেরকে ছেড়ে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশ বাস্তবায়ন করার জন্যই আল্লাহ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট যুগে যুগে বহু নাবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। সকলেই দাওয়াত দিয়েছেন এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার, সকল বাতিল মা‘বূদকে বর্জন করার।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ إِلَّا نُوْحِيْٓ إِلَيْهِ أَنَّه۫ لَآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنَا فَاعْبُدُوْنِ)

“আমি তোমার পূর্বে যখন কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তার প্রতি এ ওয়াহী করেছি, ‘আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই; সুতরাং আমারই ইবাদত কর‎।’’ (সূরা আম্বিয়া ২১:২৫)

তাগুতের তাফসীর সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুতরাং, যারা নাবীদের দেখানো পথ অনুযায়ী তাগুতকে বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করেছে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সঠিক পথের হিদায়াত দান করেছেন। আর যারা নাবীদের মত চলেনি তাদের ওপর পথভ্রষ্টতার বাণী অবধারিত হয়ে গেছে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كٰفِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌ)

“তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ হয় কাফির এবং কেউ হয় মু’মিন।” (সূরা তাগাবুন ৬৪:২)

সুতরাং প্রত্যেকের উচিত রাসূলগণ যে পথের দিকে আহ্বান করেছেন সে পথেরই অনুসরণ করা। কেননা সেটাই হল সঠিক পথ আর বাকিগুলো হল শয়তানের পথ।

(إِنْ تَحْرِصْ عَلَي…)

এখানে বলা হচ্ছে যে, হিদায়াত দান করার একমাত্র মালিক আল্লাহ। রাসূল যতই চেষ্টা ও আশা করুক না কেন আল্লাহ যদি হিদায়াত দান না করেন তাহলে রাসূল কোন মানুষকেই হিদায়াত দান করতে পারবেন না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন। এ প্রকার হিাদয়াত হল (هداية التوفيق) হিদায়াতুত তাওফীক: সরল সঠিক পথের দিশা দান করতঃ তার ওপর মজবুত ও অটুট থাকার তাওফীক দান করা। এ প্রকার হিদায়াত শুধুমাত্র আল্লাহর হাতে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَا۬ءُ)

“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন।” (সূরা ক্বাসাস ২৮:৫৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(مَنْ يُّضْلِلِ اللّٰهُ فَلَا هَادِيَ لَه۫ ط وَيَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)

“আল্লাহ যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন তাদের কোন পথপ্রদর্শক নেই, আর তাদেরকে তিনি তাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৮৬)

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করে ভাল-মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে দেয়ার পর তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন। সে চাইলে সৎ পথ গ্রহণ করতে পারে, আবার অসৎ পথও গ্রহণ করতে পারে। তবে তিনি উভয় পথের ফলাফলও জানিয়ে দিয়েছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষ কুফরী, অন্যায় ও পাপ কাজ করুক এটা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন না।
২. প্রত্যেক যুগে নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দিয়ে।
৩. হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাই শুধু তাঁর কাছে হিদায়াত চাইতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন
বলেছেন:-
# সূরা আন’আমের ১৪৮-১৪৯ আয়াতেও মুশরিকদের এ যুক্তি উত্থাপন করে এর জবাব দেয়া হয়েছে।
সুরা: আল-আনয়াম
আয়াত নং :-148

سَیَقُوْلُ الَّذِیْنَ اَشْرَكُوْا لَوْ شَآءَ اللّٰهُ مَاۤ اَشْرَكْنَا وَ لَاۤ اٰبَآؤُنَا وَ لَا حَرَّمْنَا مِنْ شَیْءٍ١ؕ كَذٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتّٰى ذَاقُوْا بَاْسَنَا١ؕ قُلْ هَلْ عِنْدَكُمْ مِّنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوْهُ لَنَا١ؕ اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَخْرُصُوْنَ

এ মুশরিকরা (তোমাদের এসব কথার জবাবে) নিশ্চয়ই বলবে, “যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে আমরা শিরকও করতাম না, আমাদের বাপ-দাদারাও শিরক করতো না। আর আমরা কোন জিনিসকে হারামও গণ্য করতাম না।” এ ধরনের উদ্ভট কথা তৈরী করে করে এদের পূর্ববর্তী লোকেরাও সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এভাবে তারা অবশেষে আমার আযাবের স্বাদ গ্রহণ করেছে। এদেরকে বলে দাও, “তোমাদের কাছে কোন জ্ঞান আছে কি? থাকলে আমার কাছে পেশ করো। তোমরা তো নিছক অনুমানের ওপর চলছো এবং শুধুমাত্র ধারণা ও আন্দাজ করা ছাড়া তোমাদের কাছে আর কিছুই নেই।”

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

# অপরাধী ও অসৎলোকেরা নিজেদের অপরাধ ও অসৎকাজের স্বপক্ষে হামেশা যে ধরনের ওজর পেশ করে এসেছে তারাও সে একই ওযর পেশ করতে থাকবে। তারা বলবে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ‌ চান আমরা শির্‌ক করি এবং যে জিনিসগুলোকে আমরা হারাম করে নিয়েছি সেগুলো আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাক। নয়তো আল্লাহ‌ যদি চাইতেন আমরা এমনটি না করি তাহলে এ ধরনের কাজ করা আমাদের পক্ষে কেমন করে সম্ভবপর হতো? যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এসব কিছু করছি তাই আমরা ঠিকই করছি। কাজেই এ ব্যাপারে কোন দোষ হয়ে থাকলে সেজন্য আমরা নই, আল্লাহ‌ দায়ী। আর আমরা যা কিছু করছি এমনটি করতে আমরা বাধ্য। কারণ এছাড়া অন্য কিছু করা আমাদের সাধ্যের বাইরে।

ফী জিলালিল কুরআন:

*মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ  :  এ পর্যন্ত তাদের সকল অপ যুক্তি ও তালবাহানার জাল ছিন্ন করে দেয়ার পর তাদের সর্বশেষ ওজুহাতটি খন্ডন করার জন্যে আল্লাহ বলেন, “মোশরেকরা বলবে, তারা যে শেরক ও গোমরাহীতে লিপ্ত, সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে নয় বরং জবরদস্তিমুূলক। আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন, তবে তার অজেয় শক্তি দ্বারা তাদেরকে তা থেকে বিরত রাখতে পারতেন । (আয়াত ১৪৮) মানুষ তার কর্মকান্ডে স্বাধীন, না আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা, সে সম্পর্কে অনেক বিতর্ক রয়েছে। আহলে সুন্নাত, মোতাযেলা, মোজাকেরা ও মুরজিয়া প্রভৃতি গোষ্ঠীর মধ্যে এ বিতর্ক ইসলামী চিন্তাধারার ইতিহাসে সুপ্রসিদ্ধ । এই বিতর্কের মধ্যে গ্রীক দর্শন,গ্রীক যুক্তিবিদ্যা এবং খৃষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের অনুপ্রবেশ ঘটায় তা এমন জটিল আকার ধারণ করেছে যে, প্রকৃত ইসলামী যুক্তিবিদ্যার কাছে তা একেবারেই অসংলগ্ন ও অপরিচিত ৷ সরাসরি কোরআনের সহজ সরল পদ্ধতি যদি অনুসৃত হতো, তা হলে এ বিতর্ক এতো জটিল আকার ধারণ করতো না এবং তা এতো ঘোরালো হতো না। এখানে আমরা মোশরেকদের এই উক্তিটা এবং কোরআন তার যে জবাব দিয়েছে তা যদি লক্ষ্য করি, তবে দেখতে পাই যে, ব্যাপারটা কতো সহজ ও সরল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মোশরেকরা বলবে, আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন, তবে আমরাও মোশরেক হতাম না, আমাদের পূর্বপুরুষরাও হতো না এবং আমরা কোনো কিছু নিষিদ্ধও করতাম না ।’ অর্থাৎ তাদের এই অপকর্মগুলোর জন্যে তারা আল্লাহর ইচ্ছাকে দায়ী করেছে। আল্লাহ চাইলে তারা এসব করতো না। কোরআন কিভাবে এর জবাব দিয়েছে দেখা যাক। কোরআন জবাব দিয়েছে যে, তারা অতীতের লোকদের মতোই নবীর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অতীতে যারাই এরূপ আচরণ করেছে, তারা আল্লাহর আযাবের স্বাদ উপভোগ করেছে। আর প্রত্যেক প্রত্যাখ্যানকারীর জন্যেই আল্লাহর আযাব নির্ধারিত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের পূর্ববর্তীরাও এভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শেষ পর্যন্ত আমার শাস্তির স্বাদ পেয়েছে।’ এভাবে এমন একটা ঝাকুনি দেয়া হয়েছে যে, যা চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে, ‘ উদাসীনতা দূর করে দিতে পারে এবং শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আয়াতের দ্বিতীয় অংশে চিন্তা পদ্ধতি ও দৃষ্টিভংগির বিশুদ্ধীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির প্রতি কিছু আদেশ ও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন । এগুলোকে সুনিশ্চিতভাবে জানা তাদের পক্ষে সহজ-সাধ্য ৷ কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাটা অদৃশ্য ব্যাপার। তা জানার কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই । সুতরাং মোশরেকরা কী করে তা জানলো? আর জানেনি যখন, তখন কি করে তাঁকে নিজেদের কাজের জন্যে দায়ী করলো? এ কথাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “বলো, তোমাদের কাছে কি কোনো সুনিশ্চিত তথ্য আছে, যা আমাদের কাছে পেশ করতে পারো? তোমরা তো কেবল ধারণারই অনুসরণ করে থাক এবং তোমরা কেবল অনুমানই করে থাকো ।’ (আয়াত ১৪৮) অর্থাৎ আল্লাহর কিছু আদেশ নিষেধ রয়েছে, যা অকাট্যভাবে জানা যায়। সেই সব অকাট্য ও সুনিশ্চিত তথ্য ত্যাগ করে অনুমানের পথ অনুসরণ করে অজ্ঞতার তেপান্তরে পাড়ি জমানোর কী প্রয়োজন । এ হচ্ছে এ বিতর্কের চুড়ান্ত মীমাংসা । আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্ধারিত ভাগ্য কী, তা অজানা ও অদৃশ্য ব্যাপার । সেই অদৃশ্য জিনিস জানার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর চাপাননি যে, সেই অনুসারে তারা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে ও তার সাথে খাপ-খাইয়ে নেবে । তিনি শুধু তার প্রকাশ্য আদেশ নিষেধ জানার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, যাতে তার আলোকে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে । এ কাজটি করলেই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হেদায়াত দান এবং ইসলামের জন্যে বক্ষ উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন । এটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট । এভাবে এ বিতর্ক বাস্তব, সহজ ও সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় । এতে আর কোনো জটিলতা ও অস্পষ্টতা থাকে না! আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মানুষকে শুরু থেকেই এমনভাবে সৃষ্টি করতে পারতেন যে, সে হেদায়াত তথা সৎ পথ ও সততা ছাড়া আর কিছু চিনতোই না, কিংবা সততার দিকে যেতে বাধ্য হতো কিংবা অন্তরে কেবল সততার চেতনাই ঢুকিয়ে দেয়া হতো, ফলে কোনো চাপ প্রয়োগ ছাড়াই সত্য ও ন্যায়ের পথে চালিত হতো। কিছু আল্লাহ তায়ালা এটা চাননি। তিনি চেয়েছেন আদম সন্তানদের মনে হেদায়াত ও গোমরাহী উভয় দিকে ধাবিত হবার যোগ্যতা,ক্ষমতা ও আগ্রহ ঢুকিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করবেন । যে ব্যক্তি হেদায়াতের দিকে ধাবিত হবে, তাকে হেদায়াত লাভে সাহায্য করবেন এবং যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে ধাবিত হবে, তাকে সেদিকে যাওয়ার সুযোগ দেবেন। এই ইচ্ছা অনুসারে জগত পরিচালনা করাই তাঁর রীতি হয়ে দাড়িয়েছে।

সেই আয়াতগুলো এবং সেখানে বর্ণিত টীকা সামনে থাকলে এ বিষয়টি অনুধাবন করা বেশী সহজ হবে। (দেখুন সূরা আন’আম ১২৪ – ১২৫ – ১২৬ টীকা)
এটি তাদের ওজুহাতের পূর্ণাংগ জওয়াব। এ জওয়াবটি বুঝার জন্য এর যথার্থ বিশ্লেষণ করতে হবেঃ

এখানে প্রথম কথা বলা হয়েছে, নিজেদের অন্যায় কাজ ও গোমরাহীর জন্য আল্লাহর ইচ্ছাকে ওযর হিসেবে পেশ করা এবং এর বাহানা বানিয়ে সঠিক হেদায়াত ও পথনির্দেশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো অপরাধীদের প্রাচীন রীতি হিসেবে চলে আসছে। এর পরিণামে দেখা গেছে অবশেষে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সত্যের বিরুদ্ধে চলার অশুভ পরিণাম তারা স্বচক্ষে দেখে নিয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, তোমরা যে ওযরটি পেশ করছো তার পেছনে প্রকৃত জ্ঞানগত ও তথ্যগত কোন ভিত্তি নেই। বরং আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে তোমরা এটি পেশ করছো। তোমরা নিছক কোথাও আল্লাহর ইচ্ছার কথা শুনতে পেয়েছো তারপর তার ওপর অনুমানের একটি বিরাট ইমারত দাঁড় করিয়ে দিয়েছো। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা কি, একথা বুঝার চেষ্টাই তোমরা করোনি। তোমরা আল্লাহর ইচ্ছা বলতে মনে করছো, চোর যদি আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে চুরি করে তাহলে সে অপরাধী নয়। কারণ সে তো আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীনে চুরি করেছে। অথচ মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে এই যে, সে কৃতজ্ঞতা ও কুফরী, হেদায়াত ও গোমরাহী এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতার মধ্য থেকে যে পথটিই নিজের জন্য নির্বাচিত করবে, আল্লাহ‌ তার জন্য সে পথটিই উন্মুক্ত করে দেবেন। তারপর মানুষ ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুল যে কাজটিই করতে চাইবে, আল্লাহর নিজের বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমের দৃষ্টিতে যতটুকু সঙ্গত মনে করবেন তাকে সে কাজটি করার অনুমতি ও সুযোগ দান করবেন। কাজেই তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীনে যদি শিরক ও পবিত্র জিনিসগুলোকে হারাম গণ্য করার সুযোগ লাভ করে থাকো তাহলে এর অর্থ কখনোই এ নয় যে, তোমরা নিজেদের এসব কাজের জন্য দায়ী নও এবং এর জন্য তোমাদের জওয়াবদিহি করতে হবে না। তোমরা নিজেরাই নিজেদের ভুল পথ নির্বাচন, ভুল সংকল্প গ্রহণ ও ভুল প্রচেষ্টার জন্য দায়ী।

সবশেষে একটি বাক্যের মধ্যে আসল কথাটি বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বলা হয়েছেঃ

فَلِلَّهِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ فَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ নিজেদের ওযর পেশ করতে গিয়ে তোমরা এ মর্মে যে যুক্তিটির অবতারণা করেছো যে, “আল্লাহ চাইলে আমরা শির্‌ক করতাম না।” এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ কথাটি ব্যক্ত হয়নি। সম্পূর্ণ কথাটি বলতে হলে এভাবে বলোঃ “আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করতেন।” অন্য কথায় তোমরা নিজেরা নিজেদের নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক পথ গ্রহণ করতে প্রস্তুত নও। বরং তোমরা চাও, আল্লাহ‌ যেভাবে ফেরেশতাদেরকে জন্মগতভাবে সত্যানুসারী বানিয়েছেন সেভাবে তোমাদেরকেও বানাতেন। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ‌ এ ইচ্ছা করলে অবশ্যি করতে পারতেন। কিন্তু এটি তাঁর ইচ্ছা নয়। কাজেই নিজেদের জন্য তোমরা নিজেরাই যে গোমরাহীটি পছন্দ করে নিয়েছো আল্লাহ‌ তার মধ্যেই।
তোমাদের ফেলে রাখবেন।
# এটা কোন নতুন কথা নয়। আজ তোমরা আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অসৎকর্মের কারণ হিসেবে পেশ করছো। এটা অতি পুরাতন যুক্তি। বিভ্রান্ত লোকেরা নিজেদের বিবেককে ধোঁকা দেবার এবং উপদেশদাতাদের মুখ বন্ধ করার জন্য এ যুক্তি আউড়ে আসছে। এটা হচ্ছে মুশরিকদের যুক্তির প্রথম জবাব। এ জবাবটির পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে একথা অবশ্যি মনে রাখতে হবে যে, মাত্র এখনই কয়েক লাইন আগেই “জ্বী ওগুলো তো পুরাতন যুগের বস্তাপচা কাহিনী” বলে কুরআনের বিরুদ্ধে মুশরিকদের প্রচারণার উল্লেখ এসে গেছে। অর্থাৎ নবীর বিরুদ্ধে তাদের যেন এ আপত্তি ছিল যে, ইনি আবার নতুন কথাই বা কি বলছেন, সেই পুরানো কথাই তো বলে চলছেন। নূহের প্লাবনের পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত হাজার বার এ কথা বলা হয়েছে। এর জবাবে তাদের যুক্তি (যাকে তারা বড়ই শক্তিশালী হিসেবে পেশ করতো) উদ্ধৃত করার পর এ সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মহোদয়গণ! আপনারাই বা কোন অত্যাধুনিক? আপনার এই যে চমৎকার যুক্তির অবতারণা করেছেন এতেও আদতেই কোন অভিনবত্ব নেই। এটিও বহুকালের বাসি-বস্তাপচা খোঁড়া যুক্তি। হাজার বছর থেকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্টতা এ একই গীত গেয়ে আসছে। আপনারাও সেই পচা গীতটিই গেয়ে উঠেছেন।

# তাফহীমুল কুরআন:-
তোমরা নিজেদের শিরক এবং নিজেদের তৈরী হালাল-হারামের বিধানের পক্ষে আমার ইচ্ছাকে কেমন করে বৈধতার ছাড়পত্র দানকারী হিসেবে পেশ করতে পারো? আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে নিজের রসূল পাঠিয়েছি এবং তাদের মাধ্যমে লোকদেরকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমাদের কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র আমার বন্দেগী করা। তাগুতের বন্দেগী করার জন্য তোমাদের পয়দা করা হয়নি। এভাবে আমি যখন পূর্বাহ্ণেই ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে তোমাদের জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমাদের এসব বিভ্রান্ত কাজ কারবারের পক্ষে আমার সমর্থন নেই তখন এরপর আমার ইচ্ছাকে ঢাল বানিয়ে তোমাদের নিজেদের ভ্রষ্টতাকে বৈধ গণ্য করা পরিষ্কারভাবে একথাই ব্যক্ত করছে যে, তোমরা চাচ্ছিলে আমি উপদেশদাতা রসূল পাঠাবার পরিবর্তে এমন রসূল পাঠাতাম যিনি তোমাদের হাত ধরে ভুল পথ থেকে টেনে সরিয়ে নিতেন এবং জোর করে তোমাদেরকে সত্য সঠিক পথে পরিচালিত করতেন।

