(Book# 812) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ৭১ নং আয়াত:- [ أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে? Do they then deny the favor of Allah! ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 812)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৭১ নং আয়াত:-
[ أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ
তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে?
Do they then deny the favor of Allah! ]
www.motaher21.net
وَ اللّٰہُ فَضَّلَ بَعۡضَکُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ فِی الرِّزۡقِ ۚ فَمَا الَّذِیۡنَ فُضِّلُوۡا بِرَآدِّیۡ رِزۡقِہِمۡ عَلٰی مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَہُمۡ فِیۡہِ سَوَآءٌ ؕ اَفَبِنِعۡمَۃِ اللّٰہِ یَجۡحَدُوۡنَ ﴿۷۱﴾
আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়; তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে?
And Allah has favored some of you over others in provision. But those who were favored would not hand over their provision to those whom their right hands possess so they would be equal to them therein. Then is it the favor of Allah they reject?

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৭১ নং আয়াত:-
[ أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ
তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে?
Do they then deny the favor of Allah! ]
www.motaher21.net

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌ বলেছেন:-

# বর্তমানকালে এ আয়াত থেকে বড়ই অদ্ভূদ ও উদ্ভট অর্থ বের করা হয়েছে। কুরআনের আয়াতকে তার প্রেক্ষাপট ও পূর্বাপর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক একটি আয়াতের আলাদা আলাদা অর্থ করলে কেমন অন্তহীন অপব্যাখ্যার দরজা খুলে যায় এটা হচ্ছে তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এক শ্রেণীর পণ্ডিতেরা এ আয়াতটিকে ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনের বুনিয়াদ এবং অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা গণ্য করেছেন। তাদের মতে আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে, যাদেরকে আল্লাহ রিযিকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তাদের নিজেদের রিযিক নিজেদের গোলাম ও চাকর বাকরদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া উচিত। যদি বিলিয়ে দেয়া না হয় তাহলে তারা আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে। অথচ এ সমগ্র আলোচনার মধ্যে কোথাও অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থা বর্ণনার আদৌ কোন সুযোগই নেই। প্রথম থেকে সমগ্র ভাষণটিই চলছে শিরককে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও তাওহীদকে সত্য প্রমাণ করার জন্য এবং সামনের দিকেও এ একই বিষয়বস্তুই একের পর এক এগিয়ে চলছে। এ আলোচনার মাঝখানে হঠাৎ অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থার একটি ধারা বর্ণনা করার কোন সুযোগই কি এখানে আছে? আয়াতকে তার প্রেক্ষাপট ও পূর্বাপর আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রেখে বিচার করলে পরিষ্কার বুঝা যাবে যে, এখানে এর সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়বস্তুরই আলোচনা চলছে। এখানে একথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদে যখন নিজেদের গোলাম ও চাকর বাকরদেরকে সমান মর্যাদা দাও না অথচ এ সম্পদ আল্লাহর দেয়া তখন তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহর সাথে তাঁর ক্ষমতাহীন গোলামদেরকেও শরীক করা এবং ক্ষমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে আল্লাহর এ গোলামদেরকেও তাঁর সাথে সমান অংশীদার গণ্য করাকে তোমরা কেমন করে সঠিক মনে করো?

সূরা রূমের ২৮ আয়াতে এ একই যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। সেখানে এর শব্দগুলো হচ্ছেঃ

ضَرَبَ لَكُمْ مَثَلًا مِنْ أَنْفُسِكُمْ هَلْ لَكُمْ مِنْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ شُرَكَاءَ فِي مَا رَزَقْنَاكُمْ فَأَنْتُمْ فِيهِ سَوَاءٌ تَخَافُونَهُمْ كَخِيفَتِكُمْ أَنْفُسَكُمْ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

“আল্লাহর তোমাদের সামনে আরেকটি উপমা তোমাদের সত্তা থেকেই পেশ করেন। আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তাতে কি তোমাদের গোলাম তোমাদের সাথে শরীক আছে? আর এভাবে শরীক বানিয়ে তোমরা ও তারা কি সমান সমান হয়ে গিয়েছ? এবং তোমরা কি তাদেরকে ঠিক তেমনি ভয় পাও যেমন তোমাদের সমপর্যায়ের লোকদেরকে ভয় পাও? এভাবে আল্লাহ খুলে খুলে নিশানী বর্ণনা করেন তাদের জন্য যারা বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।”

