أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 802)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৪৩-৪৪ নং আয়াত:-
[ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে।
So that perhaps they may reflect.]
www.motaher21.net
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ اِلَّا رِجَالًا نُّوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِمۡ فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿ۙ۴۳﴾
তোমার পূর্বে পুরুষদেরকেই আমি (রসূলরূপে) প্রেরণ করেছি; যাদের নিকট আমি অহী পাঠাতাম। তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর;
And We sent not before you except men to whom We revealed [Our message]. So ask the people of the message if you do not know.
بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ ؕ وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الذِّکۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۴۴﴾
স্পষ্ট প্রমাণ ও গ্রন্থসহ। আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে।
[We sent them] with clear proofs and written ordinances. And We revealed to you the message that you may make clear to the people what was sent down to them and that they might give thought.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৪৩-৪৪ নং আয়াত:-
[ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে।
So that perhaps they may reflect.]
www.motaher21.net
৪৩-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখানে মক্কার মুশরিকদের একটি আপত্তি উদ্ধৃত না করেই তার জবাব দেয়া হচ্ছে। এ আপত্তিটি ইতিপূর্বে সকল নবীর বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হয়েছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীনরাও তাঁর কাছে বারবার এ আপত্তি জানিয়েছিল। এ আপত্তি ছিল এই যে, আপনি আমাদের মতই একজন মানুষ, তাহলে আল্লাহ আপনাকে নবী করে পাঠিয়েছেন আমরা একথা কেমন করে মেনে নেবো?
# “বাণী ওয়ালা” অর্থাৎ আহলি কিতাবদের আলেম সমাজ এবং আরো এমন সব লোক যারা নাম-করা আলেম না হলেও মোটামুটি আসমানী কিতাবসমূহের শিক্ষা এবং পূর্ববর্তী নবীগণের জীবন বৃত্তান্ত জানেন।
# ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুধু মুখে নয় বরং নিজের কাজের মাধ্যমেও এবং নিজের নেতৃত্ব একটি মুসলিম সমাজ গঠন করেও আর এই সঙ্গে ‘আল্লাহর যিকির’ তথা কিতাবের উদ্দেশ্য অনুযায়ী এ সমাজ পরিচালনা করেও। এভাবে একজন মানুষকেই নবী বানিয়ে পাঠানোর পেছনে যে নিগূঢ় যৌক্তিকতা নিহিত ছিল মহান আল্লাহ সে যৌক্তিকতাও বর্ণনা করে দিয়েছেন। ‘যিকির’ বা আল্লাহর বাণী ফেরেশতাদের মাধ্যমেও পাঠানো যেতো। সরাসারি ছাপিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের হাতেও পৌঁছানো যেতে পারতো। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ স্বীয় সুগভীর প্রজ্ঞা, করুণা ও সার্বভৌম কর্তৃত্বের আলোকে এ যিকির বা ওহী অবতরণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে যে উদ্দেশ্য সাধন করতে চেয়েছিলেন শুধুমাত্র ছাপানো একখানা গ্রন্থ বা পুস্তিকা পাঠিয়ে দিলেই সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হতে পারতো না। এ উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য যা অপরিহার্য ছিল তা হলো একজন যোগ্যতম মানুষ তা সাথে করে নিয়ে আসবেন, তিনি তাকে একটু একটু করে লোকদের সামনে পেশ করবেন। যারা এর কোন কথা বুঝতে পারবে না তাদেরকে তার অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। যাদের এর কোন ব্যাপারে সন্দেহ থাকবে তাদের সন্দেহ দূর করে দেবেন। যাদের কোন ব্যাপারে আপত্তি ও প্রশ্ন থাকবে তাদের আপত্তি ও প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবেন। যারা একে মেনে নিতে অস্বীকার করবে এবং এর বিরোধিতা করতে ও একে বাধা দিতে এগিয়ে আসবে তাদের মোকাবিলায় তিনি এমন মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করবেন, যা এই যিকির বা আল্লাহর বাণীর ধারকের উপযোগী। যারা মেনে নেবে তাদের জীবনের প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগ সম্পর্কে পথনির্দেশনা দান করবেন। নিজের জীবনকে তাদের সামনে আদর্শ হিসেবে পেশ করবেন। তাদেরকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে অনুশীলন দান করে সারা দুনিয়ার সামনে এমন একটি সমাজকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরবেন যার সমগ্র সামাজিক ব্যবস্থা হবে “যিকির” এর উদ্দেশ্যের বাস্তব ব্যাখ্যা।