(আল্লাহর অনুমতিদান ও পছন্দ করার মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করার জন্য সূরা আন’আমের ৮০ ।

# এ ব্যাপারে আমরা আগে যেসব ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছি সেগুলো ছাড়াও এখানে এ সত্যটি ভালভাবে বুঝে নিতে হবে যে, কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর ইচ্ছা ও চাওয়া এবং তাঁর সন্তুষ্টির মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এটিকে উপেক্ষা করতে গেলে সাধারণভাবে অনেক বিভ্রান্তি দেখা দেয়। কোন জিনিস আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর অনুমোদনক্রমে আত্মপ্রকাশ করার অর্থ অবশ্যই এ নয় যে, আল্লাহ্‌ তাতে সন্তুষ্ট আছেন এবং তাকে পছন্দও করেন। আল্লাহ্‌ কোন ঘটনা সংঘটিত হবার অনুমতি না দিলে, তাঁর মহাপরিকল্পনায় তার সংঘটিত হবার অবকাশ না রাখলে এবং কার্যকারণসমূহকে সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি সংঘটিত করার অনুকূলে সক্রিয় না করলে দুনিয়ায় কোন ঘটনা সংঘটিত হয় না। আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমোদন ছাড়া কোন চোরের চুরি, হত্যাকারীর হত্যা, জালেম ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর বিপর্যয় এবং কাফের ও মুশরিকের কুফরী ও শিরক সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে কোন মু’মিন ও মুত্তাকী ব্যক্তির ঈমান ও তাকওয়াও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয়। দু’ ধরনের ঘটনায় একইভাবে আল্লাহর ইচ্ছায়ই সংঘটিত হয়। কিন্তু প্রথম ধরনের ঘটনায় আল্লাহ্‌ সন্তুষ্ট নন। আর দ্বিতীয় ধরনের ঘটনা তিনি পছন্দ করেন, ভালবাসেন এবং এর প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। যদিও কোন বৃহত্তর কল্যাণের জন্যই বিশ্ব-জাহানের মালিকের ইচ্ছা কাজ করছে তবুও আলো ও আঁধার, ভাল ও মন্দ এবং সংস্কার ও বিপর্যয়ের বিপরীতমুখী শক্তিগুলোর পরস্পরের সাথে সংঘর্ষশীল হবার ফলেই এ কল্যাণের পথ উন্মুক্ত হয়। তাই এ বৃহত্তর কল্যাণের ভিত্তিতেই তিনি আনুগত্য ও অবাধ্যতা, ইবরাহিমী প্রকৃতি ও নমরূদী প্রকৃতি, মূসার স্বভাব ও ফেরাউনী স্বভাব এবং মানবিক স্বভাব ও শয়তানী স্বভাব উভয়কেই কাজ করার সুযোগ দেন। তিনি নিজের স্বাধীন চেতনা ও ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টিকে (জীন ও মানুষ) ভাল ও মন্দের মধ্য থেকে কোন একটি বাছাই করে নেবার স্বাধীনতা দান করেছেন। পৃথিবীর এ কর্মশালায় প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা মতো ভাল কাজ করতে পারে এবং খারাপ কাজও করতে পারে। আল্লাহর মর্জী ও ইচ্ছা যত দূর সুযোগ দেয়, যতদূর তিনি অনুমোদন দান করেন ততদূর পর্যন্ত উভয় ধরনের কর্মীরা পার্থিব উপায়-উপকরণসমূহের সমর্থন লাভ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে একমাত্র তারাই যারা ভাল ও কল্যাণের জন্য কাজ করে আর আল্লাহর বান্দা তাঁর প্রদত্ত নির্বাচনের স্বাধীনতা ব্যবহার করে মন্দকে নয়, ভাল ও কল্যাণকে অবলম্বন করুক, এটাই আল্লাহ্‌ ভালবাসেন।

এ সঙ্গে একথাটিও বুঝে নিতে হবে যে, সত্যের দুশমনদের বিরোধিতামূলক কার্যকলাপের উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ্‌ বারবার নিজের ইচ্ছার বরাত দেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এবং তাঁর মাধ্যমে মু’মিনদেরকে একথা বুঝিয়ে দেয়া যে, তোমাদের কাজের ধরনের ফেরেশতাদের মতো নয়। ফেরেশতারা কোন প্রকার বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আল্লাহর হুকুম তামিল করছে। অন্যদিকে দৃষ্কৃতিকারী ও বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় আল্লাহর পছন্দনীয় পদ্ধতিকে বিজয়ী করার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানোই হচ্ছে তোমাদের আসল কাজ। আল্লাহ্‌ নিজের ইচ্ছায় তাদেরকেও কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন, যারা নিজেদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করে যাচ্ছে। আবার তোমরা যারা আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করেছো তাদেরকেও একইভাবে কাজ করার পূর্ণ সুযোগ দিচ্ছেন। অবশ্য তাঁর সন্তুষ্টি, হেদায়াত, সমর্থন ও সাহায্য-সহায়তার হাত প্রসারিত হয়েছে তোমাদের দিকেই, কারণ তিনি যে কাজ পছন্দ করেন তোমরা তাই করে যাচ্ছো। কিন্তু তোমরা এ আশা করো না যে, আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি প্রাকৃতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যারা ঈমান আনতে চায় না তাদেরকে ঈমান গ্রহণে বাধ্য করবেন অথবা মানুষ ও জ্বিন সম্প্রদায়ের এমন সব শয়তানকে জোরপূর্বক সমস্ত পথ থেকে সরিয়ে দেবেন, যারা নিজেদের মন-মস্তিস্ক ও হাত-পায়ের শক্তি এবং নিজেদের সমস্ত উপায়-উপকরণ সত্যের পথ রোধ করার জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা কখনো হবার নয়। যদি সত্যিই তোমরা সত্য, সততা, সৎবৃত্তি ও কল্যাণের জন্য কাজ করার সংকল্প করে থাকো, তাহলে অবশ্যি তোমাদের মিথ্যা ও বাতিলপন্থীদের মোকাবিলায় কঠোর প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে নিজেদের সত্য প্রিয়তার প্রমাণ পেশ করতে হবে। অন্যথায় মু’জিযা, কারামতি ও অলৌকিক ক্ষমতার জোরে যদি বাতিলকে নির্মূল ও হককে বিজয়ী করাই উদ্দেশ্য হতো তাহলে তো তোমাদের কোন প্রয়োজন ছিল না। আল্লাহ্‌ নিজেই দুনিয়ার সমস্ত শয়তানকে নির্মূল করে কুফরী ও শিরকের সম্ভাবনার সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেবার ব্যবস্থা করতে পারতেন।