দু’টি আয়াতের তুলনামূলক আলোচনা করলে পরিষ্কার জানা যায়, উভয় স্থানেই একই উদ্দেশ্য, একই উপমা বা দৃষ্টান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এদের একটি অন্যটির ব্যাখ্যা করছে। সম্ভবত أَفَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ বাক্যাংশ থেকেই ঐ বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। উপমা বর্ণনার পর সাথে সাথেই এ বাক্যাংশটি দেখে তারা মনে করেছে নিশ্চয়ই এর অর্থ এই হবে যে অধীনস্থদের মধ্যে রিযিক বিলিয়ে না দেয়াটাই মূলত আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতি। অথচ যে ব্যক্তি কুরআনে সামান্য পারদর্শিতাও রাখেন তিনিই জানেন যে আল্লাহর নিয়ামতের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো এ কিতাবের দৃষ্টিতে আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়টির কুরআনে এত বেশী পুনরাবৃত্তি হয়েছে যে, তিলাওয়াত ও চিন্তা গবেষণায় অভ্যস্ত লোকেরা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন না। অবশ্যি সূচীপত্রের সাহায্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় প্রবন্ধ রচনাকারীগণ এ ব্যাপারটি নাও জানতে পারেন।

আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকৃতির এই তাৎপর্যটি অনুধাবন করার পর এ বাক্যাংশের অর্থ পরিষ্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, এরা যখন প্রভু ও গোলামের পার্থক্য ভাল করেই জানে এবং নিজেদের জীবনে সর্বক্ষণ এ পার্থক্যের দিকে নজর রাখে তখন একমাত্র আল্লাহর ব্যাপারেই কি এরা এত অবুঝ হয়ে গেছে যে, তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর সাথে শরীক ও তাঁর সমকক্ষ মনে করার এবং তাঁর কাছ থেকে এরা যেসব নিয়ামত লাভ করেছে সেগুলোর জন্য তাঁর বান্দাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানোকে জরুরী মনে করে?