যেসব নবুওয়াত অস্বীকারকারী আল্লাহর “যিকির” মানুষের মাধ্যমে আসাকে মেনে নিতে পারেনি তাদের জবাব হিসেবে এ আয়াতটি যেমন চূড়ান্ত তেমনি যেসব হাদীস অস্বীকারকারী নবীর ব্যাখ্যা-বিশ্লষেণ ছাড়া শুধুমাত্র “যিকির” কে গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্যও এটি চূড়ান্ত জবাব। তাদের দাবী যদি এ হয়ে থাকে যে, নবী কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেননি, শুধুমাত্র যিকির পেশ করেছিলেন, অথবা নবীর ব্যাখ্যা নয় শুধুমাত্র যিকিরই গ্রহণ যোগ্য, কিংবা এখন আমাদের জন্য শুধুমাত্র যিকির যথেষ্ট, নবীর ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নেই, অথবা এখন একমাত্র ‘যিকির’ই নির্ভরযোগ্য অবস্থায় টিকে রয়েছে, নবীর ব্যাখ্যা টিকে নেই আর টিকে থাকলেও তা মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়— এ চারটি বক্তব্যের মধ্যে যে কোনটিতেই তারা বিশ্বাসী হোক না কেন তাদের এ মতবাদ কুরআনের এ আয়াতের সাথে সংঘর্ষশীল।
যদি তারা প্রথম মতটির প্রবক্তা হয় তাহলে এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে, যে উদ্দেশ্যে যিকিরকে ফেরেশতাদের হাত দিয়ে পাঠাবার বা সরাসরি লোকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবার পরিবর্তে নবীকে প্রচারের মাধ্যম করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্যই তিনি ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
আর যদি তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় মতটির প্রবক্তা হয় তাহলে তার অর্থ হবে, (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ নিজেই নিজের “যিকির” একজন নবীর মাধ্যমে পাঠিয়ে একটা বাজে কাজ করেছেন। কারণ যিকিরকে শুধুমাত্র মুদ্রিত আকারে নবী ছাড়াই সরাসরি পাঠালে যে ফল হতো নবী আগমনের ফলও তার চাইতে ভিন্ন কিছু নয়।
আর যদি তারা চতুর্থ কথাটির প্রবক্তা হয় তাহলে এটি আসলে কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত উভয়টিকেই নাকচ করে দেবার ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপর যারা একটি নতুন নবুওয়াত ও নতুন অহীর প্রবক্তা একমাত্র তাদের মতবাদ ছাড়া আর কোন যুক্তিসঙ্গত মতামত থাকে না। কারণ এ আয়াতে আল্লাহ নিজেই কুরআন মজীদের নাযিলের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য নবীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে অপরিহার্য গণ্য করছেন আবার নবী যিকিরের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করবেন একথা বলে নবীর প্রয়োজন প্রমাণ করছেন। এখন যদি হাদীস অস্বীকারকারীরা একথা বলে যে, নবীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দুনিয়ার বুকে বিদ্যমান নেই তাহলে স্পষ্টতই এ বক্তব্য থেকে দু’টো সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায়। প্রথম সিদ্ধান্তটি হচ্ছে, অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত খতম হয়ে গেছে এবং আমাদের সম্পর্ক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শুধুমাত্র তেমন পর্যায়ের রয়ে গেছে যেমন আছে হূদ (আ), সালেহ (আ) ও শোআইব (আ) —এর সাথে। আমরা তাঁদেরকে সত্য নবী বলে মানি, তাঁদের প্রতি ঈমান আনি কিন্তু তাঁদের এমন কোন অনুকরণীয় আদর্শ আমাদের কাছে নেই যা আমরা মেনে চলতে পারি। এ যুক্তি মেনে নিলে একটি নতুন নবুওয়াতের প্রয়োজন আপনা থেকেই প্রমাণিত হয়ে যায়। এরপর কেবলমাত্র একজন নির্বোধই খতমে নবুওয়াতের জন্য পীড়াপীড়ি করতে পারে। এর দ্বিতীয় ফলটি হচ্ছে, যেহেতু নবীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়া কুরআন একা তার প্রেরণকারীর বক্তব্য অনুযায়ী পথ প্রদর্শনের জন্য যথেষ্ট নয়, তাই কুরআনের ভক্তরা যতই জোরেশোরে চিৎকার করে শুধুমাত্র একাকী কুরআনকে যথেষ্ট বলুক না কেন, মূল দাবীদারের দাবী যখন দুর্বল, তখন সাক্ষীদের সাক্ষ্য যত সবলই হোক না কেন, তা কোন কাজেই লাগতে পারে না। এ অবস্থায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে একটি নতুন কিতাব নাযিল হবার প্রয়োজন কুরআনের দৃষ্টিতেই প্রমাণ হয়ে যায়। আল্লাহ এহেন উদ্ভট বক্তব্যের প্রবক্তাদেরকে ধ্বংস করুন। এভাবে তারা হাদীস অস্বীকারের মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে মূলত দ্বীন ইসলামের শিকড় কাটছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ যখন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূলরূপে প্রেরণ করলেন তখন আরববাসী স্পষ্টভাবে অস্বীকার করল এবং বলল: আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা থেকে অনেক পবিত্র। মানুষ কোনদিন রাসূল হতে পারেন না। রাসূল হবেন কোন ফেরেশতা বা অন্য কিছু।
আল্লাহ তা‘আলা তাদের আশ্চর্যের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন:
(أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَآ إِلٰي رَجُلٍ مِّنْهُمْ أَنْ أَنْذِرِ النَّاسَ)
“মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই মধ্য থেকে একজনের নিকট ওয়াহী প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তুমি মানুষকে সতর্ক কর।” (সূরা ইউনুস ১০:২)
তারা আশ্চর্য হয়ে আরো বলত: এটা কেমন রাসূল? আমাদের মত খাবার খায়, বাজারে যায়, বিবাহ শাদী করে ইত্যাদি। সুতরাং এরূপ মানুষ কোন দিন রাসূল হতে পারেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে নাবী! তোমার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি সবাই মানুষ ছিলেন এবং পুরুষ ছিলেন। তুমি কোন নতুন রাসূল নও যে, হঠাৎ করে মানুষের মধ্য হতে আগমন করেছ। সুতরাং তাদের যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে ইতোপূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুক তাহলে সত্য জানতে পারবে।
أَهْلَ الذِّكْرِ বলতে আহলে কিতাবদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাই আল্লাহ কুরআনে জানিয়ে দিচ্ছেন যে,
(وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ إِلَّآ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فِي الْأَسْوَاقِ)
“তোমার পূর্বে আমি যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই তো আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।” (সূরা ফুরকান ২৫:২০)
বিঃ দ্রঃ এতে বুঝো যায় যে, আল্লাহ সর্বকালে পুরুষদেরকেই নবুওয়াতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন কোন মহিলাকে নয়। অতএব মহিলাদের নেতৃত্ব দেয়া ইসলামে হারাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঐ জাতি কখনোই সফলকাম হবে না যারা তাদের নেতৃত্ব আরোপ করে মহিলাদের ওপর। (সহীহ বুখারী: ৪৪২৫, ৭০৯৯)
(بِالْبَيِّنٰتِ وَالزُّبُرِ)
এর সম্পর্ক কোন অংশের সাথে তা নিয়ে দুটি দিক বর্ণনা করা হয়
১. অর্থাৎ যদি তোমাদের জানা না থাকে তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস কর দলীল-প্রমাণ সহ।
২. অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, হে নাবী! তোমার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তারা সবাই মানুষ ছিলেন এবং তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ প্রেরণ করেছিলাম। দ্বিতীয় অর্থটিই অধিক সঠিক। এখানে الذِّكْرَ দ্বারা উদ্দেশ্য হল কুরআন, অর্থাৎ তোমার নিকট যে কুরআন অবতীর্ণ করেছি তার দুটি হিকমত রয়েছে:
১. কুরআনে মানুষের জন্য যে সকল বিধি-বিধান, আশা ও ভয় দেয়া হয়েছে তা মানুষের কাছে বর্ণনা করে দেবে।
২. কুরআন নিয়ে গবেষণা করা এবং তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করা। সুতরাং রাসূলের ওয়ারিশদের দায়িত্ব হবে উক্ত কাজগুলো করা এবং নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নবী-রাসূলগণ মানুষ ছিলেন, কোন ফেরশতা বা জিন ছিলেন না।
২. কোন নাবী-রাসূল মহিলা ছিলেন না এবং ইসলামে তাদের নেতৃত্ব হারাম।