(এবং সূরা যুমারের ২০ টীকা দেখুন)।
# নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্য তার কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা, কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে একথা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও অভিপ্রায় এক জিনিস এবং তাঁর সন্তুষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি জিনিস। পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছার পরিপন্থী কোন কাজ হতে পারে না। কিন্তু তাঁর সন্তুষ্টির পরিপন্থী কাজ হতে পারে এবং রাত দিন হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপঃ পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী ও জালেমদের শাসনকর্তা হওয়া, চোর ও ডাকাতদের অস্তিত্ব থাকা এবং হত্যাকরী ও ব্যভিচারীদের বর্তমান থাকা এ কারণেই সম্ভব যে, আল্লাহ‌ তা’আলা তাঁর রচিত প্রাকৃতিক বিধানে এসব অকল্যাণ ও অপকর্মের অস্তিত্ব লাভের অবকাশ রেখেছেন। তাছাড়া তাদেরকে মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগও তিনিই দেন এবং ঠিক তেমনিভাবে দেন যেমনভাবে সৎকর্মশীলদের সৎকাজ করার সুযোগ দেন। তিনি যদি এসব কাজ করার আদৌ কোন সুযোগ না রাখতেন এবং যারা এসব কাজ করে তাদের আদৌ কোন সুযোগই না দিতেন তাহলে পৃথিবীতে কখনো কোন অকল্যাণ আত্মপ্রকাশ করতো না। এসব কিছুই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে হচ্ছে। কিন্তু ইলাহী ইচ্ছার অধীনে কোন কাজ সংঘটিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টিও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ একথাটিকে এভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন যে, কেউ যদি হারাম পন্থার মাধ্যমে তার রিযিক লাভের চেষ্টা করে তাহলে আল্লাহ‌ তাকে ঐ পন্থায়ই রিযিক দান করেন। এটা তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার অধীনে চোর ডাকাত বা ঘুষখোরকে রিযিক দেয়া অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ‌ চুরি, ডাকতি এবং ঘুষও পছন্দ করেন। এখানে আল্লাহ‌ তা’আলা একথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরি করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাঁধা দিয়ে তোমাদেরকে মু’মিন বানাবো না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টা ও পালনকর্তার সাথে কুফরি করবে তাও আমার পছন্দ নয়। কারণ, তা তোমাদের জন্যই ক্ষতিকর। এতে আমার প্রভুত্বে আদৌ আঁচড়ে লাগে না।

# প্রত্যেক নবীর আগমনের পর তাঁর জাতি দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একদল তাঁর কথা মেনে নিয়েছে। (আল্লাহ তাদেরকে এ মেনে নেয়ার তাওফীক দিয়েছিলেন) এবং অন্য দলটি নিজেদের গোমরাহীর ওপর অবিচল থেকেছে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আন’আম ২৮ টীকা)।

# নিশ্চয়তা লাভ করার জন্য অভিজ্ঞতার চাইতে আর কোন বড় নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড নেই। এখন তুমি নিজেই দেখে নাও, মানব ইতিহাসের একের পর এক অভিজ্ঞতা কি প্রমাণ করছে? আল্লাহর আযাব কার ওপর এসেছে— ফেরাউন ও তার দলবলের ওপর, না মূসা ও বনী ইসরাঈলের ওপর? আল্লাহকে যারা অস্বীকার করেছিল তাদের ওপর, না তাঁকে যারা মেনে নিয়েছিল তাদের ওপর? এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাগুলোর ফল কি এই দাঁড়িয়েছে যে, আমার ইচ্ছার কারণে যারা শিরক করার ও শরীয়াত গঠনের সুযোগ লাভ করেছিল তদের প্রতি আমার সমর্থন ছিল? বরং বিপরীত পক্ষে এ ঘটনাবলী সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণ করছে যে, উপদেশ ও অনুশাসন সত্বেও যারা এসব গোমরাহীর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়ে চলেছে। আমার ইচ্ছাশক্তি তাদেরকে অপরাধ করার অনেকটা সুযোগ দিয়েছে। তারপর তাদের নৌকা পাপে ভরে যাবার পর ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে।

ফী জিলালিল কুরআন:

পরবর্তী কটি আয়াতে মােশরেকদের শিরক ও অন্যান্য অপকর্মের কারণ সম্পর্কে তাদের আরাে একটা বক্তব্য উদ্ধৃত করে তার জবাব দেয়া হয়েছে, মুশরিকরা বলে, ‘আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলেতাে আমরা এবং আমাদের বাপদাদারা তার এবাদাত ছাড়া আর কারাে এবাদাত করতাম না এবং আমরা তার (অনুমতি) ছাড়া কোনাে জিনিস নিষিদ্ধ করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরাও একই রকম কাজ করতাে। আসলে সব কিছু খােলাখুলিভাবে (দ্বীনকে) প্রচার করা ছাড়া রসূলদের কি আর কোনাে দায়িত্ব আছে?'(আয়াত ৩৫-৩৬) এই উক্তির মধ্য দিয়ে তারা আসলে নিজেদের সকল অপকর্মের দায়ভার আল্লাহর ওপর চাপাতে চাইছে। তাদের ও তাদের বাপদাদার শিরক, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যদের এবাদাত উপাসনা এবং পৌত্তলিক সংস্কৃতির অংশ হিসাবে প্রাণীর গােশত খাওয়াকে ও বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যকে কল্পনা প্রসূত ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে নিজেদের ওপর নিষিদ্ধ করা-এই সমস্ত কর্মকান্ডের জন্যে তারা আল্লাহর ইচ্ছাকেই দায়ী করেছে। তাদের বক্তব্য এই যে আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন যে, তারা এসব কাজ না করুক, তাহলে তিনি তাদেরকে এ সব কাজ করতে দিতেন না। এটা আসলে আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারণা। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার জীবনে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি প্রয়ােগ করার জন্যে যে সব ক্ষমতা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, সেগুলােকে এখানে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।  *ইচ্ছা প্রয়ােগের স্বাধীনতা : আল্লাহ তায়ালা কখনাে চান না তাঁর বান্দারা তার সাথে অন্য কাউকে শরীক করুক এবং তাঁর হালাল করা জিনিসকে হারাম বা হারাম করা জিনিসকে হালাল করুক। এটা যে তিনি চান না, সেটা তিনি তার শরীয়ত ও নবীদের মুখ দিয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। রসূলদেরকে তিনি এ কাজেরই দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তারা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তােমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে এড়িয়ে চলো। সুতরাং এটাই আল্লাহর হুকুম এবং এটাই নিজ বান্দাদের সম্পর্কে আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে এমন কোনাে হুকুম দিতে পারেন না, যে হুকুম মেনে চলার ক্ষমতা তিনি তাদেরকে সৃষ্টিগতভাবে দেননি, কিংবা তাদেরকে তার বিরুদ্ধাচরণ করতে বাধ্য করেছেন। আল্লাহ তায়ালা যে তার হুকুম অমান্যকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন, এটাই প্রমাণ করে যে তিনি তার হুকুমের বিরুদ্ধাচরণে অসন্তুষ্ট হন। ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ কথাই বলেছেন, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করাে এবং দেখাে, আল্লাহর হুকুম অমান্য করার পরিণতি কী হয়েছিলাে। মহাবিজ্ঞানী স্রষ্টার চূড়ান্ত ফয়সালা এটাই ছিলাে যে, তিনি মানুষকে সৎ কাজ ও অসংকাজ উভয়টাই করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করবেন । ও দু’টোর যে কোনােটা বেছে নেয়ার ইচ্ছার স্বাধীনতা তাকে দেবেন এবং তারপর তাকে বিবেক ও বুদ্ধি দান করবেন, যা দ্বারা সে ভালাে ও মন্দের যে কোনাে একটাকে অগ্রাধিকার দেবে। সেই সাথে তিনি বিশ্ব জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে দেবেন সত্য ও ন্যায়ের পথের সেই সব নিদর্শন, যা মানুষের চোখ, কান, স্নায়ু, মন ও বিবেককে প্রতিটি মুহূর্তে সকাজে উদ্বুদ্ধ করতে থাকবে। এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি তাঁর বান্দাদের ওপর অধিকতর অনুগ্রহ প্রদর্শনপূর্বক, শুধু বিবেকবুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল না রেখে, বিবেকবুদ্ধির জন্যে একটা মানদন্ড দিয়েছেন, যা নবীদের মাধ্যমে আগত শরিয়তে চিরস্থায়ী মূলনীতি হিসাবে বিদ্যমান। যখনই বিবেক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে, তখনই সে ওই মানদন্ডের কাছ থেকে কোনটা ভুল ও কোনটা ঠিক জেনে নেবে। আল্লাহ তায়ালা তার রসূলদেরকে বলপ্রয়ােগকারী করে পাঠাননি যে মানুষকে ঘাড় ধরে ঈমানের পথে ঠেলে দেবেন। তাঁদেরকে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র প্রচারক হিসাবে। প্রচার ছাড়া তাদের আর কোনাে করণীয় নেই। একমাত্র আল্লাহর এবাদাত করতে এবং আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর যতাে মূর্তি যতাে মানবরচিত আইন-কানুন মতবাদ, মনের ঝোক, আবেগ ও শক্তি যাই থাকুক, তা প্রত্যাখ্যান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তােমরা আল্লাহর। আনুগত্য করাে এবং তাগুতকে পরিহার করে। একদল লােক এ নির্দেশ মেনে নিয়েছে, তাদের মধ্যে একদলকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত করেছেন। আর একদল গােমরাহীতে লিপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে একদলের ওপর গােমরাহী কার্যকর হয়ে গেছে। এই দুই দলের কোনােটাই আল্লাহর ইচ্ছা বা সিদ্ধান্তের আওতা বহির্ভূত নয়। আল্লাহ এদের কাউকেই জোরপূর্বক হেদায়াত বা গোমরাহির দিকে ঠেলে দেননি। আল্লাহ তায়ালা তার নিজ সত্ত্বার ভেতরে এবং বহির্জগতের সর্বত্র তার জন্যে সঠিক পথের নির্দেশনা রেখে দেয়ার পর তাকে ভালাে বা মন্দ যে কোনাে পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন এবং তার ইচ্ছা এই যে, সে ওই স্বাধীনতা প্রয়ােগ করে যে পথ ভালাে মনে করে সেই পথে চলুক। সেই স্বাধীনতাকেই সে প্রয়ােগ করেছে। এতে সে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে যায়নি।

# ফী জিলালিল কুরআন:

*কতিপয় ভ্রান্ত ধারণার মুলােৎপাটন : কোরআন মােশরেকদের এই ভ্রান্ত ধারণাও এ আয়াত দ্বারা খণ্ডন করেছে যে, আল্লাহ তায়ালা বলপ্রয়োগ করেই তাদেরকে শিরকের পথে চালিত করেছেন। বিকারগ্রস্ত ও অবাধ্য লােকদের অনেকেই এই ওজুহাত দিয়ে থাকে। অথচ এ ক্ষেত্রে ইসলামের আকীদা বিশ্বাস একেবারেই স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে ভালাে কাজের আদেশ দেন ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন। আর যারা তার নিষিদ্ধ কাজ করে তাদের কখনাে কখনাে দুনিয়ায় প্রকাশ্য শাস্তি দেন, যার মধ্য দিয়ে তাদের ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রমাণিত হয়। কাজেই এরপর এ কথা বলার অবকাশ থাকে না যে, আল্লাহর ইচ্ছা হস্তক্ষেপ করে বান্দাকে গোমরাহীর দিকে যেতে বাধ্য করে, আবার সে জন্যে তিনি তাকে শাস্তিও দেন। আসলে আল্লাহর ইচ্ছা এতােটুকুই যে, তারা তাদের পথ স্বাধীনভাবে বেছে নিক। আর তারা ভালাে বা মন্দ যে কাজই করুক, কিংবা সৎপথ বা অসৎ পথ, যে পথেই চলুক, এই অর্থে আল্লাহর ইচ্ছার আওতার মধ্যেই থাকে।  এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা তার রসূলকে সম্বােধন করে হেদায়াত ও গােমরাহীর ব্যাপারে স্বীয় নীতি ব্যাখ্যা করছেন। ‘তুমি যতই তাদের হেদায়াত কামনা করাে, আল্লাহ তায়ালা তাে যারা নাফরমানী ও বিদ্রোহের কারণে বিপথগামী হয় তাদেরকে হেদায়াত করেন না এবং তাদের কোনাে সাহায্যকারীও নেই।’ সুতরাং হেদায়াত বা গােমরাহী রসূলের পক্ষ থেকে তাদের হেদায়াত কামনা করা বা না করার ফল নয়। রসূলের কাজ প্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। হেদায়াত বা গােমরাহী আল্লাহর নীতি অনুসারেই হয়। এ নীতি কখনাে লংঘিত হয় না এবং এর ফলাফলও কখনাে পরিবর্তিত হয় না। কেউ যদি আল্লাহর ওই নীতি অনুসারে গােমরাহীর যােগ্য হয় এবং সে জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাকে গােমরাহ করে দেন, তবে তাকে তিনি হেদায়াত করেন না। কেননা আল্লাহর এমন কিছু নীতি আছে, যা তার নির্দিষ্ট ফলাফল দিয়ে থাকে। এভাবে সব কিছু চলুক এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ তায়ালা নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করবেনই, কিন্তু কাফেরদের জন্যে কোনাে সাহায্যকারী নেই।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩৫-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের উল্টো বুঝের খবর দিচ্ছেন যে, তারা পাপ করছে, শিরক করছে, হালালকে হারাম করছে, যেমন জানোয়ারগুলিকে তাদের দেবতাদের নামে যবেহ করা এবং তারা তকদীরকে হুজ্জত বানিয়ে নিচ্ছে, আর বলছেঃ “যদি আল্লাহ আমাদের বড়দের এই কাজ অপছন্দ করতেন তবে তখনই তিনি আমাদেরকে শাস্তি দিতেন?’ মহান আল্লাহ তাদেরকে জবাব দিচ্ছেনঃ “এটা আমার বিধান নয়। আমি তোমাদের এই কাজকে কঠিনভাবে অপছন্দ করি। আর আমি যে এটা অপছন্দ করি তা আমি আমার সত্য নবীদের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকি। তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তোমাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। প্রত্যেক গ্রামে-গঞ্জে এবং প্রত্যেক দলে ও গোত্রে আমি নবী পাঠিয়েছি। সবাই তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমার বান্দাদের মধ্যে আমার আহকামের তাবলীগ তারা পুরোপুরি ওষ্পষ্টভাবে করেছে। সকলকেই তারা বলেছেঃ “তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করো না।”