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*রিজিকের তারতম্য ও তার রহস্য : দ্বিতীয় পর্যায়ে আলােচনা এসেছে রিযিক সম্পর্কে। রিযিকের ব্যাপারে মানুষে মানুষে যে তারতম্য আছে তা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। আল্লাহর কেতাব এ প্রসংগে জানাচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালা নিজেই কাউকে কারাে ওপর রিযিকের ব্যাপারে প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং পৃথিবীতে অর্থনৈতিক তারতম্য থাকা এটা আল্লাহর বিশেষ এক নিয়মের অধীনে হয়ে থাকে। এটা হঠাৎ করে এবং কোনাে নিয়ম নীতিবিহীন হয়ে যায় এমন নয়, এ বিশ্বটা কোনাে পাগল রাজার রাজত্ব নয় যে অর্থহীনভাবে এবং কোনাে নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সব কিছু চলছে, এর পেছনে খবরদারি করার কেউ নেই। মানুষ চিন্তাশীল হতে পারে, হতে পারে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান, কিন্তু আশানুরূপভাবে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা লাভ করা বা ইচ্ছামতাে এর উন্নতি সাধন করা আদৌ সম্ভব নয়। রিযিক কে কতােটা পাবে তা পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে, যার জন্যে যা বরাদ্দ হয়ে আছে, তার মধ্যে কোনাে পরিবর্তন আনা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। এই নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার মাধ্যমে বুঝা যায় এর পেছনে নিশ্চয়ই একজন পরম মহাক্ষমতাবান নিয়ন্ত্রণকারী আছেন, যার ইচ্ছার বাইরে কিছুই হতে পারে না। তবে মানুষের চেষ্টা সাধনা বেকার যাবার নয়, তার চেষ্টার ফসল যদি এখানে তাৎক্ষণিকভাবে সে না পায় তাহলে আরাে অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে তার আন্তরিক চেষ্টা সাধনার ফল সে অবশ্যই পাবে। বস্তুগত জাগতিক দৃষ্টিতে সে বােকা ও প্রাচীন পন্থী বা সরল সােজা মানুষ বলে ধিকৃত হতে পারে, হতে পারে উপহাস বিদ্রুপের পাত্র, কিন্তু অবশ্যই তার প্রাপ্য আলাদাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে সে সেখানকার পাওয়াকেই সে মােক্ষম পাওয়া বলে বিশ্বাস করে। একারণে নগদ না পাওয়া সত্তেও নির্লিপ্ত ও নিশ্চিন্ত থাকে, সে আশা করে সেখানে অবশ্যই সে তার সকল আমলের প্রতিফল পাবে এবং আরাে বাড়তি পাবে। সাধারণভাবে মানুষ নিজেকে দাতা ও বেশ শক্তিশালী বলে ভাবে, এ কারণে সে মনে করে রিযিকের ব্যাপারে তাকদীরের কোনাে ভূমিকা নেই, কিন্তু এটা মােটেই ঠিক নয়, বরং জীবনকে তাকদীর এক নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে টেনে নিয়ে যায়-এরই কারণে মানুষ যা চিন্তা ও চেষ্টা করে অনেক সময় তা হয় না। আবার এটাও সত্য কথা যে স্বচ্ছলতা অনেক সময় কৃতকর্মের ফল অবশ্যই পাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় রাখে এবং আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কঠিন পরীক্ষা-স্বরূপ, যেমন সংকট সমস্যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের পরীক্ষা নেন। যাই হােক, এটা স্বতসিদ্ধ কথা যে, ইচ্ছা করলেই বড়লােক হওয়া যায় না বা ইচ্ছা করলেই স্বচ্ছলতা লাভ করা যায় না বরং আল্লাহর তরফ থেকে তাকদীরে যা লেখা আছে মানুষ তাই পায় দৃষ্টিভংগী পরিশুদ্ধ হয়ে গেলে এটা স্পষ্ট দেখা যায়। অবশ্য কোনাে কোনাে সময় এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়, অর্থাৎ অনেক সময় আন্তরিক চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয় বলে মনে হয়। কিন্তু মানুষ যতাে চেষ্টাই করুক না কেন, অর্থনৈতিকভাবে মানুষে মানুষে তারতম্য আছে ও থাকবে, এটা যে কোনাে সমাজের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে, তবে এটা তখনই প্রকট সমস্যা হয়ে দেখা দেয় যখন যালেম সমাজের মানুষদের তৈরী কৃত্রিম সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। আর কোরআনে কারীম প্রাথমিক যুগের পৌত্তলিক আরব জাহেলিয়াতের অবস্থার দিকে ইংগিত করছে এবং তার মহামূল্যবান শিক্ষা দ্বারা আংশিকভাবে হলেও এই তারতম্য ঘুচানাের চেষ্টা করেছে। সে সমাজে মানুষে মানুষে ব্যবধান ছিলাে আকাশচুম্বী এবং এর অধিকাংশ ছিলাে মানুষের নিজের তৈরী করা সমস্যা। যদিও এটাও সত্য যে কোনাে কালেই মানুষে মানুষে সকল ব্যবধান সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হবে না। তবে মানব নির্মিত এই ব্যবধানের অনেকাংশই ইসলাম দূর করেছিলাে। ইসলামপূর্ব যুগে ওই জাহেলী সমাজে মানুষের জান মালের কোনােই নিরাপত্তা ছিলাে না এবং মানুষকে মানুষের মৌলিক অধিকার না দিয়ে তাদের নিজেদের তৈরী মূর্তিদেরকে ‘ভােগ’ দেয়া হতাে এবং বলা হতাে এগুলাে দেব-দেবীরা পেলে তারা খুশী হয়ে যাবে এবং তাদের কৃপা দৃষ্টি পেয়ে তারা উপকৃত হবে। বাস্তবে দেব-দেবীদের নামে উৎসর্গকৃত এসব উত্তম খাদ্য খাবার পূজারী নিজেরাই ভােগ করতাে, যেমন হিন্দু সমাজের ব্রাহ্মনরা করে থাকে-একেই বলে বাঘের নামে শেয়ালের মড়ী । এজন্যেই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, কি হলাে ওদের আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার অংশ বিশেষ পাওনা ছিলাে গরীব মিসকীনদের। তাদের না দিয়ে প্রাণহীন দেব-দেবীর নামে উৎসর্গ করে তাদের কাছে কল্যাণ কামনায় নিমগ্ন হয়। এভাবে তারা কি আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করছে। এভাবে পরম করুণাময় দাতা আল্লাহর শোকরগুজারী করার পরিবর্তে শিরক করার দ্বারা তারা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের অপব্যবহারই করছিলাে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৭১ নং আয়াতের তাফসীর:

যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করে তাদের জন্য একটি বাস্তব বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। রিযিকের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা সব মানুষকে সমান করেননি। কাউকে অঢেল সম্পদ দিয়ে ধনী বানিয়েছেন, কাউকে সম্পদ কম দিয়ে দরিদ্র বানিয়েছেন। কাউকে রাজত্ব দিয়েছেন, কাউকে রাজত্ব দেননি, কাউকে সুস্থ শরীর ও উত্তম কাঠামো দিয়েছেন, কাউকে পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ করেছেন। এভাবে বিভিন্ন রিযিক দিয়ে একজনকে অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দান করেছেন।

যারা ধনী তারা কি গরীবদেরকে নিজেদের ধন-সম্পদে শরীক বানাতে পছন্দ করে? যারা মালিক তারা কি দাসদেরকে নিজেদের সম্পদ ও রাজত্বে শরীক বানাতে পছন্দ করে? যারা সুস্থ ও সকল ত্র“টিমুক্ত তারা কি পাগল ও বিকলাঙ্গ লোকদেরকে নিজেদের পরিবারে অংশীদার বানাতে পছন্দ করে? না, কেউ এসব পছন্দ করে না। সুতরাং মানুষ সবাই মাখলুক হওয়া সত্ত্বেও যদি এরূপ সাধারণ বিষয়ে শরীক বানাতে অপছন্দ করে তাহলে কিভাবে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টিকে শরীক বানাও? এটা কি স্রষ্টা পছন্দ করবেন? সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা সকল শরীক থেকে মুক্ত ও পবিত্র।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلًا مِّنْ أَنْفُسِكُمْ ط هَلْ لَّكُمْ مِّنْ مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِّنْ شُرَكَا۬ءَ فِيْ مَا رَزَقْنٰكُمْ فَأَنْتُمْ فِيْهِ سَوَا۬ءٌ تَخَافُوْنَهُمْ كَخِيْفَتِكُمْ أَنْفُسَكُمْ)

“আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন: আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে অংশীদার, যার ফলে তোমরা ও তারা সমান? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ তোমরা নিজেদের লোককে ভয় কর?” (সূরা রূম-৩০:২৮)

এ আয়াতে আরেকটি বিষয়ের প্রতিবাদ করা হচ্ছে। তা হল যারা বিশ্বাস করে সমাজের সবাই সমান থাকবে, কেউ ধনী হবে কেউ গরীব হবে এমন হতে পারবে না। অর্থাৎ সমাজতন্ত্র। তাদের এরূপ দাবী ও বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আর্থিকভাবে সবাই সমান হলে কেউ কাউকে পরওয়া করবে না, কারো কাজ কেউ করে দেবে না, কারো অধীনস্ত কেউ মেনে নেবে না। মানুষের জীবনযাপন দুর্বিসহ হয়ে যাবে। জমিনে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَوْلَآ أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَنْ يَّكْفُرُ بِالرَّحْمٰنِ لِبُيُوْتِهِمْ سُقُفًا مِّنْ فِضَّةٍ وَّمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُوْنَ)‏

“(সত্য অস্বীকারে) মানুষ এক উম্মতে পরিণত হয়ে পড়বে, এই আশঙ্কা না থাকলে দয়াময় আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে, তাদেরকে আমি দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি যাতে তারা আরোহণ করে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৩৩)

(أَفَبِنِعْمَةِ اللّٰهِ يَجْحَدُوْنَ)