৩. কোন বিষয় জানা না থাকলে জ্ঞানী মানুষের কাছ থেকে দলীলসহ বিস্তারিত জানতে হবে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*রসূল (স.)-এর দায়িত্ব ও কর্তব্য : এরপর পুনরায় রসূলদের দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলাে শেষ রসূল ও তার কাছে নাযিলকৃত শেষ কিতাবের লক্ষ্য বর্ণনা করা এবং তাকে মিথ্যুক সাব্যস্তকারীদের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দেয়া। ‘আমি তােমার পূর্বেও মানুষদের মধ্যে থেকেই রসুল পাঠিয়েছি যাদের কাছে ওহী নাযিল করতাম। অতএব, কিতাবধারীদেরকে জিজ্ঞেস করো যদি তােমরা না জানো…'(আয়াত ৪৩-৪৪) অর্থাৎ আমি ফেরেশতা বা অন্য কোনাে সৃষ্টি নয়, মানুষই পাঠাতাম। এমন সব মনােনীত মানুষকে পাঠাতাম, যাদের কাছে তােমার মতােই ওহী পাঠাতাম ও তােমার মতােই প্রচার কার্যের দায়িত্ব অর্পণ করতাম। এ ব্যাপারে তােমাদের যদি কিছু জানা না থাকে, তবে যাদের কাছে ইতিপূর্বে রসূলরা আসতাে, সেই সব আহলে কিতাবকে জিজ্ঞেস করাে যে তারা মানুষ ছিলাে, না ফেরেশতা, না অন্য কোনাে সৃষ্টি আমি তাদেরকে সুস্পষ্ট বর্ণনা ও কিতাব সহকারে পাঠাতাম। ‘যুবুর’ শব্দের অর্থ হলাে, বিক্ষিপ্ত ছােট ছােট ঐশী পুস্তক। আর তােমার কাছে আমি কিতাব নাযিল করেছি, যাতে মানুষের কাছে যে বিধান নাযিল হয়েছে, তা তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিতে পারো…’ এই ‘মানুষ’ কথাটা দ্বারা অতীতের আহলে কিতাবকেও বুঝানাে হচ্ছে, যারা তাদের কিতাব নিয়ে মতভেদে লিপ্ত হয়েছিলাে এবং তাদের এই মতভেদ নিরসনের লক্ষ্যে কোরআন নাযিল হয়েছে। এ দ্বারা রসূল(স.)-এর আমলের মানুষকেও বুঝানাে হয়েছে, যাদের কাছে কোরআন ও রসূল এসেছিলাে নিজের কথা ও কাজ দ্বারা তার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্যে। ‘আশা করা যায়, তারা চিন্তা করবে।’ অর্থাৎ প্রকৃতির রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা নিদর্শনাবলী ও কোরআনে উদ্ধৃত আল্লাহর আয়াতগুলাে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে। বস্তুত এই সব নিদর্শন ও আয়াত সর্বক্ষণ চিন্তা-গবেষণা করা ও সচেতন থাকার আহ্বান জানায়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪৩-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) রাসূলরূপে প্রেরণ করেন তখন আরববাসীরা স্পষ্টভাবে তাকে অস্বীকার করে বসে এবং বলেঃ “আল্লাহর শান্ বা মাহাত্ম এর বহু উর্ধ্বে যে, তিনি কোন মানুষকে তাঁর রাসূল করে পাঠাবেন।” এর বর্ণনা কুরআন কারীমেও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা কি লোকদের জন্যে বিস্ময়ের কারণ হয়েছে যে, আমি তাদেরই একজন মানুষের প্রতি ওয়াহী নাযিল করেছি (এই কথা বলে) যে, তুমি মানুষকে ভয় প্রদর্শন কর?” (১০:২)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! আমি তোমার পূর্বে যতগুলি নবী পাঠিয়েছিলাম তাদের সবাই মানুষ ছিল, তাদের কাছে আমার ওয়াহী আসতো। সুতরাং তোমাদের বিশ্বাস না হলে) তোমরা আসমানী কিতাবধারীদেরকে জিজ্ঞেস করঃ তারা মানুষ ছিল না, ফেরেশতা ছিল? যদি তারাও মানুষ হয় তবে তোমরা তোমাদের এই উক্তি হতে ফিরে এসো। আর যদি এটা প্রমাণিত হয় যে, নুবওয়তের ক্রমধারা ফেরেশতাদের মধ্যেই জারী ছিল তবে তোমরা এই নবীকে (সঃ) অস্বীকার করলে কোন দোষ হবে না।” অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যে সব লোকের কাছে ওয়াহী নাযিল করেছিলাম তারা গ্রামবাসীদের মধ্যকার লোকই ছিল।” (১২:১০৯)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এখানে আহলে যিকর দ্বারা আহলে কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদের (রঃ) উক্তিও এটাই। আবদুর রহমান (রঃ) বলেন, যিকর দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি যিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষণাবেক্ষণকারী।” (১৫:৯) এ উক্তিটি নিজের জায়গায় ঠিকই রয়েছে। কিন্তু (আরবি) এই স্থলে যিকর দ্বারা কুরআন অর্থ নেয়া ঠিক হবে না। তাহলে ঐলোকগুলি তো কুরআনকে মানতই না। তাহলে কুরআনের ধারক ও বাহকদের জিজ্ঞেস করে কিরূপে তারা সান্ত্বনা লাভ করতে পারে? অনুরূপভাবে ইমাম আবু জাফর