সর্বপ্রথম যখন যমীনে শিরকের উদ্ভব হয় তখন আল্লাহ তাআলা হযরত নহকে (আঃ) নুবওয়াত দান করে প্রেরণ করেন। আর সর্বশেষ হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) “খাতেমুল মুরসালীন’ ও রাহমাতুল লিলআ’লামীন’ উপাধি দিয়ে নবী বানিয়ে দেন, যার দাওয়াত ছিল যমীনের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত দানব ও মানবের জন্যে। সমস্ত নবীরই কথা একই ছিল। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যত নবী পাঠিয়েছিলাম তাদের সবারই কাছে ওয়াহী করে ছিলামঃ আমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।” (২১:২৫) অন্যত্রে তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরকে জিজ্ঞেস করঃ আমি কি রহমান (আল্লাহ) ছাড়া অন্যান্য মাবুদদেরকে নির্ধারণ করেছিলাম যাদের তারা ইবাদত করছে?” (৪৩:৪৫) এখানেও আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রত্যেক উম্মতের রাসূলের দাওয়াত ছিল তাওহীদের শিক্ষা দান এবং শিকহতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ। সুতরাং মুশরিকরা কি করে নিজেদের শিরকের উপর আল্লাহর সম্মতির দলীল আনয়ন সমীচীন মনে করছে? আল্লাহ তাআলার চাহিদা তাঁর শরীয়তের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়, আর তা হচ্ছে প্রথম থেকেই শিরকের মূলোৎপাটন ও তাওহীদের দৃঢ়তা আনয়ন। সমস্ত রাসূলের ভাষায় তিনি এই পয়গামই প্রেরণ করেছেন। হ্যা, তবে তাদেরকে শিরকের উপর ছেড়ে দেয়া। অন্য কথা। এটা গৃহীত দলীল হতে পারে না। আল্লাহ তাআ’লা তো জাহান্নাম ও জাহান্নামীদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। শয়তান এবং কাফিরদের এ জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি স্বীয় বান্দাদের কুফরীর উপর কখনোই সন্তুষ্ট নন। এর মধ্যেও তার পূর্ণ নিপুণতা ও হুজ্জত নিহিত রয়েছে।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “রাসূলদের মাধ্যমে সতর্ককরণের পর কাফির ও মুশরিকদের উপর পার্থিব শাস্তিও এসেছে। কেউ কেউ পথ ভ্রষ্টতার উপরই রয়ে গেছে। হে মুমিনগণ! তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করে রাসূলদের বিরুদ্ধাচরণকারী এবং আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপনকারীদের পরিণাম দেখে নাও। অতীতের ঘটনাবলী যাদের জানা আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে তোমরা জেনে নাও যে, আল্লাহর আযাব কিভাবে মুশরিকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সময়ের কাফিরদের জন্য ঐ সময়ের কাফিরদের মধ্যে দৃষ্টান্ত ও উপদেশ বিদ্যমান রয়েছে। এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) বলছেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! তুমি এই কাফিরদেরকে হিদায়াত করার জন্যে আগ্রহী হচ্ছে বটে, কিন্তু এটা নিষ্ফল হবে। কেননা, আল্লাহ তাদের পথভ্রষ্টতার কারণে তাদেরকে স্বীয় রহমত হতে দূর করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ যাকে পরীক্ষায় ফেলার ইচ্ছা করেন, তার জন্যে তুমি আল্লাহ হতে কিছুই করার অধিকারী (অর্থাৎ তুমি তার কিছুই উপকার করতে পার না)” (৫:৪১) হযরত নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহ যদি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন তবে আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না।”

এখানেও মহান আল্লাহ বলেনঃ “তুমি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৃৎপথে পরিচালিত করবেন না।” যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তাদেরকে হিদায়াত দানকারী কেউ নেই এবং তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।” আর এক জায়গায় বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! যাদের উপর তোমার প্রতিপালকের কথা বাস্তবায়িত হয়েছে তারা ঈমান আনবে না। যদিও তাদের কাছে সমস্ত নিদর্শন চলে আসে, যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।”

আল্লাহপাকের উক্তিঃ (আরবি) নিশ্চয় আল্লাহ, অর্থাৎ তাঁর শান ও তাঁর আদেশ। কেননা, তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। তাই, তিনি বলেন, যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, কে এমন আছে যে, আল্লাহর পরে তাকে পথ দেখাতে পারে? অর্থাৎ কেউ নেই।

(আরবি) ‘তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই’ অর্থাৎ সেই দিন তাদের এমন কোন সাহায্যকারী থাকবে না, যে তাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারে। সৃষ্টি এবং হুকুম একমাত্র তাঁরই। তিনিই হলেন বিশ্ব প্রতিপালক। তিনি কল্যাণময়।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 35-37
وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ ]
And those who worshipped others with Allah said:]
The Idolators Argument that their Shirk was Divinely decreed, and the Refutation of this Claim

Allah tells:

وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ

And those who worshipped others with Allah said:

Allah tells us about the idolators delusion over their Shirk, and the excuse they claimed for it based on the idea that it is ordained by divine decree.