অর্থাৎ এসব আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে কি? আল্লাহ তা‘আলা তিরস্কারের সাথে বলছেন: আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে কুফরী ও অবাধ্য কাজে ব্যবহার করা এবং নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরী করার শামিল। অতএব মানুষ নিজের জন্য যা পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সাব্যস্ত করা খুবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. রিযিকের ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে তারতম্য আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত নিয়ম।
২. সমাজতন্ত্রের দাবী ও কর্মসূচি ইসলাম সমর্থন করে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের অজ্ঞতা এবং অকৃতজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা তাদের মা’বূদদেরকে আল্লাহর দাস জানা সত্ত্বেও তাদের ইবাদতে লেগে রয়েছে। হজ্জের সময় তারা বলতোঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার সামনে হাযির আছি, আপনার কোন শরীক নেই সে ছাড়া, যে স্বয়ং আপনার দাস। তার অধীনস্থদের প্রকৃত মালিক আপনিই।” সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেনঃ “তোমরা নিজেরা যখন তোমাদের গোলামদেরকে তোমাদের সমান মনে কর না এবং তোমাদের মালে তাদের অংশীদার হওয়াকে পছন্দ কর না, তখন কি করে আমার গোলামদেরকে আমার সাথে শরীক স্থাপন করছো?” এই বিষয়টিই (আরবি) (৩০:২৮) এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “তোমরা নিজেরা যখন তোমাদের গোলামদেরকে তোমাদের মাল -ধনে ও স্ত্রীতে নিজেদের শরীক বানাতে ঘৃণা বোধ করছে। তখন আমার গোলামদেরকে কি করে তোমরা আমার খোদায়ীতে শরীক মনে করছো?” এটাই হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করন যে, আল্লাহর জন্যে ওটা পছন্দ করা হবে যা নিজেদের জন্যে অপছন্দ করা হয়। এটাই হচ্ছে মিথ্যা মা’বুদদের দৃষ্টান্ত। তোমরা নিজেরা যখন ওদের থেকে পৃথক তখন আল্লাহ তো এর চেয়ে আরও বেশী পৃথক! বিশ্বপ্রতিপালকের নিয়ামতরাশির অকৃতজ্ঞতা এর চেয়ে বেশী আর কি হতে পারে যে, ক্ষেত-খামার এবং চতুষ্পদ জন্তু এক আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, অথচ তোমরা এগুলোকে তিনি ছাড়া অন্যদের নামে করছো?

হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হযরত আবু মূসা আশআরীকে (রাঃ) একটি চিঠি লিখেন। চিঠির মর্ম ছিল নিম্নরূপঃ

“তুমি আল্লাহর রিযকে সন্তুষ্ট থাকো। নিশ্চয় তিনি জীবনোপকরণে। তোমাদের কাউকেও কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এটা তাঁর পক্ষ হতে একটি পরীক্ষা। তিনি দেখতে চান যে, যাকে তিনি রিকের ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্ব দান। করেছেন সে কিভাবে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং তার উপর অন্যান্যদের যে সব হক নির্ধারণ করেছেন তা সে কতটুকু আদায় করছে।” (এটা ইবনু আবি হাতিম-(রাঃ) বর্ণনা করেছেন)।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 71
أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ ]
Do they then deny the favor of Allah! ]
There is a Sign and a Blessing in Matters of People’s Livelihood

Allah says,

وَاللّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْرِّزْقِ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُواْ بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَى مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاء

And Allah honored some of you over others with wealth and properties. Then, those who are so honored will by no means hand over their wealth and properties to those (captives of war) whom their right hands possess, so that they may be equal with them in that.

Allah explains to the idolators the ignorance and disbelief involved in their claim that Allah has partners while also admitting that these partners are His servants. In their Talbiyah for Hajj, they used to say, “Here I am, there are no partners for You except Your own partner, You own him and everything he owns.”

Allah says, denouncing them:`You would not accept for your servant to have an equal share in your wealth, so how is it that Allah would accept His servant to be His equal in divinity and glory As Allah says elsewhere:

ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلً مِّنْ أَنفُسِكُمْ هَلْ لَّكُمْ مِّن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَـنُكُمْ مِّن شُرَكَأءَ فِى مَا رَزَقْنَـكُمْ فَأَنتُمْ فِيهِ سَوَاءٌ تَخَافُونَهُمْ كَخِيفَتِكُمْ أَنفُسَكُمْ

He sets forth a parable for you from yourselves:Do you have partners among those whom your right hands possess (i.e. your servant) to share as equals in the wealth We have granted you, those whom you fear as you fear each other! (30:28)

Al-Awfi reported that Ibn Abbas mentioned this Ayah, saying,

“Allah is saying – `If they did not want their servant to have a share with them in their wealth and wives, how can My servant have a share with Me in My power!’

Thus Allah says:

أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ

Do they then deny the favor of Allah!

According to another report, Ibn Abbas said:

“How can they accept for Me that which they do not accept for themselves!”

أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ

Do they then deny the favor of Allah!

meaning, they assign to Allah a share of the tilth and cattle which He has created. They denied His blessings and associated others in worship with Him.

Al-Hasan Al-Basri said:

“Umar bin Al-Khattab wrote this letter to Abu Musa Al-Ash`ari:

`Be content with your provision in this world, for the Most Merciful has honored some of His servants over others in terms of provision as a test of both. The one who has been given plenty is being tested to see if he will give thanks to Allah and fulfill the duties which are his by virtue of his wealth…”‘

It was reported by Ibn Abi Hatim.

Leave a Reply