বাকির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “আমরা হলাম আহলে যিকর।” অর্থাৎ এই উম্মত (উম্মতে মুহাম্মদিয়া (সঃ)। এই উম্মত পূর্ববর্তী সমস্ত উম্মত অপেক্ষা বেশী জ্ঞানী। আহলে বায়তের আলেমগণ অন্যান্য আলেমদের উর্ধ্বে রয়েছেন। যদি তারা সঠিক সুন্নাতের উপর অটল থাকেন। যেমন হযরত আলী (রাঃ) , হযরত হুসাইন (রাঃ) , মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়্যাহ (রাঃ) , আলী ইবনু হুসাইন, যয়নুল আবেদীন (রাঃ) , আলী ইবনু আবদিল্লাহ, ইবনু আব্বাস (রাঃ) , আবু জাফর বাকির (রাঃ) মুহাম্মদ ইবনু আলী ইবনু হুসাইন (রাঃ) ও তাঁর পুত্র জা’ফর (রাঃ) এবং তাঁদের ন্যায় অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ। তারা আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করুন! তারা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছিলেন এবং সিরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তারা প্রত্যেক হকদারের হক আদায় করতেন এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করতেন। তাঁরা নিজেরা আল্লাহর সমস্ত সৎ বান্দার অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন। এটা তো নিঃসন্দেহে সত্য ও সঠিক কথা। কিন্তু এই আয়াতের এটা উদ্দেশ্য নয়। এখানে বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদও (সঃ) মানুষ এবং তাঁর পূর্ববর্তী সমস্ত নবীও মানুষ ছিলেন। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ “তুমি বলঃ আমি তো মানুষ ছাড়া কিছুই নই, তবে আমাকে রাসূল করে পাঠানো হয়েছে। মানুষের কাছে যখন হিদায়াত এসেছে তখন তাদেরকে ঈমান আনতে এটাই বাধা দিয়েছে যে, তারা বলেছেঃ আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?” অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার পূর্বে আমি যত রাসূলই পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই পানাহার করতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো।” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট করি নাই যে, তারা পানাহার থেকে বেপরোয়া হবে এবং মৃত্যু বরণ করবে না।” আল্লাহপাক আরো বলেনঃ “তুমি বলঃ আমি তো এমন কোন প্রথম ও নতুন নবী নই।” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “আমি তো তোমাদের মতই মানুষ, আমার কাছে ওয়াহী পাঠানো হয়।” সুতরাং আল্লাহ তাআলা এখানেও এরশাদ করেছেনঃ “তোমরা পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের জিজ্ঞেস করে দেখো যে, নবীরা মানুষ ছিল কি মানুষ ছিল না?”
অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “তিনি রাসূলদেরকে দলীল প্রমাণাদি দিয়ে প্রেরণ করেন এবং তাঁদের পতি তিনি কিতাবসমূহও নাযিল করেন এবং ছোট ছোট পুস্তিকা (সহীফা) অবতীর্ণ করেন।
(আরবি) দ্বারা কিতাবসমূহকে বুঝানো হয়েছে। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা যা কিছু করছে সবই কিতাবসমূহে রয়েছে।” (৫৪:৫২) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (২১:১০৫) এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তোমার উপর ‘যিকির অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছি। এই কারণে যা, যেহেতু তুমি এর ভাবার্থ পূর্ণরূপে অবগত আছি’ সেহেতু তুমি ওটা মানুষকে বুঝিয়ে দেবে। হে নবী (সঃ)! তুমিই এর প্রতি সবচেয়ে বেশী আগ্রহী, তুমিই এর সবচেয়ে বড় আলেম। আর তুমিই এর উপর সবচেয়ে বড় আমলকারী। কেননা, তুমি মাখলুকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক এবং আদম সন্তানদের নেতা। এই কিতাবে যা সংক্ষিপ্তভাবে রয়েছে তা বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দেয়ার দায়িত্ব তোমার উপর ন্যস্ত। লোকদের উপর যা কঠিন হবে তা তুমি তাদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেবে। যাতে তারা বুঝে সুঝে সুপথ প্রাপ্ত হতে পারে এবং সফলকাম হয়। আর যেন উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করে।”
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 43-44
وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ]
So that perhaps they may reflect.]