He says:

لَوْ شَاء اللّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ نَّحْنُ وَلا ابَاوُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ

(They say:) “If Allah had so willed, neither we nor our fathers would have worshipped any but Him, nor would we have forbidden anything without (a command from) Him.”

They had superstitious customs dealing with certain animals, e.g. the Bahirah the Sa’ibah and the Wasilah and other things that they had invented and innovated by themselves, with no revealed authority. The essence of what they said was:

“If Allah hated what we did, He would have stopped by punishing us, and He would not have enabled us to do it.”

كَذَلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ

Those before them did the same.

Rejecting their confusing ideas, Allah says:

فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلاَّ الْبَلغُ الْمُبِينُ

Are the Messengers charged with anything but to clearly convey the Message!

meaning, the matter is not as you claim. It is not the case that Allah did not rebuke your behavior; rather, He did rebuke you, and in the strongest possible terms, and He emphatically forbade you from such behavior. To every nation – that is, to every generation, to every community of people – He sent a Messenger. All of the Messengers called their people to worship Allah (Alone) as well as forbidding them from worshipping anything or anybody except for Him.
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ

And We have indeed sent a Messenger to every Ummah (community, nation) (saying):”Worship Allah (alone), and shun the Taghut (all false deities).”

Allah continued sending Messengers to mankind with this Message, from the first incidence of Shirk that appeared among the Children of Adam, in the people to whom Nuh was sent – the first Messenger sent by Allah to the people of this earth – until He sent the final Messenger, Muhammad, whose call was addressed to both men and Jinn, in the east and in the west. All of the Messengers brought the same Message, as Allah says:

وَمَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلاَّ نُوحِى إِلَيْهِ أَنَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ أَنَاْ فَاعْبُدُونِ

And We did not send any Messenger before you (O Muhammad) but We revealed to him (saying):None has the right to be worshipped but I (Allah), so worship Me (alone and none else).” (21:25)

وَاسْيلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَأ أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّحْمَـنِ ءَالِهَةً يُعْبَدُونَ

And ask (O Muhammad) those Messengers of Ours whom We sent before you:”Did We ever appointed to be worshipped besides the Most Gracious (Allah)” (43:45)

And in this Ayah, Allah says:

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ

And We have indeed sent a Messenger to every Ummah (community, nation) (saying):”Worship Allah (alone), and shun the Taghut (all false deities).”

So how could any of the idolators say,
لَوْ شَاء اللّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ
(If Allah had so willed, we would not have worshipped any but Him),

The legislative will of Allah is clear and cannot be taken as an excuse by them, because He had forbidden them to do that upon the tongue of His Messengers, but by His universal will (i.e., by which He allows things to occur even though they do not please Him). He allowed them to do that as it was decreed for them. So there is no argument in that for them. Allah created Hell and its people both the Shayatin (devils) and disbelievers, but He does not like His servants to disbelieve. And this point constitutes the strongest proof and the most unquestionable wisdom.

Then Allah informs us that He rebuked them with punishment in this world, after the Messengers issued their warning, thus He says:

فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّللَةُ فَسِيرُواْ فِي الَارْضِ فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ

Then among them were some whom Allah guided, and among them were some who deserved to be left to stray. So travel through the land and see the end of those who denied (the truth).

This means:ask about what happened to those who went against the Messengers and rejected the truth, see how:

دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَـفِرِينَ أَمْثَـلُهَا

Allah destroyed them completely, and a similar (end awaits) the disbelievers. (47:10)

and,

وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نكِيرِ

And indeed those before them belied (the Messengers of Allah), so then how terrible was My denial (punishment). (67:18)

Then Allah told His Messenger

إِن تَحْرِصْ عَلَى هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللّهَ لَا يَهْدِي مَن يُضِلُّ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ
(Even) if you desire that they be guided, then verily, Allah does not guide those whom He allowed to stray, and they will have no helpers.

Allah told His Messenger that His eagerness to guide them will be of no benefit to them if Allah wills that they should be misguided, as He says:

وَمَن يُرِدِ اللَّهُ فِتْنَتَهُ فَلَن تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللَّهِ شَيْيا

And for whoever Allah wills to try with error, you can do nothing for him against Allah. (5:41)

Nuh said to his people:

وَلَا يَنفَعُكُمْ نُصْحِى إِنْ أَرَدْتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ

“And my advice will not profit you, even if I wish to give you good counsel, if Allah’s will is to keep you astray.” (11:34)

In this Ayah, Allah says:

إِن تَحْرِصْ عَلَى هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللّهَ لَا يَهْدِي مَن يُضِلُّ

(Even) if you desire that they be guided, then verily, Allah does not guide those whom He allowed to stray,

As Allah says:

مَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَ هَادِيَ لَهُ وَيَذَرُهُمْ فِى طُغْيَـنِهِمْ يَعْمَهُونَ

Whomsoever Allah allows to stray, then there is no guide for him; and He lets them wander blindly in their transgressions. (7:186)

إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَا يُوْمِنُونَ

وَلَوْ جَأءَتْهُمْ كُلُّ ءايَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الاٌّلِيمَ

Truly! Those deserving the Word (wrath) of your Lord will not believe, even if every sign should come to them – until they see the painful torment. (10:96-97)

فَإِنَّ اللّهَ
(then verily, Allah),

meaning, this is the way in which Allah does things. If He wills a thing, then it happens, and if He does not will a thing, then it does not happen.

For this reason Allah says:

لَا يَهْدِي مَن يُضِلُّ
(Allah does not guide those whom He allowed to stray),

meaning the one whom He has caused to go astray, so who can guide him apart from Allah No one.

وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ

And they will have no helpers.

means, they will have no one to save them from the punishment of Allah,

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالاٌّمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَـلَمِينَ

Surely, His is the creation and commandment. Blessed is Allah, the Lord of all that exists! (7:54).

Leave a Reply