Only Human Messengers have been Sent
Ad-Dahhak said, reporting from Ibn Abbas:
“When Allah sent Muhammad as a Messenger, the Arabs, or some of them, denied him and said, `Allah is too great to send a human being as a Messenger.’
Then Allah revealed:
أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَأ إِلَى رَجُلٍ مِّنْهُمْ أَنْ أَنذِرِ النَّاسَ
Is it a wonder to people that We have sent Our Inspiration to a man from among themselves (saying):”Warn mankind…” (10:2)
and He said,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
And We sent not (as Our Messengers) before you (O Muhammad) any but men, whom We sent Revelation. So ask Ahl Adh-Dhikr, if you know not.
meaning, (ask) the people of the previous Books, were the Messengers that were sent to them humans or angels If they were angels, then you have the right to find this strange, but if they were human, then you have no grounds to deny that Muhammad is a Messenger.
Allah says:
وَمَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِى إِلَيْهِمْ مِّنْ أَهْلِ الْقُرَى
And We sent not before you (as Messengers) any but men to whom We revealed, from among the people of townships. (12:109)
and not from among the people of heaven as you say.”
It was reported by Mujahid from Ibn Abbas that;
what is meant by Ahl Adh-Dhikr is the People of the Book.
This is as Allah says:
أَوْ يَكُونَ لَكَ بَيْتٌ مِّن زُخْرُفٍ أَوْ تَرْقَى فِى السَّمَأءِ وَلَن نُّوْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّى تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَّقْرَءُهُ قُلْ سُبْحَـنَ رَبِّى هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُوْمِنُواْ إِذْ جَأءَهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً
Say:”Glorified be my Lord! Am I anything but a man, sent as a Messenger!”
And nothing prevented men from believing when the guidance came to them, except that they said:”Has Allah sent a man as (His) Messenger!” (17:93-94)
وَمَأ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلاَّ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِى الاٌّسْوَاقِ
And We never sent before you (O Muhammad) any of the Messengers but verily, they ate food and walked in the markets. (25:20)
وَمَا جَعَلْنَـهُمْ جَسَداً لاَّ يَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُواْ خَـلِدِينَ
And We did not create them (the Messengers, with) bodies that did not eat food, nor were they immortals. (21:8)
قُلْ مَا كُنتُ بِدْعاً مِّنَ الرُّسُلِ
Say (O Muhammad):”I am not a new thing among the Messengers.” (46:9)
قُلْ إِنَّمَأ أَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَىَّ
Say (O Muhammad):”I am only a man like you. It has been revealed to me.” (18:110)
Then Allah informs those who doubt that a Messenger can be a human to ask those who have knowledge of the previous Scriptures about the Prophets who came before:were their Prophets humans or angels!
Then Allah mentions that He has sent them
بِالْبَيِّنَاتِ
with clear signs,
meaning proof and evidence, and
وَالزُّبُرِ
and Books (Zubur),
meaning Scriptures.
Ibn Abbas, Mujahid, Ad-Dahhak and others said:
Zubur is the plural of Zabur, and the Arabs say, Zaburtul-Kitab meaning, “I wrote the book.”
Allah says:
وَكُلُّ شَىْءٍ فَعَلُوهُ فِى الزُّبُرِ
And everything they have done is noted in (their) Records (of deeds (Zubur). (54:52)
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِى الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الاٌّرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِىَ الصَّـلِحُونَ
And indeed We have written in Az-Zabur after the Dhikr that My righteous servant shall inherit the land (i.e. the land of Paradise). (21:105)
Then Allah says:
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ
And We have also revealed the Dhikr to you,
meaning the Qur’an,
لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ
so that you may clearly explain to men what was revealed to them,
meaning, sent down from their Lord, because you know the meaning of what Allah has revealed to you, and because of your understanding and adherence to it, and because We know that you are the best of creation and the leader of the Children of Adam. So that you may explain in detail what has been mentioned in brief, and explain what is not clear.
وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
so that perhaps they may reflect.
meaning, they should examine themselves and be guided by it, so that they may attain the victory of salvation in this world and the next.